নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আলহামদুলিল্লাহ। যা চাইনি তার চেয়ে বেশি দিয়েছেন প্রিয়তম রব। যা পাইনি তার জন্য আফসোস নেই। সিজদাবনত শুকরিয়া। প্রত্যাশার একটি ঘর এখনও ফাঁকা কি না জানা নেই, তাঁর কাছে নি:শর্ত ক্ষমা আশা করেছিলাম। তিনি দয়া করে যদি দিতেন, শুন্য সেই ঘরটিও পূর্নতা পেত!

নতুন নকিব

যবে উৎপীড়িতের ক্রন্দল-রোল আকাশে বাতাসে ধ্বনিবে না, অত্যাচারীর খড়্গ কৃপাণ ভীম রণ-ভূমে রণিবে না- বিদ্রোহী রন-ক্লান্ত। আমি সেই দিন হব শান্ত।

নতুন নকিব › বিস্তারিত পোস্টঃ

ক্কারী আব্দুল বাসিত বিন মুহাম্মাদ আব্দুস সামাদ: শতাব্দির শ্রেষ্ঠতম ক্কারী, যার সুললিত কন্ঠের কুরআন তিলাওয়াতের অতুলনীয় আবেদন থেকে যাবে কিয়ামত পর্যন্ত

০৬ ই জানুয়ারি, ২০১৯ বিকাল ৫:২১



সাম্প্রতিক বিশ্বের সবচে' জনপ্রিয় ক্কারী কে? এই প্রশ্নটি করা হলে, আমার বিশ্বাস, কুরআন প্রেমী যে কেউ নির্দ্বিধায় বলে দিবেন, তিনি আর কেউ নন, মিশরের বিখ্যাত ক্কারী আব্দুল বাসিত বিন আব্দুস সামাদ রহমাতুল্লাহি আলাইহি। বিশ্বের সকল কুরআন প্রেমীগণ অধ্যাপক আব্দুল বাসিত বিন মুহাম্মাদ আব্দুস সামাদকে এক নামে জানেন চেনেন। সুললিত কন্ঠে কুরআন তিলাওয়াত করে তিনি বিশ্ববাসী সকলের হৃদয় মন জয় করেছেন। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআ'লা প্রদত্ত অসাধারন কন্ঠে তিনি কুরআন তিলাওয়াত করে বিশ্ববাসীকে আকৃষ্ট করেছেন। এখনও তার অনবদ্য, অমৃতসম মধুর কন্ঠের তিলাওয়াত শুনে লক্ষ কোটি হৃদয় শান্তি আর পরিতৃপ্তিতে অবগাহন করেন।

ক্কারী আব্দুল বাসিতের অপ্রকাশিত কিছু কথা:
কুরআনের অধ্যাপক আব্দুল বাসিত মুহাম্মাদ আব্দুস সামাদ কুরআন তিলাওয়াত সম্মেলনে অংশগ্রহণ করার জন্য বিশ্বের বিভিন্ন দেশ সফর করেন। ৩০শে নভেম্বর মরহুম আব্দুল বাসিত মুহাম্মাদ আব্দুস সামাদের মৃত্যু হয়। গত ২০১৭ ইং সালের এই দিনে তার মৃত্যুর ২৮ তম বর্ষ পূর্ন হয়। হৃদয় নিংড়ানো, অমিয়বানী আলকুরআনের অনুপম সুন্দর তিলাওয়াতের অধিকারী মহান এই ক্কারীকে স্মরন করে তার দেশ মিশরের রাজধানী কায়রোর সাইয়্যেদা যায়নাব এলাকার আমির তাজ প্যালেসে কালচারাল ডেভেলপমেন্ট ফান্ডের পক্ষ থেকে এক স্মরণ সভা ও দুআ মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়। এই অনুষ্ঠানে বিশ্ব বিখ্যাত এই ক্বারীর সন্তান এবং তার গুনমুগ্ধ বন্ধুবর্গ উপস্থিত ছিলেন। যারা সেখানে মহান এই ক্কারীর স্মৃতিচারন করেন। উক্ত অনুষ্ঠানের প্রতিবেদন আল-বিওয়াবাতুল নিউজ প্রকাশ করে। প্রকাশিত রিপোর্টটি এই নিবন্ধের পাঠকদের জন্য নিম্নে তুলে ধরা হলো:

পিতার প্রতি সন্তানদের মূল্যায়ন:
এই অনুষ্ঠানে কুরআনের ক্বারী এবং অধ্যাপক আব্দুল বাসিত মুহাম্মাদ আব্দুস সামাদের দুই সন্তান শাইখ ইয়াসির এবং তারিক আব্দুল বাসিত উপস্থিত ছিলেন। আব্দুল বাসিত তার সন্তানদেরকেও কুরআনের ক্বারী হিসেবে গড়ে তুলেছেন। স্মরণ সভার শুরুতেই কুরআন তিলাওয়াত করেন আব্দুল বাসিতের ছেলে ক্কারী শাইখ ইয়াসির। পরবর্তীতে অধ্যাপক আব্দুল বাসিতের জীবনীর আলোকে তথ্যচিত্র প্রচারিত হয় সেখানে। তথ্যচিত্রের এক পর্যায়ে অমর এই ক্বারীর সুললিত কণ্ঠের রেকর্ডকৃত কুরআন তিলাওয়াত পরিবেশন করা হয়।

প্রসিদ্ধ এই ক্বারীর মনোরম ও সুললিত কণ্ঠস্বর, তিলাওয়াতের সময় দীর্ঘ শ্বাস ও মনোযোগ সহকারে তিলাওয়াত এবং প্রশান্তির কারণে শ্রোতাদের অন্তরে সর্বক্ষণ জীবিত রয়েছেন। আব্দুল বাসিত মিশরের আল-আকসার প্রদেশের আরমিন্ট শহরের নিকটে আল-মাযায়েযা গ্রামে ১৯২৭ সালে জন্মগ্রহণ করেন। তার জীবনের আলোকে প্রকাশিত ভিডিওতে তার অসাধারন ও অতুলনীয় প্রতিভা এবং কুরআন মুখস্থ করার অনুপম কৌশল, কুরআন শিক্ষার মকতবে শিক্ষকের মনোযোগ আকর্ষণ সম্পর্কে বিস্তারিত ব্যাখ্যা দেয়া হয়েছে। আব্দুল বাসিতের সুললিত কণ্ঠ ঠিক যেন নদীর পানির কলকল ধ্বনির মত প্রবাহিত হত।

পবিত্র কুরআনের জন্য ৩ কিলোমিটার পথ অতিক্রম:
জান্নাতী কণ্ঠস্বরের অধিকারী আব্দুল বাসিত তার বাল্যকালে কুরআনের সহিহ তিলাওয়াত শ্রবণের জন্য প্রতিদিন ৩ কিলোমিটার পথ পায়ে হেটে অতিক্রম করতেন। তার শৈশব কালের ঘটনা, তিনি যে এলাকায় জন্মগ্রহন করেন, শুধুমাত্র সেখানকার মেয়রের বাড়ীতে একটি রেডিও ছিল। ঐ রেডিওতে তার প্রিয় ক্বারী, সেকালের জনপ্রিয় কুরআনের তিলাওয়াতের অধিকারী শাইখ মুহাম্মাদ রাফাতের কুরআন তিলাওয়াত শ্রবণের জন্য তিনি প্রতি দিন তিন কিলোমিটার পথ পায়ে হেটে মেয়রের বাড়ীতে যেতেন এবং ফেরার সময় পথে পথে মুহাম্মাদ রাফাতের অনুরূপ কুরআন তিলাওয়াত করতে করতে বাড়ি ফিরতেন। তার সুমিষ্ট কণ্ঠে কুরআন তিলাওয়াত শুনে গ্রামবাসীরা তাকে এত কম বয়সেই শাইখ বলে সম্বোধন করতেন। আব্দুল বাসিত মাত্র ১০ বছরেই সম্পূর্ণ কুরআন হেফজ সম্পন্ন করেন। কুরআন তিলাওয়াত শেখার জন্য আল-মাতায়ানা গ্রামে তার শিক্ষক মুহাম্মাদ সালিম আল-মানশাভীর মকতবে যেতেন তিনি। মুহাম্মাদ সালিম আল-মানশাভী ছিলেন সেসময়ের অতি প্রসিদ্ধ একজন ক্বারী।

মিশর রেডিওর সাবেক প্রধান ফাহমী আমর বলেন: মিশরের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী মোস্তাফা নাহাস পাশা সাধারণত আসরের নামাজ কায়রোর সাইয়্যেদা যায়নাব রাদিআল্লাহু তাআ'লা আনহা মসজিদে আদায় করতেন। ক্কারী আব্দুল বাসিত আসরের নামাজের পূর্বে উক্ত মসজিদে প্রায়শই কুরআন তিলাওয়াত করতেন। ১৯৫১ সালের কোনো্ এক দিন। মিশরের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী মোস্তাফা নাহাস পাশা নামাজ আদায় করার জন্য মসজিদে উপস্থিত হলে ক্কারী আব্দুল বাসিতের কুরআন তিলাওয়াত শ্রবন করে যারপর নাই মুগ্ধ হন। ঘটনাচক্রে তখন প্রধানমন্ত্রীর সাথে রেডিওর এক কর্মকর্তা উপস্থিত ছিলেন।

নাহাস পাশা তাকে বললেন: এই ক্বারী সাহেব কি রেডিওতে তিলাওয়াত করেন?

উত্তরে রেডিও কর্মকর্তা জানালেন: না জনাব, আমিও প্রথমবারের মত আজই তার তিলাওয়াত শুনলাম।

তখন প্রধানমন্ত্রী নাহাস পাশা ক্কারী আব্দুল বাসিতকে রেডিওতে কুরআন তিলাওয়াতের সুযোগদানের জন্য নির্দেশ দেন।

শাইখ ইয়াসিরের জবানিতে পিতার স্মৃতিচারন, ভারতীয়দের আনন্দের অশ্রুজল এবং অধ্যাপকের বিস্ময়: শাইখ ইয়াসির তার পিতা ক্কারী আব্দুল বাসিত সম্পর্কে বলেন, আব্দুল বাসিত কুরআন তিলাওয়াতের জন্য বিশ্বের বিভিন্ন দেশ সফর করেন। তিনি ভারতেও গমন করেন একবার। কোনো এক মাহফিলে যথারীতি সুললিত কন্ঠে কুরআন তিলাওয়াত করেন ক্কারী আব্দুল বাসিত। তিলাওয়াত শেষে হোটেলে যাওয়ার জন্য গাড়িতে উঠে বসেন ক্কারী সাহেব। কিন্তু হাজার হাজার মানুষ তার গাড়ীর চার পাশে থাকার ভীড় করার কারণে তার গাড়ীই দেখা যাচ্ছিল না। তার অনুরাগী এবং ভক্তবৃন্দের ভালবাসা ও ভক্তি এত অধিক ছিল যে, তারা খুশিতে তার পুরো গাড়ীটাকেই সকলে মিলে ধরাধরি করে উঁচু করতে চাচ্ছিল। এটা শুধু বিস্ময়করই নয়, বরং একজন মানুষের প্রতি কতখানি ভালোবাসা থাকলে এমন ঘটনার অবতারনা হতে পারে, চিন্তার বিষয়। ক্কারী সাহেব এবং তার সাথে থাকা মিশরের রাবওয়াহ মন্ত্রণালয়ের কর্তৃপক্ষ দীর্ঘ সময় ধরে ভক্ত পরিবেষ্টিত হয়ে এভাবেই গাড়িতে বসেছিলেন। পরে দীর্ঘ সময় নিয়ে অনেক কষ্টে লোকদের সরিয়ে নিয়ে গাড়ির পথ পরিষ্কার করা হলে তারা হোটেলে গিয়ে পৌঁছতে সক্ষম হন।

আব্দুল বাসেতের বড় ছেলে শাইখ ইয়াসার আরও বলেন, একই সফরে ভারতের এক ধনী মুসলমানের আমন্ত্রণে ক্কারী আব্দুল বাসিত গিয়েছিলেন কোনো একটি এলাকায়। তখন তাকে দেখার জন্য ভারতের জনগণ পায়ের জুতা খুলে তার সম্মুখে উপস্থিত হয়েছিলেন। এমনভাবে উপস্থিত হয়েছিলেন, যেন নামাজ পড়ার জন্য তারা সেখানে উপস্থিত হয়েছেন। বিশ্বখ্যাত উস্তাদের কুরআন তিলাওয়াত শুনে তারা মুগ্ধ হয়ে যান এবং তাদের অনেকেরই চক্ষু অশ্রুসিক্ত হয়।

উস্তাদের চোখও ছিল অশ্রুসিক্ত: উস্তাদের কুরআন তিলাওয়াত শেষ হলে তিনি নিজেকে কন্ট্রোল করতে পারেননি এবং দর্শকদের ভালোবাসা এবং ভক্তি দেখে তিনিও ক্রন্দন করেন ঐ মজলিশে। ঐ মাহফিলে উপস্থিত অধিকাংশ দর্শকই তাকে প্রথমবারের মত দর্শন করেছেন।

শাইখ তারিক আব্দুল বাসিতের ভাষায় পিতার স্মৃতি:
তারিক আব্দুল বাসিত তার পিতার ভ্রমণ সম্পর্কে বলেন, উস্তাদ আব্দুল বাসিত আরব দেশসমূহ, আফ্রিকা, ইউরোপ এবং আমেরিকাসহ বিশ্বের অনেক দেশে সফর করেন। ১৯৫৬ সালে দক্ষিণ আফ্রিকায় সংখ্যালঘু মুসলমানগন উস্তাদকে আমন্ত্রণ জানান। কিন্তু তখন জাতি বিদ্বেষের কারণে কায়রো ও জোহানসবার্গের মধ্যে কোন কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিল না। এ জন্য দুই দেশের যাতায়াত ও যোগাযোগের ক্ষেত্রে সমস্যার সৃষ্টি হয়। অবশেষে ১৯৬৬ সালে দুই দেশের কর্তৃপক্ষের দীর্ঘ আলোচনার পর উস্তাদ দক্ষিণ আফ্রিকার ভিসা পান এবং সে দেশ সফর করেন।

শাইখ তারিক আব্দুল বাসিত বলেন, সে সময়ে দুই দেশের মধ্যে কোন সরাসরি কোনো ফ্লাইট ছিল না। বাধ্য হয়ে উস্তাদ ক্কারী আব্দুল বাসিত কেনিয়ার রাজধানী নাইরোবি হয়ে সেখান থেকে জোহানসবার্গে যান। এই শহরে প্রবেশের সময় জনগণ উস্তাদকে ব্যাপকভাবে স্বাগত জানায়। অথচ ঐ শহরের জনগণ আরবি ভাষা জানতেন না। সেখানে উস্তাদ প্রায় এক মাস অবস্থান করেন। এসময় আব্দুল বাসিত জোহানসবার্গের কেপ টাউন এবং লেডি স্মিথসহ দক্ষিণ আফ্রিকার বিভিন্ন শহর সফর করেন। এদেশের মুসলমানগন অধ্যাপক আব্দুল বাসিতের সুললিত কণ্ঠে কুরআন তিলাওয়াত শুনে এবং তার তিলাওয়াতের অনন্য শৈলীর কারণে মুগ্ধ হন। উস্তাদের অনন্যশৈলীতে কুরআন তিলাওয়াত এবং হিফজ করার জন্য তাদের সন্তানদের মিশরের রাজধানী কায়রো পাঠানোর সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন।

মুহাম্মাদ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম চলচ্চিত্রে বেলালের আযানের ধ্বনি এবং উস্তাদ আব্দুল বাসেত:
ক্কারী আব্দুল বাসিতের ছেলে তারেক আব্দুল বাসিত আরও বলেন, আল রিসালা চলচ্চিত্রের পরিচালক মুস্তাফা আল-ইকাদের আমন্ত্রণে আব্দুল বাসিত প্যারিস সফর করেন এবং ঐখানে যাতে জনগণের দৃষ্টিতে তিনি না পড়েন সেজন্য আল-আজহার তথা, মিশরের প্রথাগত ঐতিহ্যবাহী পোশাকের স্থানে কোট এবং প্যান্ট পরিধান করেন। উক্ত চলচ্চিত্রে বিলাল ইবনে রাবাহর কণ্ঠের যে আযান প্রচার করা হয়েছিল, সেটি ছিল উস্তাদ শাইখ আব্দুল বাসিতের কণ্ঠ। মুহাম্মাদ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নামের প্রসিদ্ধ আল রিসালা চলচ্চিত্রটি মুস্তাফা আল-ইকাদের পরিচালনা করেন। এই চলচ্চিত্রটি ১৯৭৬ সালে নির্মিত হয়। এই চলচ্চিত্রে হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নবুয়ত প্রাপ্তির সময় তথা ৪০ বছর বয়স থেকে ওফাত পর্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ঘটনাসমূহ তুলে ধরা হয়।

শতাব্দির শ্রেষ্ঠ ক্বারী আব্দুল বাসিত আব্দুস সামাদ রহ, এক নজরে তার অনবদ্য জীবনের আরও কিছু কথা:
মিশর এমনই একটি মুসলিম দেশ, যা সর্বদাই যুগ শ্রেষ্ঠ ক্বারীদের জন্মদাতা। এর মধ্যেও মিশরীয় ক্বারী আব্দুল বাসিত আব্দুস সামাদ ছিলেন অনন্য গুণ ও বিশিষ্টতার আধার। বিশ্বের কোটি কোটি মানুষের অন্তর জয়কারী। এখনো তার কুরআন পাঠ কোটি কোটি শ্রোতার অন্তর জুড়িয়ে যাচ্ছে। গান-বাজনার এ যুগে বিনোদনের কত কনসার্ট ও আসরই না হয়। কিন্তু ক্বারীদের সুমধুর সুরের তরঙ্গায়িত কুরআনের ধ্বনী শোনার আসর কতটি হয়? এ ধরনের মজমা ও আসরে শ্রোতাদের কুরআনের আওয়াজ শুনিয়ে ঈমানের আগুন বাড়িয়ে দিতেন মিশরের যে ক্বারীগণ, তাদের মধ্যে সর্বাগ্রে নাম আসে ক্বারী আব্দুল বাসিত আব্দুস সামাদ এর। ১৯২৭ সালে মিশরের প্রত্যন্ত এক গ্রামে জন্ম নেন তিনি। অল্প বয়েসেই পুরা কুরআনের সাত ক্বীরাতের হাফেয হন। ১৪ বছর বয়সে নিজ মহল্লার মসজিদে তারাবীহ নামাজ পড়ানোর সুযোগ পান। সেসময়ের শ্রেষ্ঠ ক্বারী মোহাম্মাদ রাফাতের ভক্ত ছিলেন তিনি এবং তার তিলাওয়াত রেডিও-তে শোনার জন্য বহু দূরের পথ হেটে যেতেন। দ্রুতই তিনি কুরআনের তাজবীদ, ক্কিরাআতের নিয়ম নীতি আয়ত্ত্ব করেন এবং সুর, ছন্দ ও তাজবীদের উপরে অসাধারন পান্ডিত্য অর্জন করেন। ক্কিরাআতের ব্যাপারে তার তিলাওয়াত-কে ও তার যোগ্যতাকে আল্লাহর অসাধারন দান ও বিশেষ অনুগ্রহ বলা যায়। ১৯৭০ এর দশকে তিনি তিন তিন বার বিশ্ব ক্কিরাত প্রতিযোগিতায় প্রথম হয়ে বিশ্ব রেকর্ড গড়ে দুনিয়ার শ্রেষ্ঠ ক্বারীর খেতাব লাভ করেন। তার কুরআন তিলাওয়াত নিয়ে অনেক অলৌকিক ঘটনা রয়েছে। তার তিলাওয়াত শুনে অনেক অমুসলিম ইসলামে দীক্ষিত হওয়ার সৌভাগ্য লাভে ধন্য হয়েছেন। এসব অনেক ঘটনার বিবরন ক্বারী সাহেব নিজেই বিভিন্ন মাহফিলে শুনাতেন। একবার মিশরের প্রেসিডেন্ট জামাল-আব্দেল-নাসের এর সাথে রাশিয়া সফর করেন ক্কারী সাহেব। সেখানে রাশিয়ান অ-মুসলিম, বাম পন্থি ডেলিগেটদের সামনে সুরাহ আতত্বোয়া-হা- তিলাওয়াত করেন তিনি। এ তিলাওয়াত শুনে রাশিয়ান অনেক ডেলিগেটের চোখে অশ্রু প্রবাহিত হয়েছিল (যদিও তারা এ তিলাওয়াতকৃত আয়াতের অর্থ বুঝতে অক্ষম ছিলেন)।

কায়রোর বহু মসজিদে হতে লাগল ক্বারী সাহেবের তিলাওয়াত:
মানুষ পীপিলিকার মত দলে দলে ভক্ত হয়ে তার তিলাওয়াত শুনতে আসতেন। প্রায়ই মজলিসে তার তিলাওয়াত শুনে আবেগ ও উদ্দীপনায় অনেক মানুষ বেহুশ হয়ে যেতেন। একবারের ঘটনা, বিভিন্ন ধর্মের ও চিন্তাধারার মানুষদের এক জনসভায় বিভিন্ন ধর্মের বক্তারা তাদের ধর্মের পক্ষে বক্তব্য পেশ করেন ও মত বিনিময় করেন। সেখানে উপস্থিত ছিলেন ক্বারী আব্দুল বাসিত আব্দুস সামাদ। মুসলমানদের বক্তব্য পেশ করার সময় এলে, মুসলিম জনতা ক্বারী সাহেবকে কুরআন তিলাওয়াত করতে অনুরোধ করেন। ক্কারী সাহেব কুরআন তিলাওয়াত শুরু করেন এবং নির্ধারিত সময় পেরিয়ে গেলেও তিনি তার তিলাওয়াত চালিয়ে যেতে থাকেন। উপস্থিত বিভিন্ন ধর্মের সমবেত জনতা তন্ময় হয়ে শনুতে থাকেন তার হৃদয় নিংড়ানো সেই তিলাওয়াত এবং সকলেই সমস্বরে স্বীকার করেন, এ ক্বারী সাহেব যা তিলাওয়াত করেছেন, তার তুলনা হয় না, এমন মধুর বানী যে ধর্মের, সেটাই সঠিক।

এমনই আরেকটি ক্কিরাআতের মজলিস। বিভিন্ন ক্বারীগন ক্কিরাআত শুনিয়েছিলেন সে অনুষ্ঠানে। ক্বারী আব্দুল বাসিত রহমাতুল্লাহি আলাইহির সময় বরাদ্দ ছিল ১০ মিনিট। তিনি সুরাহ আল আহযাব তিলাওয়াত শুরু করেন। শ্রোতা, বিচারক ও ওন্যান্য ক্বারীগণ সকলেই মোহিত হয়ে যান তার তিলাওয়াতে। সকলের অনুরোধে তিনি সময় বৃদ্ধি করতে থাকেন। এমনিকরে একের পর এক অনুরোধ রক্ষা করে তিনি চালিয়ে যেতে থাকেন সুললিত কন্ঠের তার তিলাওয়াত। অবশেষে তিলাওয়াতের সমাপ্তিতে দেখা যায়, তিনি একনাগারে তিলাওয়াত করেছেন দেড় ঘন্টা। এভাবেই, সারা জীবন বিশ্বময় মহাগ্রন্থ আল কুরআনের আলো ছড়িয়ে মহান প্রতিপালকের ডাকে ১৯৮৮ ইং সালে ইহধাম ত্যাগ করে পরপারের যাত্রী হন শতাব্দির শ্রেষ্ঠতম মহান এ ক্বারী। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআ'লার দরবারে বিনীত ফরিয়াদ, তিনি যেন ক্কারী আব্দুল বাসিতকে ক্ষমা করে দেন। তাকে মেহমান বানিয়ে নেন জান্নাতুল ফিরদাউসের।

ক্কারী সাহেব বাংলাদেশে এসেছিলেন একবার:
ক্কারী সাহেব চট্টগ্রামের হাটহাজারি মাদ্রাসায় কোনো এক প্রোগ্রামে অংশগ্রহন করার জন্য বাংলাদেশে এসেছিলেন একবার। এই মুহূর্তে স্মরন করতে পারছি না, তিনি ঠিক কবে কোন্ তারিখে এসেছিলেন। ক্কারী সাহেবের বাংলাদেশ সফর সম্মন্ধে সহৃদয় কারও জানা থাকলে মন্তব্যে জানানোর অনুরোধ থাকলো। পোস্ট এডিট করে তথ্য পোস্টে যুক্ত করার চেষ্টা থাকবে ইনশাআল্লাহ।

কৈফিয়ত, কেন এই পোস্ট?
শৈশব থেকে ক্কারী সাহেবের ক্কিরাআত শুনে অভ্যস্ত। আশি নব্বইয়ের দশকে তার ক্কিরাআত শুনতাম। আজও শুনি। তিনি নেই কিন্তু তাঁর তিলাওয়াত শুনে আজও সিক্ত করি হৃদয় মন। সঙ্গত কারনে তাঁর কিছু স্মৃতিগাঁথা তাঁর তিলাওয়াত যারা ভালোবাসেন তাদের উদ্দেশ্যে নিবেদনের জন্য এই পোস্ট।

আবদুল বাসিত বিন মুহাম্মাদ আব্দুস সামাদ -এর কন্ঠে পুরো ৩০ পারা কুরআন অডিও/ এমপি থ্রি ফরমেটে:
Listen or Download Quran MP3 Recited by Qari Abdul Basit

তাঁর আরও কিছু হৃদয় জুড়ানো তিলাওয়াতের ভিডিও:
Qari Abdul Basit Tilawat
Non-Muslim Reacts To Best Quran Recitation By Sheikh Abdul Basit
Hafız Abdulbasit Abdüssamed Duha ve İnşirah Sureleri
Heart Soothing By ABDULBASIT ABDUSSAMAD
Surah Al-Qiyamah & Al-Qadr
لم اجد قارئ يتلوسورة التكويركما تلاها صاحب الحنجرة الذهبية تلاوة دمعت منها العيون وخشعت لها القلوب

ছবি কৃতজ্ঞতা: গুগল।

লেখাটি প্রনয়নে সহায়তা নেয়া হয়েছে:
১. al bawaba news
২. অনলাইনে ছড়িয়ে থাকা বিভিন্ন জার্নাল ও পত্র পত্রিকা, সকলের প্রতি কৃতজ্ঞতা।

মন্তব্য ১৪ টি রেটিং +৩/-০

মন্তব্য (১৪) মন্তব্য লিখুন

১| ০৬ ই জানুয়ারি, ২০১৯ বিকাল ৫:২৭

হাবিব বলেছেন: ক্কারী আব্দুল বাসিতের তেলাওয়াত সত্যিও মন ছুঁয়ে যায়

০৮ ই জানুয়ারি, ২০১৯ সকাল ৮:৪৬

নতুন নকিব বলেছেন:



আপনারও মন প্রান ছুঁয়ে যায়, সত্যিই! মোবারকবাদ।

আমার তো এই তিলাওয়াত শুনে শুনে তৃপ্তি আসে না। এখনও তার সুললিত কন্ঠের মধুর তিলাওয়াত শুনি।

২| ০৬ ই জানুয়ারি, ২০১৯ বিকাল ৫:৪৮

রাজীব নুর বলেছেন: আচ্ছা বলেন তো- পৃথিবী থেকে চাঁদে যেতে হলে নভোচারীদের মহাকাশযান নিয়ে উপরের দিকে উঠতে হয়। আবার চাঁদ থেকে পৃথিবীতে ফেরার সময় কোন দিকে যেতে হবে?

পৃথিবী থেকে চাঁদে যাওয়ার সময় যাবে চাঁদের দিকে আর চাঁদ থেকে পৃথিবীতে আসার সময় আসবে পৃথিবীর দিকে?

০৮ ই জানুয়ারি, ২০১৯ সকাল ৮:৫৫

নতুন নকিব বলেছেন:



আপনার প্রশ্নের উত্তর তো আপনি দিয়েই দিলেন!

পৃথিবী থেকে চাঁদে যাওয়ার সময় যাবে চাঁদের দিকে আর চাঁদ থেকে পৃথিবীতে আসার সময় আসবে পৃথিবীর দিকে?

আমার যতটুকু জানা, মহাশুন্যে ভ্রমনের ক্ষেত্রে উপর নিচটা গৌণ হয়ে যায়। কোনো গ্রহ, উপগ্রহ কিংবা নক্ষত্রের নির্দিষ্ট রেঞ্জের ভেতরে প্রবেশ করলে মহাকাশ যান সেই গ্রহ, উপগ্রহ কিংবা নক্ষত্রের মাধ্যকর্ষন শক্তির আওতায় চলে আসে।

তা মহাগ্রন্থ আল কুরআনের অমর ক্কারী আব্দুল বাসিত রহ. স্মরনে দেয়া এই পোস্টে এ প্রশ্ন কেন?

ভালো থাকুন।

৩| ০৬ ই জানুয়ারি, ২০১৯ সন্ধ্যা ৬:৫৩

আল ইফরান বলেছেন: আমি ইউটিউবে ঊনার তেলাওয়াত শুনেছি এবং উনাকে ফলো করা আরেকজন সেনেগালের ক্বারী সাহেবের তেলাওয়াত শুনেছি।
আমার কাছে তুলনামুলকভাবে মিশারি রশিদ আল-আফাসি এর তিলাওয়াত বেশী ভালো লাগে।
চমৎকার একটি বিষয় শেয়ার করেছেন, পোস্টে লাইক।

০৮ ই জানুয়ারি, ২০১৯ সকাল ৯:০২

নতুন নকিব বলেছেন:



সেনেগালের সেই ক্কারী সাহেবের নামটা কি বলতে পারবেন? তিনি কি Qari Muhammad Toure?

Qari Muhammad Toure এর একটি তিলাওয়াত-

Beautiful Quran Recitation by Senegalese Qari Muhammad Toure

মিশারি রশিদ আল-আফাসি এর তিলাওয়াতও মনমুগ্ধকর।

জাজাকুমুল্লাহ।

৪| ০৬ ই জানুয়ারি, ২০১৯ সন্ধ্যা ৭:১৭

সৈয়দ তাজুল ইসলাম বলেছেন: ছোট থাকতে কারী আব্দুল বাসিত সাহেবের তেলাওয়াত শুনতাম। অনেক মুগ্ধতা রয়েছে উনার তেলাওয়াতে।


শেয়ারের জন্য আপনাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ।

০৮ ই জানুয়ারি, ২০১৯ সকাল ৯:০৬

নতুন নকিব বলেছেন:



তিলাওয়াত শুনলে হৃদয়ে প্রশান্তির পরশ আসে। ছোট বয়সে কারী আব্দুল বাসিত সাহেবের তিলাওয়াত শুনতেন জেনে ভালো লাগছে।

মন্তব্যে আসায় কৃতজ্ঞতাসহ শুভকামনা।

৫| ০৬ ই জানুয়ারি, ২০১৯ সন্ধ্যা ৭:২৭

মাহমুদুর রহমান বলেছেন: পরে মন্তব্য করবো।

০৮ ই জানুয়ারি, ২০১৯ সকাল ৯:০৮

নতুন নকিব বলেছেন:



ইনশাআল্লাহ। জাজাকুমুল্লাহ।

৬| ০৭ ই জানুয়ারি, ২০১৯ রাত ১:২৯

বলেছেন: মাশআললাহ, সুন্দর পোস্ট।

আললাহ আপনার মঙ্গল করুন।

০৮ ই জানুয়ারি, ২০১৯ সকাল ৯:০৮

নতুন নকিব বলেছেন:



শুকরিয়া।

কৃতজ্ঞতা এবং শুভকামনা।

৭| ০৮ ই জানুয়ারি, ২০১৯ রাত ১২:১২

সনেট কবি বলেছেন: আল্লাহ আপনার মঙ্গল করুন।

০৮ ই জানুয়ারি, ২০১৯ সকাল ৯:০৮

নতুন নকিব বলেছেন:



কৃতজ্ঞতাসহ একই দুআ আপনার জন্যও।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.