![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
ঢাকার আজিমপুরে জন্মেছি। বেড়েও উঠেছি এখানে। ঐতিহ্যবাহী ওয়েষ্ট এন্ড হাই স্কুল থেকে এসএসসি সনদপ্রাপ্ত আমার পৈত্রিক নিবাসটা কিন্তু ‘ইলশে পাড়া’- চাঁদপুরের হাজিগঞ্জ উপজেলার সাদরা গ্রামে।
।। নাসীমুল বারী ।।
ধূসর রঙের দ্বিতল দালান। বামেই বড় করে লেখা ‘বিষ্ণুচরণ পাঠাগার'।
দ্বিতল দালানের সমানে এক চিলতে মাঠ। পেছনেও এক চিলতে মাঠ। তার ডানে তিনতলা আরেকটি দালান। নাম ‘শামসুদ্দিন ভবন'। এ ভবনেই আজ শেষ পদচারণা। স্কুলের শেষ ক্লাস। অনুভবেও ধূসরতা। মনে তাই অনেক কষ্ট। ক্লাসটা আজই শেষ। নিয়মিত আগমন আর ঘটবে না এ আঙিনায়। এ ধূসর অট্টালিকায়।
আমার অনুভবে আজও সে ধূসর দালানটা অক্ষয় হয়ে আছে। এ ধূসর দালানটাই আমার প্রিয় স্কুল- ওয়েষ্ট এন্ড হাই স্কুল; অনুভবের শিহরণে আজও দোলা দেয়। শেষ ক্লাসের তারিখটা মনে নেই। টেস্টের তিন-চার দিন আগে হবে হয়ত। ক্লাসের শেষে রাফ খাতাটার শেষ খালি পাতায় বড় করে লেখি ‘বিদায় ওয়েষ্ট এন্ড হাই স্কুল’। তারপর - - -। তারপরের পৃষ্ঠা থেকে বন্ধুদের অটোগ্রাফ নিতে থাকি ওই খাতায়।
আমাদের বন্ধু আমীরুল ইসলাম; টুলু নামেই আমাদের কাছে পরিচিত। সে সময়ে কিশোর লেখক হিসেবে দেশময় পরিচিতও হয়ে উঠেছে। আমাদের ক্লাস ক্যাপ্টেনও। আমাদের সেকশনে ১৪৫ জন ছাত্র ছিল। আর তিন গ্রুপ মিলে সেবার এসএসসি পরীক্ষা দিয়েছিলাম সাড়ে তিনশ’র মত। আমীরুলের সাথে আমার সখ্যতা একটু ভিন্নমাত্রার ছিল লেখালেখির কারণেই। তাকে খাতাটা তুলে দিলাম। সে খাতা নিয়ে প্রায় আধঘণ্টা ভাবল। তারপর আমার নাম ‘নাসীম' এ তিনটি অক্ষরকে অদ্যাক্ষরে রেখে ছয় লাইনের একটা ছড়া লিখে দিল। পুরো ছড়াটি এখন মনে নেই- তবে প্রথম লাইনটি এমন ছিল, ‘নাইবা রইলাম আমি কাছে’।
স্কুলের ফেলে আসা সে ধূসর সময়টার চেয়েও বড় ধূসর- আমার এ খাতাটি নষ্ট হয়ে যাওয়া। আজও আমাকে কেউ কষ্টের কথা জিজ্ঞেস করলে বড় একটা নিঃশ্বাস ছেড়ে বলি, আমার সবচে' বড় কষ্ট আর দুঃখ স্কুলের শেষ দিনে বন্ধুদের অটোগ্রাফ দেয়া সেই খাতাটি নষ্ট হবার কারণটি।
আজও মনে পড়ে স্কুলকে। স্কুলের বন্ধুদেরকে। কৈশোরের দূরন্তপনা, দেয়াল টপকে স্কুল পালানো, টিফিনঘরে গিয়ে অতিরিক্ত টিফিন খাওয়া আর স্কুল গেটে মামুর হালিম- স্মরণের জানালায় দাঁড়িয়ে এসব ভাবতে কী না মজা লাগছে! পেছনে ফেলা ওয়েষ্ট এন্ড হাই স্কুলের এ চিরায়ত দৃশ্য। অনুভবের অনুরণনে মনটা কৈশোরে চলে যায়। বন্ধুদের আবার কাছে পেতে ইচ্ছে করে। চুটিয়ে আড্ডা দিতে ইচ্ছে করে। অপ্রাসঙ্গিক-প্রাসঙ্গিক, শ্লীল-অশ্লীল- সব কৌতুকী কথার বানে আবার হারিয়ে যেতে ইচ্ছে করে। হাশেম খান স্যারের প্রচ- ধমক, হেড স্যারের (আ. রশিদ সরকার) বেতের তাড়া, জুনাইদুল্লা স্যারের কানমলা, আশরাফুল হক স্যারের পড়ানোর ফাঁকে পৌরাণিক গল্প বলা, গেমটিসার আমির আলী স্যারের সাথে ভীষণ রকম দুষ্টুমী ইত্যাদি- শৈশব-কৈশোরের সেই ফেলে আসা স্কুল জীবনটা আবার ফিরে পেতেই অনুভব করি বন্ধুদের একত্র করা। তাদের সাথে চুটিয়ে আড্ডা দেয়া।
স্মরণের ডায়েরি হাতড়ে মনের আবেগ, কৈশোরিক অনুভূতির উন্মাদনা খুঁজছি। আড্ডা, কথার তুরি, কৈশোরিক দুষ্টামী; সেই যেন স্কুলের ছোটবেলা- তাই আনুষ্ঠানিক খাতা-কাগজে রেজুলেশন লিখে এসব আড্ডা হত না। স্বাভাবিক কারণেই সঠিক সময়টা মনে রাখার জন্য আজ আর কোন দালিলিক ভেণ্ডার নেই। তবু অবিচ্ছিন্ন ঘটনাগুলো বার বার ভেসে ওঠে চোখের সামনে মনের উঠোনে।
ফিরে দেখা এমনি এক বোধ, অনুভব নিয়ে অর্ধ পুরোনো এক ভেসপায় লিটারের পর লিটার তেল পুড়িয়ে যে বন্ধুটি আমাদের সংঘবদ্ধ করতে নিরলস প্রচেষ্টা চালিয়েছে, সে আমাদেরই অতি পরিচিত বন্ধু ডা. রুহুল আমিন।
নিরবিচ্ছিন্ন প্রচেষ্ঠার সেই ফসলেই আমরা আজ সুসংগঠিত, ভিত্তিশালী এক কৈশোরিক বন্ধুর দল। মাঝে মাঝে ভাবতে হয়, সত্যি আমরাতো কৈশোরেও এত ঐক্যবদ্ধ ছিলাম না। আজ কতই না ঐক্যবদ্ধ। কতই না মজবুত আমাদের মনের ভিত। অনুভবের ভিত।
এত বড় ভিত্তি সম্ভব হয়েছে শুধুমাত্র কৈশোরিক বন্ধুদের অপার অনুভূতির উচ্ছ্বাসে। নির্মল সে উচ্ছ্বাস আজও আমাদের স্কুল জীবনে ফিরিয়ে নেয় বার বার। আড্ডায় বসলে মনেই হয় না আজ আমরা পরিবার পরিপালনে পরিণত মানুষ। এখনও মনে হয় সেই উচ্ছ্বল কৈশোরের চঞ্চল বন্ধু আমরা। অনুভব আর আবেগে আমরা একাকার হয়ে যাই।
৯২ বছরে স্কুলটি সাফল্যের সোনালী সোপানে উঠেছে বহুবারই। ষাট-সত্তর-আশির দশকে দেশসেরা ১ম ৫টি স্কুলের একটি ওয়েষ্ট এন্ড হাই স্কুল। জন্ম দিয়েছে অসংখ্য সোনার ছেলের। দীর্ঘ এ পথ চলায় এসব শিক্ষার্থীরা দেশ ও জাতির জন্যে অবদান রেখে চলছে অবিরত। আজও বাংলাদেশের যে কোন সেক্টরেই পাওয়া যায় এ স্কুলের শিক্ষার্থী। ফলে এসব সোনার ছেলেরা স্কুলকে যেমন মহিমানি¦ত করেছে, গৌরবানি¦ত করেছে; তেমনি দেশ-জাতি এমনকি বিশ্বকেও দিয়েছে অনেক কিছু। সেসব সোনার ছেলেদের কীর্তিগাথাতেই আজ ঐতিহ্যের ধারক হয়েছে ওয়েষ্ট এন্ড হাই স্কুল।
ঐতিহ্যের পতাকাবাহী ওয়েষ্ট এন্ড হাই স্কুলকে নিয়ে আজও আমি অনুভব করি আমার ধমনীতে প্রবাহমান শিহরণকে। স্কুলের নাম শুনলেই হৃদয়ের অলিন্দে নেচে ওঠে সুখ-স্মৃতি। আমাদের কৈশোরিক ভালবাসা আর আনন্দ-ঝগাড়ার মুখরিত পট ওয়েষ্ট এন্ড হাই স্কুল। কালের বিবর্তনে হয়ত কিছুটা ক্ষয়ে গেছে এর স্বর্ণমুকুট; কিন্তুু মানুষ গড়ার কারিগররাতো এখনো আছে। আবার হয়ত রং-আলোতে সেজে উঠবে আমাদের প্রিয় এ স্কুলটি। এমন প্রত্যাশা করা অমূলক নয়। সে সুন্দরের প্রত্যাশায় আগামির দিন গুনছি।
#
১৯ শে এপ্রিল, ২০১৪ দুপুর ২:৪৩
নাসীমুল বারী বলেছেন: বলেছেন: ধন্যবাদ, আমার অনুভবটি পড়ার জন্য। আসলে কৈশোরিক অনুভব, স্মৃতি মানুষকে ক্ষণিকের জন্য হলেও আবেগপ্রবণ করে তোলে। মনে হয় 'ছোট্ঠবেলার সেই সময়টা' আবার যদি ফিরে আসত। কিন্তু মহাকালের ক্যানভাসে শুধু আাঁকা যায়, মুছা যায় না। তাই ফিরে আসে না ছোট্টবেলার সময়টি। রোমন্থন করেই ছোট্টবেলাকে অনুভব করা যায়। সেই আবেগ থেকেই আমার স্কুল বেলার দুষ্দুমীগুলো মনে করি মাত্র।
পাসস্পরিক মস্তব্য, প্রতিমন্তব্য অবশ্যই আমাদের জন্য মঙ্গলজনক বরে আমি মনে করি।
২| ১৯ শে এপ্রিল, ২০১৪ রাত ১০:২০
বেলা শেষে বলেছেন: নাসীমুল বারী, brother, this Moment i was reading another article- Indian politician they are demanding 1/3 Bangladesh dedicated to them!!! i am just speakingless!!!
©somewhere in net ltd.
১|
১৮ ই এপ্রিল, ২০১৪ সন্ধ্যা ৭:১৪
বিদ্রোহী বাঙালি বলেছেন: আপনার প্রিয় স্কুল ওয়েস্ট এন্ড হাই স্কুলের স্মৃতিচারণ পড়ে নিজেও কিছুটা স্মৃতিকাতর হলাম। বেশ আবেগ নিয়ে লিখেছেন বুঝা যাচ্ছে। ডায়েরিটা হারানোর যন্ত্রণা এখনো ভোগ করেন। সেটা থেকেই প্রমাণিত হয় কতটা অনুভব করেন স্কুল জীবনের বন্ধুদের এবং প্রিয় স্কুলটিকে। অনেক ভালো লাগলো নাসীমুল বারী।