নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
যবে উৎপীড়িতের ক্রন্দল-রোল আকাশে বাতাসে ধ্বনিবে না, অত্যাচারীর খড়্গ কৃপাণ ভীম রণ-ভূমে রণিবে না- বিদ্রোহী রন-ক্লান্ত। আমি সেই দিন হব শান্ত।
স্বাগত পবিত্র মাহে রমজান ২০১৯:
আলহামদুলিল্লাহ। পবিত্র মাহে রমজান আমাদের অতি সন্নিকটে। আর মাত্র অল্প কয়েকটি দিন পরেই ইনশাআল্লাহ আমরা পেয়ে যাব আত্মশুদ্ধির মাস পবিত্র রমজানের সান্নিধ্য। আমরা হৃদয় মন উজার করে স্বাগত জানাচ্ছি পবিত্র মাহে রমজানকে।
রমজান মানে কি?
'রমজান' বা 'রমদান' কিংবা 'রমাদান' আরবি শব্দ। 'রমদুন' মূল ধাতু থেকে এসেছে শব্দটি। যার অর্থ- 'পুড়িয়ে দেয়া' বা 'জ্বালিয়ে দেয়া'। মূলত: রমজানে দীর্ঘ একটি মাস সিয়াম সাধনা, তাওবা ইস্তিগফার, ইবাদত-বন্দেগী, আল্লাহ পাকের নিকট বিনীত অন্তরে কায়োমনোবাক্যে রোনাজারি আর কান্না-কাটিরর মাধ্যমে বান্দা তার বিগত জীবনের সমস্ত পাপ তাপ পুড়িয়ে দিয়ে সাচ্চা খাঁটিত্ব তথা আত্মশুদ্ধিলাভে ধন্য হয় বলেই এই মাসটির নাম 'রমজান' বা 'রমাদান' রাখা হয়েছে।
গত ২১ এপ্রিল দিবাগত রাতে আমরা শবে বরাতের বিশেষ ফজিলতের রাত অতিবাহিত করেছি। মহান রব্বুল আলামীনের দরবারে ক্ষমার প্রত্যাশায়, দুনিয়া আখিরাতের কল্যান চেয়ে নিমগ্ন চিত্তে ইবাদত বন্দেগী আর আমলের মাধ্যমে বিশ্বের কোটি কোটি মুসলমানের সাথে আমরাও কাটিয়েছি পবিত্র এ রাতটি। আল্লাহ পাক আমাদের অতি সামান্য, অতি নগন্য আমলের ভুল ত্রুটি না দেখে দয়া করে যেন তা কবুল করে নেন।
রমজান তো সন্নিকটে; আমাদের করনীয় কি?
পবিত্র রমজান রহমত, বরকত, ক্ষমা এবং নাজাতের মাস। এ মাসে প্রতিটি ইবাদতের সাওয়াব বৃদ্ধি করে দেয়া হয়। এ মাসের একটি নফল আমল অন্য মাসগুলোর একটি ফরজের তুল্য। এ মাসের একটি ফরজ অন্য মাসের সত্তুরটি ফরজের সমান। সুতরাং, আমাদের চিন্তা এবং পরিকল্পনা থাকা দরকার, এত দামি মাসের দামি সময়গুলোকে কিভাবে সর্বাধিক কাজে লাগানো যায়। এ বরকতপূর্ণ মাসেই নাজিল হয়েছে হেদায়াতের আলোকবর্তিকা ঐশিগ্রন্থ আল কুরআন। এ মাসে খুলে দেয়া হয় জান্নাতের দরজাগুলো। বন্ধ করে দেয়া হয় জাহান্নামের সকল দরজা। শৃঙ্খলাবদ্ধ করা হয় দুষ্টু শয়তানকে। আল্লাহ পাকের পক্ষ থেকে নিয়োজিত একজন ঘোষণাকারী আহ্বান জানাতে থাকেন ভাল কাজের দিকে এবং বিরত থাকতে বলেন নিকৃষ্ট এবং গর্হিত সকল কাজ থেকে। সাথে সাথে এই রমজান হচ্ছে- মাগফিরাতের মাস, জাহান্নাম থেকে মুক্তির মাস। এ মাসেই রয়েছে মহিমান্বিত রজনী লাইলাতুল কদর- যা হাজার মাস অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ।
মাহে রমজান মহান এক ব্যতিক্রমী বিদ্যাপীঠ; মাহে রমজান আল কুরআনের মাস:
আমরা জানি। রমজানের অসাধারণ ফজিলতের কথাগুলো আমাদের সকলেরই প্রায় জানা। তবু এত এত ফজিলতের পবিত্র রমজান আমাদের অনেকের নিকট যেন নিছক সিয়াম পালন আর তারাবীহ আদায়ের মাস এটি। আমরা সাহরি খেয়ে নিয়মিত রোজা রাখি। ইফতার করার মাধ্যমে আবার রোজা খুলি। আর এভাবেই যথানিয়মে প্রতিবছরের ন্যায় পেরিয়ে যায় আমাদের প্রিয় রমজান মাস। আমরাও মনে মনে তুষ্টি অনুভব করি যে, বেশ হয়েছে! যথেষ্ট হয়েছে! পুরো মাস রোজা রেখেছি! ব্যাস! আর চিন্তা কীসের? এর চেয়ে বেশি ভালো আমল আর কীইবা হতে পারে? হয়তো এটা ভেবেও আমরা আনন্দিত হই, দিনের বেলা পানাহার থেকে বিরত থাকছি- এটাও কি কম কিছু? না, প্রিয় বন্ধু, মহিমান্বিত রমজানের আবেদন শুধুই এটুকুতে সীমাবদ্ধ নয়। পবিত্র এই রমজানের আমাদের নিকট আরও কিছু চাওয়ার রয়েছে। রমজানের এই স্নিগ্ধ মলয়ের একটি মাস থেকে আমাদের আরও কিছু গ্রহনের এবং অর্জনের রয়েছে। পবিত্র মাহে রমজান শুধু রোজা রাখার একটি মাস নয়; এ যেন বিদ্যার্জনের বিশাল এক মাহেন্দ্রক্ষন। পুরো রমজান মাস যেন জ্ঞানের সন্ধানে জাগরিত হওয়ার নিমিত্তে কিছু আলোকিত মুহূর্তের সমষ্টি। রমজানকে ধরে নেয়া যায় এক মহান বিদ্যাপীঠ আর ব্যতিক্রমী পাঠশালা হিসেবে। বিদ্যার্জনের মোক্ষম সময় পুরো এই মাসটি জুড়ে। পবিত্র এ রমজানে আমরা যেসব নেক আমল করতে পারি তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে- আল কুরআন পাঠ। চেষ্টা করা অর্থসহ বুঝে বুঝে পুরো কুরআনুল কারিম তিলাওয়াত করা। কুরআনে পাক শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত খতম দেয়া। কারণ, মাহে রমজান আল কুরআনের মাস। আল কুরআন নাজিলের মাস। আল কুরআন তিলাওয়াতের মাস। আল কুরআন বুঝার মাস। আল কুরআন শিক্ষা করার মাস। আল কুরআন আত্মস্থ করার মাস। আল কুরআন মুখস্ত করার মাস।
হাদিসে এসেছে, রাসূলে মাকবুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন- 'সিয়াম ও কুরআন কেয়ামতের দিন মানুষের জন্য সুপারিশ করবে…।'
আরেক হাদিসে এসেছে, 'রমজানে জিবরাইল আলাইহিসসালাম রাসূলে মাকবুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে কুরআন পাঠ করে শোনাতেন। আর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পূর্ণ কুরআন তিলাওয়াতের মাধ্যমে জিবরাইল আলাইহিসসালামের কাছে তুলে ধরতেন।'
আল কুরআন তিলাওয়াত হচ্ছে সর্বশ্রেষ্ঠ জিকির। সিয়াম পালনকারী প্রত্যেক ব্যক্তির উচিত এ জিকির থেকে বঞ্চিত না থাকা।
প্রশ্ন আসতে পারে, আমরা তো অনেকেই কুরআন তিলাওয়াত করতে পারি না। এই পবিত্র মাসে কুরআন তিলাওয়াতের বরকত এবং সাওয়াবলাভে আমাদের করণীয় কি?
আমরা যারা কুরআন তিলাওয়াত করতে পারি না আমাদের করণীয়:
আমরা যারা কুরআন তিলাওয়াত করতে অপারগ, আমাদের উচিত আজই সিদ্ধান্ত গ্রহন করা যে, এই রমজানের একটি মাস কুরআন শেখার পেছনে ব্যয় করবো। প্রতি দিন এক ঘন্টা কিংবা আধা ঘন্টা করে সময় ব্যয় করে এই পবিত্র গ্রন্থ পাঠের যোগ্যতা অর্জন করা সম্ভব। আলহামদুলিল্লাহ, আজ কাল শহরে গ্রামে প্রায় স্থানেই বয়স্কদের জন্য কুরআন শেখার ব্যবস্থা চোখে পড়ার মত। বিশেষ করে পবিত্র রমজান মাসে এই উদ্যোগ অনেকেই গ্রহন করে থাকেন। যারা এই ব্যবস্থা করে থাকেন, তাদের জন্য আল্লাহ পাকের দরবারে কল্যানের দুআ। আপনার নিকটবর্তী মসজিদ কিংবা মাদরাসায় খোঁজ নিয়ে আজই যোগাযোগ করে দেখুন, যার তিলাওয়াত সহি এমন একজনের নিকট কুরআন শেখার ব্যব্স্থা করে নিন।
রমজানে কুরআন শেখার জন্য উত্তম সময় কোনটি?
ইশা এবং তারাবীহ নামাজের পরের সময়টাকে অনেকে বেছে নেন কুরআন শেখার জন্য। এছাড়া কর্মব্যস্ত ব্যক্তিগন সাহরি খাওয়ার পরে বাদ ফজর কুরআন শেখার জন্য কিছু সময় বের করে নিতে পারেন। আর যাদের হাতে সময় রয়েছে তারা যুহর বাদ কিংবা দিন রাতের সুবিধাজনক যে কোনো সময় কাজে লাগাতে পারেন।
আচ্ছা, আমাদের প্রত্যেকেরই কি পবিত্র কুরআন শিখে নেয়া জরুরী?
জ্বি, আমাদের প্রত্যেকের জন্য কুরআন শিক্ষা করা আবশ্যক। কুরআনুল কারিমের যতটুকু না জানা থাকলে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায়সহ অন্যান্য ফরজ আমলগুলো করা যায় না, ততটুকু শিক্ষা করে নেয়া প্রত্যেক মুসলিম ব্যক্তির জন্য ফরজ।
কুরআনুল কারিম শিক্ষার গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা:
কুরআনুল কারিম শিক্ষার গুরুত্ব বুঝার জন্য কিছু বিষয় আমাদের অনুধাবন করা প্রয়োজন। সংক্ষিপ্তভাবে পয়েন্ট আকারে কয়েকটি বিষয় উল্লেখ করছি-
এক. কুরআন শিক্ষা ফরয:
আমাদের অনেক ভাইদের ধারণা, কুরআন শুধু আলেম হাফেজ প্রমুখ ব্যক্তিগন পড়বেন। এই গ্রন্থ সকলের শিখতে হবে কেন? কিন্তু না, প্রকৃত বিষয় হচ্ছে- প্রত্যেক মুসলিমকে কুরআনুল কারিম পড়া জানতে হবে। যে নিজেকে মুসলিম হিসাবে দাবী করবে তাকে অবশ্যই কুরআন শিক্ষা করতে হবে। কুরআন শিক্ষা করা এতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয় যে, আল্লাহ তা‘আলা কুরআন শিক্ষা করা ফরয করে দিয়েছেন। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
﴿ ٱقۡرَأۡ بِٱسۡمِ رَبِّكَ ٱلَّذِي خَلَقَ ١ ﴾ [العلق: ١]
অর্থ: ‘পড় তোমার রবের নামে, যিনি সৃষ্টি করেছেন’। [সূরা আলাক : ১]
কুরআনুল কারিম শিক্ষায় কোন প্রকার অবহেলা করা যাবে না। উম্মাতকে কুরআন শিক্ষার নির্দেশ দিয়ে প্রখ্যাত সাহাবি ইবন মাসউদ রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন,
«تَعَلَّمُوا الْقُرْآنَ ، وَاتْلُوهُ»
অর্থ:‘তোমরা কুরআন শিক্ষা কর এবং তিলাওয়াত কর’। [মুসান্নাফ ইবন আবী শাইবাহ:৮৫৭২]
দুই. নামাজ আদায়ের জন্য কুরআন শিক্ষা অপরিহার্য্য:
আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা ঈমানদার বান্দাহদের উপর দৈনিক পাচ ওয়াক্ত নামাজ ফরয করেছেন। নামাজে কুরআন তিলাওয়াত বাধ্যতামূলক। কুরআনুল কারিম তিলাওয়াত ব্যতিত নামাজ হয় না। তাই নামাজ আদায় করার জন্য কুরআন শিক্ষা করার বিকল্প নেই। অনেকেই আমরা ছোট ছোট কিছু সূরাহ শিখে নিয়েছি- যাতে সেগুলো দিয়ে অন্তত: নামাজ আদায় করা যায়। এসব ক্ষেত্রে দেখা যায়, কেউ বাংলা উচ্চারণ দেখে দেখে শিখে নিয়েছি, কিংবা কেউ অপরের তিলাওয়াত শুনে শুনে মুখস্ত করে নিয়েছি, যার ফলে আমরা যারা সহিভাবে কুরআন তিলাওয়াত করতে সক্ষম নই, আমাদের অনেকেরই তিলাওয়াত সহি নয়, তবু আপাতত: চলার জন্য এটা ঠিক আছে। এটাকে অবশ্যই ভালো কাজ বলতে হবে। কিন্তু এটাতো সাময়িক। সুদীর্ঘ জীবন নামাজ পড়ার জন্য আপনার অবশ্যই সময় সুযোগ বের করে কুরআনুল কারিম শিখে নেয়া উচিত। কারণ, নামাজ সহি হওয়ার জন্য তিলাওয়াত সহি হওয়া আবশ্যক। কুরআনে বলা হয়েছে,
﴿ فَٱقۡرَءُواْ مَا تَيَسَّرَ مِنَ ٱلۡقُرۡءَانِۚ ﴾ [المزمل: ٢٠]
অর্থ: ‘অতএব তোমরা কুরআন থেকে যতটুকু সহজ ততটুকু পড়’। [সূরা আল-মুযযাম্মিল: ২০]
নামাজে সূরাহ পড়ার বিষয়ে রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«لاََ صَلاَةَ لِمَنْ لَمْ يَقْرَأْ بِفَاتِحَةِ الْكِتَابِ».
অর্থ: ‘যে ব্যক্তি সূরা ফাতিহা পড়ে না তার সালাতই হয় না’। [সহীহ বুখারী:৭৫৬]
তিন. কুরআনুল কারিমের বানী প্রচারের জন্য কুরআন শিক্ষা করা আবশ্যক:
কুরআন মাজীদে কুরআনের বানী প্রচারের জন্য নির্দেশ দেয়া হয়েছে। সে নির্দেশের আলোকে রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এবং সাহাবায়ে কিরাম কুরআনুল কারিমের প্রচার এবং প্রসারে নিজেদেরকে নিয়োজিত রেখেছেন। আর এই তাবলীগে দ্বীনের মহান কাজের জন্য প্রতিপালকের নিকট রয়েছে অফুরন্ত প্রতিদান। কিন্তু যে ব্যক্তি কুরআন পড়তে জানে না, সে কীভাবে তা প্রচার করবে? সুতরাং কুরআনুল কারিমের বানীর প্রচার এবং প্রসারে ভূমিকা পালন করার জন্য তা শিক্ষা করা একান্ত প্রয়োজন। কুরআনে পাকে বলা হয়েছে,
﴿ ۞يَٰٓأَيُّهَا ٱلرَّسُولُ بَلِّغۡ مَآ أُنزِلَ إِلَيۡكَ مِن رَّبِّكَۖ ﴾ [المائدة: ٦٧]
অর্থ: 'হে রাসূল, তোমার রবের পক্ষ থেকে তোমার নিকট যা নাযিল করা হয়েছে, তা পৌঁছে দাও।' [সূরা মায়িদাহ : ৬৭]
চার. কুরআনুল কারিম শিক্ষা অন্তরের প্রশান্তি:
মানব জীবনে অর্থ বা অন্যান্য কারণে জাগতিক তৃপ্তি আসলেও প্রকৃত তৃপ্তি ও শান্তি কুরআনুল কারিমের শিক্ষার মাধ্যমেই আনয়ন করা সম্ভব। কুরআন তিলাওয়াত করলে অন্তরে শান্তি আসে। হৃদয়ে প্রশান্তির পরশ বয়ে যায়। চক্ষু শীতলতা লাভ করে। তিলাওয়াতে কালামুল্লাহর এমনই তাছির- মৃত অন্তরও এর সংস্পর্শে এসে জিন্দা হয়ে যায়। কুরআনুল কারিমে ইরশাদ হয়েছে,
﴿ ٱلَّذِينَ ءَامَنُواْ وَتَطۡمَئِنُّ قُلُوبُهُم بِذِكۡرِ ٱللَّهِۗ أَلَا بِذِكۡرِ ٱللَّهِ تَطۡمَئِنُّ ٱلۡقُلُوبُ ٢٨ ﴾ [الرعد: ٢٨]
অর্থ : ‘যারা ঈমান আনে, বিশ্বাস স্থাপন করে এবং তাদের অন্তর আল্লাহর জিকির দ্বারা শান্তি লাভ করে। জেনে রাখ, আল্লাহর জিকির দ্বারাই অন্তরসমূহ শান্তি পায়’। [সূরা আর-রা‘দ:২৮]
পাঁচ.হেদায়াত লাভের জন্য প্রয়োজন কুরআন শিক্ষা করা:
কুরআনুল কারিমের মাধ্যমেই হেদায়াতের সন্ধান পাওয়া যাবে। সেজন্য কুরআন থেকে হেদায়াত পাবার জন্য কুরআন শিক্ষা করতে হবে। কুরআনে হাকিমে বলা হয়েছে,
﴿ إِنَّ هَٰذَا ٱلۡقُرۡءَانَ يَهۡدِي لِلَّتِي هِيَ أَقۡوَمُ ﴾ [الاسراء: ٩]
অর্থ: ‘নিশ্চয় এ কুরআন এমন পথ-প্রদর্শন করে, যা সর্বাধিক সরল ও সঠিক’। [সূরা বনি-ইসরাঈল:০৯]
ছয়. জান্নাতে যাওয়ার জন্য কুরআন শিক্ষা:
প্রত্যেক মুমিনের সর্বোচ্চ কামনা হলো আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআ'লা ঘোষিত জান্নাতে যাওয়া। তাই জান্নাতে যাওয়ার জন্য কুরআন শিক্ষা করতে হবে। হাদিসে এসেছে,
«اَلصِّيَامُ وَالْقُرْآنُ يَشْفَعَانِ لِلْعَبْدِ يَوْمَ الْقِيَامَةِ يَقُولُ الصِّيَامُ أَيْ رَبِّ مَنَعْتُهُ الطَّعَامَ وَالشَّهَوَاتِ بِالنَّهَارِ فَشَفِّعْنِي فِيهِ وَيَقُولُ الْقُرْآنُ مَنَعْتُهُ النَّوْمَ بِاللَّيْلِ فَشَفِّعْنِي فِيهِ قَالَ فَيُشَفَّعَانِ».
অর্থ: 'সিয়াম ও কুরআন কিয়ামাতের দিন মানুষের জন্য এভাবে সুপারিশ করবে যে, সিয়াম বলবে হে আমার রব, আমি দিনের বেলায় তাকে (এ সিয়াম পালনকারীকে) পানাহার ও যৌনতা থেকে বিরত রেখেছি। তাই তার ব্যাপারে আপনি আমার সুপারিশ কবূল করুন। অনুরূপভাবে কুরআন বলবে, হে আমার রব, আমাকে অধ্যয়নরত থাকায় রাতের ঘুম থেকে আমি তাকে বিরত রেখেছি। তাই তার ব্যাপারে আপনি আমার সুপারিশ কবূল করুন। আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, অতঃপর উভয়ের সুপারিশই কবূল করা হবে।' [মুসনাদআহমাদ: ৬৬২৬]।
কুরআনুল কারিম শিক্ষা করা এবং তিলাওয়াতের ফযিলত:
এক. কুরআনুল কারিম তিলাওয়াত আল্লাহ তাআ'লার সাথে একটি লাভজনক ব্যবসা:
কুরআনুল কারিম তিলাওয়াত আল্লাহ তাআ'লার সাথে একটি লাভজনক ব্যবসা। বিভিন্ন ব্যবসায় লাভ এবং ক্ষতি দু'টিরই সম্ভাবনা থাকে। কিন্তু এখানে লাভ ছাড়া কোন প্রকার ক্ষতির অংশ নেই। আল্লাহ তা‘আলা বলেন-
﴿ إِنَّ ٱلَّذِينَ يَتۡلُونَ كِتَٰبَ ٱللَّهِ وَأَقَامُواْ ٱلصَّلَوٰةَ وَأَنفَقُواْ مِمَّا رَزَقۡنَٰهُمۡ سِرّٗا وَعَلَانِيَةٗ يَرۡجُونَ تِجَٰرَةٗ لَّن تَبُورَ ٢٩ لِيُوَفِّيَهُمۡ أُجُورَهُمۡ وَيَزِيدَهُم مِّن فَضۡلِهِۦٓۚ إِنَّهُۥ غَفُورٞ شَكُورٞ ٣٠ ﴾ [فاطر: ٢٩، ٣١]
‘‘যারা আল্লাহর কিতাব পাঠ করে, সালাত কায়েম করে, আমার দেয়া রিজিক থেকে গোপনে ও প্রকাশ্যে ব্যয় করে, তারাই আশা করতে পারে এমন ব্যবসার যা কখনো ক্ষতিগ্রস্ত হবে না। কারণ আল্লাহ তাদের কর্মের পূর্ণ প্রতিদান দেবেন এবং নিজ অনুগ্রহে আরো অধিক দান করবেন। তিনি ক্ষমাশীল ও দয়াবান।’’ [সূরা ফাতির ২৯-৩০]
দুই. কুরআন পাঠকারী প্রত্যেক হরফের জন্য সওয়াব লাভ করে:
কুরআন তিলাওয়াতের মাধ্যমে অর্জিত হয় বিরাট সওয়াব। এর সাথে অনেক উপকারিতাও রয়েছে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
«مَنْ قَرَأَ حَرْفًا مِنْ كِتَابِ اللَّهِ فَلَهُ بِهِ حَسَنَةٌ وَالْحَسَنَةُ بِعَشْرِ أَمْثَالِهَا لَا أَقُولُ الم حَرْفٌ وَلَكِنْ أَلِفٌ حَرْفٌ وَلَامٌ حَرْفٌ وَمِيمٌ حَرْفٌ»
‘যে ব্যক্তি কুরআনের একটি হরফ পাঠ করে, তাকে একটি নেকি প্রদান করা হয়। প্রতিটি নেকি দশটি নেকির সমান। আমি বলি না যে, আলিফ-লাম-মীম একটি হরফ। বরং আলিফ একটি হরফ, লাম একটি হরফ, মীম একটি হরফ।’ [সুনান আত-তিরমিযি:২৯১০]
তিন. কুরআনের শিক্ষার্থী ও শিক্ষক সর্বোত্তম ব্যক্তি:
কুরআন শিক্ষার মাধ্যমে দুনিয়া ও আখেরাতে শ্রেষ্ঠত্ব অর্জন করা যায়। উসমান রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত হাদিসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
«خَيْرُكُمْ مَنْ تَعَلَّمَ الْقُرْآنَ وَعَلَّمَهُ»
অর্থ: ‘তোমাদের মধ্যে সর্বোত্তম ব্যক্তি সেই যে নিজে কুরআন শিক্ষা করে ও অপরকে শিক্ষা দেয়।' [বুখারী: ৫০২৭]
চার. কুরআন তিলাওয়াতকারীর পক্ষে সুপারিশ করবে:
কিয়ামতের দিন ভয়াবহ অবস্থায় আল কুরআন স্বয়ং তিলাওয়াতকারীর পক্ষে আল্লাহ তাআ'লার নিকট সুপারিশ করবে। এটা বিরাট সৌভাগ্যের বিষয়। আবু উমামাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত হাদীসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন-
«اقْرَءُوا الْقُرْآنَ فَإِنَّهُ يَأْتِي يَوْمَ الْقِيَامَةِ شَفِيعًا لِأَصْحَابِهِ»
অর্থ:‘তোমরা কুরআন তিলাওয়াত কর, কারণ, কুরআন কেয়ামতের দিন তিলাওয়াতকারীর জন্য সুপারিশ করবে।’ [মুসলিম: ১৯১০]
পাঁচ. কুরআন তিলাওয়াত উত্তম সম্পদ অর্জন:
কুরআন পড়া বা শিক্ষা দেয়ার কাজে নিয়োজিত থাকা উত্তম সম্পদ অর্জন করার অন্তর্ভুক্ত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
«أَيُّكُمْ يُحِبُّ أَنْ يَغْدُوَ كُلَّ يَوْمٍ إِلَى بُطْحَانَ أَوْ إِلَى الْعَقِيقِ فَيَأْتِيَ مِنْهُ بِنَاقَتَيْنِ كَوْمَاوَيْنِ فِي غَيْرِ إِثْمٍ وَلَا قَطْعِ رَحِمٍ فَقُلْنَا يَا رَسُولَ اللَّهِ نُحِبُّ ذَلِكَ قَالَ أَفَلَا يَغْدُو أَحَدُكُمْ إِلَى الْمَسْجِدِ فَيَعْلَمُ أَوْ يَقْرَأُ آيَتَيْنِ مِنْ كِتَابِ اللَّهِ عَزَّ وَجَلَّ خَيْرٌ لَهُ مِنْ نَاقَتَيْنِ وَثَلَاثٌ خَيْرٌ لَهُ مِنْ ثَلَاثٍ وَأَرْبَعٌ خَيْرٌ لَهُ مِنْ أَرْبَعٍ وَمِنْ أَعْدَادِهِنَّ مِنْ الْإِبِلِ»
'তোমাদের কেউ কেন সকালে মসজিদে গিয়ে আল্লাহ তাআ'লার কালাম কুরআন হতে দু'টি আয়াত পড়ে না বা শিক্ষা দেয় না? কেউ যদি এটা করে তাহলে সেটি তার জন্য দু'টি উট লাভ করার চেয়ে উত্তম হবে। তিনটি আয়াত তিনটি উট অপেক্ষা উত্তম। চারটি আয়াত চার উট অপেক্ষা উত্তম। অনুরূপ আয়াতের সংখ্যা অনুপাতে উটের সংখ্যা অপেক্ষা উত্তম।' [সহীহ মুসলিম : ১৩৩৬]
ছয়. কুরআনুল কারিমের তিলাওয়াত ঈমান বৃদ্ধি করে:
কুরআনুল কারিমের তিলাওয়াত বান্দাহর জন্য এমন উপকারী যে, তা তিলাওয়াত করলে ঈমান বৃদ্ধি পায়। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা বলেন-
﴿ إِنَّمَا ٱلۡمُؤۡمِنُونَ ٱلَّذِينَ إِذَا ذُكِرَ ٱللَّهُ وَجِلَتۡ قُلُوبُهُمۡ وَإِذَا تُلِيَتۡ عَلَيۡهِمۡ ءَايَٰتُهُۥ زَادَتۡهُمۡ إِيمَٰنٗا وَعَلَىٰ رَبِّهِمۡ يَتَوَكَّلُونَ ٢ ﴾ [الانفال: ٢]
অর্থ: ‘মুমিন তো তারা, যাদের অন্তরসমূহ কেঁপে উঠে যখন আল্লাহকে স্মরণ করা হয়। আর যখন তাদের উপর তাঁর আয়াতসমূহ পাঠ করা হয় তখন তা তাদের ঈমান বৃদ্ধি করে এবং যারা তাদের রবের উপরই ভরসা করে’। [সূরা আনফাল:২]
সাত. কুরআনের ধারক-বাহক ঈর্ষণীয় ব্যক্তি:
কোন ব্যক্তি কুরআনুল কারিমের জ্ঞানে সমৃদ্ধ হয়ে তার হক আদায় করে তিলাওয়াত করলে তার সাথে ঈর্ষা বা তার মত হওয়ার আকাঙ্খা করা যাবে। হাদিসে এসেছে-
«لاََ حَسَدَ إِلاَّ فِي اثْنَتَيْنِ رَجُلٌ آتَاهُ اللَّهُ الْقُرْآنَ فَهْوَ يَتْلُوهُ آنَاءَ اللَّيْلِ وَآنَاءَ النَّهَارِ وَرَجُلٌ آتَاهُ اللَّهُ مَالاً فَهْوَ يُنْفِقُهُ آنَاءَ اللَّيْلِ وَآنَاءَ النَّهَارِ»
অর্থ: ‘একমাত্র দুই ব্যক্তির উপর ঈর্ষা করা যায়। এক ব্যক্তি, যাকে আল্লাহ তা‘আলা কোরআনের ইলম দান করেছেন, সে দিবা-রাত্রি ঐ কোরআন তিলাওয়াতে ব্যস্ত থাকে। দ্বিতীয় সে ব্যক্তি, যাকে আল্লাহ তা‘আলা ধন-সম্পদ দান করেছেন। সে তা দিনরাত (বৈধ কাজে) খরচ করে’ [সহীহ বুখারী :৭৫২৯]।
কুরআনুল কারিম শিক্ষা না করার পরিনতি:
এক. আল্লাহ তাআ'লার দরবারে কিয়ামতের দিন রাসূলের অভিযোগ দায়ের:
কিয়ামতের ভয়াবহ অবস্থায় আল্লাহ তা‘আলার অনুমতিতে রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উম্মাতের জন্য শাফায়াত চাইবেন। কিন্তু যারা কুরআন শিক্ষা করেনি, কুরআনের যেসব হক রয়েছে তা আদায় করেনি, কিয়ামতের দিন নবী কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের বিরুদ্ধে আল্লাহর দরবারে অভিযোগ দায়ের করবেন। কুরআনুল কারিমে বর্ণিত হয়েছে-
﴿ وَقَالَ ٱلرَّسُولُ يَٰرَبِّ إِنَّ قَوۡمِي ٱتَّخَذُواْ هَٰذَا ٱلۡقُرۡءَانَ مَهۡجُورٗا ٣٠ ﴾ [الفرقان: ٣٠]
অর্থ: ‘আর রাসূল বলবেন, হে আমার রব, নিশ্চয়ই আমার কওম এ কুরআনকে পরিত্যাজ্য গণ্য করেছে’ [সূরা আল-ফুরকান-৩০]
আলোচ্য আয়াতের ব্যাখ্যায় প্রখ্যাত তাফসীরবিদ আল্লামা ইবন কাসীর রহমাতুল্লাহি আলাইহি বলেন- কুরআন না পড়া, কুরআনে বর্ণিত বিধি-বিধান অনুসারে আমল না করা, তা থেকে হেদায়াত গ্রহণ না করা- এ সবই কুরআন পরিত্যাগ করার শামিল। আল্লাহ পাক আমাদের এমন দুর্ভাগ্য থেকে রক্ষা করুন।
দুই. কুরআন থেকে যারা মুখ ফিরিয়ে নিবে, কিয়ামতে অন্ধ হয়ে উঠবে তারা:
কুরআন শিক্ষা করা থেকে যারা বিমুখ হয়ে থাকবে, কুরআনের সাথে সম্পর্কহীন যাদের জীবন, কতইনা দুর্ভাগ্য তাদের! তাদের পরিনতি সম্মন্ধে আল কুরআনে বলা হয়েছে-
﴿ وَمَنۡ أَعۡرَضَ عَن ذِكۡرِي فَإِنَّ لَهُۥ مَعِيشَةٗ ضَنكٗا وَنَحۡشُرُهُۥ يَوۡمَ ٱلۡقِيَٰمَةِ أَعۡمَىٰ ١٢٤ قَالَ رَبِّ لِمَ حَشَرۡتَنِيٓ أَعۡمَىٰ وَقَدۡ كُنتُ بَصِيرٗا ١٢٥ قَالَ كَذَٰلِكَ أَتَتۡكَ ءَايَٰتُنَا فَنَسِيتَهَاۖ وَكَذَٰلِكَ ٱلۡيَوۡمَ تُنسَىٰ ١٢٦ ﴾ [طه: ١٢٤، ١٢٦]
অর্থ: 'আর যে আমার যিকর (কুরআন) থেকে মুখ ফিরিয়ে নেবে, নিশচয় তার জীবন-যাপন হবে সংকুচিত এবং আমি কিয়ামতের দিন তাকে অন্ধ অবস্থয় উঠাবো। সে বলবে, হে আমার রব, কেন আপনি আমাকে অন্ধ অবস্থায় উঠালেন? অথচ আমিতো ছিলাম দৃষ্টিশক্তি সম্পন্ন! তিনি বলবেন, অনুরুপভাবে তোমার নিকট আমার আয়াতসমূহ এসেছিল, অত:পর তুমি তা ভুলে গিয়েছিলে এবং সেভাবেই আজ তোমাকে ভুলে যাওয়া হল।’ [সূরা ত্ব-হা-১২৪-১২৬]।
তিন. মূক, বধির অবস্থায় ঊঠবে:
সবচেয়ে বড় হেদায়েত আল-কুরআন প্রত্যাখ্যানকারীদের কিয়ামতের দিন মূক ও বধির অবস্থায় উঠানো হবে। আল কুরআনে এসেছে-
﴿ وَنَحۡشُرُهُمۡ يَوۡمَ ٱلۡقِيَٰمَةِ عَلَىٰ وُجُوهِهِمۡ عُمۡيٗا وَبُكۡمٗا وَصُمّٗاۖ مَّأۡوَىٰهُمۡ جَهَنَّمُۖ كُلَّمَا خَبَتۡ زِدۡنَٰهُمۡ سَعِيرٗا ٩٧ ﴾ [الاسراء: ٩٧]
'আমি কিয়ামতের দিন তাদেরকে সমবেত করব তাদের মুখে ভর দিয়ে চলা অবস্থায়, অন্ধ অবস্থায়, মূক অবস্থায়, বধির অবস্থায়। তাদের আবাসস্থল জাহান্নাম। যখন জাহান্নামের আগুন নির্বাপিত হওয়ার উপক্রম হবে আমি তখন তাদের জন্য অগ্নি আরও বাড়িয়ে দেব।' [সূরা বনি-ঈসরাইল:৯৭]
চার. গাফেলদের অন্তর্ভুক্ত:
কুরআন শিক্ষা না করা গাফেলদের অন্তর্ভুক্ত হওয়ার শামিল। আল কুরআনে এসেছে-
﴿أُوْلَٰٓئِكَ كَٱلۡأَنۡعَٰمِ بَلۡ هُمۡ أَضَلُّۚ أُوْلَٰٓئِكَ هُمُ ٱلۡغَٰفِلُونَ ١٧٩ ﴾ [الاعراف: ١٧٨]
অর্থ: ‘এরা চতুস্পদ জন্তুর ন্যায় বরং এরা তাদের চেয়েও আরো অধম ও নিকৃষ্ট। এরাই হলো গাফেল।’ [সূরা আরাফ-১৭৯]
পাঁচ. কুরআন দলিল হিসাবে আসবে:
কুরআন শিক্ষা থেকে বিরত থাকার কারণে কুরআন তার বিপক্ষের দলিল হিসাবে উপস্থিত হবে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেছেন :
«وَالْقُرْآنُ حُجَّةٌ لَكَ أَوْ عَلَيْكَ»
অর্থ: 'কুরআন তোমার পক্ষে কিংবা বিপক্ষের দলীল।' [সহীহ মুসলিম: ৩২৮ ]
ছয়. জাহান্নামে যাওয়ার কারণ হবে:
জাহান্নামের মত ভয়াবহ কঠিন জায়গা আর নেই। কুরআন শিক্ষা না করার কারণে জাহান্নামে যেতে হবে। নবী কারীম সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«الْقُرْآنُ مُشَفَّعٌ ، وَمَا حِلٌ مُصَدَّقٌ ، مَنْ جَعَلَهُ إِمَامَهُ قَادَهُ إِلَى الْجَنَّةِ ، وَمَنْ جَعَلَهُ خَلْفَ ظَهْرِهِ سَاقَهُ إِلَى النَّارِ.»
অর্থ: ‘কুরআন সুপারিশকারী এবং তাঁর সুপারিশ গ্রহণযোগ্য। সুতরাং যে ব্যক্তি কুরআনকে সামনে রেখে তাঁর অনুসরণ করবে, কুরআন তাকে জান্নাতে নিয়ে যাবে। আর যে ব্যক্তি একে নিজ পশ্চাতে রেখে দিবে, কুরআন তাকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করবে।’ [সহীহ ইবনে হিববান : ১২৪]
সাত. আখেরাতে জবাবদিহী করতে হবে:
কুরআন শিক্ষায় যথাযথ ভুমিকা পালন না করলে এ বিষয়ে আখেরাতে জবাবদিহী করতে হবে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন-
﴿ وَإِنَّهُۥ لَذِكۡرٞ لَّكَ وَلِقَوۡمِكَۖ وَسَوۡفَ تُسَۡٔلُونَ ٤٤ ﴾ [الزخرف: ٤٤]
অর্থ: 'নিশ্চয় এ কুরআন তোমার জন্য এবং তোমার কওমের জন্য উপদেশ। আর অচিরেই তোমাদেরকে জিজ্ঞাসা করা হবে।' [সূরা যুখরুফ : ৪৪]
কুরআন শিক্ষায় করণীয়:
[১] ভাল শিক্ষকের কাছে পড়া:
যিনি সহীহভাবে কুরআন পড়তে পারেন তার নিকটই কুরআন শিক্ষা করতে হবে। বিশেষ করে যে শিক্ষকের কুরআন শিক্ষার বিষয়ে প্রশিক্ষণ আছে তার কাছে পড়লে আরো ভাল হয়।
[২] নিয়মিত পড়া:
সহীহভাবে কুরআন শিক্ষার জন্য নিয়মিত সময় দেয়া দরকার। যদিও কম সময় হয়। প্রতিদিন শেখার মধ্যে থাকলে সহীহভাবে কুরআন শিক্ষা সহজ হবে এবং যা শেখা হবে তা আয়ত্ত্বে থাকবে।
[৩] মশক করা:
কোন যোগ্য শিক্ষকের কাছে মশক করলে পড়ার সৌন্দর্য বৃদ্ধি পাবে। মশক হলো- শিক্ষক পড়বে তারপর সেভাবে ছাত্রও পড়বে। এ ছাড়া বিভিন্ন সিডির মাধ্যমেও মশক করা যায়। এক্ষেত্রে বিশ্ববিখ্যাত ক্বারী মানশাওয়াভীর কুরআন প্রশিক্ষণ সিডির সহযোগিতা নেয়া যেতে পারে।
[৪] পরিবার পরিজন ও সন্তানদের শিক্ষা দেয়া:
প্রত্যেক মুসলিমকে তার পরিবার পরিজন ও সন্তানদের কুরআন শিক্ষা দেয়া অন্যতম দায়িত্ব ও কর্তব্য। কুরআনে এসেছে,
﴿ يَٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُواْ قُوٓاْ أَنفُسَكُمۡ وَأَهۡلِيكُمۡ نَارٗا ﴾ [التحريم: ٦]
অর্থ:‘হে ইমানদারগণ! তোমরা তোমাদের নিজেদেরকে এবং তোমাদের পরিবারবর্গকে জাহান্নামের আগুন থেকে বাঁচাও’ [সূরা তাহরীম-৬]।
আবদুল্লাহ ইবনে আমর রাদিয়াল্লাহু আনহুমা বলেন,
«عَلَيْكُم بِالْقُرْآَن ، فَتَعَلَّمُوه وَعَلَّمُوه أَبْنَائِكُم ، فَإِنَّكُم عَنْه تُسْأَلُوْن ، وَبِه تُجْزَوْن»
অর্থর্: কুরআনের বিষয়ে তোমাদের উপর অবশ্য পালনীয় এই যে, কুরআন শিক্ষা করা এবং তোমাদের সন্তানদের কুরআন শিক্ষা দেয়া। কেননা এ বিষয়ে তোমাদের জিজ্ঞাসা করা হবে এবং তার প্রতিদানও দেয়া হবে। [শরহে সহীহ বুখারী, ইবন বাত্তাল : ৪৬]
[৫] ফযিলাতপূর্ণ সূরাগুলো বেশী বেশী করা:
ফযীলতপূর্ণ সূরাগুলো ভালোভাবে শিক্ষা করা এবং সেগুলো বেশি বেশি তিলাওয়াত করা। রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন,
«أَيَعْجِزُ أَحَدُكُمْ أَنْ يَقْرَأَ فِى لَيْلَةٍ ثُلُثَ الْقُرْآنِ. قَالُوا :وَكَيْفَ يَقْرَأُ ثُلُثَ الْقُرْآنِ قَالَ : (قُلْ هُوَ اللَّهُ أَحَدٌ) يَعْدِلُ ثُلُثَ الْقُرْآنِ.»
‘তোমাদের কেউ কি রাত্রিকালে কুরআনের এক তৃতীয়াংশ তিলাওয়াতে অক্ষম? তারা বললেন, কুরআনের এক তৃতীয়াংশ কিভাবে পড়া পড়বে তিনি বললেন, (সূরা ইখলাস) কুরআনের এক তৃতীয়াংশের সমতুল্য।’ [সহীহ বুখারী: ৫০১৫]
অতএব যেসব সূরা ও আয়াত সম্পর্কে অধিক ফযীলত ও বেশি নেকীর কথা বর্ণিত হয়েছে এবং যেগুলো ভালোভাবে শেখা ও বেশি বেশি পড়া দরকার তার মধ্যে রয়েছে, শুক্রবার ফজর নামাজে সূরা আলিফ-লাম-সিজদাহ পড়া, ঘুমানোর আগে সূরা মুলক এবং ফরয নামাজের পর সূরা নাস, সূরা ফালাক ও আয়াতুল কুরসী পড়া। আল্লাহ তা‘আলা পাঠকসহ আমাদের সকলকে কুরআন শিক্ষার তাওফীক দিন।
যে পদ্ধতিতে কুরআন খতম করা অতি সহজ:
আমরা যারা আল কুরআন তিলাওয়াত করতে পারি এবং এই পবিত্র মাস রমজানে কুরআন তিলাওয়াত করে খতম করতে চাই আমরা প্রতিদিন কিভাবে এবং কতটুকু করে পড়লে পবিত্র মাস রমজানে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআলার পবিত্র কালাম আল কুরআন পাঠ শেষ করতে পারবো, আসুন আজ এই বিষয়ে সুন্দর একটি কৌশল শিখে নিই। প্রত্যাশা রাখি, আমাদের নিতান্ত ক্ষুদ্র এই প্রচেষ্টা এবং পরামর্শ আপনাদের সামান্য হলেও কাজে আসবে। আল্লাহ পাক সকলকে উত্তম প্রতিদান প্রদান করুন।
আমাদের উদ্দেশ্য:
পবিত্র রমজান মাসে সম্পূর্ণ কুরআনুল কারিম অর্থসহ বুঝে পাঠ করা বা তিলাওয়াত করা।
কিভাবে পাঠ করতে হবে?
অর্থসহ বুঝে বুঝে প্রতি ওয়াক্ত ফরজ নামাজের পরে ৪ পৃষ্ঠা করে পড়ুন। তাতে ফলাফল কি দাঁড়ায়? ৫ ওয়াক্ত নামায x ৪ পৃষ্ঠা = ২০ পৃষ্ঠা। ২০ পৃষ্ঠা = ১ পারা।
১ পারা x ৩০ দিন = পুরা কুরআন শরিফ তিলাওয়াত খতম। আলহামদুলিল্লাহ, মা-শাআল্লাহ! কতই না সহজ! কতই না উত্তম!
হিম্মতে বলিয়ান হয়ে সিদ্ধান্ত নিতে হবে আজই:
আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআ'লা আমাদের আসন্ন রমজানের রহমত, বরকত এবং খাইরিয়্যাতকে পরিপূর্ণভাবে গ্রহন করার তাওফিক দান করুন। আমরা যারা পবিত্র কুরআন তিলাওয়াত করতে সক্ষম আমাদের এই ঐশি বানীর মর্মার্থ বুঝে পবিত্র রমজানে পুরো কুরআন মাজিদ তিলাওয়াত করার কিসমত দান করুন। আর যারা এখনও পর্যন্ত সুমধুর এ বানীর পাঠ শিখে নিতে পারিনি, হে প্রভূ মহিয়ান, আপনার দরবারে বিনীত প্রার্থনা, আপনি আমাদের অন্তরে এই পরিমান ভালোবাসা কুরআনে কারিমের প্রতি জাগরুক করে দিন যাতে ব্যক্তিগত, সাংসারিক, পারিবারিক এবং অন্যবিধ সকল বাধা-বিঘ্ন উপেক্ষা করে সমাগত রমজানে পবিত্র এই কালামুল্লাহ শিখে নেয়ার হিম্মতে দৃঢ়পদ হয়ে আজই সিদ্ধান্ত গ্রহন করে নিতে পারি। হে প্রভূ মহিয়ান, আপনি দয়া করে এ ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র আপনার বান্দার দুআ কবুল করুন।
নিবন্ধটি তৈরিতে সহায়তার জন্য কৃতজ্ঞতা:
কুরআনের আলো ডট কম, ইমাম ডট বিডি ডট পোর্টাল ও অন্যান্য।
ছবি কৃতজ্ঞতা: অন্তর্জাল।
২৪ শে এপ্রিল, ২০১৯ দুপুর ২:২৮
নতুন নকিব বলেছেন:
গুরুত্বপূর্ণ দু'টি হাদিস উল্লেখ করেছেন, যার প্রথমটিতে পবিত্র মাহে রমজানের ফজিলত ও বরকত সম্মন্ধে এবং দ্বিতীয়টিতে কুরআনুল কারিম শিক্ষা করা ও শিক্ষা দেয়ার গুরুত্ব বর্ণিত হয়েছে।
জাজাকুমুল্লাহু তাআ'লা খইর। ইনশাআল্লাহ, আপনার কথা রাখার চেষ্টা থাকবে। তারাবীহ নামাজ নিয়ে পোস্ট দেয়ার ইচ্ছে রয়েছে।
মন্তব্যে আপনাকে পেয়ে ভালো লাগলো। কৃতজ্ঞতাসহ শুভকামনা।
২| ২৪ শে এপ্রিল, ২০১৯ বিকাল ৪:৩৯
রাজীব নুর বলেছেন: খুব সুন্দর পোষ্ট।
শান্ত মাথায় পড়লাম।
২৫ শে এপ্রিল, ২০১৯ সকাল ৯:১৯
নতুন নকিব বলেছেন:
মোবারকবাদ।
অশেষ ধন্যবাদ, এত বড় পোস্ট পড়ার জন্য। আল্লাহ পাক আপনাকে উত্তম প্রতিদান দিন।
৩| ২৪ শে এপ্রিল, ২০১৯ বিকাল ৪:৪২
মাহমুদুর রহমান বলেছেন: আল্লাহুম্মা বারিক লানা ফী রজাবা ওয়া শা'বান, ওয়াবাল লিগনা রমাদন।
আল্লাহ্ আপনার মঙ্গল করুন, নতুন নকিব ভাই।
২৫ শে এপ্রিল, ২০১৯ সকাল ৯:২২
নতুন নকিব বলেছেন:
আল্লাহুম্মা বা-রিক লানা ফী রজাবা ওয়া শা'বান, ওয়া বাল্লিগনা রমাদন।
'হে আল্লাহ, আমাদের রজব এবং শা'বান মাসে বরকত দান করুন, আমাদের হায়াত বৃদ্ধি করে আমাদেরকে রমজান পর্যন্ত পৌঁছে দিন।'
জাজাকুমুল্লাহু তাআ'লা।
৪| ২৫ শে এপ্রিল, ২০১৯ ভোর ৬:১০
ডঃ এম এ আলী বলেছেন: পবিত্র কোরানের যে অসীম গুরুত্ব ও ফজিলত রয়েছে তা বলে শেষ করা যাবেনা , এই পোষ্টেও রয়েছে এটা পাঠের উপকারীতা সম্পর্কে অনেক মুল্যবান আলোচনা । পবিত্র রমজান মাসে অন্য সকল প্রকারের ইবাদতের সাথে পবিত্র কোরান পাঠ এবং পারলে কোরান খতম ( সম্পুর্ন কোরান পাঠ) অশেষ সোয়াবের কাজ তাতে কোন দ্বিমত নেই । তবে রমজান মাসে কোরান খতম কিংবা বেশী বেশী কোরান পাঠ করা সম্ভবপর না হলেও যদি পবিত্র কোরানের মাত্র একটি আয়াতকেও সঠিকভাবে অনুভব ও তা যথাযথভাবে আমল ( অনুসরন ও প্রতিপালন ) করা যায় তাহলে আমরা আমাদের ইহলৌকিক ও পারলৌকিক মঙ্গল সাধনে সক্ষমতা লাভ করতে পারব ইনসাল্লাহ । পবিত্র কোরানের সকল আয়াতই খুবই গুরুত্বপুর্ণ ও ফজিলতময় , তাই এর কোন একটি আয়াতের গুরুত্ব ও ফজিলত বলে শেষ করা যায়না, তার পরেও পবিত্র কোরানের একটি আয়াতের গুরুত্বের বিষয়ে সামান্য দু একটি কথা এখানে প্রসঙ্গক্রমে বলা হলো ।
পবিত্র কোরানে সুরা বাকারার ৪৩ নং আয়াতে বলা হয়েছে وَأَقِيمُوا الصَّلَاةَ وَآتُوا الزَّكَاةَ وَارْكَعُوا مَعَ الرَّاكِعِينَ ( তোমরা কায়েম কর নামাজ এবং দাও যাকাত, আর বিনয় প্রকাশ কর বিনয়ীদের সহিত) ।
আমরা সকলেই জানি সালাত এর এর মুল বিষয় হলো আল্লার প্রতি নিবেদিত ও অগ্রসর হওয়া, দোয়া করা এবং নিকটর্তীত হওয়া। সালাতকে আমরা মুলত নামাজ হিসাবে অভিহিত করি , আর সালাত ইসলামের ৫টি ফরজের মধ্যে একটি । সালাতের জাগতিক ও পারলৌকিক ফজিলত সন্পর্কে আমরা সকলেই কমবেশী ওয়াকেবহাল । সালাত তথা নামাজ আদায়ের জন্য নামাজীদরকে অযুর মাধ্যমে আভ্যন্তরীন ও বাহ্যিক দুদিক হতেই পবিত্র হতে হয় । তা না হলে নামাজ পরিপুর্ণ হবেনা । এ্ই অযুর সার্বিক উপকারীতার কথাও বলে শেষ করা যাবেনা । আর সালাত সেতো আরো গভীর অর্থবহ ।
ইসলাম পরিপূর্ণ এক জীবন ব্যবস্থা । মানুষের জন্য যা কল্যাণকর ও হিতকর সে বিষয়ে পবিত্র কোরান গুরুত্বারোপ করেছে এবং যাবতীয় অকল্যাণ ও ক্ষতিকর বিষয় হতে মানবজাতিকে সর্তক করেছে। এই আয়াতে সালাতের পাশাপাশি বলা হয়েছে যাকাতের কথা , আর যাকাতের কথা বলতে গেলে প্রসঙ্গক্রমে মানব জীবনের জন্য রিযিক সন্ধান তথা অর্থ উপার্জনের কথাও চলে আসে । মানবজীবনে রিযিকের গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তাও তাৎপর্যপূর্ণ। মহান আল্লাহ তা‘আলা তাঁর নির্ধারিত ফরজ ইবাদত ( নামায) সম্পন্ন করার পর জীবিকা অন্বেষনে জমীনে ছড়িয়ে পড়তে নির্দেশ দিয়েছেন। যাতে সর্বশ্রেষ্ঠ জীব নিজেই জীবিকা অর্জনে ব্রতী হয় , নিজের পরিশ্রম লব্দ উপার্জন সর্বোত্তম উপার্জন বলে গন্য। তবে নিশ্চয় উপার্জনের পন্থা শরীয়াত নির্ধারিত পন্থায় হতে হবে। এমন উপার্জনকে ইসলাম অবৈধ ঘোষনা করেছে, যাতে প্রতারনা, মিথ্যা, ধোঁকাবাজি, জনসাধারণের অকল্যাণ সর্বোপরি জুলুম রয়েছে। দুনিয়ার জীবনে অবৈধ পন্থায় উপার্জন করে সুখ-সাচ্ছন্দ লাভ করলেও পরকালীন জীবনে রয়েছে এর জন্য জবাবদিহিতা ।সে লক্ষ্যে ইসলাম হালাল উপার্জনের জন্য অপরিসীম গুরুত্ব প্রদান করেছে।
মানুষের মৌলিক চাহিদার (যথা খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা, চিকিৎসা ) জন্য মানুষকে বেছে নিতে হয় সম্পদ উপার্জনের নানাবিধ পন্থা। মানুষের জীবন নির্বাহের চালিকা শক্তি হিসেবে রিযিকের সন্ধান মানব জীবনের এক অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ হিসেবে পরিগণিত। মহান আল্লাহ মানুষকে এর গুরুত্ব অনুধাবন ও বোধগম্য করার নিমিত্তে পবিত্র কুরআনে সালাতের পাশাপাশি যাকাত তথা অর্থের উল্লেখ করেছেন । শুধু তাই নয়, মহান আল্লাহ অর্থনৈতিক বিধানও নির্দেশ করেছেন। ফলে কোরআনুল কারিমকে একটি অর্থবিদ্যার মহাকোষ বললেও অত্যুক্তি হবে না। মানুষ কিভাবে উপার্জন করবে, কোন পন্থায় তা ব্যয় করবে এবং উপার্জনের ক্ষেত্রে যাবতীয় অর্জনীয় ও বর্জনীয় বিষয়াবলী সম্পর্কে সুষ্পষ্ট নির্দেশনা কোরানে বিদ্যমান। তাইতো ব্যক্তির উপার্জিত সম্পদে তিনি যাকাত ফরয করেছেন, যেন সম্পদ এক শ্রেণির লোকদের মাঝে সীমাবদ্ধ না থাকে। আল্লাহ তা‘আলা ফরয ইবাদত সমাপনান্তে জীবিকা নির্বাহে উপার্জন করার লক্ষ্যে যমিনে ছড়িয়ে পড়তে নির্দেশ দিয়েছেন।
জীবিকা উপার্জনের লক্ষ্যে হালাল পন্থার কথাও কোরানে বলা হছে । হালাল পন্থায় উপার্জন সমাজ ব্যবস্থায় ধনী দরিদ্রের মাঝে সুষম ভারসাম্য প্রদান করে যাকাত ব্যবস্থায়, এ ব্যবস্থায় কৃষক, দিন- মজুর, ক্রেতা-বিক্রেতা, শ্রমিক-মালিক এবং অধস্তনদের সাথে উর্ধ্বতনদের সুদৃঢ় ও সংগতিপূণ সর্ম্পক তৈরী হয়। ফলে সকল শ্রেণীর নাগরিকই তাদের ন্যায্য অধিকার প্রতিষ্ঠা করার সুযোগ পায় এবং সমাজ সংসারে নেমে আসে শান্তির সুবাতাস।
আবার রিযিকের প্রয়োজনে উপার্জন হালাল হলেই চলবে না; বরং তা অবশ্যই তাইয়্যিব (পবিত্র ও উত্তম) হতে হবে। এখানে তাইয়্যিব বলতে ভেজালমূক্ত স্বাস্থসম্মত বিষয়াবলী বুঝায় । অর্থাৎ এমন উপায় অবলম্বন করতে হবে যা মূলগত ভাবেই নির্ভেজাল, খাটি ও পবিত্র হতে হবে । আবার উপার্জনের ক্ষেত্রে গ্রহণীয় উপায় ও মাধ্যমটিও অবশ্যই বৈধ পন্থায় হতে হবে। এখানে উলেখ্য যে, দু’আ ইসলামে অন্যতম একটি ইবাদতে পরিণত হয়েছে, কারণ দোয়ার মাধ্যমে আল্লাহর সাথে বান্দার গভীর প্রেম নিবেদন করা চলে এবং যাবতীয় প্রয়োজন পূরণে সহায়ক হয়। এ গুরুত্বপূর্ণ কর্মটি আল্লাহর দরবারে গৃহীত হতে হলে উপার্জন অবশ্যই হালাল হতে হবে। কেননা আল্লাহ পবিত্র। পবিত্র না হলে তিনি কোন কিছুই গ্রহণ করেন না, অতএব অবৈধভাবে উপার্জন যারা করে তাদের খাদ্য সহ রিযিকের জন্য প্রয়োজনীয় সকল উপার্জনই হয়ে যাবে হারাম দ্বারা পুষ্ট।
আয়াতটির শেষ অংশে বলা হয়েছে বিনয়ের কথা ।বিনয় হলো দম্ভ-অহঙ্কারের বিপরীত। বিনয় অর্থ, অন্যদের চাইতে নিজেকে ক্ষুদ্র জ্ঞান করা। যারা বিনয়ী তাদের চালচলন হবে আল্লাহ তায়ালার অসহায় বান্দাদের মতো। অন্যদের সাথে আচার ব্যবহার করবে আনত ও বিনম্র চিত্তে। চালচলন বা গতিবিধিতে যেমন বিনয় প্রকাশ পায়, তেমনি কথাবার্তায়ও প্রকাশ পায়। এমন কি উঠা-বসাতেও। সর্বোপরি বিনয়ী হতে হবে সৃষ্টি কর্তা রাব্বুল আলামীন ও তাঁর সকল প্রিয় বান্দার প্রতি ।
তাই বলা চলে রমজান মাসে যথাযথভাবে রোজা পালন ও অন্যবিদ ইাবদতের সাথে পবিত্র কোরান তেলাওয়াত নিদেন পক্ষ্যে এর একটি আয়াতও যদি পাঠ করা যায়, সে সাথে তার অর্থ সঠিক ভাবে অনুধাবন করে তা যথাযথভাবে অনুসরন ও প্রতিপালন করা যায় তাহলে ইসলাম দুনিয়ার বুকে শান্তির ধর্ম হিসাবে মর্যাদার আসনে সমাসীন থাকবে চিরকাল ।
মুল্যবান পোষ্টটির জন্য ধন্যবাদ । প্রিয়তে গেল
আল্লাহ আপনার মঙ্গল করুন ।
২৫ শে এপ্রিল, ২০১৯ সকাল ৯:২৫
নতুন নকিব বলেছেন:
আলী ভাই,
কৃতজ্ঞতা অনি:শেষ।
আপনার সুচিন্তিত, শ্রমলব্ধ এবং সুদীর্ঘ মন্তব্যে আপ্লুত!
বরাবরের মত এই পোস্টে আপনার রেখে যাওয়া মন্তব্য থেকে অনেকের জন্য শিক্ষনীয় বিষয় রয়েছে। আল্লাহ পাক আপনাকে
উত্তম প্রতিদান প্রদান করুন। শুভকামনা সবসময়।
৫| ২৫ শে এপ্রিল, ২০১৯ সকাল ৮:১৯
ঢাকার লোক বলেছেন: রমজান মাস আসার আগে আগে আপনার এ সুন্দর পোস্টার জন্য মুবারকবাদ। রমজান মাস অতীব বরকতময় মাস, ক্ষমা ও নাজাতের মাস। এ মাসে আমাদের প্রত্যেককে ভালো কাজ বেশি বেশি করে করা অবশ্যি দরকার। তবে "এ মাসের একটি নফল আমল অন্য মাসগুলোর একটি ফরজের তুল্য । এ মাসের একটি ফরজ অন্য মাসের সত্তরটি ফরজের সমান। " এ বক্তব্য সম্পর্কিত হাদীসটি আলেমগণের মতে দায়িফ বা মুনকার (দুর্বল) এবং অগ্রহণযোগ্য ! দুর্বল হাদিস উল্লেখের সময় আমাদের সতর্কতা অবলম্বন করা জরুরি যেমন লিংকে দেয়া প্রশ্নোত্তরের শেষ অংশে বলা হয়েছে ,
https://islamqa.info/en/answers/21364/weakness-of-a-hadeeth-about-the-virtues-of-ramadaan
২৫ শে এপ্রিল, ২০১৯ সকাল ৯:৩৫
নতুন নকিব বলেছেন:
প্রথমেই আপনার আগমন এবং সুপরামর্শমূলক মন্তব্য রেখে যাওয়ার জন্য ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা।
এই হাদিসখানার ব্যাপারে তাহকিক করে নেয়ার ইচ্ছে থাকলো। আর আপনি তো অবশ্যই জানেন, কোনো স্বত:সিদ্ধ এবং সুপ্রমানিত (যেমন, ফরজ রোজার অসংখ্য ফজিলত কুরআন হাদিসের অকাট্য দলিল দ্বারা সন্দেহাতিতভাবে প্রমানিত এবং প্রতিষ্ঠিত) আমলের ফজিলত বর্ণনায় দুর্বল কোনো হাদিসও গ্রহন করার ব্যাপারে মুহাক্কিক উলামায়ে কিরামের সম্মতি রয়েছে।
যাই হোক, আপনি বিষয়টিতে দৃষ্টি আকর্ষন করায় খুশি হলাম। ভালো থাকবেন সবসময়। পাশে থেকে পরামর্শ দিয়ে যাবেন আশা করি।
৬| ২৫ শে এপ্রিল, ২০১৯ সকাল ৮:২০
ঢাকার লোক বলেছেন: Click This Link
২৫ শে এপ্রিল, ২০১৯ সকাল ১০:০২
নতুন নকিব বলেছেন:
প্রিয় ভাই, আপনার সদয় অবগতি ও অনুধাবনের জন্য উপরোক্ত হাদিসটির তাহক্কিকে নিম্নোক্ত বিষয়গুলো ভেবে দেখার অনুরোধ করছি-
রমজানের ফজিলতের বিষয়ে বর্ণিত- রমজানের নফল আদায় করা অন্য সময়ে ফরজ আদায়ের সমান। আর একটি ফরজ আদায় করা সত্তরটি ফরজ আদায়ের সমান। -এ হাদীসটি জঈফ বা দুর্বল, তবে জাল তথা বানোয়াট নয়। আর আপনার অবশ্যই জানা থাকার কথা, জঈফ তথা দুর্বল হাদীস ফজিলতের ক্ষেত্রে গ্রহণযোগ্য মর্মে জমহুর মুহাদ্দিসীনগন একমত পোষণ করেছেন।
প্রিয়তম রাসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কি একথা কোথাও বলে গেছেন যে, তাঁর হাদীসসমূহ সহীহ সূত্রে কেবল সিহাহ সিত্তার সংকলকগণই একত্র করবেন? না, তিনি একথা কখনও বলেননি। কোথাও বলে যাননি। তিনি এমন কথাও কোথাও বলেছেন বলে প্রমান পাওয়া যায় না যে, সিহাহ সিত্তাহ ব্যতিত আর কারো কিতাবে সংকলিত হাদীস সহীহ হতে পারবে না। সেগুলোকে সহিহ বলা যাবে না। এমন ধরণের কোনো কথা আমাদের জানামতে কোনো মুহাদ্দিসও আজ পর্যন্ত বলেননি। আর আমাদের দৃষ্টিতে এমনসব কথা চিন্তায় স্থান দেয়াও হাদীস শাস্ত্র সম্পর্কে হীন মানসিকতা এবং মুর্খতার প্রকাশ বৈ কিছু নয়- যা কোনো ক্রমেই কাম্য নয়।
বর্ণিত হাদীসখানা রমজান সম্পর্কে রাসূলে মাকবুল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর একটি দীর্ঘ খুতবায় বর্ণিত হাদীসের অংশ বিশেষ। হাদিসের আলোচ্য অংশটুকু আসুন, প্রথমেই আরবি ইবারতসহ দেখে নিই-
عَنْ سَلْمَانَ الْفَارِسِيِّ قَالَ: خَطَبَنَا رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ آخِرَ يَوْمٍ مِنْ شَعْبَانَ فَقَالَ: يَا أَيُّهَا النَّاسُ إِنَّهُ «قَدْ أَظَلَّكُمْ شَهْرٌ عَظِيمٌ شَهْرٌ مُبَارَكٌ فِيهِ لَيْلَةٌ خَيْرٌ مِنْ أَلْفِ شَهْرٍ فَرَضَ اللَّهُ صِيَامَهُ وَجَعَلَ قِيَامَ لَيْلِهِ تَطَوُّعًا , فَمَنْ تَطَوَّعَ فِيهِ بِخِصْلَةٍ مِنَ الْخَيْرِ كَانَ كَمَنْ أَدَّى فَرِيضَةً فِيمَا سِوَاهُ , وَمَنْ أَدَّى فِيهِ فَرِيضَةً كَانَ كَمَنْ أَدَّى سَبْعِينَ فَرِيضَةً , وَهُوَ شَهْرُ الصَّبْرِ , وَالصَّبْرُ ثَوَابُهُ الْجَنَّةُ الخ
'হযরত সালমান ফারসি রাদিআল্লাহু তাআ'লা আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম শাবানের শেষ দিন আমাদের সামনে খুতবা দিলেন। তাতে বললেন, হে লোক সকল! নিশ্চয় তোমাদের উপরে ছায়া বিস্তার করছে একটি মহান, বরকতময় মাস। যাতে রয়েছে এমন একটি রাত- যা হাজার মাসের চেয়ে শ্রেষ্ঠ। আল্লাহ তাআ'লা এর দিনের বেলায় রোযা ফরজ করেছেন আর রাতে কিয়ামকে করেছেন নফল। সুতরাং, এ মাসে যে ব্যক্তি কোন নফল আদায় করবে সে যেন অন্য মাসে একটি ফরজ আদায় করল। আর যে ব্যক্তি এ মাসে একটি ফরজ আদায় করল, সে যেন অন্য মাসে সত্তুরটি ফরজ আদায় করল। এ মাস হল ছবরের মাস। আর ছবরের পুুরস্কার হল জান্নাত।' {মুসনাদুল হারেস, হাদীস নং-৩২১, শুয়াবুল ঈমান, হাদীস নং-৩৩৩৬, সহীহ ইবনে খুজাইমা, হাদীস নং-১৮৮৭, কানযুল উম্মাল, হাদীস নং-২৩৭১৪, মিশকাতুল মাসাবীহ, হাদীস নং-১৯৬৫}
এবার আসুন, হাদিসখানা সম্মন্ধে প্রখ্যাত মুহাদ্দিসীনে কেরামগনের অভিমতগুলোর দিকে দৃষ্টি দিই-
এক.
আল্লামা দিময়াতী রহমাতুল্লাহি আলাইহি বলেন, এ হাদীসের সূত্রে আলী বিন জায়েদ বিন জাদআন রয়েছে। যাকে জমহুর মুহাদ্দিসীনগণ জঈফ বললেও তারা হাদীসটিকে হাসান বলেছেন। {আল মুত্তাজিরুর রাবেহ-১৩৩}
দুই.
আল্লামা হায়তামী মক্কী রহমাতুল্লাহি আলাইহি বলেন, এর সনদে এমন ব্যক্তি রয়েছে যারা সহীহ, ইমাম তিরমিজী রহমাতুল্লাহি আলাইহি একে হাসান বলেছেন, তবে অন্যরা জঈফ বলেছেন। {আয যাওয়াযের-১/১৯৭}
তিন.
ইবনে হাজার আসকালানী রহমাতুল্লাহি আলাইহি বলেন, এটি জঈফ। {তালখীসুল হাবীর-৩/১১২১}
সুতরাং, বুঝা গেল যে, হাদীসটি জঈফ হলেও জাল নয়। আর জঈফ হাদীস ফযীলতের ক্ষেত্রে গ্রহণযোগ্য। এ ব্যাপারে জমহুর মুহাদ্দিসীনগণ একমত। যেমন-
সহীহ মুসলিমের ব্যাখ্যাকার ইমাম নববী রহমাতুল্লাহি আলাইহি বলেন-
قال العلماء من المحدثين والفقهاء وغيرهم يجوز ويستحب العمل فى الفضائل والترغيب والترهيب بالحديث الضعيف ما لم يكن موضوعا (الأذكار-৭-৮<
'মুহাদ্দিসীন ও ফুক্বাহায়ে কেরাম এবং অন্যান্য ওলামায়ে কেরাম বলেন-দুর্বল হাদীসের উপর ফাযায়েল ও তারগীব তথা উৎসাহ প্রদান ও তারহীব তথা ভীতি প্রদর্শন এর ক্ষেত্রে আমল করা জায়েজ ও মুস্তাহাব। যখন উক্ত হাদীসটি জাল না হয়।' {আল আজকার-৭-৮}
এ মূলনীতিটি নিম্ন বর্ণিত বিজ্ঞ ব্যক্তিগণও বলেছেন-
১- মোল্লা আলী কারী রহমাতুল্লাহি আলাইহি -মওজুয়াতে কাবীর-৫, শরহুন নুকায়া-১/৯
২- ইমাম হাকেম আবু আব্দুল্লাহ নিশাপুরী রহমাতুল্লাহি আলাইহি -মুস্তাদরাকে হাকেম-১/৪৯০
৩- আল্লামা সাখাবী রহমাতুল্লাহি আলাইহি- আল কাওলুল বাদী’-১৯৬
৪- হাফেজ ইবনে তাইমিয়া হাম্বলী রহমাতুল্লাহি আলাইহি- মাজমুআ ফাতওয়া ইবনে তাইমিয়া-১/৩৯
আহলে হাদীস নামধারী গায়রে মুকাল্লিদগণও এ মূলনীতিতে একমত
১- শায়খুল কুল মিয়া নজীর হুসাইন সাহেব দেহলবী রহমাতুল্লাহি আলাইহি- ফাতওয়া নজীরিয়া-১/২৬৫
২- নওয়াব সিদ্দীক হাসান খান- দলীলুত তালেব আলাল মাতালিব-৮৮৯ {নওয়াব সিদ্দীক হাসান খান সাহেবকে গায়রে মুকাল্লিদদের আকাবীরদের অন্তর্ভূক্ত হিসেবে ধর্তব্য করা হয়। {আপকি মাসায়েল আওর উনকা হল কুরআন ওয়া সুন্নাত কি রওশনী মে, লেখক-মুবাশশির আহমাদ রাব্বানী-২/১৮১}
৩- মাওলানা সানাউল্লাহ ওমরতাসরী রহমাতুল্লাহি আলাইহি- আখবারুল হাদীস-১৫ শাওয়াল ১৩৪৬ হিজরী।
৪- হাফেজ মুহাম্মদ লাখওয়ী রহমাতুল্লাহি আলাইহি- আহওয়ালুল আখরাস-৬
৫- মাওলানা আব্দুল্লাহ রূপরী সাহেব রহমাতুল্লাহি আলাইহি- ফাতওয়া আহলে হাদীস-২/৪৭৩, হাদিসখানার তাহক্কিক প্রণয়নে কৃতজ্ঞতা, আহলে হক্ক মিডিয়ার প্রতি।
অতএব, আশা করছি- এই তাহক্কিক দেখার পরে অত্র হাদিসের বিষয়ে আপনার ধারণা স্পষ্ট হবে।
আল্লাহ পাক আমাদের প্রতিটি নেক আমল কবুল করুন।
অনেক ভালো থাকুন।
৭| ২৫ শে এপ্রিল, ২০১৯ সকাল ৯:৩৮
নজসু বলেছেন:
আস সালামু আলাইকুম।
খুব সুন্দর পোষ্ট।
২৫ শে এপ্রিল, ২০১৯ সকাল ১০:০৪
নতুন নকিব বলেছেন:
ওয়াআলাইকুমুসসালামু ওয়ারহমাতুল্লাহ।
উপস্থিতি ভালো লাগলো। অনেক ভালো থাকুন।
৮| ২৫ শে এপ্রিল, ২০১৯ সকাল ১১:৪৭
আবদ্ধ বলেছেন: খুবই ভালো এবং প্রয়োজনীয় একটি পোষ্ট। আশা করি,এমন লেখা ভবিষ্য আরও পাবো।
২৫ শে এপ্রিল, ২০১৯ দুপুর ২:১২
নতুন নকিব বলেছেন:
এ অধমের কোনো পোস্টে মন্তব্যে আসা আপনার সম্ভবত: এটাই প্রথম। প্রেরণামূলক মন্তব্যে কৃতজ্ঞতা। এই ব্লগ ঠিকানায় আপনাকে স্বাগত। সাদর সম্ভাষন।
আপনার ব্লগ ঘুরে এলাম। এখনও ঠিকই দেখলাম 'আবদ্ধ'ই আছেন আপনি। কোনো পোস্ট দেননি এ পর্যন্ত। কোন বিষয়টি আপনাকে 'আবদ্ধ' করে রেখেছে? পোস্ট দিন সম্ভব হলে। আপনার থেকে অনেক সুন্দর কিছু পাব আশা করি।
ভালো থাকুন সবসময়।
৯| ২৫ শে এপ্রিল, ২০১৯ সন্ধ্যা ৭:০৫
ঢাকার লোক বলেছেন: আমার মন্তব্যটাকে গুরুত্ব দিয়ে তার উত্তর দেয়ার জন্য অনেক ধন্যবাদ ।
ফযীলত বর্ণনাকারী সহী হাদিসের আমল করা আমাদের জন্য বেশি উপকারী কেননা ঐগুলোর ফজিলত নিশ্চিত, পক্ষান্তরে দয়িফ বা দুর্বল হাদিস অনেকটাই অনিশ্চিত ! তাহাজ্জুতের নামাজের বা সালাতুল লাইলের সওয়াব নিশ্চিত, অপর পক্ষে দুর্বল হাদিসের কারণে সালাতুস তাসবীহর বর্ণনাকৃত ফজিলত সন্দেহযুক্ত । এমতাবস্থায় আমাদের দরকার সহী হাদিসের আমল করার প্রতি অধিক যত্নবান হওয়া। কোনো বিশেষ কাজের জন্য কোরান ও সহী হাদিসে যেখানে যতটুকু গুরুত্ব দেয়া হয়েছে সেটুকু উল্লেখ করাই যথেষ্ট, তার চেয়ে বেশি গুরুত্ব দেয়ার জন্য স্বীকৃত দায়িফ/ মুনকার হাদিসের রেফারেন্স দেয়ার প্রয়োজন আছে বলে আমার মনে হয়না । বিশেষ করে কোনো দুর্বল হাদিস দুর্বল সেটা না উল্লেখ করে গণমাধ্যমে প্রচার করা থেকে আমাদের সাবধান হওয়া আবশ্যক ।
আল্লাহ পাক আমাদের সবাইকে সঠিক জ্ঞান লাভ এবং সেই মত আমল করার তৌফিক দান করুন যেন আমরা সবাই দুনিয়া ও আখিরাতে সাফল্য লাভ করতে পারি, আমিন ।
আল্লাহ পাক আপনাকে উত্তম প্রতিদান দিন।
©somewhere in net ltd.
১| ২৪ শে এপ্রিল, ২০১৯ দুপুর ২:২১
পবিত্র হোসাইন বলেছেন: ১। হযরত আবু হুরায়রা (রা) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ(সোইরশাদ করেন, তোমাদের নিকট রমজান মাস উপস্থিত। এটা এক অত্যন্ত বারাকতময় মাস। আল্লাহ তা’য়ালা এ মাসে তোমাদের প্রতি সাওম ফরজ করেছেন। এ মাসে আকাশের দরজাসমূহ উন্মুক্ত হয়ে যায়, এ মাসে জাহান্নামের দরজাগুলো বন্ধ করে দেওয়া হয় এবং এ মাসে বড় বড় শাইতানগুলোকে আটক রাখা হয়।আল্লাহর জন্যে এ মাসে একটি রাত আছে, যা হাজার মাসের চেয়েও অনেক উত্তম। যে লোক এ রাত্রির মহা কল্যাণলাভ হতে বঞ্চিত থাকল, সে সত্যিই বঞ্চিত ব্যক্তি। (সুনানুন নাসায়ী:২১০৬)
২। রমাদান মাস অপরকে কুরআন শেখানোর উত্তম সময়। এ মাসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজে সাহাবীদেরকে কুরআন শিক্ষা দিতেন। এ বিষয়ে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: ‘‘তোমাদের মধ্যে সর্বোত্তম ব্যক্তি সেই, যে নিজে কুরআন শিক্ষা করে ও অপরকে শিক্ষা দেয়’’ [সহীহ আল-বুখারী : ৫০২৭]
-প্রিয় নতুন নকিব ভাই, তারাবীহ নামাজ নিয়ে কিছু লিখুন।