নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
যবে উৎপীড়িতের ক্রন্দল-রোল আকাশে বাতাসে ধ্বনিবে না, অত্যাচারীর খড়্গ কৃপাণ ভীম রণ-ভূমে রণিবে না- বিদ্রোহী রন-ক্লান্ত। আমি সেই দিন হব শান্ত।
ছবি: অন্তর্জাল।
আগামীকাল পবিত্র শবে বরাত
শাবান মাসের ১৫তম রাতে (১৪ শাবান দিবাগত রাত) শবে বরাত পালিত হয়। সেই হিসেবে আগামী ৯ এপ্রিল (বুধবার) দিবাগত রাতই ২০২০ সালের শবে বরাতের রাত। শবে বরাতের পরের দিন বাংলাদেশে নির্বাহী আদেশে সরকারি ছুটি। এবার এ ছুটি পড়েছে ১০ এপ্রিল (শুক্রবার), অর্থাৎ সাপ্তাহিক ছুটির মধ্যেই।
এ মাস শেষেই আগমন ঘটে পবিত্র মাহে রমজানের
শাবান মাস শেষেই মুসলমানদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব ঈদুল ফিতরের আনন্দ বারতা নিয়ে শুরু হয় সিয়াম সাধনার মাস পবিত্র মাহে রমজান।
‘ভাগ্য রজনী’ হিসেবে পরিচিত লাইলাতুল বরাতের পুণ্যময় রাতটি বাংলাদেশসহ বিভিন্ন দেশের মুসলমানরা নফল নামাজ, কোরআন তিলাওয়াতসহ ইবাদত বন্দেগির মাধ্যমে কাটিয়ে থাকেন।
যাদের আমল কবুল হয় না এই রাতে
শবে বরাতের রাতে যে সকল লোকের আমল কবুল হয় না বলে বর্ণিত হয়েছে, এমন লোকেরা হচ্ছে -
এক. মুশরিক অর্থাৎ যে ব্যক্তি আল্লাহর সাথে যে কোন প্রকারের শিরকে লিপ্ত হয়।
দুই. যে ব্যক্তি কারো প্রতি বিদ্বেষ পোষণকারী।
চাই খাঁটি দিলের তাওবা
শবে বরাতের পূর্ণ ফযীলত ও শবে বরাতের রাতে দুআ কবুল হওয়ার জন্য সকল প্রকারের কবীরা গুনাহসমূহ থেকে খাঁটি দিলে তওবা করা উচিত। অন্যথায় সারারাত জেগে ইবাদত-বন্দেগী করেও কোন লাভের আশা করা যায় না।
শবে বরাতের আমল বা করনীয় সম্পর্কে যা জানা যায় তা হল-
রাসুল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এ রাতে অধিক পরিমাণে ইবাদত করতেন। এ রাতে নির্দিষ্ট কোন ইবাদত যদিও নেই কিন্তু রাসুলের আমল দ্বারা বিশেষ কিছু ইবাদত প্রমাণিত হয় যা তিনি করেছেন। সেসবের মধ্য থেকে পাঁচটি মর্যাদাপূর্ণ আমল নিম্নে আলোকপাত করা হলো।
এক. দীর্ঘ নফল নামাজ পড়া
শাবান মাসের ১৫ তম রাত তথা শবে বরাতে রাসুল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম অধিক পরিমাণে দীর্ঘ নফল নামাজ পড়তেন। যা হাদীস দ্বারা প্রমাণিত। হযরত আয়েশা রাদি. বলেন, এক রাতে রাসুল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ঘুম থেকে ওঠে নামাযে দাঁড়িয়ে গেলেন এবং সেই নামাযে এতো দীর্ঘ সময় তিনি সিজদাবনত ছিলেন যে, আমার সন্দেহ হচ্ছিল তিনি ইন্তেকাল করেছেন কিনা। আমি উঠে গিয়ে তার বৃদ্ধাঙ্গুলি নাড়া দিলাম। আঙুলটি নড়ে উঠল। আমি নিশ্চিত হলাম যে তিনি বেঁচে আছেন। অতঃপর আমি আপন স্থানে ফিরে এলাম। রাসুল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সিজদা থেকে মাথা উঠালেন এবং নামাজ শেষ করে এক পর্যায়ে বললেন, হে আয়েশা! তুমি কি ভেবেছ যে, আল্লাহর নবী তোমার উপর কোন অবিচার করেছে? আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসুল! আমি এমন কিছুই ভাবিনি। আমি বরং আপনাকে দীর্ঘ সময় সিজদায় দেখে ভয় পাচ্ছিলাম যে, আপনাকে আল্লাহ পাক উঠিয়ে নিলেন কিনা! অতঃপর রাসুল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, তুমি কি জান আজকের এ রাতটি কোন রাত? আমি বললাম, আল্লাহ ও তার রাসুলই ভালো জানেন। রাসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, এ রাতটি শাবানের পঞ্চদশ রজনী। এতে মহান প্রভু তার বান্দাদের উপর বিশেষ দৃষ্টি দেন। ক্ষমাপ্রার্থীদের ক্ষমা করে দেন। রহমতপ্রার্থীদের রহমত দান করেন। অপরদিকে পরশ্রীকাতর ব্যক্তিদের আপন অবস্থায় ছেড়ে দেন। ( শুয়াবুল ঈমান, হাদীস: ৩৮৩৫, আত তারগীব, পৃষ্ঠা: ২৪২)
দুই. সালাতুত তাসবীহ পড়া
সালাতুত তাসবীহ একটি স্বতন্ত্র আমল। শবে বরাতের সাথে সম্পর্কিত কোন আমল নয়। তবে মানুষ যেহেতু এ রাতে বেশি বেশি ইবাদতে নিয়োজিত থাকে। অধিক পরিমাণে নফল নামাজ পড়ে। তাই সালাতুত তাসবীহকে কেউ এ রাতের বিশেষ ইবাদত মনে না করে আদায় করতে পারে। হাদীসে এর বিশেষ ফজীলত বর্ণিত রয়েছে। জীবনে অন্তত একবার হলেও এ নামাজ পড়তে উৎসাহিত করা হয়েছে। এ নামাজ আদায়ের বিশেষ পদ্ধতি রয়েছে। মসজিদের ইমাম বা কোন আলেমের নিকট থেকে জেনে এই রাতে উক্ত আমল করা যেতে পারে।
তিন. শবে বরাতের পরদিন রোজা রাখা
হযরত আলী রাদি. হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, যখন শাবান মাসের ১৫ তম রাত তোমাদের সম্মুখে এসে যায় তখন তোমরা সে রাতে নামায পড় এবং পরবর্তী দিনে রোজা রাখ। কারণ সেদিন সূর্যাস্তের পর আল্লাহ তায়ালা প্রথম আকাশে অবতরণ করপন এবং বান্দাদের ডেকে বলতে থাকেন, আছ কি কোন ক্ষমাপ্রার্থী যাকে আমি ক্ষমা করে দেব? আছ কি কোন রিযিকপ্রার্থী যাকে আমি রিযিকের ব্যবস্থা করে দেব? আছ কি কোন বিপদগ্রস্ত যাকে আমি বিপদ থেকে মুক্ত করে দেব? এভাবে সুবহে সাদিক পর্যন্ত বলতেই থাকেন, আছ কি কেউ অমুক বস্তুর প্রার্থী, আমি যার সকল মনোবাসনা পূর্ণ করে দেব? ( ইবনে মাজাহ, হাদীস: ১৩৮৪)
উল্লিখিত হাদীস দ্বারা দুটি আমল প্রমাণিত হয়, এক, শবে বরাতে নফল নামাজ আদায় করা। দুই, পরবর্তী দিনে রোজা রাখা। তাই এ দুটি আমল করা চাই।
চার. বেশি বেশি দুআ করা
এই রাতে দুআ কবুল হয়। তাই বেশি বেশি দুআ করা। হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমর রাদি. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, পাঁচটি রাত এমন আছে, যাতে বান্দার কোন দুআ ফেরত দেয়া হয় না। এক, জুমার রাত। দুই, রজব মাসের প্রথম রাত। তিন, শাবান মাসের মধ্যরাত (শবে বরাত)। চার ও পাঁচ, দুই ঈদের রাত। ( মুসান্নাফে আব্দুর রাজ্জাক, হাদীস: ৭৯২৭) ইমাম শাফেয়ী রহ. বলেন, আমাদের কাছে পৌঁছেছে যে, পাঁচটি রাতে দুআ বেশি বেশি কবুল করা হয়। এক, জুমার রাত। দুই, ঈদুল আযহার রাত। তিন, ঈদুল ফিতরের রাত। চার, রজব মাসের প্রথম রাত। পাঁচ, শাবান মাসের ১৫ তম রাত তথা শবে বরাত। ( কিতাবুল উম্ম, ১/২৩১, আস সুনানুল কুবরা, ৩/৩১৯)
পাঁচ. বেশি বেশি তওবা ও ইস্তেগফার করা
হযরত উসমান ইবনে আবিল আস রাদি. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন, শাবান মাসের ১৫ তম রাতে আল্লাহ তায়ালা এই বলে ডাকতে থাকেন, তোমাদের মাঝে কেউ আছে কি কোন ক্ষমাপ্রার্থী, আমি তাকে ক্ষমা করে দিব? আছে কি তোমাদের মাঝে কিছু চাইবার মতো কেউ, আমি তার সকল চাহিদা পুরণ করে দিব? অতঃপর রাসুল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, এভাবে সকল প্রার্থনাকারীর সকল প্রকার বৈধ মনোবাঞ্ছা পুরণ করা হয়। কিন্তু ব্যভিচারী ও মুশরিকদের প্রার্থনা কবুল করা হয় না। ( শুয়াবুল ঈমান হাদীস: ৩৮৩৬, আদ দুররুল মানসুর ৬/২৭)
আইয়্যামুল বীয এর রোজা ফজিলতপূর্ণ
তাছাড়া প্রত্যেক আরবী মাসের তের, চৌদ্দ ও পনেরতম তারিখে রোযা রাখা অধিক মর্যাদাপূর্ণ একটি আমল। হাদীস শরীফে বর্ণিত হয়েছে ‘রাসূলুল্লাহ সা. বলেন, প্রত্যেক মাসে তিনটি রোযা এক বছরের রোযার ন্যায়। আর আইয়্যামুল বীয (পূর্ণ চন্দ্রময় রজনীর দিবসসমূহ) হল, তের, চৌদ্দ ও পনেরতম দিবস।’ {নাসাঈ শরীফ, হাদীস-২৩৭৭}
এড়িয়ে চলতে হবে বিদআত ও কুসংস্কার
তবে, শবে বরাতকে কেন্দ্র করে আমাদের দেশে বেশ কিছু কুসংস্কার ও বিদআত চালু আছে। তম্মধ্যে অন্যতম বিদআত হল হালুয়া-রুটি তৈরী করার এক মহা ধুমধাম। যা নিঃসন্দেহে একটি কুসংস্কার ও বিদআত। তাই, এটি বর্জন করা উচিৎ। সেই সাথে বিভিন্ন কবরস্থান বা মসজিদে আলোক সজ্জার ব্যবস্থা করাও অপচয়ের গুনাহসহ মস্তবড় একটি বিদআত।
বাসা বাড়িতে ইবাদত করুন
সারারাত্রি জাগরণ করে ইবাদত-বন্দেগীর চাইতে শুধু মসজিদে-মসজিদে ঘোরাঘুরি করা আর রাস্তায়-রাস্তায় গল্প-গুজবে মশগুল থাকা এই রাত্রির মর্যাদা পরিপন্থি কাজ। বরং, এই রাত্রিতে মসজিদে সমবেত না হয়ে বাড়িতে একাকী ইবাদত করাই উত্তম। নিজেদের বাসা-বাড়িকেও ইবাদতের গৃহ হিসেবে গড়ে তোলা উচিত।
ফরজ আমল সবার উপরে
তাছাড়াও সকল নফল ইবাদত মসজিদের চাইতে বাড়িতে পালন করাই উত্তম। সারারাত নফল ইবাদত পালন করে যদি ফজরের নামায কাযা হয়ে যায়, এর চাইতে দূর্ভাগ্য আর কি হতে পারে? যদি কারো জীবনে কাযা নামায থেকে থাকে, তাহলে নফল নামায পড়ার চাইতে বিগত জীবনের কাযা নামায আদায় করাটাই বুদ্ধিমানের কাজ এবং জরুরী।
আল্লাহ পাক আমাদের সবাইকে তার কুরআন ও হাদীস সম্মত পন্থায় ইবাদত পালনের তাওফীক দিন। আমীন।
০৯ ই এপ্রিল, ২০২০ সকাল ৯:৫৫
নতুন নকিব বলেছেন:
এবার পরিস্থিতি বাসায় ইবাদত বন্দেগি করতে বাধ্য করছে আমাদের।
২| ০৮ ই এপ্রিল, ২০২০ দুপুর ২:২৯
রাজীব নুর বলেছেন: দেশের সবাই মিলে প্রভুর দরবারে হাত তুললে আল্লাহ খুশি হবেন। আমাদের করোনা থেকে মুক্তি দিবেন।
০৯ ই এপ্রিল, ২০২০ সকাল ৯:৫৮
নতুন নকিব বলেছেন:
দোদুল্যমান ঈমান নিয়ে নয়। আমাদের ঈমানকে পাকাপোক্ত করা প্রয়োজন। বাতাসে কচু পাতার পানির মত নড়বড়ে বিশ্বাস নিয়ে তাঁর কাছে হাত পাততেও লজ্জা হয়। তিনি দয়াময়। ক্ষমাশীল। অবশ্যই ক্ষমা করবেন।
৩| ০৮ ই এপ্রিল, ২০২০ দুপুর ২:৩৩
নেওয়াজ আলি বলেছেন: আল্লাহ সবাইকে সহী সালামতে রাখো।
০৯ ই এপ্রিল, ২০২০ সকাল ১০:৫৪
নতুন নকিব বলেছেন:
আমিন।
©somewhere in net ltd.
১| ০৮ ই এপ্রিল, ২০২০ দুপুর ১:৪৩
রাজীব নুর বলেছেন: এই রাতে বিভিন্ন মসজিদে ঘুরে ঘুরে নামাজ পড়া আমার অভ্যাস। এবার হবে না।