নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
যবে উৎপীড়িতের ক্রন্দল-রোল আকাশে বাতাসে ধ্বনিবে না, অত্যাচারীর খড়্গ কৃপাণ ভীম রণ-ভূমে রণিবে না- বিদ্রোহী রন-ক্লান্ত। আমি সেই দিন হব শান্ত।
কৈফিয়ত:
দশ মুহররম গত হয়ে চলে গেছে আমাদের থেকে। মুহররমের আজ ১৪ তারিখ। হ্যাঁ, সময় পেরিয়ে যাওয়ার কিছুটা পরেই দিচ্ছি এই পোস্ট। পোস্ট লিখে রেখেছিলাম আগেই। কিছুটা ব্যস্ততার জন্য কম্পিউটারে বসার মত তেমন কোনো সুযোগই না পাওয়াতেই বিলম্বিত পোস্ট। তবে সময় তো চলমান। আশুরা, মুহররমও চলমান। বছর ঘুরে এমনিকরেই আগামী দিনগুলোতেও আসবে মুহররম-আশুরা। জাগিয়ে দিবে কারবালা প্রান্তরের বেদনাবিধুর রক্তাক্ত স্মৃতিগুলো। ছড়িয়ে দিবে কান্নার করুন মূর্চ্ছনা আমাদের হৃদয়ে হৃদয়ে। সেই দিনগুলোর কথা মাথায় রেখেই পোস্টটি জমিয়ে না রেখে দিয়ে দেয়া।
ত্যাগ চাই মর্সিয়া ক্রন্দন চাহি না : পুুণ্যময় মুহররমের শিক্ষা
বছর ঘুরে আবার এলো পুন্যময় মাস মুহররম। মুহররম ত্যাগের মাস। বিসর্জনের মাস। কুরবানির মাস। হিজরি বর্ষের প্রথম মাস মুহররম। ইসলামের তাৎপর্যপূর্ণ মাসগুলোর মধ্যে এই মাসটি অন্যতম। মুহররম মাসটি মুসলমানদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ‘মুহররম’ শব্দটির উতপত্তি 'হারাম' শব্দ থেকে। মুহররম এর আভিধানিক অর্থ- পবিত্র, সম্মানিত। প্রাচীনকাল থেকে মুহররম মাস পবিত্র হিসাবে গন্য। মুহররমের ১০ তারিখ বিশেষ মর্যাদাসম্পন্ন দিন, যাকে আশুরা বলা হয়ে থাকে। মুহররম মাসের পরবর্তি মাসের নাম সফর। পবিত্র কুরআনে মুহররম মাসকে হারাম বা সম্মানিত মাস হিসেবে আখ্যায়িত করেছে। এক দিকে এই মাস যেমন ফজিলতপূর্ণ, তেমনি অন্য দিকে এ মাসের রয়েছে সুবিশাল ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট। সঙ্গত কারণে প্রতি বছর মুহররম মাসের আগমনে মুসলমানগন এ মাসের ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটের স্মৃতিচারণের পাশাপাশি পরকালীন পাথেয় হাসিলের সর্বাত্মক চেষ্টায় ব্যাপৃত হন। এ মাসের মহান শিক্ষাকে নিজেদের ভেতরে ধারণ করে উন্নত আদর্শে উজ্জীবিত হতে চেষ্টা করেন।
আরবি মাসসমূহের মধ্যে মুহররম মাসের ফজিলত সুবিদিত। এ মাস অত্যন্ত ফজিলতপূর্ণ বিধায় পবিত্র কুরআনে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা ইরশাদ করেন,
إِنَّ عِدَّةَ الشُّهُورِ عِندَ اللّهِ اثْنَا عَشَرَ شَهْرًا فِي كِتَابِ اللّهِ يَوْمَ خَلَقَ السَّمَاوَات وَالأَرْضَ مِنْهَا أَرْبَعَةٌ حُرُمٌ ذَلِكَ الدِّينُ الْقَيِّمُ فَلاَ تَظْلِمُواْ فِيهِنَّ أَنفُسَكُمْ وَقَاتِلُواْ الْمُشْرِكِينَ كَآفَّةً كَمَا يُقَاتِلُونَكُمْ كَآفَّةً وَاعْلَمُواْ أَنَّ اللّهَ مَعَ الْمُتَّقِينَ
'নিশ্চয় আল্লাহর বিধান ও গননায় মাস বারটি, আসমানসমূহ ও পৃথিবী সৃষ্টির দিন থেকে। তন্মধ্যে চারটি সম্মানিত। এটিই সুপ্রতিষ্ঠিত বিধান; সুতরাং এর মধ্যে তোমরা নিজেদের প্রতি অত্যাচার করো না। আর মুশরিকদের সাথে তোমরা যুদ্ধ কর সমবেতভাবে, যেমন তারাও তোমাদের সাথে যুদ্ধ করে যাচ্ছে সমবেতভাবে। আর মনে রেখো, আল্লাহ মুত্তাকীনদের সাথে রয়েছেন। (সূরা তাওবা: ৩৬)।'
The number of months in the sight of Allah is twelve (in a year)- so ordained by Him the day He created the heavens and the earth; of them four are sacred: that is the straight usage. So wrong not yourselves therein, and fight the Pagans all together as they fight you all together. But know that Allah is with those who restrain themselves.
উপরোক্ত আয়াতে উল্লিখিত চার মাস বলে মুহররম, রজব, জিলকদ ও জিলহজ মাসকে বুঝানো হয়েছে। এর মধ্যে সর্বাগ্রে হলো মুহররম মাস। প্রখ্যাত তাফসীরবিদ আল্লামা জাসসাছ অত্র আয়াতের ব্যাখ্যায় সম্মানিত মাসের ব্যাখ্যায় বলেন, ‘এই চার মাসের বিশেষ বৈশিষ্ট্য হলো- যারা এ মাসগুলোতে ইবাদত-বন্দেগি করবে, রাব্বে কারিম তাদের বাকি আট মাস ইবাদত করার হিম্মত ও তাওফিক দান করবেন। এমনিভাবে যারা এ চার মাসে চেষ্টা-সাধনা করে গুনাহ থেকে বিরত থাকতে পারবে, তার জন্য অবশিষ্ট আট মাস গুনাহ থেকে বিরত থাকা সহজ হয়ে যাবে’ (আহকামুল কুরআন ১ : ৪৪৭)।
সর্বাবস্থায় চাই সতর্কতা:
গুরুত্বপূর্ণ মাস হিসেবে মুহররম মাসে করণীয় কিছু আমল রয়েছে। যে আমলগুলোর মাধ্যমে বান্দার জন্য আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআ'লার নৈকট্যলাভ করা সহজ হয়। প্রতিটি ভালো কাজকে নষ্ট করার প্রচেষ্টা থাকে শয়তানের। তাই এই মাসের সুসাব্যস্ত কিছু নেক কাজের বিপরীতেও সমাজে পরিলক্ষিত হয় ইসলাম বিবর্জিত কিছু অনর্থক বিদআতমূলক কাজ। মানবজাতির চিরশত্রু শয়তানের কুমন্ত্রণায় তৈরি হয়েছে এই কাজগুলো। সঙ্গত কারণে এ মাসে পূণ্যময় কাজগুলো করার পাশাপাশি ইসলাম বিবর্জিত কাজ থেকে বিরতও থাকতে হবে সচেতনভাবে।
হাদিসের আলোকে মুহররমের করণীয় কিছু আমল:
মুহররম মাসে করণীয় আমলের মধ্যে রয়েছে নফল রোজা রাখা। কেননা, রমজানের পরেই রয়েছে মুহররমের মর্যাদা। হাদিস শরিফে আছে, ‘হজরত আবু হুরায়রা রাদিআল্লাহু তাআ'লা আনহু থেকে বর্ণিত- রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, ‘রমজানের পর রোজার জন্য সর্বশ্রেষ্ঠ মাস হলো মহররম এবং ফরজ নামাজের পর সর্বোত্তম নামাজ তাহাজ্জুদের নামাজ’। (সহিহ মুসলিম : ২৮১২)
অন্য এক হাদিসে বর্ণিত হয়েছে। নবীজী সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রমজানের রোজার পরই মুহররম মাসের ১০ তারিখের অর্থাৎ আশুরার রোজার গুরুত্ব দিয়েছেন। হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস রাদিআল্লাহু তাআ'লা আনহু বলেন, ‘আমি নবীজী সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে রোজা রাখার ব্যাপারে এত অধিক আগ্রহী হতে দেখিনি, যেমনটি আশুরার রোজা ও রমজান মাসের রোজার ব্যাপারে দেখেছি’। (সহিহ বোখারি-১৮৬৭)
১০ মুহররমের রোজার গুরুত্ব বিভিন্ন হাদিসে আলোচিত হয়েছে। এক হাদিসে এসেছে, ‘হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস রাদিআল্লাহু তাআ'লা আনহু বলেন, ‘নবী করিম সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন মক্কা থেকে মদিনায় হিজরত করেন, তখন মদিনার ইহুদিদের ১০ মুহররম রোজা রাখতে দেখে তাদের জিজ্ঞেস করলেন, ‘তোমরা এ দিন রোজা রাখো কেন?’ উত্তরে তারা বলল, এ দিনটি অত্যন্ত পবিত্র ও সম্মানিত। কেননা, এই দিনে আল্লাহ তায়ালা বনি ইসরাইলদের তাদের শত্রু ফেরাউন থেকে পরিত্রাণ দিয়েছিলেন। এ কারণে আমরা রোজার মাধ্যমে ঈদ বা খুশি পালন করি। যেন তার স্মরণ সবসময় বিদ্যমান থাকে। এ কথা শুনে রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘হজরত মূসা আলাইহিস সালাম -এর বিজয় দিবসের প্রশংসায় রোজা পালনে আমরা তোমাদের থেকে বেশি অধিকারী।’ অতঃপর রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজে রোজা রাখলেন এবং সাহাবায়ে কেরাম রাদিআল্লাহু আনহুমকে রোজা রাখার নির্দেশ দিলেন’। (সহিহ বোখারি : ১৮৬৫)
প্রসঙ্গত উল্লেখ করা প্রয়োজন, ইহুদি ও নাসারা সম্প্রদায় শুধু ১০ মুহররম একদিন রোজা রাখতেন। রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের অনুসরণ না করে ওই দিনসহ তার আগের অথবা পরের দিন রোজা পালন করেছেন। অতএব সুন্নত আমল হলো- ৯ ও ১০ মুহররম অথবা ১০ ও ১১ মুহররম রোজা পালন করা। হাদিসে বর্ণিত হয়েছে- ‘হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস রাদিআল্লাহু তাআ'লা আনহু থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, ‘তোমরা আশুরার দিন রোজা রাখো এবং ইহুদিদের বিপরীত করো। তোমরা আশুরার সাথে তার আগে একদিন বা পরে একদিন রোজা পালন করো’। (সুনানে তিরমিজি : ২১৫৪)
উম্মুল মুমিনীন হজরত আয়েশা রাদিআল্লাহু তাআ'লা আনহা বলেন, ‘জাহেলি যুগে কুরাইশরা আশুরার রোজা পালন করত। রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামও তা পালন করতেন। মদিনায় হিজরতের পরও তিনি পালন করেছেন এবং লোকদেরকে তা পালন করতে বলেছেন।’ কিন্তু (দ্বিতীয় হিজরিতে) যখন রমজান মাসের রোজা ফরজ হলো, তখন তিনি বললেন, যার ইচ্ছা আশুরার রোজা পালন করতে পারো এবং যার ইচ্ছা তা পরিত্যাগ করতে পারো’। (সহিহ বোখারি-২০০২)
নিজ পরিবার-পরিজনের জন্য উত্তম খানাপিনার ব্যবস্থা করা:
আশুরার দিনে আরেকটি আমল হলো নিজ পরিবার-পরিজনের জন্য উত্তম খানাপিনার ব্যবস্থা করা। যার কারণে তার পরিবারের জন্য আল্লাহ তায়ালা সারা বছর উত্তম খানাপিনার ব্যবস্থা করে দেবেন। হাদিসে এসেছে, হজরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রাদিআল্লাহু তাআ'লা আনহু থেকে বর্ণিত- নবী করিম সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি আশুরার দিন তার পরিবার-পরিজনের ওপর প্রশস্ততা (ভালো খাবারের ব্যবস্থা) করবে, আল্লাহ তায়ালা তাকে সারা বছর প্রশস্ততা (ভালো খাবার) দান করবেন’ (বায়হাকি, শুআবুল ঈমান-৩৭২৯)।
উপরোক্ত হাদিসটির একাধিক সনদ রয়েছে। যদিও এর সবক'টিই দুর্বল হিসেবে চিহ্ণিত। তবে সমষ্টিগত বিচারে হাদিসটি আমলযোগ্য। (হাফেজ সাখাবি, আল মাকাছিদুল হাসানাহ, পৃষ্ঠা-৬৭৪, আবদুল ফাত্তাহ আবু গুদ্দাহ, আল মানারুল মুনিফ পৃষ্ঠা- ১১২-১১৩)।
যেসব কাজ থেকে বিরত থাকা উচিত:
মুহররম মাসে পবিত্র আশুরার দিন উল্লিখিত আমল ছাড়া অন্য কোনো প্রামান্য আমল নেই। এ কারণে আমাদের দেশে আশুরার দিনে যেসব রেওয়াজ বা রুসম রয়েছে, তা থেকে সতর্কতার সাথে বিরত থাকতে হবে। এসব কাজের মধ্যে রয়েছে- খিচুড়ি পাকানো, শিয়াদের আবিষ্কৃত কু-প্রথা ও বিদয়াতগুলোর প্রচলন। যেমন- তাজিয়া (মাজারের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ করে হজরত হুসাইন রাদিআল্লাহু তাআ'লা আনহু -এর নকল কবর তৈরি করা), ঢাকঢোল ও বাদ্যযন্ত্র বাজানো, হায় হাসান! হায় হুসাইন! বলে মাতম করা, ছুরি মেরে নিজের বুক-পিঠ থেকে রক্ত বের করে বুক চাপড়ানো, শোকের পোশাক পরা ইত্যাদি। এসব কাজ করা নাজায়েজ। এসব কাজকর্ম এবং অনুষ্ঠানে সাহায্য-সহযোগিতা করা কিংবা অংশগ্রহণ করাও নাজায়েজ এবং সম্পূর্ণ বিদআত। আর বিদআত নি:সন্দেহে গোনাহর কাজ।
চাকু, ছুড়ি, ব্লেড ইত্যাদি দিয়ে নিজের শরীর ক্ষত বিক্ষত করে নৃশংসতা ছড়ানো অত্যন্ত নিকৃষ্ট একটি কাজ। এছড়া মাতম করা বা বিলাপ করে কান্নাকাটি করাও গর্হিত কাজ। এ ব্যাপারে নবীজী সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কঠোর হুঁশিয়ারি করেছেন। উম্মাহাতুল মুমিনিন হজরত আয়েশা রা: বলেন, আবদুল্লাহ ইবন মাসউদ রাদিআল্লাহু তাআ'লা আনহু থেকে বর্ণিত- রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘যারা (মৃত ব্যক্তির জন্য শোক প্রকাশে) গাল চাপড়ায়, জামার বুক ছিঁড়ে ফেলে এবং জাহেলিয়াত যুগের মতো চিৎকার দিয়ে কাঁদে, তারা আমাদের দলভুক্ত নয়’। (সহিহ বোখারি-১২৯৪)
অন্য এক হাদিসে এসেছে, আমি ওই ব্যক্তি হতে দায়িত্বমুক্ত, যে ব্যক্তি শোকে মাথা মুণ্ডন করে, উচ্চস্বরে কাঁদে ও কাপড় ছিঁড়ে’। (মিশকাত-১৭২৬)
ওই দিন ঢাকঢোলসহ বাদ্যযন্ত্র বাজিয়ে গান-বাজনা করাও পাপ। কেননা, গান-বাদ্যের আওয়াজ শোনা পাপ। সেসব বৈঠকে বসা ফাসেকি এবং তা থেকে স্বাদ উপভোগ বা উল্লাস করা ও আনন্দ করা কুফরি। (বায়যাবি, ফতোয়ায়ে শামি ৬ : ৩৪৮-৩৪৯)।
আশুরার দিনটি গুরুত্বপূর্ণ কেন?
প্রচলিত রয়েছে যে, আশুরার দিনে বেশকিছু গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা ঘটেছে। যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো:
১. এই দিনে প্রথম মানব আদি পিতা হযরত আদম আলাইহিস সালামকে সৃষ্টি করেন আল্লাহ। আদম আলাইহিস সালামকে এদিনেই জান্নাতে স্থান দেয়া হয় এবং পরবর্তীতে এই দিনেই পৃথিবীতে পাঠিয়ে আল্লাহ তাআ'লা তাকে প্রতিনিধি মনোনীত করেছেন। (ইমাম ইবনে রজব রাহ. কৃত লাতাইফুল মাআরিফ, পৃষ্ঠা : ১১৩-১১৫ এবং আবদুল্লাহ ইবনে ইমাম আহমাদ রাহ. কৃত আল-ইলাল ওয়া মারিফাতির রিজাল, বর্ণনা নম্বর : ৩৭৯৫)
২. হযরত নূহ আলাইহিস সালামের কিশতী যেদিন জূদী পাহাড়ে থেমেছিল সেই দিনটি ছিল আশুরার দিন। এই রেওয়ায়েতের সনদ দুর্বল। মুসনাদে আহমাদ ১৪/৩৩৫, হাদীস ৮৭১৭ (শায়েখ শুয়াইব আরনাউতকৃত হাশিয়াযুক্ত নুসখা।)
৩. হযরত ইব্রাহীম আলাইহিস সালাম জন্ম নেন এই দিনে।
৪. ফেরাউন ও তার সৈন্যদের কবল থেকে হযরত মূসা আলাইহিস সালাম ও তার সাথীদের মুক্তিলাভ এবং সসৈন্যে পাপিষ্ঠ ফেরাউন বাহিনীর নীল নদের পানিতে ডুবে মর্মান্তিক মৃত্যুবরণের ঘটনা এই দিনেই ঘটে। এই ঘটনা বিভিন্ন সহীহ হাদীসের মাধ্যমে প্রমাণিত। সহীহ বুখারী, সহীহ মুসলিমসহ হাদীসের অনেক কিতাবে বর্ণিত হয়েছে।
৫. হযরত ইউনুছ আলাইহিস সালাম মাছের পেট থেকে মুক্তি পান আশুরার দিনে। সহিহ কোনো সনদ পাওয়া যায়নি।
৬. হযরত আইয়ূব আলাইহিস সালাম রোগ মুক্তি পান এই দিনে।
৭. হযরত ঈসা আলাইহিস সালাম এই দিনে জন্ম নেন এবং পরবর্তিতে তাকে সশরীরে ঊর্ধ্বাকাশে উঠিয়ে নেয়া হয় এই একই দিনে।
৮. মহানবী হযরত মুহাম্মদ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর প্রিয় দৌহিত্র ইমাম হুসাইন রাদিআল্লাহু তাআ'লা আনহু এই দিনে কারবালার ময়দানে ইয়েজিদের সৈন্যদের হাতে শাহাদাতবরণ করেন।
অবশ্য কারো কারো মতে, নবী মূসা আলাইহিস সালাম ও ফিরাউনের ঘটনা এবং ইমাম হুসাইন রাদিআল্লাহু তাআ'লা আনহুর ঘটনা ছাড়া অন্যগুলো এই দিনে ঘটেছিল বলে বিশ্বস্ত সূত্রে জানা যায়নি। তবে, হাজার হাজার বছর যাবত সংঘটিত নানাবিধ উল্লেখযোগ্য ঘটনার প্রেক্ষিতে মহররমের দশ তারিখ অর্থাত আশুরার দিনটি যে গুরুত্ববহ একথা অনস্বীকার্য। সঠিক বিষয় আল্লাহ পাকই সম্যক জ্ঞাত।
কারবালার বিভীষিকাময় সেই দিনটির সংক্ষিপ্ত বর্ণনা:
হিজরী ৪০ সালের ১৭ই রমজান শুক্রবার হজরত আলী রাদিআল্লাহু তাআ'লা আনহু ৬৩ বছর বয়সে আবদুর রহমান ইবনে মুলজিম নামক আততায়ীর হাতে শাহাদাত বরণ করেন। তিনি ৩ পুত্র রেখে যান-ইমাম হাসান ও ইমাম হোসাইন রাদিআল্লাহু তাআ'লা আনহুমা (ফাতিমা রাদিআল্লাহু তাআ'লা আনহার গর্ভে) এবং মুহাম্মদ হানাফিয়া ইবনে আলী (২য় স্ত্রীর গর্ভে)।
ইমাম হাসান রাদিআল্লাহু তাআ'লা আনহু কারবালার যুদ্ধের আগেই ইনতিকাল করেন (বিষ পানে)। মুহাম্মদ হানাফিয়া ঐ সময়ে জীবিত ছিলেন; কিন্তু ইমাম হোসাইন রাদিআল্লাহু তাআ'লা আনহুর সঙ্গে কারবালায় ছিলেন না। মুয়াবিয়া রাদিআল্লাহু তাআ'লা আনহুর ইনতিকালের পর তার ছেলে ইয়াজিদ সমস্ত রাজ্যের (মদিনা, সিরিয়া, কুফা) ইত্যাদি শাসনভার গ্রহণ করে। তখন ইমাম হোসাইন রাদিআল্লাহু তাআ'লা আনহু মদিনায় অবস্থান করছিলেন।
ইয়াজিদের শাসনভার গ্রহণের বিষয়ে তৎকালীন সময়ের অধিকাংশ সাহাবা একমত ছিলেন না। অনেকটা অস্ত্রের জোরে সে মুসলমানদের ক্ষমতা দখল করে।
ইয়াজিদ মদিনার গভর্নরের মারফত, ইমাম হোসাইন রাদিআল্লাহু তাআ'লা আনহুকে ইয়াজিদের আনুগত্য স্বীকার করতে বলেন। কিন্তু হজরত মুহাম্মদ মুস্তাফা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের দৌহিত্র, আদরের দৌহিত্র একজন সাচ্চা ঈমানদার হয়ে- একজন ইসলাম বিরোধী, জুলুমবাজ শাসকের আনুগত্য করা কী সম্ভব ? স্বাভাবিক ভাবে তিনি আনুগত্যে রাজী হয়নি।
তখন ইয়াজিদ মদিনার গভর্নরকে নির্দেশ দেন, বাইয়াত গ্রহণ না করলে ইমাম হোসাইনকে কারাগারে নিক্ষেপ করে শাস্তির ব্যবস্থা করতে। মদিনার গভর্নর তখন ভীষণ বিপদে পড়ে যান। তিনি কিভাবে প্রিয় নবীজির নাতীকে কারাগারে নিক্ষেপ করবেন? তিনি তখন হজরত ইমাম হোসাইনকে অনুরোধ করেন মদিনা ছেড়ে অন্য কোথাও চলে যেতে।
ইমাম হোসাইন বাধ্য হয়ে তখন মক্কায় হিজরত করেন। এহেন অবস্থায় কুফাবাসী চিঠির পর চিঠি দিয়ে ইমাম হোসাইনকে কুফা যাওয়ার অনুরোধ জানান এবং ভরসা দেন যে, তিনি কুফা গেলেই সকলে তার বাইয়াত গ্রহণ করবেন।
এভাবে প্রায় দেড়শত চিঠি পাওয়ার পর সত্যতা যাচাইয়ের জন্য নিজের চাচাত ভাই হজরত ইমাম মুসলিম ইবনে আকিলকে তিনি কুফায় পাঠান। কুফাবাসী তাকে পেয়ে অত্যন্ত খুশি হন এবং তার হাতে ইমাম হোসাইন রাদিআল্লাহু তাআ'লা আনহু এর পক্ষে বাইয়াত গ্রহণ করা শুরু করেন।
মুসলিম ইবনে আকিল এতে অত্যন্ত খুশি হয়ে বাইয়াত গ্রহণের বর্ণনা দিয়ে, হজরত ইমাম হোসাইন রাদিআল্লাহু তাআ'লা আনহুকে স্বপরিবারে কুফা আসার জন্য অনুরোধ জানিয়ে চিঠি পাঠান। হজরত ইমাম হোসাইন রাদিআল্লাহু তাআ'লা আনহু তখন পরিবারবর্গকে নিয়ে (৭২ জন সদস্য) কুফার উদ্দেশ্যে যাত্রা করেন।
এদিকে, ধূর্ত ইয়াজিদ কুফার গভর্নরকে পরির্তন করে সেখানে উবাইদুল্লাহ ইবনে যিয়াদকে নতুন গভর্ণর করেন-সে ছিল হিংস্রতা, নির্মমতার এক জ্বলন্ত প্রতীক।
ইবনে যিয়াদ কুফায় এসে হজরত মুসলিম ইবনে আকিলকে শহীদ করেন এবং ৪ হাজার দুর্দান্ত সৈন্য দ্বারা কারবালাকে ঘিরে রাখেন, যাতে করে হজরত ইমাম হোসাইন রাদিআল্লাহু তাআ'লা আনহু কুফা যেতে না পারে অর্থাৎ কারবালায় তাঁবু ফেলতে বাধ্য হন। হজরত ইমাম হোসাইন রাদিআল্লাহু তাআ'লা আনহু ৬০ হিজরির জিলহজ্ব মাসের শেষের দিকে রওয়ানা হয়ে, ৬১ হিজরী মুহাররম মাসের ৮ তারিখে কারবালার প্রান্তরে পৌঁছেন।
এদিকে ইয়াজিদের সৈন্য দ্বারা বাধাপ্রাপ্ত হয়ে সেখানে তাঁবু ফেলতে বাধ্য হন তিনি। ইয়াজিদের সৈন্য বাহিনী ঘোষণা করে আনুগত্য স্বীকার করুন, নতুবা যুদ্ধ করুন। হজরত ইমাম হোসাইন রাদিআল্লাহু তাআ'লা আনহু তখন অন্যায়ের বিরুদ্ধে সত্য ও ন্যায় প্রতিষ্ঠার জন্য যুদ্ধ করাই শ্রেয় মনে করলেন।
আশুরার দিন সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত একে একে ৭১ জন শহীদের লাশ ইমাম হোসাইন রাদিআল্লাহু তাআ'লা আনহু কাঁধে বয়ে তাঁবুতে নিয়ে এলেন। এরপর নিজে লুটিয়ে পড়লেন যুদ্ধ করতে করতে।
শত্রু রা হজরত জয়নাবসহ রুগ্ন শিশু, পুত্রহীনা ও বিধবা সর্বমোট ১২ জনকে এক শেকলে বেঁধে শেকলের এক মাথা হজরত জয়নুল আবেদিনের বাহুতে বেঁধে এবং অন্য মাথা হজরত জয়নাবের বাহুতে বেঁধে দেয়।
ইয়াজিদ তাদের তপ্ত মরুতে এখানে-সেখানে, হাটে-বাজারে ঘুরিয়েছে, যাতে দুনিয়াবাসী জানতে পারে ইয়াজিদ বিজয় অর্জন করেছে। কিন্তু কারবালার প্রান্তরে ইয়াজিদ যদি ইমাম হোসাইনের পরিবারকে বন্দি না করত, তাদের নিয়ে বিজয় মিছিল না করত, তাহলে হয়তো ইমাম হোসাইনের শাহাদতের বিজয় কারবালার উত্তপ্ত ধুধু ধূলিকণার সঙ্গে উড়ে বেড়াত।
নবী পরিবারকে বন্দি অবস্থায় কুফা থেকে শত শত মাইল দূরে সিরিয়ায় মুয়াবিয়ার সবুজ রাজপ্রাসাদে আনা হল। কিন্তু হজরত জয়নাব এত দুঃখ-কষ্ট সহ্য করার পরও ইয়াজিদের দরবারে এমন সাহসী ভূমিকা রাখলেন যে, পুরো দরবার কেঁপে উঠল।
তার ভাষণ শুনে উপস্থিত সবাই হাউমাউ করে কাঁদতে শুরু করল। ইয়াজিদও নিশ্চুপ হয়ে গেল। হজরত জয়নাবের তেজস্বী বক্তব্যে সিরিয়ায় বিপ্লবের সম্ভাবনা দেখে চতুর ইয়াজিদ তার কৌশল বদলাতে বাধ্য হল। বন্দিদের সসম্মানে মদিনায় পাঠানোর ব্যবস্থা করল।
ইয়াজিদ তার প্রতিনিধি ইবনে জিয়াদকে কী নির্দেশ দিয়েছিল তা অপ্রকাশিত। কিন্তু ইবনে জিয়াদ যে ঘৃণ্য-জঘন্য কাজ করেছিল তাতে ইয়াজিদের পূর্ণ সমর্থন ছিল, তা তার পরবর্তী কার্যক্রমে প্রকাশ পেয়েছিল। কারবালার ঘটনা শুনে ইয়াজিদ অনুতপ্ত মনে দুঃখ প্রকাশ করেছিল। কিন্তু সেসবই ছিল ভণিতাপূর্ণ। মুখে একরকম বললেও কাজ করেছিল বিপরীত।
সে শহীদগণের মস্তক মোবারকগুলোকে রাতে রাষ্ট্রীয় ভবনের শাহি দরজায় টাঙ্গানোর জন্য এবং দিনে দামেস্কের অলি-গলিতে ঘুরানোর নির্দেশ দিয়েছিল। তার নির্দেশ মতো মস্তক মোবারক দামেস্কের অলি-গলিতে ঘুরানো হয়েছিল।
এতে প্রমাণিত হয়েছে, ইয়াজিদ ভণিতাপূর্ণ দরদমাখা কথাবার্তা বলেছিল, যাতে লোকজন তার বিরুদ্ধে চলে না যায় এবং লোকেরা যেন মনে করে, সে এ ধরনের আচরণ করার পক্ষপাতি ছিল না।
কিন্তু ঘটনার শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত বিশ্লেষণ করলে এটি পরিষ্কার হয়ে যায়, হজরত আলী রাদিআল্লাহু তাআ'লা আনহু -এর ইন্তেকালের পর হজরত ইমাম হাসান রাদিআল্লাহু তাআ'লা আনহু কে বিষপানে শহীদ করা, কারবালার প্রান্তরে হজরত ইমাম হোসাইন রাদিআল্লাহু তাআ'লা আনহু ও রাসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর পরিবারের প্রায় সব সদস্যকে নিঃসংকোচে হত্যা করা সবই অত্যন্ত সুপরিকল্পিতভাবে করা হয়েছিল।
হজরত ইমাম হোসাইন রাদিআল্লাহু তাআ'লা আনহু অন্যায়ের কাছে নতি স্বীকার না করে যুদ্ধ করার সিদ্ধান্ত গ্রহন করেন এবং যুদ্ধ করে শাহাদাত বরণ করেন। কারবালার হৃদয় বিদারক ঘটনা সত্য-সুন্দর প্রতিষ্ঠার সংগ্রামী চেতনাকে সমুজ্জ্বল করে রেখেছে, কারবালার শহীদানের স্মৃতি যুগ যুগ ধরে মানব জাতিকে সত্য ও ন্যায়ের পথে চিরদিন প্রেরণা জুগিয়ে আসবে।
মুহররমের প্রকৃত শিক্ষা:
আশুরার দিন ফোরাত নদীর তীরে ঐতিহাসিক কারবালা প্রান্তরে সংঘটিত হয় ইতিহাসের নির্মম ও নৃশংতম ঘটনা। সত্য ও ন্যায়ের ঝান্ডা সমুন্নত রাখতে, পৃথিবীর বুকে আল্লাহর মনোনীত খিলাফত প্রতিষ্ঠা করতে স্বৈর শাসক ইয়াযীদের অনুগত সৈন্যদের হাতে অত্যন্ত নির্মমভাবে শাহাদত বরণ করেন নবী-দৌহিত্র জান্নাতী যুবকদের সর্দার মা ফাতিমার নয়নের মণি হযরত হুসাইন বিন আলী রাদিআল্লাহু তাআ'লা আনহুমাসহ তাঁর সাথীগণ। ইরাকের ফোরাত নদীর তীরের কারবালা প্রান্তরে অকাতরে নিজের প্রাণ বিসর্জন দিয়ে হযরত হুসাইন রাদিআল্লাহু তাআ'লা আনহু যে স্বর্ণোজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছিলেন তা স্বীয় মহিমায় আজো অম্লান, আজো ভাস্বর। সত্য ও ন্যায়ের জন্য এরূপ আত্মনিবেদন গোটা মানবজাতির ইতিহাসে অতি বিরল। কারবালা প্রান্তরে সংঘটিত সেদিনের সেই নির্মমতা ও নৃশংসতার কথা স্মরণে আমাদের হৃদয়মন বেদনাহত হয়, চোখ অশ্রুভারাক্রান্ত হয়। এ সত্য, স্বাভাবিক, কিন্তু মুহাররম ও আশুরার প্রকৃত শিক্ষা ও তাৎপর্য কিন্তু এই বেদনা ও শোক প্রকাশেই সীমাবদ্ধ নয়। সীমাবদ্ধ থাকা উচিত নয়। সীমাবদ্ধ থাকা উচিত নয় 'ইয়া হোসেন', ‘হায় হোসেন’ মাতমে আর মর্সিয়া ক্রন্দনে। বরং ‘ত্যাগ চাই মর্সিয়া ক্রন্দন চাহি না' এটাই হওয়া উচিত মুহাররম ও আশুরার প্রকৃত শিক্ষা ও মর্মবাণী।
আজকের পৃথিবীতে মানবতার এই ঘোর দুর্দিনে মুহাররম ও আশুরার অন্তর্নিহিত এই মর্ম ও তাৎপর্য অনুধাবনের তীব্র প্রয়োজন। প্রয়োজন হযরত হুসাইন রাদিআল্লাহু তাআ'লা আনহু এর প্রকৃত অনুসারী, তাঁর আদর্শে অনুপ্রাণিত বীর সন্তানদের। অন্যায়-অসত্য, অনাচার ও পাপাচারের বিরুদ্ধে যাদের ‘হুসাইনি শীর’ থাকবে সদা উন্নত। সত্য ও কল্যাণের স্বার্থে যে শীর বিসর্জন দিতে তারা সামান্যতম দ্বিধা ও কুণ্ঠাবোধ করবে না। আর তাদের এই আত্মত্যাগের বিনিময়ে ইসলাম ফিরে পাবে তার হৃত গৌরব ও মর্যাদা, হারানো শান-শওকত ও প্রভাব-প্রতিপত্তি, যুগে যুগে সত্য ও ন্যায়ের ঝান্ডাবাহী এই সকল বীর সন্তানদের আত্মবিসর্জনের মাধ্যমেই ইসলাম নবজীবন লাভ করেছে। কবির কন্ঠে উচ্চকিত আওয়াজ- ‘ইসলাম যিন্দা হোতা হ্যায় হার কারবালাকে বাদ।' - কারবালার মত প্রতিটি ঘোরতর বিপর্যয়ের পরে পৃথিবীতে ইসলাম নবজীবনলাভ করে।
আপাত দৃষ্টিতে কারবালা প্রান্তরে সেদিন ইয়াযীদের বিজয় হয়েছিল, কিন্তু প্রকৃত বিচারে তা ছিল তার পরাজয়, তার ব্যর্থতা। সে পরাজয় সত্যকে অস্বীকার করার, সে ব্যর্থতা স্বৈরাচারকে প্রশ্রয় দেওয়ার। আর সেদিন প্রকৃত বিজয় হয়েছিল হযরত হুসাইন রাদিআল্লাহু তাআ'লা আনহু ও তাঁর অনুসারীদের। সে বিজয় ছিল সত্য ও ন্যায়ের বিজয়, সুমহান আদর্শের বিজয়। তাই হযরত হুসাইন রাদিআল্লাহু তাআ'লা আনহু এর সে আদর্শ আজো অম্লান, আজো ভাস্বর। সহস্র বছরের ব্যবধান সত্ত্বেও আজো তা সত্য ও ন্যায়ের অনুসারীদের অনুপ্রেরণার উৎস। পথচলার পাথেয়।
পক্ষান্তরে নিকৃষ্ট স্বৈরাচার খুনি ইয়াযীদ মরে গেছে কিন্তু তার উত্তরসুরিরা বেঁচে আছে আজো, হয়তো বেঁচে থাকবে পৃথিবীর শেষ দিন পর্যন্ত। কারণ, সত্যের পাশাপাশি মিথ্যা আর আলোর বিপরীতে আঁধারের অবস্থান চিরকালীন। অন্যায়-অসত্য, অনাচার-পাপাচার আর স্বৈরাচারে তারা বিষাক্ত করে চলেছে মানব সমাজকে। পৃথিবীর আনাচে কানাচে তারা জন্ম দিয়ে চলেছে নিত্য নতুন কারবালার বিভীষিকা। মিথ্যের সামনে মাথা না নুইয়ে, সত্য পথে অবিচল এবং স্থির থেকে তাদেরকে আজ সর্বশক্তি দিয়ে প্রতিহত করার শিক্ষাই মুহররমের প্রকৃত শিক্ষা।
অপ্রিয় সত্য হচ্ছে- মুহররম ও আশুরার প্রকৃত শিক্ষা ও তাৎপর্যের উপলব্ধি আজ আমাদের মাঝে অনেকটাই অনুপস্থিত। আমাদের মুহাররম ও আশুরা তাই অনেকটা কৃত্রিমতা, লৌকিকতা ও আনুষ্ঠানিকতাসর্বস্ব। তাতে নেই তেমন প্রাণের ছোঁয়া, হৃদয়ের অনুভব কিংবা বিবেকের উপলব্ধি। নেই আশুরার প্রকৃত শিক্ষার উপস্থিতি। আশুরা মানে- সত্যের ঝান্ডা উঁচু করে শত্রুর মোকাবেলায় অটল-অবিচল থাকা। আশুরা মানে- মিথ্যার সামনে মাথা নত না করা। সেই শিক্ষা আজ কোথায়?
সকল প্রকার কুপ্রথা-মাতম-মর্সিয়া বর্জন করে মুহাররম ও আশুরার প্রকৃত শিক্ষা ও তাৎপর্য উপলব্ধি করতে হবে আমাদের। ইসলামের জন্য তথা সত্য ও ন্যায়ের জন্য মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে সর্বোচ্চ ত্যাগের শিক্ষা গ্রহণ করতে হবে এই আশুরা থেকে। তাহলেই সার্থক হবে আমাদের মুহাররম ও আশুরা পালন।
ছবি কৃতজ্ঞতা: অন্তর্জাল।
১৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৯ বিকাল ৩:৩০
নতুন নকিব বলেছেন:
সেটাই। এই দিনটি এলেই কারবালার বিয়োগান্তক চিত্রগুলো ভেসে ওঠে হৃদয়পটে।
আপনার আগমনে শুকরিয়া। শুভকামনা সবসময়।
২| ১৫ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৯ সকাল ১০:৪৪
মোঃ মাইদুল সরকার বলেছেন:
ইতিহাস থেকে শিক্ষা না নিলে ক্ষতি আমাদেরই।
১৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৯ বিকাল ৩:৩৩
নতুন নকিব বলেছেন:
সঠিক বলেছেন। ইতিহাস থেকে শিক্ষা গ্রহন না করলে সে জাতির ভবিষ্যত অন্ধকার।
সালামসহ ভালো থাকার প্রার্থনা।
৩| ১৫ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৯ বিকাল ৪:৪৩
ঠাকুরমাহমুদ বলেছেন: নতুন নকিব ভাই, আমি কখনো ইরাক যাইনি, আর এ জীবনে আর ইরাক যাবো মনে হয়না তা সম্ভব। কারবালা নিয়ে কিছু মিথ আমার জানা আছে। কারবালা রক্তপ্রান্তর!!! যুগে যুগে সে রক্ত চাইবে, কারবালা রক্ত নেবে। অনাদি অনন্তকাল চলতে থকবে এই রক্ত নেওয়ার দাবী।
১৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৯ বিকাল ৩:৪০
নতুন নকিব বলেছেন:
কারবালা নিয়ে এই ধরণের বিশ্বাস অনেকেই হয়তো পোষন করে থাকেন। এগুলোর পেছনে অবশ্য অনেক ঐতিহাসিক কারণও রয়েছে।
ঠাকুরমাহমুদ ভাই,
আপনার আগমনে মুগ্ধতা একরাশ। আশা, আপনি ভালো আছেন। পরিবারের সকলকে আমাদের পক্ষ থেকে সালাম। সবাইকে নিয়ে সবসময় ভালো থাকুন সেই দুআ করছি। আমরাও একই দুআপ্রার্থী।
৪| ১৫ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৯ বিকাল ৫:২৩
আরোগ্য বলেছেন: নকীব ভাই সুন্দর তাৎপর্যপূর্ণ পোস্টটি আশুরার আগে দিলে আরো ভালো হত। হয়তো ফেতনা থেকে অনেকে সচেতন হতো।
১৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৯ বিকাল ৩:৪৭
নতুন নকিব বলেছেন:
ঠিকই বলেছেন। আসলে নানাবিধ ব্যস্ততার কারণে পারিনি। আগামী সময়গুলোতে চেষ্টা থাকবে ইনশাআল্লাহ।
কৃতজ্ঞতাসহ শুভকামনা। ভালো থাকুন সবসময়।
৫| ১৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৯ বিকাল ৩:৫৭
ঠাকুরমাহমুদ বলেছেন: নতুন নকিব ভাই, আপনার জন্যও দোয়া করি ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন, ব্যাস্ত থাকুন। আপনার লেখা খুবই গুরুত্বপূর্ণ এবং প্রয়োজনীয়। আপনি লেখায় যেই শ্রম দিয়ে থাকেন তার মুল্যায়ন করা আমার মতো পাঠকের পক্ষে সম্ভব না। শুধু বলতে চাই ধন্যবাদ নতুন নকিব ভাই, ধন্যবাদ।
১৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৯ বিকাল ৪:২০
নতুন নকিব বলেছেন:
পুনরায় এসে মূল্যবান অভিমত ব্যক্ত করায় কৃতজ্ঞতা অশেষ ভাই। আপনি নিজে যেমন উঁচু এবং খোলা মনের মানুষ, অন্যকেও সেভাবেই মূল্যায়ন করবেন- একান্তই স্বাভাবিক। আপনার ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি সবসময় অন্যদের প্রেরণা যুগিয়ে থাকে। খুবই অল্প সময় ব্লগে থাকার সুযোগ হয়। লেখালেখির সাথে যেহেতু আজীবনের সখ্য, সে কারণেই টুকটাক একটু আধটু চেষ্টা-প্রচেষ্টা। আর এখানে আপনাদের মত জ্ঞানী-গুণীদের পাশে থাকতে পেরে সত্যিই সময়গুলো আরও উপভোগ্য হয়ে ওঠে। এই আনন্দ দীর্ঘায়িত হোক। দীর্ঘজীবি হোক আমাদের প্রিয় এই প্লাটফর্মটি।
ঠাকুরমাহমুদ ভাই, কেন জানি মনে হয়, আপনার সাথে কোনো এক দিন হয়তো দেখা হয়ে যাবে। কোনো এক পড়ন্ত বিকেলে। কোলাহলমুক্ত এক গ্রামের পথে।
বাস্তবে তা হবে কি? হলে ভালোই হবে।
অনেক অনেক শুভকামনা। ভালো থাকুন নিরন্তর।
৬| ১৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৯ বিকাল ৪:৪৪
ঠাকুরমাহমুদ বলেছেন: নতুন নকিব ভাই, অবস্যই অবস্যই দেখা হবে, নতুন নকিব ভাই ব্লগে আপনি আমাকে যেই সম্মান শ্রদ্ধা প্রদর্শন করেছেন - পরম মমতাময় সৃষ্টিকর্তার কাছে প্রার্থনা আপনাকে যেনো তিনি সেই সম্মান শ্রদ্ধা শত সহস্র গুণ বাড়িয়ে দেন। আপনার প্রতিটি দিন হোক সুন্দর আনন্দময়।
©somewhere in net ltd.
১| ১৫ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৯ সকাল ৯:৫৪
রাজীব নুর বলেছেন: ঐতিহাসিক সুখ-দুঃখ বিজড়িত নানা ঘটনাপ্রবাহের অবিস্মরণীয় ঘটনা নিয়ে মহরম আসে।