নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আলহামদুলিল্লাহ। যা চাইনি তার চেয়ে বেশি দিয়েছেন প্রিয়তম রব। যা পাইনি তার জন্য আফসোস নেই। সিজদাবনত শুকরিয়া। প্রত্যাশার একটি ঘর এখনও ফাঁকা কি না জানা নেই, তাঁর কাছে নি:শর্ত ক্ষমা আশা করেছিলাম। তিনি দয়া করে যদি দিতেন, শুন্য সেই ঘরটিও পূর্নতা পেত!

নতুন নকিব

যবে উৎপীড়িতের ক্রন্দল-রোল আকাশে বাতাসে ধ্বনিবে না, অত্যাচারীর খড়্গ কৃপাণ ভীম রণ-ভূমে রণিবে না- বিদ্রোহী রন-ক্লান্ত। আমি সেই দিন হব শান্ত।

নতুন নকিব › বিস্তারিত পোস্টঃ

প্রিয়তম ব্যক্তিত্ব ড. শিবশক্তি স্বরুপজি: যেভাবে পরিনত হয়েছিলেন ড. ইসলামুল হক -এ; “অজ্ঞানতার দুনিয়ায় আমি ‘ভগবান’ হিসেবে পূজিত ছিলাম, আলোকিত বিশ্বে আমি নিজকে মানুষ হিসেবে খুঁজে পেয়েছি।” ডঃ স্বরূপজী

১৮ ই জুন, ২০১৮ বিকাল ৩:৫৮



হেদায়েতের আলো আভায় উদ্ভাসিত রঙিন জীবন

আলহামদুলিল্লাহ। অনেক অনেক প্রিয় এক মহান ব্যক্তিত্বকে নিয়ে কথা বলার ইচ্ছে আজ। বলতে গেলে ছাত্র জীবনের প্রাথমিক সময় থেকে এই মহান মানুষটি হৃদয়ে ঠাঁই করে আছেন। আল্লাহ পাক এই পৃথিবীকে সাজিয়েছেন নানারূপ মোহনীয় কমনীয় সৌন্দর্য্যের অবারিত নাজ নেআমত আর সম্পদরাজি দিয়ে। নক্ষত্র নিহারীকা পাহাড় গিরি ঝর্না ফুল পাখি নদী বন বিথী আরও আরও কত কি! কিন্তু এই পৃথিবীর সবচেয়ে মূল্যবান সম্পদ হিদায়াতের আলোক প্রভা। মহান এই সম্পদ, মূল্যবান এই দওলত মহান আল্লাহ পাক যাকে ভালোবাসেন কেবল তাকেই দিয়ে ধন্য করেন। সমৃদ্ধি দিয়ে প্রশান্তির পরশে সিক্ত করেন। এ সম্পদ যদি আল্লাহ পাক কাউকে দান করতে চান তবে কেউ তা রুখতে পারেনা। আর সে মূল্যবান হিদায়াত যদি মহান আল্লাহ পাক তার হাবীব হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর দীদারের মাধ্যমে কাউকে দান করেন তবে তা যে কত বড় খোশনসিবী, কত বড় সৌভাগ্যের বিষয় তা সহজেই অনুমেয়। পৃথিবীতে এ মহাসৌভাগ্য যারা লাভ করেছেন, তাদের অন্যতম একজন হলেন ভারতের ৭০ কোটি হিন্দুর সাক্ষাৎ ভগবান ড. শিবশক্তি স্বরুপজি। হিদায়াতের নূরে উদ্ভাসিত আলোকিত হয়ে পৃথিবীর সেরা আলোকিত মানুষে পরিণত হয়েছিলেন ড. শিবশক্তি। তার ইসলাম গ্রহণের ঘটনায় সারা বিশ্ব বিস্ময়ে হতবাক হয়ে গিয়েছিল। সারা দুনিয়ার উল্লেখযোগ্য সকল মিডিয়া তা গুরুত্ব সহকারে প্রকাশ করেছিল। তার ইসলাম গ্রহণের কাহিনী সত্যান্বেষী ও সত্যপ্রিয় যে কোনো মানুষের জন্য অনুপ্রেরণার আকর হয়ে থাকবে। ড. শিবশক্তি স্বরুপজীর বদলে যাওয়া জীবনের ঈর্ষণীয় সে উপাখ্যানই আজ আপনাদের সামনে তুলে ধরার ব্যকুলতা হৃদয়ে অনুভব করছি। চলুন, শুনি হেদায়েতের নূরানী আভায় আলোকদীপ্ত, উদ্ভাসিত স্বার্থক মহত এক ব্যক্তিত্বের আমূল বদলে যাওয়া জীবনের অভূতপূর্ব হৃদয়ছোঁয়া কাহিনী-

শুভ স্বপ্ন: পরিবর্তনের সূচনা

১৯৮৬ সালের রমজান মাস। এ পবিত্র মাসেই ড. শিবশক্তি স্বরুপজি একটি স্বপ্ন দেখলেন। যে স্বপ্নটি তার জীবনকে পৌঁছে দিয়েছে এক অনন্য উচ্চতায়। স্বপ্নটির সারসংক্ষেপ এমন যে, তিনি স্বপ্ন দেখার এক পর্যায়ে ভয়ে হাপাচ্ছেন আর দৌঁড়াচ্ছেন। এমন সময় তিনি তার সামনে নূরানী চেহারার সীমাহীন ব্যক্তিত্ববান এক মানুষকে দেখতে পেলেন, যিনি তাকে 'ভয় নেই' বলে আশ্বস্ত করলেন এবং তার পরিচয় পেশ করলেন ড. সাহেবের কাছে যে, 'আমিই শেষ নবী হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম'! সে স্বপ্নের মধ্যেই নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ড. শিবশক্তিকে কালিমা পড়ার আহ্বান জানালেন এবং কালিমা স্বয়ং নিজেই কালিমা পড়িয়ে দিলেন। এরপর থেকেই তিনি ইসলামকে মনে প্রাণে কবুল করে নিলেন এবং নিজের নাম পরিবর্তন করে রাখলেন ড. ইসলামুল হক।

স্বপ্ন মিলে গেল দু'জনেরই

আশ্চর্যের বিষয় হলো, ঠিক একই স্বপ্ন তার বিদূষী স্ত্রী স্ত্রীমতি শ্রদ্ধাদেবীও দেখলেন। একই রাতে। আর তিনিও কালিমার আহবানে সাড়া দিয়ে ইসলামকে গ্রহণ করে খাদিজা হক নাম ধারণ করলেন। বাবা মায়ের আদর্শে লালিত পালিত তাদের উচ্চশিক্ষিত গ্রাজুয়েট কন্যা শ্রীমতি অপরাজিতা দেবীও ইসলাম গ্রহণ করেছেন। তার নাম রাখা হলো আয়েশা হক। তাদের আরেক কন্যাও স্বামীসহ ইসলাম গ্রহণের ইচ্ছা ব্যক্ত করেছেন পিতার কাছে।

তারা নির্বাক তারা হতবাক

হিন্দুসমাজের এমন পূজনীয় ভগবান সমতুল্য শিবশক্তির ইসলাম গ্রহণের এ ঘটনায় ভারতীয় হিন্দুসমাজ বিস্ময়ে হতবাক হয়ে যায়। দুঃখ, হতাশা আর ক্ষোভে তাদের জ্ঞানশক্তি লোভ পেয়ে যায়। ব্রাক্ষ্মণ্যবাদের পতাকাবাহী এক শ্রেণীর সাম্প্রদায়িক উগ্র লোক ড. শিবশক্তির বিরুদ্ধে মিছিল বের করে তার ফাঁসির দাবিতে উস্কানিমূলক শ্লোগান দিতে থাকে। তারা ‘নব ভারত টাইমস’ ‘নব ভারত সমাচার’ প্রভৃতি পত্রিকায় তার বিরুদ্ধে নানা প্রতিবেদন প্রকাশ করতে থাকে। ড. সাহেব সীমাহীন ধৈর্য্য আর সহিষ্ণুতার সাথে এ সমস্ত বিদ্বেষপূর্ণ প্রতিবেদনের জবাব দিয়েছেন তার লিখিত দুটি পুস্তক হিন্দি ভাষায় লিখিত ‘খোলাপত্র’ ও উর্দু ভাষায় লিখিত ‘লিজিয়ে আপ ভি সৌচিয়ে’ দ্বারা।

দুনিয়াজোড়া বসতি যার

অপরদিকে উত্তরাধিকার সূত্রে প্রাপ্ত পৈতৃক আশ্রমের স্বর্ণসিংহাসনের মোহ ত্যাগ করে তিনি যখন ইসলামকে কবুল করেছেন তখন স্বাভাবিক ভাবেই পৃথিবীর সচেতন মুসলিম সম্প্রদায়ের মধ্যে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি হয়। সারা জাহানের জ্ঞানী গুণীরা তাকে মোবারকবাদ জানিয়ে পত্র লিখতে থাকেন। তাদের হৃদয় নিংড়ানো ভালোলাগার কথা জানান।

জন্ম ও পরিচয়

ড. সাহেব ভারতের বৃন্দাবনে জন্মগ্রহণ করেছেন। আর এ বৃন্দাবনেই হিন্দুদের ভগবান শ্রীকৃষ্ণের জন্ম। হিন্দুসমাজ এ বৃন্দাবনকে তাদের পবিত্র তীর্থভূমি হিসেবে বিবেচনা করে। রাধা কৃষ্ণের লীলাভূমি নামেও এটি সারা পৃথিবীতে পরিচিত। ভারতের হিন্দুসমাজ মনে করতেন, রাধা কৃষ্ণের এ লীলাভূমি বৃন্দাবনেই আরেক ভগবান জন্মগ্রহণ করে ‘শিবশক্তি’ নামধারণ করেছেন।

ড. শিবশক্তি উত্তর ভারতের মথুরা জেলার বৃন্দাবনে ১৯৩৬ সালে এক ঐতিহ্যবাহী মোহন্ত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তারা বংশানুক্রমেই সর্বস্বামী বা মোহন্ত। তার পিতার নাম প্রিতমদাস উদাসেন এবং মায়ের নাম ভানুমতি কর। তাদের পাঁচ সন্তানের মধ্যে সর্বকনিষ্ঠ সন্তান হলেন শিবশক্তি।

শিক্ষা জীবন

পিতার আশ্রমেই শিবশক্তি প্রাথমিক শিক্ষাজীবন শুরু করেন। পরে এলাহাবাদ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অরিয়ান্টালিজম এ মাস্টার্স করেন। গুরু কুল কাংড়ি থেকে ‘আচারিয়া’ পদবি, অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি থেকে বিশ্বের দশটি প্রধান ধর্মের উপর ডক্টরেট অব ডিভাইটিটি এবং অরিয়ান্টালিজম এ আরেকটি ‘পি এইচ ডি লাভ করেন।

বারটি ভাষায় পন্ডিত ছিলেন তিনি

পৃথিবীর বারটি ভাষায় তিনি পা-িত্য অর্জন করেন। যার মধ্যে অন্যতম হলো ইংরেজি, সংস্কৃতি, গ্রিক, উর্দু, পালি, মারাঠি, গোরমুখি, গুজরাটি, আরবী প্রভৃতি ভাষা।

তিনি প্রিয়পাত্র ছিলেন সকলের

সমকালীন ধর্মগুরু ও পন্ডিতদের সাথে তাঁর সুসম্পর্ক ছিল। বালঠাকুর, নানা সাহেব দেশমুখ, বাবা সাহেব দেশমুখ, পুরীর শংকরার্চার্য, ভারতের প্রধানমন্ত্রী অটল বিহারী বাজপেয়ী প্রমুখের সাথে তাঁর প্রত্যক্ষ যোগাযোগ ও হৃদত্যাপূর্ণ সম্পর্ক ছিল।

ভ্যাটিক্যানের নাগরিকত্ব দেয়া হয় তাকে

তিনি যখন ভ্যার্টিকানের পোপ পল-৬ এর বৃত্তি নিয়ে ইটালি যান তখন তাকে সেখানকার নাগরিকত্ব দেয়া হয়। পোপ জন পলের পক্ষ থেকে তাকে খৃষ্ট ধর্ম গ্রহনের আহবান জানালে তিনি তা উপেক্ষা করে ভারতে এসে উত্তরাধিকার সূত্রে প্রাপ্ত ভগবানের আসনে আরোহন করেন।

কালিমার শ্বাশত আহবান তাকে বিমোহিত করে

উত্তরাধিকার সূত্রে প্রাপ্ত মোহন্তগিরি পেশা ছিল তাঁর অঢেল তীর্থ উপার্জনের উৎস। অসংখ্য ভক্ত ও অনুরাগী অঢেল বিত্ত, সম্মান আর সেবায়েতের মোহ তাকে ধরে রাখতে পারেনি। কালিমার শ্বাশত আহবান তাকে বিমোহিত করতে সক্ষম হয়েছিল বিধায় তা সম্ভব হয়েছে। তাঁর জীবনে এতো প্রতিকূল অবস্থার মাঝেও তিনি সীমাহীন নির্ভীক মানুষ। তিনি বলেছেন, এক আল্লাহকে ছাড়া কাউকে তিনি ভয় করেন না।

সাংবাদিকের প্রশ্ন এবং ড. সাহেবের উত্তর

একজন সাংবাদিক তাঁকে প্রশ্ন করেছিল যে, “ভারতীয় হিন্দুদের ভগবানের আসনে সমাসীন হবার সৌভাগ্য লাভ করেও আপনি কেন ইসলাম গ্রহণ করেছেন?

জবাবে ড. সাহেব বলেছিলেন, ‘আমি ভারতের আর ১০ জন হিন্দুর মত নই। আমি ব্যাপক পড়াশোনা করেছি। ভালো-মন্দ সম্পর্কে আমার যথেষ্ট জ্ঞান হয়েছে। বিশ্বের প্রধান ১০ টি ধর্মের উপর পড়াশোনা করে আমি অক্সফোর্ড থেকে পি. এইচ. ডি. ডিগ্রি লাভ করেছি। ধর্মতত্ত্ব নিয়ে পড়াশোনা করতে গিয়েই আমি ইসলামের সত্যতার প্রমাণ পেয়েছি। মানবীয় জীবন ব্যবস্থা হিসেবে একমাত্র ইসলামই শ্রেষ্ঠত্বের দাবি করতে পারে। অন্য কোন ধর্মের এ দুঃসাহস নেই। ইসলামের সৌন্দর্য ও মানসিকতা আমাকে ইসলাম গ্রহনে উদ্বুদ্ধ করেছে।

তিনি আরো বলেন, 'তাছাড়া গভীর রাতে হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে ও আমার বিদূষী স্ত্রীকে ইসলাম গ্রহনের নির্দেশও দেন। হাদীসের ভাষ্যনুযায়ী এ স্বপ্ন মিথ্যা হয়না। স্বপ্নযোগে হযরত মোহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর দীদার কয়জনের ভাগ্যে জোটে?’

তিনি বলেন, “নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নির্দেশ আমরা পালন করেছি মাত্র। কাজেই আমাদের ইসলাম গ্রহণ নিয়ে কোনরূপ প্রশ্ন তোলা ঠিক হবে না বলে আমি মনে করি। ইসলাম গ্রহণ করতে পেরে আমরা নিজেদেরকে সৌভাগ্যবান মনে করছি। ”

ডঃ শিবশক্তি স্বরূপজীর একটি সাক্ষাৎকার

بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمَٰنِ الرَّحِيمِ

“অজ্ঞানতার দুনিয়ায় আমি ‘ভগবান’ হিসেবে পূজিত ছিলাম, আলোকিত বিশ্বে আমি নিজকে মানুষ হিসেবে খুঁজে পেয়েছি।” ডঃ স্বরূপজী

ডঃ স্বরূপজী ইসলামে মুক্তির স্বাদ পেলেন গত ১০ই মে (১৯৮৬) ভারতের সাম্প্রতিক কালের এক মহাত্মা ধর্মগুরু যিনি সেদিন পর্যন্ত সেদেশের সর্বত্র ‘ভগবান’ নামে পরিচিত ও পূজিত ছিলেন সেই ডঃ শিবশক্তি স্বরূপজী মহারাজ উদাসেন নিজ স্ত্রী ও কন্যাসহ ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন। তার নতুন নাম রাখা হয় ইসলামুল হক, পত্নীর নাম খাদিজা হক আর কন্যার নাম রাখা হয় আয়েশা হক। গুজরাটের প্রভাবশালী সাপ্তাহিক ‘শাহীন’ এর তরফ হতে ডঃ ইসলামুল হকের একটি সাক্ষাৎকার গ্রহণ করা হয়। ১ মার্চ ৮৭ তারিখে সাপ্তাহিক ‘শাহীন এ প্রকাশিত উক্ত সাক্ষাৎকারটি পরবর্তীতে বাংলায় অনুদিত হয়ে দৈনিক ইত্তেফাকে মুদ্রিত হয়। আমরা দৈনিক ইত্তেফাকের সেই সাক্ষাতকারটি এখানে হুবহু উপস্থাপন করলাম।

প্রশ্নঃ ইসলাম গ্রহণের পর আপনি কি অনুভব করছেন?

উত্তরঃ আল্লাহর হাজার শোকর যে, তিনি আমাকে ঈমানের অমূল্য সম্পদ প্রদান করেছেন। আমি নিজকে পৃথিবীর এক ভাগ্যবান ও বিজয়ী পুরুষ বলে মনে করি। অজ্ঞানতার দুনিয়ায় আমি ‘ভগবান’ হিসেবে পূজিত ছিলাম, আলোকিত বিশ্বে আমি নিজকে মানুষ হিসেবে খুঁজে পেয়েছি।

প্রশ্নঃ আপনাকে ধন্যবাদ। এখন আপনি মেহেরবানী করে আপনার আগের নাম ও পরিচয় সম্বন্ধে কিছু বলুন?

উত্তরঃ আমার নাম মহানত, ডঃ শিবশক্তি স্বরূপজী মহারাজ উদাসেন, ধর্মচারিয়া, আদ্যশক্তিপীঠ। উত্তরাধিকার সূত্রে প্রাপ্ত আমার পেশা মহানতগিরি। বৃন্দাবনে ‘অনাখন্ড আশ্রম’ নামে আমার বড় আশ্রম ছিল। দ্বিতীয় আশ্রম ছিল বোম্বাইয়ের মুলুনডে। আর তৃতীয় দেবালেইনে আন্তর্জাতিক পর্যায়ের এই আশ্রমটির নির্মাণ কাজ প্রায় ৫০ একর জমির উপর চলছিল। ‘খারাপ পথে’ চলা মানুষের সুপথে আনার উদ্দেশ্যে শিক্ষাদান’ পথ প্রদর্শন ও শিষ্য তৈরী করা ছিল আমার প্রাত্যহিক কাজ।

প্রশ্নঃ আপনার পাণ্ডিত্যের খ্যাতি সর্বত্র। আপনি আপনার নিজের সম্পর্কে, নিজের শিক্ষা জীবন ও ধর্মজীবন সম্পর্কে কিছু বলুন।

উত্তরঃ আশ্রমেই আমার শিক্ষার সূচনা হয়। পরে এলাহাবাদ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ওরিয়েন্টালিজমে এম.এ। গুরুকুল কাংডি থেকে ‘আচারিয়া’ (আচার্য) পদবী লাভ। ব্রিটেনের অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিশ্বের দশটি প্রধানতম ধর্মের উপর ডক্টর অব ডিভাইনিটি এবং সেই সাথে ওরিয়েন্টালিজমে আরেক পি.এইচ.ডি। পোপ পল-৬ এর আহবানে ইতালী যাই। সেখানে সাতটি বিভিন্ন বিষয়ে ভাষণ দান করি। আমাকে এক মহাসম্মান ভাটিকানের নাগরিত্ব দান করা হয়। এবং খ্রীষ্ট ধর্ম গ্রহণের জন্য বিশেষ অনুরোধ জানান হয়। আমি তদের অনুরোধ উপেক্ষা করে ভারতে এসে বিধিমত মুকুট ধারণ করে আশ্রমের গদিতে বসে পড়ি। আমার জন্ম ১৯৩৬ সালের ২ ফেব্রুয়ারী। জন্মস্থান মথুরা, বৃন্দাবন। আমি প্রায় ১২টি ভাষা জানি, এর মধ্যে ইংরেজী, সংস্কৃত, গ্রীক, হিন্দি, পালি, গোরমুখী, মারাঠী, গুজরাতি, উর্দু ও আরবী আমার ভাল লাগে। … আগেই বলেছি, আমি দুনিয়ার দশটি প্রধানতম ধর্মের উপর তুলনামূলক পড়াশুনা ও গবেষণা করেছি। সে জন্য সত্য স্বীকারে আমার কোন সংকোচ ছিল না। আমার সমকালীনদের মধ্যে হিন্দু জগতের বড় বড় জ্ঞানী-গুণী ব্যক্তিত্ব ও পন্ডিত রয়েছেন। যেমন জগৎগুরু শংকরাচার্য, রামগোপাল শারওয়ালে, পুরীর শংকরাচার্য, মহামন্ডেলশ্বর স্বামী অখন্ডানন্দজী, গুরু গোলওয়ালকার বাবা সাহেব দেশমুখ, বালঠাকুরে, অটলবিহারী বাজপায়ী, নানা সাহেব, দেশমুখ, বিনোবা ভাবে এবং অন্যান্য। একবার তিনি তার “পরমধাম” আশ্রমে আমাকে বক্তৃতাদানের বিশেষ আমন্ত্রণ জানান। সেখানে উপস্থিত লোকজনের সামনে দাদা ধর্মাধীকারী আমাকে জিজ্ঞাসা করে বসেনঃ “আপনি পৃথিবীর বিভিন্ন ধর্ম সম্বন্ধে পড়াশুনা করেছেন, মানুষের জন্য কোন ধর্ম শ্রেষ্ঠ বলে মনে হয়? আমি জবাবে বলেছিলাম,‘ইসলাম’ আমার জওয়াবে দাদা খুশী হন নাই। তিনি বলেন, উঠেন, “ইসলাম নানা বাধা-বন্ধন আরোপ করে।” আমি জবাব দিলাম, “যে বন্ধন বাঁধে, সেই বন্ধনই মুক্তি দিতে পারে। আর যে প্রথম থেকে স্বাধীন, তার সারা জীবনের জন্য বন্ধন সৃষ্টি প্রবণতা থেকে যাবে। এ ধরনীতে মানুষকে এক সাথে বেঁধে রাখার জন্য বন্ধনকারী ধর্মের প্রয়োজন রয়েছে, যা তাদের পৃথিবীতে ভাল করে বেঁধে রাখবে এবং পরলোকে মুক্ত করে দেবে। আর এ রকম ধর্ম আমার মতে একমাত্র ইসলামেই রয়েছে। ইসলাম ছাড়া এরকম ধর্ম আমি আর দেখি না।”

প্রশ্নঃ নিজের ইসলাম গ্রহণের কারণ সম্পর্কে কিছু বর্ণনা করুন।

উত্তরঃ ১৯৮৪’র জানুয়ারীর কথা। এক রাত্রে আমি স্বপ্ন দেখলাম। একদল লোক আমাকে ধাওয়া করছে। আমি দৌড়চ্ছি তারাও দৌড়চ্ছে। আমি দাঁড়াই, তারাও দাঁড়ায়। হঠাৎ আমি ধাক্কা খেলাম এবং মাটিতে পড়ে গেলাম। দু’টি অজানা হাত আমাকে ধরে দাঁড় করালো। দাঁড়িয়ে এক নূরানী চেহারার দিকে অবাক হয়ে থাকিয়ে রইলাম। পাশে দাঁড়িয়ে থাকা এক ভদ্রলোক আমাকে বললেন, ইনি হযরত মোহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমার শরীর কাঁপতে শুরু করল। নবীজী বললেন, ‘‘কলমা পড়।” আমি কলমা পড়লাম। তিনি আমার ডান হাত নিজের পবিত্র হাতের মধ্যে রেখে যা যা পড়াতে লাগলেন, আমি তা পড়তে লাগলাম। এমনি করে পড়া শেষ হলো। তার পর তিনি আমাকে আলিঙ্গন করলেনঃ আর বললেন, “এ দেশকে কলমা পড়াও।” আমি কতক্ষণ ধরে এ স্বপ্ন দেখেছিলাম, তা আমার মনে নেই। যখন চোখ খুললাম, দেখলাম রাত তিনটা বাজে। একই রাতে, একই সময়ে আমার স্ত্রীও এ ধরনের স্বপ্ন দেখেছিলেন। … আমরা স্বামী-স্ত্রী দুজনেই নিজেদের প্রথম শতাব্দীর মুসলমান বলে ভাবতে লাগলাম। আমি বিধিসম্মতভাবে মুসলমান হবার উপায় খুঁজতে লাগলাম, এখানে সেখানে ঘুরি, আর মুসলমানদের সাথে সম্পর্ক বাড়াই। চুপিসারে নামায পড়ি। এবাদত বন্দেগী করি। পরিশেষে ভাগ্যক্রমে আলেমদের শহর ভূপাল পৌঁছই। ১৯৮৬-এর ১০ই মে, রমজান মাসের চাঁদ দেখার সাথে সাথে আমি আমার স্ত্রী আর আমার যুবতী কন্যা প্রকাশ্যভাবে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করি। আলহামদুলিল্লাহ

প্রশ্নঃ আপনি বহু ধর্ম অধ্যয়ন করেছেন। ইসলামের পূর্ববর্তী ধর্মগ্রন্থে আল্লাহ, কুরআন, মোহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অথবা ইসলাম সম্পর্কে কোন বর্ণনা দেখতে পেয়েছেন?

উত্তরঃ বৌদ্ধ ও জৈন মতবাদ ছাড়া বাকী সব ধর্ম গ্রন্থে আল্লাহ, মোহাম্মদ (সাঃ) অথবা আহমদ নাম পাওয়া যায়। বেদে খুবই স্পষ্টভাবে পাওয়া যায়।

প্রশ্নঃ আপনি লাখ লাখ টাকার সম্পদের মোহ ছেড়ে দিয়ে ইসলাম কবুল করেছেন। বর্তমানে আপনি কিভাবে জীবন নির্বাহ করছেন?

উত্তরঃ আমি সমগ্র বিশ্বের রাজত্বও ইসলামের এই মহান উপহারের বদলে ত্যাগ করতে দ্বিধা বা কুণ্ঠাবোধ করতাম না। ইসলাম গ্রহণের মাধ্যমে যে তৃপ্তি আমি পেয়েছি সাতরাজ্যের ধন সম্পদ লাভ করেও তা পাওয়া সম্ভব নয়। আমি আয়ুর্বেদিক পদ্ধতিতে চিকিৎসা করি। আল্লাহ তায়ালার কৃপায় প্যারা মাইক্রো পন্থায় দুরারোগ্য ব্যাধির উপশম ঘটাই। এতেই আমার, আমার পরিবারের ডাল রুটির ব্যবস্থা হয়ে যায়।

প্রশ্নঃ সারওয়ারে কায়েনাত হযরত মোহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সম্পর্কে আপনার ধারণা কি?

উত্তরঃ আমি আল্লাহ তায়ালাকে চিনতাম না। আল্লাহর কসম, তিনি আমাকে রাব্বে জুলজালালকে চিনিয়ে দিয়েছেন…..।

প্রশ্নঃ ইসলামের সিপাহী হিসেবে আপনি দুনিয়ার মুসলমানদের উদ্দেশ্যে কি বাণী রাখতে চান। …. আপনার মতে মুসলমানদের কেমন হওয়া উচিত?

উত্তরঃ এ ব্যাপারে নবীজি যা বলেছেন তার চেয়ে ভাল কিছু আর কে বলতে পারে? তিনি মুসলামনদেরকে এমন সোনার টুকরার সাথে তুলনা করেছেন কোন অবস্থায়ই যার ঔজ্জ্বল্য কমে না। আরেক জায়গায় তিনি মুসলমানদের তুলনা করেছেন মধুমক্কীকার সাথে, যা ফুলের উপর গিয়ে বসে, নোংরা জায়গায় বসে না। ফুল থেকে রস চুষে মধু বানায়, বিষ তৈরী করে না। আর তা সে নিজের জন্য নয়, অপরের জন্য তৈরী করে। সে ডালে বসে, সে ডালের কোন ক্ষতি করে না। অন্যত্র তিনি বলেছেন, মুসলমান সেই, যার হাত ও কথা থেকে অন্য মুসলমান নিরাপদ থাকে।

প্রশ্নঃ আপনার ভবিষ্যৎ সম্পর্কে কিছু বলুন।

উত্তরঃ স্বার্থপরতার জাল হঠাতে হবে। মুসলিম মুজাহিদদের নতুন শপথ নিয়ে মঠে নামতে হবে। সাহস, নিঃস্বার্থ ঈমান, আর মন-প্রাণ ঢেলে কাজে নামতে হবে। আমার নিজের তরফ থেকে আন্দোলন গড়ে তোলার চেষ্টায় আছি। সমগ্র মুসলিম সমাজকে এক দেহ আর এক প্রাণে পরিণত করতে হবে।

মন্তব্য ১২ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (১২) মন্তব্য লিখুন

১| ১৮ ই জুন, ২০১৮ বিকাল ৪:১৭

চাঁদগাজী বলেছেন:



একজন পোপ যদি এই স্বপ্নটা দেখে, ইসলাম গ্রহন করে, হিন্দু হয়ে যায়, বা ইহুদী হয়ে যায়, তা নিয়ে এই যুগে কেহ মাথা ঘামাবে না।

১৮ ই জুন, ২০১৮ বিকাল ৪:৪২

নতুন নকিব বলেছেন:



কৃতজ্ঞতার সাথে ধন্যবাদ। আপনি কেমন আছেন দাদাভাই? শরীর স্বাস্থ্য ভাল এখন? চোখের সমস্যা সেরেছে? দোআ করি, আপনি অনেক ভাল থাকুন। আমাদের জন্যও আপনার কাছে কল্যানের দোআ চাই।

২| ১৮ ই জুন, ২০১৮ বিকাল ৪:২৪

টারজান০০০০৭ বলেছেন: বহুদিন পর তাহার সম্পর্কে পড়িলাম ! তিনি বাংলাদেশে আসিয়াছিলেন মনে পড়ে ! পত্র পত্রিকায় বেশ লেখালেখি হইয়াছিল !

১৮ ই জুন, ২০১৮ বিকাল ৪:৪৩

নতুন নকিব বলেছেন:



জ্বি, তিনি বাংলাদেশে এসেছিলেন। এবং সম্ভবত: একাধিকবার।

কৃতজ্ঞতা।

৩| ১৮ ই জুন, ২০১৮ বিকাল ৫:৪৬

অনন্য দায়িত্বশীল আমি বলেছেন: আল্লাহ হেদায়াত দান করলে যেকোন ভাবেই সেটার প্রতিফলন হবে।

১৮ ই জুন, ২০১৮ রাত ৯:৩০

নতুন নকিব বলেছেন:



জ্বি, সঠিক বলেছেন। কৃতজ্ঞতা।

৪| ১৮ ই জুন, ২০১৮ সন্ধ্যা ৬:১৩

করুণাধারা বলেছেন: ডঃ ইসলামুল হক সম্পর্কে জানা ছিল। তাই তার সম্পর্কে আরেকবার পড়তে ভালো লাগলো। এভাবে যদি আল্লাহ আমার সব প্রিয়জনদের হেদায়েত করতেন!!!!

১৯ শে জুন, ২০১৮ সকাল ৯:৫০

নতুন নকিব বলেছেন:



পাঠ এবং মন্তব্যে মোবারকবাদ।

প্রথমত: ডঃ ইসলামুল হক সাহেবের ঘটনাটি ছিল শতাব্দির শ্রেষ্ঠতম অলৌকিক ঘটনা। যারা কারামাত বা অলৌকিকতায় বিশ্বাস করেন না, তাদের জন্য এ ঘটনায় শেখার এবং জানার অনেক কিছু রয়েছে।

দ্বিতীয়ত: ইসলাম যে অবিনাশী, চিরন্তন সত্য, সৃষ্টিকর্তার মনোনীত জীবন ব্যবস্থা এই ঘটনাটি শ্বাশত ইসলামের সে মহাসত্যকে চোখে আঙুল দিয়ে বিশ্ববাসীকে আরেকবার দেখিয়ে দিল। অনাগত প্রজন্মের অনেকের জন্য এই ঘটনা ইসলামের সুশীতল ছায়াতলে আশ্রয়াকাঙ্খীদের জন্য প্রেরনা হয়ে থাকবে। যদিও ইসলামের সত্যতা প্রমানের জন্য এই ধরনের ঘটনা সংঘটন জরুরী নয়। বরং, ইসলামের সত্যতার অসংখ্য অগনিত প্রমান আমাদের চারপাশে তাকালেই আমরা অবলোকন করতে পারি। তদুপরি আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআ'লা যদি জগতবাসীর সামনে কোনোকিছুকে দৃষ্টান্ত হিসেবে পেশ করতে চান, কার সাধ্য তা রুখে দেয়?

৫| ১৮ ই জুন, ২০১৮ রাত ৯:১৪

খনাই বলেছেন: অনেকদিন ডঃ ইসলামুল হক সম্পর্কে শুনিনা I উনি এখন কোথায় আছেন ? কি করছেন ?

১৯ শে জুন, ২০১৮ সকাল ১০:৪২

নতুন নকিব বলেছেন:



ড. ইসলামুল হক সাহেবের বর্তমান অবস্থা জানতে চেষ্টা করছি। জানতে সক্ষম হলে শেয়ার করার ইচ্ছে থাকলো। মোবারকবাদ।

৬| ১৯ শে জুন, ২০১৮ সকাল ১১:৩৭

রাজীব নুর বলেছেন: এই রকম একটা স্বপ্ন যদি আমি দেখতে পারতাম।

১৯ শে জুন, ২০১৮ সকাল ১১:৪৪

নতুন নকিব বলেছেন:



অসম্ভব নয়।

কৃতজ্ঞতা পাঠ এবং মন্তব্যে।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.