নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
যবে উৎপীড়িতের ক্রন্দল-রোল আকাশে বাতাসে ধ্বনিবে না, অত্যাচারীর খড়্গ কৃপাণ ভীম রণ-ভূমে রণিবে না- বিদ্রোহী রন-ক্লান্ত। আমি সেই দিন হব শান্ত।
ডক্টর আল আওদাহর নিরব প্রতিবাদ কাঁপন ধরিয়ে দিক স্বৈরাচারের বসত ভিটায়!
এটি ভিন্নধর্মী প্রতিবাদ। এই ধরণের প্রতিবাদ করে তিনি শেষ পর্যন্ত বিশ্ববাসীর দৃষ্টি আকর্ষণ করতে সক্ষম হলেও কূম্ভকর্ণের ঘুমে আক্রান্ত সৌদি রাজরাজাদের নজর কাড়তে পেরেছেন কি না, কিংবা আদৌ পারবেন কি না- বুঝা যাচ্ছে না। কারণ, তারা যা করার সাধারণত তা করেই যান। তারা দিনকে দিন বলতেও পারেন, আবার রাত বলতেও পারেন। বাধা দেয়ার কেউ নেই। তাদের উপরে কথা বলার কোনো শক্তি পৃথিবীতে নেই। তেল আর স্বর্ণ বেচা বিপুল বিত্ত আর তার সাথে ধর্মীয় সুবিধায় প্রাপ্ত বিদেশী অর্থে তারা মোহগ্রস্ত। যাকে খুশি বাঁচান, যাকে খুশি মারেন। সৌদি আরবে জন্ম নেয়া সাংবাদিক খাশোগীকে হত্যা করার ঘটনাই সাম্প্রতিক সময়ে তার সবচে' বড় উদাহরণ। গোটা বিশ্ববাসী জানেন যে, কিভাবে এবং কাদের হাতে জামাল খাশোগী নিহত হলেন, কিন্তু কারও কিছু করার নেই। কারও কিছুই বলার নেই। হত্যাকারী খুনি রাজপরিবারের বিশাল শক্তিমান ব্যক্তিদের টিকিটি স্পর্শ করার স্পর্ধাও কারও নেই। সাংবাদিক জামাল খাশোগীর পরিবারের নেই। সৌদি আরবে কর্মরত কোনো মানবাধিকার সংগঠনের নেই। কোনো সাংবাদিক কিংবা সংবাদ মাধ্যমের নেই। বিশ্ব মোড়লের ভূমিকায় অবতীর্ন খোদ ইঙ্গ-মার্কিন অপশক্তিরও নেই। এগুলোর মুরোদও সেই বাগাড়ম্বর পর্যন্তই। সত্য কথা বললে, জামাল খাশোগী হত্যার সঠিক বিচার করার দাবি তুললে, তলে তলে সৌদি-আমেরিকা অবৈধ খাতির টুটে যাবে যে! চোরে চোরে মাসতুতো ভাই! দুনিয়ার শীর্ষ অপরাধীদের গলায় গলায় ভাব দেখে শয়তানও হেসে দিশেহারা আজ!
সৌদি বাদশাহ তনয় মোহাম্মদ বিন সালমান খুবই ভালো মানুষ। হাসি খুশি এই যুবকের একান্ত খায়েশ তার বাবার পরে গদিটা নিজের দখলে রাখা। এই ক্ষমতা কুক্ষিগত করার হীনমানসে তার একটু আধটু যা ভুলভাল। এই লক্ষ্যে তিনি যা যা করা ভালো মনে করেন নিশ্চিন্তে তা করে যান। এর জন্য রাজপরিবারের তার ভাই ব্রাদার, বংশের তাবত লোকদের জেল-জুলূম-জরিমানা থেকে শুরু করে নাকে খত দিয়ে দাসখতে সই করিয়েই ক্ষান্ত হন না তিনি; বরং এর জন্য অপহরণ কিংবা খুন-খারাবিসহ যা যা প্রয়োজন সবই করতে পিছপা হন না তিনি। এইসব অন্যায় অপরাধ সংঘটনের ক্ষেত্র তৈরির জন্য তিনি বেছে নেন ভিন্ন পথ ও পদ্ধতি। সৌদি নাগরিক এবং বিশ্ববাসীকে দেখান যে, তিনি অবৈধ অর্থ উদ্ধারের জন্য বিশেষ অভিযান চালাচ্ছেন। কিন্তু এসব অভিযানের নাম তিনি এবং তার অনুগত, পরিচালিত মিডিয়া যতই হোক শুদ্ধি অভিযান বলে প্রচার করুক না কেন, অবৈধ অর্থ উদ্ধারের নামে পরিচালিত এইসব অভিযানের মূল উদ্দেশ্য সবারই জানা। আর সেটা হচ্ছে, ভিন্নমতকে দমন করা। প্রতিপক্ষকে আষ্টেপৃষ্টে বেঁধে নিজের ভবিষ্যত পথকে নিষ্কন্টক, নিরাপদ এবং নির্বিঘ্ন করে রাখা।
যুবরাজ এমবিএস এবং তার রাষ্ট্রীয় বাহিনীর এই অত্যাচার নিয়ে মুখ খোলার সাহস সাধারণত: কেউ রাখেন না। সৌদির কোনো নাগরিক তো এগুলো ভাবনায়ই নিতে চান না। কারণ, তারা জানেন, এসব বিষয় নিয়ে ভাবাভাবি করা পাপ। শুধু পাপই নয়, একেবারে মহাপাপ। সাক্ষাত মৃত্যু। বাদশাহর ইচ্ছের বিরুদ্ধে মুখ খোলার দু:সাহস যে বা যারাই দেখাবে, তাদের পরিণাম যে কতটা ভয়াবহ, যন্ত্রণাদায়ক অপমানের মৃত্যুই যে তাদের শেষ পরিণতি - এটা তারা অক্ষরে অক্ষরে জানেন। তাই তাদের অধিকাংশের চিন্তা - যা করার তারা তারাই করুক, বেহুদা আমরা আমজনতা মরতে যাব কোন দু:খে? তাছাড়া খেয়েপড়ে তো ভালোই আছি। সুতরাং, জীবনের ঝুঁকিতে যাওয়ার মানে হয় না। অধিকাংশ লোকের যখন এই ধারণা, তখন তাদের মাঝেও কিছু সংখ্যক হাতে গোনা মানুষ থাকেন, যারা সত্যের ঝান্ডাধারী, যারা মিথ্যের কাছে নিজেদের বিকিয়ে দিতে জানেন না, তাদেরই একজন দেশটির বিশিষ্ট ধর্মীয় স্কলার ও প্রখ্যাত দাঈ শায়খ ডক্টর সালমান আল আওদাহ।
ডক্টর সালমান আল আওদাহকে বন্দি করে রাখা হয়েছে। ভিন্ন মতের হওয়ার কারণে তাকে নির্যাতন করা হচ্ছে। তার সকল নাগরিক অধিকার কেড়ে নেয়া হয়েছে। এমনকি নিজেকে নির্দোষ প্রমাণে তিনি যে প্রয়োজনীয় তথ্যাদি সংগ্রহ করবেন তাতেও নিষেধাজ্ঞা দিয়েছেন সেখানকার যুবরাজের আজ্ঞাবহ আদালত। ফলশ্রুতিতে তিনিও ভিন্নধর্মী এক প্রতিবাদ শুরু করেছেন। অভিনব এই প্রতিবাদই এবার বিশ্ববাসীকে বুঝিয়ে দিচ্ছে, কতটা নিগ্রহের শিকার হওয়ার পরে একজন বন্দি এমনতরো প্রতিবাদ করতে পারেন।
সৌদি সরকারের বিরুদ্ধে ডক্টর সালমান আল আওদাহর ব্যতিক্রমি প্রতিবাদটি হচ্ছে, 'যতক্ষণ আদালতের পক্ষ থেকে ওই বাধা উঠিয়ে নেয়া না হবে ততক্ষণ পর্যন্ত নিজ পরিবারের সঙ্গে সাক্ষাৎ না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন প্রথিতযশা এই আলেম।'
আল জাজিরা আরাবির এক প্রতিবেদনে জানানো হয়, সালমান আল আওদাহর বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের করা অসত্য অভিযোগ মিথ্যা প্রমাণ করতে তার পরিবার কিছু তথ্যাদি ও কাগজপত্র তৈরি করেছে, কিন্তু রিয়াদের উচ্চ আদালত সালমান আল আওদাহকে ওই তথ্যাদি সংগ্রহের ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে।
প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, মূলত একারণেই পরিবারের সঙ্গে দেখা না করার ব্যতিক্রমী এই প্রতিবাদের পথ বেছে নিয়েছেন তিনি। যেন তার কোন আপনজন নেই, যাদের থেকে তিনি সহায়তা পেতে পারেন। কারণ, পরিবার-পরিজনের সাহায্য-সহযোগিতা নেয়ার ক্ষেত্রে কোনো আদালতই এভাবে প্রতিপক্ষ হয়ে দাঁড়ায় না। এটা নজিরবিহীন। এই নজিরবিহীন ঘটনার প্রতিবাদটাও তাই তিনি নজিরবিহীন পথ ও পদ্ধতি অবলম্বন করেই করে যাচ্ছেন।
অন্যান্য বিশিষ্ট ব্যক্তি যারা ভিন্নমত পোষন করায় সৌদি সরকার কর্তৃক নির্যাতিত হয়েছেন, তাদের মত সালমান আল আওদাহর উপরও নির্যাতন নিপীড়ন চলছে। তার ভবিষ্যৎ কি হবে তা সময়ই বলে দিবে। সৌদি আদালত তার ব্যাপারে এ পর্যন্ত কোন সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে পারেনি। ইতিমধ্যে কয়েক দফা পেছানো হয়েছে তার মামলার রায়। তাকে নিয়ে রাজপরিবারের কর্তাদের ইচ্ছে যে খুব বেশি সুবিধাজনক কিছু নয়, এটুকু অন্তত: সবাই বুঝতে পারছেন। এমন বিখ্যাত একজন দায়ী, শিক্ষাবিদের সঙ্গে আদালতের ধারাবাহিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত আচরণ সবাইকে হতাশ করছে। আমাদের প্রত্যাশা, ডক্টর সালমান আল আওদাহর ব্যতিক্রমি এই প্রতিবাদ রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় ভিন্নমত দমনের নিকৃষ্ট আচার বন্ধে নতুন দিনের সূচনা করুক! নতুন সূর্য্যের আলোয় আলোকিত হোক অন্ধকারের বাসিন্দাদের কুতসিত অন্তর! ডক্টর আল আওদাহর নিরব প্রতিবাদ কাঁপন ধরিয়ে দিক স্বৈরাচারের বসত ভিটায়!
ছবি: সংগৃহীত।
২| ০৯ ই জানুয়ারি, ২০২০ সন্ধ্যা ৬:০৯
ভুয়া মফিজ বলেছেন: বর্বরদের একটা দেশ। মহানবী (সাঃ ) কে এজন্যেই আল্লাহ দুনিয়াতে এতো জায়গা থাকতে ওখানেই পাঠিয়েছিলেন। আল্লাহর দেয়া প্রাকৃতিক তেল সম্পদের টাকা এদেরকে আরো পশু বানিয়ে দিয়েছে। এখন এরা আমেরিকা / ইজরাইল এর সহযোগিতায় আধুনিক পশু হওয়ার চেষ্টায় আছে।
©somewhere in net ltd.
১| ০৯ ই জানুয়ারি, ২০২০ বিকাল ৪:৪৫
রাজীব নুর বলেছেন: ডক্টর আল আওদাহর বিষয় নিয়ে আমি মোটেও চিন্তিত না।