নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
যবে উৎপীড়িতের ক্রন্দল-রোল আকাশে বাতাসে ধ্বনিবে না, অত্যাচারীর খড়্গ কৃপাণ ভীম রণ-ভূমে রণিবে না- বিদ্রোহী রন-ক্লান্ত। আমি সেই দিন হব শান্ত।
সুপেয় পানি: আল্লাহ তাআ'লার শ্রেষ্ঠতম নেয়ামত
চৈত্রের দুপুর। কাঠফাটা রোদ চারদিকে। বাতাসে আগুনের হল্কা যেন। মাথার উপরে সূর্য্যের খরতাপ। পথ চলছেন হেটে। কিংবা ভারী কোনো কাজ করে চলেছেন। একটানা। রোদের ভেতরে। পানির পিপাসা বাড়ছে। ছাতি ফেটে যাচ্ছে। এক সমুদ্র পানি পান করলেও যেন তৃষ্ণা মিটবে না। জীবন যখন এমনই ওষ্ঠাগত তখন বুঝা যায় এক গ্লাস পানিতে কত মজা, কত স্বাদ। এক ঢোক পানিতে কতটা তৃপ্তি-পরিতৃপ্তি। আহ, আমরা কি ভেবে দেখেছি একবারও? হৃদয় শীতল করা পানি কতটা উপকারী আমাদের জন্য এবং গোটা জীব জগতের জন্য? কখনও কি চিন্তা করে দেখেছি, পানি আল্লাহ তাআ'লার কত বড় নেয়ামত?
এই পানিই জীবনের অন্যতম উৎস। আল্লাহ তাআ'লার পক্ষ থেকে আমাদের জন্য বিশাল এক নেয়ামত। পানির বিশিষ্ট ভূমিকা দুনিয়া এবং আখেরাত উভয় জাহানে স্বীকৃত। এই কারণে পবিত্র কুরআনুল কারিমে পানির উল্লেখ করা হয়েছে বিশেষ গুরুত্ব সহকারে। পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তাঅা'লা ৪৬ স্থানে পানি সম্মন্ধে আলোচনা করেছেন। আকাশ এবং মাটি সৃষ্টি করার পর মহান আল্লাহ তাআ'লা পানি সৃষ্টি করেছেন। আর পানি থেকেই তিনি সৃজন করেছেন প্রাণবান সকল কিছুকে। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআ'লা ইরশাদ করেন,
أَوَلَمْ يَرَ الَّذِينَ كَفَرُوا أَنَّ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضَ كَانَتَا رَتْقًا فَفَتَقْنَاهُمَا وَجَعَلْنَا مِنَ الْمَاء كُلَّ شَيْءٍ حَيٍّ أَفَلَا يُؤْمِنُونَ
'অবিশ্বাসীগন কি ভেবে দেখে না যে, আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীর মুখ বন্ধ ছিল, অতঃপর আমি উভয়কে খুলে দিলাম এবং প্রাণবন্ত সবকিছু আমি পানি থেকে সৃষ্টি করলাম। এরপরও কি তারা বিশ্বাস স্থাপন করবে না?' (সূরা আম্বিয়া : ৩০)।
Do not the Unbelievers see that the heavens and the earth were joined together (as one unit of creation), before we clove them asunder? We made from water every living thing. Will they not then believe?
পবিত্রতার জন্য পানি:
পৃথিবীতে মানবজাতির সৃষ্টির পেছনে মহান প্রতিপালকের রয়েছে বিশেষ উদ্দেশ্য, আর তা হচ্ছে- একমাত্র তাঁরই ইবাদত করা। এই ইবাদতের জন্য প্রথম ও প্রধান শর্ত হলো পবিত্রতা অর্জন। আর পবিত্রতার প্রথম ও প্রধান উপকরণ হচ্ছে পানি। আল্লাহ তাআ'লা আকাশ থেকে পানি এজন্য বর্ষন করেন যাতে মানুষ প্রশান্তিলাভ করতে পারে, পরিতৃপ্ত হতে পারে এবং যার মাধ্যমে অর্জন করে নিতে পারে পবিত্রতা। মহান আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআ'লা ইরশাদ করেন,
إِذْ يُغَشِّيكُمُ النُّعَاسَ أَمَنَةً مِّنْهُ وَيُنَزِّلُ عَلَيْكُم مِّن السَّمَاء مَاء لِّيُطَهِّرَكُم بِهِ وَيُذْهِبَ عَنكُمْ رِجْزَ الشَّيْطَانِ وَلِيَرْبِطَ عَلَى قُلُوبِكُمْ وَيُثَبِّتَ بِهِ الأَقْدَامَ
'যখন তিনি আরোপ করেন তোমাদের উপর তন্দ্রাচ্ছন্ন তা নিজের পক্ষ থেকে তোমাদের প্রশান্তির জন্য এবং তোমাদের উপর আকাশ থেকে পানি অবতরণ করেন, যাতে তোমাদিগকে পবিত্র করে দেন এবং যাতে তোমাদের থেকে অপসারিত করে দেন শয়তানের অপবিত্রতা। আর যাতে করে সুরক্ষিত করে দিতে পারেন তোমাদের অন্তরসমূহকে এবং তাতে যেন সুদৃঢ় করে দিতে পারেন তোমাদের পা গুলো।' (সূরা আনফাল : ১১)।
Remember He covered you with a sort of drowsiness, to give you calm as from Himself, and he caused rain to descend on you from heaven, to clean you therewith, to remove from you the stain of Satan, to strengthen your hearts, and to plant your feet firmly therewith.
পানির অপর নাম জীবন:
পানি ছাড়া একটি দিনও কি চলে আমাদের? পানি ব্যতিত কোনো প্রাণিরই অস্তিত্ব কল্পনা করা যায় না। পানি ছাড়া এ সুন্দর বায়ুমন্ডলেরও কি টিকে থাকার কথা? পানি না থাকলে অচিরেই অস্তিত্বহীন হয়ে যাবে গোটা প্রাণিকুল, সমগ্র বায়ুমন্ডল। এ কারণেই পানির অপর নাম জীবন। পৃথিবীতে জীববৈচিত্র্য টিকিয়ে রাখার ক্ষেত্রে পানির অবদান আবশ্যকীয়, অপরিহার্য্য এবং অনস্বীকার্য। এই পানির মাধ্যমেই পৃথিবীর বক্ষে জীবনের ছোঁয়া পেয়ে জেগে ওঠে লতা গুল্ম, ঘাস বৃক্ষ। আর এরই মাধ্যমে আমরা পশুচারণ করে থাকি। মহান আল্লাহ তাআ'লা ইরশাদ করেন,
هُوَ الَّذِي أَنزَلَ مِنَ السَّمَاء مَاء لَّكُم مِّنْهُ شَرَابٌ وَمِنْهُ شَجَرٌ فِيهِ تُسِيمُونَ
'তিনি তোমাদের জন্যে আকাশ থেকে পানি বর্ষণ করেছেন। এই পানি থেকে তোমরা পান কর এবং এ থেকেই উদ্ভিদ উৎপন্ন হয়, যাতে তোমরা পশুচারণ কর।' (সূরা নাহল : ১০)
It is He who sends down rain from the sky: from it ye drink, and out of it (grows) the vegetation on which ye feed your cattle.
জান্নাত এবং জাহান্নামে পুরষ্কার এবং শাস্তি প্রদানেও ব্যবহার করা হবে পানি:
জান্নাতবাসীদের উপহার দেয়া হবে সুপেয় পানি। তাদের জন্য থাকবে বহুমাত্রিক স্বাদ ও গন্ধের রঙ বেরঙয়ের পানীয়। পক্ষান্তরে জাহান্নামবাসীদের পানযোগ্য সুপেয় পানি থেকে করা হবে বঞ্চিত। জাহান্নামবাসীরা তাদের অত্যাচারের কষ্টে পানির পিপাসায় জান্নাতি ব্যক্তিদের কাছে পানি প্রার্থনা করবে, কিন্তু তাদের কৃতকর্মের ফল স্বরূপ তাদের শাস্তি দেয়া হবে। পানি তাদের দেয়া হবে না। আল্লাহ তাআ'লা ইরশাদ করেন,
وَنَادَى أَصْحَابُ النَّارِ أَصْحَابَ الْجَنَّةِ أَنْ أَفِيضُواْ عَلَيْنَا مِنَ الْمَاء أَوْ مِمَّا رَزَقَكُمُ اللّهُ قَالُواْ إِنَّ اللّهَ حَرَّمَهُمَا عَلَى الْكَافِرِينَ
'দোযখীরা জান্নাতীদেরকে ডেকে বলবেঃ আমাদের উপর সামান্য পানি নিক্ষেপ কর অথবা আল্লাহ তোমাদেরকে যে রুযী দিয়েছেন, তা থেকেই কিছু দাও। তারা বলবেঃ আল্লাহ এই উভয় বস্তু কাফেরদের জন্যে নিষিদ্ধ করেছেন।' (সূরা আরাফ : ৫০)
The Companions of the Fire will call to the Companions of the Garden: "Pour down to us water or anything that Allah doth provide for your sustenance." They will say: "Both these things hath Allah forbidden to those who rejected Him."
পানির অপচয় মারাত্মক গর্হিত কাজ:
দৈনন্দিন জীবনে বর্তমান সময়ে পানির ব্যাপক অপচয় লক্ষ্য করা যাচ্ছে। একদিকে পানির যথেচ্ছ অপচয় অন্যদিকে পানির অভাবে ত্রাহি ত্রাহি অবস্থা। মানুষ সামান্য পানযোগ্য এক ঢোক পানি পাচ্ছে না। আজকের পৃথিবীতে এমনও বহু জনপদ রয়েছে, যেসব স্থানে সামান্য পরিমান পানীয় পানির জন্য সুদূরের পথ পাড়ি দিতে হয়। অথচ আমাদের অবস্থা কি ভয়াবহ। কি সাংঘাতিকভাবে আমরা অবিবেচকের মত পানির অপচয় করে যাচ্ছি। পবিত্র আল কুরআনে শুধু পানির অপচয় নয়, সকল প্রকারের অপচয়কারীকেই শয়তানের ভাই আখ্যায়িত করা হয়েছে। আল্লাহ পাক ইরশাদ করেন-
وَآتِ ذَا الْقُرْبَى حَقَّهُ وَالْمِسْكِينَ وَابْنَ السَّبِيلِ وَلاَ تُبَذِّرْ تَبْذِيرًا
'আত্নীয়-স্বজনকে তার হক দান কর এবং অভাবগ্রস্ত ও মুসাফিরকেও। এবং কিছুতেই অপব্যয় করো না।' (সূরা বনি ইসরঈল: ২৬)
And render to the kindred their due rights, as (also) to those in want, and to the wayfarer: But squander not (your wealth) in the manner of a spendthrift.
إِنَّ الْمُبَذِّرِينَ كَانُواْ إِخْوَانَ الشَّيَاطِينِ وَكَانَ الشَّيْطَانُ لِرَبِّهِ كَفُورًا
'নিশ্চয় অপব্যয়কারীরা শয়তানের ভাই। শয়তান স্বীয় পালনকর্তার প্রতি অতিশয় অকৃতজ্ঞ।' (সূরা বনি ইসরঈল: ২৭)
Verily spendthrifts are brothers of the Evil Ones; and the Evil One is to his Lord (himself) ungrateful.
নিষেধ করা হয়েছে খাদ্য পানীয় অপচয়েও:
এছাড়া বিশেষভাবে খাদ্য পানীয় পরিমিতভাবে আহার এবং পান করার নির্দেশদানের পরে স্বয়ং আল্লাহ তাআ'লা এগুলোর অপচয় থেকেও বেঁচে থাকার নির্দেশ দিয়েছেন। কেননা, অপচয় ইসলামের দৃষ্টিতে একটি মারাত্মক গর্হিত কাজ। আল্লাহ তাআ'লা ইরশাদ করেন,
يَا بَنِي آدَمَ خُذُواْ زِينَتَكُمْ عِندَ كُلِّ مَسْجِدٍ وكُلُواْ وَاشْرَبُواْ وَلاَ تُسْرِفُواْ إِنَّهُ لاَ يُحِبُّ الْمُسْرِفِينَ
'হে বনী-আদম! তোমরা প্রত্যেক নামাযের সময় সাজসজ্জা পরিধান করে নাও, খাও ও পান কর এবং অপব্যয় করো না। তিনি অপব্যয়ীদেরকে পছন্দ করেন না।' (সূরা আরাফ : ৩১)
O Children of Adam! wear your beautiful apparel at every time and place of prayer: eat and drink: But waste not by excess, for Allah loveth not the wasters.
হাদিসে পানি অপচয়ে স্পষ্ট নিষেধাজ্ঞা:
রাসুলে কারিম সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজে ছিলেন মানবতার সর্বোত্তম আদর্শ। তাঁর জীবনে অপব্যয়, অপচয়ের কোনো নজির ছিল না। মানব জীবনের প্রতিটি বিষয়েই তিনি ছিলেন বিশ্ব মানবতার অনুপম পথপ্রদর্শক। মানব জীবনের ছোট থেকে ছোট কোনো বিষয়ও তাঁর নজর এড়িয়ে গেছে, তাঁর নির্দেশনার বাইরে রয়ে গেছে - এমনটা খুঁজে পাওয়া যায় না। তিনি অজু গোসলসহ নিজের সকল কাজে প্রয়োজনের অতিরিক্ত পানি ব্যবহার করতেন না এবং সমগ্র বিশ্ববাসীকে উদ্দেশ্য করে পরিমাণ মতো পানি ব্যবহারের নির্দেশনাও দিয়ে গিয়েছেন। আবদুল্লাহ ইবনে আমর (রা.) থেকে বর্ণিত, ‘রাসুলে কারিম সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একসময় সাদ (রা.) কে অতিক্রম করছিলেন। সাদ (রা.) তখন অজু করছিলেন। রাসুল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, পানি অপব্যয় করছ কেন? সাদ (রা.) বললেন, অজুতেও পানি কি অপব্যয় হয়? রাসুল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, প্রবাহমান নদীতেও যদি তুমি অজু করো তবুও অতিরিক্ত পানি ব্যবহার করা যাবে না।’ (মুসনাদ আহমদ)।
অজুতে পানির অপচয় রোধ করতে সচেতনতার বিকল্প নেই:
একজন লোকের অজু করতে কতটুকু পানি প্রয়োজন? হাফ লিটার? না কি এক লিটার? না কি আরও বেশি? ধরলাম, দুই লিটার প্রয়োজন। কিন্তু আপনি যখন টেপ ছেড়ে দিয়ে আয়েশি ভঙ্গিতে অজু করতে বসবেন, পাঁচ দশ মিনিট লাগিয়ে অজু শেষ করবেন। আর আপনার অজু করাকালীন এই পুরো সময়টা যখন টেপ থেকে পানি পড়তেই থাকবে, আপনি টেপ বন্ধ না করে একনাগারে অজু করতেই থাকলেন, হিসেব করে বলা যাবে কি আপনার অজু পারপাস কত লিটার পানি খরচ হল? ৫ লিটার? ১০ লিটার? না কি আরও বেশি? অবস্থাদৃষ্টে আমার তো মনে হয়, আমাদের কোনো কোনো ভ্রাতার বিলাসী অজুতে এই পানি খরচের পরিমান ২০/২৫ লিটার ছাড়িয়ে যায়। হায় হায়, এ কি হল আমাদের! সামান্য অজুতেই যদি এই হয় অবস্থা! একেকজনের গোসলে তাহলে কি কান্ড হয়? না জানি, কত মনকে মন পানি লাগে একেকজনের গা গোসলে?
মক্কাতুল মুকাররমায় কোনো কোনো দেশের কিছু লোককে অজু করতে দেখেছি, খুবই ছোট হাফ লিটার কিংবা তারচে'ও ছোট বোতলের সামান্য পানি দিয়ে পুরোপুরি অজু সেরে নিচ্ছেন তারা। তাদের থেকে পানির ব্যবহার শেখার চেষ্টা করা উচিত আমাদের। পক্ষান্তরে আমাদের নিজেদের আমলের দিকে একটু লক্ষ্য করলেই দেখতে পাবো, গোসলের সময় আমরা কতটা মাত্রাতিরিক্ত পানি ব্যবহার করি, অজুখানায় অজু করতে গিয়ে পানির টেপ ছেড়ে দীর্ঘ সময় ধরে অজু করে পানির কতটা অপচয় করি। অজুতে প্রতিটি অঙ্গ ধোয়ার সময়ে টেপের পানি পড়ার পরিমানটা যদি একটু সীমিত রাখি, ক্ষেত্রবিশেষে কলটা সুযোগমত বন্ধ করে করে আবার প্রয়োজনমত ছেড়ে ব্যবহার করি, এমনিকরে মাথা, কান ও ঘাড় মাসেহ করার সময় যদি পানির টেপ বন্ধ রেখে অজু সম্পন্ন করলে অজুতে অন্তত: পানির অপচয় কিছুটা হলেও কমানো যেত।
পানিরও হিসাব দিতে হবে কেয়ামতের দিন:
প্রিয় বন্ধুরা, কোনো হাসি কৌতুক নয়। প্রতিটি নেয়ামতের হিসাব আল্লাহ পাকের নিকট উপস্থাপন করতে হবে। পানি যেহেতু এই পার্থিব জীবনের গুরুত্বপূর্ণ নেয়ামত। তাই অন্যান্য নেয়ামতের মত সেখানে গুরুত্বপূর্ণ নেয়ামত পানির ব্যবহার সম্পর্কেও মানুষের নিকট হিসাব চাওয়া হবে। আমাদের প্রত্যেকের সাথে আল্লাহ তাআ'লা নিয়োজিত করে রেখেছেন ফেরেশতাদের। তারা আমাদের ভালো মন্দ সকল কর্মকান্ড যথাযথভাবে হুবহু রেকর্ড করে রাখেন। তাদের চোখ ফাঁকি দেয়ার সাধ্য আমাদের নেই। তাদের বোকা বানানোর কিংবা ধোকা দেয়ার কোনো সুযোগও কোনো মানুষের ক্ষমতার বাইরে। তারা মহান আল্লাহর নির্দেশ অবিকল ফলো করেন। তাঁর নির্দেশ ব্যতিত আর কারও নির্দেশ মানেন না। এই ফেরেশতারা আমাদের দৈনন্দিন জীবনে ব্যবহৃত পানি সম্পর্কে লিখে রাখছেন। ইচ্ছেকৃত সামান্য অপচয় করলেও সেদিন তার হিসাব দিতে হবে। যেহেতু প্রতিটি বিষয় আল্লাহ তাআ'লার নিযুক্ত ফেরেশতারা যথাযথভাবে লিপিবদ্ধ করে যাচ্ছেন; তাই আল্লাহ তায়ালার আদেশ-নিষেধ মেনে চলে তার প্রদত্ত রিজিক থেকে খাদ্য পানীয় গ্রহন করতে হবে। কিন্তু কোনো প্রকার অপচয় করা যাবে না। মহান আল্লাহ আমাদের আদেশ করেছেন,
ثُمَّ لَتُسْأَلُنَّ يَوْمَئِذٍ عَنِ النَّعِيمِ
'এরপর অবশ্যই সেদিন তোমরা নেয়ামত সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত হবে।' (সূরা তাকাসুর: ৮)
Then, shall ye be questioned that Day about the joy (ye indulged in!).
পানি পান করার আদব:
কীভাবে পানি পান করতে হবে, সেই তরিকা প্রিয়নবী সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের শিখিয়ে দিয়েছেন। পানি পান করার কয়েকটি সুন্নাত হচ্ছে-
১. বসে ডান হাতে পানি পান করা।
২. 'বিসমিল্লাহির রহমানির রহিম' -বলে পানি পান করা।
৩. তিন শ্বাসে পানি পান করা উত্তম।
৪. প্রতি বার পানির পাত্র থেকে মুখ পৃথক করা।
৫. পাত্রের ভেতরে শ্বাস কিংবা ফুঁক না দেয়া।
৬. পানি পান করার পর 'আলহামদুলিল্লাহ' পাঠ করা।
৭. চা, কফি, দুধ কিংবা পানীয় দ্রব্য পান করলেও আলহামদুলিল্লাহ পড়া সুন্নত।
রাসুল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পানি সম্পর্কে যে শিক্ষা দিয়েছেন সেগুলো শুধু সুন্নত নয় বরং এর প্রতিটিতে রয়েছে শরীর সুস্থ রাখার নিদর্শন। রাসুল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘তোমরা পানির পাত্রকে ঢেকে রাখ এবং বাসনগুলোকে উল্টে রাখ।’ (মুসলিম)
অন্যকে, এমনকি অন্য প্রাণিকে পানি পান করানো অশেষ সওয়াবের কাজ:
পানি ব্যবহারের নিয়মকানুনের মধ্য দিয়ে ইসলামে সীমাবদ্ধ নয়, ইসলামের দৃষ্টিতে অন্যকে পানি পান করানোর তাগিদ দিয়েছে এবং এটি একটি পুণ্যের কাজ। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘একজন লোক রাস্তা দিয়ে চলতে চলতে তার ভীষণ পিপাসা পেল, সে কূপে নেমে পানি পান করল। পানি পান করে বের হয়ে সে দেখতে পেল একটি কুকুর হাঁপাচ্ছে এবং পিপাসায় কাতর হয়ে মাটি চাটছে। সে ভাবল কুকুরটিরও আমার মতো পানির পিপাসা পেয়েছে। সে কূপের মধ্যে নামল এবং স্বীয় মোজা ভরে পানি নিয়ে মুখ দিয়ে সেটি ধরে উপরে উঠে এসে কুকুরটিকে পানি পান করাল। মহান আল্লাহ তার কাজে সন্তুষ্ট হলেন এবং তার গোনাহগুলো ক্ষমা করে দিলেন। সাহাবিরা বললেন, হে আল্লাহর প্রিয় রাসুল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম চতুষ্পদ জন্তুর উপকার করলে সাওয়াব হবে? রাসুল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, প্রত্যেক প্রাণীর উপকার করলেই পুণ্য পাওয়া যাবে।’ (মুসলিম)।
শেষের কথা:
পানির মত মহানেয়ামতের কদর বুঝে এই নেয়ামতের দাতা মহান মালিককে চেনার তাওফিক আমাদের দান করুন আল্লাহ তাআ'লা।
ছবি: অন্তর্জাল।
২| ২৮ শে আগস্ট, ২০১৯ বিকাল ৫:১৪
সেলিম আনোয়ার বলেছেন: সুপেয় পানি স্রষ্টার বড় নিয়ামত। এটির যথাযথ ব্যবস্হাপনা আবশ্যক। বাংলাদেশের নদী ও ভূগর্ভস্থ পানি দূষণ হচে্ । এগুলো নিরাপদ রাখা আমাদের জন্য আবশ্যক। এ ব্যাপারে আমাদের সচেতন হওয়া উচিৎ। সুন্দর পোস্ট।+
৩| ২৮ শে আগস্ট, ২০১৯ সন্ধ্যা ৬:০৬
মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন বলেছেন: আলহামদুলিল্লাহ । কিন্তু বাংলাদেশের মানুষ নিয়ে অপচয় করে দেদারসে।
৪| ২৮ শে আগস্ট, ২০১৯ রাত ৯:০৫
রাজীব নুর বলেছেন: পানি না থাকলে এই পৃথিবীতে কোও প্রানী জন্ম নিতে পারতো না।
৫| ২৯ শে আগস্ট, ২০১৯ রাত ১২:৫৭
স্বপ্নের শঙ্খচিল বলেছেন: পানির অপর নাম জীবন
..............................................................................
ছোট বেলা বই পুস্তক পড়ে তাই জানতাম,
কিন্ত আজকাল এসিড বৃষ্টি বা আর্সেনিক বৃষ্টির কথা শুনা যায়
তার ব্যাখ্যা কি ?
...........................................................................................................
এখন আর কোন বিজ্ঞানী সরাসরি বৃষ্টির পানি পান করতে বলে না ।
৬| ২৯ শে আগস্ট, ২০১৯ রাত ২:৫৩
ঠাকুরমাহমুদ বলেছেন: পানি ছাড়া যেই মৃত্যু হবে তা ভয়ংকর! তবে মৃত্যুর আগে যেই কষ্ট হবে তার নমুনা আরো ভয়াবহ ভয়ংকর!!! মহান আল্লাহপাকের কাছে ধর্ম বর্ণ নেই। তাঁর কাছে সকল প্রাণী সমান, সবাইকে তিনি আলো বাতাস পানি দিয়ে বাঁচিয়ে রেখেছেন।
৭| ২৯ শে আগস্ট, ২০১৯ সকাল ৭:৩২
রাজীব নুর বলেছেন: কোরবানীর মাংস বাসায় কতদিন রাখা যাবে? এই বিষয়টা নিয়ে দয়া করে একটা পোষ্ট দিবেন। প্লীজ।
©somewhere in net ltd.
১| ২৮ শে আগস্ট, ২০১৯ বিকাল ৫:০৮
চাঁদগাজী বলেছেন:
আপনি বলেছেন যে, যারা জাহান্মামে যাবেন, শাস্তি হিসেবে তাদেরকে পানি দেয়া হবে না; পানি না পেলে কোন প্রাণী বেঁচে থাকতে পারে না; তা'হলে, জাহান্মামে যারা যাবেন, তারা প্রথম ২/৪ দিনের ভেতর "আবারো মরে যাবেন"।