নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
অনন্ত হালিশহরের ফ্লাট ছেড়ে দিয়ে আগ্রাবাদে বাবার বাড়িতে এসে উঠেছে। আগ্রাবাদ থেকে অফিসে যেতে কোন সমস্যা হচ্ছে না বরং সুবিধাই হচ্ছে। তাছাড়া মায়ের হাতের খাবার খাওয়া বাড়তি পাওনা। অফিস শেষে করে সোজা বাসায় চলে আসে। বাইরের আড্ডা কমিয়ে দিয়েছে। শুধু তাই না কিছুটা আড্ডা দিলেও ছাই-পাস খাওয়া বাদ দিয়েছে। বাসায় ফিরে হাতমুখ ধুয়ে ফ্রেস হয়ে লেখাপড়া নিয়ে ব্যস্ত। বিভিন্ন ধরনের বই পড়ে আর মাঝে মাঝে কিছু লেখার চেষ্টা করে।
আগ্রাবাদের বাড়িতে আর্থিক সংকট না থাকলেও সবার মনে শান্তির বড় অভাব। বড় ছেলে বউ আর মেয়ে নিয়ে আলাদা বাসা নিয়েছে। নাতনি যে বাড়িতে আনন্দ ফুর্তিতে ভরিয়ে রাখতো, দাদা-দাদীকে সুখের পরশ দিতো সেই বাড়িতে আজ দম বন্ধ হওয়ার মতো গুমোট আবহাওয়া। বউ শ্বাশুড়ীর দ্বন্দ্বের সর্বশেষ ফলাফল যৌথ পরিবার ভেঙ্গে একক পরিবার গড়ে তোলা। এতে করে শ্বাশুড়ী বা বউ কে কতটুকু লাভবান হলো তা গবেষণা ছাড়াই অনুমান করা যায়।
অনন্তের বাবা পরশ চন্দ্র মুখোপাধ্যায় সারাদিন পত্রিকার খবর পড়ে আর দেশের হালচাল নিয়ে বিশ্লেষন করে তার বৃদ্ধা অর্ধাঙ্গীকে বলতে চাইলেও তিনি শোনার সুযোগ পান না কারন পুরো সংসার তাকে এক হাতে পরিচালনা করতে হয়, কাজের লোক থাকলেও কাজের চাপ কমে নাই।
দিন শেষে পরশ চন্দ্র হিসাব মিলাতে পারে না। জীবনে সে কতটুকু সফল? ছেলে মেয়েকে মানুষ করতে পারলো কি না? জীবনে সফল হওয়ার সংজ্ঞাই তো আপেক্ষিক। দীর্ঘ জীবনের অভিজ্ঞতা দিয়ে তিনি একটা জিনিস শিখেছেন যে, “প্রত্যাশা কম করাই জীবনে সুখী হওয়ার পূর্বশর্ত”। এতো কিছু ভাবতে ভাবতে অনন্তকে সামনে পেয়ে বসতে বললো।
তোমার অফিস চলছে কেমন?
ভালো চলছে, তবে শিক্ষা ছুটি নিয়ে পিএইচডি করতে লন্ডনে যাবো ভাবছি।
ক্যারিয়ার নিয়ে তো অনেক ভেবেছো এবার সংসার নিয়ে একটু ভাবো।
সংসার নিয়ে ভাবতে গিয়েই তো তোমার পছন্দের মেয়েকে বিয়ে করেছি।
দীপা কি তোমার পছন্দের ছিলো না? সে কি তোমার যোগ্য নয়?
অযোগ্য বা অপছন্দের বিষয় না, জীবন যুদ্ধে ফলাফলটাই মূখ্য বিষয়।
ভালোবাসা বা জীবনের যুদ্ধে জীবন বিসর্জন না দিলেও আত্মসম্মান বিসর্জন বাধ্যতামূলক। আর ইগো হচ্ছে শাঁখের করাত যা যুদ্ধক্ষেত্রটাকে রক্তাক্ত করে ছাড়ে। জীবনে শান্তি পেতে কিছুটা ছাড় দেয়া আবশ্যক।
আমিতো সব কিছু ছেড়ে দিয়ে দীপার কাছে ছুটে গিয়েছিলাম? দীপা কি তার গুরত্ব বুঝতে পারলো
হাল ছাড়লে চলবে না। হয়তো নতুন চাকরি, সবকিছু গুছিয়ে তোমায় বুঝে উঠতে পারে নাই।
হাল ছাড়ি নাই বাবা! তবে ঘুরির লাটাই থেকে সুতাটা ঢিল দিয়েছি। যখন অতিরিক্ত স্বাধীনতা ভোগ করতে গিয়ে সুতাকাটা ঘুড়ির মতো মুখ থুবরে পড়বে তখন সুতার টান এর প্রয়োজনীয়তা তথা আমার কথা মনে পড়বে। আমি তাহলে উঠি বাবা!
যেতে চাও ভালো কথা। তোমার মায়ের কথা টা একটু ভাবো। এই বয়সে একা একা সংসারের ঘানি টেনে চলছে। বড় বউটাও আলাদা বাসায় চলে গেল। যে ভাবেই হোক দীপাকে ফিরিয়ে আনার ব্যবস্থা করো।
তার বদলীর চাকরি, আমি কি করতে পারি?
তোমার বাবা তো মারা যায়নি? অস্ত্র জমা দিয়েছি, কিন্তু ট্রেনিং তো জমা দেইনি। চাকরি থেকে অবসরে গিয়েছি তাতে কি ? প্রশাসনে আমার কিছু পরিচিত লোকজন আছে তো? তোমরা বদলির চেষ্টা করে দেখো। না পারলে আমাকে জানাবে কিন্তু।
ঠিক আছে বাবা।
ছেলে উঠে যাওয়ার পর পরশচন্দ্র মুখোপাধ্যায় ভাবতে লাগলো। চাকরিতো সেও করেছে। কত উত্থান-পতনের মধ্য দিয়ে চাকরি ও সংসার সমান তালে চালিয়েছে। তার ডিপার্টমেন্টের সর্বোচ্চ পদ থেকে অবসরে গিয়েছেন। ছেলে-মেয়ে-স্ত্রীর প্রতি দায়িত্ব পালন করেছেন সিদ্ধহস্তে। তার জীবনে এতো টানা-পোড়ন ছিলো না। তবে কি আধুনিক সভ্যতা আবেগ কেড়ে নিয়ে শুধু বেগ দিয়েছে? এই বেগ দিয়ে মঙ্গল গ্রহে যাওয়া গেলেও নিজের গৃহে গিয়ে পরিবারের মঙ্গল করা যায় না। উচ্চ শিক্ষা স্বাধীনতার পরিবর্তে স্বেচ্ছাচারিতাতে প্রাধান্য দিয়ে নতুন প্রজন্মকে উচ্ছন্নে যেতে পথ তৈরি করে দিচ্ছে। উচ্চ শিক্ষা তো মানুষকে বিনয়ী করে। তবে সমাজের নেতিবাচক পরিবর্তনের জন্য আসলে দোষটা কার শিক্ষা ব্যবস্থা না কি শিক্ষা গ্রহণকারীর? এসব ভাবনায় ছেদ ঘটালো মিসেস পরশচন্দ্র মূখার্জি।
এই নেও তোমার চা
এই বয়সেও আমাকে তোমার চা দিতে ভুল হয় না?
এটা কি ভুলে যাওয়ার বিষয়। তুমি আমার সারাজীবনের দায়িত্ব পালন করছো আর আমি এটুকু দায়িত্ব পালন না করে পারি?
সে কথা বলছি না। তোমার তো বয়স হলো। সংসারের কাজ থেকে একটু বিশ্রাম নেও। দায়িত্বটা কাউকে হস্তান্তর করো।
সেই চেষ্টা কি আর কম করতেছি। বড় বউকে সংসারের দায়িত্ব বুঝিয়ে দেওয়ার আগেই আলাদা সংসার গড়লো। আর ছোট বউয়ের তো নাগালই পেলাম না।
ঠিকই বলেছো! দেখে শুনে পছন্দ করে ছোট ছেলের বৌ করে দীপাবলীকে এই সংসারে আনলাম ঠিকই কিন্তু তিনি ঘরকে আলোকিত না করে কর অফিসে দীপশিখা ছড়িয়ে আলোকিত করছেন।
ও ভাবে বলো না। মেয়েটা খুবই লক্ষ্মী। বাপ-মা মরা দীপাকে সংসার কাছে টানে নাই। চাকরিই তার কাছে বড় মনে হয়েছে।
উচ্চ শিক্ষিত হলেই যে চাকরি করতে হবে এমন কোন কথা নাই। আবার অনেকেই তো চাকরি করে সংসার করছে ।
দীপার কথা আলাদা। ছোট্ট বেলা থেকে সংসারের যে টানাপোড়ন দেখে বড় হয়েছে তাতে তার কাছে চাকরিই প্রাধান্য পেয়েছে।
ঠিক আছে চাকরি করুক আপত্তি নাই। সংসারটাও করুক। অনন্তকে বলেছি বদলি করে বৌমাকে এখানে নিয়ে আসতে।
ঠাকুরের কাছে প্রার্থনা করি, ঘরের বৌ ঘরে ফিরে আসুক। আমাদের অনন্তের সংসার আলোকিত করুক।
দীপাবলী Click This Link
দীপাবলী-০১ Click This Link
দীপাবলী-০২ Click This Link
দীপাবলী-০৩ Click This Link
১৭ ই নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ১০:২০
রবিন.হুড বলেছেন: পড়ার জন্য ধন্যবাদ। বাকী লিঙ্কগুলো দেওয়া হয়েছে।
©somewhere in net ltd.
১| ১৪ ই নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১১:২২
শেরজা তপন বলেছেন: আগের পর্বগুলোর লিঙ্ক নেই কেন?