নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

রবিন.হুড

রবিন.হুড › বিস্তারিত পোস্টঃ

দীপাবলী- পর্ব-০৭

০২ রা ডিসেম্বর, ২০২৪ দুপুর ২:২১



ঠাকুর মাকে হারানোর শোক কাটিয়ে দূঃখ ভারাক্রান্ত মন নিয়ে অফিসে এসে জীবনের বাকে বাকে একাকীত্বের যন্ত্রনার কথা মনে করছিলেন। এর মধ্যে অফিসের কলিগেরা বিভিন্নভাবে সহানুভূতি ও গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শ প্রদান করছে। সিনহা সাহেব এসে অনেক সময় নিয়ে কথা বলেছেন। তার সুন্দর ব্যবহার দেখে অবাক হয়েছে। ডিসিটি স্যার তার বিষয়ে সতর্ক করে দিয়েছিলেন। কিন্তু সিনহা সাহেবের আচরণে আমূল পরিবর্তন। তাহলে কি সিনহা ভালো হয়ে গেছে? নাকি অধিক সন্যাসীতে গাজন নষ্ট? সময় মতো এর উত্তর পাওয়া যাবে।

পিওন কে ডেকে নোমান গ্রুপের ফাইল চাইলো দীপাবলী। একটু কাজের দিকে মনোযোগ দিতে চাইল। কাজের ব্যস্ততায় সবকিছু ভুলে থাকা চেষ্টা।
ম্যাডাম আজ কাজ না করলে হয় না? একটু বিশ্রাম নিন।
না আমার কোন বিশ্রামের প্রয়োজন নাই। ফাইলটা দেও। কাজের মধ্যেই সকল স্বার্থকতা নিহিত।
ডিসিটি স্যার খবর পাঠিয়েছেন? আপনি সময় করে যেন তার সাথে দেখা করেন।
ঠিক আছে ফাইলটা দেখে স্যার এর সঙ্গে দেখা করবো।

অফিসের জুরুরি কাজ শেষ করে লাঞ্চ এর পরে দীপাবলী ডিসিটি স্যারের রুমে গেলেন।
আসুন মিসেস মূখার্জী। বসুন।
ধন্যবাদ স্যার!
কি বলে আপনাকে সমবেদনা জানাই? আসলে নিয়তি মেনে নিতে হবে। দুনিয়ায় আইছেন একা যাইবেন একা, মাঝখানে একা না থাকার অভিনয়। তাছাড়া আপনার ঠাকুর মার তো অনেক বয়স হয়েছিল? বিধাতার খেলা চেয়ে চেয়ে দেখা ছাড়া উপায় কি বলুন?
জ্বী স্যার! ঠাকুর মার বয়স প্রায় ৮৬ বছর। এই বয়সে সিড়ি থেকে পড়ে যমের ঘরে না গিয়ে ছাড়লেন না। কিন্ত ছোট বেলা থেকে তার সান্যিধ্যে বড় হয়েছি তো তাই সহজে ভুলতে পারছি না। বড় একা হয়ে গেলাম।
এই মূহুর্তে কি করে যে বলি আপনাকে? আপনার একটা অর্ডার হয়েছে। অর্ডারের চিঠিটা দীপাবলীর হাতে দিতে দিতে ডিসিটি অস্পষ্টভাবে বললেন, এটা মনে হয় সিনহার কাজ!
চিঠিটা খুলে দেখে চট্টগ্রামে বদলীর আদেশ। এ যেন মেঘ না চাইতে বৃষ্টি। চোখে মুখে হাসির ঝিলিক!
এতে আপনার খুশির কারন কি?
আসলে আমার স্বামী অনন্ত মুখোপাধ্যায় চট্টগ্রামে থাকেন। এ শহরে আমার আর কেউ নেই। তাই মন স্থির করেছিলাম চট্টগ্রামে চলে যাব।
তাহলে তো ভালোই হলো। আমি আবার মনঃপীড়ায় ভুগতেছিলাম যে আপনার শোকের মধ্যে বদলির আদেশ। তাছাড়া আমি আপনার স্বামীর কথা ভুলেই গিয়েছিলাম ।
দোয়া করবেন স্যার! চট্টগ্রামে গিয়ে যেন নীতি নৈতিকতার সাথে ভালোভাবে অফিসিয়াল দায়িত্ব পালন করতে পারি।
অবশ্যই! বিধাতা আপনাকে সততার সাথে সরকারি দায়িত্ব পালন তৌফিক দান করুন।
দীপাবলী ডিসিটি স্যারের রুম থেকে বের হয়ে নিজের রুমে এসে তার ডিপার্টমেন্টের সবাইকে ডেকে চট্টগ্রামে চলে যাওয়ার বিষয়ে জানালেন। তার বলার ভঙ্গি দেখে কেউ বুঝতে পারলো না যে, কেউ তাকে বদলী করেছে না কি তিনি নিজ আগ্রহে বদলী হয়েছেন?
সবাইকে বিদায় দিয়ে অনন্ত এর নিকট একখানা চিঠি লিখতে বসলেন।

অনন্ত, মেহেদি পাতা দেখেছ নিশ্চয় ?
উপরে সবুজ, ভেতরে রক্তাক্ত লাল
নিজেকে আজকাল
বড় বেশি মেহেদি পাতার মতো মনে হয়,
উপরে আমি অথচ ভিতরে কষ্টের যন্ত্রনার-
এমন সব বড় বড় গর্ত
যে তার সামনে দাড়াতে নিজেরী বড়ো ভয় হয়, অনন্ত।

তুমি কেমন আছো ?
বিরক্ত হচ্ছ না তো ?
ভালোবাসা যে মানুষকে অসহায়ও করে দিতে পারে
সেদিন তোমায় দেখার আগ পর্যন্ত-
আমার জানা ছিলো না।
তোমার উদ্দাম ভালোবাসার দূতি-
জ্বালিয়ে-পুড়িয়ে ছারখার করে দিয়েছে
আমার ভিতর- আমার বাহির
আমারই হাতে গড়া আমার পৃথিবী।

অনন্ত, যে দীপাবলী সুখী হবে বলে-
ভালোবাসার পূর্ণ চন্দ্র গিলে খেয়ে
ভেজা মেঘের মতো উড়তে উড়তে চলে গেল,
আজন্ম শূন্য, অনন্তকে আরো শূন্য করে দিয়ে-
তার মুখে এসব কথা মানায় না আমি জানি।
কিন্তু আমি আর এভাবে এমন করে পারছি না
আমার চারদিকের দেয়াল জুড়ে থই থই করছে
আমার স্বপ্ন খুনের রক্ত।
উদাস দুপুরে বাতাসে শিষ দেয়
তোমার সেই ভালোবাসা,
পায়ে পায়ে ঘুরে ফেরে ছায়ার মতোন-
তোমার স্বৃতি।
আমি আগলাতেও পারি না,
আমি ফেলতেও পারি না।
সুখী হতে চেয়ে এখন দেখি
দাঁড়িয়ে আছি একলা আমি,
কষ্টের তুষার পাহাড়ে।

অনন্ত, তোমার সামনে দাড়ানোর কোন
যোগ্যতাই আজ আমার অবশিষ্ট নেই।
তবুও,
তবুও তুমি একদিন বলেছিলে-
ভেজা মেঘের মতো-
অবুজ আকাশে উড়তে উড়তে-
জীবনের সুতোয় টান পড়ে যদি কখনো?
চলে এসো, চলে এসো-
বুক পেতে দেবো আকাশ বানাবো
আর হাসনা হেনা ফুটাবো,
সুতোয় আমার টান পড়েছে অনন্ত
তাই আজ আমার সবকিছু,
আমার এক রোখা জেদ,
তুমি হীন সুখী হওয়ার অলীক স্বপ্ন
সব, সব, সবকিছু
সবকিছু জলাঞ্জলী দিয়ে
তোমার সামনে আমি নতজানু।

আমায় তোমাকে আর একবার ভিক্ষে দাও
কথা দিচ্ছি-
তোমার অমর্যাদা হবে না আর কখনো ।
অনন্ত, আমি জানি-
এখন তুমি একলা পাষান কষ্ট নিয়ে ঘুরে বেড়াও,
প্রচন্ড এক অভিমানে-
ক্ষনে ক্ষনে গর্জে ওঠে অগ্নিগিরি,
কেউ জানে না, আমি জানি-
কেন তোমার মনের মাঝে মন থাকে না,
ঘরের মাঝে ঘর থাকে না,
উঠোন জোড়ার উপর কলস-
তুলসি তলের ঝরা পাতা,
কুয়ো তলার শূন্য বালতি-
বাসন-কোসন, পূর্নিমা-অমাবস্যা
একলা ঘরে এই অনন্ত-
একা একা শুয়ে থাকা
কেউ জানে না, আমি জানি,
কেন তুমি এমন করে কষ্ট পেলে-
সব হরিয়ে বুকের তলের চিতানলে-
কেন তুমি নষ্ট হলে?
কার বিহনে চুপি চুপি, ধীরে ধীরে-
কেউ জানে না, কেউ জানে না,
আমি জানি, আমিই জানি।

অনন্ত, আগামি শনিবার ভোরের ট্রেনে
তোমার কাছে আসছি,
আমার আর কিছু না দাও
অন্তত শাস্তিটুকু দিও।
ভালো থেকো !
তোমারি হারিয়ে যাওয়া দীপাবলী

চিঠিটা লেখা শেষ হলে অফিসের সবার নিকট থেকে বিদায় নিয়ে পথের মাঝে চিঠিটা পোষ্ট করে ফুরফুরে মেজাজে বাসায় ফিরলো।



চিঠির সূত্রঃ আবুল হোসেন খোকন ( দীপাবলী= মিথিলা)


দীপাবলী Click This Link
দীপাবলী-০১ Click This Link
দীপাবলী-০২ Click This Link
দীপাবলী-০৩ Click This Link
দীপাবলী-০৪ Click This Link
দীপাবলী-০৫ Click This Link
দীপাবলী-০৬ Click This Link

মন্তব্য ৪ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ০২ রা ডিসেম্বর, ২০২৪ দুপুর ২:৩৮

রাজীব নুর বলেছেন: এটা কি ধারাবাহিক উপন্যাস?

০২ রা ডিসেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৩:১১

রবিন.হুড বলেছেন: চেষ্টা করছি ধারাবাহিকভাবে প্রকাশ করার জন্য। পড়ে মতামত দিলে লিখতে উৎসাহ পাবো।

২| ০২ রা ডিসেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৫:১৪

পবন সরকার বলেছেন: ভালো লাগল

০২ রা ডিসেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৫:৫১

রবিন.হুড বলেছেন: পড়ে মতামত দেওয়ার জন্য ধন্যবাদ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.