![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
মনে করুন আপনার বয়স মাত্র উনিশ। মনে করুন আপনাকে একদল অপরিচিত মানুষের সাথে
অচেনা একটা জায়গায় পাঠিয়ে দেয়া হল। এমন কোথাও যেখান থেকে আপনি আর কোন দিন আগের জায়গায় ফিরে যেতে পারবেন না।
মনে করুন আপনার বৃষ্টিতে ভিজতে খুব ভাল লাগে, আর দশটা উনিশ বছর বয়সের ছেলে-মেয়ের মতই। কিন্তু আপনি ভিজতে পারেন না। কারন আপনার চারপাশের অপরিচিত মানুষগুলোর চোখে ব্যাপারটা ভাল নাও লাগতে পারে। এখন আপনাকে বাকি জীবন পার করতে হবে আপনার চার পাশের অচেনা মানুষ গুলোর মন মত। যদিও বয়স কিন্তু উনিশই থেকে গেছে। তাই আপনার এখনও স্বাধীনতা ভাল লাগে।
ভাল লাগে, একলা দূরে কোথাও চলে যেতে। ভাল লাগে বন্ধুদের সাথে হইচই করে ফুঁচকা খেতে।
ভাল লাগে চোখ ভরে স্বপ্ন দেখতে। বেলা করে ঘুম থেকে উঠতে। আর ভাল লাগে নিয়ম ভাঙ্গা দূরন্তপনা করে বেড়াতে। কিন্তু এগুলোর কোনটাই এখন আর সম্ভব না। কারণ আপনাকে আপনার চারপাশের অপরিচিত মানুষগুলোর ভাললাগা, মন্দলাগার দিকেও খেঁয়াল রাখতে হয়। যদিও আপনার বয়স কিন্তু সেই উনিশই থেকে গেছে। তাই আপনি এখনও স্বাধীনতায় বিশ্বাসী।
মনে করুন ঝাল করে রান্না বোঁয়াল মাছ খেতে আপনার খুব ভাল লাগে। কয়েকদিন আগেও তরকারিতে ঝাল একটু বেশি না হলে চেঁচিয়ে আপনি সারা বাসা মাথায় তুলতেন। কারণ কয়েকদিন আগেও আপনি আপনার নিজের বাসায়ই ছিলেন এবং সেখানে আপনার ভীষণ দাপট ছিল। তার উপর আপনার বয়স ছিল মাত্র উনিশ। কিন্তু এখন আপনার ঝাল করে রান্না বোঁয়াল খাওয়া হয় না। কারণ নতুন জায়গায় কেউ বোয়াল পছন্দ করে না। আর ঝাল ওদের সহ্য হয় না মোটেই। তাই আপনি ঝাল আর বোঁয়াল মাছ দুটোই খাওয়া বাদ দিয়েছেন। যদিও আপনার বয়স সেই উনিশই রয়ে গেছে। তাই আপনি এখনও স্বাধীনতার উপাসনা করেন।
মনে করুন আপনার শার্ট প্যান্ট পড়তে ভাল লাগে। সারা জীবন তাই পড়েছেন। কিন্তু আপনাকে এখন যেখানে পাঠানো হয়েছে সেখানে শার্ট-প্যান্ট পড়ার রীতি নেই। তাই শার্ট-প্যান্ট বাদ দিয়ে এখন আপনাকে নতুন মানুষগুলোর প্রচলিত পোশাক পরে তাঁদের সাথে মিশে যেতে হয়। যদিও আপনার বয়স সেই উনিশই থেকে গেছে। তাই আপনি এখনও স্বাধীনতার পূজারি।
এরকম জীবনের অজস্র পছন্দ-অপছন্দ সব বাদ দিয়ে আপনাকে এখন আপনার চার পাশের নতুন মানুষগুলোর পছন্দ অপছন্দের সাথে মিশে যেতে হয়। যখন ঠিক করে মিশে যেতে পারেন না, কিংবা যখন আপনার পছন্দ-অপছন্দের সাথে তাঁদের পছন্দ অপছন্দের সঙ্ঘাত হয় তখন আপনার ভীষণ কান্না পায়। খুব ইচ্ছে করে মায়ের কোলে মাথা রেখে একটু কাঁদতে। কিন্তু সেটাও আপনার পক্ষে সম্ভব নয়। কারণ আপনার বাবা-মা’ই আপনাকে এই নতুন জায়গায় নতুন মানুষগুলোর সাথে পাঠিয়ে দিয়েছেন। ফিরে যাবার কোন পথ খোলা নেই আজ। যদিও আপনার বয়স আজও সেই উনিশই রয়ে গেছে। তাই আপনার এখনও স্বাধীনতা ভাল লাগে।
মনে করুন আপনার বয়স যখন মাত্র কুড়ি কি একুশ, তখন আপনার কোলে একটা শিশু ধরিয়ে দেয়া হলো। এবার তো আর কোন কথাই নেই। এবার আপনি মা। পরম মমতায় বুকে আগলে ধরে আপনি সন্তান বড় করেন। রাতের ঘুম বাদ। দিনের আড্ডা, ছবি আঁকা, ঘুড়ে বেড়ানো, সখ সব বাদ। শুধু মাত্র বুকে জড়িয়ে ধরে সন্তান বড় করা। কিন্তু এবার আপনার আর কোন বয়স নেই। মায়েদের কম বা বেশি বয়স বলে কিছু নেই। মায়েদের বয়স “মাতৃত্ব” বছর। এখন আপনি বড় হয়ে গিয়েছেন। এখন আর আপনি স্বাধীনতা চান না। এখন আপনি শুধু আপনার সন্তানের ভাল, নিরাপদ, নিশ্চিত এবং সুস্থ একটা ভবিষ্যৎ চান। আপনার বাকি পুরোটা জীবন আপনি শুধু তাইই চাইবেন। কিন্তু যদিও কাগজে কলমে আপনার বয়স কিন্তু মাত্র কুড়িই রয়ে গেছে।
এই পোস্টটা যারা পড়লেন, তারা সবাই উনিশ বছর বয়স অনেক আগেই পার করেছেন। ভাবুন তো একবার, সেই বয়সে এত বড় রেস্পন্সিবিলিটি আমরা নিতে পারতাম কি! আমার মা কিন্তু পেরেছিলেন। আপনাদের অনেকের মা’ই কিন্তু পেরেছেন। হ্যাঁ, মা রা আসলেই সব পারেন। উনারাই আসলে আমাদের পৃথিবীর সত্যিকার “সুপার হিউম্যান।” চোখের সামনেই সুপার হিউম্যান থাকতে আমরা কেন যে শুধু শুধু পয়সা খরচ করে সিনেমায় সুপার-হিউম্যান দেখতে যাই তা কে জানে। চলুন নিশ্চিত করি যে বৃদ্ধ বয়সে উনাদের আরও একবার পরিচিত জগত ছেড়ে নতুন জগতে যেন যেতে না হয়। উনারা বাড়িতে যেন সেই মমতাটুকু ফেরত পান, যেটুকু আমাদের ছেলে বেলায় উনারা আমাদেরকে দিয়েছিলেন। কোন মায়ের যেন কখনও কোন ওল্ডহোমে মৃত্যু না হয় সেটা প্রতিজ্ঞা করা কি আমাদের জন্য খুবই কঠিন কোন কাজ! কাজটা কি মাত্র উনিশ বছর বয়স থেকে এর পরের বাকি পুরোটা জীবন আত্ম-ত্যাগ করার চেয়েও কঠিন!!!
পৃথিবীর সব মা কে গভীর শ্রদ্ধা ও ভালবাসা জানাই। ভালবাসি মা।
- "নাঈম অঙ্কন"
©somewhere in net ltd.
১|
১১ ই মে, ২০১৪ সকাল ৮:৪০
আজীব ০০৭ বলেছেন: পৃথিবীর সব মা কে গভীর শ্রদ্ধা ও ভালবাসা জানাই।