নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
যবে উৎপীড়িতের ক্রন্দল-রোল আকাশে বাতাসে ধ্বনিবে না, অত্যাচারীর খড়্গ কৃপাণ ভীম রণ-ভূমে রণিবে না- বিদ্রোহী রন-ক্লান্ত। আমি সেই দিন হব শান্ত।
আর মাত্র ক'দিন
আজ থেকে গুনে গুনে ১ মাস ৫ কি ৬ দিন বাকি। এরপরেই শুরু হবে পবিত্র মাহে রমজান। রমজানের শুভাগমনে জেগে ওঠে বিশ্ব চরাচর। আল্লাহ পাকের রহমতের ফল্গুধারা বইতে থাকে আকাশে বাতাসে ইথারে। পবিত্র মাহে রমজানের আগমনের প্রাক্কালে বিশ্বাসীদের হৃদয়ে দোলা দিয়ে যায় আনন্দ হিল্লোল। রমজান আসছে, ভাবতেই মনটা কেমন করে ওঠে। আলহামদুলিল্লাহ। আল্লাহ পাকের দরবারে বিনীত ফরিয়াদ তিনি আমাদের রমজান পর্যন্ত হায়াত প্রলম্বিত করে দিন। আসুন, প্রিয় নবীজী সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের শিখিয়ে দেয়া বাক্যে প্রার্থনা করি, 'আল্লাহুম্মা বারিক লানা ফি রজাবা ওয়া শা'বান, ওয়া বাল্লিগনা রমাদ্বান'
'হে আল্লাহ, আপনি আমাদের রজব ও শা'বান মাসে বরকত দিন এবং আমাদের হায়াতকে রমজান পর্যন্ত দীর্ঘ করেন।'
প্রশংসার সবটুকুই মহান আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআ'লার জন্য
সমস্ত প্রশংসা, শুকরিয়া, ছানা, হামদ সেই মহান আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআ'লার যিনি রমজানকে শ্রেষ্ঠ মাস হিসেবে নির্ধারন করেছেন এবং সে সময় মু'মিন মুসলিমের প্রত্যেক ভাল কাজের প্রতিদান বৃদ্ধি করে দেয়ার সুসংবাদ দিয়েছেন। আহ! আমাদের সময়গুলো কতই না দ্রুত কেটে যাচ্ছে। চলন্ত মেঘমালার ন্যায় দিনগুলো গন্তব্যের দিকে ছুটে যাচ্ছে দূরন্ত গতিতে! বছর কতই না দ্রুত কেটে যাচ্ছে! আর আমরা জীবন চলার পথে বেখবর-অলস সময় কাটাচ্ছি! হায়, আমাদের চেতনা কবে ফিরে আসবে! আমরা কখন জাগবো! আমাদের মধ্যে কম সংখ্যক লোক এমন আছেন যারা বাস্তবতা ও পরিণতি নিয়ে চিন্তা করছেন অথবা তার থেকে উপদেশ গ্রহণ করছেন। রমজানুল মোবারক আমাদের দ্বারে উপনীত। স্বাগতম প্রিয় মাহে রমজান! স্বাগতম প্রিয় মাহে রমজান!
সংক্ষিপ্ত জীবনে অপরিমিত সাওয়াবলাভের সুযোগ
আলহামদুলিল্লাহ। মানব জীবনের সংক্ষিপ্ত এবং নির্ধারিত বয়স ও অল্প সময়ের মধ্যে আল্লাহ তাআ'লা তার জন্য অধিক পরিমান সওয়াব লাভের জন্য ভাল কাজের কিছু মৌসুম রেখেছেন। তার জন্য স্থান এবং কালের মর্যাদা বাড়িয়ে দিয়েছেন কখনও কখনও। যে কাল ও স্থানের মাধ্যমে সে তার ত্রুটি বিচ্যুতির ক্ষতি পুষিয়ে নিতে পারে। সেসব বিশেষ মৌসুমের অন্যতম একটি মৌসুম হল পবিত্র রমজান মাস।
আল্লাহ তাআলা বলেন:
﴿ يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُواْ كُتِبَ عَلَيْكُمُ الصِّيَامُ كَمَا كُتِبَ عَلَى الَّذِينَ مِن قَبْلِكُمْ لَعَلَّكُمْ تَتَّقُونَ ﴾ [البقرة:183].
'হে মুমিনগণ, তোমাদের উপর সিয়াম ফরজ করা হয়েছে, যেভাবে ফরয করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তীদের উপর। যাতে তোমরা তাকওয়া অবলম্বন কর।' (সূরা বাকারাহ, ১৮৩ আয়াত)।
রমজান মাসের আগমনে মুসলিমগণ আনন্দ প্রকাশ করে থাকেন। আনন্দ প্রকাশ করাই স্বাভাবিক স্বতঃস্ফূর্ততা। আল্লাহ রাব্বুল আলামিন বলেন :—
قُلْ بِفَضْلِ اللَّهِ وَبِرَحْمَتِهِ فَبِذَلِكَ فَلْيَفْرَحُوا هُوَ خَيْرٌ مِمَّا يَجْمَعُونَ (يونس: 58)
'বলুন, এটা আল্লাহর অনুগ্রহ ও তাঁর দয়ায়। সুতরাং এতে তারা আনন্দিত হোক। তারা যা সঞ্চয় করে এটা তার চেয়ে উত্তম।' [সূরা ইউনুস : ৫৮]
পার্থিব কোন সম্পদের সাথে আল্লাহ তাআলা'র এ অনুগ্রহের তুলনা চলে না। তুলনা করা হলে, তা হবে এক ধরনের অবাস্তব কল্পনা। যখন রমজানের আগমন হত তখন রাসূলে করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অতিশয় আনন্দিত হতেন, তার সাহাবাদের বলতেন :—
أتاكم رمضان شهر مبارك
'তোমাদের দ্বারে বরকতময় মাস রমজান এসেছে।' এরপর তিনি এ মাসের কিছু ফজিলত বর্ণনা করে বলতেন :—
فرض الله عز وجل عليكم صيامه، تفتح فيه أبواب السماء، وتغلق فيه أبواب الجحيم، وتغل فيه مردة الشياطين، لله فيه ليلة خير من ألف شهر، من حرم خيرها فقد حرم. رواه النسائي
'আল্লাহ তাআলা তোমাদের জন্য সিয়াম পালন ফরজ করেছেন। এ মাসে আকাশের দ্বারসমূহ খুলে দেয়া হয়। বন্ধ করে দেয়া হয় জাহান্নামের দরজাগুলো। অভিশপ্ত শয়তানকে বন্দি করা হয়। এ মাসে রয়েছে একটি রাত যা হাজার রাতের চেয়ে শ্রেষ্ঠ। যে ব্যক্তি এর কল্যাণ থেকে বঞ্চিত হলো সে মূলতঃ সকল কল্যাণ থেকে বঞ্চিত হল।' বর্ণনায় : নাসায়ী
কল্যানকর কাজ নিজে করি, অন্যকেও কল্যানের পথে ডাকি
এই মাসে আমাদের দায়িত্ব ও কর্তব্য হচ্ছে, আল্লাহ তাআ'লার এ অনুগ্রহের মূল্যায়ন করতে চেষ্টা করা, এ মাসের ফজিলত ও তাৎপর্য অনুধাবনে সচেষ্ট হওয়া এবং ইবাদত-বন্দেগিসহ সকল কল্যাণকর কাজে নিজেরা নিয়োজিত থাকার পাশাপাশি অন্যদের উত্তম কথা দ্বারা কল্যানের দিকে দাওয়াত দেয়া।
রমজান মাসে মুমিন বান্দার উপরে শয়তানি প্রবৃত্তির আক্রমণ কম হয়, রাত-দিনে মন নরম থাকে। এসময় দেখা যায়, একজন তার গুনাহের জন্য ক্ষমা চাইছেন, আর একজন আনুগত্যের তাওফিক প্রার্থনা করছেন। তৃতীয়জনকে হয়তো দেখা যায় আল্লাহ তাআ'লার শাস্তি থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করছেন। চতুর্থজন ভাল কাজের ফলাফল সুন্দরভাবে পাওয়ার আশা করছেন। পঞ্চম জনকে হয়তো দেখা যায়, নিজের প্রয়োজন পূরণের জন্য প্রার্থনা করছেন। আল্লাহ পাক এই বরকতপূর্ণ মাসে প্রার্থনাকারীদের প্রার্থনা কবুল করে নেন।
রমজান মাসের ফজিলত:
রমজান মাস শক্তি অর্জন ও দানের মাস। এ মাসে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি অসাল্লাম মক্কা বিজয়ের জন্য যুদ্ধ করেছেন। তখন তিনি এবং তাঁর সাথী সমস্ত মুসলমান সিয়াম অবস্থায় ছিলেন, আর এ রমজানেই বদরের যুদ্ধ সংঘটিত হয়ছিল। এ সমস্ত যুদ্ধে ইসলামের পতাকা সমুন্নত হয়েছিল, মূর্তি এবং পৌত্তলিকতার পতাকা অবনমিত হয়েছিল। এ মাসে মুসলমানদের অনেক যুদ্ধ জিহাদ এবং কুরবানি সংঘঠিত হয়েছে।
রমজানে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি অসাল্লাম ও তাঁর সাহাবারা অধিক পরিমাণে শক্তি, সজিবতা এবং ইবাদতের জন্য ধৈর্য্য ধারণ করার উদ্যম অনুভব করতেন, তাইতো রমজান মাসকে সৎকাজ, ধৈর্য্য ও দানের মাস বলা হয়। রমজান দুর্বলতা, অলসতা, ঘুমানোর মাস নয়। কোন কোন সিয়াম পালনকারীকে হাত পা ছেড়ে দিয়ে, দিনের বেলায় ঘুমাতে, কাজ কম করতে দেখা যায়। এমন আচরণ সিয়ামের তাৎপর্য পরিপন্থী। সিয়ামের উদ্দেশ্যের সাথে এগুলো সম্পর্ক রাখে না।
পূর্বেকার মুসলমানগন রমজান পালন করতেন তাদের অন্তর এবং অনুভূতি দিয়ে। রমজান এলে তারা কষ্ট করতেন। ধৈর্য্যের সাথে দিন যাপন করতেন। আল্লাহ তাআ'লার ভয় এবং পর্যবেক্ষণের কথা তাদের স্মরণ থাকতো। তার সিয়াম নষ্ট হয় অথবা ত্রুটিযুক্ত হয় এমন সকল কিছু থেকে দূরে থাকতেন। খারাপ কথা বলতেন না, ভাল না বলতে পারলে নিরব থাকার পন্থা অবলম্বন করতেন।
তারা রমজানের রাত্রি যপন করতেন সালাত, কুরআন তিলাওয়াত, আল্লাহ পাকের জিকিরের মাধ্যমে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি অসাল্লামের অনুসরণ করেই। রমজানের উপকার অথবা ফজিলত অনেক। অগনিত। যা গণনা করে শেষ করা যাবে না। তবে খেলাধুলা ও রং তামাশায় মত্ত ব্যক্তিরা কিংবা অলস শ্রেণির লোকজন যারা সারাদিন ঘুমিয়ে কাটায় এবং রাত্রে বাজারে ঘুরে বেড়ায় তারা রমজানের এসব ফজিলত থেকে বঞ্চিত থাকবে।
রমজান আগুন থেকে রক্ষাকারী ঢাল:
ইমাম আহমাদ রহ. তার কিতাবে জাবের রাদিআল্লাহু তাআ'লা আনহু থেকে হাদিস বর্ণনা করেছেন, নবী কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:
{ إنما الصيام جنة، يستجنّ بها العبد من النار }.
'সিয়াম প্রবৃত্তির তাড়না থেকে বাঁচার জন্য ঢাল এর মাধ্যমে বান্দা আগুন থেকে মুক্তি পায়।'
ইবনে মাসউদ রাদিআল্লাহু তাআ'লা আনহু রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি অসাল্লাম থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন:
{يا معشر الشباب من استطاع الباءة فليتزوج، فإنه أغض للبصر وأحصن للفرج، ومن لم يستطع فعليه بالصوم، فإنه له وجاء } [أخرجه البخاري ومسلم].
'হে যুবকেরা! যে সামর্থ রাখে সে যেন বিবাহ করে। কেননা তা দৃষ্টিকে সংরক্ষণ করে এবং যৌনাঙ্গের হিফাজত করে। যে বিবাহের সামর্থ রাখে না সে যেন সিয়াম পালন করে। কেননা এটি তার জন্য সুরক্ষা।' (বুখারী মুসলিম)।
রমজান জান্নাতের পথ:
ইমাম নাসাঈ রহ. আবু উমামা রাদিআল্লাহু তাআ'লা আনহু থেকে বর্ণনা করেন, তিনি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি অসাল্লামকে বললেন, হে আল্লাহর রাসূল, আমাকে এমন বিষয়ের নির্দেশ দেন যার মাধ্যমে আল্লাহ পাক আমাকে প্রতিদান দেবেন। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলইহি অসাল্লাম বলেন:
{ عليك بالصيام فإنه لا مثل له }.
'তুমি সিয়াম পালন কর। কেননা এর কোন তুলনা নেই।'
জান্নাতে একটি দরজা আছে সেখান দিয়ে শুধু সিয়াম বা রোজা পালনকারী প্রবেশ করবে। সাহল ইবনে সাআদ রাদিআল্লাহু তাআ'লা আনহু রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি অসাল্লাম থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন:
{ إن في الجنة باباً يقال له: الريّان، يدخل منه الصائمون يوم القيامة، لا يدخل منه أحد غيرهم، يقال: أين الصائمون، فيقومون، لا يدخل منه أحد غيرهم، فإذا دخلوا أغلق، فلم يدخل منه أحد } [أخرجه البخاري ومسلم].
'জান্নাতে একটি দরজা আছে যার নাম রাইয়ান। কিয়ামত দিবসে সেখান দিয়ে সিয়াম পালনকারী প্রবেশ করবে। সে দরজা দিয়ে অন্য কেহ প্রবেশ করবে না। বলা হবে: সিয়াম পলনকারী কোথায়? তারা দাঁড়াবে, তারা ছাড়া আর কেহ প্রবেশ করবে না। তারা প্রবেশ করার পর দরজা বন্ধ করে দেয়া হবে। আর কেহ সে স্থান দিয়ে প্রবেশ করবে না।' (বুখারী মুসলিম)।
সিয়াম পালনকারীর জন্য সিয়াম সুপারিশ করবে:
ইমাম আহমদ রহ. আব্দুল্লাহ ইবনে আমর ইবনুল আস রাদিআল্লাহু তাআ'লা আনহু থেকে বর্ণনা করেন, নবী কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি অসাল্লাম বলেন:
{ الصيام والقرآن يشفعان للعبد يوم القيامة، يقول الصيام: أي رب منعته الطعام والشهوات بالنهار فشفّعني فيه، ويقول القرآن: منعته النوم بالليل فشفّعني فيه، قال: فيشفعان }.
'সিয়াম এবং কুরআন বান্দার জন্য কিয়ামত দিবসে সুপারিশকারী হবে, সিয়াম বলবে, হে প্রভূ, আমি তাকে দিনের বেলায় খাওয়া এবং প্রবৃত্তির তাড়না থেকে নিবৃত্ত রেখেছি, তার ব্যাপারে আমার সুপারিশ গ্রহণ করুন। কুরআন বলবে, আমি তাকে রাত্রের ঘুম থেকে বিরত রেখেছি, তার ব্যাপারে আমার সুপারিশ গ্রহণ করুন, আল্লাহ তাআ'লা বলবেন: তাদের সুপারিশ গ্রহণ করা হল।'
সিয়াম গুনাহের ক্ষমা এবং কাফফারা হিসাবে গৃহিত হয়:
কেননা ভাল কাজ অন্যায়কে মুছে দেয়। আবু হুরাইরা রাদিআল্লাহু তাআ'লা আনহু রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি অসাল্লাম থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন:
{ من صام رمضان إيماناً واحتساباً غفر له ما تقدم من ذنبه } [رواه البخاري ومسلم].
'যে ব্যাক্তি রমজানে ঈমান এবং ইহতিসাবের সাথে সিয়াম পালন করবে, আল্লাহ পাক তার পূর্বের গোনাহ মাফ করে দেবেন।' (বুখারী মুসলিম)
সিয়াম ইহকাল এবং পরকালের সৌভাগ্যের কারণ:
আবু হুরাইরা রাদিআল্লাহু তাআ'লা আনহু রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি অসাল্লাম থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন:
{وللصائم فرحتان: فرحة حين يفطر، وفرحة حين يلقى ربه، ولخلوف فم الصائم أطيب عند الله من ريح المسك } [رواه البخاري ومسلم].
'সিয়াম পালনকারীর দুটি খুশি, প্রথম খুশি যখন সে ইফতার করে, আর এক খুশি যখন সে তার রবের সাথে সাক্ষাৎ করবে। সিয়াম পালনকারীর মুখের গন্ধ আল্লাহ পাকের নিকট মিশক আম্বরের চেয়ে অধিক প্রিয়।' (বুখারী মুসলিম)
রমজানে সুযোগ কাজে লাগানো:
এ বছর রমজান মাস কি আল্লাহ তাআ'লার দিকে ফিরে আসার মৌসুম হবে? নিজের হিসাব-নিকাশের সুযোগ করে দেবে? আল্লাহ তাআ'লার নিকট নিজের গোনাহ ক্ষমা চাওয়ার সুযোগ করে দেবে? সীমালঙ্ঘনকারীদের জন্য সত্যিকারভাবে ইসলামী জীবন যাপন করার সুযোগ এনে দেবে কি এ মহান মাস?
এ মাসটিকে দাওয়াতদানকারীগণ তাদের দায়িত্ব পালনের বিষয়ে দৃষ্টি-ভঙ্গি পাল্টে নতুন করে চিন্তা-ভাবনা করার সুযোগ হিসেবে গ্রহণ করতে পারেন এ কথা চিন্তা করে যে, তারা সর্বোত্তম দাওয়াতের দায়িত্ব পালনকারী এবং তারা অতি উত্তম উদ্দেশ্য নিয়ে কাজ করছেন। তারা নিজের সত্তার চিন্তা এবং তার জন্য ঘোরাফেরা করা থেকে মুক্ত হয়ে শুধু আল্লাহ তাআ'লার নিকট যা আছে তা উত্তম ও স্থায়ী মনে করে কাজ করবেন।
এ মাসটিকে প্রত্যেক মুসলমান তার অপর মুসলিম ভাইকে সাহায্য করার মাস হিসাবে গ্রহণ করতে পারেন। হোক না সে অত্যাচারী অথবা অত্যাচারিত। অত্যাচারী হলে তার অত্যাচার প্রতিরোধ করে তাকে ন্যায়ের পথে ফিরিয়ে আনতে সাহায্য করবে। অত্যাচারিতকে সাহয্য করবে তাকে সহযোগিতা প্রদানের মাধ্যমে। এর মাধ্যমে মুসলমান সমাজে সর্বত্র সৌহার্দ্যপূর্ণ কল্যানের পরিবেশ কায়েম হবে।
এ মাসটি ধনী এবং আড়ম্বরপূর্ণ জীবন যাপনকারীদের জন্যও আত্মোন্নতির বিরাট সুযোগ। তাদের কাজ-কর্ম এবং অনুভূতিকে সঠিক পথে ফিরিয়ে আনার জন্য তারা যেন দরিদ্রদের প্রয়োজন ও ব্যথা অনুভব করতে পারেন। নিয়ামতের কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে পারেন। আল্লাহ তাআ'লা যে পথে ব্যয় করতে সম্পদ দিয়েছেন সে পথে তারা সম্পদ ব্যয় করতে পারেন। উম্মাহর ক্ষুধার্তদের বাঁচাতে তারা যেন এগিয়ে আসতে পারেন। তারা যদি তাদের ক্ষুধার্তদেরকে না খাওয়ান, বস্ত্রহীনদেরকে বস্ত্র না দেন আর দুর্বলদেরকে সাহায্য না করেন, তাহলে মনে করতে হবে, তাদের ঈমান বিপজ্জনক অবস্থায় রয়েছে।
রমজান আমাদের নিজেদের জন্য এমন একটি পদ্ধতি অবলম্বনের সুযোগ এনে দেয়, যার মাধ্যমে ইসলামী ভাবধারায় অভ্যস্ত হতে পারি। সকলের হাত, পা, চোখ, কান, জিহবারও রোজা পালন করতে হবে, প্রতিটি অঙ্গ প্রত্যঙ্গ এ মাসে সংযম অবলম্বনের মাধ্যমে সত্যিকারের মুসলমান হয়ে যাবে। যখনই এ সমস্ত অঙ্গ-প্রতঙ্গ নড়া-চড়া করবে তার সৃস্টিকর্তার ইচ্ছা অনুযায়ী। হাদিসে কুদসিতে আল্লাহ তাআলা বলেন:
{ وما يزال عبدي يتقرّب إليّ بالنوافل حتى أحبه، فإذا أحببته كنت سمعه الذي يسمع به، وبصره الذي يبصر به، ويده التي يبطش بها، ورجله التي يمشي بها } [رواه البخاري].
'আমার বান্দা নফল ইবাদতের মাধ্যমে আমার নৈকট্য অর্জন করতে থাকে। আর আমি তাকে ভালবাসি। যখন আমি তাকে ভালবাসি সে আমার কান হয়ে যায়, যা দিয়ে সে শোনে। আমার চক্ষু হয়ে যায়, যা দিয়ে সে দেখে। হাত হয়ে যায়, যা দিয়ে সে ধরে। পা হয়ে যায়, যা দিয়ে সে চলে।' (বুখারী)।
এ সমস্ত কিছুই রমজানের পাঠশালায় অর্জন করা সম্ভব। যে রমজান আমাদেরকে দৃঢ়তা অবলম্বন ও সত্য গ্রহণের শিক্ষা দেয়। যার মাধ্যমে কুপ্রবৃত্তির সমস্ত দেয়াল ভেঙ্গে যায়। বিনষ্ট হয়ে যায় সমস্ত খারাবির আশা-প্রত্যাশা।
সে দৃঢ়তা এবং সুক্ষ্ম নিয়ম কি? যার মাধ্যমে সমস্ত পৃথিবীর মুমিনদেরকে দেখা যায় যে, তারা নির্দিষ্ট সময় পানাহার থেকে বিরত হচ্ছে আবার নির্দিষ্ট সময় পানাহার করছে। অত:পর নিজের নফসকে কুপ্রবৃত্তির মধ্যে পতিত হওয়া অথবা পথভ্রষ্টতার বাতাসে ভেসে যাওয়া থেকে বিরত রাখতে পারছে। সে তো কুপ্রবৃত্তি এবং কামনা উদ্রেককারীকে না বলে দেবে। আর এই না বলা যদি আল্লাহ তাআ'লার সন্তুষ্টি অনুযায়ী হয় তাহলে খুব ভাল হয়। সে অশ্লীল কাজ করবে না। ঝগড়া করবে না। উচু স্বরে কথা বলবে না। কোন মূর্খ যদি তার অনুভূতিকে আহত করে ও তার ভিতরের খারাপ জিনিসকে জাগিয়ে তোলে তবুও সে বলবে, আমি সিয়াম পালনকারী।
আর মানুষতো নিজের অভ্যাসের গোলাম। যতই সে চেষ্টা করে ফিরে আসতে পারে না নফসের গোলামী থেকে। কেননা, অভ্যাসের বিরাট প্রভাব রয়েছে অন্তর ও নফসের উপর। আমাদের অনেকের পানাহার, ঘুমানো, জাগ্রত হওয়া ইত্যাদির ব্যাপারে অনেক রকম অভ্যাস রয়েছে তার থেকে সে বিরত হতে পারে না। সিয়াম এই সমস্ত অভ্যাস থেকে মুক্ত হওয়ার জন্য বিরাট উপকারী। মুসলমান ইচ্ছা করলে এর মাধ্যমে অনেক বদ অভ্যাস ও স্বভাব থেকে নাজাত পেতে পারে কোন কষ্ট এবং ক্ষতি ছাড়াই। অত:পর যে সমস্ত অভ্যাস তার ক্ষতি করে সেগুলোর বিরুদ্ধে সে যুদ্ধ ঘোষণা করবে। যেমন, রাত্রি জেগে অনুষ্ঠান উপভোগ করা, গোনাহ হয় এমন অনুষ্ঠানে যাওয়া, কারো সাথে অনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন করা, বিড়ি, সিগারেট, হুক্কা ইত্যাদির অভ্যাস পরিত্যাগ করা। অর্থাৎ এ জাতীয় যত ধরণের নেশা জাতীয় অভ্যাস আছে তা পরিত্যাগ করা। মূলতঃ এ সমস্ত কিছু হয় দুর্বল মানসিকতার কারণে, অথবা এগুলোর নিকট আত্মসমর্পনের কারণে। সুস্থ, ভদ্র ও বিবেকবানরা কখনও এমন কাজ করতে পারে না। যদি সিয়াম পালন করতে চাও তবে হিংসা, গোনাহ এবং অন্যায় থেকে বিরত থেকে সিয়াম পালন কর। সিয়াম অবস্থায় জিহবাকে অহেতুক কথা থেকে, দৃষ্টিকে হারাম থেকে বিরত রাখ। অনেক সিয়াম পালনকারী আছেন তার সিয়াম উপবাস এবং পিপাসিত থাকা ছাড়া আর কোন উপকারে আসে না। সে ঐ ব্যাক্তি যে আহার বাদ দিল, কিন্তু গীবতের মাধ্যমে নিজের ভাইয়ের গোস্ত খাওয়া থেকে বিরত হতে পারল না। পান করা থেকে বিরত থাকল কিন্তু মিথ্যা, ধোকা, প্রবঞ্চনা, মানুষের উপর অত্যাচার থেকে বিরত হল না।
সিয়াম পালনকারীর জন্য নসিহত :
মনকে প্রশস্ত করুন, জিহবাকে খাটো করুন, অন্যায় এবং ঝগড়া থেকে দুরে থাকুন। যদি বিচ্যুতির পথ দেখেন তবে নিজেকে সামলে নিন। আপনার ভাইদের থেকে যদি কষ্ট পান, তাহলে ধৈর্য্য ধারণ করুন। কেহ যদি আপনার সাথে ঝগড়া শুরু করে তবে আপনি তার মত করবেন না। বরং আপনি বলুন, আমি সিয়াম অবস্থায় আছি।
এ মাসের বরকত:
এ মাসের অন্যতম বরকত হল, ভাল কাজের প্রতিদান অনেক বেড়ে যায়। যেমন, রাত্রে দাঁড়িয়ে নামাজ আদায় করা। রাসূলে কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রমজানের রাত্রে দাঁড়িয়ে নামাজ পড়তে উৎসাহ দিয়েছেন। তিনি বলেন:
{ من قام رمضان إيماناً واحتساباً غفر له ما تقدم من ذنبه } [رواه البخاري ومسلم].
'যে ব্যক্তি ঈমান ও ইহতিসাবের সাথে রমজানের রাত্রে দাঁড়িয়ে নামাজ আদায় করবে আল্লাহ তাআ'লা তার পূর্বের গোনাহ মাফ করে দেবেন।' (বুখারী) মুসলিম)
এ মাসে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের দানের কথা বলতে গিয়ে সাহাবায়ে কেরাম বলেন:
{ كان النبي - صلى الله عليه وسلم - أجود الناس بالخير، وكان أجود ما يكون في رمضان حين يلقاه جبريل } [رواه البخاري ومسلم]،
'নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি অসাল্লাম সমস্ত মানুষের মধ্যে সবচেয়ে বেশি দানশীল ছিলেন। রমজানে যখন তিনি জিবরীলের সাথে সাক্ষাৎ করতেন আরো বেশি দানশীল হয়ে যেতেন।' (বুখারী মুসলিম)
দান সদকা করা ভাল। বিশেষ করে রমজান মাসে বেশি করে করা। রমজান মাসে অধিক পরিমাণে কুরআন তিলাওয়াত করা, পূর্বসূরীরা রমজান মাসে নামাজে এবং নামাজ ব্যতিত অধিক পরিমাণে কুরআন তিলাওয়াত করতেন।
ই'তিকাফ:
আল্লাহ পাকের সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে মসজিদে থেকে ইবাদত বন্দেগী করার নাম এতেকাফ।
{ كان النبي - صلى الله عليه وسلم - يعتكف العشر الأواخر من رمضان حتى توفاه الله } [رواه البخاري ومسلم].
'রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মৃত্যু পর্যন্ত রমজানের শেষ দশকে ই'তিকাফ করেছেন।'( বুখারী মুসলিম)
রমজান মাসে উমরা করার অনেক ফজিলত রয়েছে। বুখারী ও মুসলিম ইবনে আব্বাস রাদিআল্লাহু তাআ'লা আনহু থেকে এ বিষয়ে তাদের কিতাবে বর্ণনা উল্লেখ করেছেন।
সিয়াম পালনকারীর জন্য সাহরী খাওয়া উত্তম:
ইমাম আহমাদ রহ. আবু সাইদ খুদরী রাদিআল্লাহু তাআ'লা আনহু থেকে বর্ণনা করেন, নবী কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি অসাল্লাম বলেন:
{ السحور أكله بركة، فلا تدعوه ولو يجرع أحدكم جرعة من ماء، فإن الله عز وجل وملائكته يصلون على المتسحربن }.
'সাহরী বরকতের খাবার। তা খাওয়া থেকে বিরত হবে না। কেহ যদি এক ঢোক পানিও পান করে তবুও সে সাহরী খেল। কেননা আল্লাহ তাআ'লা এবং ফেরেশতাগণ সাহরীতে অংশগ্রহণকারীদের জন্য দোয়া করতে থাকেন।'
ইফতার তাড়াতাড়ি করা এবং তখন দুআ করা উত্তম:
ইমাম তিরমিজি রহ. নবী কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি অসাল্লাম থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেছেন:
{ثلاثة لا ترد دعوتهم: الإمام العادل، والصائم حتى يفطر، ودعوة المظلوم.. }.
কুরআন নাজিলের মাস-
রমজান হল কুরআন নাজিলের মাস : আল্লাহ রাব্বুল আলামিন বলেন –
شَهْرُ رَمَضَانَ الَّذِي أُنْزِلَ فِيهِ الْقُرْآَنُ هُدًى لِلنَّاسِ وَبَيِّنَاتٍ مِنَ الْهُدَى وَالْفُرْقَانِ : البقرة : 184
'রমজান মাস, এতে নাজিল হয়েছে আল কুরআন, যা মানুষের দিশারি এবং স্পষ্ট নিদর্শন ও সত্যাসত্যের পার্থক্যকারী।' সূরা বাকারাহ : ১৮৪
রমজান মাসে সপ্তম আকাশের লওহে মাহফুজ থেকে দুনিয়ার আকাশে বাইতুল ইজ্জতে পবিত্র আল কুরআন একবারে নাজিল হয়েছে। সেখান হতে আবার রমজান মাসে অল্প অল্প করে নবী কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম -এর প্রতি নাজিল হয়। কুরআন নাজিলের দু'টি স্তরই রমজান মাসকে ধন্য করেছে। শুধু আল কুরআনই নয় বরং ইবরাহিম আলাইহিস সালাম -এর সহিফা, তাওরাত, যবুর, ইঞ্জিলসহ সকল ঐশী গ্রন্থ এ মাসে অবতীর্ণ হয়েছে বলে তাবারানী বর্ণিত একটি সহি হাদিসে উল্লেখ করা হয়েছে। (সহি আল-জামে)
এ মাসে মানুষের হেদায়াত ও আলোকবর্তিকা যেমন নাজিল হয়েছে তেমনি আল্লাহর রহমত হিসেবে এসেছে সিয়াম। তাই এ দুই নিয়ামতের শুকরিয়া আদায় করতে বেশি বেশি করে কুরআন তিলাওয়াত করা উচিত। প্রতি বছর রমজান মাসে জিবরাইল আলাইহিস সালাম রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে পূর্ণ কুরআন তিলাওয়াত করে শোনাতেন এবং রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামও তাকে পূর্ণ কুরআন পাঠ করে শোনাতেন। আর জীবনের শেষ রমজানে আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম দু'বার পূর্ণ কুরআন তিলাওয়াত করেছেন। সহি মুসলিমের হাদিস দ্বারা এটা প্রমাণিত।
জান্নাতের দরজাগুলো খুলে দেয়া হয় ও জাহান্নামের দরজা বন্ধ করে দেয়া হয়-
রমজান মাসে জান্নাতের দরজাগুলো খুলে দেয়া হয় ও জাহান্নামের দরজা বন্ধ করে দেয়া হয়। শৃঙ্খলাবদ্ধ করা হয় শয়তানদের। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন :—
إذا جاء رمضان فتحت أبواب الجنة، وأغلقت أبواب النار، وصفدت الشياطين. وفي لفظ : (وسلسلت الشياطين) رواه مسلم
যখন রমজান মাসের আগমন ঘটে তখন জান্নাতের দরজাগুলো খুলে দেয়া হয়, জাহান্নামের দরজা বন্ধ করে দেয়া হয় এবং শয়তানদের আবদ্ধ করা হয়। অন্য বর্ণনায় বলা হয়েছে-শয়তানের শিকল পড়ানো হয়। (মুসলিম)
তাই শয়তান রমজানের পূর্বে যে সকল স্থানে অবাধে বিচরণ করত রমজান মাস আসার ফলে সে সকল স্থানে যেতে পারে না। শয়তানের তৎপরতা দুর্বল হয়ে যায়। ফলে দেখা যায় ব্যাপকভাবে মানুষ তওবা, ধর্মপরায়ণতা, ও সৎকর্মের দিকে অগ্রসর হয় ও পাপাচার থেকে দূরে থাকে। তারপরও কিছু মানুষ অসৎ ও অন্যায় কাজ-কর্মে তৎপর থাকে। কারণ, শয়তানের কু-প্রভাবে তারা অনেক বেশি প্রভাবিত হয়ে পড়েছে।
রমজান মাসে রয়েছে লাইলাতুল কদর-
আল্লাহ তাআলা বলেন :—
لَيْلَةُ الْقَدْرِ خَيْرٌ مِنْ أَلْفِ شَهْرٍ ﴿3﴾ تَنَزَّلُ الْمَلَائِكَةُ وَالرُّوحُ فِيهَا بِإِذْنِ رَبِّهِمْ مِنْ كُلِّ أَمْرٍ ﴿4﴾ سَلَامٌ هِيَ حَتَّى مَطْلَعِ الْفَجْرِ ﴿5﴾ (القدر: 3-5)
লাইলাতুল কদর সহস্র মাস অপেক্ষা উত্তম। সে রাতে ফেরেশতাগণ ও রুহ অবতীর্ণ হয় প্রত্যেক কাজে তাদের প্রতিপালকের অনুমতিক্রমে। শান্তিই শান্তি, সে রজনি উষার আবির্ভাব পর্যন্ত। [সূরা আল-কদর : ৩-৫]
রমজান মাস দোয়া কবুলের মাস।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন :—
لكل مسلم دعوة مستجابة، يدعو بـها في رمضان. رواه أحمد
রমজান মাসে প্রত্যেক মুসলিমের দোয়া কবুল করা হয়। (মুসনাদ আহমদ)
অন্য হাদিসে এসেছে –
إن لله تبارك وتعالى عتقاء في كل يوم وليلة، (يعني في رمضان) وإن لكل مسلم في كل يوم وليلة دعوة مستجابة. صحيح الترغيب والترهيب.
আল্লাহ রাব্বুল আলামিন রমজানের প্রতি রাতে ও দিনে বহু মানুষকে মুক্তি দিয়ে থাকেন এবং প্রতি রাত ও দিবসে মুসলিমের দোয়া-প্রার্থনা কবুল করা হয়। (সহি আত-তারগীব ওয়াত-তারহীব)
তাই প্রত্যেক মুসলমান এ সুযোগকে কাজে লাগিয়ে নিজের কল্যাণের জন্য যেমন দোয়া-প্রার্থনা করবে, তেমনি সকল মুসলিমের কল্যাণ, শান্তি ও নিরাপত্তার জন্য সর্বশক্তিমান আল্লাহর কাছে প্রার্থনা জ্ঞাপন করবে।
রমজান পাপ থেকে ক্ষমা লাভের মাস।
যে ব্যক্তি রমজান মাস পেয়েও তার পাপসমূহ ক্ষমা করানো থেকে বঞ্চিত হলো আল্লাহর রাসূল তাকে ধিক্কার দিয়েছেন। তিনি বলেছেন :—
.. رغم أنف رجل، دخل عليه رمضان، ثم انسلخ قبل أن يغفر له. .رواه الترمذي
ঐ ব্যক্তির নাক ধুলায় ধূসরিত হোক যার কাছে রমজান মাস এসে চলে গেল অথচ তার পাপগুলো ক্ষমা করা হয়নি। (তিরমিজি)
সত্যিই সে প্রকৃত পক্ষে সকল কল্যাণ থেকে বঞ্চিত যে এ মাসেও আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের অনুগ্রহ থেকে বঞ্চিত রয়ে গেল।
রমজান জাহান্নাম থেকে মুক্তির লাভের মাস-
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন :—
إذا كان أول ليلة من رمضان صفدت الشياطين ومردة الجن، وغلقت أبواب النار، فلم يفتح منها باب، وفتحت أبواب الجنة فلم يغلق منها باب، وينادي مناد كل ليلة : يا باغي الخير أقبل! ويا باغي الشر أقصر! ولله عتقاء من النار، وذلك في كل ليلة. رواه الترمذي
রমজান মাসের প্রথম রজনির যখন আগমন ঘটে তখন শয়তান ও অসৎ জিনগুলোকে বন্দি করা হয়। জাহান্নামের দরজাগুলো বন্ধ করে দেয়া হয়, এ মাসে আর তা খোলা হয় না। জান্নাতের দরজাসমূহ খুলে দেয়া হয়, এ মাসে তা আর বন্ধ করা হয় না। প্রত্যেক রাতে একজন ঘোষণাকারী এ বলে ঘোষণা দিতে থাকে যে, হে সৎকর্মের অনুসন্ধানকারী তুমি অগ্রসর হও ! হে অসৎ কাজের অনুসন্ধানকারী তুমি থেমে যাও ! এ মাসের প্রতি রাতে আল্লাহ তাআলা জাহান্নাম থেকে বহু মানুষকে মুক্তি দিয়ে থাকেন। (তিরমিজি)
রমজান মাসে সৎকর্মের প্রতিদান বহু গুণে বৃদ্ধি করে দেয়া হয়।
যেমন হাদিসে এসেছে যে, রমজান মাসে ওমরাহ করলে একটি হজের সওয়াব পাওয়া যায়। শুধু তাই নয়, বরং, রমজান মাসে ওমরাহ করা আল্লাহর রাসূলের সাথে হজ আদায়ের মর্যাদা রাখে। এমনিভাবে সকল ইবাদত-বন্দেগিসহ সকল সৎকাজের প্রতিদান কয়েক গুণ বেশি দেয়া হয়।
রমজান ধৈর্য ও সবরের মাস।
এ মাসে ঈমানদার ব্যক্তিগণ খাওয়া-দাওয়া, বিবাহ-শাদি ও অন্যান্য সকল আচার-আচরণে যে ধৈর্য ও সবরের এত অধিক অনুশীলন করেন তা অন্য কোন মাসে বা অন্য কোন পর্বে করেন না। এমনিভাবে সিয়াম পালন করে যে ধৈর্যের প্রমাণ দেয়া হয় তা অন্য কোন ইবাদতে পাওয়া যায় না। আল্লাহ রাব্বুল আলামিন বলেছেন :—
إِنَّمَا يُوَفَّى الصَّابِرُونَ أَجْرَهُمْ بِغَيْرِ حِسَابٍ. الزمر:
ধৈর্যশীলদের তো বিনা হিসাবে পুরস্কার দেয়া হবে। [সূরা যুমার : ১০]
তিন ব্যক্তির দোয়া আল্লাহ তাআলা ফেরৎ দেন না: ন্যায়পরায়ণ শাষক, সিয়াম পালনকারী যখন ইফতার করে ও অত্যাচারিতের দোয়া।
আল্লাহ পাক আমাদের সকলের সিয়াম সাধনাকে কবুল করুন। আমাদের ভাল কাজগুলোকে আমাদের জন্য নাজাতের উসিলা হিসেবে কবুল করুন। হে আল্লাহ! সিয়াম পালনকারীদের সিয়াম কবুল করুন, দানকারীদের দান কবুল করুন, রাত্রে ইবাদতকারীদের ইবাদত কবুল করুন, প্রার্থনা কারীদের প্রার্থনা কবুল করুন, আমাদের পূর্বের এবং পরের গোনাহসমূহ ক্ষমা করে দিন, এ মাস যেন আমাদের সকলের জন্য ক্ষমার মাস হয়। আমীন! আমীন, ইয়া রব্বাল আলামীন।
লেখাটি তৈরিতে কৃতজ্ঞতা যাদের প্রতি:
১। আবদুল বারী আস-সুবায়তী রচিত রমজানের ফজিলত ও তাৎপর্য প্রবন্ধ, অনুবাদ : আখতারুজ্জামান মুহাম্মাদ সুলায়মান।
২। কুরআনের আলো ডট কম ওয়েসাইট।
৩। আল কুরআন।
৪। বুখারি শরীফ।
৫। তিরমিজি শরীফ।
৬। মুসলিম শরীফ।
৭। আবু দাউদ শরীফ।
৮। নাসায়ী শরীফ।
৯। ইবনে মাজাহ শরীফ।
১০। সহি আত-তারগীব ওয়াত-তারহীব।
১১। মুসনাদ আহমদ।
জানা বিষয়গুলোও অনেক সময় ভুলে যাই আমরা। রমাদান যেহেতু সমাগত, সেহেতু পুরাতন পোস্টটিকেই আবারও সামনে নিয়ে এলাম। যদি কারও সামান্য উপকার হয়, সে আশায়। আল্লাহ পাক আমাদের আসছে রমাদান পর্যন্ত সুস্থ রাখুন। সবগুলো রোজা সঠিকভাবে সঠিক নিয়মে রাখার তাওফিক দিন। অামীন।
ছবি: অন্তর্জাল।
পুরনো ঝাঁপি থেকে মাহে রমাদ্বান সম্পর্কিত আরও কিছু লেখা। কারও সামান্য উপকারে এলে কৃতার্থ হব।
১। রমাদান সম্পর্কিত কিছু অতি গুরুত্বপূর্ন দু‘আ, যা প্রত্যেক মুসলিমের শেখা উচিত
২। সিয়াম সাধনার মাস রামাদান; কুরআনের মাস রমাদান
৩। মাহে রমাদান সমাগত: আসুন, জেনে নিই গুরুত্বপূর্ন কিছু নির্দেশনা
ভালো থাকুন সকলে। শুভকামনা প্রত্যেকের জন্য।
৩১ শে মার্চ, ২০১৯ দুপুর ২:৪০
নতুন নকিব বলেছেন:
আপনার হৃদয় নিংড়ানো ফরিয়াদ আল্লাহ পাক কবুল করে নিন। আল্লাহ তাআ'লা আপনাকে সব ক'টা রোজা রাখার তৌফিক দান করুন। এই সৌভাগ্য আমাদের সকলকেও দান করুন। আমিন।
প্রথম মন্তব্যে আন্তরিক অভিনন্দন। কৃতজ্ঞতাসহ শুভকামনা।
২| ৩১ শে মার্চ, ২০১৯ বিকাল ৩:১২
ভুয়া মফিজ বলেছেন: প্রিয়তে নিয়ে রাখলাম। আল্লাহ যদি রোযা পর্যন্ত বেচে থাকার তৌফিক দেন, কাজে লাগবে।
৩১ শে মার্চ, ২০১৯ বিকাল ৩:৪২
নতুন নকিব বলেছেন:
ইনশাআল্লাহ, আশা এবং দুআ আল্লাহ পাক আপনাকে শুধু এই রমজান নয় এরকম অসংখ্য রমজানলাভ করার তাওফিক দিয়ে ধন্য করুন।
পোস্ট প্রিয়তে নেয়ায় ভালো লাগলো। আন্তরিক মন্তব্যে অভিনন্দন। কৃতজ্ঞতাসহ শুভকামনা সবসময়।
৩| ৩১ শে মার্চ, ২০১৯ বিকাল ৪:৪৯
হাবিব বলেছেন: আল্লাহ যেন আমাদেরকে পরিপূর্ণ সিয়াম পালন করার তাওফিক দেন। আমিন
০২ রা এপ্রিল, ২০১৯ সকাল ৮:৩০
নতুন নকিব বলেছেন:
জাজাকুমুল্লাহু তাআ'লা। আপনার দুআ আল্লাহ পাক কবুল করে নিন।
শুভকামনা সবসময়।
৪| ৩১ শে মার্চ, ২০১৯ সন্ধ্যা ৬:৩৫
ওমেরা বলেছেন: রমজান আসি আসি করছে এই মূহুর্তে রমজানের গুরুত্ব , ফজিলতের পোষ্ট রিপোষ্ট করাই দরকার ছিল । অনেক ধন্যবাদ ভাইয়া ।
০২ রা এপ্রিল, ২০১৯ সকাল ৮:৩৮
নতুন নকিব বলেছেন:
জ্বি, সে কারণেই। রমজানের জন্য সামান্য প্রিপেয়ারড করতে এই পোস্ট কারও সামান্য কাজে এলে তাতেই শুকরিয়া।
কৃতজ্ঞতা। শুভকামনা।
৫| ৩১ শে মার্চ, ২০১৯ সন্ধ্যা ৭:০৩
পদাতিক চৌধুরি বলেছেন: প্রিয় নকিবভাই,
আসন্ন রমজান মাস উপলক্ষে অত্যন্ত জরুরী পোস্ট। গতবারও পোস্টটি পড়েছিলাম। আসন্ন রমজান মাসে আল্লাহপাক আমাদেরকে পরিপূর্ণ সিয়াম আদায় করার তৌফিক দান করুন, আমীন।
একটা প্রশ্ন ছিল। আপনি বললেন তিন ব্যক্তির দোয়া আল্লাহতালা ফেরত দেন না;
ন্যায় পরায়ন শাসক, সিয়াম পালনকারী যখন ইফতার করে এবং অত্যাচারিতের দোয়া। এখানে অত্যাচারিত বলতে যিনি নিগ্রহের শিকার বা শোষিত, নিপীড়িত তাতেই বোঝাতে চেয়েছেন?
শুভকামনা ও ভালোবাসা জানবেন।
০২ রা এপ্রিল, ২০১৯ সকাল ৮:৪২
নতুন নকিব বলেছেন:
পোস্টটি আপনার নিকট জরুরী বিবেচিত হওয়ায় ধন্যবাদ এবং কৃতজ্ঞতা। গতবারও এই পোস্ট পড়েছেন জেনে আনন্দিত হলাম।
আপনার প্রার্থনা আল্লাহ পাক কবুল করে নিন। পরিপূর্ণ সিয়াম আদায় করার তৌফিক দান করুন আমাদের সকলকে।
জ্বি, অত্যাচারিত বলতে যিনি নিগ্রহের শিকার, মাজলূম, বা শোষিত, নিপীড়িত তাকেই বোঝানো হয়েছে।
অনেক অনেক ভালো থাকুন। শুভকামনা সবসময়, প্রিয় পদাতিক ভাই।
৬| ৩১ শে মার্চ, ২০১৯ সন্ধ্যা ৭:৩০
মা.হাসান বলেছেন: আল্লাহ রমজান পর্যন্ত আমদের হায়াত বৃদ্ধি করে দিন। আমিন।
আসুন নিয়ত করি এই রমজানে অন্তত একটা পারফেক্ট রোজা রাখবো।
পারফেক্ট মানে হালাল খাবার দ্বারা সাহরি-ইফতার খাব, শরীরের সব অঙ্গের হেফাজত করবো- জ্বিভ সহ, মানুষের সঙ্গে সহমর্মিতা করবো, সব হারাম থেকে বেঁচে থাকবো, কুচিন্তা থেকে দূরে থাকবো।
@পদাতিক ভাই, অত্যাচারিতকে আরবিতে মজলুম বলা হয়। অর্থাৎ যার উপর যুলুম করা হচ্ছে।
মজলুম যদি কাফেরও হয় তবুও আল্লাহ তার দোয়া কবুল করে নেন।
তবে দোয়া কবুলের বিষয়ে তিনটি কথা বলা হয়। দোয়া কবুলের অর্থ ১) সে যা চাচ্ছে তা পেয়ে যাবে- সাথে সাথে বা কিছুটা দেরিতে ২) এর বদলা সে অাখেরাতে পাবে (শুধু মুসলমানের জন্য প্রযোজ্য) ৩) এর পরিবর্তে তার কোন বিপদ বা মুসিবত দূর হয়ে যাবে।
আল্লাহ মজলুমের বদদোয়া থেকে বাচিয়ে রাখুন।
নকিব ভাইকে ধন্যবাদ রমজানের কথাটি স্মরণ করিয়ে দেয়ার জন্য।
০২ রা এপ্রিল, ২০১৯ সকাল ৮:৫৯
নতুন নকিব বলেছেন:
অনেক সুন্দর একটি মন্তব্যে অভিনন্দন এবং কৃতজ্ঞতা।
আল্লাহ রমজান পর্যন্ত আমদের হায়াত বৃদ্ধি করে দিন। আমিন।
আল্লাহ পাক আপনার দুআ আমাদের সকলের জন্য কবুল করে নিন।
আসুন নিয়ত করি এই রমজানে অন্তত একটা পারফেক্ট রোজা রাখবো। পারফেক্ট মানে হালাল খাবার দ্বারা সাহরি-ইফতার খাব, শরীরের সব অঙ্গের হেফাজত করবো- জ্বিভ সহ, মানুষের সঙ্গে সহমর্মিতা করবো, সব হারাম থেকে বেঁচে থাকবো, কুচিন্তা থেকে দূরে থাকবো।
অবশ্যই, এমনটাই হওয়া উচিত। পরিপূর্ণ রোজার জন্য পরিপূর্ণ সতর্কতা জরুরী। শরীরের প্রতিটি অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের যথাযথ ব্যবহারই রোজাকে পরিপূর্ণ করতে পারে।
আপনি ঢাকা বা ঢাকার আশেপাশে? এদিকটাতে থেকে থাকলে সহজে যোগাযোগ করা যেত। কোনো আপত্তি না থাকলে এবং সম্মতি জানালে আমার মেইল আইডি আপনাকে জানিয়ে দেব, ইনশাআল্লাহ।
আল্লাহ পাক আমাদের সর্বোত্তম আমলের তাওফিক দিন। পূর্ণ ইখলাসের সাথে পরিপূর্ণ নিষ্ঠায় সবগুলো রোজা রাখার কিসমত নসিব করুন। আমাদের পরিবার-পরিজন, আত্মীয়-স্বজন সকলকেই এই সৌভাগ্য দান করুন।
ভালো থাকবেন সবসময়।
©somewhere in net ltd.
১| ৩১ শে মার্চ, ২০১৯ দুপুর ২:২২
রাজীব নুর বলেছেন: আল্লাহর কাছে ফরিয়াদ জানাই- আল্লাহ যেন এবার আমাকে সব ক'টা রোজা রাখার তৌফিক দান করেন। আমিন।
পোষ্টের জন্য আপনাকে অনেক ধন্যবাদ।