নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
যবে উৎপীড়িতের ক্রন্দল-রোল আকাশে বাতাসে ধ্বনিবে না, অত্যাচারীর খড়্গ কৃপাণ ভীম রণ-ভূমে রণিবে না- বিদ্রোহী রন-ক্লান্ত। আমি সেই দিন হব শান্ত।
আল্লাহ পাকের নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করছি। তিনি আমাদের অপরাধ ক্ষমা করুন। আমাদের ভুল ত্রুটি মার্জনা করুন। আমাদের ইচ্ছায় অনিচ্ছায় কৃত সমস্ত পাপরাশি ক্ষমা করুন। আমাদের জানা অজানা গোনাহসমূহ মাফ করুন। আমাদের অবস্থাকে উন্নত করুন। কষ্ট ক্লেশ দূর করে দিন। দুশ্চিন্তা পেরেশানি থেকে মুক্তি দান করুন। শারিরিক মানসিক অস্থিরতা ঘুচিয়ে দিন। মানুষের দেয়া কষ্ট আঘাত সহ্য করার ক্ষমতা দিন। কঠিন কঠিন রোগ ব্যধি থেকে মুক্তি দান রাখুন। অভাব অনটনের পরীক্ষা থেকে রক্ষা করুন।
আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআ'লা তাঁর হক আদায়ে আমাদের সচেষ্ট হওয়ার তাকত দান করুন। তাঁর রাসূল (সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর দেখিয়ে দেয়া পথে আমাদের জীবন গড়ার কিসমত নসিব করুন। বাবা মায়ের প্রতি আমাদের সর্বোত্তম আচরন করার তাওফিক দান করুন। ভাই-বোন, আত্মীয় স্বজনসহ সমগ্র মানব সমাজ এবং সৃষ্টি জগতের অন্য সকল প্রাণীর হক আদায় করার তাওফিক দান করুন। হে, আল্লাহ, আপনার রহমতের অফুরন্ত খাজানা থেকে সমগ্র সৃষ্ট জীবের জন্য অবারিত কল্যান দান করুন।
এ সময়ে প্রতিনিয়ত আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করা উচিত
বর্তমান জামানায় অপরাধ থেকে বেঁচে থাকা ক্রমশ: কঠিন থেকে কঠিন হয়ে পড়েছে। এ সময়ে আমাদের উচিত প্রতিনিয়ত আল্লাহ পাকের নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করা। ক্ষমা চাইতে গিয়ে কোনো সংকোচ করা উচিত নয়। আসলে আল্লাহ পাক যে কতটাই মহান- আমরা কল্পনাও করতে পারি না। তিনি যেমন অসীম। তাঁর ক্ষমা এবং মহত্ত্বও অসীম। তাকে কল্পনা করে যেমন আয়ত্বে নেয়া যায় না, তাঁর কুদরত, তাঁর ক্ষমা, তাঁর মহানত্বও পরিমাপের বাইরে। আমাদের কল্পনার বাইরে। বান্দা যখনই গুনাহ করে মাফ চায়। ফিরে আসে তাঁর কাছে, আল্লাহ পাক তখনই কবুল করে কাছে ডেকে নেন তাকে। রহমতের চাদোয়ায় শামিল করে নেন বান্দাকে। আমাদের সামনে প্রমান রয়েছে। হাদিস সাক্ষ্য দিচ্ছে। মুসনাদে আহমদে রয়েছে, রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন: 'নিশ্চয়ই শয়তান বলেছে, হে আমার রব, আপনার ইজ্জতের শপথ করে বলছি, আমি আপনার বান্দাদের শরীরে প্রাণ থাকা পর্যন্ত গোমরাহ করতে থাকব। তখন রব বলেন, আমার ইজ্জত ও শ্রেষ্ঠত্বের শপথ করে বলছি, তারা যে পর্যন্ত ক্ষমা চাইতে থাকবে, আমি তাদের ক্ষমা করতে থাকব।'
সুবহানাল্লাহ। আলহামদুলিল্লাহ। অত্র হাদিস থেকে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআ'লার মহত্ত্ব এবং বান্দার অপরাধ ক্ষমা করায় তাঁর প্রবল ইচ্ছে সম্পর্কে ধারণা করা যায়। এভাবে আল্লাহ পাক দিনে গুনাহকারীদের গুনাহ মাফ করার জন্য রাতে নিজ ক্ষমার হাত সম্প্রসারিত করেন এবং রাতে গুনাহকারীদের গুনাহ মাফ করার জন্য দিনে নিজ ক্ষমার হাত সম্প্রসারিত করেন। কেয়ামতের আগে পশ্চিমে সূর্যোদয় পর্যন্ত এভাবেই চলতে থাকবে। আল্লাহ বান্দার গুনাহ মাফের জন্য রীতিমতো অপেক্ষা করেন। বান্দা মাফ চাইলেই মাফ পেতে পারে। কে আছে আল্লাহ থেকে মহান? মুসলিম শরিফে বর্ণিত একখানা হাদিসে কুদসিতে এসেছে: 'আল্লাহ পাক বলেন, হে আমার বান্দা, তোমরা দিনে-রাতে গুনাহ করে থাক, আর আমি সব গুনাহ মাফ করি। তোমরা আমার কাছে ক্ষমা চাও, আমি তোমাদের গুনাহ মাফ করে দেব।'
আল্লাহ পাক সর্বময় ক্ষমতার মালিক। বিশ্বজগতের তিনি স্রষ্টা। তিনি এক ও একক। তাঁর কোনো অংশীদার নেই। জগত জাহানের তামাম কিছুর তিনি একচ্ছত্র মালিক এবং অধিপতি। কাউকে ক্ষমা করার জন্য কোনো কিছুর পরোয়া করেন না তিনি। বরং, ক্ষমা করার জন্য তিনি তাকিয়ে থাকেন বান্দার দিকে। হায় হায়, এমন দরদী ক্ষমাশীল মালিককেও কি ভুলে যাওয়া যায়? আহ, তাহলে আমাদের কেন এত সংকোচ? কেন আমরা বিরত থাকি আল্লাহ পাকের কাছে ক্ষমা চাওয়া থেকে? কোন্ জিনিষ আমাদের ফিরিয়ে রাখে তাঁর দরবারে মস্তক অবনত করা থেকে? কোন্ মোহ, কিসের নেশা আমাদের মালিকের সাথে দোস্তি করা থেকে সরিয়ে রাখে দূরে?
জামে আত তিরমিযীতে বর্ণিত হাদিসে কুদসিতে রয়েছে: 'আল্লাহ পাক বলেন, হে বনি আদম, তুমি আমার কাছে যা আশা করো এবং চাও, আমি তোমাকে মাফ করে দিলাম এবং এ জন্য আমি কোনো পরোয়া করি না।'
জামে আত তিরমিযিতে বর্ণিত অন্য এক হাদিস। হজরত আনাস রাদিআল্লাহু তাআ'লা আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন: আমি রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি, আল্লাহ পাক বলেন, হে বনি আদম, তুমি আমার কাছে যা যা দুআ ও প্রত্যাশা করো, আমি তোমার সব গুনাহ মাফ করে দেব এবং এ ব্যাপারে আমি কোনো কিছুর পরোয়া করব না। হে বনি আদম, যদি তোমার গুনাহ আকাশের মেঘমালার মতো বিপুল পরিমাণও হয়, তারপর তুমি আমার কাছে ক্ষমা চাও, আমি তোমার সে গুনাহ মাফ করে দেব এবং সে জন্য আমি কোনো পরোয়া করি না। হে আদম সন্তান, যদি তুমি জমিন পরিমাণ বিশাল গুনাহরাশি নিয়েও আমার দিকে ফিরে আসো এবং আমার সঙ্গে আর কাউকে শরিক না করো, তাহলে আমিও তোমার প্রতি জমিন পরিমাণ বিশাল ক্ষমা নিয়ে হাজির হবো।'
আহকামুল হাকিমীন মহান প্রতিপালকের নিকট থেকে তাঁর অবারিত ক্ষমা, অফুরন্ত রহমত পেতে হলে ঠিক একইভাবে আমাদের নিজেদেরও পরস্পরের ভুল-ভ্রান্তি ক্ষমা করার অভ্যাস গড়ে তোলা উচিত। এভাবেই আমাদের এগিয়ে চলা উচিত। পবিত্র কুরআনুল কারিমে নির্দেশিত নৈতিক আদেশের মধ্যে ক্ষমা অন্যতম। আল্লাহ পাক ইরশাদ করেন,
خُذِ الْعَفْوَ وَأْمُرْ بِالْعُرْفِ وَأَعْرِضْ عَنِ الْجَاهِلِينَ
'হে রাসূল, আপনি ক্ষমার পথ অবলম্বন করুন এবং সৎ কাজের আদেশ দান করুন আর অজ্ঞদের থেকে দূরে থাকুন।' (সূরা আরাফ ৭ :১৯৯)
অন্য এক আয়াতে আল্লাহ পাক বলেন,
وَلْيَعْفُوا وَلْيَصْفَحُوا أَلَا تُحِبُّونَ أَن يَغْفِرَ اللَّهُ لَكُمْ وَاللَّهُ غَفُورٌ رَّحِيمٌ
'তারা যেন ওদের ক্ষমা করে এবং ওদের দোষ-ত্রুটি উপেক্ষা করে। তোমরা কি চাও না যে, আল্লাহ তোমাদের ক্ষমা করেন? আল্লাহ ক্ষমাশীল, দয়াময়।' (সূরা নূর ২৪ :২২)
অন্যকে ক্ষমা করা আমাদের পক্ষে অনেক সময় কঠিন হয়ে পড়লেও আল্লাহ পাক এ ব্যাপারে আমাদের উৎসাহ প্রদান করেছেন পবিত্র কুরআনে-
وَجَزَاء سَيِّئَةٍ سَيِّئَةٌ مِّثْلُهَا فَمَنْ عَفَا وَأَصْلَحَ فَأَجْرُهُ عَلَى اللَّهِ
'মন্দের প্রতিফল অনূরূপ মন্দ এবং যে ক্ষমা করে দেয় ও আপস-নিষ্পত্তি করে, তার পুরস্কার আল্লাহর নিকট আছে।' (সূরা শুরা ৪২ :৪০)
পবিত্র কুরআনে আরও উল্লেখ রয়েছে,
وَلَمَن صَبَرَ وَغَفَرَ إِنَّ ذَلِكَ لَمِنْ عَزْمِ الْأُمُورِ
'ক্ষমা হচ্ছে বীরত্বপূর্ণ সর্বোচ্চ নৈতিক গুণ। কেউ ধৈর্য ধারণ করলে ও ক্ষমা করে দিলে তা বীরত্বের কাজ।' (সূরা শূরা ৪২ :৪৩)
তিনি অন্য আয়াতে ইরশাদ করেন,
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا إِنَّ مِنْ أَزْوَاجِكُمْ وَأَوْلَادِكُمْ عَدُوًّا لَّكُمْ فَاحْذَرُوهُمْ وَإِن تَعْفُوا وَتَصْفَحُوا وَتَغْفِرُوا فَإِنَّ اللَّهَ غَفُورٌ رَّحِيمٌ
'হে বিশ্বাসীগণ, তোমাদের স্ত্রী ও সন্তানদের কেউ কেউ তোমাদের শত্রু। অতএব, তাদের সম্পর্কে সতর্ক থেকো। তোমরা যদি মার্জনা করো, ওদের দোষ-ত্রুটি উপেক্ষা করো এবং ওদের ক্ষমা করো। তবে (জেনে রেখ) নিশ্চয়ই আল্লাহ ক্ষমাশীল, দয়াময়।' (সূরা তাগাবুন ৬৪ :১৪)
অন্য আয়াতে ইরশাদ হয়েছে,
أَفَلاَ يَتُوبُونَ إِلَى اللّهِ وَيَسْتَغْفِرُونَهُ وَاللّهُ غَفُورٌ رَّحِيمٌ
'তারা আল্লাহর কাছে তওবা করে না কেন এবং ক্ষমা প্রার্থনা করে না কেন? আল্লাহ যে ক্ষমাশীল, দয়ালু।' (সূরা আল মায়েদাহ, ০৫ :৭৪)
আমরা মানুষ। দোষে গুণে সৃষ্ট। আমাদের দ্বারা ভুল করাও স্বাভাবিক। তাই সর্বাবস্থায় আমাদের উচিত, হতাশ না হয়ে, হীনমন্য না হয়ে, মনটাকে ছোট না করে, আল্লাহ পাকের রহমতের অথৈ দরিয়া থেকে নিরাশ না হয়ে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআ'লার দরবারে প্রতিনিয়ত ক্ষমা চাওয়া। একইসাথে একে অপরকেও ক্ষমা করে মহানুভবতা দেখিয়ে ক্ষমা ও মহানুভবতার গুন অর্জন করে নিজেকে প্রতিপালকের ক্ষমাপ্রাপ্তির যোগ্য করে গড়ে তোলা। একজন প্রকৃত মুসলমানের বৈশিষ্ট্য তো এটাই হওয়া উচিত। আল্লাহ পাক আমাদের দুআগুলো তাঁর মাহবূব মদিনাওয়ালা, আকায়ে নামদার তাজেদারে দোজাহান হুজুর সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর বরকতে কবুল করুন।
কৈফিয়ত: প্রিয় ব্লগার বন্ধুদের নিকট বিনীতভাবে জানিয়ে রাখছি, বর্তমানে সামু একটি ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছে। অত্যন্ত ধৈর্য্য, স্থৈর্য্য এবং সাহসিকতার সাথে এই সময়ে আমাদের সকলেরই উচিত, প্রিয় এই প্রাঙ্গনটির পাশে দাঁড়ানো। বিশেষ কারণে আমার পোস্টগুলোতে আপাতত: কমেন্টস মডারেশন করা হয়েছে। সকলের কল্যান হোক।
ছবি কৃতজ্ঞতা: অন্তর্জাল।