নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

রবিন.হুড

রবিন.হুড › বিস্তারিত পোস্টঃ

প্রায় পাঁচশত বছরের পুরাতন দিঘী হচ্ছে গোবিন্দপুরের লস্কর দিঘী ও সুলতান দিঘী

১৩ ই মে, ২০২৫ বিকাল ৫:৩৮


দিঘির টলটলে জলে মাছখেকো পাখিদের দাপাদাপি। বক, মাছরাঙা, পানকৌড়ি আর চিল কী নেই। জলছোঁয়া শীতল বাতাস প্রশান্তি দেয় পথিকের গায়ে। শত শত বছর ধরে গ্রামের মানুষের পানির সংস্থানের বড় উৎসও এ দিঘি। ৫০০ বছরের প্রাচীন নিদর্শন এই দিঘি ইতিহাসের এক জীবন্ত সাক্ষী। ঐতিহ্যবাহী এই দিঘির নাম লস্কর দিঘী ও সুলতান দিঘী। এর অবস্থান গোপালগঞ্জের মুকসুদপুর উপজেলার গোবিন্দপুর ইউনিয়নে ।
বাংলায় স্বাধীন সুলতানি আমলে খনন করা দিঘিগুলোর মধ্যে অন্যতম প্রাচীন দিঘী দুটো রয়ে গেছে হারিয়ে যাওয়া ইতিহাসে আড়ালে। হোসেন শাহি বংশের প্রতিষ্ঠাতা (১৪৯৪-১৫১৯) আলাউদ্দিন হোসেন শাহ বিভিন্ন ভূস্বামীকে লস্কর উপাধি দিয়ে বাংলা সালতানাতের প্রশাসক ও সামরিক কমান্ডার নিযুক্ত করেন। দায়িত্ব পাওয়ার পর এলাকার উন্নয়ন ও জনগণের পানির অভাব দূর করতে বিভিন্ন জনপদে অনেক দিঘী খনন করেন যার মধ্য অন্যতম হচ্ছে গোবিন্দপুরের লস্কর দিঘী ও সুলতান দিঘী। ধারনা করা হয় যে কোন এক লস্কার সুলতানী আমলে গোবিন্দপুরের দিঘী দুটো খনন করে একটার নাম দেন লস্কর দিঘী এবং অপরটির নাম দেন সুলতান দিঘী।
উল্লেখ্য যে, মুকসুদপুরের গোবিন্দপুর হচ্ছে পাল আমলের বা তার পূর্বের জনপদ যার প্রমাণ পাওয়া যায় কষ্টি পাথরের বিষ্ণু মূর্তি উদ্ধার করার মাধ্যমে। গোবিন্দপুর ইউনিয়ন এর শাশুনিয়া গ্রামের আবুল খায়ের মোল্লা ও টুকু মুন্সী পুকুর খনন করতে গিয়ে কষ্টি পাথরের তৈরি বিষ্ণু মূর্তি খুঁজে পান যা পাল আমলের বলে ধারণা করা হচ্ছে। সেই বিবেচনায় গোবিন্দপুর হচ্ছে হাজার বছরের পুরানো জনপদ যা পরবর্তীতে ফতেহবাদ (ফরিদপুর) এর অন্তর্ভূক্ত হয়। ফতেহাবাদ আধুনিক ফরিদপুর শহরের সঙ্গে অভিন্ন এবং গোয়ালন্দ স্টিমার ঘাট থেকে ২০ মাইল দূরে পদ্মার একটি পুরাতন শাখার (মরাপদ্মা নামে পরিচিত) তীরে অবস্থিত। সুলতান জালালুদ্দীন মুহম্মদ শাহ এর (১৪১৫-১৪৩৩) শাসনামলে টাকশাল শহর হিসেবে প্রাথমিক পর্যায়ে এটি গড়ে ওঠে। রুকুনুদ্দীন বারবক শাহ (১৪৫৯-১৪৭৪) ও তাঁর পুত্র শামসুদ্দীন ইউসুফ শাহ এর (১৪৭৪-১৪৮১) সময় ছাড়া বাংলার স্বাধীন সুলতানদের (১৫৩৮ পর্যন্ত) আমলে টাকশাল হিসেবে শহরটির মর্যাদা অক্ষুণ্ণ ছিল। আইন-ই-আকবরীতে ‘হাউলি মহল ফতেহাবাদ’ বলে এর উল্লেখ রয়েছে। ষোল শতকে অংকিত ডি ব্যারোস (De Barros) ও ব্লেভ-এর মানচিত্রেও এ শহর ‘ফতিয়াবাস’ (Fatiabas) হিসেবে উল্লিখিত হয়েছে। ফন ডেন ব্রুক ভুলবশত এ শহরকে ’ ফাথুর’ (Fathur) বলে উল্লেখ করেন। দৌলত উজির বাহরাম খানের লাইলী-মজনু (১৫৬০-১৭৭৫) কাব্যে ফতেহাবাদের উল্লেখ পাওয়া যায়। পরবর্তীকালে আজমীরের মঈনুদ্দীন চিশতির (১১৪২-১২৩৬) শিষ্য এবং বিখ্যাত দরবেশ শাহ ফরিদউদ্দীন মাসুদের নামে ফতেহাবাদের নতুন নাম দেওয়া হয় ফরিদপুর। তিনি এ শহরে তাঁর খানকাহ প্রতিষ্ঠা করেছিলেন।
সম্ভবত শহরটি রণকৌশলগত বিবেচনায় গুরুত্বপূর্ণ ছিল। দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিম বাংলার বিরুদ্ধে অভিযানের সময় এ শহর সামরিক ঘাঁটি হিসেবে ব্যবহূত হতো। উচ্চপদস্থ মুগল সামরিক কর্মকর্তাদের বাসস্থানের নিদর্শন এ সাক্ষ্যই দেয় যে, সকল প্রকার নাগরিক সুবিধাসহ একটি উন্নত শহর হিসেবে এটি গড়ে উঠেছিল। মুগল সেনাপতি মুরাদ খান (১৫৭৪) ফতেহাবাদে বাস করতেন এবং এখানেই তাঁর মৃত্যু হয় বলে জানা যায়। আধুনিক ফরিদপুর শহর থেকে প্রায় ১৬ কিমি দূরে, খানখান্নাপুর নামে যে গ্রাম ও রেলস্টেশন রয়েছে সম্ভবত সেখানেই তাঁর বাসস্থান ছিল। সম্রাট জাহাঙ্গীর এর (১৬০৫-১৬২৭) সময়ের বিদ্রোহী জমিদার মুকুন্দ ও তাঁর পুত্র সত্রজিৎ-এর শক্ত ঘাঁটি ছিল এ শহরেই।

মন্তব্য ১ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (১) মন্তব্য লিখুন

১| ১৩ ই মে, ২০২৫ সন্ধ্যা ৬:৪৩

যামিনী সুধা বলেছেন:



দীঘিগুলোর দৈর্ঘ, প্রস্হ ও গভীরতা কত?

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.