নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আলহামদুলিল্লাহ। যা চাইনি তার চেয়ে বেশি দিয়েছেন প্রিয়তম রব। যা পাইনি তার জন্য আফসোস নেই। সিজদাবনত শুকরিয়া। প্রত্যাশার একটি ঘর এখনও ফাঁকা কি না জানা নেই, তাঁর কাছে নি:শর্ত ক্ষমা আশা করেছিলাম। তিনি দয়া করে যদি দিতেন, শুন্য সেই ঘরটিও পূর্নতা পেত!

নতুন নকিব

যবে উৎপীড়িতের ক্রন্দল-রোল আকাশে বাতাসে ধ্বনিবে না, অত্যাচারীর খড়্গ কৃপাণ ভীম রণ-ভূমে রণিবে না- বিদ্রোহী রন-ক্লান্ত। আমি সেই দিন হব শান্ত।

নতুন নকিব › বিস্তারিত পোস্টঃ

লাইলাতুল কদর: আল কুরআন নাজিলের রাত, হাজার মাসের চেয়ে উত্তম পূন্যময় মহিমান্বিত এক রাত

২৭ শে মে, ২০১৯ সকাল ১০:২২



লাইলাতুল কদর কি?
লাইলাতুল কদর। হাজার মাসের চেয়েও উত্তম পূন্যময় মহিমান্বিত এক রাত। মহাগ্রন্থ আল কুরআন নাযিলের মাসে কুরআন নাযিলের রাত। এ রাতে গুরুত্বপূর্ণ ও প্রজ্ঞাপূর্ণ বিষয় বণ্টিত ও স্থিরিকৃত হয়। ফেরেশতাগণ ও রূহ আপন রবের অনুমতিক্রমে অবতীর্ণ হন প্রত্যেক বিষয় নিয়ে। এ রাতের শুরু থেকে শেষ, অর্থাত ফজর পর্যন্ত শুধুই শান্তি আর শান্তি। যে ব্যক্তি এই রাতের কল্যাণলাভের প্রচেষ্টা থেকে নিজেকে বিরত রাখলো ও বঞ্চিত হলো সে প্রকৃতই বঞ্চিত এবং ভাগ্যাহত। সে প্রকৃতই হতভাগা।

আল কুরআনের বর্ণনায় লাইলাতুল কদর:
শবে কদর ও কুরআন অবতরণ এবং এই রাতের ফজিলত সম্পর্কে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআ'লা কুরআনুল হাকিমে ‘সূরাতূল কদর’ নামে একটি স্বতন্ত্র সূরাহ নাজিল করেছেন। তাতে বলেছেন: ‘নিশ্চয়ই আমি কুরআন নাজিল করেছি মর্যাদাপূর্ণ কদর রজনীতে। আপনি কি জানেন, মহিমাময় কদর রজনী কী? মহিমান্বিত কদর রজনী হাজার মাস অপেক্ষা উত্তম। সে রাতে ফেরেশতাগণ রূহ (হজরত জিবরাইল আলাইহিসসালাম সমভিব্যাহারে অবতরণ করেন; তাঁদের প্রভু মহান আল্লাহর নির্দেশ ও অনুমতিক্রমে, সকল বিষয়ে শান্তির বার্তা নিয়ে। এই শান্তির ধারা চলতে থাকে উষার উদয় পর্যন্ত।' (সুরা-৯৭ কদর, আয়াত: ১-৫)।

মহিমান্বিত প্রত্যেক বিষয়েই থাকে প্রচ্ছন্নতার অলিখিত ছোঁয়া:
মহিমান্বিত প্রত্যেক বিষয়ে প্রচ্ছন্নতার একটি অলিখিত ছোঁয়া থাকে। অতিমূল্যবান কোনো কিছুই সহজলভ্য থাকে না। তাকে খুঁজে নিতে হয়। তার সন্ধানে সাধনা বিনিয়োগ করতে হয়। তার প্রাপ্তি নিশ্চিত করতে ত্যাগের মহিমায় উজ্জিবিত হতে হয়। আর এর ভেতরেই, এই যে মহিমান্বিত কিছু খুঁজে বের করা, এতে আনন্দ আছে, প্রতিদান আছে, সাওয়াব আছে। আল্লাহ পাক আমাদের অনুসন্ধানী মন দেখতে চান। আমাদের আবেগ-অনুসন্ধিতসা-পূণ্যলাভের আকাঙ্খা দেখে সেই অনুপাতে আমাদের সাওয়াব দিতে চান। আমাদের তাই এ রাত অনুসন্ধান করতে হয়। চেষ্টা, সাধনা ও শ্রম বিনিয়োগের মাধ্যমে পূর্ণ করে নিতে হয় নিজের শূন্য পাত্র। সাওয়াবের ভান্ডারে অবগাহন করে নিজের জন্য লিখিয়ে নিতে হয় আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআ'লার সন্তুষ্টি এবং জান্নাতের বরাদ্দ।

হাদিসের আলোকে লাইলাতুল কদরের পরিচয় এবং কিছু ফজিলত:
আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআ'লার প্রিয়তম মুহাম্মাদুর রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামও এ রাত অনুসন্ধান করতেন। এ রাতের অনুসন্ধানে মসজিদে ই'তিকাফ করতেন তিনি। এক হাদিসে এসেছে-

এক. উম্মু সালামা রাদিআল্লাহু তাআ'লা আনহা থেকে বর্ণিত, নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম প্রথম বছর প্রথম দশকে ই'তিকাফ করেন, তারপর মধ্যবর্তী দশকে ই'তিকাফ করেন, তারপর শেষ দশকে ই'তিকাফ করেন এবং বলেন, 'আমি এই শেষ দশকে লাইলাতুল কদর দেখেছি, তারপর ভুলে গেছি'। উম্মু সালামা রাদিআল্লাহু তাআ'লা আনহা বলেন, তারপর আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ওফাত পর্যন্ত শেষ দশকে ই'তিকাফ করেন (তাবারানি, আল মু’জামুল কাবীর, হাদীস-৯৯৪; হাইসামি, মাজমাউয যাওয়ায়িদ, হাদীস-৫০২৪)।

দুই. নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর উম্মাতকে নির্দেশনা দিয়ে বলেন, 'কেউ যদি লাইলাতুল কদর অনুসন্ধান করতে চায় সে যেন শেষ দশকে তা অনুসন্ধান করে।' (সহীহ মুসলিম, হাদীস-১১৬৫)।

তিন. অন্য বর্ণনায় তিনি বলেন, 'আমাকে লাইলাতুল কদর দেখানো হয়েছে তারপর ভুলিয়ে দেওয়া হয়েছে। সুতরাং তোমরা শেষ দশকের সকল বেজোড় রাতে তা অনুসন্ধান করো।' (সহীহ বুখারি, হাদীস-২০১৬; সহীহ মুসলিম, হাদীস-১১৬৭)।

এমনকি অন্য বর্ণনায় শেষ দশকের সকল বেজোড় রাতের কথা আলাদা আলাদা করে বলা হয়েছে।

চার. উবাদা ইবন সামিত রা. থেকে বর্ণিত, তিনি নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে লাইলাতুল কদর সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করেন। তখন নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘রমজানে; তোমরা তা অনুসন্ধান করো শেষ দশকে। তা রয়েছে কোনো বেজোড় রাতে- একুশ, তেইশ, পঁচিশ, সাতাশ, ঊনত্রিশ অথবা শেষ রাতে। যে ব্যক্তি লাইলাতুল কদর অনুসন্ধানে ঈমান ও ইহতিসাবের সাথে রাতের কিয়াম বা সালাত আদায় করবে এবং তা পেয়ে যাবে তার পূর্বাপর পাপরাশি ক্ষমা করা হবে'। (মুসনাদ আহমাদ, হাদীস-২২৭১৩; হাইসামি, মাজমাউয যাওয়ায়িদ, হাদীস-৫০৪০)।

সুন্নাতে নববির অনুসরণে আমাদের তাই উচিৎ লাইলাতুল কদর অনুসন্ধানে পুরো শেষ দশক জুড়ে ই'তিকাফ করা। তা নাহলে অন্তত শেষ দশকের রাতগুলো, বিশেষ করে বেজোড় রাতগুলো গুরুত্বের সাথে ইবাদত-বন্দেগির মাধ্যমে কাটানো।

পাঁচ. আয়িশা রা. বলেন, 'শেষ দশক আসলে নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কোমর বেঁধে নিতেন, নিজে বিশেষভাবে ইবাদতে রাত জাগতেন এবং পরিবারবর্গকেও জাগিয়ে দিতেন।' (সহীহ বুখারি, হাদীস-২০২৪; সহীহ মুসলিম, হাদীস-১১৭৪)।

কিন্তু আমরা শুধু সাতাশের রাতকে বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে রাষ্ট্রীয়ভাবে ছুটি ঘোষণা করে সামাজিক নানা আয়োজনের মাধ্যমে উৎসাহ-উদ্দীপনার সাথে এই একটি রাতকে পালন করে যাচ্ছি। এভাবে শুধু এক রাতে অনুসন্ধান সীমাবদ্ধ রাখায় লাইলাতুল কদর হারিয়ে ফেলার সম্ভাবনাই বেশি। এমনকি এক রাতে অনুসন্ধান সীমাবদ্ধ হয়ে যাবে এ আশঙ্কাতেই নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কদরের রাতকে প্রচ্ছন্ন রেখেছেন বলেও হাদীসে বর্ণিত হয়েছে।

ছয়. আব্দুল্লাহ ইবন উনাউস রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, 'হে আল্লাহর রাসূল, আমাকে বলুন, কোন রাতে লাইলাতুল কদর অনুসন্ধান করা হবে?' নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, 'ওই রাত ছাড়া অন্য রাতে লোকেরা নামাজ ছেড়ে দেবে এই আশঙ্কা না করলে আমি তোমাকে বলতাম।' (তাবারানি, আল মু’জামুল কাবীর, হাদীস-১৪৯২৫; হাইসামি, মাজমাউয যাওয়ায়িদ, হাদীস-৫০৬২)।

সাত. রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: ‘এ মাসে এমন একটি রাত রয়েছে যা হাজার মাস অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ, যে ব্যক্তি এই রাত্রির কল্যাণ থেকে বঞ্চিত, সেসব কল্যাণ থেকে বঞ্চিত’ (নাসায়ী: ৪/১২৯, মুসনাদে আহমাদ: ২/২৩০, ইব্নমাজা)।

আট. আবু হুরাইরা রা: থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, 'রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে প্রতি বছরে (রমজান মাসে) একবার কুরআন কারিম পড়ে শোনানো হতো। তাঁর ইনতিকালের বছর কুরআনুল কারিম শোনানো হয়েছিল দু'বার। তিনি প্রতি বছর (রমজান মাসে) দশ দিন ই'তিকাফ করতেন। কিন্তু যে বছর তিনি ইনতিকাল করেছেন, সে বছর তিনি ই'তিকাফ করেছেন বিশ দিন।' (বুখারি)

নয়. আনাস রা: থেকে বর্ণিত, 'রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রত্যেক রামাদান মাসের শেষ দশকে ই'তিকাফ করতেন। কিন্তু এক বছর তিনি ই'তিকাফ করতে পারলেন না, তাই পরবর্তী বছর তিনি বিশ দিন ই'তিকাফ করলেন।' (আবুদাউদ)

ইবনেমাজা শরিফে উপরের এই হাদিসটিই উবাই বিন কা’ব থেকে বর্ণনা করেছেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম লাইলাতুল কদরের ফজিলত পাওয়ার জন্য রমজানের শেষ দশকে দুনিয়ার অন্যান্য কাজকর্ম ছেড়ে মসজিদে গিয়ে ই'তিকাফে বসতেন, রাতভর ইবাদতে মগ্ন থাকতেন, অথচ তিনি ছিলেন নিষ্পাপ। এতেই সহজে অনুমান করা যায়, লাইলাতুল কদরের কত ফজিলত ও মর্যাদা কতটা উর্ধ্বে, কতটা উচ্চে।

এ রাতের বিশেষ দুআ:
উম্মুল মুমিনীন হজরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা বর্ণনা করেন, তিনি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে জানতে চান, হে আল্লাহর রাসুল! আমি যদি জানতে পারি যে, কোন রাতটি লাইলাতুল কদর; তাহলে তখন আমি কোন দুআ পাঠ করব? প্রিয়নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তুমি বল-
اللَّهُمَّ إِنَّكَ عَفُوٌّ كَرِيمٌ تُحِبُّ الْعَفْوَ فَاعْفُ عَنِّى
উচ্চারণ : আল্লাহুম্মা ইন্নাকা আফুওউন কারিম, তুহিব্বুল আফওয়া, ফাফু আন্নি।’
অর্থ : ‘হে আল্লাহ! আপনি ক্ষমাশীল দয়ালু। আপনি ক্ষমা করাকে ভালোবাসেন। সুতরাং আপনি আমাকে ক্ষমা করে দিন।’ (তিরমিজি)

আমাদের কর্তব্য:
তাই আমাদের উচিত হাদিসের নির্দেশনা অনুযায়ী লাইলাতুল কদরপ্রাপ্তির সৌভাগ্য অর্জনের নিমিত্তে শেষ দশকের প্রতিটি বেজোড় রাতকে ইবাদত-বন্দেগী-আমলের মাধ্যমে ভরিয়ে তোলা। নিজেদের ভাগ্যে কদরের বরকত এবং পরিপূর্ণ ফায়দা জুটিয়ে নেয়া। মহান আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআ'লা প্রিয় নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সুন্নাত মোতাবেক আমল করে আমাদেরকে লাইলাতুল কদর অনুসন্ধানের তাওফীক দান করুন। লাইলাতুল কদরের পরিপূর্ণ কল্যান নসিব করে আমাদের ধন্য করুন।

ছবি: অন্তর্জাল।

মন্তব্য ৬ টি রেটিং +৪/-০

মন্তব্য (৬) মন্তব্য লিখুন

১| ২৭ শে মে, ২০১৯ সকাল ১০:৫৪

বিদ্রোহী ভৃগু বলেছেন: আল্লাহ সকল বিশ্বাসী, মুমিন সকলকে পবিত্র এ মহিমান্বিত রাতের সৌভাগ্য লাভের সন্ধানে ব্রতী হবার তৌফিক দিন

২| ২৭ শে মে, ২০১৯ দুপুর ১২:৩২

মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন বলেছেন: আল্লাহ সকল বিশ্বাসী, মুমিন সকলকে পবিত্র এ মহিমান্বিত রাতের সৌভাগ্য লাভের সন্ধানে ব্রতী হবার তৌফিক দিন

৩| ২৭ শে মে, ২০১৯ দুপুর ১:১৯

রাজীব নুর বলেছেন: আল্লাহ যেন এরাতে আমাদের জীবনের গুনাহ গুলো ক্ষমা করে দেন।

৪| ২৭ শে মে, ২০১৯ রাত ১১:৪৮

মেঘ প্রিয় বালক বলেছেন: লাইলাতুল কদর,হাজার রাত্রির চেয়ে বরকতময় একটি রাত।

৫| ২৭ শে মে, ২০১৯ রাত ১১:৫৪

মনিরা সুলতানা বলেছেন: মহান আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআ'লা প্রিয় নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সুন্নাত মোতাবেক আমল করে আমাদেরকে লাইলাতুল কদর অনুসন্ধানের তাওফীক দান করুন। লাইলাতুল কদরের পরিপূর্ণ কল্যান নসিব করে আমাদের ধন্য করুন।

৬| ২৮ শে মে, ২০১৯ সন্ধ্যা ৬:১৫

নাসির ইয়ামান বলেছেন: সবি ঠিকাছ,তবে এরজনীটা হাজার মাসের চেয়ে উত্তম,হাজার রাতের চেয়ে নয়!

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.