নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
যবে উৎপীড়িতের ক্রন্দল-রোল আকাশে বাতাসে ধ্বনিবে না, অত্যাচারীর খড়্গ কৃপাণ ভীম রণ-ভূমে রণিবে না- বিদ্রোহী রন-ক্লান্ত। আমি সেই দিন হব শান্ত।
ছবিঃ অন্তর্জাল।
ইসলামে উত্তম চরিত্র ও সুন্দর আচরণের গুরুত্ব এবং তা লাভের উপায়
আচার আচরণ এবং কথাবার্তায় একজন মু’মিনকে কিভাবে শালীন হতে হবে সে ব্যাপারে আল্লাহ তা’আলা ইরশাদ করেন-
وَقُولُوا لِلنَّاسِ حُسْنًا
‘মানুষের সাথে সুন্দরভাবে কথাবার্তা বলো।’ -সূরা আল বাকারা, আয়াত ৮৩
নবী কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন-
كُلُّ مَعْرُوفٍ صَدَقَةٌ، وَإِنَّ مِنَ الْمَعْرُوفِ أَنْ تَلْقَى أَخَاكَ بِوَجْهٍ طَلْقٍ.
প্রতিটি ভালো কাজ ছদাকা। আর গুরুত্বপূর্ণ একটি ভালো কাজ হল, অপর ভাইয়ের সাথে হাসিমুখে সাক্ষাৎ করা। -জামে তিরমিযী, হাদীস ১৯৭০
আরেক হাদীসে নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন-
تَبَسُّمُكَ فِي وَجْهِ أَخِيكَ لَكَ صَدَقَةٌ.
তোমার ভাইয়ের (সাক্ষাতে) মুচকি হাসাও একটি ছদাকা। -জামে তিরমিযী, হাদীস ১৯৫৬’। -তিরমিযী
আখলাক কাকে বলেঃ
উত্তম আখলাক কী এবং কীভাবে তা অর্জন করা যায়- এটা একটা প্রশ্ন। দীর্ঘ আলোচনারও বিষয়। অল্প সময়ে এই বিষয়ে আলোচনা করা কঠিন। সংক্ষেপে এটুকু বলা যায়, কারো সাথে মুচকি হাসি দিয়ে কথা বলাকেই শুধু উত্তম আখলাক বলা হয় না। হ্যাঁ, এটাও উত্তম আখলাকের একটি অংশ। কিন্তু উত্তম আখলাকের পরিধি অনেক বড়। ওঠাবসা, চলাফেরা, আচার-আচরণ, লেনদেন- এককথায় গোটা জীবনাচারই এর মধ্যে শামিল। এমনও তো হতে পারে যে, একজন উপরে উপরে মুচকি হেসে কথা বলেন ঠিকই, কিন্তু অন্তর তার বিদ্বেষে পরিপূর্ণ। এটা কোনোভাবেই উত্তম আখলাকের পরিচায়ক নয়। স্রেফ কৃত্রিমতা। এর নাম বরং ধোঁকাবাজি। মুখের বাহ্যিক রঙ একরকম, ভেতরেরটা ভিন্ন। বলাবাহুল্য, এর মাঝে ইখলাস নেই এবং এটা মুমিনের শানও হতে পারে না।
মানুষের স্বভাব-চরিত্র এবং মেজাজ-মর্জি ও আচরণ বুঝানোর জন্য আরবিতে যে শব্দটি ব্যবহার করা হয় সেটি হচ্ছে আখলাক (اخلاق)। আরজি, আলামত, উকিল, এজলাস, কসম, কানুন, খারিজ, মৌজা, মহকুমা, রায়, হাজত, উস্তাদ, কলম, কিতাব, কুরসি, খাতা, গায়েব, তরজমা, দাখিল, দোয়াত, নগদ, মুন্সি, হাজির, আখিরাত, ঈদ, ইমান, কিয়ামত কোরআন, কুরবানি, জান্নাত, জাহান্নাম, তওবা, আক্কেল, আদম, আদাব, আতর, অজু, কবর, কিসমত, খাস, তাওফিক, তাসলিম, তাজ্জব, তামাদ্দুন, তালিম, তাহজিব, দুনিয়া, বিদায়, মজলিস, মনজিল, মাকসুদ, মাহফিল, হাশরের মত আখলাক (اخلاق) শব্দটিরও ব্যবহার রয়েছে বাংলা ভাষায়। আখলাক (اخلاق) শব্দটি বহুবচন এর একবচন হলো খুলুকুন (خُلُقٌ)।
খুলুকুন শব্দটি খালকুন শব্দমূল থেকে নেয়া হয়েছে। এর মূল অর্থ- সৃষ্টি করা, তৈরি করা, অস্তিত্বদান করা, পুরাতন করা। কিন্তু এই শব্দমূল থেকে নেয়া আখলাক শব্দটির ব্যবহার সম্পূর্ণ ভিন্ন অর্থে। আখলাক দ্বারা জন্মগত বৈশিষ্ট্য বুঝায়, প্রাকৃতিক সুকুমার বৃত্তি, মেজাজ, সুন্দর মনোবাঞ্ছা, আদর্শবোধ, নৈতিকতা, স্বভাব চরিত্র, আদব-কায়দা, ভদ্রতা-সৌজন্যতা ইত্যাদি চারিত্রিক মাধুর্য্যকে বুঝায়।
বাংলায় চরিত্র বা স্বভাব বলতে যা বুঝায় আরবি আখলাক দ্বারা তেমনই কিছু বুঝায়। আখলাক বুঝানোর জন্য ইংরাজিতে যে শব্দটি অধিক ব্যবহার হয় তাহলো Character (ক্যারেক্টার)। Character (ক্যারেক্টার) শব্দ দ্বারা ‘ওয়েবস্টার’ ডিকশনারির বর্ণনানুযায়ী একটি স্বভাব বা স্বভাবের উপাদানকে বুঝায়। তবে মানবীয় গুণাবলিরও অর্থ প্রদান করে, যেমন স্বভাব চরিত্র, চরিত্রের ধরণ, বোধ, ব্যক্তিত্ব, নৈতিকতা, আত্মবিশ্বাস, সুনাম সুখ্যাতি। আখলাক শব্দটিও এই সবই বুঝায়।
আখলাকের প্রকারভেদঃ
আখলাকের ব্যাখ্যায় বিভিন্ন অভিধানে বলা হয়েছে উত্তম চরিত্র মাধুর্যের জন্য যতগুলো গুণের প্রয়োজন সবগুলোই আখলাক (اخلاق) শব্দটি দ্বারা বুঝায়। আখলাক দুই প্রকার। যথাঃ
১। আখলাকে হাসানাহ তথা, উত্তম চরিত্র।
১। আখলাকে সাইয়্যিআহ বা ক্কবিহা তথা, মন্দ বা ঘৃণিত স্বভাব।
সুন্দরভাবে কথা বলা, গালি না দেয়া, দান করা, দুঃখিত হওয়া, অন্যকে আনন্দ দেয়া, পরহিতৈষী হওয়া, সবর, সততা, স্পষ্টভাষী, শান্তভাব, লজ্জাশীলতা, বীরত্ব, বিনয়ী হওয়া, ধীরস্থিরতা, দৃঢ়তা, দৃঢ়চিত্ততা, ন্যায়বিচার, হেকমত বা কৌশল কিংবা বিজ্ঞতা, অপরের প্রতি সুধারণা পোষণ, অন্যকে সহযোগিতা করা, অপরের প্রতি সহনশীল হওয়া, সময়ানুবর্তিতা মেনে চলা, সমবেদনাবোধ জাগ্রত রাখা, পরিমিত রসিকতা করা, মহত্ততা প্রদর্শন, ভদ্রতা, ভাবগাম্ভীর্য, মহানুভবতা, ওয়াদা পূরণ, উচ্চাকাঙ্খা, অল্পেতুষ্টি, কর্মোদ্যম, ইহসান বা দয়া প্রদর্শন, আমানতদারিতা বজায় রাখা, জবানের হেফাযত করা, তাওবা বা ভুল হলে তা থেকে ফিরে আসা, গোপনীয়তা রক্ষা করা, ক্ষমা করা ইত্যাদি সবই আখলাকে হাসানাহ বা উত্তম চরিত্রের অন্তর্ভূক্ত।
‘অন্তর’ মানুষের ভেতরের একটি গোশত পিণ্ড। দেখা যায় না। আরবিতে বলা হয় কলবুন (قَلْبٌ)। মানুষের স্বভাবচরিত্র ওই কলব থেকে উদগত হয়। সুন্দর চরিত্র কিংবা দুষ্টযুক্ত চরিত্র সবই সেই অন্তর থেকে বের হয়। তাই চরিত্র সুন্দর হওয়ার জন্য অবশ্যক বস্তু হলো ভেতরের কলবের চরিত্র সুন্দর করা। বাহ্যিক চরিত্রের মেহনতের প্রয়োজন হয় না, কায়িক শ্রমের প্রয়োজন হয় না। শুধুমাত্র ভেতরটা সুন্দর করলেও অটোমেটিকলি বাহ্যিক চরিত্রও সুন্দর হয়ে যাবে। তাই বলে বাহ্যিক চরিত্র একেবারে অর্থহীন নয়। এই বাহ্যিক চরিত্রটাই বেশ গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। বাহ্যিক চরিত্র ছাড়া অন্তরের চরিত্রতা প্রকাশ পায় না। ব্যবহারিক চরিত্র উন্নত হলেই ভেতরের চরিত্রের উন্নতি হয় না। তাই সুন্দর চরিত্র আদব আখলাক সৃষ্টি করার জন্য অন্তরের উপর কাজ করার প্রয়োজন। একজন মানুষ তখনই মানুষ বলে গন্য করা হবে যখন তার অন্তর মানুষ হবে। ইমাম গাযালি (রহ.) বলে অন্তর হলো ভেতরের এমন একটি ইঞ্জিন যার থেকে মানুষের কর্মধারা প্রকাশিত হয়। এর জন্য কোনো চাপাচাপি করতে হয় না। অন্তরের যখন ইচ্ছে প্রকাশ করে। প্রকাশের এই ধারায় যদি ভালো ও উপকারী কিছু প্রকাশ হয় তাকেই বলে উন্নত চরিত্র উত্তম আখলাক। আর প্রকাশের এই যদি পাপপঙ্কিলতা বা কলুষ রয় তাকেই বলে মন্দ বা দুশ্চরিত্র।
সুতরাং আত্মা থেকে উৎপন্ন চিন্তাকর্ম বা ভাববোধ যদি সুগন্ধি ছড়ায়, অন্ধকারকে আলোকিত করে, অসুন্দর করে সুন্দর করে, দূষিতকে দীপিত করে তবেই তা উত্তম আত্মা বা মনুষ্যচরিত্র। আর যদি আত্মা থেকে উৎপন্ন চিন্তাকর্ম বা ভাববোধ সংশ্লিষ্টব্যক্তি সমাজ দেশ ও দশকে নিকৃষ্ট করে তুলে তা-ই হলো মন্দচরিত্র বদআখলাক। এখন যদি কেউ এমন বলে যে, তার এই কাজটি ইচ্ছেকৃত হয়। এটা মানা যাবে না। কারণ অন্তর রেকর্ড করা বস্তুর ন্যায়। ভেতরে যাই থাকবে তাই বাজবে। কে বাজালো কীভাবে বাজালো তা কিন্তু রেকর্ড করা বস্তুটি চিন্তা করবে না। এমন হবে না যে, একজন ছোট ছেলে তার পিতা-মাতার অগোচরে গান বাজাচ্ছে হঠাৎ তার পিতা উপস্থিত! এখন কী রেকর্ড করা বস্তুটি চিন্তা করবে, আমি বাজবো কী বাজবো না? না সে চিন্তা করবে না। কারণ তাকে বানানোই হয়েছে এমন ভাবে যে, বোতাম টিপলেই বাজতে থাকবে। যেই টিপ দেয় যেসময়ই টিপ দেয়। আরেকটি উদাহরণ দিই, কারো আত্মার কামনা হলো দান করা। এখন সে যখন তখন মানুষকে দান করে বেড়ায়। নিজের থাকে কী না থাকে সে দিকে তার লক্ষ নেই। এই আত্মার ক্রিয়াকর্মই মানুষের আখলাককে ‘আখলাকে মামদুহা (সচ্চরিত্র) ও আখলাকে মাযমুমা (দুশ্চরিত্র)’ করে তুলে।
আখলাক (اخلاق) এর আরও কিছু প্রকারঃ
কিছু কিছু আখলাক বা চরিত্র আছে যা মানুষের জন্মগতভাবেই ভেতরে থাকে। আর কিছু আখলাক আছে মানুষ অন্যকে দেখে, পড়ে, জেনে, বুঝে, সংস্পর্শে, চাপে পড়ে অর্জন করে। প্রথম প্রকার আখলাককে যদি আমরা নাম দিই তাহলে তার নাম হবে স্বভাবজাত আখলাক আর দ্বিতীয় প্রকারের নাম হবে কাসাবি বা অর্জিত আখলাক। একজন মানুষের জীবনচরিত্রে এই দুধরণের আখলাকই জরুরি ও অত্যবশ্যক। এই দুই আখলাকের ফলাফল অবশ্যই এক ও অভিন্ন। যদি সবগুলোই আখলাকই জন্মগত হয়, তাহলে তো আলহামদুলিল্লাহ! আর যদি জন্মগত না থাকে একজন সুস্থ বিবেকমান মানুষের জন্য অবশ্যক হলো দ্রুত আখলাকে মামদুহাগুলা অর্জন করে নেয়া।
আখলাক প্রকাশের ক্ষেত্রসমূহঃ
আখলাক প্রকাশের ক্ষেত্র চারটি। যথা-
এক. আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর প্রতি আচরণ:
আল্লাহর প্রতি ঈমান আনা ও তার রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বিশ্বাস স্থাপন করা এবং রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর আনীত বিধানাবলিকে মান্য করা। অনেকে আবার বলতে পারে এগুলো কী চরিত্র? হ্যাঁ, এগুলোই মূলত চরিত্র। সচ্চরিত্র থাকলেই তবে আল্লাহর প্রতি ঈমান ও রাসূল (সা.)-কে বিশ্বাস করা যায়। অন্যথায় ঈমান আনার সুভাগ্য হয় না। দেখুন, নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর প্রাথমিক দাওয়াতগুলোতে কারা ঈমান এনে মুসলমান হয়েছে? আর কারা ঈমান আনার সৌভাগ্য হয়নি।
দুই. নিজের সঙ্গে সদাচরণঃ
নিজের সঙ্গে সদাচরণ করা অর্থ হলো নিজেকে কষ্ট না দেয়া। যেমন অসুস্থ হলে ওষুধ সেবন করা, পরিমিত খানা ও ঘুমানো, দৈহিক শ্রম দেয়া, জ্ঞান ও প্রজ্ঞার সঙ্গে চলাফেরা করা, বিপদে ধৈর্যধারণ করা ইত্যাদি।
তিন. অন্যের সঙ্গে আচরণঃ
যেমন সত্য বলা, গালি না দেয়া, আমানত রক্ষা করা ইত্যাদি।
চার. জীব জানোয়ারের সঙ্গে আচরণ:
জীবের সঙ্গে মানুষের জীবনে বহুঘনিষ্ঠতা আছে। সেখানেও প্রয়োজন হয় আচার আচরণের।
সবগুলো প্রকারগুলোতেই ইসলাম গুরুত্ব দিয়েছে। এমন নয় শুধু ঈমান আনার ব্যাপারে বলেছে। ঈমান আনার যেমন আদেশ আছে তেমনি নিজেকে সবপাপ কর্ম থেকে বাঁচানোর আদেশও আছে। অন্য মানুষের সঙ্গে যেমন ভালো আচরণের হুকুম ইসলাম দিয়েছে তেমনি ভাষাহীন প্রাণের সঙ্গে যোগ্য আচরণের হুকুম ইসলাম দিয়েছে।
আখলাকে মামদুহা তথা সচ্চরিত্র’ এর প্রয়োজনীয়তা:
সচ্চরিত্রের প্রয়োজনীয়তা কাগজে এঁকে সংজ্ঞা দিয়ে বুঝানোর বিষয় নয়। এর প্রয়োজন তেমনই যেমন মানুষের জন্য নিংশ্বাসের প্রয়োজন, পানির প্রয়োজন, প্রয়োজন আলোর। একটি দুশ্চরিত্র পুরো পৃথিবীকে বিষাক্ত করে দিতে পারে, দূষিত করতে পারে পাড়া মহল্লা, গাঁও, গেরামসহ পুরো একটি দেশ। আবার এর বিপরীতে একটি সুন্দর চরিত্র পুরো পৃথিবীকে শান্তির পথ দেখাতে পারে। দেখাতে পারে শৃঙ্খলায় আবদ্ধ একটি সুখ সমৃদ্ধ মানবসমাজের। একজন মানুষের মনুষ্যত্বই মূল চরিত্র। এই মনুষ্যত্ব বিলীন হলে মানুষ আর মানুষ থাকে না, পৃথিবী আর পৃথিবী থাকে না। এই মানুষ হয়ে ওঠে পশু আর পৃথিবীর হয়ে ওঠে একটি বিষাক্ত নরক। একারণেই রাসূল (সা.) এর সেই অমীয় বাণী إنما بعثت لأتمم مكارم الأخلاقআজো ধ্বনি প্রতিধ্বনি হয় ইথারে ইথারে। অর্থাৎ উত্তম চরিত্রকে পূর্ণতা দানের জন্যই আমাকে পাঠানো হয়েছে। আরেকটি হাদিস শুনি। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
عن القعقاع بن حكيم عن أبي صالح عن أبي هريرة قال قال رسول الله صلى الله عليه و سلم : إنما بعثت لأتمم صالح الأخلاق
অর্থাৎ হযরত কাকা ইবনে হাকিম আবি সাহেল থেকে আবু হুরায়রার সূত্রে বর্ণনা করেন; আমি কেবল সচ্চরিত্রকে পূর্ণতা দানের জন্যই প্রেরিত হয়েছি।
এখানে গভীরভাবে উপলব্দির বিষয় যে, সচ্চরিত্রকে পূর্ণতা দানের জন্যই আল্লাহ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে প্রেরণ করেছেন। ঈমান আনার জন্যই নয় কিন্তু। তিনি কিন্তু বলেননি যে আমাকে নামাজ রোজা হজ জাকাত পূর্ণভাবে আদায় করার জন্য দুনিয়ায় প্রেরণ করেছে। কী বলেছেন? বলেছেন উত্তম চরিত্রের পূর্ণতার কথা। তাহলে কী ঈমান জরুরি নয়? বলবো উত্তম চরিত্রই হলো ঈমান। উত্তম চরিত্র ছাড়া কেউ ঈমান গ্রহণ করতে পারে না। ঈমান আর চরিত্র দুটি একটি মুদ্রার এপাশ ওপাশ মাত্র। যার ঈমান আছে তার চরিত্র আছে, যার চরিত্র আছে তার ঈমান আছে, যার ঈমান নেই তার চরিত্র নেই, যার চরিত্র নেই তার ঈমান নেই। এবার কয়েক শুনি। এক হাদিসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন –
عَنِ ابْنِ جُرَيْجٍ أَنَّهُ سَمِعَ أَبَا الزُّبَيْرِ يَقُولُ سَمِعْتُ جَابِرًا يَقُولُ سَمِعْتُ النَّبِىَّ -صلى الله عليه وسلم- يَقُولُ الْمُسْلِمُ مَنْ سَلِمَ الْمُسْلِمُونَ مِنْ لِسَانِهِ وَيَدِهِ.
অর্থাৎ হজরত জাবের (রাযি.) বলেন আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে শুনেছি তিনি বলেন- মুসলিম একমাত্র ওই ব্যক্তি যার মুখ ও হাত থেকে অন্য মুসলিম নিরাপদ। এই হাদিসটি সিহাহ সাত্তার সবগুলো কিতাবেই বর্ণিত হয়েছে। বুখারি থেকে আরেকটি রেওয়াত পড়ছি,
عن عبد الله بن عمرو رضي الله عنهما عن النبي صلى الله عليه و سلم قال
: المسلم من سلم المسلمون من لسانه ويده والمهاجر من هجر ما نهى الله عنه
অর্থাৎ হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) বলেন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন- মুসলিম একমাত্র ওই ব্যক্তি যার মুখ ও হাত থেকে অন্য মুসলিম নিরাপদ। মুহাজির একমাত্র ওই ব্যক্তি যে, আল্লাহর নিষিদ্ধ বস্তু থেকে বেঁচে থাকে। (বুখারি পৃষ্ঠা নং ১/১৩)
উপরোক্ত দুটি হাদিসে মুমিনকে সীমাবদ্ধ করা হয়েছে দুটি বিষয়ের সঙ্গে যে, যারা হাত ও মুখ থেকে অন্য মুসলমান নিরাপদ থাকে তাকে মুসলিম বলে। এখানে একটি চরিত্রের বর্ণনা দেয়া হয়েছে। বদচরিত্র ব্যক্তি থেকে কেউ নিরাপদ থাকে না। সমাজ রাষ্ট্র পরের কথা। এমন কী তার আত্মীয় স্বজন। আরো ঘনিষ্ঠজন তার স্ত্রী ও স্বামী। মোটকথা তার হাত বা মুখ থেকে কেউ নিরাপদ থাকে। নিজেই নিরাপদ থাকে তার কাছে। অযথা বদআখলাকী প্রকাশ করে। যারা দ্বারা অন্যের ক্ষতি হয় না ঠিকই কিন্তু তার নিজের শরীরের আমলের অর্থের ক্ষতি হয়। ঈমান হলো সচ্চরিত্র, আর সচ্চরিত্র হলো ঈমান। আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উত্তম ব্যক্তিকে এর একটি কোয়ালিটি বর্ণনা করেছেন। বুখারি হাদিস-
عن عبد الله بن عمرو رضي الله عنهما قال : لم يكن النبي صلى الله عليه وسلم فاحشا ولا متفحشا وكان يقول (إن من خياركم أحسنكم أخلاقا)
অর্থাৎ হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর (রাযি.) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অশ্লীল ছিলেন না, অশ্লীলতা পছন্দও করতেন না। তিনি বলতেন- তোমাদের মধ্যে যার চরিত্র উত্তম, সেই সর্বোত্তম ব্যক্তি। এমন স্পষ্ট কথার ব্যাখ্যা করা লাগে না।
উপরোক্ত আলোচনা হাদিস ও প্রাসঙ্গিক কথায় আমরা বুঝলাম ঈমানের অন্যনাম সচ্চরিত্র। আরা সচ্চরিত্রের অন্যনাম ঈমান। নামাজ রোজা আদায় করা ঈমানের কাজ। এই নামাজ রোজা কিন্তু অসচ্চরিত্র মানুষ করতে পারে না। যে ব্যক্তি নামাজ রোজা আদায় করলো সে দুশ্চরিত্রের অধিকারী হতে পারে না। ঈমানের পরই নামাজের কথা বলা হয়েছে। কারণ কী? কারণ হলো এই ঈমান ঠিক রাখতে হলে নামাজের প্রয়োজন হয়। কেননা নামাজ চরিত্র নষ্ট হবার সকল উপাদান থেকে নামাজিকে রক্ষা করে। তাহলে এখানে নামাজও হলো সচ্চরিত্র সৃষ্টি ও সচ্চরিত্রকে ধরে রাখার একটি মাধ্যম।
মহান আল্লাহ সেই কথাই বলছেন,
اتْلُ مَا أُوحِيَ إِلَيْكَ مِنَ الْكِتَابِ وَأَقِمِ الصَّلَاةَ إِنَّ الصَّلَاةَ تَنْهَى عَنِ الْفَحْشَاءِ وَالْمُنْكَرِ وَلَذِكْرُ اللَّهِ أَكْبَرُ وَاللَّهُ يَعْلَمُ مَا تَصْنَعُونَ
অর্থাৎ ‘হে নবী ওহির মাধ্যমে আপনার প্রতি যে কিতাব নাযিল করা হয়েছে তা পাঠ করুন আর নামাজ কায়েম করুন। নিশ্চয় নামাজ অশ্লীল ও অন্যায় কাজ থেকে বিরত রাখে। আর আল্লাহর যিকিরই সর্বপেক্ষা বড় জিনিস। তোমরা যা কিছু কর, আল্লাহ তা জানেন’ (সূরা আনকাবুত : আয়াত ৪৫)।
এই আয়াত দ্বারা বুঝলাম যে, নামাজ ঈমানের হেফাজতকারী। এখন একটি কথা বলি- যার ঈমান নেই সেকি নামাজ পড়লে কোনো কাজ হবে? হবে না। তাই বলা যায়, ঈমানের পর নামাজও ঈমানদারের চরিত্রকে পাপ মুক্ত রাখে। এবার আমরা একটি হাদিস শুনবো- যাতে বলা উত্তম আখলাকের ব্যাপারে রাসূল (সা.) কী বলেন। বড়োই আশ্চর্যজনক কথা। যে হাদিস দ্বারা প্রতীয়মান হয় উত্তম আখলাকের মর্যাদা নামাজের মতোই।
হজরত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
عن عائشة أن النبي صلى الله عليه وسلم قال إن الرجل ليدرك بحسن الخلق درجة الصائم القائم
অর্থাৎ ‘একজন মানুষ সুন্দর চরিত্র মাধুর্য দ্বারা মর্যাদার যে উচ্চাসনে পৌঁছে যান, সে উচ্চাসনে নিয়মিত নফল আদায়কারী ও রোজাদারও তার নামাজ ও রোজার দ্বারা পৌঁছতে পারে।’ (মুসনাদ, ৪৭০, আদাবুল মুফরাদ ১০৭, মুজামুল কাবির ১৬৯)
মানুষ সচ্চরিত্র দ্বারা যে সম্মান ও মর্যাদার অধিকারী হতে পারে শুধু নামাজ ও রোজা দ্বারাও সেই মর্যাদার আসনে পৌঁছতে পারে। কারণ কী? কারণ হলো সচ্চরিত্র হলোই নামাজ রোজা। দুটি ভিন্ন করে দেখার সুযোগ নেই। উপরোক্ত হাদিসের আলোকে একথাই প্রমাণিত হয়। দুনিয়ার সবাইকে সচ্চরিত্রবান হওয়ার নিমিত্তে রাসূলে আরাবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রেরিত হয়েছেন। প্রত্যেক মানুষ তখনই সফল হবে এবং জান্নাতের উপযুক্ত হবে যখন সচ্চরিত্রবান হয়। এই সচ্চরিত্রবান হওয়ার কথাটাই ভিন্ন সময় ভিন্নভাবে বলা হয়। যেমন আল্লাহর ওলি হও অর্থাৎ সচ্চরিত্রবান হও, নামাজি মুক্তাকি হও অর্থাৎ সচ্চরিত্রবান হও, সত্যবাদি হও অর্থাৎ সচ্চরিত্রবান হও, মিথ্যা বলিও না অর্থাৎ সচ্চরিত্রবান হও, অন্যের মাল খেয়ো না অর্থাৎ সচ্চরিত্রবান হও। ভালোর আদেশই সচ্চরিত্রের আদেশ যে ভাবেই যেশব্দে যে কৌশলেই দিক। একটি আয়াত উল্লেখ করে পরবর্তী আলোচনায় যাচ্ছি। আগে আয়াতটি তেলাওয়াত করি ও অর্থ শুনি।
মহান আল্লাহ বলেন-
لَقَدْ كَانَ لَكُمْ فِي رَسُولِ اللَّهِ أُسْوَةٌ حَسَنَةٌ لِّمَن كَانَ يَرْجُو اللَّهَ وَالْيَوْمَ الْآخِرَ وَذَكَرَ اللَّهَ كَثِيرًا
অর্থাৎ ‘বস্তুত রাসূলের মধ্যে তোমাদের জন্য রয়েছে উত্তম আদর্শ চরিত্র- এমন ব্যক্তির জন্য যে ব্যক্তি আল্লাহ ও আখেরাতের দিনকে বিশ্বাস রাখে এবং আল্লাহকে অধিক পরিমাণে স্মরণ করে’ (সূরা আহযাব : ২১)
এই আয়াত থেকে কী বুঝলাম? আল্লাহ কী আমাদের লক্ষ করে এই কথা বলেছেন যে, তোমাদের জন্য রাসূল (সা.) এর জীবনীতে ঈমান রয়েছে? রাসূল (সা.) এর জীবনীতে নামাজ রয়েছে? রাসূল (সা.) এর জীবনীতে রোজা রয়েছে? না, এরকম কিছুই বলেনি। কী বলেছে? বলেছে- তোমাদের জন্য রাসূল (সা.) এর জীবনীতে উত্তম আখলাক আদর্শ চরিত্র রয়েছে। মহান আল্লাহ পাক আমাদের সকলের জীবনকে রাসূল (সা.) এর চরিত্রের ন্যায় চরিত্রবান করে দিন। আল্লাহুম্মা আমিন।
উত্তম চরিত্র ও সুন্দর ব্যবহার মানব চরিত্রের অন্যতম গুণঃ
এক হাদীসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, মুমিন ব্যক্তি হয়ে থাকে উত্তম চরিত্রের অধিকারী। অর্থাৎ সে বদমেজাজী, বিদ্বেষ ভাবাপন্ন ও মানুষের সাথে রুক্ষ আচরণকারী হয় না।
বদমেজাজী, বিদ্বেষ ভাবাপন্ন ও মানুষের সাথে রুক্ষ আচরণকারী হওয়া মুমিনের শান নয়। মুসলমান তো অন্যের সাথে নম্র আচরণ করবে, রুক্ষ আচরণ করবে না।
পশ্চিমা বিশ্ব ও উত্তম ব্যবহারঃ
এখন পশ্চিমা দুনিয়ায় আচার-আচরণ সম্পর্কে অনেক লেখালেখি হচ্ছে-কীভাবে নিজেকে উপস্থাপন করবেন, কীভাবে মেলামেশা করবেন, কীভাবে কথা বলবেন এবং কীভাবে মানুষকে নিজের প্রতি আগ্রহী করবেন ইত্যাদি। এ সকল বিষয় এখন পশ্চিমাদের কাছে খুব জনপ্রিয়। কিন্তু এ সকল প্রশিক্ষণের উদ্দেশ্য হল অন্যকে নিজের প্রতি আকৃষ্ট করা এবং নিজের মহত্ব অন্যের অন্তরে প্রতিষ্ঠিত করা। কিন্তু দ্বীন ইসলামে যে উত্তম আখলাকের শিক্ষা দেওয়া হয়েছে তার উদ্দেশ্য সম্পূর্ণ ভিন্ন। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যে উত্তম আখলাকের কথা বলেছেন তার উদ্দেশ্য কখনোই নিজের স্বার্থ হাসিলের জন্য অন্যকে বশে আনা নয়; বরং ভালো একজন মুসলমান হিসেবে আমার কর্তব্য, অন্যের সাথে সুন্দর আচরণ করা। তো এ দুই শিক্ষার মাঝে রয়েছে আসমান-যমীনের ব্যবধান। তাদের ভালো আচরণের উদ্দেশ্য, গ্রাহক আকৃষ্ট করা এবং ব্যবসা-বাণিজ্যে উন্নতি করা। পক্ষান্তরে আল্লাহ ও আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যে উত্তম আখলাকের শিক্ষা দিয়েছেন তার উদ্দেশ্য পার্থিব স্বার্থ হাসিল করা নয়। বরং এজন্য যে, একজন মুসলিম হিসেবে আমার কর্তব্য, অন্য মুসলিম ভাইয়ের সাথে হাসিমুখে মিলিত হওয়া এবং ভালো আচরণ করা।
নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে তোমরা একে অপরের সাথে হাসিমুখে সাক্ষাত করবে-এটিও ছাদাকাহ।
ব্যবসায়িক স্বার্থে সুন্দর আচরণঃ
অনেকে পশ্চিমাদের প্রশংসা করে বলে, তাদের আচার-আচরণ অনেক উন্নত। এমনকি এ মুগ্ধতার কারণে কখনো কখনো তাদেরকে ইসলাম ও মুসলমানদের চেয়েও শ্রেষ্ঠ মনে করা হয়। তাদের মধ্যে কিছু লোক হয়তো স্বভাবগতভাবেই ভদ্র ও সুশীল, কিন্তু সাধারণভাবে তাদের যে ভদ্রতা ও সৌজন্য তা ব্যবসায়িক। দোকানের সেলসম্যান যদি গ্রাহকদের সাথে হাসিমুখে কথা না বলে এবং ভদ্র ব্যবহার না করে তাহলে কেউ তার কাছে আসবে না। তাই সে নিজের ব্যবসায়িক স্বার্থে ভালো আচরণ করতে বাধ্য।
কেনো সেলসম্যানের ভদ্রতা ও সৌজন্যে মুগ্ধ হয়ে আপনি যদি মনে করেন সে পণ্যের মূল্যও আপনার কাছে কম রাখবে তাহলে ভুল করবেন। অনুরোধ করে দেখুন, সে আপনাকে সরি বলে ওখান থেকে সরে যাবে। কারণ তার সকল ভদ্রতা ও সৌজন্য তো এ জন্যই ছিল যে, কিভাবে সে আপনাকে আকৃষ্ট করতে পারে এবং আপনার কাছে অধিক মূল্যে পণ্য বিক্রি করতে পারে। তো এই ভদ্রতা ও সৌজন্যকে কি আখলাক বলে?!
আখলাক তো মানুষের অন্তর থেকে হয়, আল্লাহকে রাজিখুশি করার জন্য এবং আখিরাতের ছওয়াবের জন্য হয়, দুনিয়ার কোনো স্বার্থ এর সাথে জড়িত থাকে না।
উত্তম আখলাকের অধিকারী কীভাবে হওয়া যাবেঃ
এখন প্রশ্ন হল, উত্তম আখলাক কীভাবে পয়দা হবে। গোটা তাসাউফ এবং তাসাউফের সকল মেহনতের উদ্দেশ্য উত্তম আখলাকের অধিকারী হওয়া। এ উদ্দেশ্যে মানুষ বুযুর্গদের সোহবতে যায়। এর একটি স্বয়ংসম্পূর্ণ ব্যবস্থা আছে, যার বিস্তারিত আলোচনা এখন সম্ভব নয়। তবে আমারে মতে যে বিষয়টি উত্তম আখলাকের চাবিকাঠি তা আপনাদেরকে বলে দিচ্ছি। আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে আমলের তাওফীক দান করুন। এই চাবিকাঠি হচ্ছে ‘তাওয়াযূ’ বা বিনয়। এটিই উত্তম আখলাকের মূল।
উত্তম আখলাকের মূল চাবিকাঠি হচ্ছে ‘তাওয়াযূ’ বা বিনয়ঃ
যার মধ্যে তাওয়াযূ আছে সে কখনো বদ আখলাক ও দুর্ব্যবহারকারী হতে পারে না। এ কারণে আখলাক বিরোধী কোনো আচরণ প্রকাশ পাওয়ার অর্থই হচ্ছে তার মধ্যে তাকাববুর এসেছে। তাওয়াযূ অর্থ অন্যকে নিজের থেকে বড় মনে করা এবং নিজেকে ছোট মনে করা।
যদি কারো অন্তরে এ কথা বসে যায় যে, আমি ছোট আর সবাই আমার চেয়ে বড় তাহলে আর কিছুর দরকার নেই। হয়তো বয়স ও ইলমের দিক থেকে বড় নয়, কিন্তু আল্লাহর কাছে মাকবুলিয়ত ও তাকওয়ার দিক থেকে বড়। হয়তো এই মুহূর্তে বড় নয় কিন্তু ভবিষ্যতে আমার চেয়ে বড় হতে পারে।
তাওয়াযূ ও বিনয়ঃ
অন্তরে যেন নিজের বড়ত্বের চিন্তা না থাকে। বরং ভাবুন, আমার যা কিছু আছে সব আল্লাহর দান। যখন ইচ্ছা করেন তিনি তা ছিনিয়েও নিতে পারেন। আমার নিজস্ব কোনো গুণ নেই। আল্লাহ তাআলা অন্যদেরকে অনেক গুণ ও বৈশিষ্ট্য দান করেছেন। তাই তাদের অনেক কামাল ও যোগ্যতা রয়েছে। এভাবে নিজেকে বড় মনে না করার নামই তাওয়াযূ বা বিনয়।
যখন কারো অন্তরে তাওয়াযূ থাকবে এবং সে বিশ্বাস করবে যে, আমি ছোট, অন্য সবাই বড় তাহলে সে কি কারো সাথে খারাপ ব্যবহার করতে পারবে? পারবে না। বড়র সাথে কেউ খারাপ ব্যবহার করে না।
মানুষ খারাপ আচরণ করে তখনই যখন সে নিজেকে বড় মনে করে এবং অন্যকে ছোট ও তুচ্ছ মনে করে। সে চিন্তা করে যে, আমি তো বড়, সবার কর্তব্য আমার সম্মান করা ও অনুগত থাকা। কিন্তু ঐ লোকটা আমার যথাযথ সম্মান করেনি। সুতরাং সে অন্যায় করেছে। সে আমার ভালো আচরণ পাওয়ার যোগ্য নয়। তো তাকাববুর ও অহংকারই হচ্ছে সকল মন্দ আচরণের মূল।
তাওয়াযূ দ্বারা মর্যাদা বৃদ্ধি পায়ঃ
তাওয়াযূ পয়দা হলে বদআখলাকী হয় না। এজন্যই আমি বলি, সুন্দর ব্যবহারের মূল হচ্ছে তাওয়াযূ ও বিনয়। পক্ষান্তরে বদ আখলাক ও দুর্ব্যবহারের জড় হল তাকাববুর ও অহংকার।
কেউ যদি উজব (আত্মমুগ্ধতা) ও তাকাববুর (অহংকার) এ দুই প্রবণতার চিকিৎসা করে এবং তাওয়াযূ হাসিলের চেষ্টা করে; কোনো আল্লাহ ওয়ালার সোহবতে থেকে তাওয়াযূ অর্জন করে তাহলে ইনশাআল্লাহ দুর্ব্যবহারের ব্যধি তার কাছেও আসতে পারবে না।
হাদীস শরীফে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন-
من تواضع لله رفعه الله
অর্থাৎ যে আল্লাহর (সন্তুষ্টির) জন্য নিজেকে নীচু করে আল্লাহ তাকে উঁচু করে দেন।-মুসনাদে আহমদ, হাদীস : ১১২৯৯
নিজের হাকীকত সম্পর্কে চিন্তা করুনঃ
তাওয়াযূ হাসিলের জন্য আমাকে সবার আগে নিজের হাকীকত সম্পর্কে চিন্তা করতে হবে। আমি কী? কীভাবে আমার সৃষ্টি? কুরআন মজীদে আল্লাহ তাআলা দুই শব্দে মানুষের হাকীকত বলে দিয়েছেন।
من اى شيئ خلقه من نطفة خلقه
যদি মানুষ এটুকু চিন্তা করে যে, তাকে কী থেকে সৃষ্টি করা হয়েছে তাহলে তার সকল অহংকার দূর হয়ে যাবে। তার সৃষ্টির মূলে এক ফোটা বীর্য।
অন্য আয়াতে আল্লাহ তাআলা বলেন-
الم نخلقكم من ماء مهين
আমি কি তোমাদেরকে এক নিকৃষ্ট ও গান্দা পানি থেকে সৃষ্টি করিনি? যদি মানুষ তার মূল সম্পর্কে চিন্তা করে তাহলে তার মস্তিষ্কে অহংকার আসতে পারে না।
তেমনি যদি তার শেষ পরিণতি নিয়ে ভাবে যে, যখন তার মৃত্যু হবে তখন তার প্রিয়জনেরাও তাকে ঘরে রাখবে না। কারণ ঘরে রাখলে পচে যাবে এবং দুর্গন্ধ বের হবে। সুতরাং কবরে দাফন করে আসবে।
তো এই যখন তোমার শুরু ও শেষ তাহলে কীসের তাকাববুর? কী নিয়ে অহংকার?
শৌচাগার থেকেও শিখতে পারিঃ
হাকীমুল উম্মত থানভী রাহ. বলতেন, কখনো যদি নিজেকে বড় মনে হয় তাহলে বাইতুল খালায় (পায়খানায়) তোমার যে অবস্থা হয় তা নিয়ে একটু চিন্তা কর। ঐ অবস্থায় কেউ যদি তোমাকে দেখে তাহলে কেমন হবে? ঘৃণায় চোখমুখ কুঁচকে যাবে এবং দ্রুত সে ঐ স্থান ত্যাগ করবে!
আল্লাহ তাআলা দেহের উপর চামড়ার আবরণ দিয়ে দিয়েছেন। তা যদি সরিয়ে ফেলা হয় তাহলে তো ভিতরে শুধু নাপাকি আর নাপাকি। কোথাও রক্ত, কোথাও পুঁজ, কোথাও পেশাব, কোথাও পায়খানা। আল্লাহর দেওয়া চামড়ার আবরণ তোমার সব নাপাকি ঢেকে রেখেছে। তো এই তো তোমার হাকীকত! অথচ তুমি অহংকার কর-আমি এই, আমি সেই। আমি এই করব, সেই করব। আল্লাহ যদি তোমার মাথার স্ক্রুটা একটু ঢিলা করে দেন তাহলেই সব শেষ, তোমার সকল হম্বিতম্বি খতম। এরপরও কি নিজেকে বড় মনে করা যায়? তো অহংকার হচ্ছে শয়তানের ধোকা। শয়তান তোমাকে তোমার প্রকৃত অবস্থা ভুলিয়ে দিয়েছে। সুতরাং নিজের হাকীকত নিয়ে চিন্তা কর ও ফিরে এস।
নিজেকে সেবক মনে করঃ
আমাদের হযরত ডাক্তার আবদুল হাই আরেফী রাহ. বড় মূল্যবান কথা বলতেন যে, সকল ঝগড়া-ফাসাদের মূল হল আমরা নিজেকে মাখদুম মনে করি, আমরা চাই, সবাই আমার খাতির-তোয়াজ করুক, আমার খেদমত করুক। ভাই! নিজেকে মাখদুম নয়, খাদেম ও সেবক মনে করুন। আমি সবার খাদেম। ছোটরও খাদেম, বড়রও খাদেম। যদিও খেদমতের ধরন আলাদা আলাদা। তবে খাদেম আমি সবার। উস্তাদ যিনি ছাত্রকে পড়াচ্ছেন তিনি আসলে ছাত্রের খেদমত করছেন। এজন্য উস্তাদের উচিত নিজেকে তালিবুল ইলমের খাদেম মনে করা। তেমনি নিজেকে নিজের বিবি-বাচ্চার খাদেম মনে করুন। ভাই-বোন ও আত্মীয়স্বজনের খাদেম মনে করুন। এভাবে সবার খাদেম হয়ে যান এবং যার সাথেই সাক্ষাত হয়, মনে করুন আমি তার খাদেম।
পদমর্যাদা হিসেবে আচরণ ভিন্ন বিষয়ঃ
কর্তা ও প্রতাবশালীর সামনে সবাই বিনয় প্রকাশ করে, তার আদেশ পালন করে কিন্তু প্রকৃত বিনয় ও তাওয়াযূ, যা প্রশংসণীয় তা হল, নিজের সমপর্যায়ের লোকদের সাথে এবং নিজের থেকে ছোটদের সাথে তাওয়াযূর আচরণ করা। এটা ঠিক যে, কখনো কখনো দায়িত্বের কারণে কাউকে শাসন করতে হয়, কখনো কখনো শাস্তিও দিতে হয়। যেমন উস্তাদ শাগরিদকে শাস্তি দেয়, পিতা সন্তানকে শাস্তি দেয়। এ শাসন ও শাস্তিও খেদমত। সেসময়ও দায়িত্বশীলকে ভাবতে হবে যে, কর্তব্যের খাতিরে আমাকে এই কাজ করতে হচ্ছে। এজন্য নয় যে, আমি বড়, সে ছোট। কারণ এমন তো হতে পারে, তার মর্যাদা আল্লাহর কাছে আমার চেয়ে বেশি।
একটি সুন্দর উদাহরণঃ
হযরত থানভী রাহ. একটি সুন্দর উদাহরণ দিতেন যে, কোনো বাদশা যদি তার কোনো গোলামকে পাহারাদার নিযুক্ত করে বলে, ‘দরজায় দাঁড়াও, অনুমতি ছাড়া কাউকে ভিতরে আসতে দিবে না।’ এখন যদি কোনো শাহযাদাও আসে তাহলে ঐ পাহারাদারের অধিকার আছে, সে বলবে, আগে আপনার পরিচয় দিন, তারপর ভিতরে যাওয়ার অনুমতি পাবেন। শাহযাদা যদি জোর করে ভিতরে প্রবেশ করতে চায় তাহলে ঐ পাহারাদারের বাধা দেওয়ারও অধিকার আছে।
এখানে তো সাদা চোখে গোলাম শাহযাদাকে বাধা দিচ্ছে এবং তার উপর কর্তৃত্ব খাটাচ্ছে, কিন্তু বলুন, এ দুজনের মধ্যে কে শ্রেষ্ঠ? পাহারাদার যখন শাহযাদাকে বাধা দিচ্ছে তখন সেও ভাবছে না যে, আমি শাহযাদার চেয়ে শ্রেষ্ঠ; বরং ঐ সময়ও সে জানে, শাহযাদাই শ্রেষ্ঠ, তবে কর্তব্যের খাতিরে এখন আমি তাকে বাধা দিতে বাধ্য।
উস্তাদ, শায়েখ ও পিতার শাসনঃ
তো কোনো উস্তাদ যখন শাগরিদকে শাসন করছেন, শায়খ মুরিদকে শাসন করছেন, পিতা পুত্রকে শাসন করছেন তখন তাদেরও কর্তব্য, একথা চিন্তা করা যে, আমি আমার দায়িত্ব পালন করছি মাত্র। বাস্তবে হয়তো তার মর্যাদা আল্লাহর কাছে আমার চেয়ে অনেক বেশি।
থানভী রাহ.-এর নিয়মঃ
হযরত থানভী রাহ.-এর খানকায় অবস্থানকারীদেরকে নির্ধারিত নিয়ম মেনে চলতে হত। কেউ নিয়মের খেলাফ করলে তিনি শাসন ও তিরস্কার করতেন। এ সম্পর্কে তিনি বলতেন, আলহামদুলিল্লাহ, যখন আমি কাউকে তিরস্কার করি তখন চিন্তা করি যে, আমি পাহারাদার আর সে শাহযাদা। তবে তিরস্কার করা আমার কর্তব্য, তাই তাকে তিরস্কার করছি। নতুবা সে তো আমার চেয়ে শ্রেষ্ঠ।
দ্বিতীয়ত শাসনের সময়ও মনে মনে আল্লাহর কাছে ফরিয়াদ করি যে, আল্লাহ, আমি যেভাবে তাকে পাকড়াও করছি, তুমি আমাকে আখিরাতে পাকড়াও করো না।
তো বলুন, যিনি নিজের চেয়ে ছোটদের ক্ষেত্রেও মনে করেন, সে শাহযাদা আর আমি চৌকিদার, তার
অন্তরে অহংকার কীভাবে আসতে পারে।
আল্লাহ আমাদেরকেও এমন তাওয়াযূ হাসিল করার তাওফীক দান করুন।
তাওয়াযূ আসে বুযুর্গদের সোহবত দ্বারাঃ
সোহবতের দ্বারা তাওয়াযূ পয়দা হয়। বিনয়ীদের সোহবত ইখতিয়ার করুন আপনার মাঝে বিনয় আসবে। অহংকারীর সংশ্রবে থাকলে আপনার মাঝেও অহংকার আসবে। সুতরাং যাদেরকে আল্লাহ তাআলা তাওয়াযূ দান করেছেন তাদের সোহবতে থাকুন এবং নিজের হাকীকত নিয়ে চিন্তা করুন এবং একথা ভালোভাবে হৃদয়ঙ্গম করুন যে, আখিরাতের পুরস্কার অহংকারীর জন্য নয়। আখিরাতের পুরস্কার তারই প্রাপ্য, যে বিনয়ী, যে অবনতমস্তক, যে নিজেকে বড় মনে করে না।
উত্তম চরিত্র ও গুণ লাভে যেসব দোয়া পড়বেন মুমিনঃ
আল্লাহ তাআলা কুরআনুল কারিমে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের চারিত্রিক গুণাবলির ব্যাপারে ঘোষণা দিয়ে বলেন-
وَإِنَّكَ لَعَلى خُلُقٍ عَظِيمٍ
‘আর অবশ্যই আপনি মহান চরিত্রের অধিকারী।’ -সুরা কালাম : আয়াত ৪
পারিবারিক ও সামাজিক পরিবেশ সুন্দরিএবং মনোরম করে গড়ে তুলতে মানুষের উত্তম গুণের বিকল্প নেই। একজন উত্তম চরিত্রবান লোক চাইলে পুরো সমাজকে পরিবর্তন করে দিতে পারে। কেননা উত্তম আচরণ মানুষকে সত্য ও ন্যায়ের দিকে ধাবিত করে। যেভাবে উত্তম চারিত্রিক গুণ ও মাধুর্য দিয়েই বিশ্বনবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম অন্ধকার ও মূর্খ সমাজকে বিশ্ববাসীর জন্য অনুকরণীয় আদর্শ সমাজ বিনির্মাণে সক্ষম হয়েছিলেন। আর তা ছিল তাঁর চারিত্রিক সৌন্দর্য ও মাধুর্যতার বহিঃপ্রকাশ।
যুগের অন্যতম ইসলামিক স্কলার হাফিজ ইবনে হাজার আসকালানি রাহমাতুল্লাহি আলাইহি উত্তম চারিত্রিক গুণের পরিচয় দিতে গিয়ে বলেন-
‘আপনি অপরের সঙ্গে এমন আচরণ করবেন, যাতে মনে হবে আপনি তার বন্ধু এবং নিজের শত্রু। সুতরাং নিজের কাছ থেকে জোরপূর্বক অন্যের অধিকার আদায় করে দিন এবং নিজের জন্য অধিকার আদায়ের দাবি থেকে বিরত থাকুন। নিজের দাবি বা অধিকার যতই ন্য়ায়সঙ্গত হোক না কেন।
তাই প্রতিটি মানুষের জন্য উত্তম চরিত্রের অধিকারী হওয়ার জন্য মৌলিক কিছু গুণ নিজেদের মধ্যে বাস্তবায়ন ও আল্লাহর সাহায্য এবং বিজয় লাভে তাঁরই কাছে প্রার্থনা করার বিকল্প নেই। উত্তম চরিত্র গঠনের ৪টি মৌলিক গুণ রয়েছে। তা হলো- প্রজ্ঞা ও জ্ঞান, সাহসিকতা ও বীরত্ব, ন্যায় ও ইনসাফ, পবিত্রতা ও নিষ্কলুষতা।
এগুলোর মাঝে রয়েছে একে-অপরের প্রতি ক্ষমা, মার্জনা, উদারতা ও দানশীলতা, ধৈর্য ও সহ্য, দয়া ও মমতা, ভালোবাসা ও সৌহার্দ্য, বিনয় ও নম্রতা এবং অন্যের প্রয়োজন মেটানোর মনোবৃত্তি ইত্যাদি বিদ্যমান। এগুলোর বাস্তবায়নেই তৈরি হয় উত্তম চরিত্র।
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উত্তম চরিত্র লাভের জন্য মহান আল্লাহর অনুগ্রহ ও সাহায্য প্রার্থনা করতেন। উম্মতে মুহাম্মাদিকেও উত্তম চরিত্র লাভের তাওফিক কামনায় মহান আল্লাহর কাছে ধরনা ধরার দোয়া হাদিসে পাকে তুলে ধরেছেন। হাদিসে বর্ণিত কিছু এই বিষয়ক কিছু দোয়া এখানে তুলে ধরার প্রয়াস পাব ইনশাআল্লাহ।
উত্তম চরিত্র লাভের জন্য হাদিসে বর্ণিত কিছু দোয়াঃ
এক. এক হাদিসে এসেছে-
- اللَّهُمَّ اهْدِنِي لأَحْسَنِ الأَعْمَالِ وَأَحْسَنِ الأَخْلاقِ ، فَإِنَّهُ لا يَهْدِي لأَحْسَنِهَا إِلا أَنْتَ ، وَقِنِي سَيِّءَ الأَعْمَالِ وَسَيِّءَ الأَخْلاقِ ، فَإِنَّهُ لا يَقِي سَيِّئَهَا إِلا أَنْتَ
উচ্চারণ : আল্লাহুম্মাহদিনি লিআহসানিল আমালি ওয়া আহসানিল আখলাকি; ফাইন্নাহু লা ইয়াহুদি লিআহসানিহা ইল্লা আংতা; ওয়া ক্বিনিল আমালি ওয়াইয়্যিয়িল আখলাকি; ফাইন্নাহু লা ইয়াক্বি সাইয়্যিআহা ইল্লা আংতা।
অর্থ : ‘হে আল্লাহ! আমাকে সর্বোত্তম কাজ ও উন্নত চরিত্রের পথ দেখান। কেননা, আপনি ছাড়া এ পথের সন্ধান অন্য কেউ দিতে পারে না। আর অন্যায় কাজ ও খারাপ চরিত্র থেকে আমাকে রক্ষা করুন। কেননা, আপনি ছাড়া অন্য কেউ এ থেকে রক্ষা করতে পারে না।’ -সিফাতুস সালাত, মিশকাত হাঃ ৮২০, সুনান আন-নাসায়ী (ইসলামিক ফাউন্ডেশন) ৮৯৯, নামাজ শুরু করা (كتاب الافتتاح) 11/ The Book of the Commencement of the Prayer, বর্ণনাকারীঃ জাবির ইবনু আবদুল্লাহ আনসারী (রাঃ)
দুই. অপর এক হাদিসে বর্ণিত হয়েছে-
- اللَّهُمَّ إِنِّي أَعُوذُ بِكَ مِنْ مُنْكَرَاتِ الْأَخْلَاقِ، وَالْأَعْمَالِ، وَالْأَهْوَاءِ والْأَدْوَاءِ
উচ্চারণ : ‘আল্লাহুম্মা ইন্নি আউজুবিকা মিন মুনকারাতিল আখলাকি ওয়াল আমালি ওয়াল আহওয়ায়ি ওয়াল আদওয়ায়ি।’
অর্থ : হে আল্লাহ! আপনার কাছে খারাপ চরিত্র, অন্যায় কাজ, কু-প্রবৃত্তি এবং দুরারোগ্য ব্যাধি থেকে আশ্রয় চাই।’ -মিশকাত, তাহকিক ছানী ২৪৭১, তিরমিজী হাদিস নম্বরঃ ৩৫৯১ [আল মাদানী প্রকাশনী]
তিন. অন্য একটি হাদিসে ইরশাদ হয়েছে-
- اللَّهُمَّ أَلِّفْ بَيْنَ قُلُوبِنَا، وَأَصْلِحْ ذَاتَ بَيْنِنَا
উচ্চারণ : ‘আল্লাহুম্মা আল্লিফ বায়না কুলুবিনা ওয়া আসলিহ জাতা বাইনানা।’
অর্থ : হে আল্লাহ! আমাদের সব হৃদয়ের মাঝে বন্ধুত্বপূর্ণ সুসম্পর্ক তৈরি করে দিন আর আমাদের (বিবদমান বিষয়গুলো) সমাধান করে দিন।’ -সূনান আবু দাউদ (ইসলামিক ফাউন্ডেশন) হাদিস নং ৯৬৯, সালাত (নামায) (كتاب الصلاة), বর্ণনাকারীঃ আবদুল্লাহ ইব্ন মাসউদ (রাঃ)
চার. আরেক হাদিসে শেখানো হয়েছে-
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ ـ رضى الله عنه ـ أَنَّهُ سَمِعَ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم يَقُولُ " اللَّهُمَّ فَأَيُّمَا مُؤْمِنٍ سَبَبْتُهُ فَاجْعَلْ ذَلِكَ لَهُ قُرْبَةً إِلَيْكَ يَوْمَ الْقِيَامَةِ "
আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে এ দু‘আ করতে শুনেছেনঃ হে আল্লাহ! যদি আমি কোন মু’মিন লোককে খারাপ বলে থাকি, তবে আপনি সেটাকে কিয়ামতের দিন তার জন্য আপনার নৈকট্য অর্জনের উপায় বানিয়ে দিন। -মুসলিম ৪৫/২৫, হাঃ ২৬০১, আধুনিক প্রকাশনী-৫৯১৫ , ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৮০৮
পাঁচ. অপর হাদিসে বলা হয়েছে-
- اللَّهُمَّ مَنْ وَلِىَ مِنْ أَمْرِ أُمَّتِى شَيْئًا فَشَقَّ عَلَيْهِمْ فَاشْقُقْ عَلَيْهِ وَمَنْ وَلِىَ مِنْ أَمْرِ أُمَّتِى شَيْئًا فَرَفَقَ بِهِمْ فَارْفُقْ بِهِ
উচ্চারণ : ‘আল্লাহুম্মা মান ওয়ালিয়া মিন আমরি উম্মাতি শাইআন ফাশাক্কা আলাইহিম ফাশকুক আলাইহি ওয়া মান ওয়ালিয়া মিন আমরি উম্মাতি শায়আন ফারিফাকাবিহিম ফারফুকবিহি।’
অর্থ : ‘হে আল্লাহ! কেউ আমার উম্মতের কোনো বিষয়ে দায়িত্বশীল হয়ে যদি তাদের সঙ্গে কঠিন আচরণ করে তবে আপনিও তার সঙ্গে কঠিন আচরণ করুন। আর কেউ কোনো বিষয়ে দায়িত্বশীল হয়ে যদি তাদের সঙ্গে নম্রতাসুলভ আচরণ করে তবে তার প্রতি আপনিও দয়াশীল হোন।’ -সহিহ মুসলিম হাদিস নং ৪৫৭১, রাষ্ট্রক্ষমতা ও প্রশাসন (كتاب الإمارة) 34/ The Book on Government,
ছয়. আরেক হাদিসে আমাদেরকে শেখানো হয়েছে-
عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عَمْرٍو، قَالَ كَانَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم يَقُولُ " اللَّهُمَّ إِنِّي أَعُوذُ بِكَ مِنْ قَلْبٍ لاَ يَخْشَعُ وَدُعَاءٍ لاَ يُسْمَعُ وَمِنْ نَفْسٍ لاَ تَشْبَعُ وَمِنْ عِلْمٍ لاَ يَنْفَعُ أَعُوذُ بِكَ مِنْ هَؤُلاَءِ الأَرْبَعِ "
উচ্চারণ : আল্লাহুম্মা ইন্নি আউজুবিকা মিন কালবিন লা ইয়াখশাউ, ওয়া দুআয়িন লা ইয়ুসমাউ, ওয়া মিন নাফসিন লা তাশবাউ, ওয়া মিন ইলমিন লা ইয়ানফাউ।’
অর্থ : আবদুল্লাহ ইবন আমর রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (দু’আয়) বলতেনঃ ‘হে আল্লাহ! আপনার কাছে আশ্রয় চাই, এমন অন্তর থেকে যা (আপনার ভয়ে) ভীত হয় না, এমন দোয়া থেকে যা শোনা হয় না অর্থাৎ আপনি মঞ্জুর করেন না, এমন আত্মা থেকে যা পরিতৃপ্ত হয় না এবং এমন জ্ঞান থেকে যা কোনো উপকারে আসবে না।’ -তা'লীকুর রাগীব ১/৭৫-৭৬, সহীহ আবু দাউদ ১৩৮৪-১৩৮৫, তিরমিজী হাদিস নম্বরঃ ৩৪৮২ [আল মাদানী প্রকাশনী]
সাত. অন্য হাদিসের বর্ণনা-
وَعَنْ عَائِشَةَ قَالَتْ: كَانَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ: «اللَّهُمَّ حسَّنَت خَلقي فأحسِنْ خُلقي» . رَوَاهُ أَحْمد
উচ্চারণ : ‘আল্লাহুম্মা কামা হাসসানতা খালকি ফা-আহসিন খুলুকি।’
অর্থ : আয়িশাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রায়ই বলতেন : ‘হে আল্লাহ! আপনি আমার দেহের বাহ্যিক অবয়ব যেমন সুন্দর করেছেন তেমনি আমার ভেতরের চরিত্রকেও সুন্দর করে দিন।’ -মুসনাদে আহমাদ ৩৮২৩, সহীহ আত্ তারগীব ২৬৫৭, ইরওয়া ৭৪, মুসনাদে আবূ ইয়া‘লা ৫১৮১, শু‘আবুল ঈমান ৮৫৪২, জামে সগীর ১৩০৭
আমাদের কর্তব্যঃ
মুমিন মুসলমানের উচিত, নিজেদে উত্তম চরিত্রের অধিকারী করতে- প্রজ্ঞাপূর্ণ জ্ঞান, সাহসিকতা ও বীরত্বপূর্ণ কাজ, ন্যায় ও ইনসাফভিত্তিক আচরণ এবং পবিত্রতা ও নিষ্কলুষতার দিকে বিশেষ মনোযোগ দেয়া। হাদিসে উল্লেখিত দোয়াগুলোর মাধ্যমে মহান আল্লাহর কাছে সাহায্য প্রার্থনা করা।
সর্বোপরি ব্যক্তি পরিবার সমাজ কিংবা রাষ্ট্রীয় জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে একে-অপরের প্রতি ক্ষমা ও মার্জনা, উদারতা ও দানশীলতা, ধৈর্য ও সহ্য, দয়া ও মমতা, ভালোবাসা ও সৌহার্দ্য, বিনয় ও নম্রতা যথাযথভাবে অবলম্বন করা। আল্লাহর কাছে সুন্দর ও উত্তম চরিত্র লাভে বেশি বেশি ধরনা দেয়া এবং রোনাজারি করা। আর তাতেই আল্লাহ তাআলা বান্দাকে দান করবেন সুন্দর ও উত্তম চরিত্র। ভালো মানুষ হিসেবে কবুল করবেন।
শেষের প্রার্থনাঃ
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে উল্লেখিত গুণগুলো নিজেদের মধ্যে বাস্তবায়ন করার পাশাপাশি হাদিসে নির্দেশিত দোয়ার মাধ্যমে উত্তম চরিত্র লাভের চেষ্টা করার তাওফিক দান করুন। আমিন।
লেখা সূত্রঃ
নিবন্ধের ভেতরে যথাযুক্ত রেফারেন্স স্ব স্ব স্থানে যুক্ত করা হয়েছে।
১০ ই জুলাই, ২০২১ সকাল ১০:২৬
নতুন নকিব বলেছেন:
সকাল সকাল প্রথম মন্তব্যে আপনাকে পেয়ে আনন্দিত বোধ করছি। পোস্টে প্রথম লাইকসহ উপস্থিতি জানান দিয়ে যাওয়ায় শুকরিয়া। কল্যানের দোআ আপনার জন্য।
২| ১০ ই জুলাই, ২০২১ সকাল ১১:৩৪
মহাজাগতিক চিন্তা বলেছেন: জাজাকাল্লাহ খায়রান।
১০ ই জুলাই, ২০২১ দুপুর ২:১৫
নতুন নকিব বলেছেন:
শুকরিয়া ফরিদ ভাই। লাইকসহ উপস্থিতি জানান দিয়ে যাওয়ায় দোআসহ কৃতজ্ঞতা।
৩| ১০ ই জুলাই, ২০২১ দুপুর ১:১৩
সাড়ে চুয়াত্তর বলেছেন: সুন্দর শিক্ষামূলক পোস্ট।
প্রকৃত মুসলমান সেই ব্যক্তি, যার হাত ও জবান থেকে অন্য মুসলমান নিরাপদে থাকে বা কষ্ট না পায়। (বুখারি শরিফ, খণ্ড: ১, ইমান অধ্যায়, পরিচ্ছেদ: ৪, হাদিস: ৯, পৃষ্ঠা- ১৭
আল্লাহ আপনাকে এই কাজের জন্য উত্তম প্রতিদান দিবেন এই কামনা করি।
১০ ই জুলাই, ২০২১ দুপুর ২:১৬
নতুন নকিব বলেছেন:
প্রতিটি ভালো কাজের সাথে আপনার একাত্মতা প্রকাশের মানসিকতা প্রশংসনীয়।
দোআসহ কৃতজ্ঞতা জানবেন।
৪| ১০ ই জুলাই, ২০২১ সন্ধ্যা ৬:০৩
ঢাবিয়ান বলেছেন: সুন্দর পোস্ট। আসলে আখলাক , তাকওয়া বা কর্মই হচ্ছে আসল ইসলাম। ইসলামের দ্বীতিয় খলিফা হযরত উমরের জীবনী পড়েছিলাম । সেখানে পড়েছি যে ইসলাম আসার পুর্বে আরবের অধিকাংশ মানুষ ছিল একই সাথে হয্রত ইব্রাহিমের অনুসারী আবার মুর্তি পুজারি। তখনও কাবা ঘর ছিল যেখানে তারা এক আল্লাহর ইবাদত করত আবার বিভিন্ন পীরের মুর্তি পুজাও করত। হজ্ব, কুরবানি ও রোজাও ছিল প্রাক ইসলামি পিরিয়ডে। কিন্ত সেই অত্যাচারি জুলুমবাজ আরবদের কোন চরিত্র ছিল না।অর্থাৎ ধর্ম তাদের চরিত্রে কোন প্রভাব বিস্তার করেনি। ধর্ম ছিল স্রেফ একটা আচার অনুষ্ঠান মাত্র। আমাদের নবীজি যখন আল্লাহ প্রদত্ত ইসলামের বানী নিয়ে হাজির হন তখন প্রতিটা ধর্মীয় আচার আচরন পালনের পেছনের বার্তা নিয়ে হাজির হন। পাঁচ ওয়াক্ত নামায, রোজা , হজ্ব , যাকাতের মুল তাৎপর্য নিয়ে আসেন সামনে। আমল যদি না থাকে তবে স্রেফ কিছু লোক দেখানো নামাজ রোজার কোনই তাৎপর্য নাই। নবিজি তাদের তাই কাফের, মুশরিক আখ্যা দিয়েছিলেন।
অত্যন্ত দুঃখজনক যে এই জমানায় অধিকাংশ মুস্লিমের সাথে সেই প্রাক ইসলামি পিরিয়ডের কাফের মুশরিকদের পার্থক্য বিশেষ নাই। নামাজ, রোজা, হজ্ব সবই পালন করছে কিন্ত তার কোন প্রভাব চরিত্রে নাই।
১১ ই জুলাই, ২০২১ সকাল ৯:১১
নতুন নকিব বলেছেন:
অনুধাবনযোগ্য অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ মন্তব্য। লাইকসহ পোস্টে আপনাকে পেয়ে আনন্দিতবোধ করছি। কৃতজ্ঞতা জানবেন।
আপনার কথা তিক্ত হলেও সত্যতা বিবর্জিত নয়। সত্যিই একথা অত্যন্ত দুঃখজনক যে, আজকের দিনে আমরা অধিকাংশ মুসলিমই আত্মভোলা এবং আত্মপরিচয় বিস্মৃত। নিজেদের স্বকীয়তা, নিজস্বতা এবং ইতিহাস ঐতিহ্য ও গৌরবগাঁথা ভুলে গিয়ে এর ওর পায়ে হুমরি খেয়ে গোলামীর জীবন যাপনে অভ্যস্ত হচ্ছি দিনকে দিন। সম্মান ও গৌরব নিয়ে এ জাতির টিকে থাকার জন্য এ অবস্থার আশু পরিবর্তন অপরিহার্য্য।
অনেক অনেক শুভকামনা।
৫| ১০ ই জুলাই, ২০২১ রাত ১১:২৭
কামাল১৮ বলেছেন: ইহুদি,খৃষ্টান এবং ইসলাম এই তিন ধর্মই আল্লাহর মনোনীত ধর্ম।বতর্মানে সবথেকে প্রভাব বিস্তারকারী ধর্ম খৃষ্টান তারপর ইসলাম এবং তারপর ইহুদি।আল্লাহ ইসলাম ধর্মের হেফাজত করে চলছেন আর গড খৃষ্টানদের,জিহোবা ইহুদিদের।
১১ ই জুলাই, ২০২১ সকাল ৯:২৮
নতুন নকিব বলেছেন:
ইহুদি, খৃষ্টান এবং ইসলাম এই তিন ধর্মই আল্লাহর মনোনীত ধর্ম।
-এই কথা কি আপনি সত্যিই বিশ্বাস করেন? ইহুদি এবং খৃষ্ট ধর্ম আল্লাহর মনোনীত ধর্ম ছিল এবং তাদের ধর্মগ্রন্থ তাওরাত এবং ইঞ্জিলও তাঁর প্রেরিত গ্রন্থ ছিল। কিন্তু এখনকার তাদের ধর্মগ্রন্থের পরিবর্তিত যে অবস্থা, সেটাকে আপনি কিভাবে দেখেন?
বতর্মানে সব থেকে প্রভাব বিস্তারকারী ধর্ম খৃষ্টান তারপর ইসলাম এবং তারপর ইহুদি।
-আপনার মতে, প্রভাব বিস্তারের মাপকাঠি কি শুধুই জনসংখ্যার আধিক্য? ইসলাম বাদ দিয়ে অন্য যে দু'টি ধর্মের উল্লেখ করেছেন, তাদের অনুসারীদের স্ব স্ব ধর্মপালনের পরিসংখ্যান সম্মন্ধে যদি কিছু বলতেন! আচ্ছা, প্রসঙ্গত একটা কথা, ইসলাম ধর্মাবলম্বীগণের ভেতরে অনুসন্ধান করলে তাদের ধর্মীয় গ্রন্থ আল কুরআনের লক্ষ লক্ষ হাফেজ পাওয়া যাবে। ছয় বছরের শিশু থেকে ৮০ বছরের বৃদ্ধ পর্যন্ত হাফেজে কুরআনের সাক্ষাৎ পাবেন আপনি। এমনকি অনুসন্ধান করলে, হাদিসের অনেক কিতাবেরও হাফেজ পাওয়া যাবে। প্রশ্ন হচ্ছে, আপনার উল্লেখিত অপর দুই ধর্মের ধর্মগ্রন্থ মুখস্ত করেছেন, এমন একজন মানুষ পৃথিবীতে আছেন, এরকম কোনো দৃষ্টান্ত পাওয়া যাবে? যদি আপনার জানা থাকে দয়া করে জানালে কৃতজ্ঞ হব। তথ্যটা আমার বহু দিন যাবত জানার ইচ্ছে। আপনাকে বিজ্ঞ এবং জ্ঞানী ব্যক্তি মনে করি। তাই আপনার মাধ্যমে হয়তো জানতে পারবো।
আল্লাহ ইসলাম ধর্মের হেফাজত করে চলছেন আর গড খৃষ্টানদের, জিহোবা ইহুদিদের।
-যার যেমন ধারণা।
অনেক অনেক শুভকামনা।
©somewhere in net ltd.
১| ১০ ই জুলাই, ২০২১ সকাল ১০:২২
হাবিব বলেছেন: জাজাকাল্লাহ খায়রান।