নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

নাসীমুল বারী-র প্রযুক্তির উঠোনে স্বাগতম

নাসীমুল বারী

ঢাকার আজিমপুরে জন্মেছি। বেড়েও উঠেছি এখানে। ঐতিহ্যবাহী ওয়েষ্ট এন্ড হাই স্কুল থেকে এসএসসি সনদপ্রাপ্ত আমার পৈত্রিক নিবাসটা কিন্তু ‘ইলশে পাড়া’- চাঁদপুরের হাজিগঞ্জ উপজেলার সাদরা গ্রামে।

নাসীমুল বারী › বিস্তারিত পোস্টঃ

লেখকের স্বাধীনতা

০১ লা মে, ২০১৪ সকাল ১১:২২

।। নাসীমুল বারী ।।



মনের সাথে চেতনার উন্মুক্ত সহাবস্থানের প্রয়োগিক অনুভূতিটাই স্বাধীনতা। ব্যাকরণের রীতিতে বলতে পারি ‘স্ব' অর্থাৎ নিজের অধীনতা। যা-ই বলি না কেন, স্বাধীনতা মানে ইচ্ছেমত চিন্তা করার। সে চিন্তায় কাজ করার, কথা বলার, বসবাস করার অধিকার অর্জন করা। প্রাথমিকভাবে এ-ই স্বাধীনতার স্বরূপ। স্বাধীনতা মানুষের জন্য দু'ভাবে আসে। ব্যক্তিগত পর্যায়ে আর সামষ্টিক পর্যায়ে। ব্যক্তিগত পর্যায়ে নিজের কর্ম-চেতনায় নিয়ন্ত্রণহীন উন্মুক্ততা অর্জন। সামষ্টিক পর্যায় হল সামাজিক, রাজনৈতিক, ভৌগোলিকভাবে গোষ্ঠীবদ্ধ বা জাতিগত অধিকার কার্যকরণের নিশ্চয়তা। এ ক্ষেত্রে মূলত ভূ-রাজনৈতিক স্বাধিকারের যোগ্যতাকেই স্বাধীনতা বলে বিবেচনা করি। কিন্তু প্রথম পর্যায়ে ব্যক্তিগত ‘স্বাধীনতা' অর্জনের অন্যতম প্রধান পথ সাহিত্যচর্চা। সাহিত্যের মাধ্যমেই মত-চেতনার প্রকাশ ঘটে। চেতনার তৃতীয় দৃষ্টি মনের অনুভূতিতে সক্রিয় হয়ে ওঠে- রূপকল্পের ডানা ভর করে শিল্পীত অবয়বে প্রকাশ করে সাহিত্যে। এই তৃতীয় দৃষ্টিতে কোনো বাঁধা বা শৃক্সক্ষলা থাকে না। চিন্তার মুক্ততাই এখানে প্রকট। এই নিয়ন্ত্রণহীন উন্মুক্ততা অর্জন করে মুক্তচিন্তার বিকাশ ঘটানো যায়— তবে তা-ই ব্যক্তিগত স্বাধীনতা। যেহেতু সাহিত্যচর্চাকারী ‘লেখক' হিসেবে পরিচিত— তাই এমন ব্যক্তিগত স্বাধীনতাকে ‘লেখক স্বাধীনতা' বলা হয়।

সভ্যতা বিকাশের পথে সাহিত্যের এক বিরাট ভূমিকা রয়েছে। লেখক সাহিত্য সৃষ্টি করে। লেখকের অনুভূতি আর চেতনার মিশেলেই লেখার উৎপত্তি। যুগে যুগে লেখক তার চেতনার প্রকাশ দ্বারা সমাজ-সভ্যতাকে বিকশিত করেছে। বর্ণ আবিষ্কারের আগেই সাহিত্যের সৃষ্টি। তাই সাহিত্য সমাজে সহজেই প্রভাব বিস্তার করার ক্ষমতা অর্জন করে। লেখকের এ সৃষ্টিশীল কর্মে নিয়ন্ত্রণ না রেখে চিন্তার মুক্ত বিকাশ ঘটানোই লেখকের স্বাধীনতা।

একজন লেখক ‘স্বাধীনতা'র এ সুযোগ নিয়ে তাঁর লেখায় যে কোন বিষয়-ভাবনা আনতে পারেন। লেখক তার মনোচেতনাকে প্রাধান্য দিয়েই লেখার বিষয় উপস্থাপন করেন। সৃষ্টি হয় তার স্বকীয় চিন্তা-ধারার লেখা। সমাজে সে লেখা প্রকাশিত হয়। লেখার বিষয়-ভাবনার একটা রেশ ছড়িয়ে দেয়। সাহিত্যের এ নেপথ্য প্রভাব ধরেই ক্রমে সমাজ সভ্যতার পথে এগিয়েছে। সাহিত্যের এ সর্বজনীন গুণ অনন্তকাল ধরেই সমাজ-সভ্যতাকে নেপথ্যে শাসন করে আসছে। এমন সাহিত্য শাসকের কোন একজনের ভূমিকায় যদি সমাজে বিশৃঙ্খলা হানাহানির উদ্ভব হয়; সে লেখাকে কি ‘লেখক স্বাধীনতা'র প্রকৃত ফসল হিসেবে বিবেচনা করা যায়?

সভ্যতায় সমাজ ব্যবস্থাপনার গুরুত্বই প্রধান। সমাজকে বিশৃঙ্খলায় ফেলে কোন সমাজ-সভ্যতা বেড়ে উঠতে পারে না। বিকশিত হতে পারে না। কিংবা এমন সব বিশৃঙ্খলা সমাজ-সভ্যতার অধিবাসীরাও প্রত্যাশা করে না। তাহলে যে লেখা সমাজকে বিশৃঙ্খলায় ফেলে দেয়— সে লেখা কি সমাজ গ্রহণ করে? সমাজের স্বার্থে, সভ্যতার স্বার্থে সে লেখা গ্রহণ অযোগ্য।

আবার এমন লেখা লেখক লিখল, যাতে সমাজের নৈতিক ভিত্তি নড়ে ওঠে। নৈতিক শৃঙ্খলায় আঘাত হানে। নৈতিক গোপনীয়তাকে উন্মুক্ত করে দেয়। এমন লেখাও যুগ যুগ ধরে লেখে আসছেন অনেক লেখক। নামী-দামী প্রতিথযশা লেখকও এমনটি করেছেন। তাদের যুক্তি ছিল লেখকের স্বাধীনতা আছে— তাই এমন লেখা লিখতে অসুবিধা কোথায়? লেখকের এ কথা যদি মেনে নেয়া হয়, তা হলে প্রশ্ন এসে দাঁড়ায়- সমাজের প্রতি, সভ্যতার প্রতি লেখকের দায় কতটুকু। কিংবা তাদের দায়টা কী? তা হলে লেখকের স্বাধীনতার স্বার্থকতা কোথায়?

ভাবনার বিষয় এটাই— লেখকের স্বাধীনতা। বিতর্কের বিষয়ও এটাই— লেখেকর স্বাধীনতা। প্রতিটি মানুষের মধ্যেই রয়েছে নিজস্ব চিন্তা-ধারা। নিজস্ব বিবেক আর চেতনায় মত-পথ চিন্তা করার ক্ষমতা। লেখক বা ব্যক্তি একক স্বত্তা। তার একক স্বত্তার চিন্তা-বিবেকের স্বাধীনতা যদি সামষ্টিক সমাজ-সভ্যতায় আঘাত হানে, শৃঙ্খলা ভঙ্গ করে, নৈতিকতায় ব্যাতয় ঘটায়, পারিবারিক সৌজন্যবোধকে বিব্রত করে, সন্তানের সামনে পিতা-মাতার যৌন জীবনকে উন্মুক্ত করে দেয় কিংবা সাম্প্রদায়িক হানাহানির পথ তৈরি করে দেয়— তবে তা গ্রহণ করা, তাকে সমর্থন দেয়া কতটুকু যুক্তিযুক্ত। এভাবে একক লেখকের চেতনাকে প্রাধান্য দিয়ে সামষ্টিক সমাজ ব্যবস্থাপনাকে ক্ষতি করার স্বাধীনতা যদি লেখার স্বাধীনতা হয়— তাহলে ‘সমাজ স্বাধীনতা’ কি থাকতে পারে না? ‘সভ্যতার স্বাধীনতা’ কি থাকতে পারে না? সমাজ সভ্যতার স্বাধীনতা লেখক স্বাধীনতার চেয়েও বৃহত্তর। আমরা বৃহত্তর স্বাধীনতা গণ্য করব, নাকি একক (ক্ষুদ্রতর) স্বাধীনতা গণ্য করব। বিবেকের তাড়নায় মানুষ সৃষ্টির সেরা। সেই শ্রেষ্ঠত্বের বিবেক তো বৃহত্তর সামষ্টিক কল্যাণকে বাদ দিয়ে ক্ষুদ্রতর একক ক্ষতিকে গ্রহণ করার মত ভুল করতে পারে না। এমন ভুলের সময়ও বিবেক সক্রিয় হয়ে ওঠে। তাই সমাজ-সভ্যতার কল্যাণে, সমাজ সভ্যতার শৃঙ্খলা রক্ষায় ক্ষুদ্র একক স্বাধীনতাকে পরিত্যাগ করাই বিবেকের প্রকৃত কাজ। এটাই প্রকৃতির নিয়ম। স্বাভাবিক। এমন স্বাভাবিকতায় লেখকের স্বাধীনতার প্রসঙ্গে প্রশ্ন, তবে কি লেখকের স্বাধীনতা থাকবে না? তার লেখা-চেতনাকে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে? আদেশের ভিত্তিতে লেখক লিখবে? হুকুমের তাগিদে লেখক লিখবে?

না, এটাও হতে পারে না।

তা হলে লেখকের স্বাধীনতার স্বরূপ কেমন হবে?

মানুষ গুহাবাসী ছিল, অসভ্য ছিল। প্রত্নতাত্বিকদের কথা এসব। আমি অবশ্য বিশ্বাস যাই না। পবিত্র কুরআনে আল্লাহ মানুষকে জ্ঞানের সেরা করেই সৃষ্টি করেছেন বলে জানিয়েছেন। তা হলে সে মানুষ কেন অসভ্য হবে? কিংবা কারও মতে ‘বানর’ হবে? তা হলে তো ‘বানর’ই সৃষ্টির সেরা হয়ে যায়। তাহেলে আজকের বানর কেন ‘মানুষ’ হয় না। কিন্তু না, মানুষ— মানুষই সৃষ্টির সেরা। সৃষ্টির শুরু থেকেই মানুষ সৃষ্টির সেরা। এ শ্রেষ্ঠত্বের অন্যতম প্রধান কারণ বিবেক-বুদ্ধি। মানুষের চেতনায় বিবেকের অংশগ্রহণ অবশ্যাম্ভাবী। ‘লেখক' একজন মানুষ। তার মধ্যেও বিবেক আছে। আছে সৃষ্টির শ্রেষ্ঠত্বের আভিজাত্য। গুণাবলী। তাই তাঁর লেখায় সমাজ-সভ্যতা গড়ে উঠবে। নতুন নতুন মত পথের সন্ধান পাবে। সাধারণ মানুষ সে সব মত ও পথ থেকে বেছে নেবে তার রুচিবোধ। ম্যাক্সিম গোর্কী ‘মা’ উপন্যাস লিখেছেন। কথাসাহিত্যর এ শক্তিশালী মাধ্যমে তিনি শাসকগোষ্ঠীর নির্যাতনের বিরুদ্ধে শ্রমজীবীদের উত্থানকে জাগিয়েছেন। কাজী নজরুল বৃটিশ সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে নিজেদের স্বাধিকারের চেতনা জাগিয়েছেন। রবীন্দ্রনাথ আধ্যাত্ম চেতনায় সৌন্দর্যের একটা আবহ তৈরি করেছেন। নসীম হিজাজী ইসলামের মূল্যবোধে সমাজ গড়ার প্রত্যয়কে প্রাধান্য দিয়েছেন তাঁর উপন্যাসে। এভাবেই প্রতিটি ভাষায়, প্রতিটি সময়-সমাজে, প্রতিটি লেখক তাঁর নিজস্ব চিন্তা-চেতনাকে সমাজের জন্য উপস্থাপন করেছেন। সমাজ এবং সমাজের নাগরিকরা সকলেই সম্পূর্ণভাবে কোন লেখকের প্রভাবকে গ্রহণ করেন নি; ভিন্ন ভিন্ন অবস্থানেই লেখকের চেতনার সাথে একান্ত হয়েছেন। এটাই লেখক স্বাধীনতার ভিত্তি হওয়া উচিৎ। আর বিশৃঙ্খলা তৈরি হয়, অনৈতিক রুচিবোধের উম্মেষ ঘটায়, সাম্প্রদায়িক হানাহানির জন্ম দেয়— এমন লেখার জন্মদাতা লেখক তার নিজের প্রতিই অবিচার করেন। মনুষ্যত্বের অবমাননা করেন। এমন লেখা লেখকের স্বাধীনতা নয়— ‘স্বাধীনতা’র সুযোগ গ্রহণ করা অপপ্রয়োগ মাত্র। লেখকের এমন অপস্বাধীনতা সমাজ-সভ্যতার জন্য সুখকর কিছু দিতে পারে না।

লেখকের স্বাধীনতা আসলে কোন আইন বা বিধি দিয়ে নিয়ন্ত্রণ করার বিষয় নয়। ‘লেখক স্বাধীনতা' লেখককে স্বপ্রণোদিত হয়েই নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। এ নিয়ন্ত্রণ লেখকের নিজস্ব মনো-চৈতন্যে সমাজের দায়বদ্ধতার অনুভূতির ভিত্তিতে হবে। সমাজের প্রতি, সভ্যতার প্রতি যদি লেখক সমান্যতমও দায়বোধ মনে করেন, আর সে দায়বোধকে সমুন্নত রাখতে লিখে থাকেন, তবে সে লেখার স্বাধীনতা অবশ্যই গ্রহণীয়। এমন লেখায় আর যা-ই হোক অন্তত সমাজ-সভ্যতা বিশৃঙ্খলা-অনৈতিকতার রূঢ় হাসি দেবে না।

লেখকের এমন স্বাধীনতাই হোক বিষয়-ভাবনায় সমাজ-ভাবনায় ইতিবাচক মনোবৃত্তি। তবেই লেখকের স্বাধীনতা স্বার্থকতা খুঁজে পাবে।

#

আরও দেখুন :

পুরুষ ছেঁটে ফেলেছি, এখন লিঙ্গ রাখতে চাই না

মন্তব্য ২ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ০১ লা মে, ২০১৪ সকাল ১১:৩৬

মামুন রশিদ বলেছেন: চমৎকার লেখা ।

০১ লা মে, ২০১৪ দুপুর ১২:০৩

নাসীমুল বারী বলেছেন: ধন্যবাদ, পড়ার জন্যে।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.