নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আলহামদুলিল্লাহ। যা চাইনি তার চেয়ে বেশি দিয়েছেন প্রিয়তম রব। যা পাইনি তার জন্য আফসোস নেই। সিজদাবনত শুকরিয়া। প্রত্যাশার একটি ঘর এখনও ফাঁকা কি না জানা নেই, তাঁর কাছে নি:শর্ত ক্ষমা আশা করেছিলাম। তিনি দয়া করে যদি দিতেন, শুন্য সেই ঘরটিও পূর্নতা পেত!

নতুন নকিব

যবে উৎপীড়িতের ক্রন্দল-রোল আকাশে বাতাসে ধ্বনিবে না, অত্যাচারীর খড়্গ কৃপাণ ভীম রণ-ভূমে রণিবে না- বিদ্রোহী রন-ক্লান্ত। আমি সেই দিন হব শান্ত।

নতুন নকিব › বিস্তারিত পোস্টঃ

কাতিবে অহি রাসূলে পাক সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের প্রিয় সহচর হযরত মুয়াবিয়া রাদিআল্লাহু তাআ\'লা আনহুর কীর্তিমান জীবন ও অবদান

২২ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৯ সকাল ১০:১৬



সাহাবীদের মর্যাদা বর্ণনায় এই পোস্টটিও দেখে নিতে পারেন-

দ্বীনের জন্য জীবনোৎসর্গকারী রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি অসাল্লাম এর সাহাবীগন... শুধুমাত্র দ্বীনের প্রচারের জন্য যারা ছড়িয়ে পড়েছিলেন বিশ্বময়... বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কারও কারও কবরের সন্ধান পাওয়া গেলেও... জানা যায়নি যাদের অনেকেরই অন্তিম ঠিকানা...

কাতিবে অহি রাসূলে পাক সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের প্রিয় সহচর হযরত মুয়াবিয়া রাদিআল্লাহু তাআ'লা আনহুর কীর্তিমান জীবন ও অবদান:

হযরত মুয়াবিয়া রাদিআল্লাহু তাআ'লা আনহুর জন্ম ৬০৮ খ্রিস্টাব্দে। রাসুল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের হিজরতের সময় তাঁর বয়স ছিল ১৮ বছর। তাঁর বংশ পঞ্চম পুরুষে এসে রাসুল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের বংশের সঙ্গে মিলে যায়। তার বংশ তালিকা নিন্মরূপ: মুয়াবিয়া বিন আবু সুফিয়ান সখর বিন হরব বিন উমাইয়া বিন আব্দুশ শামস বিন আব্দে মানাফ বিন কুতসী আল উমুরী আবু আব্দুর রহমান। তার পিতা আবু সুফিয়ান। তিনি উম্মুল মুমিনীন উম্মে হাবিবা রাদিআল্লাহু তাআ'লা আনহার সহোদর ভাই ছিলেন। তিনি মক্কা বিজয়ের সময় রাসুল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের হাতে বাইয়াত গ্রহণ করে ইসলাম প্রকাশ করলেও মূলত হিজরতের আগেই তিনি গোপনে ইসলাম গ্রহণ করেছিলেন। এ জন্যই তিনি বদর, ওহুদ, খন্দকসহ কোনো যুদ্ধেই মুসলমানদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে আসেননি। তিনি হুনাইনের যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। (উসদুল গাবাহ ৫/২১০)

মুয়াবিয়া রাদিআল্লাহু তাআ'লা আনহু আল্লাহপ্রদত্ত অসাধারণ বুদ্ধিমত্তা ও যোগ্যতার অধিকারী ছিলেন। রাসুল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে তিনি এতই নির্ভরযোগ্য ব্যক্তি ছিলেন যে তিনি তাঁকে ওহি লেখার দায়িত্ব দিয়েছিলেন। তিনি ফকিহ সাহাবিদের অন্তর্ভুক্ত ছিলেন। রাসুলে মাকবুল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে তাঁর সূত্রে ১৬৩ টি হাদিস বর্ণিত হয়েছে। সর্বপ্রথম তিনিই ইসলামের ইতিহাস রচনা করেছেন।

রাসুলে আকরাম সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের দৃষ্টিতে হযরত মুয়াবিয়া রাদিআল্লাহু তাআ'লা আনহু:
হযরত উম্মে হারাম রাদিআল্লাহু তাআ'লা আনহা বলেন, 'আমি রাসুল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বলতে শুনেছি, আমার উম্মতের সর্বপ্রথম সামুদ্রিক অভিযানে অংশগ্রহণকারী বাহিনীর জন্য জান্নাত অবধারিত'। (সহিহ বোখারি, হাদিস নং ২৯২৪)

এ হাদিসের ব্যাখ্যায় মুহাল্লাব (রহ.) বলেন, 'হাদিসটিতে হজরত মুয়াবিয়া রাদিআল্লাহু তাআ'লা আনহুর ফজিলত বর্ণিত হয়েছে। কেননা হযরত মুয়াবিয়া রাদিআল্লাহু তাআ'লা আনহুই ছিলেন ওই বাহিনীর সিপাহসালার'। (ফাতহুল বারী : ৬/১০২)

হযরত আবদুর রহমান ইবনে আবি উমায়রা রাদিআল্লাহু তাআ'লা আনহু বলেন, 'রাসুল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মুয়াবিয়ার জন্য এ দোয়া করেছিলেন, হে আল্লাহ! মুয়াবিয়াকে সঠিক পথে পরিচালনা করুন ও তাঁকে পথপ্রদর্শক হিসেবে কবুল করুন'। (তিরমিজি, হাদিস নং ৩৮৪২)

একবার মুয়াবিয়া রাদিআল্লাহু তাআ'লা আনহু রাসুল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের অজুতে পানি ঢেলে দিচ্ছিলেন, তখন রাসুল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁকে বললেন, 'হে মুয়াবিয়া, যদি তোমাকে আমির নিযুক্ত করা হয়, তাহলে আল্লাহকে ভয় করবে এবং ইনসাফ করবে।' মুয়াবিয়া রাদিআল্লাহু তাআ'লা আনহু বলেন, 'সেদিন থেকেই আমার বিশ্বাস জন্মেছিল যে, এ কঠিন দায়িত্ব আমার ওপর এসে পড়বে'। (মুসনাদে আহমাদ হাদিস নং ১৬৯৩৩)

হযরত ইবনে আব্বাস রাদিআল্লাহু তাআ'লা আনহু সূত্রে বর্ণিত, একদিন জিবরাঈল আলাইহিসসালাম রাসুল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে এসে বললেন, 'হে মুহাম্মদ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, মুয়াবিয়াকে সদুপদেশ দিন, কেননা সে আল্লাহর কিতাবের আমানতদার ও উত্তম আমানতদার'। (আল মুজামুল আওসাত, হাদিস নং ৩৯০২)

খোলাফায়ে রাশেদিনের যুগে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন:
অসাধারণ নৈপুণ্যের কারণে হযরত উমর রাদিআল্লাহু তাআ'লা আনহু তাঁর খেলাফতকালে তাঁকে দামেস্কের আমির নিযুক্ত করেছিলেন। হজরত ওসমান রাদিআল্লাহু তাআ'লা আনহু তাঁকে পুরো শামের (সিরিয়ার) আমির নিযুক্ত করেছিলেন। তাঁদের খেলাফতকালে মুয়াবিয়া রাদিআল্লাহু তাআ'লা আনহু ইসলামের বহু যুদ্ধে নেতৃত্ব দিয়ে অনেক দেশ জয় করেছিলেন।

খেলাফত আমলের কীর্তি:
হযরত মুয়াবিয়া রাদিআল্লাহু তাআ'লা আনহু চরম সংকটাপন্ন পরিস্থিতিতে খেলাফতের দায়িত্ব গ্রহণ করেছিলেন। তিনি সব ফিতনা দমন করে শান্তি ও নিরাপত্তা ফিরিয়ে আনেন। পরিস্থিতি এমন হয় যে, মহিলারা রাতে তাদের ঘরের দরজা খুলে ঘুমাতেও ভয় করত না, কোনো ব্যক্তি পথে পড়ে থাকা কারো জিনিস ছুঁয়ে দেখার সাহস পেত না। তাঁর শাসনামলে সারা পৃথিবীতে কোনো মুসলমান ভিক্ষুক ছিল না। রাজ্যের অমুসলিম নাগরিকদেরও শান্তি ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করেছিলেন। তিনিই সর্বপ্রথম যোগাযোগের জন্য ডাক বিভাগ চালু করেন এবং সরকারি দলিল-দস্তাবেজ সংরক্ষণের জন্য পৃথক বিভাগ চালু করেন। তিনি মুসলিম বাহিনীকে সুশৃঙ্খল রূপ দেন ও ইসলামের দাওয়াত বিশ্বময় ছড়িয়ে দেওয়ার জন্যও বিশেষ উদ্যোগ গ্রহণ করেন। (তারিখে ত্বাবারি, মু'জামুল বুলদান ৪/৩২৩, সিয়ারু আলামিন নুবালা ৩/১৫৭)

পর্তুগাল থেকে চীন পর্যন্ত এবং আফ্রিকা থেকে ইউরোপ পর্যন্ত ৬৫ লাখ বর্গমাইল বিস্তৃত অঞ্চল তাঁর শাসনামলে ইসলামের পতাকাতলে চলে আসে। তিনি দীর্ঘ ২৫ বছর খেলাফতের গুরুদায়িত্ব পালন করেন ।

ইয়াজিদকে খলিফা নিযুক্তির কারণ:
হযরত মুয়াবিয়া রাদিআল্লাহু তাআ'লা আনহু যখন জীবন সায়াহ্নে পৌঁছলেন, বিশিষ্ট সাহাবি হজরত মুগিরা ইবনে শু'বা রাদিআল্লাহু তাআ'লা আনহু যিনি বাইআতে রিদ্ওয়ানে রাসুল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সঙ্গী হওয়ার সৌভাগ্য অর্জন করেছিলেন, তিনি মুয়াবিয়া রাদিআল্লাহু তাআ'লা আনহুকে পরামর্শ দিলেন যে, হযরত উসমান রাদিআল্লাহু তাআ'লা আনহুর শাহাদাতের পর মুসলমানদের যে করুণ পরিস্থিতিতে পড়তে হয়েছে, তা আপনার সামনেই রয়েছে। তাই আমার পরামর্শ হলো, সব প্রাদেশিক গভর্নরকে ডেকে আপনার জীবদ্দশায়ই ইয়াজিদের হাতে বাইয়াত নিয়ে উম্মতকে রক্তক্ষয়ী হাঙ্গামা থেকে রক্ষা করুন। এ পরামর্শ আনুযায়ী হযরত মুয়াবিয়া রাদিআল্লাহু তাআ'লা আনহু সব গভর্নরের কাছে এ মর্মে চিঠি প্রেরণ করলেন যে, আমি জীবন সায়াহ্নে পৌঁছে গেছি, তাই চাচ্ছি যে, মুসলমানদের কল্যাণে আমার জীবদ্দশায়ই একজন খলিফা নিযুক্ত করে যাব। অতএব তোমরা নিজ নিজ পরামর্শ ও তোমাদের পরামর্শদাতাদের মধ্যে যোগ্য ব্যক্তিদের পরামর্শও লিখে পাঠাও।

ইয়াজিদের অপরাধের দায় মুয়াবিয়া রাদিআল্লাহু তাআ'লা আনহুর উপর বর্তাবে না যে কারণে:
এতে বেশির ভাগ আমিরই ইয়াজিদ ইবনে মুয়াবিয়ার পক্ষে রায় দিলেন। কুফা, বসরা, শাম ও মিসরের লোকেরা ইয়াজিদের হাতে বাইয়াত গ্রহণ করে নিল। বাকি মক্কা-মদিনার গুরুত্ব বিবেচনা করে মুয়াবিয়া রাদিআল্লাহু তাআ'লা আনহু স্বয়ং হিজাযে উপস্থিত হয়ে সেখানকার গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের সঙ্গে পরামর্শ করেন। এতে মক্কা-মদিনার জনসাধারণও ইয়াজিদের বাইয়াত গ্রহণ করে নিলেন। আর হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমর রাদিআল্লাহু তাআ'লা আনহু, আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রাদিআল্লাহু তাআ'লা আনহু, আব্দুল্লাহ ইবনে যুবাইর রাদিআল্লাহু তাআ'লা আনহু, হুসাইন ইবনে আলী রাদিআল্লাহু তাআ'লা আনহু ও আব্দুর রহমান ইবনে আবী বকর রাদিআল্লাহু তাআ'লা আনহু - এ পাঁচজনের ব্যাপারে খেলাফত মেনে না নেওয়ার শঙ্কা থাকায় মুয়াবিয়া রাদিআল্লাহু তাআ'লা আনহু পৃথক পৃথকভাবে প্রত্যেকের সঙ্গে মিলিত হয়ে পরামর্শ করেন। এতে প্রথমোক্ত চারজন এ বলে মেনে নিলেন যে, সব লোক স্বতঃস্ফূর্তভাবে মেনে নিলে আমাদের কোনো আপত্তি নেই। শুধু হযরত আবদুর রহমান ইবনে আবী বকর রাদিআল্লাহু তাআ'লা আনহু এতে দ্বিমত পোষণ করলেন। এভাবে বেশির ভাগ উম্মতের রায় মতে ইয়াজিদের খেলাফত নিশ্চিত হলো। তাই মুয়াবিয়া রাদিআল্লাহু তাআ'লা আনহুর ইন্তেকালের পর ইয়াজিদ থেকে যেসব অন্যায় কাজ সংঘটিত হয়েছিল, তার দায়ভার মুয়াবিয়া রাদিআল্লাহু তাআ'লা আনহুর উপর বর্তাবে না, বরং ইয়াজিদের অন্যায়ের জন্য ইয়াজিদ নিজেই দায়ী। (তারিখে ইবনুল আসীর ৩/৯৭-১০০)

আবু শায়বা ‘মুসান্নাফ’ গ্রন্থে এবং তাবারানী ‘কবীর’ গ্রন্থে আব্দুল মালিক বিন উমায়ের থেকে বর্ণনা করেছেন যে, মুয়াবিয়া রাদিআল্লাহু তাআ'লা আনহু বলেছেন, “আমি সে সময় থেকে খিলাফতের আশা পোষণ করে আসছি, যখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছিলেন – ‘মুয়াবিয়া, তুমি বাদশাহ হলে লোকদের কাছে খুব ভালোভাবে উপস্থাপিত হবে।’''

আমীর মুয়াবিয়া রাদিআল্লাহু তাআ'লা আনহু শারীরিক উচ্চতাসম্পন্ন আর সুন্দর চেহারাবিশিষ্ট ব্যক্তি ছিলেন। উমর রাদিআল্লাহু তাআ'লা আনহু তাঁকে দেখে বলতেন, “এ আরবের কিসরা (পারস্য সম্রাট)।”

আলী রাদিআল্লাহু তাআ'লা আনহু থেকে বর্ণিত হয়েছে যে, তিনি বলেছেন, “মুয়াবিয়াকে খারাপ ভেবো না। তার অন্তর্ধানে দেখবে অনেক মাথা দেহ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবে।”

মুকবিরী বলেছেন, “আশ্চর্য! লোকেরা কিসরা আর কায়সাররে আলোচনায় মগ্ন, কিন্তু তারা মুয়াবিয়ার কথা ভুলে গেছে!”

আমীর মুয়াবিয়ার দয়াদ্রতা ছিল উপমাহীন, তার নম্রতাও ছিল উপমাহীন। ইবনে আবীদ দুনিয়া আর আবু বকর বিন আবু আসেম তার নম্রতার উপর পৃথক গ্রন্থ রচনা করেছেন।

ইবনে আউফ রাদিআল্লাহু তাআ'লা আনহু বলেছেন যে, এক ব্যক্তি আমীর মুয়াবিয়াকে বললো, “মুয়াবিয়া, আপনি সোজা হয়ে যান, না হলে আমি আপনাকে সোজা করবো।”

তিনি জিজ্ঞেস করলেন, “তুমি কিভাবে সোজা করতে পারো ?”

সে বললো, “কাঠের আঘাতে।”

তিনি বললেন, “সে সময় ঠিকই সোজা হয়ে যাবো।”

কাবিসা বিন জাবের বলেছেন, “আমি অনেক দিন তার সাহচর্যে থেকে দেখেছি, তার চেয়ে বেশী জ্ঞানী, ধৈর্যশীল আর বুদ্ধিমান দেখিনি।”

বিশ বছর আমীর আর বিশ বছর খলীফা ছিলেন মুআবিয়া রাদিআল্লাহু তাআ'লা আনহু:
আবু বকর সিদ্দীক রাদিআল্লাহু তাআ'লা আনহু সিরিয়ায় সেনাবাহিনী পাঠানোর সময় আমীর মুয়াবিয়া রাদিআল্লাহু তাআ'লা আনহু নিজের ভাই ইয়াজিদ বিন আবু সুফিয়ানের সাথে সিরিয়ায় যান। ইয়াজিদের মৃত্যুর পর আবু বকর সিদ্দীক রাদিআল্লাহু তাআ'লা আনহু তার স্থানে মুয়াবিয়ার নাম ঘোষনা করেন। এরপর উমর ফারুক রাদিআল্লাহু তাআ'লা আনহু তাঁকে অপরিবর্তিত রাখেন। উসমান গনী রাদিআল্লাহু তাআ'লা আনহু এর যুগে তিনি গোটা সিরিয়ার গভর্নরের পদ অংকৃত করেন। এ দৃষ্টিকোণ থেকে তিনি বিশ বছর আমীর আর বিশ বছর খলীফার তখত শোভিত করেন।

কাবে আহবার (রহঃ) বলেছেন, “এ উম্মত আমীর মুয়াবিয়ার চেয়ে দীর্ঘ শাসন প্রত্যক্ষ করেনি।”

যাহাবী (রহঃ) বলেছেন, আমীর মুয়াবিয়ার খিলাফতের আগেই কাব আহবারের মৃত্যু হয়। কাব স্বীকার করেছেন, তার একাধারে বিশ বছর খিলাফতকালে কোথাও কোন গভর্নর অথবা স্থানীয় প্রশাসক বিদ্রোহ করেননি, যেমন তার পরবর্তীতে অন্য খলীফাদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ হয়েছিলো, আর এতে করে অনেক জনপদ তাদের হাতছাড়া হয়েছে।

আমীর মুয়াবিয়া রাদিআল্লাহু তাআ'লা আনহু আলী রাদিআল্লাহু তাআ'লা আনহু এর উপর নিজের নাম খলীফা রাখেন। এভাবে ইমাম হাসান রাদিআল্লাহু তাআ'লা আনহু এর উপরও প্রস্থান করেন। এজন্য ইমাম হাসান রাদিআল্লাহু তাআ'লা আনহু পৃথক হয়ে যান, ফলে আমীর মুয়াবিয়া রাদিআল্লাহু তাআ'লা আনহু ৪১ হিজরীর রবিউস সানী অথবা জমাদিউল আউয়াল মাসে মসনদে আরোহণ করেন। একজন খলীফার ব্যাপারে উম্মতের ইজমার কারণে এ বছরকে ‘সালে জামায়াত’ নামে অভিহিত করা হয়।

৪১ হিজরীতে আমীর মুয়াবিয়া রাদিআল্লাহু তাআ'লা আনহু মারওয়ান বিন হাকামকে মদীনা শরীফের গভর্নর নিযুক্ত করেন।

৪৩ হিজরীতে রাহাজ শহর সিজিসতান থেকে, দাওয়ান বারাকা থেকে আর কুযী শহর সুদান থেকে বিজয় লাভ করে। এ বছর তিনি স্বীয় ভ্রাতা যিয়াদকে নিজের উত্তরাধিকারী নিয়োগ করলে সর্বপ্রথম বিবাদের সূচনা হয়, যা নবী কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর নির্দেশের বৈপরিত্য সৃষ্টি করে।

৪৫ হিজরীতে কায়কাহন আর ৫০ হিজরীতে কুহিস্তান যুদ্ধের মাধ্যমে জয় হয়। সে বছরেই আমীর মুয়াবিয়া নিজের ছেলে ইয়াযিদের জন্য পরবর্তী খলীফা হিসেবে সিরিয়াবাসীর কাছ থেকে বাইয়াত গ্রহণ করেন। এ দৃষ্টিকোণ থেকে ইসলামের ইতিহাসে তিনি প্রথম সেই ব্যক্তি, বেঁচে থাকা অবস্থায় (যিনি) নিজের ছেলের জন্য বাইয়াত গ্রহণ করেছেন। এরপর আমীর মুয়াবিয়া রাদিআল্লাহু তাআ'লা আনহু মদীনাবাসীর কাছ থেকে ইয়াযিদের জন্য বাইয়াত গ্রহণ করতে মারওয়ানের প্রতি লিখিত ফরমান পাঠালেন। সুতরাং মারওয়ান খুতবার মধ্যে বললেন, “খলীফার পক্ষ থেকে নির্দেশ এসেছে আমি তার ছেলে ইয়াযিদের জন্য আপনাদের কাছ থেকে আবু বকর আর উমরের রীতিনীতি অনুযায়ী বাইয়াত নিবো।” সঙ্গে সঙ্গে আব্দুর রহমান বিন আবু বকর সিদ্দীক রাদিআল্লাহু তাআ'লা আনহু প্রতিবাদ করে বললেন,“না, না, বরং তা কিসরা ও কায়সারের রীতিনীতি। কারণ আবু বকর আর উমর নিজের সন্তানাদি ও পরিবার-পরিজনের জন্য কখনো কারো কাছ থেকে বাইয়াত গ্রহণ করেননি।”

৫১ হিজরীতে আমীর মুয়াবিয়া হাজ্জ পালন করেন আর ইয়াযিদের জন্য বাইয়াত গ্রহণ করেন। তিনি ইবনে উমর রাদিআল্লাহু তাআ'লা আনহু কে ডেকে বললেন, “একদিন তুমি আমার নেতৃত্বের প্রশংসা করেছিলে, কিন্তু আজ আমার খিলাফত সম্পর্কে জনসাধারণ্যে সংশয়ের বীজ বপন করছো।”

ইবনে উমর রাদিআল্লাহু তাআ'লা আনহু হামদ ও সানার পর বললেন, “আপনার আগের খলীফারবৃন্দের পুত্র সন্তন ছিলো, যাঁদের থেকে আপনার ছেলে কোন দিক থেকেই শ্রেষ্ঠ নয়। তবুও পুর্ববর্তী খলীফাগণ নিজ সন্তানদের কখনো ক্ষমতার উত্তরাধিকার করেননি; বরং তারা বিষয়টি জনসাধারণের উপর ন্যস্ত করেছেন। আপনিও সেভাবে ইজমা করুন, আমি ইজমাকারীদের একজন। আপনি আমাকে ভয় দেখাচ্ছেন যে, আমি মানুষদের মধ্যে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করছি, অথচ আমি তা করিনি।” এ বলে তিনি চলে গেলেন।

এরপর তিনি ইবনে আবু বকর রাদিআল্লাহু তাআ'লা আনহু কে ডেকে একই বিষয় উত্থাপন করলে ইবনে আবু বকর রাদিআল্লাহু তাআ'লা আনহু মুখের কথা কেড়ে নিয়ে বললেন, “আপনি কি মনে করেছেন এ কাজের জন্য আমরা আপনাকে প্রতিনিধি বানিয়েছি? আল্লাহর কসম, আমরা এ কাজের জন্য আপনাকে নেতা মনোনীত করিনি। আল্লাহর কসম, আমরা চাই এ বিষয়টি সকল মুসলমানের ঐক্যবদ্ধ শূরার (কমিটি) কাছে ন্যস্ত করতে, না হলে আমরা প্রতারিত হয়ে বিষয়টি খারাপ করে দিবো।” এ বলে তিনি চলে গেলেন।

ইবনে আবু বকর রাদিআল্লাহু তাআ'লা আনহু যাওয়ার সময় আমীর মুয়াবিয়া রাদিআল্লাহু তাআ'লা আনহু প্রথমে এ বলে দুয়া করলেন, “হে আল্লাহ, এ লোকের অনিষ্ট থেকে আপনি যেভাবেই হোক আমাকে রক্ষা করুন।” এরপর আমীর মুয়াবিয়া রাদিআল্লাহু তাআ'লা আনহু বললেন, “তুমি কাজের মধ্যে কঠোরতা অবলম্বন করে এ সংবাদ সিরিয়াবাসীকে জানিয়ে দিয়ো না। তারা যেন তোমাদের সাথে মিলিত হয়ে কিছু না করতে পারে। আমি চাই তোমরা ইয়াযিদের জন্য বাইয়াত করেছো – এ খবর সিরিয়ায় পৌছে দিতে।”

এরপর আমীর মুয়াবিয়া রাদিআল্লাহু তাআ'লা আনহু ইবনে যুবায়ের রাদিআল্লাহু তাআ'লা আনহু কে ডেকে বললেন, “হে যুবায়েরের ছেলে, তুমি তো খেঁকশিয়ালের মতো এক ক্ষেত থেকে বের হয়ে আরেক ক্ষেতে গিয়ে লুকাও। তুমি ওদের কানে (ইবনে উমর রাঃ আর ইবনে আবু বকর রাদিআল্লাহু তাআ'লা আনহু) কোন বাতাস ছড়িয়ে দিয়েছো, যা তাঁদেরকে বাইয়াত গ্রহণে বিরত রেখেছে?”

ইবনে যুবায়ের রাদিআল্লাহু তাআ'লা আনহু বললেন, “আপনি খিলাফত সম্পর্কে অসন্তুষ্ট হলে ক্ষমতা থেকে সরে দাঁড়ান। আমরা আপনার ছেলের হাতেই বাইয়াত দিবো। আপনিই বলুন, আমরা আপনার বাইয়াত না আপনার বাইয়াতের আনুগত্য করবো? একই যুগে দুই বাদশাহর বাইয়াত গ্রহণযোগ্য হতে পারে না।” এ বলে তিনি চলে গেলেন।

তারপর আমীর মুয়াবিয়া মিম্বরে আরোহণ করে হামদ ও নাতের পর বললেন, “আমি অপরিপক্ক লোকদের বলতে শুনেছি, ইবনে উমর, ইবনে আবু বকর আর ইবনে যুবায়ের কখনো ইয়াযিদকে বাইয়াত দিবে না। বস্তুত: তারা ইয়াযিদের ইতাআত ও বাইয়াত সবই করেছে।” এ কথা শুনে সিরিয়াবাসী বললো, “আল্লাহর কসম, তারা আমাদের সামনে বাইয়াত না করলে আমরাও বাইয়াত করবো না। আর তারা বাইয়াত করতে অস্বীকার করলে আমরা তাদের গর্দান উড়িয়ে দিবো।”

আমীর মুয়াবিয়া বললেন, “সুবহানাল্লাহ! আল্লাহর কসম, এর আগে তোমাদের মুখে কুরাইশদের শানে ধৃষ্টতাপূর্ণ উক্তি আর কখনো শুনিনি।” এ বলে তিনি নিচে নেমে এলেন। এরপর লোকেরা ইবনে উমর, ইবনে আবু বকর আর ইবনে যুবায়ের কর্তৃক ইয়াযিদের বাইয়াত গ্রহণের বিষয়ে আলোচনা করছিলো, অথচ তারা তার বাইয়াতের বিষয়টি সবসময় প্রত্যাখ্যান করে এসেছে। আমীর মুয়াবিয়া হজ্জ শেষে সিরিয়ায় ফিরে যান।

ইবনে মানকাদর বলেছেন, “ইয়াযিদকে বাইয়াত দেওয়ার সময় ইবনে উমর বলেছিলেন, তিনি যদি ভালো মানুষ হোন, তবে তার প্রতি সন্তুষ্ট, নতুবা বিপদের সময় ধৈর্য ধারণ করবো।”

হাওয়াতিফ গ্রন্থে হুমায়েদ বিন ওহাবের বরাত দিয়ে খারায়েতী লিখেছেনঃ আমীর মুয়াবিয়ার মা হিন্দা বিনতে উতবা বিন রবীয়ার প্রথমে ফাকা বিন মুগীরার সাথে বিয়ে হয়। ফাকার একটি বৈঠকখানা ছিল, এখানে অবাধে লোক যাতায়াত করতো। একদিন হিন্দা আর ফাকা বৈঠকখানায় বসে ছিল। কিছুক্ষণ পর কোনো এক কাজে ফাকা উঠে যায়। এমন সময় এক ব্যক্তি বৈঠকখানায় এসে একাকী নারীর উপস্থিতি দেখে চলে যেতে উদ্যোত হয়। ঠিক এ মুহূর্তে ফাকা এসে বৈঠকখানা থেকে অপরিচিত লোক বের হতে দেখে হিন্দাকে আক্রমণ করে জানতে চায় ওই ব্যক্তির সাথে তার কি সম্পর্ক। হিন্দা নিজেকে নির্দোষ প্রমাণ করতে চাইলে ফাকা বললো, আমার বাড়ি থেকে বেড়িয়ে যাও। সংবাদটি দ্রুত চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে আর তা নিয়ে মানুষের মাঝে ব্যাপক কানাঘুষা আরম্ভ হয়। ফলে হিন্দার বাবা উতবা মেয়েকে বললো, “আলোচনা-সমালোচনায় লোকেরা কান ভারি করে ফেলেছে। তুমি আমাকে সত্য করে বলো, যদি তোমার স্বামী সঠিক হয় তবে লোক নিয়োগ করে তার গর্দান উড়িয়ে দিবো। আর যদি সে মিথ্যাবাদী হয় তবে ইয়ামানের কোন যাদুকরের কাছে বিষয়টি পেশ করবো।”

এরপর হিন্দা নিজেকে সতী প্রমাণ করার জন্য জাহেলি যুগে যত কসম ছিল সব কসম করতে শুরু করলো। এতে করে উতবার বিশ্বাস হয় যে, হিন্দা সতী। আর ফাকা তার মেয়ের প্রতি অপবাদ দিয়েছে। এজন্য উতবা নিজ গোত্রীয় লোকদের নিয়ে ইয়ামানে যায়। এদিকে ফাকাও বনু মাখযুম আর উকবা বিন আব্দে মান্নাফ গোত্রের লোকদের নিয়ে ইয়ামান যাত্রা করে। ইয়ামানের কাছাকাছি গিয়ে হিন্দার চেহারা ফ্যাকাশে হয়ে গেলে উতবা বললো, “এটাই প্রমাণ করে যে, তুমি অপরাধী।” হিন্দা উদ্বিগ্নতা প্রকাশ করে বললো, “আপনি আমাকে এমন লোকের কাছে নিয়ে যাচ্ছেন, যার কথা সত্যও হতে পারে, আবার মিথ্যাও হতে পারে। যদি সে আমাকে কুলটা বলে দেয়, তবে আমি আর আরবে মুখ দেখাতে পারবো না।” উতবা বললো, “তোমার বিষয় উত্থাপন করার আগে আমি তার পরীক্ষা নিবো। উত্তীর্ণ হলে তবেই তোমার বিষয়টি পেশ করবো, নতুবা নয়।”

উতবা ঘোড়ার কানে গমের একটি দানা দিয়ে কানের ছিদ্র বন্ধ করে দিলো। ইয়ামানে পৌঁছার পর পশু যবেহ করে সম্মানের সাথে যাদুকরকে খাওয়ানোর পর উতবা বললো, “আমি একটি গোপন বিষয় নিয়ে এসেছি; এর আগে বলুন, আমি কি করেছি ?” সে ঘোড়ার কানে গম দিয়ে ছিদ্র বন্ধ করে দেওয়ার বিষয়টি বলার পর উতবা বললো, “আপনি সঠিক বলেছেন।” এরপর হিন্দার ব্যাপারে জানতে চাইলে সে অন্য এক রমনীর কাছে গিয়ে তার মাথার চুল ধরে বললো, “দাঁড়িয়ে যা।” এভাবে তিনবার করার পর হিন্দার কাছে এসে তার মাথায় হাত রেখে বললো, “তুমি সতী ও পবিত্রা রমণী। তুমি যিনা করোনি। মুয়াবিয়া নামে তোমার গর্ভে এক বাদশাহ জন্মগ্রহণ করবেন।”

একথা শুনে ফাকা হিন্দার হাত চেপে ধরে, কিন্তু সে তা ছাড়িয়ে নিয়ে বললো, “তুমি চলে যাও। আমি আপ্রাণ চেষ্টা করবো আমার গর্ভের সম্ভাব্য বাদশাহ যেন তোমার ঔরস থেকে না হয়।” এরপর হিন্দার সাথে আবু সুফিয়ানের বিয়ে হয় আর আমীর মুয়াবিয়া জন্মগ্রহণ করেন।

আমীর মুয়াবিয়া রাদিআল্লাহু তাআ'লা আনহু ৬০ হিজরীর রজব মাসে ইন্তেকাল করেন। বাবে জাবীয়া আর বাবে সগীরের মধ্যবর্তীতে তাঁকে সমাহিত করা হয়।

কথিত আছে, তার বয়স হয়েছিল ৭৭ বছর। তার কাছে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর কেশ আর নখ ছিল। মৃত্যুর সময় তিনি ওসীয়ত করেছিলেন, সেগুলো যেন তার চোখে আর মুখে দিয়ে তাঁকে দাফন করা হয়।

আমীর মুয়াবিয়ার জীবনের কিছু খন্ডচিত্র:
ইবনে আবি শাইবা ‘মুসান্নাফ’গ্রন্থে সাঈদ বিন জুমহানের বরাত দিয়ে লিখেছেনঃ আমি সাফীনাকে বললাম, বনূ উমাইয়া বলেছে, খিলাফত তাদের বংশীয়। তিনি বললেন, সে সঠিক বলেনি। তিনি বাদশাহ, কঠোর বাদশাহ। আর সর্বপ্রথম বদশাহ হলেন মুয়াবিয়া।

বায়হাকী আর ইবনে আসাকির ইবরাহীম বিন সুওয়াইদুল আরমানীর বরাত দিয়ে বলেছেনঃ ইমাম আহমাদ বিন হাম্বলকে জিজ্ঞেস করা হলো, “খলীফা কে কে?”

তিনি বললেন, “আবু বকর, উমর, উসমান আর আলী রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুম।”

আমি বললাম, “আর মুয়াবিয়া?”

তিনি বললেন, “হযরত আলী রাদিআল্লাহু তাআ'লা আনহুর যুগে খিলাফতের যোগ্য আলী ছাড়া আর কেউ ছিল না।”

সালাফী ‘তৌরিয়াত’ গ্রন্থে লিখেছেনঃ আব্দুল্লাহ বিন আহমাদ বিন হাম্বল (রহঃ) হযরত আলী রাদিআল্লাহু তাআ'লা আনহু আর হযরত মুয়াবিয়া রাদিআল্লাহু তাআ'লা আনহু সম্পর্কে তার পিতাকে জিজ্ঞেস করলে তিনি বললেন, “আলীর অনেক শত্রু ছিল। তারা সর্বদা তার ভুল ক্রুটির অনুসন্ধান করতো। তার কোন দোষ-ক্রুটি না পেয়ে তারা এমন লোকের কাছে সমবেত হয়, যে আগে থেকেই হযরত আলীর ব্যাপারে শত্রুতা পোষণ করতো।”

ইবনে আসাকির আব্দুল মালিক বিন উমায়ের (রহঃ) থেকে বর্ণনা করেছেনঃ একদিন জারিয়া বিন কুদামা সাদী আমীর মুয়ায়বিয়ার কাছে গেলে তিনি বললেন, “তুমি কে?”

জারীয়া বললেন, “আমি জারীয়া বিন কুদামা।”

তিনি বললেন, “তুমি কি সৃষ্টি করতে চাও? তুমি তো মূল্যহীন মধুওয়ালা মাছি।”

জারীয়া বললেন, “আপনি এমন দৃষ্টান্ত দিয়েছেন যে, সেই মাছির হুল অত্যন্ত শক্ত আর মজবুত।”

ফজল বিন সুওয়ায়েদ বলেছেনঃ জারীয়া বিন কুদামা আমীর মুয়াবিয়ার কাছে গেলে তিনি বললেন, “তোমাদের (হযরত আলী রাদিআল্লাহু তাআ'লা আনহু এর) পক্ষ হতে এমন অগ্নি প্রজ্বলিত হবে, যা আরবের সকল জনপদকে ভস্মীভূত করে ফেলবে আর রক্তের নদী প্রবাহিত করে দিবে।”

জারীয়া বললেন, “হে মুয়াবিয়া, আপনি হযরত আলীর পিছু ছেড়ে দিন। আমরা যেদিন থেকে তাঁকে ভালোবেসেছি, সেদিন থেকে আর তাঁকে অসন্তুষ্ট করিনি। যেদিন থেকে তার মঙ্গল কামনা করেছি, সেদিন থেকে তাঁকে ধোঁকা দেইনি।”

মুয়াবিয়া রাদিআল্লাহু তাআ'লা আনহু বললেন, “জারীয়া, তোমার ব্যাপারে দুঃখ হয়। তুমি তোমার বংশের বোঝা। যে তোমার নাম জারীয়া (বাঁদী) রেখেছে, সে সার্থক।”

জারীয়া বললেন, “হে মুয়াবিয়া, আপনিই সমাজের বোঝা। যে আপনার নাম মুয়াবিয়া (ঘেউ ঘেউকারী) রেখেছে, সে ধন্য।”

তিনি বললেন, “তুমি আমাকে ধোঁকা দিয়েছো।”

জারীয়া বললেন, “আপনি তলোয়ারের শক্তি দিয়েও আমাদের দাবিয়ে রাখতে পারেননি। আমরা যুদ্ধে বিজয় অর্জন করেছি। কিন্তু সন্ধির মাধ্যমে আপনি জেঁকে বসেছেন। প্রতিশ্রুতি রক্ষা করলে আমরাও প্রতিশ্রুতি রক্ষা করবো। শর্ত ভঙ্গ করলে আমরা বিকল্প পথ খুঁজবো। আমাদের সাথে অনেক সাহায্যকারী রয়েছে যাদের বর্ম খুব মজবুত আর লোহার চেয়েও পরিপক্ক। আমাদের সাথে বিশ্বাসঘতকতা করলে আমরা বিদ্রোহ করবো। এরপর আমাদের বিদ্রোহের স্বাদ আস্বাদন করবেন।”

মুয়াবিয়া রাদিআল্লাহু তাআ'লা আনহু বললেন, “আল্লাহ তাআলা তোমার মতো আর কাউকে যেন সৃষ্টি না করেন।”

আবু তোফায়েল আমের বিন ওয়াতালা সাহাবী বলেছেনঃ একদিন আমি মুয়াবিয়ার কাছে গেলে তিনি বললেন, “তুমি কি উসমান রাদিআল্লাহু তাআ'লা আনহু এর হত্যাকারীদের একজন?”

আমি বললাম, “না, আমি উপস্থিত ছিলাম, তবে সাহায্য করিনি।”

তিনি বললেন, “কে সাহায্য করতে তোমাকে নিবৃত্ত করেছে?”

আমি বললাম, “মুহাজির আর আনসারদের মধ্যে কেউ নয়।”

তিনি বললেন, “লোকেরা সে প্রতিশোধ নেওয়ার অধিকার সংরক্ষন করে।”

আমি বললাম, “হে আমিরুল মুমিনীন, আপনি কেন সেদিন তাঁকে সাহায্য করেননি? অথচ সিরিয়াবাসী আপনার সাথে ছিল।”

তিনি বললেন, “আমি তার রক্তের প্রতিশোধ নিয়ে তাঁকে সাহায্য করেছি।”

আমি তার কথা শুনে হাসলামে আর বললাম, “উসমান রাদিআল্লাহু তাআ'লা আনহু আর আপনার দৃষ্টান্ত এ রকম, যেরূপ কবি বলেছেন – এমনটা যেন না হয় যে, মৃত্যুর পর আমার জন্য বিলাপ করবে; আর জীবিত থাকা অবস্থায় আমার যা পাওনা ছিল তা বুঝিয়ে দিয়ো না।”

শাবী রাদিআল্লাহু তাআ'লা আনহু বলেছেনঃ আমীর মুয়াবিয়া রাদিআল্লাহু তাআ'লা আনহু সর্বপ্রথম বসে খুতবা পাঠের প্রবর্তন করেন। কারণ সে সময় তিনি অনেক মোটা আর পেট বড় হয়েছিলো। (ইবনে আবী শায়বা)

যুহরী বলেছেনঃ তিনি ঈদের খুৎবা নামাযের আগে পাঠ করার নিয়ম চালু করেন। (আব্দুর রাজ্জাক)

সাঈদ বিন মুসায়্যাব রাদিআল্লাহু তাআ'লা আনহু বলেছেনঃ তার যুগে ঈদের নামাযের আযান দেয়ার মতো বিদয়াত কাজটি করা হতো। (ইবনে আবী শায়বা) তিনি এও বলেন যে, মুয়াবিয়া রাদিআল্লাহু তাআ'লা আনহু নামাযের তাকবীর কম করে বলতেন।

আওয়ায়েল গ্রন্থে আল্লামা আসকারী লিখেছেনঃ তিনি প্রথম ডাক বিভাগের প্রবর্তন করেন। তার সাথে জনগন প্রথম গোস্তাখী করে।

তিনি এ পদ্ধতিতে সালামের রীতি প্রবর্তন করেন –

السلام عليك يا امير المؤمنين ورحمة الله وبر كاة الصلوة ير حمك الله

তিনি সর্বপ্রথম দাপ্তরিক কাজে আব্দুল্লাহ বিন আউস গাসসানীর তত্ত্বাবধানে لكل عمل سواب খোদিত মোহর ব্যবহার করেন। আব্বসীয়া বংশের সকল খলীফা এ মোহর ব্যবহার করেছেন। আমীর মুয়াবিয়ার ফরমানে এক লক্ষ দিরহামের স্থানে এক কর্মচারী কর্তৃক দুই লক্ষ লিখিত হওয়ার প্রেক্ষিতে মোহরের প্রবর্তন করা হয়। তিনি জামে মসজিদের মেহরাব তৈরি করেন। তিনি সর্বপ্রথম কাবার গিলাফ নামানোর নির্দেশ জারি করেন।

মুকাযিয়াত গ্রন্থে যুহরীর ভাতিজার বরাত দিয়ে যুবায়ের বিন বাকার লিখেছেনঃ আমীর মুয়াবিয়া রাদিআল্লাহু তাআ'লা আনহু সর্বপ্রথম বাইয়াতের সময় কসম খাওয়ার প্রথা চালু করেন। তিনি খিলাফতের বিষয়ে কসম করেছিলেন। আব্দুল মালিক বিন মারওয়ান গোলাম আযাদ করার ক্ষেত্রেও কসম নিতেন।

আওয়ায়েল গ্রন্থে সুলায়মান বিন আব্দুল্লাহ বিন মুআম্মারের বরাত দিয়ে আসকারী লিখেছেনঃ একদিন আমীর মুয়াবিয়া রাদিআল্লাহু তাআ'লা আনহু মক্কা অথবা মদীনার মসজিদে গেলেন। সেখানে ইবনে উমর, ইবনে আব্বাস আর ইবনে আবু বকর রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুম বসেছিলেন। মুয়াবিয়া রাদিআল্লাহু তাআ'লা আনহু তাদের কাছে এসে বসলে ইবনে আব্বাস রাদিআল্লাহু তাআ'লা আনহু মুখ ফিরিয়ে নিলেন। আমীর মুয়াবিয়া বললেন, “হে মুখ ঘুরিয়ে লেনেওয়ালা, আমি তোমার চাচাতো ভাইয়ের চেয়ে বেশী খিলাফতের হকদার।”

ইবনে আব্বাস রাদিআল্লাহু তাআ'লা আনহু বললেন, “প্রাথমিক যুগে ইসলাম গ্রহণের জন্য? রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর সাথে সর্বপ্রথম সাহচার্য দানের জন্য? না রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর নিকটত্মীয় হওয়ার কারণে আপনি তার চেয়ে বেশী খিলাফতের হকদার?”

আমীর মুয়াবিয়া বললেন, “তোমার চাচার ছেলে নিহত হওয়ার কারণে।”

ইবনে আব্বাস বললেন, “এ দৃষ্টিকোণ থেকে ইবনে আবু বকর বেশী হকদার।”

মুয়াবিয়া বললেন, “আবু বকর রাদিআল্লাহু তাআ'লা আনহু তো স্বাভাবিক মৃত্যুবরণ করেছেন।”

ইবনে আব্বাস বললেন, “তাহলে ইবনে উমর হকদার।”

মুয়াবিয়া বললেন, “এদিক থেকে তোমার যুক্তি পরিত্যাজ্য। কারণ, তোমার চাচার ছেলের উপর যারা আক্রমণ করে শহীদ করেছে তারা মুসলমান।”

আব্দুল্লাহ বিন মুহাম্মাদ বিন আকীল বলেছেনঃ আমি একবার মদীনা শরীফে আমীর মুয়াবিয়া রাদিআল্লাহু তাআ'লা আনহু এর কাছে গেলাম। কিছুক্ষণ পর আবু কাতাদা রাদিআল্লাহু তাআ'লা আনহু আনসারীও এলেন। আমীর মুয়াবিয়া তাকে বললেন, “আমার নিকট সকলে আসলেও আনসারগণ এলেন না।”

তিনি জবাব দিলেন, “আমাদের আনসারদের কাছে কোনো বাহন নেই।”

আমীর মুয়াবিয়া বললেন, “তোমাদের উটগুলো কি হয়েছে?”

তিনি বললেন, “বদর যুদ্ধে আপনাদের আর আপনার বাবার পশ্চাদ্ধাবন করতে গিয়ে সবগুলো মারা গিয়েছে।”

এরপর তিনি আবার বললেন, “রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাকে বলেছেন – আমার পর অন্যরা হকদারদের উপর প্রাধান্য পাবে।”

মুয়াবিয়া বললেন, “তুমি এ পরিস্থিতিতে কি করবে?”

তিনি বললেন, “সহনশীল হবো, ধৈর্যধারণ করবো।”

মুয়াবিয়া বললেন, “তবে ধৈর্যধারণ করে থাকো।”

এ প্রেক্ষিতে আব্দুর রহমান বিন হাসসান এ কবিতাটি রচনা করেন – “আমিরুল মুমিনীন মুয়াবিয়া বিন হরবের কাছে অবশ্যই এ সংবাদ পৌছে দিবে যে, কিয়ামত দিবস পর্যন্ত আপনাকে সুযোগ দেয়া হয়েছে আর আমরা সেই ইনসাফের দিন পর্যন্ত ধৈর্যধারণ করবো।”

জাবালা বিন সাহীম থেকে ইবনে আবীদ দুনিয়া আর ইবনে আসাকির বর্ণনা করেছেনঃ আমি আমীর মুয়াবিয়ার কাছে গিয়ে মুয়াবিয়ার গলায় দড়ি লাগিয়ে এক বাচ্চাকে টানতে দেখে বললাম, “এ বাচ্চা কি করছে?”

তিনি বললেন, “চুপ করো। আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বলতে শুনেছি যে, বাচ্চার সাথে মিশলে নিজেকে বাচ্চা হয়ে যেতে হয়।” ইবনে আসাকিরের মতে হাদীসটি গারীব।

মুসান্নাফ গ্রন্থে ইবনে আবী শায়বা লিখেছেনঃ এক কুরাইশ ব্যক্তি আমীর মুয়াবিয়ার কাছে গিয়ে অনেক নরম-গরম মন্তব্য শুনানোর পর মুয়াবিয়া বললেন, “ভাতিজা, এ ধরনের মন্তব্য থেকে ফিরে আসো। বাদশাহর রাগ বাচ্চার রাগের মতো। আর বাদশাহর আক্রমণ বাঘের মতো ক্ষিপ্র ও দুর্ধর্ষ।”

যিয়াদের বরাত দিয়ে শাবী বলেছেনঃ আমি খারাজ আদায় করার জন্য এক লোককে পাঠালাম। সে ফিরে এসে সন্তোষজনক হিসাব দিতে না পারায় আমার ভয়ে আমীর মুয়াবিয়ার কাছে আশ্রয় নেয়। আমি বিষয়টি তাঁকে জানালে তিনি চিঠি লিখে জানালেন, আমাদের একই পদ্ধতিতে রাজনীতি করা সম্ভব নয়। আমরা উভয়ে নমনীয় হলে জাতি পাপকার্যে নিমজ্জিত হবে। আবার উভয়ে কঠোর হলে আমজনতা শেষ হয়ে যাবে। অতএব, তুমি নমনীয় হলে আমার অবস্থান শক্ত হবে, আর তুমি কঠোর হলে আমি মমতার আশীর্বাদ নিয়ে জাতির সামনে এসে দাঁড়াবো।

শাবী বলেছেনঃ আমি মুয়াবিয়াকে বলতে শুনেছি, যে জাতি বা সম্প্রদায়ের মধ্যে অনৈক্য ও মতভেদ থাকবে, সে জাতির উপর ভ্রান্ত মতবাদে বিশ্বাসী সম্প্রদায় প্রাধান্য পাবে; তবে এ উম্মতের উপর এমনটা হবে না।

তৌরিয়াত গ্রন্থে সুলায়মান আল-মাখযুমী কর্তৃক বর্ণিতঃ একদিন আমীর মুয়াবিয়া রাদিআল্লাহু তাআ'লা আনহু জনসাধারণের এক উন্মুক্ত সমাবেশে নিজের জন্য প্রযোজ্য এমন অর্থবোধক তিনিটি আরবী কবিতা শোনার আগ্রহ প্রকাশ করলে আব্দুল্লাহ বিন যুবায়ের রাদিআল্লাহু তাআ'লা আনহু তিন লক্ষ দিরহামের বিনিময়ে তা শোনাতে সক্ষম হোন। পরিশেষে মুয়াবিয়ার রাজি হওয়ার প্রেক্ষিতে আবদুল্লাহ বিন যুবায়ের আবৃত্তি করেন; প্রথম কবিতা -“আমি জনতাকে পালন করে থাকি, আমি তোমাকে ছাড়া লোকদের মধ্যে কাউকে শত্রুতা পোষণ করতে দেখিনি।”

দ্বিতীয় কবিতা –“আমি তোমার যুগে বেদনায় বিধ্বস্ত জনতার দলকে শত্রুতা ছাড়া আর কিছু করতে দেখিনি।”

তৃতীয় কবিতা – “আমি সকল দুঃখ ও লজ্জার স্বাদ পেয়েছি, কিন্তু ভিক্ষাবৃত্তির চেয়ে বড় লজ্জাকর কাজ আর দেখিনি।”

মুয়াবিয়া বললেন,“তুমি যথার্থই বলেছো।”

এরপর তিনি কবিকে তিন লক্ষ দিরহাম দেওয়ার নির্দেশ দিলেন।

ইমাম বুখারী, ইমাম নাসাঈ আর ইবনে হাতিম (রহঃ) কর্তৃক স্বরচিত তাফসীর গ্রন্থে লিখেছেনঃ মারওয়ান যখন আমীর মুয়াবিয়া রাদিআল্লাহু তাআ'লা আনহু কর্তৃক মদীনার গভর্নর, সে সময় একদিন তিনি খুতবার মধ্যে বলেছিলেন, “আমিরুল মুমিনীন মুয়াবিয়া রাদিআল্লাহু তাআ'লা আনহু তার ছেলেকে খলীফা মনোনীত করার ব্যাপারে যে অভিমত পেশ করেছেন তা যথাযথ। কারণ এটাই ছিল আবু বকর আর উমরের নীতি।”

এটা শুনে আব্দুর রহমান বিন আবু বকর রাদিআল্লাহু তাআ'লা আনহু বললেন, “এটা আবু বকর রাদিআল্লাহু তাআ'লা আনহু আর উমর রাদিআল্লাহু তাআ'লা আনহু এর নীতি নয়, বরং তা কিসরা ও কায়সারের নীতি। কারণ আবু বকর আর উমর নিজের সন্তানাদি আর পরিবারের মধ্য থেকে কারো জন্য বাইয়াত গ্রহণ করেননি। আর মুয়াবিয়া রাদিআল্লাহু তাআ'লা আনহু দয়ার্দ্র পিতা হিসেবেই ছেলের জন্য এমনটা করেছেন।”

মারওয়ান বললেন, “তোমরা তো সেই ব্যক্তি নও, যাদের কথা কুরআনে বিধৃত রয়েছে। তোমাদের পিতার মৃত্যুতে তোমরা তো আহ শব্দটুকুও বলোনি। তোমরা তো নিজ পিতাদের প্রতিরোধ করেছিলে।”

ইবনে আবু বকর রাদিআল্লাহু তাআ'লা আনহু বললেন, “তুমি কি অভিশপ্তের পুত্র নও? রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তোমার বাবাকে অভিশাপ দিয়েছিলেন।”

বিষয়টি আয়েশা সিদ্দিকা রাদিআল্লাহু তাআ'লা আনহু পর্যন্ত পৌছে গেলে তিনি বললেন, মারওয়ান মিথ্যা বলেছে। আয়াতটি অমুক লোকের ব্যাপারে নাযিল হয়েছে। আর মারওয়ান তার পিতার ঔরসে থাকা অবস্থায় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মারওয়ানের পিতাকে অভিশাপ দিয়েছিলেন। এ দিক থেকে মারওয়ান অভিশাপের মধ্যেই জন্মগ্রহণ করেছে।

মুসান্নাফ গ্রন্থে ওরওয়ার বরাত দিয়ে ইবনে আবি শায়বা লিখেছেন যে, মুয়াবিয়া বলেছেন, “মানুষের অভ্যন্তরীণ পরীক্ষা ছাড়া ধৈর্য ও সহনশীলতা সৃষ্টি হয় না।”

শাবী থেকে ইবনে আসাকির বর্ণনা করেছেনঃ মুয়াবিয়া, আমর বিন আস, মুগীরা বিন শোবা আর যিয়াদ হলেন আরবের শ্রেষ্ঠ চার বুদ্ধিমান। মুয়াবিয়া রাদিআল্লাহু তাআ'লা আনহু ভদ্রতা, বিনয় আর বিচক্ষণতায়; আমর বিন আস কষ্ট সহিষ্ণুতায়, মুগীরা বিন শোবা স্বাধীনতা হাত ছাড়া না হওয়ার জন্য যত্নশীল হওয়ায় এবং যিয়াদ বগ্লাহীন কথা বলার জন্য বিখ্যাত।

ইবনে আসাকির এটাও বর্ণনা করেছেনঃ উমর রাদিআল্লাহু তাআ'লা আনহু, আলী রাদিআল্লাহু তাআ'লা আনহু, ইবনে মাসউদ রাদিআল্লাহু তাআ'লা আনহু আর যায়েদ বিন সাবিত রাদিআল্লাহু তাআ'লা আনহু ছিলেন আরবের শ্রেষ্ঠ চার বিচারক।

কুবায়সা বিন জাবির বলেছেনঃ আমি উমর বিন খাত্তাব রাদিআল্লাহু তাআ'লা আনহু এর সাহচর্যে থেকে এটুকু বুঝতে পেরেছি যে, তার চেয়ে বেশী কুরআন শরীফ আর আইনের জ্ঞান কারো ছিল না। আমি তালহা বিন উবায়দুল্লাহর সাথেও ছিলাম, না চাইতে দান করার প্রবণতা তার চেয়ে বেশী কারো মধ্যে দেখিনি। আমি মুয়াবিয়ার সাথেও ছিলাম, মুয়াবিয়ার চেয়ে ধৈর্যশীল আর বিচক্ষণ আলেম আমার চোখে পড়েনি। আমর বিন আসের চেয়ে নিরাপদ সহকর্মী এবং বিশ্বস্ত বন্ধু আর কেউ নেই।

জাফর বিন মুহাম্মদের পিতার বরাত দিয়ে ইবনে আসাকির উল্লেখ করেনঃ একদিন আকীল রাদিআল্লাহু তাআ'লা আনহু আমীর মুয়াবিয়ার কাছে গেলে তিনি বললেন, “এ তো সেই আকীল, যার চাচা আবু লাহাব।”

আকীল বললেন, “এ তো সেই মুয়াবিয়া যার ফুফু হামালাতুল হাতাব (আবু লাহাবের স্ত্রীর নাম -অনুবাদক)।

আওযায়ী থেকে ইবনে আসাকির বর্ণনা করেছেনঃ একদিন হুযায়েম বিন ফাতাক আমীর মুয়াবিয়ার কাছে গেলেন। হুয়ায়েমের পায়ের গোছা ছিল খুবই সুদর্শন, তা দেখে মুয়াবিয়া বললেন, “এ পায়ের গোছা কোন নারীর?”

হুযায়েম বললেন, “হে আমিরুল মুমিনীন, আপনার পত্নীর।”

তার খিলাফতকালে যেসব প্রখ্যাত আলেম বুযুর্গ ইন্তেকাল করেছেন তারা হলেন – সাফওয়ান বিন উমাইয়া, হাফসা, উম্মে হাবীবা, সুফিয়া, মাইমূনা, সাওদা, জুয়াইরিয়া, আয়েশা সিদ্দীকা, লাবীদ কবি, উমরান বিন হাসীন, উসমান বিন তালহা, আমর বিন আস, আব্দুল্লাহ বিন সালাম, মুহাম্মদ বিন মাসলামা, আবু মূসা আশয়ারী, যায়েদ বিন সাবিত, আবু বকর, কাব বিন মালিক, মুগীরা বিন শোবা, জারিরুল বিজলি, আবু আউয়ুব আনসারী, সাঈদ বিন যায়েদ, আবু কাতাদা আনসারী, ফুজালা বিন উবায়েদ, আব্দুর রহমান বিন আবু বকর, যুবায়ের বিন মুতঈম, উসামা বিন যায়েদ, সওবান, আমর বিন হাজম, হাসসান বিন সাবিত, হাকিম বিন হাযাম, সাদ বিন আবী ওয়াক্কাস, আবু লাইসাম, কসম বিন আস, তার ভাই উবায়দুল্লাহ এবং উকবা বিন আমের রাদিআল্লাহু তাআ'লা আনহুম।

আবু হুরায়রা রাদিআল্লাহু তাআ'লা আনহু ৫৯ হিজরীতে ইন্তেকাল করেন। তিনি এ মর্মে প্রার্থনা করেছিলেন যে,“হে আল্লাহ, আমাকে ৬০ হিজরী আর বাঁদীদের রাজত্ব থেকে রক্ষা করুন।” ধারণা করা হয়, তার দুআ কবুল হয়েছিলো।

শেষকথা:
সঠিক বিষয় একমাত্র আল্লাহ পাকই অবহিত। মুআবিয়া রাদিআল্লাহু তাআলা আনহু যেহেতু মহানবী সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর সহচর এবং প্রিয়পাত্র ছিলেন। অধিকন্তু তিনি এতটাই নির্ভরযোগ্য একজন সাহাবি ছিলেন যে, প্রিয় নবীজী সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাকে অহি লেখকের মর্যাদায় ভূষিত করেন। এসব বিষয় বিবেচনায় আমাদের উচিত সতর্কতার সাথে তার মত একজন মহান সাহাবীর জীবন ও কর্মের মূল্যায়ন করা। তার প্রতি বিরূপ ধারণা পোষন করে, তার নামে অহেতুক কুতসা রটনা করে, ইনিয়ে বিনিয়ে সত্যকে মিথ্যার সাথে মিশ্রিত করে মানুষের আবেগকে উসকে দেয়ার লক্ষ্যে বানোয়াট ইতিহাস সৃষ্টি করে, নিজেদের আমলনামায় গোনাহ যোগ করা কখনোই বুদ্ধিমানের পরিচায়ক নয়। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআ'লা আমাদের হেফাজত করুন। লক্ষাধিক সাহাবীদের কোনো একজনকেও যেন আমরা সমালোচনার লক্ষ্যবস্তুতে পরিনত না করি, সেই তাওফিক দান করুন।

কৃতজ্ঞতা:

১. Click This Link
২. Click This Link
৩. Click This Link
৪. Click This Link
৫. Click This Link
৬. https://i-onlinemedia.net/725
৭. এবং অন্যান্য।

ছবি: অন্তর্জাল।

মন্তব্য ২০ টি রেটিং +৪/-০

মন্তব্য (২০) মন্তব্য লিখুন

১| ২২ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৯ দুপুর ১২:০৭

আদিল ইবনে সোলায়মান বলেছেন: তারপরও কিছু শীয়াপন্থী বিরুদ্ধাচরণ করবে!!!

২২ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৯ দুপুর ১২:১২

নতুন নকিব বলেছেন:



সেটাই কথা। তাদের এই বিরুদ্ধাচরণটা যদি সত্য হতো তাহলে কথা ছিল। কিন্তু তারা তো তার নামে মিথ্যাচার করে আসছে। তারা তো অন্ধভাবে একজন সাহাবীর বিরুদ্ধে যাচ্ছে তাই অপপ্রচারে লিপ্ত হচ্ছে। আল্লাহ পাক আমাদের এসব মিথ্যাচারের কুপ্রভাব থেকে বাঁচিয়ে রাখুন।

প্রথম মন্তব্যে আপনাকে পেয়ে আনন্দিত। কৃতজ্ঞতা এবং কল্যানের দুআ সবসময়।

২| ২২ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৯ দুপুর ১:০৪

হাফিজ বিন শামসী বলেছেন: অনেক দীর্ঘ লেখা। আশা লেখা থেকে অনেক কিছু জানতে পারব। সময় নিয়ে পরে পড়বো।

২৩ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৯ সকাল ৮:৫৩

নতুন নকিব বলেছেন:



আপনাকে এই ব্লগ কুটিরে স্বাগত। লেখাটি সময় নিয়ে পড়ার ইচ্ছে প্রকাশ করেছেন দেখে কৃতজ্ঞতা।

অনেক ভালো থাকুন। শুভকামনা সবসময়।

৩| ২২ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৯ দুপুর ২:১৭

কাল্পনিক_ভালোবাসা বলেছেন: আপনার কাছে একটা ভিন্ন বিষয়ে জানতে চাই, পোস্ট আকারে। যিশু খ্রীষ্ট বা ঈসা আঃ জন্মের পর তাকে খুঁজতে আরব থেকে তিনজন মানুষ গিয়েছিলেন। সেই মানুষদের সম্পর্কে জানতে চাই।

২৩ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৯ সকাল ৯:০০

নতুন নকিব বলেছেন:



প্রিয় কা_ভা ভাই,
শত ব্যস্ততার মাঝেও একটু সময় করে এই যে প্রেরণা দিয়ে যান, ব্লগে এসে ঘুরে যান এটা আমাদের জন্য অনেক বড় প্রাপ্তি। আপনার লাইকপ্রাপ্তিতে এই পোস্টটি সম্মানিত হল। কৃতজ্ঞতা এবং শুভকামনা সবসময়।

আপনার রম্যগুলো অসাধারণ। আল্লাহ পাক সাহিত্যের বিবিধ শাখায় আপনার হাতের কারিশমাকে আরও সমৃদ্ধ করুন। আপনার প্রশ্নটির কোনো উত্তর এখনও পাইনি। তবে চেষ্টা করছি। তাফসিরের বিভিন্ন কিতাব দেখছি। পাওয়া গেলে অবশ্যই জানাবো ইনশাআল্লাহ।

৪| ২২ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৯ দুপুর ২:৩৯

ইসিয়াক বলেছেন: অনেক তথ্যবহুল পোষ্ট । আপনার সব পোষ্ট গুলি ই অসাধারণ ।
পড়ে তারপর মন্তব্য করবো।
শুভকাভনা রইলো।

২৩ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৯ সকাল ৯:০৪

নতুন নকিব বলেছেন:



প্রিয় ভাই,
পোস্টে আপনার আগমনে মুগ্ধ এবং কৃতজ্ঞ। আপনার এই প্রশংসার যোগ্য হয়তো আমি নই। তবুও দুআ চাই, যাতে করে যা-ই লিখি, তা যেন সঠিক হয়, ঠিক ঠিকভাবে কেবল সঠিক বিষয়গুলোই আপনাদের সামনে উপস্থাপন করতে পারি।

পড়ার পরে আবার মন্তব্যের আশায় থাকবো পোস্ট বিষয়ে আপনার মূল্যবান মতামত জানার জন্য।

নিরন্তর শুভকামনা আপনার জন্যও।

৫| ২২ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৯ বিকাল ৩:০০

রাজীব নুর বলেছেন: যত পড়ি, তত নিজের কাছে নিজে লজ্জা পাই। এত কম জানি ! বহু কিছু আছে জানার।

৩নং মন্তব্যকারীর সাথে আমিও আছি।

২৩ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৯ সকাল ৯:১২

নতুন নকিব বলেছেন:



দারুন একটা কথা বললেন আপনি। আসলেই তাই। আমরা কতটুকুই বা জানি! কত কিছু যে এখনও রয়ে গেছে অজানা! নিরন্তর শিখছি আর শিখছি। সুনির্মল বসুর বিখ্যাত 'সবার আমি ছাত্র' কবিতাটি মনে করিয়ে দিলেন-

"বিশ্বজোড়া পাঠশালা মোর
সবার আমি ছাত্র;
নানান ভাবে নতুন জিনিস
শিখছি দিবারাত্র!
এই পৃথিবীর বিরাট খাতায়
পাঠ্য যে সব পাতায় পাতায়
শিখছি সে সব কৌতুহলে
নেই দ্বিধা লেশমাত্র! "
- সুনির্মল বসু
( 'সবার আমি ছাত্র' কবিতার অংশবিশেষ)

ছোটবেলায় এ কবিতা আমরা অনেকেই পড়ে এসেছি! কিন্তু, প্রকৃত অর্থে সবার ছাত্র হয়ে উঠতে আমরা কতজনই বা পেরেছি?

অসংখ্য ধন্যবাদ মন্তব্যে আসায় এবং ৩ নং মন্তব্য প্রদানকারীর সাথে থেকে প্রশ্নটির উত্তর জানার অপেক্ষায় থাকায়। ইনশাআল্লাহ চেষ্টা থাকবে, উত্তর দেয়ার।

৬| ২২ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৯ রাত ৮:১১

জগতারন বলেছেন:
ব্লগার নতুন নকিব-এর ইসলাম ধর্ম জানার ও বুঝার জন্য সকল পোষ্টগুলি ভালো।
তবে আমি ব্যাক্তিগতভাবে আজকের এই পোষ্টটি আরেকটি পোষ্ট তিনি দিয়াছিলেন হোমিওপ্যাথি ঔষধ ও চিকিৎসা বিষয় নিয়া পছন্দ করিতে পারিলাম না।
দুঃখিত !!!
আমি এই পোষ্ট পড়ি নাই।
কারন ইসলামের ইতিহাস পড়িয়া যাহা জানিয়াছি সেই থেকে
আমি চতুর মুয়াবিয়া'র কাজ-কারবার ও তার ছেলে ইয়াজীদ'এর
কর্মকান্ড পছন্দ বা সমর্থন করি নাই।

২৩ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৯ সকাল ১০:১৭

নতুন নকিব বলেছেন:



প্রিয় ভাই,
আপনার আগমনে সত্যি মুগ্ধ। আপনার খোলাখুলি এই মন্তব্যটি আমার জন্য এবং আমার ধারণা, অন্যদের জন্যও শিক্ষনীয় হয়ে থাকবে। আপনি যে কোনো কিছু না লুকিয়ে মনের কথাটা এভাবে প্রকাশ করেছেন, আপনার প্রতি অশেষ কৃতজ্ঞতা। আপনার এই মন্তব্যটি থেকে অনুধাবন করতে পারি, সত্যিই আপনি আমার মত অধমকে কতটা ভালোবাসেন। আবারও কৃতজ্ঞতা সেজন্য। আপনার এই ভালোবাসার প্রতি শ্রদ্ধা রেখেই আপনার মন্তব্যের প্রেক্ষিতে সামান্য মতামত পেশ করা প্রয়োজন মনে করছি।

হোমিওপ্যাথি কেন পছন্দ করি:
প্রথমত: হোমিওপ্যাথি চিকিৎসা পদ্ধতিটা পুরনো। এলোপ্যাথির মত এই পদ্ধতিটা সময়ের ব্যবধানে আধুনিক বিজ্ঞানসম্মত হয়েও উঠতে পারে নি। এই চিকিৎসা পদ্ধতির প্রতি একটা সময়ে আমারও বিশ্বাস ছিল না। একটা সময়ে বিশেষ প্রয়োজনে নিকটাত্মীয় এবং পরিচিতজনদের ভেতরে একাধিক রোগীর চিকিৎসা করানোর ফলে তারা সুস্থ হয়ে উঠলে আমার বিশ্বাসে ফাটল ধরে। তখন কৌতুহল বশত: হোমিওর কিছুটা কাছাকাছি হই এবং একপর্যায়ে হোমিওর উপরে পড়ালেখা শুরু করি। পরবর্তীতে এই চিকিৎসা পদ্ধতি অবলম্বন করে বহু জটিল ও কঠিন রোগীর সুস্থতালাভের ঘটনা প্রত্যক্ষ করতে সক্ষম হয়েছি, যা এখন আর না দেখে বিশ্বাসের পর্যায়ে নেই; বরং স্বচোক্ষে দেখে দেখে বাস্তবে রূপায়িত হয়ে গেছে। তবে, হোমিও চিকিৎসা পদ্ধতির অপব্যবহার প্রচুর। ডাক্তার নামের অধিকাংশ লোক প্রতারণামূলক ব্যবসায় রোগীর পকেট কাটায় সিদ্ধহস্ত এখন। এদের নিয়ন্ত্রণে সরকারি কোনো ব্যবস্থা আদৌ আছে কি না জানি না। এসবের বিহিত হওয়া একান্ত কাম্য। টোটাল হোমিও চিকিৎসা পদ্ধতিটাকে একটা সিস্টেমেটিক ওয়েতে নিয়ে আসা সম্ভব হলে খুবই ভালো হতো।

কোনো সাহাবির সমালোচনা করা যাবে না কেন?
প্রিয় ভাই,
দ্বিতীয়ত: আরেকটি সত্য কথা বলছি, হযরত মুআবিয়া রাদিআল্লাহু তাআ'লা আনহু সম্মন্ধে আপনার মত প্রায় একইরকম ধারণা আমারও এককালে ছিল। সেটা ছোটবেলার বিশ্বাস। কিশোর বয়সে 'জঙ্গে কারবালা' জাতীয় আগেকার দিনের পুথি পাঠে এই ধারণা জন্মেছিল। কিন্তু পরবর্তীতে বড় হয়ে যখন সাহাবীদের মর্যাদা, তাদের আত্মত্যাগ, রাসূলে পাক সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের প্রতি তাদের ভালোবাসা ও সীমাহীন কুরবানির বিষয়গুলো কুরআন হাদিস থেকে সরাসরি অধ্যয়নের সুযোগ হয়, তখন মনের কোনে ঠাই দেয়া পূর্বেকার অনেক বিশ্বাসই একে একে খসে পড়তে থাকে। সাহাবিদের মর্যাদা যে কতটা উর্ধ্বে তা স্বয়ং আল্লাহ রব্বুল আলামীন কুরআনুল কারিমেও তুলে ধরেছেন। এছাড়া অনেক হাদিসে নির্ভরযোগ্য বর্ণনায় তাদের উঁচু মর্যাদা বিবৃত হয়েছে। সামান্য একটু আলোকপাত করার ইচ্ছে পরিত্যাগ করতে পারছি না-

সত্যিকার কোনো ঈমানদার ব্যক্তি কোনো একজন সাহাবির সমালোচনা করতে পারেন না। এ কাজগুলো কেবলমাত্র কোনো কোনো শিয়াপন্থী ব্যক্তিকেই করতে দেখা যায়।

সাহাবায়ে কেরামের সমালোচনা করা, তাদের গালিগালাজ করা সম্মন্ধে হাদিসের বানী:
সাহাবায়ে কেরাম রাদিআল্লাহু তাআ'লা আনহুম এর সমালোচনা করা, তাদের গালিগালাজ করা জায়েজ নেই। সমালোচনা কথাটির প্রকৃষ্ট অর্থ তো 'গিবত'। কারও গিবত করা হারাম। আর কাউকে গালি দেয়াও যাবে না। কারণ, এটাও নিষিদ্ধ। গালিতো যে কোন সাধারণ মানুষকে দেয়াই হারাম। সেখানে সাহাবায়ে কেরামগণকে দেয়া যে আরও কঠিনতর গোনাহর কাজ, আরও অকাট্য হারাম কাজ হবে, সেটি বলারই অপেক্ষা রাখে না।

হাদীসে পরিস্কার শব্দে সাহাবায়ে কেরামকে মন্দ বলতে, তাদের সমালোচনা করতে নিষেধ করা হয়েছে।

عَنْ أَبِي سَعِيدٍ الخُدْرِيِّ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ، قَالَ: قَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «لاَ تَسُبُّوا أَصْحَابِي، فَلَوْ أَنَّ أَحَدَكُمْ أَنْفَقَ مِثْلَ أُحُدٍ، ذَهَبًا مَا بَلَغَ مُدَّ أَحَدِهِمْ، وَلاَ نَصِيفَهُ

হযরত আবূ সাঈদ খুদরী রাদিআল্লাহু তাআ'লা অানহু থেকে বর্ণিত। রাসূলে মাকবুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন, 'তোমরা আমার সাহাবীকে ছাব্ব তথা মন্দ বলো না। যদি তোমাদের কেউ এক উহুদ পরিমাণ স্বর্ণও দান করে, তবু তাদের এক মুদ বা তার অর্ধেকের সমপরিমাণও হবে না।' [বুখারী, হাদীস নং-৩৬৭৩]

অন্য এক হাদিসে এসেছে-

عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «مَنْ سَبَّ أَصْحَابِي فَعَلَيْهِ لَعْنَةُ اللهِ وَالْمَلَائِكَةِ، وَالنَّاسِ أَجْمَعِينَ»

হযরত আব্বাস রাদিআল্লাহু তাআ'লা অানহু থেকে বর্ণিত। রাসূলে কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন, 'যে ব্যক্তি আমার সাহাবীকে মন্দ বলবে, তার উপর আল্লাহ তাআ'লা, ফেরেশতা এবং সমস্ত মানুষের অভিশাপ।' [আলমুজামুল কাবীর, হাদীস নং-১২৭০৯, ফাযায়েলে সাহাবা, আহমাদ বিন হাম্বলকৃত, হাদীস নং-৮]

আরেক হাদিসে বর্ণিত হয়েছে-

عَن ابْنِ عُمَر؛ أَن النَّبِيّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيه وَسَلَّم قَالَ: مَنْ سَبَّ أَصْحَابِي فَعَلَيْهِ لَعْنَةُ اللَّهِ.

হযরত ইবনে উমর রাদিআল্লাহু তাআ'লা অানহু থেকে বর্ণিত। রাসূলে কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন, 'যে আমার সাহাবীকে মন্দ বলে, তার উপর আল্লাহর অভিশাপ।' [মুসনাদুল বাজ্জার, হাদীস নং-৫৭৫৩, আলমুজামুল আওসাত, হাদীস নং-৪৭৭১, ]

এক হাদিসে এসেছে-

من سب نبيًّا فاقتلوه ومن سب أصحابى فاضربوه

হযরত আলী রাদিআল্লাহু তাআ'লা অানহু থেকে বর্ণিত। রাসূলে কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন- 'যে ব্যক্তি নবীকে [ছাব্ব] মন্দ বলে, তাকে হত্যা কর। আর যে সাহাবীকে [ছাব্ব] মন্দ বলে তাকে প্রহার কর।' {জামেউল আহাদীস, হাদীস নং-২২৩৬৬, জমউল জাওয়ামে, হাদীস নং-৫০৯৭, দায়লামী, ৩/৫৪১, হাদীস নং-৫৬৮৮, আস সারেমুল মাসলূল-৯২}

হাদিসে বর্ণিত 'ছাব্ব' এর অভিধানিক অর্থ কি?

অভিধানে 'ছাব্ব' সরাসরি গালিকে বলে না, বরং গালির দিকে ধাবমান নিন্দাবাদকে বলে। [মুজামুল ফারকুল লাগাবিয়্যাহ, নং-১১৭৪]

হাফেজ ইবনে তাইমিয়া রহঃ বলেন-যে কথা সমাজে খারাপ ও দোষ এবং ত্রুটি হিসেবে বলা হয় তা’ই ছব্ব {আস সারেমূল মাসলূল-৫৩৪}

আরবীতে গালি বুঝাতে ব্যবহৃত হয় شتم শব্দ। “শাতাম” অর্থ হল গালি। ছাব্ব অর্থ সরাসরি গালি নয়। বরং যথার্থ অর্থ হল, মন্দ বলা, খারাপ বলা ইত্যাদি।

গালি তো দূরের কথা সাহাবিদের সমালোচনা করতেও হাদিসে নিষেধাজ্ঞা:
হাদীসেতো সাহাবায়ে কেরামগণকে গালি দেয়া না দেয়া বিষয়ে বলাই হয়নি। বলার প্রয়োজনই নেই। কারণ, গালিতো কোন ব্যক্তিকেই দেয়া বৈধ নয়। হাদীসে সাহাবায়ে কেরাম সম্পর্কে মন্দ বলা, তাদের কটুক্তি করা, তাদের সমালোচনা করতে পরিস্কার নিষেধাজ্ঞা করা হয়েছে। এ কারণে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম “শাতাম” তথা গালি শব্দ ব্যবহার না করে ব্যবহার করেছেন “ছাব্ব” তথা মন্দ বলা।

অর্থাৎ সাহাবাগণকে মন্দ বলা, তাদের নিন্দাবাদ করাই বৈধ নয়। গালি দেয়াতো বহু দূরের বিষয়।

ইরানী প্রভাব আমাদের অনেক কিছুতে:
বিগত কয়েক শতাব্দি যাবত আমাদের ইসলামের ইতিহাস, ইসলামী বই পত্র প্রভৃতিতে পারসী ভাষা ও তাদের ধ্যান ধারণার বহিপ্রকাশ ঘটে বিবিধ কারণে। যার প্রভাব এখনও পর্যন্ত লক্ষ্যনীয়। 'ফেরেশতা' বললে আমরা সহজেই আল্লাহ পাকের বিশেষ এক প্রকার মাখলূককে চিনতে পারি, যারা নিষ্পাপ, যাদের কাজ শুধুমাত্র আল্লাহ পাকের হুকুম তামিল করা। কিন্তু 'মালাইকা' বললে ক'জন চিনবো তাদের? 'বেহেশতো' বললে ছোট বড় সবাই বুঝে যাই কি বিষয়ে বলা হয়েছে। কিন্তু 'জান্নাত' কথাটা কি অতটা সহজবোধ্য আমাদের কাছে? এগুলো আমাদের প্রতি ওদের ভাষাগত প্রভাব। এরকম প্রভাব ধর্মীয় বিশ্বাসেও রয়েছে। আপনার নিশ্চয়ই জানা থাকবে, পারস্যবাসী বর্তমান ইরানবাসী অধিকাংশই শিয়া মুসলিম। তাদের বিশ্বাস, ধ্যান ধারণা, আকিদাগত বিষয়াদির অধিকাংশই বিভ্রান্তিকর। এই শ্রেণির লোকদের সান্নিধ্যে আসার ফলে আমাদের দেশের শিক্ষিতজনদের ভেতরে সাহাবা বিদ্বেষের বীজ বপন হয়। তারা কোনো কোনো সাহাবাকে আকাশে তুলে ধরেণ তো আবার কাউকে টেনে মাটির নিচে নামিয়ে আনেন। আল্লাহ তাআলা সাহাবা বিদ্বেষী শিয়া রাফেজীদের অপপ্রভাব থেকে উম্মতে মুসলিমার ঈমানকে হিফাযত করুন।

আপনার মতামত বরাবরই আমার নিকট মূল্যবান। প্রতিমন্তব্য অনেকটা দীর্ঘ হয়ে যাওয়ায় দু:খিত। আশা করছি, ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন। অনেক ভালো থাকুন।

৭| ২৩ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৯ ভোর ৬:৩০

ঠাকুরমাহমুদ বলেছেন:





নতুন নকিব ভাই, কয়েকদিন যাবত ব্লগে যা চলছে তার জন্য আমি আপনার কাছে ব্যাক্তিগতভাবে এমন একটি পোষ্টের জন্য অনুরোধ করতাম, গত পোষ্টে তার জন্য কথা বলতে চেয়েছিলাম, উক্ত বিষয়ে একটি পোষ্ট দেওয়া সম্ভব কিনা - যা আপনি বাস্তব প্রমাণ রেখে গেলেন, আমি বুঝতে পারছি আপনি ব্যাস্ত ছিলেন এই পোষ্টটি তৈরি করতে। ধন্যবাদ - আশা করবো ব্লগে হযরত মুয়াবিয়া রাঃ নিয়ে তর্ক বিতর্ক অবসান হবে।

আপনাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ প্রচুর শ্রম দিয়ে এমন একটি পোষ্ট দেওয়ার জন্য। পরম করুণাময় যেনো আপনাকে তাঁর রহমতের শীতল ছায়ায় রাখেন আজীবন। আমার জন্যও দোয়া করবেন ভাই।


২৩ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৯ সকাল ১০:৩২

নতুন নকিব বলেছেন:



প্রিয় ঠাকুরমাহমুদ ভাই,
এই পোস্টে আপনার আগমন এবং এমন আন্তরিক মন্তব্য দেখে অন্তরে প্রশান্তির পরশ বয়ে গেল। শুকরিয়া, আলহামদুলিল্লাহ। জাজাকুমুল্লাহ। প্রেরণা দিয়ে যাওয়ার জন্য যুগপত অভিনন্দন এবং কৃতজ্ঞতা।

কোনো সাহাবির সমালোচনা করারই আমাদের অধিকার নেই। উদাহরণত: হযরত আলী রাদিআল্লাহু তাআ'লা আনহু এবং উম্মুল মুমিনীন হযরত আয়শা রাদিআল্লাহু তাআ'লা আনহার বাহিনীর মধ্যে একটি যুদ্ধ সংঘটিত হয়েছিল। এটা হয়েছিল দুই পক্ষের ভুল বুঝাবুঝির ফলে। এই ঘটনার জন্য তাদের দু'জনের কারো একজনেরও সমালোচনা করা যাবে না। এই সমালোচনা করা থেকে আমরা বিরত থাকবো আল্লাহর রাসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের স্পষ্ট নিষেধাজ্ঞা থাকার কারণে। কারণ, তিনি নিষেধ করেছেন তার সহচরদের সমালোচনার লক্ষ্যবস্তুতে পরিনত করতে।

আল্লাহ পাক আমাদের ঈমান আমলে অটুট থাকার তাওফিক দান করুন।

আপনাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ প্রচুর শ্রম দিয়ে এমন একটি পোষ্ট দেওয়ার জন্য। পরম করুণাময় যেনো আপনাকে তাঁর রহমতের শীতল ছায়ায় রাখেন আজীবন। আমার জন্যও দোয়া করবেন ভাই।

এমন হৃদয় সিক্ত করা দুআ পেয়ে আপ্লুত! আল্লাহ পাক আপনার নেক দুআ আমাদের শানে কবুল করুন। আপনার মাকাম (অবস্থান) কে দুনিয়া এবং আখিরাতে সমুন্নত করুন, উজ্জ্বল এবং আলোকিত করুন।

৮| ২৩ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৯ সকাল ১১:৩৯

হাসান কালবৈশাখী বলেছেন:
জামাতি-ওহাবি কট্টরপন্থি চক্র ঢাকা সহ সর্বত্র কৌশলে তাদের মতবাদ চালিয়ে যাচ্ছে।
তাদের নির্দিষ্ট করা কয়েকটি মসজিদ বাদে অন্য মসজিদে নামাজ পড়তে মানা করছে। নামাজ শেষেও গোলমিটিং ...
তাদের মহিলা সদস্য দ্বারা 'তালিম' এর নামে হাউস টু হাউস তাদের নিজস্য মতবাদ প্রচরানা চালাচ্ছে।

খুব কৌশলে তাদের নিজস্য মতবাদ ব্রেনওয়াশ করা হচ্ছে।
শিয়া ও সুফিবাদিদের বিরুদ্ধে অকথ্য অপপ্রচার ও আক্রমনাত্বক কথা বলছে
মিলাদ, সবেবরাত হারাম বলছে। কদিন পরে, ঈদ ও হজ এত প্রয়োজনীয় না বলা হবে ..
মুয়াবিয়া, এজিদ, শিমার মহাত্ত গুণকির্তন করছে, এজিদ শিমার এরা এত খারাপ না বলা হচ্ছে।

২৩ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৯ বিকাল ৩:৩০

নতুন নকিব বলেছেন:



প্রিয় হাকা ভাই,
আপনি ঠিক বলেছেন। তবে চক্র মনে হয় একটা বা দু'টো নয়। আমার মনে হয়, বহুচক্র এখন সক্রিয়। সমাজে কৌশলে বিবিধ বিষয়ে, এমনকি এই যে আমরা কুরআন হাদিসের আলোকে মাযহাব ভিত্তিক ইবাদত বন্দেগীর বিভিন্ন সুপ্রতিষ্ঠিত পদ্ধতি সহস্রাধিক বছর যাবত বিশ্বজুড়ে শত সহস্র কোটি মানুষ ফলো করে চলেছি; তাতেও তারা তাদের মত করে পরিবর্তন আনার আপ্রাণ প্রচেষ্টা চালাচ্ছে। অপপ্রচার চালিয়ে তাদের পক্ষে ব্যাপক জনমত গড়তে মরিয়া তারা। এগুলো করতে গিয়ে তারা হাদিসের দোহাই দেয়। কখনো আবার কুরআনের দোহাই দেয়। তবে তাদের উদ্দেশ্য ক্লিয়ার, তারা তাদের দল ভারী করার কৌশল হিসেবেই এগুলো করে থাকে। তাদের কৌশল ধরতে পারাটাও কঠিন বৈকি। অন্তত: সহজ সরল সাধারণ মানুষদের প্যাচে পড়ে বিভ্রান্ত হওয়া খুবই স্বাভাবিক। আমার দেখা মতে, পরিচিতদের বেশ ক'জন এদের খপ্পড়ে পড়ে দিকভ্রান্ত হয়েছেন। অতএব সচেতনতা প্রয়োজন সবার ক্ষেত্রে।

তারা তো বলেই বেড়ায়-
দুআ কিসের?
মুনাজাত কেন করবো?
মিলাদ কিসের?
শবে বরাত বিদআত।
নফল কি জন্য?
সুন্নাত আবার কি?
হজ্বের সফরে মদিনায় যাওয়ার প্রয়োজন কি? হজ্ব তো মক্কাতেই শেষ!
মুরাকাবা কিসের?
তাসাউফ কি?
কাশফ কি জিনিষ?
কারামত আবার কোন বিষয়?
বিদআতের আবার প্রকার কিসের? বিদআত তো বিদআতই। অথচ হাদিসের আলোকে জানা যায়, বিদআত দুই প্রকার। হাসানাহ এবং সাইয়্যিয়াহ। উত্তম বিদআত এবং নিকৃষ্ট বিদআত।

শিয়াদের অধিকাংশ বিভ্রান্ত। সুফিবাদ গ্রহনযোগ্য পন্থা সন্দেহ নেই। কিন্তু অধিকাংশ সুফিবাদের বেশধারীগনই এখন লেবাস সর্বস্ব এবং নামকাওয়াস্তে।

ইয়াজিদ ইয়াজিদই। সীমার সীমারই। এদের নিকৃষ্ট অপকর্ম এদেরকে জগতের কুখ্যাত আবু জাহল, আবু লাহাব উতবা শাইবার কাতারে দাঁড় করিয়েছে। এদের মত নৃশংস, মানবতার মূলে কুঠারাঘাতকারীদেরকে এই পোস্টে কোথাও উত্তম বলা হয়নি। এদেরকে ভালো বলার প্রশ্নই আসে না। কিন্তু কারও অপরাধে তার পিতাকে দোষারোপ করা অনুচিত মনে করি। আর ইয়াজিদের জঘন্য কোনো অপকর্ম মুআবিয়া রাদিআল্লাহু তাআ'লা আনহু নিজের জীবদ্দশায় দেখেছেন বলেও জানা নেই।

আপনার মতামত সর্বদাই আমাদের কাছে মূল্যবান। কৃতজ্ঞতা জানবেন। শুভকামনা সবসময়।

৯| ২৩ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৯ দুপুর ১২:২৮

সত্যপথিক শাইয়্যান বলেছেন: আপনার পোস্টটি পড়ে অনেক অজানা তথ্য জানা হলো। আপনার প্রতিউত্তরগুলোতেও কিছু অজানা হাদিস জানতে পারলাম। আপনি যা তুলে ধরেছেন তা ইতিহাস। ভালো ও মন্দ দুটোই আছে এখানে। কেউ কেউ হযরত মুয়াবিয়া (রাঃ)-এর খারাপ দিকটাই শুধু তুলে ধরেন। ভালোটা ভুলে যান।

তবে, হযরত মুয়াবিয়া (রাঃ) শাসনকালকে বিরুদ্ধাচরণ করা যাবে না তা কিন্তু নয়। ওহী লেখক এবং শাসনকার্য দুটি কি আলাদা কাজ নয়? তিনি যদি ওহী লেখক হিসেবে সঠিক থাকেন, তাহলে তার জন্যে অবশ্যই সোয়াবের ভাগীদার হবেন। সেই সঙ্গে পাবেন প্রশংসা।

কিন্তু, শাসক হিসেবে ভুলের জন্যে কি তিনি দুর্নামের ভাগীদার হবেন না? তিনি কি ইয়াজিদের বায়াতকারী নন? তাঁকে কি হযরত উমর ইবনুল আস (রাঃ) বর্শার আগায় কুরআন বিদ্ধ করার পরামর্শ দেননি আর তিনি তা মেনে নেননি? সিফফিনের যুদ্ধে ইবনুল আস (রাঃ) কথাটি নিচের বলেননি?---

''আপনি আমার কথা মানলে জনগণকে নির্দেশ দিন যে, তারা যেন কুরআন খুলে দাঁড়িয়ে যায় এবং বলে যে, হে ইরাকবাসী! আমরা তোমাদেরকে কুরআনের প্রতি আহবান জানাই। আলহামদু থেকে ওয়ান নাস পর্যন্ত এতে যা কিছু রয়েছে, তদনুযায়ী ফায়সালা হোক। আপনি এক কাজ করলে ইরাকবাসীদের মধ্যে বিচ্ছেদ ও অনৈক্য সৃষ্টি হবে, আর শামবাসীদের ঐক্য অটুট থাকবে।'' [তাবাকাত, ৪র্থ খন্ড]

এই কথাগুলো আরো সবিস্তারে বর্ণনা করেছেন ইবনে জারীর, ইবনে কাসীর, ইবনে আসীর ও ইবনে খালদুন। এই মনীষীদের সর্বসম্মত মত হচ্ছে- হযরত আলী (রাঃ)-এর দলে বিভেদ সৃষ্টি করার জন্যেই ইবনুল আস (রাঃ) এমন করেছিলেন। [তাবারী, ৪র্থ খন্ড। আল বেদায়া, ৭ম খন্ড। ইবনুল আসীর ৩য় খন্ড, ইবনে খালদুন, ২য় খন্ডের পরিশিষ্ট]





২৩ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৯ বিকাল ৩:৫০

নতুন নকিব বলেছেন:



দীর্ঘ মন্তব্যে অভিনন্দন, প্রিয় ভাই।

আসলে বিষয়টি অনুধাবন করার। ব্যাখ্যা করার নয়। পক্ষে বিপক্ষে অনেক কথাই বলা যাবে, এটা ঠিক। তবে আমাদের উদ্দেশ্য পরিষ্কার, আমরা কি চাচ্ছি আশা করি আপনার বুঝতে বাকি নেই। আমাদের একমাত্র উদ্দেশ্য, প্রিয় নবিজীর অন্যতম সহচর, আপন শ্যালক, কাতিবে অহি বিশিষ্ট সাহাবীর সমালোচনায় মুখর হয়ে আমরা যেন নিজেদের আমলনামায় গোনাহ না লেখাই। পোস্ট এবং উপরের প্রতিমন্তব্যগুলোতে বিস্তারিত উঠে আসায় দীর্ঘ আলোচনার প্রয়োজন নেই মনে করছি। আর হাদিসের আলোকে যতটুকু নির্দেশনা পাওয়া যায়, তাতে কোনো সাহাবীর থেকে কোনো ভুল ভ্রান্তি পরিলক্ষিত হলেও তা নিয়ে আলোচনা সমালোচনা না করে নিরব থাকাই শ্রেয়। আল্লাহ পাক আমাদের অহেতুক এবং অপ্রয়োজনীয় গোনাহ থেকে বেঁচে থাকার তাওফিক দান করুন।

অনেক ভালো থাকুন।

১০| ২৪ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৯ রাত ১:০০

একাকি ওমর বলেছেন: তর্ক করে কিছু লাভ হয় , আমি দেখিনি ।তাই চেষ্টা করি তর্ক এড়িয়ে যাওয়ার।আমি ব্লগে তেমন এক্টিভ নই।তারপর ও কদিন চক্ষে পড়ল এই বিষয় নিয়ে পোস্টের ।এধরনের পোস্ট দেখলে পক্ষে বা বিপক্ষে যাই হোক না কেন আমার খারাপ লাগবে।কারন এটা প্রমান করে আমরা মুস্লিম্রা কত অকারনে ঝগড়া করতে পারি ।আমি যদি এসময়টা দাওয়ার কাজে ব্যয় করতাম ,তাহলে কত ভাল হত।।নাহ আমি দাওয়ার কাজ ভাল করি এমন না।বরং নুন্যতম দাওয়ার কাজ ও করি না।কিন্তু যে ভাইয়ের মেধা দীনি পড়াশোনায় ও লেখায় ব্যয় হয় ,সেই পড়াশোনা ও লেখা দাওয়ার কাজে ব্যয় হওয়াই বাঞ্ছনীয় মনে হয় ।বিবদমান কোন দ্বন্দ উস্কে দেওয়ায় ব্যবহার হওয়া কাম্য নয়।
আমিরে মুয়াবিয়া রাঃ কি করেছিলেন ,তা আমার কাছে মুখ্য মনে হয়নি কখনো ।আমি ব্যক্তিগতভাবে তার সমালোচনা করাটাকে নেতিবাচকভাবেই দেখি । কিন্তু এবিষয়ে যেহেতু আপনি কথা বলছেন ,এবং আমার ধারনা -নিশ্চয় এটাকে পুন্যের কাজ মনে করছেন ,তাই এবিষয়ে আমার খানিক পড়াশোনা শেয়ার করি।কওমি মাদ্রাসায় ছিলাম অনেক বছর ,এসব হুজ্জতই বিষয়ে কওমি ছাত্রদের আগ্রহ থাকে ভীষন ।কারন মাঠ গরম করতে এসব কাযে দেয় বেশ।সে সুবাদেই কিছু পড়াশোনা করেছিলাম জোশে।এখন আফসোস হয় ,এক মুস্লিম ভাই এর বিরুদ্ধে আরেক মুস্লিম ভাইকে উস্কে দেওয়া কি ক্মরে পূন্যের কাজ হতে পারে।
পরবর্তী সময়ে জানার সুযোগ হয়েছিল ,আমি যে জানালা দিয়ে এসব দেখেছি,সেটাই এক্মাত্র জানালা নয় ।আরো জানালা আছে ,আরো মত আছে ।এর চেয়েও বড় কথা সে সকল মতের স্বপক্ষে প্রমাণ ও আছে ,এবং সেসবের পক্ষে গ্রহণযোগ্য অনেক আলেম আছেন।একটু খুলে বলি।
এই যে আপনি এতোগুলো প্রমান দিলেন এর পিছনের মূল মোটীভ টা কি?সাহাবায়ে কেরাম মিয়ারে হক কিনা ,তাই তো ?এই প্রমান করতে গিয়ে একটা জিনিস ভুলে যাই আমরা ,সাহাবাদের ও ভুল হতে পারে কিনা । আমি আবার ও বলছি , আমি ব্যক্তিগতভাবে সাহাবাদের সমালোচনা করাটাকে নেতিবাচকভাবেই দেখি ।কিন্তু কোন ঐতিহাসিক বা একজন স্কলার যখন এ বিষয়ে কথা বলে তখন সে কি করবে ?মিথ্যা বল্বে?বল্বে যে ,না তিনি করেন নি এমন?হুম্ম ,এটা ঠিক মুয়াবিয়া রাঃ হলেন সেই সাহাবি যার ব্যাপারে সবচেয়ে বেশি মিথ্যা বিষোদ্গার করা হয়েছে ।কিন্তু ………………।এই কিন্তু নিয়ে অনেক কিছু বলা যায় ,কিন্তু বলাটা সমীচীন মনে করছি না ।কারন একজন সাহাবি সম্পর্কে নেতিবাচক মন্তব্য করাটা এড়িয়ে যাওয়াই শ্রেয় মনে করি।
তাহলে এতো বড় মন্তব্য লিখছি কেন?আমার মূল পয়েন্টটা হল,আম্রা যত বেশি এসব নিয়ে কথা বল্ব ,ততবেশি আমর বিভক্ত হব ,পাশাপাশি সাধারন মানুষ্রা আরো দীন নিয়ে কনফিউজড হবে ।আর যে ভিন্ন মতাদর্শী দের উদ্দেশ্যে এ পোস্ট লিখছেন তারাও কিন্তু তাদের মত শুধ্রাবেনা ।কারন নবীজী ছাড়া অন্যদের তারা ভুলের উর্ধ্বে মনেই করে না। সুতরাং কারো কোন কিছু ভুল মনে হলে তা বলাটাকে দোষনীয় মনে করে না।
ব্যাপারটা দাঁড়াবে এই,চোদ্দশ বছর আগে কি ঘটেছিল ,তা নিয়ে বর্তমানে দুটো মুস্লিমদের গ্রুপ অন্তহীন ঝগড়ায় লিপ্ত হবে এমন এক সময়ে ,যখন অন্য কোন কিছুর চেয়েও বেশি মুস্লিম দের একতা প্রয়োজন ।

১১| ২৬ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৯ দুপুর ১২:৩৯

টারজান০০০০৭ বলেছেন: শুনিয়াছি , মাদ্রাসায় ঈমানের বিষয়ে পড়িতে গেলে, প্রথমেই কি কি বিষয়ের উপরে ঈমান রাখিতে হইবে তাহাই আগে পড়ানো হয় ! তারপর ঈমানের বিষয়বস্তু সম্পর্কে কে কি বলিয়াছেন তাহা আলোচনা হয় , যেন শিক্ষার্থী মূল বিশ্বাস্য বিষয় আগেই জানিতে পারে , পরে আলোচনা হইলে যেন বিভ্রান্ত না হয়।

পোস্টের শুরুতে তাই সাহাবীদের রা. সম্পর্কে আমাদের কি বিশ্বাস রাখিতে হইবে , তাহাদের সম্মান , মর্যাদা কত , তাহাদের সম্পর্কে বিদ্বেষ রাখা , খারাপ ধারণা রাখা , সমালোচনা করার পরিণতি কি তাহা আলোচনায় আশা উচিত ছিল। নচেৎ আপনার পোস্টে মুয়াবিয়া রা. সম্পর্কে অন্য সাহাবী রা. দের উক্তি, ইতিহাস পড়িয়া কেহ বিভ্রান্ত হইতে পারে, সমালোচনা করিতে পারে , খারাপ ধারণা করিতে পারে। তারপরও এমন পরিশ্রম লব্ধ পোস্টে প্লাস !

সাহাবা রা. মানুষ ছিলেন , ফেরেস্তা নহেন ! তাহারা মানুষের মধ্যে নবী/রাসূলদের পরে সর্বোত্তম ছিলেন। তাহারা ছিলেন হজরত মুহাম্মদ স. এর মতন নবী ও রাসূল স. এর সুহবত প্রাপ্ত। তাহারা সত্যের মাপকাঠি ছিলেন। তাহাদের ভালোবাসা ঈমানের অঙ্গ , তাহাদের সমালোচনা হারাম। তাহাদের পরস্পরের মতপার্থক্য ছিল, যাহার ইতিহাস কাজে লাগাইয়াছে ইসলামের শত্রূ , বিভ্রান্ত, পথভ্রষ্ট, শিয়া , পাঁঠা ও ছাগু সম্প্রদায়। তাহারা মুয়াবিয়া রা. এর মতন আজিমুশ্বান সাহাবী রা. কে মন্দ বলে , ভিলেন বলে ! বাংলায় এই অপকর্মে ইন্ধন জোগাইয়াছে পতিতালয়ের খরিদ্দার ইসমাইল হোসেন সিরাজী "বিষাদ সিন্ধু" লিখিয়া এবং ছাগু সম্প্রদায়ের মাস্টারমাইন্ড মৌদুদী তাহার লেখনীতে ! পাঁঠাদের লেখনী কেহ পুঁছে না , কারন ধর্ম, বিশেষ করিয়া ইসলাম সম্পর্কে ইহাদের জ্ঞান হাঁটুতে ! বর্তমানে ব্লগে রেডিও তেহরানের বেশ কিছু চ্যানেল এই অপকর্ম করিতেছে !

এই বিষয়ে মুফতি মনসুরুল হক দা. বা. এবং মাওলানা আবুল কালাম আজাদের বই আছে , নাম মনে নাই ! ধন্যবাদ !

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.