নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
যবে উৎপীড়িতের ক্রন্দল-রোল আকাশে বাতাসে ধ্বনিবে না, অত্যাচারীর খড়্গ কৃপাণ ভীম রণ-ভূমে রণিবে না- বিদ্রোহী রন-ক্লান্ত। আমি সেই দিন হব শান্ত।
অতি উৎসাহ ভাল না
হাদিসের মর্ম আমলে না নিয়ে, সময়ের বিবর্তনে যুগের চাহিদার আলোকে পরিবর্তিত অবস্থা, প্রেক্ষাপট এবং বাস্তবতাকে মাথায় না রেখে 'বিদআত', 'বিদআত' বলে যারা পৃথিবীকে মাথায় তুলতে চায়, ভাল মন্দ নির্বিশেষে সকল কাজকেই যারা বিদআত আখ্যায়িত করে মজা পেতে চান, বিদআত না হওয়া সত্বেও অনেক কল্যানকর কাজকে বিদআত বলে পূর্নাঙ্গ জীবন বিধান ইসলামের অঙ্গহানি করে যারা 'অপূর্নাঙ্গ ইসলামকে' বিশ্ববাসীর কাছে উপস্থাপনের দু:স্বপ্ন দেখেন, তাদের এরকম লম্ফঝম্ফ করাও সম্ভবত: নিকৃষ্ট বিদআতেরই নামান্তর। কারন, তাদের মত 'বিদআত', 'বিদআত' বলে এরকম জিকির রাসূলে মাকবুল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কিংবা তার আসহাব রাদিআল্লাহু তাআ'-লা আনহুমদের কারও মধ্যে ছিল বলে শোনা যায় না।
সতর্কতার প্রয়োজন রয়েছে, কিন্তু না জেনে সবকিছুকে বিদআত বলা ঠিক নয়
রাসূলে মাকবুল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কিংবা তার আসহাব রাদিআল্লাহু তাআ'-লা আনহুম বিদআতের ব্যাপারে সবচে' সতর্ক ছিলেন। কিন্তু যেহেতু তাদের থেকে এরকম ভাল মন্দ যাচাই না করে পাইকারিভাবে সকল কিছুকে বিদআত বলার প্রবনতা প্রমানিত নেই, তাই বর্তমানের কথিত ব্যক্তিরাও তা করতে পারেন না। যদি করেন, নিশ্চয়ই তা বিদআত হবে। আধুনিককালের তথাকথিত অতি ধার্মিক সেজে বসা ব্যক্তিবর্গ, যারা বিদআত ছাড়া পৃথিবীতে দুই চোখে কিছু দেখেন কি না সন্দেহ, তাদের কাছে সবিনয় নিবেদন-
১। তারা গাড়িতে, প্লেনে, ট্রেনে, রকেটে কিভাবে ওঠেন? এগুলোতে উঠলে বিদআত হয় না? রাসূলে মাকবুল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তো জীবনে এগুলোতে চড়েননি! তাহলে?
২। তারা বহুতল মসজিদে নামাজ কিভাবে আদায় করেন? এতে বিদআত হয় না? রাসূলে মাকবুল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তো তাঁর জীবদ্দশায় কখনও বহুতল কোনো মসজিদে নামাজ আদায় করেছেন বলে শুনিনি। তাহলে?
৩। সবকিছুতে বিদআত খুঁজে বেড়ান যারা, তারা কি ইলেকট্রিক পাখা, ফ্রিজ, এসি, মোবাইল, রাইস কুকার, মোটর সাইকেল, বাইসাইকেল, মোটর যান ইত্যাদিতে চড়েন? চড়ে থাকলে তো বিপদ। রাসূলে মাকবুল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তো তাঁর জীবদ্দশায় কখনও এগুলোতে একবারের জন্যও উঠে দেখেননি। তাহলে তারা উঠলে বিদআত হবে না?
৪। হজ্জ্বব্রত পালন করতে রাসূলে মাকবুল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তো তাঁর জীবদ্দশায় কখনও বিমান কিংবা গাড়ি ব্যবহার করেননি। পদব্রজে কিংবা বড়জোর উটের পিঠে চড়ে পথ অতিক্রম করেছেন তিনি। তো, আজ যারা বিমানে চড়ে হজ্জ্বে যান তারা কি বিদআতে লিপ্ত নন? ভাল মন্দ সবকিছুতে যাদের বিদআতের গন্ধ শুকে বেড়ানো মজ্জাগত স্বভাব, তারা কোন্ বাহনে হজ্জ্বে গমন করেন? বিমান দিয়ে নয়কি? তখন বিদআত হয় না? একই মুখে তাদের কত কথা! কত রূপ!
৫। পবিত্র কাবা শরিফে লিফট লাগানো হয়েছে। এই ধরনের ইলেকট্রিক লিফট রাসূলে মাকবুল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তো তাঁর জীবদ্দশায় কখনও ব্যবহার করার প্রশ্ন অবান্তর। কারন, যেহেতু একথা সবাই জানেন, তখন বিদ্যুত আবিষ্কার হয়নি। কাজেই যে ইলেকট্রিক লিফট রাসূলে মাকবুল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তো তাঁর জীবদ্দশায় কখনও ব্যবহার করেননি, সেটা কাবা শরিফে কিভাবে লাগানো হল? এতবড়(!) বিদআত স্বয়ং বাইতুল্লাহতে কেমন করে সংঘটিত হতে পারে?
৬। তাদের বাসায় কি ফ্রিজ আছে? তারা কি ফ্রিজে তাদের খাবার দাবার রেখে থাকেন? আবার ফ্রিজ থেকে বের করে প্রয়োজনমত সেগুলো ভক্ষন করে থাকেন? এটা কিভাবে তারা করেন? রাসূলে মাকবুল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তো তাঁর জীবদ্দশায় কখনও ফ্রিজ ব্যবহার করেননি। তো, না বুঝেই যারা ভাল মন্দ প্রত্যেক কর্মকে 'বিদআত' বলে সুখ পান, তাদের কি অবস্থা? তারা কি ফ্রিজ ব্যবহার বাদ দিবেন? না কি আজকে এই জানার পরেও কঠিন(!) এই বিদআতে লিপ্তই থেকে যাবেন?
৭। রাসূলে মাকবুল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রুটি খেতেন। যাতায় পেষা আটা দিয়ে তৈরি রুটি খেতেন। কখনও কলে ভাঙ্গানো আটা, যব, গমের রুটি তিনি তাঁর জীবনে খেয়ে দেখেননি। হাসানাহ, সাইয়্যিআহ যাচাই বাছাই ছাড়াই 'বিদআত', 'বিদআত' বলে চিল্লাফাল্লা যারা করেন, তাদের অবস্থা কি? তারা এই বিদআত সম্পর্কে সচেতন তো? কলে ভাঙানো আটা দিয়ে রুটি, সেই রুটি দিয়ে গোসত, তারা খান না তো? খেলে কিন্তু খবর আছে! কুল্লু বিদআতিন ফিন্না-র। সমস্ত বিদআত জাহান্নামের পথ।
এবার আসুন, বিদআতকে খোলাসা করার লক্ষ্যে কিছু কথা বলি-
বিদ‘আতের সংজ্ঞা
আভিধানিকভাবে বিদ‘আত শব্দটি البدع শব্দ হতে গৃহীত- যার অর্থ হলো পূর্ববর্তী কোনো উদাহরণ ছাড়াই কোনো কিছু সৃষ্টি বা আবিষ্কার করা। যেমন আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿بَدِيعُ ٱلسَّمَٰوَٰتِ وَٱلۡأَرۡضِۖ ﴾ [البقرة: ١١٧]
“তিনিই আসমানসমূহ ও জমিনের সৃষ্টিকারী।” [সূরা আল-বাকারা, আয়াত: ১১৭] অর্থাৎ পূর্ববর্তী কোনো নমুনা ছাড়াই এত-দু-ভয়ের তিনি সৃষ্টিকর্তা।
আল্লাহ অন্যত্র আরো বলেন,
﴿قُلۡ مَا كُنتُ بِدۡعٗا مِّنَ ٱلرُّسُلِ﴾ [الاحقاف: ٩]
“বলুন, আমি কোনো নতুন রাসূলুল্লাহ নই।” [সূরা আল-আহকাফ, আয়াত: ৯] অর্থাৎ আমি আল্লাহর পক্ষ থেকে তার বান্দাদের প্রতি বার্তা-বাহক প্রথম রাসূল নই; বরং আমার পূর্বে আরো বহু রাসূল আগমন করেছেন। বলা হয়ে থাকে ‘অমুক ব্যক্তি একটি বিদ‘আত উদ্ভাবন করেছে’ অর্থাৎ এমন এক পন্থা প্রচলন করেছে যা তার পূর্বে আর কেউ করে নি।
বিদআতকে প্রথমত: দু’ভাগে ভাগ করা যায়
১। বিদআতে হাসানাহ: বিদআতে হাসানাহ, মানে উত্তম আবিষ্কার, কল্যানকর উদ্ভাবন। মানুষের জন্য কল্যানকর যে কোনো আবিষ্কার যা, পূর্বে ছিল না, তাকেই বিদআতে হাসানাহ বলা যায়। আধুনিক কম্পিউটার, চিকিতসা ব্যবস্থার যন্ত্রাদি ইত্যাদি সবই এই প্রকারের অন্তর্ভূক্ত।
২। বিদআতে সাইয়্যিআহ: পূর্বে ছিল না, এমন ক্ষতিকর জিনিষের উদ্ভাবনকে বিদআতে সাইয়্যিআহ বলে। যেমন: জন্মদিবস, মৃত্যুদিবস, ইত্যাদি পালন করা।
বিদআতকে প্রথাগতভাবে আবার দু’ভাগে ভাগ করা যায়
১. প্রথাগত বিদআত: যেমন আধুনিক আবিষ্কৃত বস্তুসমূহের উদ্ভাবন। এটি মুবাহ এবং জায়েয। কেননা প্রথার ক্ষেত্রে ইবাহাত তথা বৈধ হওয়াই মূলনীতি (যতক্ষণ পর্যন্ত ‘না জায়েয’ হওয়ার দলীল পাওয়া না যায়।)
২. ধর্মীয় ক্ষেত্রে বিদআত: তা হলো দীনের মধ্যে কোনো বিদ‘আত সৃষ্টি। এটি হারাম। কেননা দীনের ক্ষেত্রে অনুসৃত নীতি হলো, তাওকীফী অর্থাৎ পুরোপুরি কুরআন-সুন্নাহের উপর নির্ভরশীল। নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«مَنْ أَحْدَثَ فِي أَمْرِنَا هَذَا مَا لَيْسَ فِيهِ، فَهُوَ رَدٌّ»
“যে ব্যক্তি আমাদের এ দীনে এমন কিছু উদ্ভাবন করবে, যা দীনের অন্তর্গত নয়, তা প্রত্যাখ্যাত”।
«مَنْ عَمِلَ عَمَلًا لَيْسَ عَلَيْهِ أَمْرُنَا فَهُوَ رَدٌّ»
“কোনো ব্যক্তি যদি এমন কাজ করে যা আমাদের দীনের অন্তর্ভুক্ত নয়, তা প্রত্যাখ্যাত”।
দ্বিতীয়ত: বিদ‘আতের প্রকারভেদ
দীনের ক্ষেত্রে বিদ‘আত দু’শ্রেণিতে বিভক্ত:
প্রথম শ্রেণি: কথা ও আকীদার ক্ষেত্রে বিদ‘আত। যেমন জাহমিয়া, মুতাযিলা, রাফেযা ও যাবতীয় ভ্রান্ত ফিরকাসমূহের বক্তব্য ও আকীদা।
দ্বিতীয় শ্রেণি: ইবাদাতের ক্ষেত্রে বিদ‘আত। যেমন, এমন পন্থায় আল্লাহর ইবাদাত করা যা তিনি অনুমোদন করেন নি। এটিও কয়েক প্রকার:
প্রথম প্রকার: মৌলিক ইবাদাতের ক্ষেত্রে যে বিদ‘আত হয়ে থাকে। যেমন, এমন এক ইবাদাত সৃষ্টি করা, শরী‘আতে যার কোনো দলীল নেই। উদাহরণ স্বরূপ বলা যায়, এমন এক সালাত উদ্ভাবন করা যা শরী‘আতে অনুমোদিত নয় কিংবা এমন রোজার প্রচলন যা আসলেই শরী‘আতে অননুমোদিত অথবা শরী‘আত সমর্থিত নয় এমন সব উৎসব যেমন জন্মোৎসব প্রভৃতি পালন করা।
দ্বিতীয় প্রকার: শরী‘আতে অনুমোদিত ইবাদাতের ক্ষেত্রে কোনো কিছু সংযোজন ও বৃদ্ধি করা। যেমন, যোহর কিংবা আসর সালাতে এক রাকাত বাড়িয়ে পাঁচ রাকাত আদায় করা।
তৃতীয় প্রকার: শরী‘আত সিদ্ধ ইবাদাত আদায়ের পদ্ধতিতে যে বিদ‘আত হয়ে থাকে। যেমন শরী‘আত সিদ্ধ নয় এমন পন্থায় তা আদায় করা। এর উদাহরণ হলো: শরী‘আত অনুমোদিত যিকির এ দো‘আ ইজতেমায়ীভাবে একই তালে ও সুরে পাঠ করা। অনুরূপভাবে ইবাদাতের ক্ষেত্রে নিজের উপর এমন কঠোরতা আরোপ করা যদ্বরুণ সে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লামের সুন্নাত থেকে বের হয়ে যায়।
চতুর্থ প্রকার: শরী‘আত সিদ্ধ ইবাদাতের জন্য শরী‘আত কর্তৃক নির্ধারিত নয়, এমন সময় নির্ধারণের মাধ্যমে যে বিদ‘আত করা হয়। যেমন, শা’বান মাসের ১৫ তারিখের দিন সাওমের জন্য নির্ধারিত করা। কেননা সাওম তো শরী‘আতসিদ্ধ; কিন্তু তাকে কোনো এক সময়ের সাথে সম্পৃক্ত করার জন্য দলীল থাকা চাই।
তৃতীয়ত: সকল শ্রেণি বিভাগসহ দীনের ক্ষেত্রে বিদ‘আতের হুকুম
দীনের ক্ষেত্রে সকল বিদ‘আতই হারাম ও ভ্রষ্টতা। কেননা নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
«وَإِيَّاكُمْ وَمُحْدَثَاتِ الْأُمُورِ، فَإِنَّ كُلَّ مُحْدَثَةٍ بِدْعَةٌ، وَكُلَّ بِدْعَةٍ ضَلَالَةٌ»
“নতুন নতুন বিষয় থেকে তোমরা বেঁচে থাক। কেননা প্রত্যেক নতুন বিষয়ই বিদ‘আত এবং প্রত্যেক বিদ‘আত ভ্রষ্টতা”।
নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরো বলেন,
«مَنْ أَحْدَثَ فِي أَمْرِنَا هَذَا مَا لَيْسَ فِيهِ، فَهُوَ رَدٌّ»
“যে ব্যক্তি আমাদের এ দীনে এমন কিছু উদ্ভাবন করবে যা সে দীনের অন্তর্গত নয়, তা প্রত্যাখ্যাত”।
« مَنْ عَمِلَ عَمَلًا لَيْسَ عَلَيْهِ أَمْرُنَا فَهُوَ رَدٌّ »
“কোনো ব্যক্তি যদি এমন কাজ করে যা আমাদের দীনের অন্তর্ভুক্ত নয়, তা প্রত্যাখ্যাত”।
হাদীস দু’টি দ্বারা প্রমাণিত হলো যে, দীনের ক্ষেত্রে নব উদ্ভাবিত সকল পন্থাই বিদ‘আত এবং প্রত্যেক বিদ‘আত ভ্রষ্টতা ও প্রত্যাখ্যাত। এ কথার অর্থ বিদ‘আত হারাম। তবে বিদ‘আতের শ্রেণি বিভাগ অনুযায়ী হারাম হওয়ার ব্যাপারটি বিভিন্ন স্তরের হয়ে থাকে। কেননা এর মধ্যে কিছু হল স্পষ্ট কুফুরী। যেমন, কবরবাসীদের নৈকট্য লাভের উদ্দেশ্যে কবরের চারপাশে তাওয়াফ করা এবং জবেহ করা ও মান্নত করা। কবরবাসীদের কাছে দো‘আ করা ও সাহায্য চাওয়া। অনুরূপভাবে এতে চরমপন্থী-জাহমিয়া ও মুতাযিলাদের বিভিন্ন বক্তব্যও অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।
বিদ‘আতের মধ্যে রয়েছে যা আকীদাগত ফাসেকী বলে পরিগণিত। যেমন, কথা ও আকীদার ক্ষেত্রে খারেজী, কাদরিয়া এবং মুরজিয়াদের বিদ‘আত যা শরী‘আতের দলীলসমূহের সরাসরি পরিপন্থী।
কিছু বিদ‘আত এমন রয়েছে যা গুনাহ বলে বিবেচিত। যেমন, দুনিয়াত্যাগী হওয়ার বিদ‘আত, রোদে দাঁড়িয়ে সাওম রাখা এবং যৌনকামনা দমনের জন্য অপারেশন করার বিদ‘আত।
বিদআত থেকে বাঁচতে আমাদের করনীয়
সহীহ হাদিসের নামে কুরআন ছেড়ে দেয়ার দু:সাহস দেখাব না। ইজমা এবং কিয়াস তথা, উম্মতের স্বর্নযুগ তথা, রাসূলে মাকবুল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকটবর্তী যুগগুলোর শীর্ষ স্কলার, যারা কুরআন হাদিস সুসমন্বিত করার পেছনে নিজেদের জীবন প্রান উতসর্গ করেছেন, অত:পর যাদের অতুলনীয় আত্মত্যাগ, অসামান্য কুরবানীর বদৌলতে আমরা দ্বীনের আলোয় আলোকিত করতে পারছি নিজেদের, তাদের সম্মিলিত মতামতকে অগ্রাহ্য করার ধৃষ্টতাও প্রদর্শন করব না। বরং কুরআন, হাদিস, ইজমা এবং কিয়াসের সমন্বয়ে গঠিত ইসলামী শরিয়াতের পরিপূর্ন অনুসরন করতে সচেষ্ট হব। বাতিলের সাথে কখনও আপোসে যাব না। হকপন্থী উলামায়ে কিরামকে নিজেদের পথপ্রদর্শক জ্ঞান করে তাদের থেকে জীবনের প্রয়োজনী পাথেয় কুড়িয়ে নেব।
আল্লাহ পাক আমাদের বিদআত থেকে বেঁচে থাকার তাওফিক দান করুন। পাইকারিভাবে সকল কিছুকে বিদআত সাব্যস্তকারীদের খপ্পড় থেকেও আমাদের বাঁচিয়ে রাখুন। সুন্নাত আঁকড়ে থাকার সৌভাগ্য নসীব করুন।
না বলা কথা: এই পোস্টটি সনেট কবি খ্যাত প্রখ্যাত ব্লগার জনাব ফরিদ আহমদ চৌধুরীকে উৎসর্গ করছি। মূলত: বিদআত নিয়ে তার সুন্দর একটি পোস্ট দেখেই এই পোস্ট লেখার অনুভূতি লাভ করি। তার জন্য শুভকামনা। সামু পরিবারের সকলকে রমাদানুল মুবারাকের আগাম শুভেচ্ছা। সকলেই ভাল থাকুন।
০৩ রা মে, ২০১৮ সকাল ১০:৪৮
নতুন নকিব বলেছেন:
অনবদ্য হৃদ্যতায় মুগ্ধতা। পোস্ট ভাল লাগায় কৃতজ্ঞতা। অনেক ভাল থাকবেন।
২| ০৩ রা মে, ২০১৮ সকাল ১০:৪৩
রাজীব নুর বলেছেন: এটা এমন একটা বিষয় যে এটা ক্ষেত্র বিশেষে বিদাত আবার ক্ষেত্র বিশেষে বিদাত নয়।
যেমন, রাসুল (সাঃ) থেকে নির্দেশনা রয়েছে ডান হাতের আঙ্গুলে তসবিহ গুনা তাই এটাই সুন্নাত। এটা করলে সয়াব আছে। পক্ষান্তরে তসবিহ দানা ব্যবহার করলে এই আঙ্গুলে গুনার সুন্নত পরিত্যাগ করা হয়। তাই এক্ষেত্রে এটা বিদাত।
তসবিহ ব্যবহার করা থেকে আঙ্গুলে গুনা উত্তম। এমনিতে গুনার সুবিধার জন্য তসবিহ দানা ব্যবহারে খুব বড় কোনো ক্ষতি নেই। যেমন কেউ যদি মনে করে আঙ্গুলে গুনে ১০০ পর্যন্ত হিসাব রাখতে পারছিনা তাই আমি এটা ব্যবহার করি তখন এটা বিদাত সাব্যস্ত করা ঠিক হবে না। কিন্তু কেউ যদি তসবিহ কে সুন্নাহ মনে করে তখন তা স্পষ্টই বিদাত হয়ে যাবে।
০৩ রা মে, ২০১৮ সকাল ১০:৪৮
নতুন নকিব বলেছেন:
আশ্চর্য্য! আপনি তো দেখছি, অনেক স্টাডি করেন! সুন্দর মন্তব্য দেখে সত্যি খুশি হলাম। আপনার প্রতি আল্লাহ পাক তাঁর রহমতকে দীর্ঘায়িত করুন।
৩| ০৩ রা মে, ২০১৮ সকাল ১১:৪৯
রওশন_মনি বলেছেন: অত্যন্ত সুন্দর পোস্ট। আমার মনের কথাগুলোই বলেছেন। বর্তমানে কিছু শিক্ষিত ধার্মিক মানুষেরা খুব হরহামেশাই শিরক বিদআত বলে বলে সাধারণ মানুষের মনে এমন ভয় ঢুকিয়ে দিচ্ছে যে মানুষ বিভ্রান্ত হচ্ছে, সত্যবিমূখ হচ্ছে। প্রচারকারীরা কোন কিছুর সঠিক জ্ঞান রাখেনা, এরা বাহ্যিক জ্ঞানে যাচাই করে কথা বলে, এদের মধ্যে আত্মিক জ্ঞান বা উপলব্ধি ক্ষমতা অনুপস্থিত। কৃতজ্ঞতাসহ ধন্যবাদ রইলো।
০৩ রা মে, ২০১৮ বিকাল ৪:১০
নতুন নকিব বলেছেন:
বর্তমানে কিছু শিক্ষিত ধার্মিক মানুষেরা খুব হরহামেশাই শিরক বিদআত বলে বলে সাধারণ মানুষের মনে এমন ভয় ঢুকিয়ে দিচ্ছে যে মানুষ বিভ্রান্ত হচ্ছে, সত্যবিমূখ হচ্ছে। প্রচারকারীরা কোন কিছুর সঠিক জ্ঞান রাখেনা, এরা বাহ্যিক জ্ঞানে যাচাই করে কথা বলে, এদের মধ্যে আত্মিক জ্ঞান বা উপলব্ধি ক্ষমতা অনুপস্থিত।
এটাই বাস্তবতা। নিখাদ আন্তরিকতা নিয়ে সুন্দর মন্তব্য রেখে যাওয়ায় কৃতজ্ঞতা অশেষ।
আপনার জন্য শুভকামনা সতত:।
৪| ০৩ রা মে, ২০১৮ দুপুর ১২:১৮
এভো বলেছেন: ধন্যবাদ ভাই ভালো একটা বিষয়ে পোষ্ঠ করেছেন । আমরা জানি সওয়াব পাওয়ার উদ্দেশ্য কোন কিছুকে ধর্মের প্র্যাকটিসে অন্তর্ভুক্ত করাটাকে বিদাআত বলা হয় যদি ঐ বিষয়ে কোরান হাদিসে কোন দিক নির্দেশনা না থাকে । আপনি বিদাআতে সাইয়িআতের উদাহরন দিতে গিয়ে বলেছেন জন্ম দিবস এবং মৃর্তু দিবস এই বিদাআতের অন্তর্ভুক্ত ।
ঐ সমস্ত দিবস বিশেষ করে জন্ম দিন কখনো ধর্মীয় রিচুয়াল দিয়ে পালিত হয় না এবং এর পিছেন সওয়াব পাওয়ার কোন উদ্দেশ্য নেই , তার মানে এই বিষয়টি তো ধর্মের মধ্যে সংযোজন করা হয় নি , তাহোলে এটা বিদাআত হোল কি করে ?
মৃর্তু দিবস ২ ভাবে পালন হয় ধর্মীয় ভাবে কোরান খতম দিয়ে , বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনা করে দোয়া করা ইত্যাদি -- এটাকে আপনি যদি বিদাআত বলতে চান তাহোলে বলতে পারেন কিন্তু যখন মৃর্তু দিবস ধর্মীয় ভাবে না করে তার প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শন এবং তার কর্ম জীবনের বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোচনা করা ইত্যাদি বিষয় নিয়ে করা হয় তখন তো ধর্মের সাথে কোন সংযোজন করা হয় না , তাহোলে এটা বিদাআত কি করে এটা বিদাআত হয় ?
আমরা দেখতে পাই বঙ্গবন্ধু বা জিয়াউর রহমানের মৃর্তু দিবসে দুটি বিষয় করা হয় যেমন --- একটি কোরানখানি , দোয়া পড়া ইত্যাদি এবং অপরটি হয় চ্যারেটি, আলোচনা ইত্যাদি । এই ক্ষেত্রে কোরান পড়ান, আত্মার মাগফেরাত কামনা করে দোয়া পড়ার অংশটা কি বিদাআত হবে ?--- কারন এই অংশ টুকু শুধু ধর্মের থেকে যোগ করা হয়েছে ।
০৩ রা মে, ২০১৮ বিকাল ৪:৩৫
নতুন নকিব বলেছেন:
আমরা জানি সওয়াব পাওয়ার উদ্দেশ্য কোন কিছুকে ধর্মের প্র্যাকটিসে অন্তর্ভুক্ত করাটাকে বিদাআত বলা হয় যদি ঐ বিষয়ে কোরান হাদিসে কোন দিক নির্দেশনা না থাকে। আপনি বিদাআতে সাইয়িআতের উদাহরন দিতে গিয়ে বলেছেন জন্ম দিবস এবং মৃর্তু দিবস এই বিদাআতের অন্তর্ভুক্ত ।
আপনার জানাটা সঠিক। জন্ম দিবস, মৃত্যু দিবস এসব দিবস পালনের কোনো অনুমোদন ইসলামী শরীয়া দেয়নি। তাই এগুলোর সুযোগ নেই। অন্য কোনো কোনো ধর্মের লোকদের এগুলো ঘটা করে পালন করতে দেখা যায়। মুসলিমগন এগুলো তাদের নিকট থেকে ধার করেছেন। ধার করে কোনো রুসম রেওয়াজ পালনের বিধান ইসলামে নেই। ইসলাম নিজেই পরিপূর্ন জীবন বিধান। আল্লাহ পাকের অমোঘ ঘোষনা-
الْيَوْمَ أَكْمَلْتُ لَكُمْ دِينَكُمْ وَأَتْمَمْتُ عَلَيْكُمْ نِعْمَتِي وَرَضِيتُ لَكُمُ الإِسْلاَمَ دِينًا فَمَنِ اضْطُرَّ فِي مَخْمَصَةٍ غَيْرَ مُتَجَانِفٍ لِّإِثْمٍ فَإِنَّ اللّهَ غَفُورٌ رَّحِيمٌ
'আজ আমি তোমাদের জন্যে তোমাদের দ্বীনকে পূর্নাঙ্গ করে দিলাম, তোমাদের প্রতি আমার অবদান সম্পূর্ণ করে দিলাম এবং ইসলামকে তোমাদের জন্যে দ্বীন হিসেবে পছন্দ করলাম। অতএব যে ব্যাক্তি তীব্র ক্ষুধায় কাতর হয়ে পড়ে; কিন্তু কোন গোনাহর প্রতি প্রবণতা না থাকে, তবে নিশ্চয়ই আল্লাহ তা’আলা ক্ষমাশীল।' সূরা আল মা-য়িদাহ, আয়াত- ৩
সুতরাং, অন্য ধর্মের অনুসরন করার কোনো প্রয়োজন নেই। বরং, করলে হাদিসে তাদের প্রতি কঠোর ভাষায় সতর্ক করা হয়েছে। আল্লাহর রাসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
'মান তাশাব্বাহা বিকওমিন ফাহুঅ মিনহুম।'
'যে অন্য জাতির অনুসরন করবে, সে তাদের বলে গন্য হবে।'
আমরা নিশ্চয়ই সেটা হতে চাই না।
আপনার মন্তব্যের বাকি অংশের উত্তরে বিনীতভাবে বলতে চাই- আপনি দেখে থাকবেন, সাধারনত: অধিকাংশ ক্ষেত্রেই কুরআন খতমের আয়োজন তারাই করে থাকেন, যারা সারা বছরে এক দিনের জন্য কুরআনুল কারিম নিজে পাঠ করেন না, বছরের বিশেষ দিনে আলেম ওলামা, মসজিদের ইমাম মুয়াজ্জিনদের ডেকে কুরআন খতম ইত্যাদি আনুষ্ঠানিকতার আয়োজন করে থাকেন, তাদের এই বিশেষ আয়োজন করে লাভ কী? আলমারির তাকে কাপড়ে মুড়িয়ে রাখার জন্য কি কুরআন? বছরের নির্দিষ্ট দিনে বিশেষ লোকদের দাওয়াত করে একবেলা পেট পুরে খাইয়ে দেয়ার জন্য কি কুরআন?
সুন্দর মন্তব্য নিয়ে আসায় হৃদয় নিংড়ানো ভালবাসা। কৃতজ্ঞতা নিবেন।
৫| ০৩ রা মে, ২০১৮ দুপুর ১:২৮
কানিজ রিনা বলেছেন: কোনও ভাল কিছু সুন্দর কিছু জীবন
চলার সিষ্টেম বাতলায় বা ইবাদতের
বেলায় সরিয়তের মতদর্শন সুন্দর সিষ্টেম
ইসলাম গ্রহন যোগ্যতা রাখে। যেমন হযরত
মোহাঃ সাঃ যখন মসনদে বসতেন তখন
কুরাইশরা ইহুদী জমায়েত মসনদে তিনি
কুরাইশ গোত্র ইহুদী গোত্রের অনেক ভাল
অনুশীলন মসনদে পাশ করেছেন হাদীসে
তা বর্নিত হয়েছে।
এখন কথা হোল যারা কথার কথায়
বিদাত বিদাত বলে চিল্লায় তারা নিজের
পান্ডিত্য জাহেরী করে।
তারা বলতে চায় ঢেঁকি ছাটা মোটাচাল
খেয়েও না মেশিনে ছাটা চাল খাও।
আমরা মেশিনে ছাটা সাদা চাল খাই।
তার মানে তারাই পন্ডিত।
আমাদের মুসলিম দলগত বিভক্তি হয়ে
পড়েছিল হযরত মোঃ সাঃ ওফাতের পড়েই।
সেই দলগত বিভেদ এযুগের মুসলিমরা
হানাহানী রাহাজানী পর্যন্ত এগিয়েছে নিজেদের
পান্ডিত রক্ষার জন্য।
চার খলিফার বংশধর যখন সারা পৃথিবীতে
ইসলাম প্রচারে বেড় হন তখন অনেক কূরশত
করেছেন। তারাই অলি পীর নামে ক্ষাত।
তাদের অবদানে আজ আমরা এই ভারত
উপমহাদেশে মুসলমান। এখন রাস্তাঘাটে গজিয়ে
উঠা ব্যবসায়ী পীরেরা নয়।
ধন্যবাদ বিদাত নিয়ে বিশ্লেশন করেছেন বেশ
ভাল লাগল।
আসলে আম কত প্রকার কি কি যতই প্রকার
হোক জাতের নাম আম টক মিস্টি আম।
আমাদের মুসলমান জাতে মুসলিম কিন্তু
নানান দলে বিভক্ত। অভিনন্দন সুন্দর পোষ্টের।
০৫ ই মে, ২০১৮ দুপুর ১২:৩৪
নতুন নকিব বলেছেন:
আপনাকেও অভিনন্দন অনেক অনেক। আন্তরিক মন্তব্যে কৃতজ্ঞতা।
ভাল থাকবেন সব সময়।
৬| ০৩ রা মে, ২০১৮ দুপুর ১:৩১
ব্লগার_প্রান্ত বলেছেন: আল্লাহ আমাদের শিরক-রিয়া-বিদাত থেকে হেফাজতে রাখুক ।
অফটপিক: আপনি কি মাহজাবে বিশ্বাস করেন?
০৫ ই মে, ২০১৮ দুপুর ১২:৩৬
নতুন নকিব বলেছেন:
আপনার দুআ আল্লাহ পাক কবুল করে নিন।
জ্বি, হানাফি মাযহাবের অনুসারী আমরা।
মন্তব্যে আসায় অভিনন্দন এবং কৃতজ্ঞতা। ভাল থাকুন অনেক।
৭| ০৩ রা মে, ২০১৮ দুপুর ১:৫৫
মাহমুদুর রহমান সুজন বলেছেন: আপনার পোস্টটি অত্যন্ত সুন্দর ও উপকারী। আল্লাহ আপনাকে উত্তম যাযা দান করুন।
০৫ ই মে, ২০১৮ দুপুর ১২:৩৮
নতুন নকিব বলেছেন:
অনিন্দ্য সুন্দর মন্তব্য নিয়ে আসায় আন্তরিক মোবারকবাদ।
কৃতজ্ঞতা জানবেন। ভাল থাকুন অনেক।
৮| ০৩ রা মে, ২০১৮ দুপুর ১:৫৭
সৈয়দ তাজুল বলেছেন: সনেট কবির লেখা আমাকেও উৎসাহের সাথে চিমটি দেয় লেখা প্রকাশের জন্য। ইনশাআল্লাহ অচিরেই উনার উত্তাপিত একটি বিষয়ে আলোকপাত করবো।
আর হ্যা, আজকের আলোচনায় আমার পুনঃচর্চা হয়ে গেল। আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ ভাই। এই
বিষয়গুলো খুব সহজভাবে মানুষের কাছে তুলে ধরতে হবে। যেন প্রত্যেকে সহজ ও সাবলীল প্রকাশ থেকে নিজের মত বুঝে নিয়ে আমল করতে পারে। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা'য়ালা আমাদের প্রত্যেককে জেনে বুঝে আমল করে জান্নাতের উত্তরাধিকারী হওয়ার সৌভাগ্য দান করুন, আমীন।
০৫ ই মে, ২০১৮ দুপুর ১২:৪০
নতুন নকিব বলেছেন:
অনেক সুন্দর মন্তব্য দেখে আনন্দিত হলাম। আপনার লেখাগুলো আকর্ষন করে। লিখতে অনুরোধ করবো। আন্তরিক মোবারকবাদ।
কৃতজ্ঞতা জানবেন। অহর্নিশ ভাল থাকার দুআ।
৯| ০৩ রা মে, ২০১৮ দুপুর ২:২৪
আলী নওয়াজ খান বলেছেন: সুন্নাত ও বিদআত
ওয়াহাবীদের বহুল ব্যবহৃত একটি শব্দ হলো ‘বিদআত’। ওয়াহাবী আলেমদের ফতোয়াসমূহ থেকে বোঝা যায় এমন অনেক আমলই যা মুসলমানদের সর্ব সাধারণের কাছে সুন্নাত ও জায়েয বলে পরিগণিত ওয়াহাবীদের পক্ষ থেকে তা বিদআত বলে ঘোষিত হয়েছে। এর প্রধান কারণ হলো শরীয়তের বিধান বোঝার ক্ষেত্রে তাদের দৃষ্টিভঙ্গির সংকীর্ণতা ও স্থবিরতা। (তাদের গোঁড়ামী ও কূপমণ্ডূকতার কারণেই এক সময় তারা সাইকেলকেও শয়তানের বাহন বলে আখ্যায়িত করেছিল। অবশ্য এখন তাদের আলেমরা সৌদি সরকারের সর্বাধুনিক যানবাহনে আরোহণ করেন এবং তাকে বিদআত বলেন না) তাদের এরূপ চিন্তা-ভাবনার পিছনে বিশেষ কোন রাজনৈতিক উদ্দেশ্যও থাকতে পারে।
আমরা জানি ইসলামের বিধানসমূহ যা মহানবী (সা.)-এর মাধ্যমে বর্ণিত হয়েছে তাকে সহজ শরীয়ত বলে অভিহিত করা হয়েছে। তদুপরি ওয়াহাবিগণ অসংখ্য জায়েয বিষয়কে বিদআতের শ্রেণীতে ফেলে তা হারাম বলে ঘোষণা করেছে। তাই আমরা প্রথমেই সুন্নাত ও বিদআতের সংজ্ঞা ও তৎসংশ্লিষ্ট বিষয় নিয়ে আলোচনা করব।
শাব্দিক ও পারিভাষিক অর্থে সুন্নাত
সুন্নাত শব্দগতভাবে নিয়ম বা পদ্ধতি অর্থে ব্যবহৃত হয়। এর বহুবচন হলো সুনান। সুন্নাত শব্দটি পবিত্র কোরআনে আল্লাহর জন্য যেমন ব্যবহৃত হয়েছে তেমনি পূর্ববর্তী জাতিসমূহের ক্ষেত্রেও এসেছে,যেমন :
( سُنَّةَ اللَّـهِ الَّتِي قَدْ خَلَتْ مِن قَبْلُ وَلَن تَجِدَ لِسُنَّةِ اللَّـهِ تَبْدِيلًا )
“আল্লাহর নীতি পূর্ব হতেই এরূপ (যে,সত্য মিথ্যার উপর বিজয়ী হবে) এবং আল্লাহর নীতিতে কোন পরিবর্তন নেই।”১
অন্যত্র বলেছেন : (فَقَدْ مَضَتْ سُنَّتُ الْأَوَّلِينَ) “(তাদের জন্যও) পূর্ববর্তীদের পথ (পূর্ববর্তীদের জন্য আল্লাহর অনুসৃত রীতি) নির্ধারিত হয়ে গেছে।” ২
সুন্নাতুল্লাহ্ বা আল্লাহর নীতি বলতে তাঁর গৃহীত প্রজ্ঞাময় রীতি ও পদ্ধতি বোঝানো হয়েছে। আল্লাহর চিরাচরিত নীতি বা রীতি এটাই যে,সময়ের পরিক্রমায় তিনি জাতির পর জাতিকে সৃষ্টি করেন,তাদের উদ্দেশে নবী,ধর্মগ্রন্থ ও শরীয়ত (বিধিবিধান) প্রেরণ করেন,তাদের আল্লাহর আনুগত্যের পথ দেখান এবং এভাবে তাদের পরীক্ষা করেন যাতে করে তারা স্বাধীনভাবে নিজেই নিজের পথকে বেছে নিয়ে ঈমান ও সৎকর্মের পথে অগ্রসর হয়ে কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে (আল্লাহর সন্তুষ্টি) পৌঁছতে পারে। কিন্তু পূর্ববর্তী অধিকাংশ জাতির অনুসৃত রীতি এটা ছিল যে,তারা আল্লাহর প্রেরিত নবীকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করে অন্যায় ও সীমা লঙ্ঘনের পথ গ্রহণ করত। এভাবে নিজেদের আল্লাহর জন্য একটি নীতির উপযুক্ত করত আর তা হলো আল্লাহর শাস্তির উপযোগী হওয়া। তারা আল্লাহর প্রেরিত নবীদের মিথ্যা প্রতিপন্ন করার কারণে আল্লাহর নির্ধারিত আজাবে পরিণত হয়ে ধ্বংস হতো। যেমন আল্লাহ বলেছেন :
(وَمَا مَنَعَ النَّاسَ أَن يُؤْمِنُوا إِذْ جَاءَهُمُ الْهُدَىٰ وَيَسْتَغْفِرُوا رَبَّهُمْ إِلَّا أَن تَأْتِيَهُمْ سُنَّةُ الْأَوَّلِينَ أَوْ يَأْتِيَهُمُ الْعَذَابُ قُبُلًا)
“হেদায়েত আসার পর এ প্রতীক্ষাই শুধু মানুষকে বিশ্বাস স্থাপন করতে এবং তাদের পালনকর্তার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করতে বিরত রাখে যে,কখন আসবে তাদের কাছে পূর্ববর্তীদের জন্য (আল্লাহর) অনুসৃত রীতি অথবা কখন আসবে তাদের কাছে সরাসরি আজাব।” ৩
মহানবী (সা.) ও আহলে বাইতের ইমামগণের হাদীসে সুন্নাত শব্দটি দু’টি অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে :
ক) কোরআন ব্যতীত যা কিছু মহানবী (সা.) আল্লাহর পক্ষ থেকে মানুষের উন্নত জীবনের জন্য এনেছেন। এ অর্থে সুন্নাত একটি ব্যাপক অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে। ধর্মীয় সকল বিধান-ইবাদত ও লেনদেনসহ যাবতীয় বিধান (ফরজ,মুস্তাহাব,হারাম,মাকরূহ,মুবাহ,চুক্তিসমূহ বৈধ বা অবৈধ হওয়া প্রভৃতি)-এর অন্তর্ভুক্ত।
খ) হাদীসসমূহে সুন্নাত শব্দটি শুধু পছন্দনীয় ও মুস্তাহাব কর্মের ব্যাপারেও ব্যবহৃত হয়েছে।
যদি ‘সুন্নাত’শব্দটি ‘কিতাব’শব্দের পাশাপাশি আসে তার অর্থ হলো প্রথমটি। যেমন ইমাম সাদিক (আ.) হতে বর্ণিত হয়েছে :
ما من شیءٍ إلا و فیه کتابٌ أو سُنّةٌ
‘এমন কোন বিষয় নেই যার বিধান ‘কিতাব’অথবা ‘সুন্নাতে’বর্ণিত হয় নি।৪
হাদীসসমূহে ‘সুন্নাত’শব্দটি দ্বিতীয় অর্থেও ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়েছে। যেমন হাদীসে এসেছে- السواک هو من السنّة و مطهرة للفم ‘মিসওয়াক একটি সুন্নাত। তা মুখবিবরকে পরিচ্ছন্ন রাখে।’৫
অন্যত্র হাদীসে এসেছে-
من السنّة أن تُصلّی علی محمد و أهل بیته فی کلِّ جمعة ألف مرة
‘এটি সুন্নাত বলে গণ্য যে,প্রতি শুক্রবারে তোমরা এক হাজার বার রাসূল (সা.) ও তাঁর আহলে বাইতের উপর দরূদ পড়বে।’৬
ফিকাহবিদদের পরিভাষায় সুন্নাত হলো মহানবী (সা.) ও পবিত্র ইমামগণের বাণী (কাওল),কর্ম (ফেল) এবং নীরব সমর্থনের (তাকরীর) বিষয়সমূহ। সকল মুসলমানই মহানবীর নিষ্পাপত্বে বিশ্বাস করে। তাই তাঁর বাণী,কর্ম ও নীরব সমর্থনের সকল বিষয়ই সুন্নাতের অন্তর্ভুক্ত। যেহেতু শিয়ারা রাসূলের আহলে বাইতের পবিত্র ইমামগণকেও নিষ্পাপ বলে বিশ্বাস করে সেহেতু তাঁদের বাণী (قول),কর্ম (فعل) এবং নীরব সমর্থনের (تقریر) বিষয়সমূহও সুন্নাতের অন্তর্ভুক্ত মনে করে। কোন বিষয় সুন্নাতের অন্তর্ভুক্ত কিনা তার জন্য দু’টি পথ রয়েছে (১) মুতওয়াতির (বহুল বর্ণিত) হওয়া ও (২) গাইরি মুতাওয়াতির (অপেক্ষাকৃত কম বর্ণিত এবং একক সূত্রে বর্ণিত হাদীসসমূহ)। মুতাওয়াতির সূত্রে বর্ণিত হাদীস হতে মানুষ নিশ্চিত বিশ্বাস লাভ করে যে,তা রাসূল ও ইমামগণ হতে প্রকৃতই বর্ণিত হয়েছে। তাই এরূপ হাদীসের বিষয়ে কোন সন্দেহ নেই। গাইরি মুতাওয়াতির হাদীসসমূহ দু’ভাগে ভাগ করা যায়। কখনো কখনো তার সঙ্গে এমন কিছু সমর্থক ইঙ্গিত থাকে যা মানুষকে হাদীসটি ইমাম হতে বর্ণিত হওয়াকেই প্রতিষ্ঠিত করে। এইরূপ সহায়ক উপাদান বিদ্যমান থাকলে সেরূপ হাদীসও নির্ভরযোগ্য ও পালনীয় বলে গণ্য। কিন্তু যদি কোন হাদীসের সঙ্গে সমর্থনকারী ইঙ্গিত না থাকে ও হাদীসটি ইমাম হতে বর্ণিত হওয়ার জন্য পর্যাপ্ত প্রমাণ না থাকে তবে তা নিশ্চিত বর্ণিত বলা যায় না,বরং তা সম্ভাব্য বর্ণিত বলে গণ্য এবং এক্ষেত্রে যদি বর্ণনাকারী ন্যায়পরায়ণ (আদেল অর্থাৎ শিয়া ইমামী নির্ভরযোগ্য রাবী) ও বিশ্বস্ত হয় তবেই শুধু তা গ্রহণযোগ্য হবে।
শাব্দিক অর্থে বিদআত (بِدعَت)
বিদআতের শাব্দিক অর্থ হলো অভূতপূর্ব ও নতুন কোন বিষয়। এ শব্দটি শাব্দিক অর্থে সাধারণত কর্তার পূর্ণতা ও সৃষ্টিশীল বৈশিষ্টের ইঙ্গিতবহ। (بَدِیع) শব্দের অর্থ হলো অভিনব ও নজীরবিহীন,এ শব্দটি যখন মহান আল্লাহর ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয় তখন তার অর্থ হলো মহান আল্লাহ বিশ্বকে কোন পূর্ববর্তী নজীর ছাড়াই কারো সাহায্য ব্যতীত ও কোন প্রাথমিক উপাদান ভিন্নই সৃষ্টি করেছেন অর্থাৎ তিনি সৃষ্টির ক্ষেত্রে কোন নমুনারই অনুসরণ করেন নি।৭
বিদআত শব্দটি হাদীস গ্রন্থসমূহে সাধারণত শরীয়ত ও সুন্নাতের বিপরীতে ব্যবহৃত হয়েছে। এর অর্থ এমন কিছু করা যা ইসলামী শরীয়ত ও মহানবী (সা.)-এর সুন্নাতের পরিপন্থী বলে গণ্য। হযরত আলী (আ.) বলেছেন :
إنّما النّاس رجلان متبع شرعة و مبتدع بدعة
অর্থাৎ ‘মানুষ দু’ধরনের : হয় শরীয়তের অনুসারী,নতুবা ধর্মের মধ্যে নতুন কিছুর উদ্ভাবক’।৮
অন্যত্র তিনি মহানবীর নবুওয়াত সম্পর্কে বলেছেন :
إظهر به الشرائع المجعولة و قمع به البدع المدخولة
‘মহান আল্লাহ মহানবীর মাধ্যমে মানব জাতিকে তাদের অজানা ও ভুলে যাওয়া শরীয়তের সাথে পরিচিত করিয়েছেন (অজানা বিধানসমূহকে তাদের সামনে প্রকাশ করেছেন) এবং পূর্ববর্তী শরীয়তসমূহের মধ্যে যে বিদআত ও নব উদ্ভাবিত বিষয়সমূহ সংযোজিত হয়েছিল তা হতে পরিশুদ্ধ করেছেন।’৯
অন্যত্র আমীরুল মুমিনীন আলী (আ.) বলেছেন :
ما أحدثت بدعة إلا ترک بها سنّة
‘এমন কোন বিদআতই (নব উদ্ভাবিত বিষয়ই) শরীয়তে প্রবেশ করে নি যার দ্বারা কোন না কোন সুন্নাত উপেক্ষিত ও পদদলিত না হয়েছে।’১০
পারিভাষিক অর্থে বিদআত
ফিকাহ্শাস্ত্রবিদ এবং মুহাদ্দিসগণ বিভিন্নভাবে বিদআতকে সংজ্ঞায়িত করেছেন। এখানে আমরা এরূপ কয়েকটি সংজ্ঞা উপস্থাপন করছি :
১। ইবনে রাজাব হাম্বালী বলেছেন : ‘বিদআত হলো নব উদ্ভাবিত বিষয় যার শরীয়তগত কোন ভিত্তি ও দলিল-প্রমাণ নেই। যদি কোন কিছুর শারয়ী দলিল থাকে তবে তা বিদআত বলে গণ্য নয়,যদিও শাব্দিক অর্থে তা বিদআত হয়ে থাকে।’১১
২। ইবনে হাজার আসকালানী বলেছেন : ‘বিদআত হলো নব উদ্ভাবিত এমন বিষয় যার কোন শরীয়তগত প্রমাণ ও দলিল নেই। যদি শরীয়তে তার সপক্ষে কোন দলিল থাকে তবে তা বিদআত বলে গণ্য হবে না।’১২
৩। সাইয়্যেদ মুর্তাজা বলেছেন : ‘বিদআত হলো ধর্মে কিছু সংযোজন বা বিয়োজন করে তাকে ধর্মের সাথে সম্পর্কিত করা।’১৩
৪। আল্লামা মাজলিসী বলেছেন : ‘শরীয়তের ক্ষেত্রে বিদআত হলো এমন বিষয় যা রাসূলের মৃত্যুর পর ধর্মে সংযোজন করা হয়েছে এবং এর সপক্ষে কোন প্রমাণ কোরআন ও সুন্নাহয় নেই। তবে তা সাধারণ কোন বিষয়ের অন্তর্র্ভুক্ত হলে বিদআত হবে না।’১৪
হাদীসশাস্ত্র ও ফিকাহবিদদের বর্ণিত সংজ্ঞাসমূহ হতে এ সিদ্ধান্তে আসা যায় যে,বিদআত পারিভাষিক অর্থে ধর্মে কোরআন ও সুন্নাহর দলিল ব্যতিরেকে কোন নতুন বিধান সংযোজন বা বিয়োজন।
সুতরাং এমন কোন বিষয় (বাণী ও কর্ম) যার শরীয়তে পূর্ব নজীর নেই কিন্তু কোরআন ও সুন্নাহয় তার সপক্ষে দলিল-প্রমাণ রয়েছে অথবা তার ইঙ্গিত রয়েছে তবে তা বিদআত বলে গণ্য হবে না। যদিও মুজতাহিদ কোরআন ও সুন্নাহ হতে বিধান বের করতে ভুল করে থাকেন এবং হাদীস হতে সঠিক অর্থ উদ্ঘাটনে ব্যর্থ হয়ে থাকেন। কারণ ইজতিহাদের ক্ষেত্রে আল্লাহ অনিচ্ছাকৃত ভুলের কারণে শাস্তি দিবেন না।
এখানে উল্লেখ্য যে,বুদ্ধিবৃত্তিক অকাট্য বিধানও কোরআন ও সুন্নাহ কর্তৃক সমর্থিত হয়েছে। অকাট্য বুদ্ধিবৃত্তি শরীয়তের বিধানের অন্যতম উৎস। যদি বুদ্ধিবৃত্তিক অকাট্য দলিলের ভিত্তিতে কোন নতুন ধর্মীয় বিধান হস্তগত হয়,তবে তা বিদআতের অন্তর্ভুক্ত হবে না।
বিদআত হারাম
ধর্মের মধ্যে নতুন কিছুর সংযোজন বা বিয়োজন এ অর্থে বিদআত হারাম কর্ম বলে বিবেচিত। কারণ শরীয়তের বিধান প্রণয়নের দায়িত্ব এককভাবে শুধুই আল্লাহর এবং তাঁর ইচ্ছা ও অনুমতি ব্যতীত শরীয়তের বিষয়ে হস্তক্ষেপের অধিকার কারো নেই। পবিত্র কোরআন ধর্মীয় পুরোহিতদের অন্ধ অনুসরণের কারণে ইহুদী ও খ্রিষ্টানদের তীব্র সমালোচনা করেছে এবং তাদের নিরঙ্কুশ কর্মবিধায়ক নির্ধারণ করার কারণে ভর্ৎসনা করে বলেছে,
( اتَّخَذُوا أَحْبَارَهُمْ وَرُهْبَانَهُمْ أَرْبَابًا مِّن دُونِ اللَّـهِ )
“তারা আল্লাহর পরিবর্তে তাদের ধর্মযাজক ও সংসার বিরাগী পুরোহিতদের নিজেদের পালনকর্তা বলে গ্রহণ করেছে।” ১৫
যদিও ইহুদী আলেমরা তাঁদের অনুসারীদের নিজেদের উপাসনার দিকে আহ্বান করতেন না কিংবা তাঁদের অনুসারীরাও তাঁদের উপাসনা করত না,কিন্তু তাঁরা আল্লাহর হালাল করা বস্তুকে হারাম এবং হারাম করা বস্তুকে হালাল বলে ঘোষণা করতেন। জনসাধারণ তা জানা সত্ত্বেও তাঁদের আনুগত্য করত ও তাঁদের কথা শুনত। এ কারণেই এ আনুগত্যকে আল্লাহ তাদেরকে প্রতিপালক গণ্যকারী বলেছেন যা প্রকৃতপক্ষে একরূপ উপাসনার নামান্তর।’১৬
খ্রিষ্টানদের ব্যাপারে আল্লাহ বলেছেন,
( وَرَهْبَانِيَّةً ابْتَدَعُوهَا مَا كَتَبْنَاهَا عَلَيْهِمْ )
“আর বৈরাগ্য,তারা নিজেরাই উদ্ভাবন করেছিল যা আল্লাহ তাদের জন্য নির্ধারণ করেন নি।”১৭
সহীহ হাদীসসমূহেও কঠোরভাবে বিদআতকে হারাম ঘোষণা করা হয়েছে। মহানবী (সা.) বলেছেন,کل بدعةٍ ضلالة، و کلّ ضلالة سبیلها فی النار ‘প্রতিটি বিদআতই স্পষ্ট বিচ্যুতি এবং প্রতিটি বিচ্যুতির পরিণতিই জাহান্নাম।’১৮
বিদআতের উপাদানসমূহ
হাদীস ও ফিকাহ্শাস্ত্রবিদদের উপস্থাপিত সংজ্ঞা হতে আমরা বলতে পারি,বিদআতের তিনটি মৌলিক উপাদান রয়েছে :
১। যদি কেউ কোন বিধান বা আদেশকে ধর্মের উপর আরোপ করে অথবা কোন ধর্মীয় বিধিকে ধর্ম বহির্ভূত বলে ঘোষণা করে তা বিদআত হবে। যেমন যদি কেউ الصلوة خیرٌمن النوم-কে আজানের অংশ বলে ঘোষণা করে অথবা ‘মুতা বিবাহ’যা রাসূলের যুগে বৈধ ঘোষিত ছিল তা অবৈধ বলে ঘোষণা করে। মহান আল্লাহ মুশরিকদের এ জন্য তিরস্কার করেছেন যে,তারা তাঁর প্রতি মিথ্যা আরোপ করত।
( قُلْ آللَّـهُ أَذِنَ لَكُمْ أَمْ عَلَى اللَّـهِ تَفْتَرُونَ ) “বলুন,আল্লাহ কি তোমাদের অনুমতি দিয়েছেন নাকি তোমরা আল্লাহর উপর অন্যায় মিথ্যারোপ করে থাক।” ১৯
অন্যত্র বলেছেন,
(فَوَيْلٌ لِّلَّذِينَ يَكْتُبُونَ الْكِتَابَ بِأَيْدِيهِمْ ثُمَّ يَقُولُونَ هَـٰذَا مِنْ عِندِ اللَّـهِ لِيَشْتَرُوا بِهِ ثَمَنًا قَلِيلًا)
“তাদের জন্য দুর্ভোগ যারা নিজ হাতে গ্রন্থ লিখে,অতঃপর বলে,এটা আল্লাহর পক্ষ থেকে অবতীর্ণ। যাতে করে এর বিনিময়ে সামান্য অর্থ গ্রহণ করতে পারে।” ২০
২। বিদআত তখনই নিন্দনীয় ও হারাম হবে যখন তার প্রণনয়নকারী তার নষ্ট ও বিকৃত বিশ্বাস অথবা শরীয়তে অবৈধ ঘোষিত কোন কর্ম সমাজে প্রচার করবে। কেবল এরূপ বিশ্বাস পোষণ বা গোপনে এরূপ কর্ম সম্পাদন কোন বিষয় বিদআত হওয়ার জন্য যথেষ্ট নয়।
মুসলিম নিজ সূত্রে মহানবী (সা.) হতে বর্ণনা করেছেন,
من دعا ألی ضلالة کان علیه من الإثم مثل آثام من یتبع لا ینقص ذلک من آثامهم شیئا
‘যে কেউ বিচ্যুতির দিকে আহ্বান করবে,তার গুনাহ ঐ সকল ব্যক্তির গুনাহের সমান যারা ঐ কাজে তাকে অনুসরণ করবে অবশ্য ঐ গুনাহের অনুসরণকারীদের পাপ হতে এতে কিছুই কম করা হবে না।’২১
এই হাদীসটিতে বিদআতের প্রতি আহ্বানের উল্লেখ রয়েছে যা তা প্রচারের দিকটির প্রতি ইশারা করছে।
৩। দ্বীনের মধ্যে উদ্ভাবিত বিষয়টি বিদআত হতে হলে এর কোরআন ও সুন্নাহ্ভিত্তিক কোন দলিল থাকা চলবে না। বিদআতের পারিভাষিক যে সংজ্ঞা আমরা উল্লেখ করেছি তা হতে স্পষ্ট বোঝা যায় কোন বিষয় বিদআত হওয়ার এটি অন্যতম শর্ত। তাই দু’টি বিষয় বিদআতের অন্তর্ভুক্ত নয় :
ক) নব উদ্ভাবিত বিষয়টি অভিনব হলেও তার জন্য শরীয়তে বিশেষ দলিল বিদ্যমান রয়েছে,যদিও তা রাসূলের জীবদ্দশায় না ঘটে থাকে। যেমন রাসূলের জীবদ্দশায় মদীনায় কখনোই ভূমিকম্প হয় নি। তাই ‘সালাতুল আয়াত’যা ভীতিকর যে কোন কারণে পড়া হয় এক্ষেত্রে পড়া হয় নি,কিন্তু পরবর্তীতে কুফায় একবার ভূমিকম্প হলে ইবনে আব্বাস ভূমিকম্পের জন্য আয়াতের নামায পড়েন।
খ) এমন সকল বিষয় যা ইসলামের সর্বজনীন নীতির অধীন। ঐ সর্বজনীন বিধানই ইসলামী শরীয়তের রক্ষক ও নিশ্চয়তা দানকারী ঐ অর্থে যে,শরীয়তে বিদ্যমান সর্বজনীন দলিলসমূহই নতুন উদ্ভাবিত বিশেষ ক্ষেত্রে প্রয়োগ করা হয়। এটিই ইসলামী বিধানের গতিশীলতার টিকে থাকার রহস্য। এ কারণেই শরীয়তে উদ্ভূত নতুন কোন বিষয়কে এ নীতির ভিত্তিতে ধর্মীয় বলে ঘোষণা করা হলে যদি তার জন্য বিশেষ কোন বিধান শরীয়তে (কোরআন ও সুন্নাহতে) পাওয়া না যায়,কিন্তু তা ঐ সর্বজনীন দলিলসমূহের আওতায় পড়ে,তবে তা বিদআত বলে গণ্য হবে না। যেমন আল কোরআনের এ আয়াতটি :
(وَأَعِدُّوا لَهُم مَّا اسْتَطَعْتُم مِّن قُوَّةٍ)
“তোমাদের শত্রুদের জন্য তোমাদের সাধ্যমত সরঞ্জাম প্রস্তুত রাখ।” ২২
ইসলামের প্রাথমিক যুগে অবতীর্ণ হলেও যেহেতু এর আহ্বান সর্বজনীন ও সাধ্যমত সরঞ্জাম প্রস্তুত রাখার বিষয়টি বর্তমানে তৎকালীন সময়ের হতে ভিন্নরূপ। তাই এখন কোন মুসলিম দেশের উচিত হবে শত্রুদের সন্ত্রস্ত রাখতে আধুনিক যুদ্ধ সরঞ্জাম,যেমন,ট্যাংক,যুদ্ধ বিমান,নৌবহর ও অন্যান্য যুদ্ধাস্ত্র প্রস্তুত রাখা। সহীহ বুখারীতে রাসূল (সা.) হতে বর্ণিত হয়েছে যে,তিনি বলেছেন : ‘তোমাদের মধ্যে সে-ই উত্তম যে নিজে কোরআন শিক্ষা লাভ করে এবং অন্যকে তা শিক্ষাদান করে।’এখন যদি কেউ আধুনিক পদ্ধতিতে কোরআন শিক্ষা করে তবে তা ঐ নির্দেশের বহির্ভূত বলে গণ্য হবে না। কারণ তা এই সর্বজনীন নির্দেশের অন্তর্গত। এ যুক্তিতে ইবনে তাইমিয়া ও ওয়াহাবীদের ঘোষিত অনেক বিষয়ই বিদাআতের সীমার বাইরে পড়বে। যেমন,কবরের উপর সৌধ নির্মাণ,আল্লাহর ওলীদের জন্য শোক পালন,তাঁদের জন্মদিনে উৎসব পালন ইত্যাদি। কারণ এর সবগুলোই মহান আল্লাহর সর্বজনীন বিধান নিম্নোক্ত আয়াতের অন্তর্ভুক্ত হবে :
(وَمَن يُعَظِّمْ شَعَائِرَ اللَّـهِ فَإِنَّهَا مِن تَقْوَى الْقُلُوبِ)
“এবং কেউ আল্লাহর নামযুক্ত বস্তুসমূহের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করলে তা তো তার হৃদয়ের আল্লাহ্ভীতি প্রসূত।” ২৩
আহলে সুন্নাতের দৃষ্টিতে বিদআতে হাসানাহ ও বিদআতে কাবিহ
পূর্ববর্তী আলোচনা হতে এ বিষয়টি সুস্পষ্ট হয়েছে যে শরীয়তের দৃষ্টিতে বিদআত নিন্দনীয় (অপছন্দনীয়) একটি বিষয় এবং তা শরীয়তের বিধান মতে হারামের অন্তর্ভুক্ত। সুতরাং বিদআতকে হাসান (পছন্দনীয়) ও কাবিহ (অপছন্দনীয়) এ দু’ভাগে ভাগ করা সঠিক নয়। কিন্তু আহলে সুন্নাতের আলেমদের মতে বিদআত ‘হাসান’ও ‘কাবিহ’এ দু’ভাগে বিভক্ত। ২৪
বিদআতকে বৈধ ও অবৈধ অর্থাৎ পছন্দনীয় ও অপছন্দনীয় এরূপ বিভাজনের কোন বৈধতা নেই। কারণ বিদআত হলো এমন বিষয় যার কোন শরীয়তগত ভিত্তি নেই অর্থাৎ এমন কোন বিধান সৃষ্টি করা যার উৎস কোরআন ও সুন্নাতে খুঁজে পাওয়া যায় না,তা-ই বিদআত। তাই এরূপ বিধান নিঃসন্দেহে আল্লাহর নিকট অপছন্দনীয় ও হারাম বলে গণ্য।
কোন বিষয় বা কর্মে মোবাহের কর্মগত বিধান
(যে ক্ষেত্রে শরীয়ত কোন বিষয়কে সুস্পষ্টভাবে হারাম ঘোষণা করে নি সেক্ষেত্রে ঐ বিষয়টি বৈধ হওয়ার সার্বিত নীতি)
উসূলশাস্ত্রের পণ্ডিতগণ বলে থাকেন,‘কোন বিষয় বা কর্মের ক্ষেত্রে মূলনীতি হলো বৈধতার নীতি অর্থাৎ যদি কোন বিষয়ে সুস্পষ্টভাবে নিষেধাজ্ঞা না থাকে তবে সেক্ষেত্রে বৈধতার অথবা স্বাধীনতার সর্বজনীন নীতি কার্যকর হবে। যাকে উসূলশাস্ত্রের পরিভাষায় আসালাতুল হিল্লিয়াত (বৈধতার সর্বজনীন নীতি) অথবা আসালাতুল জাওয়ায বলা হয়। স্বাধীনতার সর্বজনীন নীতি (আসালাতুল বারায়াত) হতেও এ বিষয়টি প্রমাণিত হয়। এ নীতি মতে যে বিষয়ে শরীয়তের প্রবর্তক করণীয় ও বর্জনীয় বিষয়কে বর্ণনা করেন নি সে বিষয়টি শরীয়তের দৃষ্টিতে বৈধ বলে গণ্য অর্থাৎ সেক্ষেত্রে শরীয়তের অনুসারীদের স্বাধীনতা রয়েছে। মহান আল্লাহ বলেছেন :
(قُل لَّا أَجِدُ فِي مَا أُوحِيَ إِلَيَّ مُحَرَّمًا عَلَىٰ طَاعِمٍ يَطْعَمُهُ إِلَّا أَن يَكُونَ مَيْتَةً أَوْ دَمًاا مَّسْفُوحًا أَوْ لَحْمَ خِنزِيرٍ فَإِنَّهُ رِجْسٌ أَوْ فِسْقًا أُهِلَّ لِغَيْرِ اللَّـهِ)
“আপনি বলে দিন ;যা কিছু বিধান ওহীর মাধ্যমে আমার কাছে পৌঁছেছে,তন্মধ্যে আমি কোন হারাম খাদ্য পাই না কোন ভক্ষণকারীর জন্য যা সে ভক্ষণ করে;কিন্তু মৃত অথবা প্রবাহিত রক্ত অথবা শুকরের মাংস-এটা অপবিত্র ও অবৈধ-অথবা যবেহ করা জন্তু যা আল্লাহ ছাড়া অন্যের নামে উৎসর্গ করা হয় সে কারণে।”২৫
ড. ইউসুফ কারদ্বাভী বলেছেন,‘ইসলাম সর্বপ্রথম যে নীতি প্রবর্তন করেছে তা হলো সকল বস্তু ও কল্যাণকর বিষয়ের ক্ষেত্রে বৈধতার সর্বজনীন নীতি এবং যে বিষয়গুলো শরীয়তের প্রবর্তক সুস্পষ্টভাবে হারাম ঘোষণা করেন নি,তার ক্ষেত্রে বাধ্যবাধকতা হতে মুক্তির নীতি।’২৬
রাসূল (সা.)-এর আহলে বাইতের অনুসৃত নীতিও সুন্নাত বলে গণ্য এবং তা শরীয়তের নীতি নির্ধারক।
এমন অনেক বিষয় রয়েছে যেগুলোকে ওয়াহাবীরা এজন্য বিদআত বলে থাকে যে,তারা রাসূলের আহলে বাইতের সুন্নাতকে শরীয়তের জন্য নীতি নির্ধারক ও সুন্নাতের অন্তর্ভুক্ত মনে করে না। অথচ সহীহ হাদীসসমূহে তাদের অনুসৃত কর্ম ও নীতিও শরীয়তের নির্ধারক ও সুন্নাতের অন্তর্ভুক্ত ঘোষিত হয়েছে। এখানে আমরা এরূপ কয়েকটি দলিলে প্রতি ইশারা করছি।
তথ্যসূত্র
১। সূরা ফাত্হ : ২৩।
২। সূরা আনফাল : ৩৮।
৩। সূরা কাহ্ফ : ৫৫।
৪। উসুলে কাফী,১ম খণ্ড,পৃ. ১৭৬,কিতবু ফাজলুল ইলম,বাবুর রাদ ইলাল কিতাব ওয়াস সুন্নাহ,হাদীস নং ৪।
*যেসব রেওয়ায়েতে সুন্নাত ও বিদআত শব্দ পাশাপাশি এসেছে তাতেও সুন্নাত এ প্রথম অর্থেই ব্যবহৃত হয়েছে।
৫। ওয়াসায়িলুশ শিয়া,১ম খণ্ড,পৃ. ৩৪৭।
৬। ওয়াসায়িলুশ শিয়া,১ম খণ্ড,পৃ. ৩৪৭।
৭। অভিধান গ্রন্থসমূহ দ্রষ্টব্য। আল আইন,মুফরাদাত লি রাগিব ইসফাহানী,লিসানুল আরাব প্রভৃতি,‘بدع’ ধাতু।
৮ । নাহজুল বালাগা,খুতবা নং ১৭৬।
৯। প্রাগুক্ত,খুতবা নং ১৬১।
১০। প্রাগুক্ত,খুতবা নং ১৪৫।
১১। জামেয়ুল উলুম ওয়াল হিকাম,পৃ. ১৬০।
১২। ফাতহুল বারী,১৭তম খণ্ড,পৃ. ৯।
১৩। রিসালাতু শারিফ আল মুরতাজা,২য় খণ্ড,পৃ. ২৬৪।
১৪। বিহারুল আনওয়ার,৭৪তম খণ্ড,পৃ. ২০২।
১৫ । সূরা তাওবা : ৩১।
১৬। উসূলে কাফী,৪র্থ খণ্ড,কিতাবুল ঈমান ওয়াল কুফর,শিরক অধ্যায়;তাফসীরে তাবারী,১ম খণ্ড,পৃ. ৮০।
১৭। সূরা হাদীদ : ২৭।
১৮। উসূলে কাফী,১ম খণ্ড,পৃ. ১৬৪,কিতাবুল ফাজলিল ইলম,বিদআত অধ্যায়,হাদীস নং-৮।
১৯। সূরা ইউনুস : ৫৯।
২০। সূরা বাকারা : ৭৯।
২১। সহীহ মুসলিম,৮ম খণ্ড,পৃ. ৬২,কিতাবুল ইলম। সহীহ বুখারী,৯ম খণ্ড,বাবুল ইতিসাম বিল কিতাব ওয়াস সুন্নাহ (কোরআন ও সুন্নাহর অনুসরণের অপরিহার্যতা অধ্যায়)
২২। সূরা আনফাল : ৬০।
২৩। সূরা হাজ্জ্ব : ৩২।
২৪। ইবনে আসির,আন নেহায়া,১ম খণ্ড,পৃ. ৭৯।
২৫। সূরা আনআম : ১৪৫।
২৬। আল হালাল ওয়াল হারাম,পৃ. ৩৩-৩৫।
০৫ ই মে, ২০১৮ দুপুর ১২:৪৭
নতুন নকিব বলেছেন:
মন্তব্যে আসায় ধন্যবাদ। যদিও শিয়া আকিদার অনেক বিষয়ই আমাদের বিশ্বাসের সাথে সঙ্গতিপূর্ন নয়। শিয়াদের কিছু দল এমন রয়েছে, যাদের ভ্রান্ত বিশ্বাস ইসলাম থেকে তাদেরকে দূরে সরিয়ে দিয়েছে। তাদের সঠিক পথপ্রাপ্তি কামনা করছি।
ভাল থাকুন অনেক।
১০| ০৩ রা মে, ২০১৮ দুপুর ২:৫৩
নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:
আমার বিশ্বাস মনের অগোচরে কোন পাপ নাই,
কোনটা পাপ আর কোনটি পূণ্য তা অৃদৃশ্য কোন এক শক্তিতে
আপনার মনই আপনাকে জানিয়ে দিবে।
অহেতুক বিতর্ক জড়িয়ে পূণ্য
থেকে দূরে থাকবেন না।
আদত, বিয়াদত বলে
যারা বেশি চিল্লাচিল্লি
করে আসলে তারা
কোনটাই মাননা।
না আদত না
বিয়াদত।
তারা
বাহানা
খোঁজে
কিছু
না
করার।
০৫ ই মে, ২০১৮ দুপুর ১২:৫০
নতুন নকিব বলেছেন:
নূরু ভাই, কথা তো 'আদত' নিয়ে নয়। 'আদত' তো অভ্যাস। আলোচনা করছিলাম 'বিদাআত' নিয়ে।
মন্তব্যে আসায় মোবারকবাদ।
অনেক ভাল থাকার দুআ।
১১| ০৩ রা মে, ২০১৮ বিকাল ৪:২৫
সনেট কবি বলেছেন: যারা মুসলমানদেরকে পিছিয়ে দিতে চায় তারাই ইসলামে অহেতুক বিদয়াত আবিষ্কার করে। প্রিয় কবির বিশ্লেষণ মূলক পোষ্টের জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ। মূলত ওহাবিজমের বোঝা বইতে বইতে সৌদি বাদশারাও এখন ক্লান্ত হয়ে পড়েছে। তারা এ বোঝা এখন দূরে কোথাও নিক্ষেপ করে পালিয়ে বাঁচতে পারলে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলতে পারে।
০৫ ই মে, ২০১৮ দুপুর ১২:৫২
নতুন নকিব বলেছেন:
যারা মুসলমানদেরকে পিছিয়ে দিতে চায় তারাই ইসলামে অহেতুক বিদয়াত আবিষ্কার করে। প্রিয় কবির বিশ্লেষণ মূলক পোষ্টের জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ। মূলত ওহাবিজমের বোঝা বইতে বইতে সৌদি বাদশারাও এখন ক্লান্ত হয়ে পড়েছে। তারা এ বোঝা এখন দূরে কোথাও নিক্ষেপ করে পালিয়ে বাঁচতে পারলে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলতে পারে।
-সুন্দর বলেছেন প্রিয় কবি ভাই।
তাদের দৃষ্টিতে বিদআতের শেষ নেই। স্বপ্নেও মনে হয় তারা নিত্য নতুন বিদআত দেখেন।
অনেক ভাল থাকবেন।
১২| ০৩ রা মে, ২০১৮ বিকাল ৪:৩৩
কানিজ রিনা বলেছেন: আলি নেওয়াজ খানের বিস্তারিত বিশ্লেসন
মোবারকবাদ। আল্লাহ্ আমাদের সমগ্র মুসলিম
বিশ্বকে হযরত মোহাঃ সাঃ জীবন আদর্শ
মতাবেক চলার সামর্থ কোরআন হাদীসের
জ্ঞানে গুনাম্বিত হওয়ার তৌফিক দান করুন।
আপনাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ কষ্ট সাধ্য
পোষ্ট ও মন্তব্য উপহার দেওয়ার জন্য।
০৫ ই মে, ২০১৮ দুপুর ১২:৫৩
নতুন নকিব বলেছেন:
তিনি তার মত করে বলেছেন।
আবারও মন্তব্যে আসায় আপনাকে অভিনন্দন।
১৩| ০৩ রা মে, ২০১৮ বিকাল ৫:৩৩
এভো বলেছেন: ভাই অনেক ধন্যবাদ আপনার মুল্যবান মতামত জানানোর জন্য ----- জন্ম দিন পালন এবং মৃর্তু দিবস পালনে কে যদি ধর্মীয় মোড়কে সওয়াব পাওয়ার এবং আল্লাহর কৃপা পাওয়ার উদ্দেশ্য করা হয় তখন সেটা অবশ্যই বিদাআত কিন্তু ঐ সমস্ত দিবস যখন ধর্মীয় মোড়কে করা হয় না, তখন কি তাকে বিদাআত বলা যায় ? এটাকে বড় জোর -হারাম বা নাজায়েজ বলা যায় কারন ধর্মের সাথে কোন সংযোজন এতে করা হয় নি । অন্য কোন ধর্মে জন্ম বা মৃর্তু দিবস পালনের কোন বিধান আছে বলে আমার জানা নেই । খৃষ্ঠানদের মধ্যে ২৫ শে ডিসেম্বর যিশুখৃষ্ঠের জন্য দিন পালন নিয়ে বিরোধ আছে এবং যারা পালন করে তারা স্বীকার করে ওটা একটা ধরে নেওয়া দিন কয়েক শত বৎসর ধরে পালন করার রেওয়াজ চলে এসেছে । অন্য ধর্মের বিধানে এই সমস্ত দিন পালনের নির্দেশ নেই এবং কেউ পালন করলে তাতে বাধা নেই ।
মৃর্তু দিবস মুসলমানরা পালন করে আসছে হাজার বৎসর ধরে যেমন শিয়ারা হাজার বৎসর ধরে ১০ই মহরমে ইমাম হোসেন (রা: ) মৃর্তু দিবস পালন করে এবং সুন্নিরা ঈদে মিলাদুন নবী পালন করে ।
তারমানে এই সমস্ত দিবস পালনে মুসলমানরা তো কাউকে অনুসরন করছে না নিজেদের প্রাকটিসকে পালন করছে । তার মানে এই হাদিসটি এখানে প্রযোজ্য নহে ---যে অন্য জাতির অনুসরন করবে, সে তাদের বলে গন্য হবে।'
কারন অন্য জাতিকে অনুসরন করা হচ্ছে না । শিয়াদের মহরম এবং ঈদে মিলাদুন নবী যেহেতু ধর্মীয় মোড়কে পালন করা হয় তাই এটাকে বিদাআত বলতে পারেন কিন্তু ধর্মী্য মোড়কে যখন পালন করা হচ্ছে না এবং অন্য জাতিকে যখন অনুসরন করা হচ্ছে না তখন কি তাকে হারাম বলা যায় ? ধন্যবাদ , ভালো থাকবেন ।
০৫ ই মে, ২০১৮ দুপুর ২:০৮
নতুন নকিব বলেছেন:
অন্য জাতির অনুসরন তো ভিন্ন একটি বিষয়। এটি করতে হাদিসে নিরুতসাহিত করা হয়েছে। আর আশুরা বা ১০ মহররম, জন্ম মৃত্যু ইত্যাদি দিবস পালনের বিষয়টি বিদআত- হোক তা নিজেদের কৃষ্টি কালচারের অংশ।
আবারও মন্তব্যে আসায় মোবারকবাদ। ভাল থাকুন।
১৪| ০৩ রা মে, ২০১৮ রাত ৯:৫৮
বিচার মানি তালগাছ আমার বলেছেন: বিনয়ের সাথে ভিন্নমত পোষণ করছি। আমার জ্ঞান আপনার চেয়ে খুবই কম। আপনার পোস্টে আমার মন্তব্য করাটাও একটা ঝুঁকি। তবে প্রথমেই বলে রাখি(যতদূর আমি বুঝেছি/জেনেছি) - বিদআ'তের যে শ্রেণী বিন্যাস করেছেন সেটাও একটা বিদআ'ত! (এটা আমি সনেট কবির পোস্টেও লিখেছি)। বিদআ'ত বিদআ'তই। এখানে ভালো মন্দ নেই। বিদআ'ত হলো দ্বীনের মধ্যে সওয়াবের উদ্দেশ্যে নতুন কিছুর অনুপ্রবেশ। তাহলে প্লেনে চড়া, গাড়িতে চড়া, লিফটে চড়া, ফ্রিজের খাবার খাওয়া বিদআ'ত হবে না। কারণ, এখানে এর মাধ্যমে কেউ সওয়াব প্রত্যাশা করছে না। যখনই কল্যাণকর বিদআ'ত বলছেন, তখনই সুক্ষ্মভাবে সওয়াবের আশা করা হচ্ছে। আমাদের সমাজের (ভারতীয় উপমহাদেশ) প্রচলিত বিদআ'ত গুলো হল -
* নামাজের আরবী নিয়ত
* মৃত্যুর পর ৪ দিন/৪০ দিন পালন করা
* মিলাদ পড়ানো
* মিলাদুন্নবী (সাঃ) পালন করা
* ভাগ্য রজনী মনে করে লাইলাতুল বারাত পালন করা(অন্য আমলগুলো আমি জানি)
* বিশ্ব এজতেমার নামে সফর করে এক জায়গায় ইবাদত করা ও আখেরী মোনাজাত
এই কয়েকটা বিষয় বাদে আর কেউ তো বিদআ'ত বিদআ'ত বলে শোর তুলছে না। মূলত এই বিষয়গুলো নিয়ে ভিন্নমত পোষণ করলেই ওয়াহাবী, সালাফি, লা মাজহাবী গালি শুনতে হয়। অথচ এসবের নির্ভরযোগ্য কুরআন হাদীস ভিত্তিক দলীল আসলেই নেই। নেই বলেই ইজমা, কিয়াস, কল্যাণকর বিদআ'ত এসব শব্দ দিয়ে জায়েজ করা হচ্ছে। মাত্র এ কয়েকটা বিষয়ে ভিন্নমত দিলেই সবাই উৎসাহ হারিয়ে ফেলবে ইসলাম থেকে? ইবাদত থেকে? তাই এসব নিয়ে ভিন্নমত(সঠিক হলেও) দেয়া যাবে না? আল্লাহই সর্বজ্ঞ। ধন্যবাদ...
১৫| ০৩ রা মে, ২০১৮ রাত ১০:৫৮
কাউয়ার জাত বলেছেন: আলী নওয়াজ খান বলেছেন, "যদি কেউ কোন বিধান বা আদেশকে ধর্মের উপর আরোপ করে অথবা কোন ধর্মীয় বিধিকে ধর্ম বহির্ভূত বলে ঘোষণা করে তা বিদআত হবে। যেমন যদি কেউ الصلوة خیرٌمن النوم-কে আজানের অংশ বলে ঘোষণা করে অথবা ‘মুতা বিবাহ’যা রাসূলের যুগে বৈধ ঘোষিত ছিল তা অবৈধ বলে ঘোষণা করে। মহান আল্লাহ"
ধন্যবাদ নতুন নকিবকে এই পোস্টের মাধ্যমে শিয়াবাদের দুর্গন্ধ প্রচারের সুযোগ করে দেয়ার জন্য। এই আলী নওয়াজ এক ছুপা শিয়া। ব্লগাররা এর থেকে সাবধান থাকুন।
দ্বিতীয় কথা, রাসূল (স) এর হাদীস "কুল্লা মুহদাসাতিন বিদয়াহ ওয়া কুল্লা বিদয়াতিন দ্বলালাহ" এখানে রাসুল (সা) কিন্তু বলেননি যে "বা'দ্বু মুহদাসাতিন লাইসা বিদয়াহ আও বা'দ্বু বিদয়াতিন হাসানাহ"। আপনি আলেম মানুষ ভালোই বুঝেন।
১৬| ০৩ রা মে, ২০১৮ রাত ১১:১৮
ক্ষতিগ্রস্থ বলেছেন: বিদআত শব্দের আভিধানিক অর্থ= নতুন আবিষ্কার। শরিয়াতের পরিভাষায় বিদআত হচ্ছে ধর্মের নামে নতুন কাজ, নতুন ইবাদাত আবিষ্কার করা।
আপনি যে ১ থেকে ৭ নম্বর পর্যন্ত উদাহরণ দিলেন, সেগুলো নবী সা. এর সময় ছিল না বটে, কিন্তু তার একটাও ইবাদত মনে করে ব্যবহার করা হচ্ছে না, প্রযুক্তিক সুবিধা হিসাবে ব্যবহার করছে। শরিয়া যে সবকে বিদআত বলেনি সেগুলোকে বিদআতের উদাহরণ হিসাবে আনায় পুরো লেখাটা অর্থহীন মনে হল। অফেন্ড করছি না, আমার যেটা মনে হয়েছে তা সোজাসুজি বললাম। আমার ভুল হলে ধরিয়ে দিন। ধন্যবাদ।
১৭| ০৩ রা মে, ২০১৮ রাত ১১:৫৫
এক হতভাগা বলেছেন: ভাই বিদআত কি আপনি নিজে বুঝেন ত ? বিমানে চড়ে, সাইকেল চালিয়ে, মেশিনে গম মাড়িয়ে, ইলেকট্রিক পণ্য ব্যবহার ইত্যাদি মানুষ সওয়াবের আশায় করে না । মাইকের সাহায্যে আজান দেওয়াকে আমরা কেউ বিদআত বলছি না কারন এটা প্রচারে সহায়ক । কিন্তু আমরা সওয়াবের জন্য নিত্য নতুন উদ্ভাবিত যা করি তা অবশ্যই বিদআত যেমন - মিলাদ পড়া, শবে বরাত, নামাজে আরবি নিয়ত ইত্যাদি অনেক কিছু । এসব ত আপনারা সওয়াবের আশাতেই করেন তাই না । সিহা সিত্তার হাদিসের কিতাব গুলো খুলে দেখুন অনেক প্রশ্নের উত্তর পেয়ে যাবেন । ধন্যবাদ
১৮| ০৬ ই মে, ২০১৮ সকাল ৯:৪৪
এভো বলেছেন: ভাই কাইন্ডলিং নীচের লিংকে ক্লিক করে এই লেখাটি পড়ুন এবং আপনার মূল্যবান মতামত দিন । আমি ৭ মাসের উপর এই ব্লগে। আমার লেখা প্রথম পাতায় স্থান পাচ্ছে না , তাই দয়া করে আপনারা যদি একটু সাহায্য করেন তাহোলে বাধিত হব । ধন্যবাদ
লিখন মাধ্যমে পশ্চিম বাংলার নাম বিকৃতির অপসংস্কৃতি যার মধ্য লুকিয়ে আছে এক চরম প্রাদেশিকতা ও সাম্প্রদায়িকতার ছাপ
Link
০৬ ই মে, ২০১৮ দুপুর ১২:৩৬
নতুন নকিব বলেছেন:
পড়েছি এবং মতামত জানিয়েছি। ধৈর্য্য ধরে লিখতে থাকুন। দেখবেন, আপনার অগোচরেই কর্তৃপক্ষ আপনাকে প্রথম পাতায় নিয়ে গেছেন।
অনেক ভাল থাকুন।
১৯| ০৬ ই মে, ২০১৮ দুপুর ১২:৩৬
নতুন নকিব বলেছেন:
এই পোস্টের বাকি মন্তব্যের উত্তরগুলো অচিরেই দেয়া হবে ইনশা-আল্লাহ।
২০| ০৭ ই মে, ২০১৮ বিকাল ৪:২৪
নীল আকাশ বলেছেন: নকীব ভাই, বিদআত নিয়ে আপনি যে প্রকার ভেদ করেছেন সেটার কি কোনো সূত্র বা দলীল আছে ? আমি একটু এ ব্যাপারে বিস্তারিত পড়াশুনা করতে চাই । আমার এক বন্ধু এ বিষয়ে আমার কাছে বিস্তারিত জানতে চেয়েছে। সবচেয়ে ভালো হতো রেফারেন্স বই গুলির নাম পেলে।
আল্লহা আপনাকে রহমত দান করুন । আমীন।
০৮ ই মে, ২০১৮ সকাল ১০:৫৮
নতুন নকিব বলেছেন:
একটু সময় নিয়ে এ বিষয়ে উত্তর দেয়ার প্রত্যাশা রাখি। আপনার প্রেরনা আশাব্যঞ্জক।
অনেক শুভকামনা আপনার জন্য।
©somewhere in net ltd.
১| ০৩ রা মে, ২০১৮ সকাল ১০:৪২
মুচি বলেছেন: আল্লাহ তা'আলা আমাদের বিদ'আত থেকে মুক্তি দিন ও রক্ষা করুন। আমীন।
সুন্দর একটি পোস্ট। শুভকামন থাকল।