নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আলহামদুলিল্লাহ। যা চাইনি তার চেয়ে বেশি দিয়েছেন প্রিয়তম রব। যা পাইনি তার জন্য আফসোস নেই। সিজদাবনত শুকরিয়া। প্রত্যাশার একটি ঘর এখনও ফাঁকা কি না জানা নেই, তাঁর কাছে নি:শর্ত ক্ষমা আশা করেছিলাম। তিনি দয়া করে যদি দিতেন, শুন্য সেই ঘরটিও পূর্নতা পেত!

নতুন নকিব

যবে উৎপীড়িতের ক্রন্দল-রোল আকাশে বাতাসে ধ্বনিবে না, অত্যাচারীর খড়্গ কৃপাণ ভীম রণ-ভূমে রণিবে না- বিদ্রোহী রন-ক্লান্ত। আমি সেই দিন হব শান্ত।

নতুন নকিব › বিস্তারিত পোস্টঃ

জিহবা আমার সিক্ত থাকুক জিকিরের বৃষ্টিতে

১৯ শে এপ্রিল, ২০২০ দুপুর ১২:২৭

ছবি: অন্তর্জাল।

জিহবা আমার সিক্ত থাকুক জিকিরের বৃষ্টিতে

হ্যা, জিকির। জিকরে ইলাহি। এর চেয়ে মধুর, এর চেয়ে প্রশান্তির, এর চেয়ে বিমল বিমুগ্ধ অনুভূতির আর কিছু নেই। মহান মালিক আল্লাহ সুবহানুহু ওয়া তাআ'লাকে ডাকার মাঝে, তাঁর স্মরণের মাঝে নিহিত জগতের তাবত সুখানুভূতি। তাঁকে ডেকে ডেকে পাগলপাড়া হওয়ার মাঝে সত্যিকারের প্রেমানুভূতির প্রকাশ। তাকে ডাকলে চোখ উজ্জ্বল হয়। হৃদয় আলোকিত হয়। অন্তর প্রশান্ত হয়। অন্ধকারে আলোর দিশা মেলে। তাই তো ডাকতে হবে তাকেই। ডাকতে হবে ডাকার মত। জিকিরের ধ্বনিতে দূরিভূত হবে শয়তানের ওয়াসওয়াসা। কেটে যাবে বিভ্রান্তির মোহজাল। পার্থিব অসাড়তা, মরিচিকা আর শুন্যতার পেছনে ছুটে চলার অন্তহীন মিছে মায়া। তাই জিকিরের সাথে যুক্ত করেছি বৃষ্টি শব্দটি। বৃষ্টি বটে। জিকিরের বৃষ্টি। জিহবা আমার সিক্ত থাকুক জিকিরের বৃষ্টিতে। সারাদিন আমি কথাবার্তা বলি যত, জিকির কি তার সমপরিমান করি! আধাআধি অর্থাৎ, অর্ধেক করি! আরে, সমপরিমান আর অর্ধেক! বলি, সিকি পরিমাণ করি! আদৌ কোনো জিকিরই কি করা হয় প্রতি দিন! হায় হায়, দরকারি-বেদরকারি, জায়েয-নাজায়েয কত রকম কথাবার্তায় অতিবাহিত হয় আমার দিনরাত, কিন্তু জিকিরের জন্য সারাটি দিনের, সারাটি রাতের সামান্য কিছু অংশও কি ব্যয় করা হয়! আফসোস, আসল মালিককেই ডাকলাম না! প্রকৃত মুহাব্বত যার সাথে থাকার কথা তাকেই চিনলাম না! জীবনদাতাকেই স্মরণ করলাম না! জীবনে সবই করলাম; পালনকর্তা, সুস্থ রাখার মালিকের সাথেই শুধু সম্পর্কটা গড়লাম না! কাছে টানলাম সবাইকে; ভুলে থাকলাম শুধু তাকেই! অথচ, কতই না দরদে ভরা কন্ঠে তিনি কাছে ডাকেন আমাকে! কুরআনে পাকের কাছে গিয়ে কান পাতলেই আমি হৃদয়ের তন্ত্রী ছেঁড়া সে দরদিয়া আহবান শুনি! আমি একটু বিগড়ে গেলে, একটু দূরে সরে গেলেই কুরআনুল হাকিম আমাকে বলে ওঠে-

يَا أَيُّهَا الْإِنسَانُ مَا غَرَّكَ بِرَبِّكَ الْكَرِيمِ

হে মানুষ, কিসে তোমাকে তোমার মহামহিম দরদি পালনকর্তা সম্পর্কে বিভ্রান্ত করল? -সূরা আল ইনফিতর, আয়াত ০৬

আহারে! এমন আহবান শুনেও হুঁশ হয় না আমার! কি নিদারুন আত্মভোলা আমি! কি বিভ্রমে নিপতিত আমি! কি মোহময়তার কুয়াশায় আচ্ছন্ন আমি!

এই আমিটাই বা কে? 'আমি' বলতেই তো কিছুর অস্তিত্ব ছিল না! থাকবেও না! তিনি তো সে কথাও জানিয়েছেন আমাকে!

هَلْ أَتَى عَلَى الْإِنسَانِ حِينٌ مِّنَ الدَّهْرِ لَمْ يَكُن شَيْئًا مَّذْكُورًا

মানুষের উপর এমন কিছু সময় অতিবাহিত হয়েছে যখন সে উল্লেখযোগ্য কিছু ছিল না। -সূরা আল ইনসান/ আদ দাহর, আয়াত ০১

যিনি আমাকে মায়ের কোলে পাঠালেন তিনি কে? কে তিনি? পরম দয়ালু মালিক তিনি। পরম দয়ালু অসীম দয়াময় তিনি। পৃথিবীতে আমাকে পাঠিয়ে দিয়েই ক্ষান্ত হননি তিনি। তাকিয়ে রয়েছেন আমার দিকে। প্রতিটি মুহূর্ত আমাকে হেফাজতের দায়িত্বে নিযুক্ত করে দিয়েছেন তাঁর সৃষ্ট মালাইক তথা, ফিরিশতাদের। নিষ্পাপ ফিরিশতাগন আমার খেদমতে নিযুক্ত। মালিকের হুকুমে। যিনি আমাকে ডানে বামে ফিরিশতা দিয়ে হেফাজত করেন, আর আমিই কি না ভুলে গেছি আমার সেই প্রিয়তম মনিব মালিককে। তিনি যে আমাকে হেফাজত করিয়ে যাচ্ছেন তার বর্ণনাও রয়েছে তাঁর বিঘোষিত বাণীতে-

لَهُ مُعَقِّبَاتٌ مِّن بَيْنِ يَدَيْهِ وَمِنْ خَلْفِهِ يَحْفَظُونَهُ مِنْ أَمْرِ اللّهِ إِنَّ اللّهَ لاَ يُغَيِّرُ مَا بِقَوْمٍ حَتَّى يُغَيِّرُواْ مَا بِأَنْفُسِهِمْ وَإِذَا أَرَادَ اللّهُ بِقَوْمٍ سُوءًا فَلاَ مَرَدَّ لَهُ وَمَا لَهُم مِّن دُونِهِ مِن وَالٍ

তাঁর পক্ষ থেকে অনুসরণকারী রয়েছে তাদের অগ্রে এবং পশ্চাতে, আল্লাহর নির্দেশে তারা ওদের হেফাযত করে। আল্লাহ কোন জাতির অবস্থা পরিবর্তন করেন না, যে পর্যন্ত না তারা তাদের নিজেদের অবস্থা পরিবর্তন করে। আল্লাহ যখন কোন জাতির উপর বিপদ চান, তখন তা রদ হওয়ার নয় এবং তিনি ব্যতীত তাদের কোন সাহায্যকারী নেই। -সূরা আর র'দ, আয়াত ১১

হায় হায়! মালিকরে ভুলিয়া....

শিল্পীর সুরে সুরে মন গেয়ে ওঠে....

হঠাৎ আজরাইল পাঠাইয়া তোরে নিতে পারে তুলিয়া,
কিসের আশায় রইলিরে মন মালিকরে ভুলিয়া,
ও তুই মালিকরে ভুলিয়া।২
ধন সম্পদ পাইয়া হাতে করলি জমিদারি,
ক্ষমতার অহংকারে করলি বাহাদুরি ২
ও তোর রেশমি পোষাক সোনার আংটি ২
নেবে স্বজনরা খুলিয়া, কিসের আশায় রইলিরে মন মালিকরে ভুলিয়া
ও তুই মালিকরে ভুলিয়া।
মালিকরে ভুলিয়া, ও তুই মালিকরে ভুলিয়া।
ক্ষনে ক্ষনে কবর ডাকে আইরে আমার বাড়ী,
মাটির উপর থাকবিরে তুই দিন কয়েক চারি
ও তুই দিন দুই এক চারই ২
আসতে তোর হবে একদিন ২
সাদা কাফন পরিয়া
কিসের আশায় রইলিরে মন মালিকরে ভুলিয়া
ও তুই মালিকরে ভুলিয়া।
হঠাত আজরাইল পাঠাইয়া তোরে নিতে পারে তুলিয়া,
কিসের আশায় রইলিরে মন মালিকরে ভুলিয়া,
ও তুই মালিকরে ভুলিয়া। ২

ইচ্ছে করলে কলরবের ছেলেদের কন্ঠে শুনে আসতে পারেন সুন্দর এই গজলটি-

হঠাৎ আজরাইল পাঠাইয়া তোরে নিতে পারে তুলিয়া

পার্থিব ব্যস্ততা জীবন জুড়ে আছে। থাকবে জীবনের শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত। জীবন পরিচালনার জন্য শত কষ্ট হলেও সেসব কাজ আমরা করি। কিন্তু আখেরাতের অন্তহীন জীবনের কথা স্মরণ করার সময় তো বের করে নিতে হবে এরই ভেতর থেকে।

যত দীর্ঘায়ুই লাভ করি না কেন, দুনিয়ার জীবন তো অতি সংক্ষিপ্ত। আখেরাতের জীবনের সামনে দুনিয়ার জীবন তো কোনো হিসাবেই আসে না। দুনিয়ার এ ক্ষণস্থায়ী জীবনের জন্যই যদি যিন্দেগীর পুরোটা এভাবে ক্ষয় করে ফেলি, ব্যয় করে দিই, বিশাল আখেরাতের জন্য তাহলে কী থাকলো? আমাকে যে করেই হোক আখেরাতের পুঁজি সঞ্চয় করতে হবে, দুনিয়াবী সব কাজের উপরে আখেরাতকেই প্রাধান্য দিতে হবে। আর আখেরাতের সবচেয়ে বড় অর্জন হবে আমার মালিক, রবের জিকির। তাঁর জিকিরে যেন সদা তাজা থাকে আমার জিহবা, ওষ্ঠ, কন্ঠ, অন্তর, প্রাণ।

কুরআনে কারীম এবং হাদীস শরীফে জিকির ও জিকিরকারীদের অনেক ফযীলত বর্ণিত হয়েছে। আল্লাহ তাআলা কুরআনে ইরশাদ করেছেন-

وَ لَذِكْرُ اللّٰهِ اَكْبَرُ.

অর্থাৎ আল্লাহর জিকিরই সবচেয়ে বড়। -সূরা আনকাবুত, আয়াত : ৪৫

আরেক স্থানে ইরশাদ করেছেন-

اِنَّ الْمُسْلِمِیْنَ وَ الْمُسْلِمٰتِ ... وَ الذّٰكِرِیْنَ اللهَ كَثِیْرًا وَّ الذّٰكِرٰتِ اَعَدَّ اللهُ لَهُمْ مَّغْفِرَةً وَّ اَجْرًا عَظِیْمًا.

নিশ্চয় মুসলিম পুরুষ এবং নারী... বেশি বেশি আল্লাহর জিকিরকারী পুরুষ এবং নারী এদের জন্য আল্লাহ মাগফিরাত এবং বিরাট আজর প্রস্তুত করে রেখেছেন। -সূরা আহযাব, আয়াত : ৩৫

তিনি অন্যত্র বলেন-

وَاذْكُرُواْ اللّهَ كَثِيرًا لَّعَلَّكُمْ تُفْلَحُونَ

এবং আল্লাহকে অধিক পরিমাণে স্মরণ কর যাতে তোমরা উদ্দেশ্যে কৃতকার্য হতে পার। -সূরা নং ৮, আয়াত : ৪৫

তিনি অন্য আয়াতে বলেন-

الَّذِينَ آمَنُواْ وَتَطْمَئِنُّ قُلُوبُهُم بِذِكْرِ اللّهِ أَلاَ بِذِكْرِ اللّهِ تَطْمَئِنُّ الْقُلُوبُ

যারা বিশ্বাস স্থাপন করে এবং তাদের অন্তর আল্লাহর জিকির দ্বারা শান্তি লাভ করে; জেনে রাখ, আল্লাহর জিকির দ্বারাই অন্তরসমূহ শান্তি পায়। -সূরা নং ১৩, আয়াত : ২৮

আরেক আয়াতে বর্ণিত হয়েছে-

إِنَّ فِي خَلْقِ السَّمَاوَاتِ وَالأَرْضِ وَاخْتِلاَفِ اللَّيْلِ وَالنَّهَارِ لآيَاتٍ لِّأُوْلِي الألْبَابِ

নিশ্চয় আসমান ও যমীন সৃষ্টিতে এবং রাত্রি ও দিনের আবর্তনে নিদর্শন রয়েছে বোধসম্পন্ন লোকদের জন্যে। -সূরা নং ০৩, আয়াত : ১৯০

অন্যত্র ইরশাদ হয়েছে-

الَّذِينَ يَذْكُرُونَ اللّهَ قِيَامًا وَقُعُودًا وَعَلَىَ جُنُوبِهِمْ وَيَتَفَكَّرُونَ فِي خَلْقِ السَّمَاوَاتِ وَالأَرْضِ رَبَّنَا مَا خَلَقْتَ هَذا بَاطِلاً سُبْحَانَكَ فَقِنَا عَذَابَ النَّارِ

যাঁরা দাঁড়িয়ে, বসে, ও শায়িত অবস্থায় আল্লাহকে স্মরণ করে এবং চিন্তা গবেষণা করে আসমান ও জমিন সৃষ্টির বিষযে, (তারা বলে) পরওয়ারদেগার! এসব আপনি অনর্থক সৃষ্টি করেননি। সকল পবিত্রতা আপনারই, আমাদিগকে আপনি দোযখের শাস্তি থেকে বাঁচান। -সূরা নং ০৩, আয়াত : ১৯১

আরেক আয়াতে ইরশাদ হয়েছে-

اللَّهُ نَزَّلَ أَحْسَنَ الْحَدِيثِ كِتَابًا مُّتَشَابِهًا مَّثَانِيَ تَقْشَعِرُّ مِنْهُ جُلُودُ الَّذِينَ يَخْشَوْنَ رَبَّهُمْ ثُمَّ تَلِينُ جُلُودُهُمْ وَقُلُوبُهُمْ إِلَى ذِكْرِ اللَّهِ ذَلِكَ هُدَى اللَّهِ يَهْدِي بِهِ مَنْ يَشَاء وَمَن يُضْلِلْ اللَّهُ فَمَا لَهُ مِنْ هَادٍ

আল্লাহ উত্তম বাণী তথা কিতাব নাযিল করেছেন, যা সামঞ্জস্যপূর্ণ, পূনঃ পূনঃ পঠিত। এতে তাদের লোম কাঁটা দিয়ে উঠে চামড়ার উপর, যারা তাদের পালনকর্তাকে ভয় করে, এরপর তাদের চামড়া ও অন্তর আল্লাহর স্মরণে বিনম্র হয়। এটাই আল্লাহর পথ নির্দেশ, এর মাধ্যমে আল্লাহ যাকে ইচ্ছা পথ প্রদর্শন করেন। আর আল্লাহ যাকে গোমরাহ করেন, তার কোন পথপ্রদর্শক নেই। -সূরা নং ৩৯, আয়াত : ২৩

অন্য এক আয়াতে সতর্ক করা হয়েছে-

يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا لَا تُلْهِكُمْ أَمْوَالُكُمْ وَلَا أَوْلَادُكُمْ عَن ذِكْرِ اللَّهِ وَمَن يَفْعَلْ ذَلِكَ فَأُوْلَئِكَ هُمُ الْخَاسِرُونَ

মুমিনগণ! তোমাদের ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্ততি যেন তোমাদেরকে আল্লাহর স্মরণ থেকে গাফেল না করে। যারা এ কারণে গাফেল হয়, তারাই তো ক্ষতিগ্রস্ত। -সূরা নং ৬৩, আয়াত : ০৯

এক স্থানে জিকির না করার ভয়াবহ পরিনাম সম্পর্কে সতর্ক করা হয়েছে-

وَمَنْ أَعْرَضَ عَن ذِكْرِي فَإِنَّ لَهُ مَعِيشَةً ضَنكًا وَنَحْشُرُهُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ أَعْمَى

এবং যে আমার স্মরণ থেকে মুখ ফিরিয়ে নেবে, তার জীবিকা সংকীর্ণ হবে এবং আমি তাকে কেয়ামতের দিন অন্ধ অবস্থায় উত্থিত করব। -সূরা নং ২০, আয়াত : ১২৪

لِنَفْتِنَهُمْ فِيهِ وَمَن يُعْرِضْ عَن ذِكْرِ رَبِّهِ يَسْلُكْهُ عَذَابًا صَعَدًا

যাতে এ ব্যাপারে তাদেরকে পরীক্ষা করি। পক্ষান্তরে যে ব্যক্তি তার পালনকর্তার স্মরণ থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়, তিনি তাকে উদীয়মান আযাবে পরিচালিত করবেন। -সূরা নং ৭২, আয়াত : ১৭

اسْتَحْوَذَ عَلَيْهِمُ الشَّيْطَانُ فَأَنسَاهُمْ ذِكْرَ اللَّهِ أُوْلَئِكَ حِزْبُ الشَّيْطَانِ أَلَا إِنَّ حِزْبَ الشَّيْطَانِ هُمُ الْخَاسِرُونَ

শয়তান তাদেরকে বশীভূত করে নিয়েছে, অতঃপর আল্লাহর স্মরণ ভূলিয়ে দিয়েছে। তারা শয়তানের দল। সাবধান, শয়তানের দলই ক্ষতিগ্রস্ত। -সূরা নং ৫৮, আয়াত : ১৯

أَفَمَن شَرَحَ اللَّهُ صَدْرَهُ لِلْإِسْلَامِ فَهُوَ عَلَى نُورٍ مِّن رَّبِّهِ فَوَيْلٌ لِّلْقَاسِيَةِ قُلُوبُهُم مِّن ذِكْرِ اللَّهِ أُوْلَئِكَ فِي ضَلَالٍ مُبِينٍ

আল্লাহ যার বক্ষ ইসলামের জন্যে উম্মুক্ত করে দিয়েছেন, অতঃপর সে তার পালনকর্তার পক্ষ থেকে আগত আলোর মাঝে রয়েছে। (সে কি তার সমান, যে এরূপ নয়) যাদের অন্তর আল্লাহ স্মরণের ব্যাপারে কঠোর, তাদের জন্যে দূর্ভোগ। তারা সুস্পষ্ট গোমরাহীতে রয়েছে। -সূরা নং ৩৯, আয়াত : ২২

وَمَن يَعْشُ عَن ذِكْرِ الرَّحْمَنِ نُقَيِّضْ لَهُ شَيْطَانًا فَهُوَ لَهُ قَرِينٌ

যে ব্যক্তি দয়াময় আল্লাহর স্মরণ থেকে চোখ ফিরিয়ে নেয়, আমি তার জন্যে এক শয়তান নিয়োজিত করে দেই, অতঃপর সে-ই হয় তার সঙ্গী। -সূরা নং ৪৩, আয়াত : ৩৬

হাদীস শরীফে আছে, হযরত আবুদ দারদা রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, আমি কি তোমাদেরকে সবচেয়ে উত্তম, তোমাদের রবের নিকট সবচেয়ে প্রিয়, তোমাদের মর্যাদা সবচেয়ে বেশি উন্নতকারী, স্বর্ণ রৌপ্য আল্লাহর রাস্তায় খরচ করার চেয়েও বেশি উত্তম এবং শত্রুর মুখোমুখি হয়ে শত্রুকে হত্যা করা এবং শত্রুর হাতে তোমাদের শহীদ হওয়ার চেয়েও বেশি উত্তম আমলের কথা বলব?

সাহাবীগণ বললেন, অবশ্যই ইয়া রাসূলাল্লাহ! তখন তিনি বললেন, তা হচ্ছে আল্লাহ তাআলার জিকির। -জামে তিরমিযী, হাদীস ৩৩৭৭

হযরত আবূ হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত একটি হাদীসে আছে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, মুফাররিদরা অগ্রগামী হয়ে যাচ্ছে। সাহাবারা জিজ্ঞাসা করলেন, মুফাররিদ কারা, ইয়া রাসূলাল্লাহ! তখন তিনি বললেন, বেশি বেশি আল্লাহর জিকিরকারী পুরুষ এবং নারী। -সহীহ মুসলিম, হাদীস ১৮৯১

এমন আরো অনেক ফযীলতপূর্ণ হাদীস বর্ণিত আছে। অনেক জিকির আছে, যেগুলো আদায় করতে খুব কম সময় লাগে, কিন্তু আজর বা সাওয়াবের দিক থেকে অনেক বড়। যেমন, সুবহানাল্লাহি ওয়া বিহামদিহী সুবহানাল্লাহিল আযীম। পড়তে কতক্ষণ লাগে? কিন্তু তার আজর! রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, এই দুটি বাক্য পড়তে খুবই সহজ, অথচ সেগুলো রহমানের নিকট প্রিয় এবং মীযানের পাল্লায় হবে ভারী। -সহীহ বুখারী, হাদীস ৬৪০৬; সহীহ মুসলিম, হাদীস ১৯০৪

এই তাসবীহের আরো একটি ফযিলত বর্ণিত আছে। তা হল, যে ব্যক্তি দিনে একশ বার সুবহানাল্লাহি ওয়া বিহামদিহী পড়বে তার সকল সগীরা গুনাহ ক্ষমা করে দেওয়া হবে। যদিও তা সমুদ্রের ফেনা পরিমাণ হয়। -সহীহ বুখারী, হাদীস ৬৪০৫; সহীহ মুসলিম, হাদীস ১৯০৮; জামে তিরমিযী, হাদীস ৩৪৬৬

সারাদিন কতভাবেই তো সময় নষ্ট করি। কত ধরনের কথাবার্তায় সময় পার করি। অথচ এসব সময়ে জিকির-তিলাওয়াত, অযীফায় মশগুল থাকলে দুনিয়া-আখেরাত উভয় দিক থেকে কত লাভবান হতাম! যবানের গোনাহে আমলনামা ভরে উঠত না।

জিকিরের সাথে ইস্তিগফারের আমল করা খুবই জরুরি। কারণ, নাজায়েয কোনো কথা বলে ফেললে তারপরে যদি বেশি বেশি ইস্তিগফার বা জিকির করি তাহলে তা সেই গোনাহের কাফফারা হয়ে যায়! আমাদের প্রিয় নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিষ্পাপ হওয়া সত্ত্বেও দিনে সত্তুর বারের বেশি ইস্তিগফার করতেন। তাহলে গোনাহগার উম্মতের জন্য কী পরিমাণ ইস্তিগফার প্রয়োজন? আমাদের বেশিরভাগ গোনাহই যবানের দ্বারা হয়। তাই সারা দিন বেশি বেশি ইস্তিগফার পড়া উচিত।

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর প্রিয় কন্যা হযরত ফাতিমা রা.-কে খাদেমা দেওয়ার বদলে তাসবীহ শিখিয়েছেন এবং বলেছেন, এই তাসবীহ গোলাম-বাদী থেকেও উত্তম। রাতে ঘুমানোর সময় তেত্রিশবার সুবহানাল্লাহ, তেত্রিশবার আলহামদু লিল্লাহ, চৌত্রিশবার আল্লাহু আকবার পড়া।

আমাদের প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে বিভিন্ন অবস্থায় বিভিন্ন দুআ শিখিয়েছেন। ঘুমানোর দুআ, ঘুম থেকে ওঠার পরের দুআ, খাওয়ার আগে-পরের দুআ, ইস্তিঞ্জার আগে-পরের দুআ, সকাল-সন্ধ্যার দুআ। যাতে এসকল দুআর মাধ্যমে সবসময়ই আল্লাহকে স্মরণ করতে পারি; কোনো অবস্থায়ই যেন আল্লাহর স্মরণ থেকে গাফেল না থাকি।

দৈনন্দিন দুআ-জিকিরের সাথে সাথে প্রতিদিন নির্দিষ্ট পরিমাণ তিলাওয়াত, মুনাজাতে মাকবূল এবং অন্যান্য ওযীফাও আদায় করা উচিত।

আমি হয়ত বলতে পারি, সারা দিন আমার কত কাজ! এত কাজকর্ম সংসার সামলে এত আমল করার সুযোগ কোথায়! কিন্তু পূর্ববর্তী মহীয়সী নারী পুরুষদের জীবনের দিকে যদি তাকাই, তাহলে দেখা যাবে, তাঁদেরও কাজকর্ম ছিল, সংসার ছিল, আমার চেয়েও তাঁদের ব্যস্ততা, সাংসারিক ঝামেলা অনেক বেশি ছিল। কিন্তু এত কষ্ট, এত ব্যস্ততা সত্ত্বেও তাঁদের জীবন ছিল আমলে-জিকিরে ভরপুর। এসব ছিল তাদের মূল কাজ। বাকিগুলো করতেন প্রয়োজনের তাকিদে। আমিও তাঁদের মতো হিম্মত করলে, দুনিয়া এবং আখেরাতকে তাঁদের মতো করে ভাবলে আমার জন্যও জিকির-আমল সহজ হয়ে যাবে।

তাছাড়া কাজ তো করি হাত-পা দিয়ে। মুখ তো অবসরই থাকে। তাই অবসর সময়ে তো বটেই, ব্যস্ত সময়েও জিকির, ইস্তিগফারে লেগে থাকতে পারি।

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে এক ব্যক্তি জিজ্ঞেস করেছিলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! ইসলামে তো অনেক বিষয় আছে (সবগুলোর উপর আমল করা হয়তো আমার পক্ষে সম্ভব হবে না) সুতরাং আমাকে এমন কোনো আমলের কথা বলে দিন, যাতে আমি সবসময় লেগে থাকতে পারি। তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন-

لَا يَزَالُ لِسَانُكَ رَطْبًا مِنْ ذِكْرِ اللهِ.

তোমার যবান যেন সর্বদা আল্লাহর জিকিরে সিক্ত-সতেজ থাকে। -সুনানে তিরমিযী, হাদীস ৩৩৭৫

শেষ কথাঃ

যারা জিকির করেন তারা প্রজ্ঞাময় এবং তাদের ইহকালীন ও পরকালীন জীবনে সাফল্য, শান্তি, সুখ, করুণা, ক্ষমা এবং মহান প্রতিদানের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়।

যারা জিকির থেকে গাফিল তাদের হেরে যাওয়া শ্রেনি হিসাবে চিহ্নিত করা হয়। তারা বাহ্যিক শান শওকতে থাকলেও অন্তরের প্রশান্তিবিহীন সংকীর্ণ জীবন যাপন করবে, তারা দুর্দশায় পূর্ণ হবে এবং হায় আফসোস, এই জীবনে শাস্তিপ্রাপ্তির পাশাপাশি পরকালে অন্ধ হয়ে উঠবে এবং যে সময়গুলো আল্লাহ তাআ'লার স্মরণে কাটায়নি তার জন্য অনন্ত অনুশোচনায় দগ্ধ হতে থাকবে। নিজেদের ধিক্কার দিতে থাকবে। পবিত্র কুরআনে বর্ণিত হয়েছে-

وَمَنْ أَعْرَضَ عَن ذِكْرِي فَإِنَّ لَهُ مَعِيشَةً ضَنكًا وَنَحْشُرُهُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ أَعْمَى

এবং যে আমার স্মরণ থেকে মুখ ফিরিয়ে নেবে, তার জীবিকা সংকীর্ণ হবে এবং আমি তাকে কেয়ামতের দিন অন্ধ অবস্থায় উত্থিত করব। -সূরা ত্ব-হা-, আয়াত : ১২৪

এক হাদিসে ইরশাদ হয়েছে-

যিনি তাঁর পালনকর্তাকে স্মরণ করেন এবং যিনি তাঁকে স্মরণ করেন না তার সাদৃশ্য জীবিত ও মৃতদের মধ্যে সমান। -সহিহ বুখারী

আমাদের অবস্থাও যেন হয় পূর্ববর্তী অলী আউলিয়ায়ে কিরামের মত। যারা জিকিরের স্বাদে মগ্ন হয়ে ভুলে যেতেন দুনিয়ার তাবত সুখ, শান্তি এবং আরাম আয়েশ। আল্লাহ তাআ'লা প্রত্যেকের অন্তরে তাঁর জিকিরের মুহাব্বত পয়দা করে দিন। আমাদের প্রত্যেকের প্রতিক্ষণের প্রার্থনা হোক, জিহবা আমার সিক্ত থাকুক জিকিরের বৃষ্টিতে!

মন্তব্য ১৬ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (১৬) মন্তব্য লিখুন

১| ১৯ শে এপ্রিল, ২০২০ দুপুর ১২:৪৫

ঠাকুরমাহমুদ বলেছেন:





লা ইলাহা ইল্লা আন্তা সুবহানাকা ইন্নি কুনতু মিনাজ্ জালিমীন।
আপনি ব্যতীত আর কোনো উপাস্য নেই। আমি আপনার পবিত্রতা ঘোষণা করছি। অবশ্যই আমি পাপী।
(সূরা আল আম্বিয়া: ৮৭)

১৯ শে এপ্রিল, ২০২০ দুপুর ১:৫৩

নতুন নকিব বলেছেন:



অনন্য একটি তাসবিহ।

২| ১৯ শে এপ্রিল, ২০২০ দুপুর ১২:৫০

নেওয়াজ আলি বলেছেন: সবসময় জিকির পড়ার চেষ্টা করি। আল্লাহ ব্যতীত কোন মাবুদ নাই। আল্লাহ শেষ ভরসা।

১৯ শে এপ্রিল, ২০২০ দুপুর ১:৫৪

নতুন নকিব বলেছেন:



চমৎকার!

শুকরিয়া।

৩| ১৯ শে এপ্রিল, ২০২০ দুপুর ১২:৫২

সেলিম আনোয়ার বলেছেন: ফী আমানিল্লাহ ।

১৯ শে এপ্রিল, ২০২০ দুপুর ১:৫৬

নতুন নকিব বলেছেন:



এটাও নিশ্চয়ই সুন্দর একটি জিকির।

দৈনন্দিন জীবনে কাজেকর্মে মাসনূন দুআগুলো জিকিরের অংশ।

৪| ১৯ শে এপ্রিল, ২০২০ দুপুর ১:০৭

মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন বলেছেন: আলহামদুলিল্লাহ।

১৯ শে এপ্রিল, ২০২০ দুপুর ১:৫৭

নতুন নকিব বলেছেন:



উত্তম জিকির।

৫| ১৯ শে এপ্রিল, ২০২০ দুপুর ১:২৬

রাজীব নুর বলেছেন: জিকির করে কি করোণা থেকে বাচতে পারবো? যদি বাচা যায় তাহলে আমি জিকির করতে রাজী আছি।

১৯ শে এপ্রিল, ২০২০ দুপুর ২:০৬

নতুন নকিব বলেছেন:



করোনাকে নয়, সত্যিকারের ভয় আল্লাহ পাককে করা উচিত, যিনি জীবন এবং মৃত্যুর মালিক। তাঁর হুকুম হলে করোনা ছাড়াও আমাদের যেতে হবে।

পৃথিবী থাকার জায়গা নয়। কেউই তো এখানে থাকতে পারেনি। আমরাও পারবো না। তাই, মৃত্যুভয়ে পালিয়ে বেড়ানো নয়, প্রয়োজনীয় সতর্কতা অবলম্বনের সাথে সাথে আল্লাহ তাআলাকে ডাকতে হবে মনে প্রাণে।

তিনিই আমাদের বাঁচানোর একমাত্র মালিক। আমরা ফিরে যাব তাঁর কাছেই। ইচ্ছে কিংবা অনিচ্ছায়।

৬| ১৯ শে এপ্রিল, ২০২০ দুপুর ২:৫৯

ঠাকুরমাহমুদ বলেছেন:





রাজীব নুর ভাই করোনা হলেও আপনি মারা যাবেন। করোনা না হলেও আপনি মারা যাবেন। মানুষ মরণশীল। পৃথিবীর ইতিহাসে অমর বলে কোনো মানুষ নেই। আখেরে দাওয়ানা আন আল হামদুলিল্লাহে রাব্বিল আল আমীন।

১৯ শে এপ্রিল, ২০২০ বিকাল ৩:৩১

নতুন নকিব বলেছেন:



চমৎকার মন্তব্যে কৃতজ্ঞতা।

৭| ১৯ শে এপ্রিল, ২০২০ বিকাল ৩:০৩

হাসান কালবৈশাখী বলেছেন:
'আল্লাহ এক' ( অদ্বিতীয়) এটা সবাই জানে, আমিও মানি। এছাড়া সবধর্মেই ঈশ্বর এক।
কিন্তু 'আল্লাহ এক' এই এক বাক্য বার বার উচ্চারন করার ফজিলতটা কি?
রাতভর মাইকে আরবিতে বার বার 'আল্লাহ এক' বলে চিল্লাচিল্লির হেতুটা কি?
এত বড় মহান আল্লাহ বিশ্বভ্রমান্ডের মালিক কি এতই নাদান যে তার সন্দেহ আছে, যে বান্দাদের চিল্লাচিল্লি আদেশ দেয়, নইলে তার এককত্ত হাতছাড়া হয়ে যেতে পারে?

আসলে আল্লার কি এমন আদেশ আছে? যে বান্দাকে তার এককত্ত বহাল রাখতে রাতভর মাইকে 'আল্লাহ এক' বলে চ্যাচাতে?

১৯ শে এপ্রিল, ২০২০ বিকাল ৩:৩০

নতুন নকিব বলেছেন:



জিকির বলতে আসলে যা বুঝা উচিত তা হচ্ছে - প্রতিটি কাজে মাসনূন দুআ কালাম সঠিকভাবে পরিপালন করা। আর আপনি যে জিকিরের কথা বলেছেন এই প্রকারের জিকির এইভাবে সম্মিলিতভাবে করারও পক্ষে বিপক্ষে মতামত রয়েছে। তবে মাইকে উঁচু আওয়াজে রাতভর জিকির করে অন্যের অনিষ্ট করা কোনো জিকিরের প্রকারের মধ্যে পরে না।

৮| ১৯ শে এপ্রিল, ২০২০ বিকাল ৩:১৮

সাড়ে চুয়াত্তর বলেছেন: অনেকে মনে করে জিকির মানে উচ্চস্বরে দল বেঁধে আল্লাহ কে ডাকা। আসলে জিকির হলও আল্লাহ কে স্মরণ করা। দল বেঁধে জিকির করা রসূলের (সাঃ) যুগে ছিল না।

১৯ শে এপ্রিল, ২০২০ বিকাল ৩:৩০

নতুন নকিব বলেছেন:



ঠিক বলেছেন।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.