নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

নাসীমুল বারী-র প্রযুক্তির উঠোনে স্বাগতম

নাসীমুল বারী

ঢাকার আজিমপুরে জন্মেছি। বেড়েও উঠেছি এখানে। ঐতিহ্যবাহী ওয়েষ্ট এন্ড হাই স্কুল থেকে এসএসসি সনদপ্রাপ্ত আমার পৈত্রিক নিবাসটা কিন্তু ‘ইলশে পাড়া’- চাঁদপুরের হাজিগঞ্জ উপজেলার সাদরা গ্রামে।

নাসীমুল বারী › বিস্তারিত পোস্টঃ

গল্প : দুঃখিত, আমি গল্প লিখতে পারবো না

২৫ শে জুলাই, ২০১৫ সন্ধ্যা ৬:৫২

: নাসীমুল বারী :

মোবাইল ফোন বেজে ওঠে।
কোনো নাম নেই, তার মানে অপরিচিত কেউ। তাতে কি? আমি ফোনটা রিসিভ করি। ও প্রান্ত থেকে অতিশয় ভদ্রোচিত কণ্ঠে বলে, আমি আবু জাবির আবদুল্লার সাথে কথা বলতে চাই।
- জ্বি, বলুন। আমিই।
- আমি দৈনিক বেলাভূমির সাহিত্য সম্পাদক বলছি।
- ও আচ্ছা, সাহাদাত ভাই? বলুন বলুন। এটা তো আপনার অন্য নাম্বার?। এটা সেভ নেই।
হাসতে হাসতে জবাব দেই। সাথে সাথে সাহিত্য সম্পাদক সাহাদাত আকবর বলেন, আপনার কাছে যেটা সেভ আছে ওটাও আমার, এটাও আমার। আপনি যে কোনো নাম্বারে যখন তখন আমাকে পাবেন।
আমি প্রসঙ্গ বদলিয়ে বলি, আচ্ছা, হঠাৎ ফোন কেন সাহাদাত ভাই?
- আপনি তো গল্প লেখা বন্ধ করে দিয়েছেন। বছরখানেক ধরে আপনার কোনো লেখা কোনো পত্রিকায় দেখি না। অনেককে আপনি বলেছেন আপনি লেখেন না।
- হাঁ।
- আজ আমি একটা গল্প চাই। এবার আপনাকে লিখতেই হবে। আগামী মাসে আমাদের প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী সংখ্যায় যাবে ওটা। গর্জিয়াস সংখ্যা হবে।
- আমাকে গল্প দিতে হবে?
- দিতে হবে মানে? দিতেই হবে। দারুণ একটা গল্প দেবেন। নতুন গল্প। এ সময়ের গল্প। কালই আমি পত্রিকায় ঘোষণা দিয়ে দিচ্ছি, আপনার গল্প যাবে।
- আরে! আরে করেন কী? আমি তো এখন লেখি না।
- কেন লিখেন না? কেন লিখবেন না?
- দেখেন না, লেখা ছাপানোর পর আবার ক্ষমা চাইতে হয়। কুশপুত্তলিকা পোড়ায়। আদালতে দৌড়াতে হয়। এ বয়সে এসব সইতে পারব না।
- না ভাই, আমার দাবী, অনেক বেশি দাবী- আমাকে গল্প দিতেই হবে। দীর্ঘদিন পর পাঠকরা আপনার গল্প পাবে। প্লিজ, জাবির ভাই।

আমি গল্পকার।
ঔপন্যাসিক। সোজা কথায় কথাসাহিত্যিক। দেশের অতি পরিচিত লেখকের একজন আমি। নিয়মিতই লিখি আমি। দেশের প্রায় সব পত্রিকাতেই লেখা ছাপা হয়। কিন্তু এখন অনেক দিন লেখা বন্ধ।
আজকাল অবশ্য লিখতে একটু ভয় করে। লেখার জন্যে কখন আবার কে তেড়ে আসে, কে জানে? এই তো সম্প্রতি দেশেরই আরেক জনপ্রিয় আর প্রতিষ্ঠিত লেখকের একটা গল্প নিয়ে কী কা-ই ঘটিয়েছে একটা শ্রেণি। দেশেরই আরেকটি অতি জনপ্রিয় আর পরিচিত পত্রিকার নববর্ষ সংখ্যায় সেটা ছাপা হয়েছিল। কিন্তু পত্রিকা কর্তৃপক্ষ শেষ পর্যন্ত তাদের অনলাইন সংখ্যা থেকে তা বাদ দিতে বাধ্য হয়। শুধু তা-ই, এ নিয়ে লেখককে আদালতের কাঠগড়ায়ও দাঁড়াতে হয়েছে। অথচ গল্পটা সরকার বা রাষ্ট্রবিরোধী নয়। আমাদের চলমান সমাজেরই স্বাভাবিক দৃশ্য ছিল সেটা।
সে থেকেই আমার ভয় ধরে গেছে।
একটা ঘটনাকে সাধারণ মানুষ যে ভাবে দেখে, লেখক আরেকটু গভীরে দেখে। ষষ্ঠ ইন্দ্রিয় দিয়েও দেখে। আমিও দেখি। আর অমন দেখা দৃশ্য নিয়েই আমি সৃষ্টি করি আমার সাহিত্য- গল্প উপন্যাস। পাঠক পড়ে। অনুভব করে নিজেদের মতো করে। এ অনুভবে কেউ পুলকিত হয়। কেউ রোমাঞ্চিত হয়। কেউ খুশি হয়। আবার কেউ রাগে জ্বলে ওঠে। এটাই সাহিত্যের ধারা। রাগের ঝাল মেটাতে লেখককে শান্তিও পেতে হয়। তবু লেখক লিখে, আমিও লিখি।
কিন্তু আজ ভয় করছে।
বয়স হয়েছে। যৌবনের যুদ্ধে যাবার মতো সময় এখন আর নেই। চোখেও একটু ঝাপসা দেখি। লেখায় যাদের জ্বালা ধরে, তারা এখন কিন্তু খুবই শক্তিশালী। যদি আমার উপর আক্রমণ করে, তবে এ বয়সে সে ভার হয়ত সইতেই পারবো না। ভয়টা তাই। শারীরিক ভয়, চেতনার ভয় নয়।
আজ জোর করে সাহাদাত আজ ভাই লেখা চেয়েছে। লেখব?
ভাবতে ভাবতে চলে গেল ক'দিন।
আবার সাহাদাত ভাইয়ের ফোন। ফোন ধরেই বলেন, আমাকে ক্ষমা করেন। আমি ফোন দিতে ভুলে গেছি এ ক'দিন। কাজের যা চাপ, বড় সংখ্যার কাজ তো। যাক, লেখা রেডি তো? লোক পাঠিয়ে দেব বাসায়?
- না।
আমার কথা শুনে সাহাদাত কেমন যে থমকে গেল, ফোনে আমি তা স্পষ্ট বুঝতে পেলাম। সাহাদাত ভাই আবার কথা বলেন, আবু জাবির ভাই, কেন না?
- আরে শুনবেন তো, কেন ফোন করেছি। আমি আরও ক'দিন সময় চাইছি। গল্পের দারুণ এক প্লট পেয়েছি। এ সময়ের হিট ঘটনা। তাই সময় নিয়ে মন দিয়ে লিখতে চাই।

এবার গল্প লেখার পালা।
সমাজ বাস্তবতা, সমাজের বিষয়-আসয়- এসব নিয়েই আমি গল্প লিখি। লেখক হিসেবে সামাজিক দায়বদ্ধতা আছে আমার। তাই সমাজ বাস্তবতার চিত্র আঁকতে আমার পছন্দ। এখন দেশে অনেকগুলো বড় বড় সামাজিক ঘটনা ঘটে গেছে। প্রায় একই সময়ের ঘটনা। কোনটা নিয়ে লিখব?। ঘটনাগুলো আমাদেও দেশ-সমাজে প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে। এসব ঘটনার পেছনেও রয়েছে ঘটনা। রয়েছে ভিন্ন ভিন্ন চেহারার কুশলীব। ধরা-ছোঁয়ার বাইরে ওরা। ওদের স্বরূপ যদি দেশের মানুষ, সমাজের মানুষ জানে ও চেনে, তাতে দেশ-জনগণেরই উপকার। এই জানানো বা চেনানোর কাজটা তো লেখকদেরই করা উচিত। আমি এমনটিই মনে করি। তাই তো ভাবছি অন্তত তেমন কোনো একটি বিষয় নিয়েই লিখতে হবে আমাকে।
ভাবছি আর ভাবছি।
হঠাৎ মনে এলো বিষাদ সিন্ধুর সীমারের কথা। সে বলেছে অর্থই পৃথিবীর সব। তাই তো! আমাদের এখানেও তেমনটি ঘটেছে। এ সময়ের সীমারেরা একদম লুটে নিয়ে গেছে দেশের জনগণের হাজার হাজার কোটি টাকা। দলবদ্ধভাবে লুট। এতো অর্থ কেমনে নিল ওরা? ওদের উচ্চমেধা আর কৌশলকে কুপথে চালিয়ে ব্যাংক থেকে নিয়ে গেছে অত টাকা। আরব্য রজনীর সেই বিখ্যাত চোর আলীবাবার চুরির চেয়েও এ লুটের দান অনেক বড়। আর তাই এরা চোর নয় ডাকাত। সাক্ষাত ডাকাত। আলী বাবা চুরির ধন পাহাড়ের গুহায় রেখেছিল- এরা কোথায় রেখেছে? এসব ঘটনা ঘটানোর কুশলীবরা কিন্তু সাধারণের দৃষ্টির বাইরে। চোখের বাইরে। আমি পর্দার অন্তরালের অমন প্রধান নায়কদের নিয়েই লিখব। চেনাব। জানাব দেশের মানুষকে। আমার পাঠককে।
গল্পের বিষয়টা এবার তাদের নিয়েই।

ক'দিন পর সাহাদাত ভাই ফোন দেন। সাথে সাথেই আমি বলি, গল্প লেখা হয়ে গেছে। কীভাবে পাঠাবো?
- ধন্যবাদ। কাউকে পা-ঠা-বো. . .? না, থাক। আপনার লেখা আর দেখা নেই অনেক দিন, আমিই আসব। রাতে আসব ভাই।
- আচ্ছা।
রাত ন'টার দিকে কলিং বেল বেজে ওঠে।
আমি খুলি। খোলার জন্যে প্রস্তুতই ছিলাম। দরজা খুলতেই বড়গলায় দরাজকণ্ঠে সাহাদাত ভাই সালাম ঠুকে, আস্সালামু আলাইকুম। আমি জবাব দিয়ে হাত ধরে তাকে ড্রইং রুমে বসাই। তারপর কথাবার্তা, একটু গল্প চলে। নাস্তা হয়ে যায়। এরইমধ্যে আমি গল্পের পা-ুলিপিও দেই।
গল্প নিয়ে চলে যান সাহাদাত আকবর।
পরদিন সকার দশটার দিকে আমাকে ফোন দেয়। আমি ধরি। সাহাদাত ভাই বিনয়ের সুরে বলেন, আবু জাবির ভাই গল্পটা দারুণ। বিষয়ের সাথে উপস্থাপন সম্পর্কটা ভীষণ পছন্দের। কিন্তু . . .!
তার দ্বিধা¦িত এ ‘কিন্তু'তে আমিও চিন্তিত হয়ে পড়ে। ব্যাপার কী? তাই শান্ত কণ্ঠে জিজ্ঞেস করি, বলুন কী যেন বলতে চেয়েছেন?
- আপনার নায়করা সরকারের ভেতরের শক্তিশালী অংশ। গল্প ছাপা হলে তারা যদি আমার টুটি চেপে ধরে, তা কি সহ্য করতে পারবো? কিংবা আমার কর্তৃপক্ষ? কিংবা পত্রিকা যদি বন্ধ করে দেয়? এ গল্পে আমারই না চাকরি যায়? আমরা তো ভাই ছা-পোষা মানুষ। চাকরিই সম্ভল। পত্রিকা-মিডিয়াই আমাদের ভরসা।
আমি ভাবনায় পড়ে যাই।
আমার জন্যে অন্যদের রুটিরুজি বন্ধ হয়ে যাবে? না, থাক। অন্য গল্প লিখে দেই। এ গল্পটা আমার পরের নতুন বইতে দেব। তখন এর দায় আমিই নেব। ভাবনাটা শেষ করে সাহাদাত ভাইকে বলি, বাদ দেন এ গল্পটা। অন্য একটা গল্প দেব। আজই লিখব। রাতে আসেন।
ওই গল্পটা বাদ।
নতুন গল্প লিখতে হবে। বিষয়টা কী নেব?
আবারও ভাবছি এবং দিনের মধ্যেই ভাবনা আর লেখা শেষ করতে হবে আমাকে।
রাতে আসেন সাহাদাত ভাই। আমি তাকে নতুন গল্পটা দেই। সাহাদাত ভাইয়ের মুখটা বেশ উজ্জ্বল হয়। এতো তাড়াতাড়িই নতুন গল্প পেয়েছেন। বছরখানেক পর এই প্রথম আমার গল্প ছাপা হবে। দারুণ চমক! সোফায় বসতে বসতেই সাহাদাত ভাই খোশ মেজাজে বলেন, ভাই এবারের বিষয়টা কী জানতে পারি? নিশ্চয় আমাকে বিপদে ফেলবেনা, তাই তো?
আমি হাসতে হাসতে জবাব দেই, একদম ঠিক। আপনার ভয়ের কোনো কারণ নেই। এবারের চরিত্ররা ক্ষমতায় নেই। উপরন্তু আন্তর্জাতিকভাবেই তাদের উপর একটা অভিযোগ আছে। দক্ষিণাঞ্চলের কোটি মানুষকে বঞ্চনা করে, বিশ্বে দেশের মান-সম্ভ্রম লুটে পদ্মাসেতুতে বাঁধা হয়েছে যে সব কুশলীব, তাদের নিয়েই গল্প। বুঝছেন? আপনার তো ভয় নেই এবার।
চুপসে যায় এতোক্ষণের উজ্জ্বল চেহারা। মৌনকণ্ঠে সাহাদাত ভাই বলেন, না, ভাই না। এ বিষয়টাও কি বদলানো যায় না?
- কেন? ওখানে তো কেউ ক্ষমতার দৃশ্যেই নেই।
আমি একটু চমকে জিজ্ঞেস করি।
- ভাই এ ঘটনার কুশলীবরা আরও শক্তিশালী। এদের কেউ বিগত সময়েও ক্ষমতাচ্যুত হয়েছে, এবারও। আন্তর্জাতিকভাবে একটা অভিযোগও আছে। তারপরও তাদের সামান্যতম কিচ্ছু হয় নি। বারবার বলে বেড়াচ্ছে এরা অত্যন্ত শান্তিপ্রিয়। অথচ কষ্ট আর দূর্দশা যদি হয়েই থাকে, তা জনগণেরই। ক্ষতি যদি হয়েই থাকে, তা জনগণের অর্থেরই। বুঝেন ক্ষমতা না থাকলে কি এখনও শান্তিতে সুন্দর জীবন যাপন করতে পারে সেসবেরা? এসব শান্তিপ্রিয় মানুষের শক্তি কত ভয়ঙ্কর আপনি জানেন না হয়ত।
- এটাও বাদ? অন্য নতুন কিছু?
কথাটা শেষ হতে হতেই চিৎকার দিয়ে বলি, সাহাদাত ভাই পেয়েছি। ইউরেকা ইউরেকা।
হাস্যোজ্জ্বল মুখায়বে সাহাদাত ভাই বলেন, আরে, আরে বলেন তো কী?
- এবারের গল্পের পাত্ররা সবাই ক্ষমতার বাইরে। দেশের লক্ষ লক্ষ ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের নিয়ে যারা কুতকুত খেলেছে পুঁজিবাজারে, তাদের নিয়ে লিখব।
- আরে বলেন কী? সর্বনাশ!
ভীষণ ভয়ার্ত কণ্ঠে সাহাদাত ভাই চমকে ওঠেন! আমি তার চেয়েও চমকে শুধু তার দিকে ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে থাকি কিছুক্ষণ। তারপর নিজেকে সামলে নরোমকণ্ঠে জিজ্ঞেস করি, ভয় পেয়েছেন বুঝি?
- পাবো না মানে? চেনেন তাদের?
- কেন, কী হয়েছে? এরা তো কেউ এখন ক্ষমতায় নেই। ক্ষমতার আশেপাশেও নেই। রাষ্ট্রের ক্ষমতার বাইরে এরা। এদের কী শক্তি আছে?
- এরা ক্ষমতায় নেই সত্য, কিন্তু ম্যাঙ্গানিজ ডাই-অক্সাইডের মতোই ক্ষমতার প্রভাবক। পুঁজিবাজার কেলেঙ্কারীর তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করতে খোদ অর্থমন্ত্রী পর্যন্ত সাহস পান নি। জানেন সে খবর?
- হাঁ, তাই তো?
- তা হলে বুজুন এদের ক্ষমতা। আরও শুনবেন? ক্ষমতার বাইরের থেকেও এদেরই কেউ অনেক আগে একবার বাংলাদেশ গবর্নরের উপর চড়াও হয়েছিল। স্মৃতির ডায়েরি থেকে কি তা মুছে ফেলেছেন আপনি?
দাঁত দিয়ে কলমটা কামড়াচ্ছি আর ভাবছি। ভাবতে ভাবতেই বলি, সাহাদাত ভাই ঘটনা ভয়াবহই বটে। না . . . থা - থাক।
কিছুক্ষণ বসে আছি চুপচাপ দুজনেই।
নীরবতা ভেঙে আমিই বলি, আচ্ছা আজ যান। কাল নতুন গল্প দেবো। এবার এমন কোনো শক্তির পেছনে ছুটব না। একদম সাধারণ মানুষকে নিয়ে যারা খেলছে, কোনো অবস্থাতেই সরকারের সামনে পেছনে নেই, তাদের নিয়েই লেখব। এবার আপনি বাঁচবেনই। কাল আসেন?।
ঠিক ঠিকই পরদিন সাহাদাত ভাই এসে কড়া নাড়েন। বৈদ্যুতিক কড়া। আমি দরজা খুলি। হাসতে হাসতে তাকে নিয়ে সোফায় বসাই। তারপর বলি, এবার আপনার ভয় নেই। একদম ভয় নেই।
- কী? বিষয়টা কী এবারের?
- একদম সাধারণ। এ দেশের জনগণকে রাতারাতি লাখপতি বানাতে স্বপ্ন দেখাচ্ছে এমএলএম ব্যবসায়িরা। এ স্বপ্নের প্রতরণায় ওরা হাজার হাজার কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে সহজ সাধারণ মানুষের। এরা নিজেদের নামে সম্পদের পাহাড় গড়েছে, ঠকছে সাধারণ মানুষ।
- এদের নিয়ে?
সংশয় আর ভীতুভাব নিয়ে জিজ্ঞেস করে সাহাদাত ভাই।
- কেন? এবারও কি ভয়?
- এদের প্রধান কিন্তু দেশের স্বাধীনতায় অবদান রেখেছেন। তাঁদের নিয়ে লিখেছেন? থাক না আবু জাবির ভাই, এসব বিষয় বাদ দেন। আপনি বরং টিন-এজদের প্রেম-ভালবাসা ইত্যাদি নিয়ে একটা গল্প লিখে দেন। এমন গল্প হৃদয়ের- দেশের নয়। দেশের মানুষের জন্যে নয়। সুকুমার রায়ের বাবুরাম সাপুড়ের মতো। এমন গল্পে আপনার আমার কারও বিপদ হবে না।
আমি কোনো কথা বলছি না।
ক্ষণিকপর বলি, সাহাদাত ভাই একটা কৌতুক শুনবেন? ছোট্ট বেলায় শুনেছিলাম।
সাহাদাত ভাই একটু মনোযোগী হয় আমার প্রতি। আমি বলি, ট্রেনে যাচ্ছেন ক'জন লোক। পরিচয় পর্ব চলছে। শেষেরজন পরিচয় দিলেন, আমি লেখক। সাথে সাথে পাশেরজন বলে, আপনি কী লেখেন, গল্প, উপন্যাস, কবিতা? লোকটি বলে, না, ওসব কিছু না। আমি হিসাব লিখি।
সাহাদাত ভাই হেসে দেন।
আমি হাসি নি। একটু ভরাট গলায় বলি, সাহাদাত ভাই, আমাকেও কি তেমন হিসাব লেখক হতে হবে?
- মানে! ছি, ছি! আমি কি আপনাকে তেমন বলছি? ছি, ছি!
- তেমন বলার আর বাকি কী? পত্রিকা বন্ধ না হয়, তেমন গল্প লিখব। আপনার নির্দেশনা মতো গল্প লিখব- এমনি আপনাদের হিসাব নিকাশে উত্তীর্ণ গল্প লেখায় আর হিসাব লেখায় তফাৎ কই।
কথাটা বলে একটু থামি। সাহাদাত ভাইয়ের দিকে তাকাই। একটু মুচকি হেসে আবার বলি, ভাই, দুঃখিত আমি গল্প লিখতে পারবো না।
#

মন্তব্য ৫ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৫) মন্তব্য লিখুন

১| ২৫ শে জুলাই, ২০১৫ রাত ৮:৩১

লিংকন১১৫ বলেছেন: ভালো লাগলো

চালিয়ে যান ।

১৪ ই আগস্ট, ২০২০ বিকাল ৫:১৬

নাসীমুল বারী বলেছেন: ধন্যবাদ গল্পটি পড়ার জন্যে।

২| ২৫ শে জুলাই, ২০১৫ রাত ৮:৩৪

নাসীমুল বারী বলেছেন: ধন্যবাদ গল্পটি পড়ার জন্যে।

৩| ২৭ শে জুলাই, ২০১৫ বিকাল ৩:৫৭

হাসান মাহবুব বলেছেন: ভালো লেগেছে।

২৭ শে জুলাই, ২০১৫ বিকাল ৫:৫৪

নাসীমুল বারী বলেছেন: বলেছেন: ধন্যবাদ গল্পটি পড়ার জন্যে।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.