নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আলহামদুলিল্লাহ। যা চাইনি তার চেয়ে বেশি দিয়েছেন প্রিয়তম রব। যা পাইনি তার জন্য আফসোস নেই। সিজদাবনত শুকরিয়া। প্রত্যাশার একটি ঘর এখনও ফাঁকা কি না জানা নেই, তাঁর কাছে নি:শর্ত ক্ষমা আশা করেছিলাম। তিনি দয়া করে যদি দিতেন, শুন্য সেই ঘরটিও পূর্নতা পেত!

নতুন নকিব

যবে উৎপীড়িতের ক্রন্দল-রোল আকাশে বাতাসে ধ্বনিবে না, অত্যাচারীর খড়্গ কৃপাণ ভীম রণ-ভূমে রণিবে না- বিদ্রোহী রন-ক্লান্ত। আমি সেই দিন হব শান্ত।

নতুন নকিব › বিস্তারিত পোস্টঃ

নামাজে একাগ্রতা ও মনযোগ ধরে রাখার কিছু উপায়, পর্ব-০২

২২ শে সেপ্টেম্বর, ২০২১ সকাল ১০:১৪

মক্কায় অবস্থিত লক্ষ লক্ষ মুসল্লি পরিবেষ্টিত বাইতুল্লাহ শরিফের অনন্য একটি দৃশ্য, https://www.gettyimages.com থেকে সংগৃহীত।

প্রথম পর্বের লিঙ্ক- নামাজে একাগ্রতা ও মনযোগ ধরে রাখার কিছু উপায়, পর্ব-০১

নামাজে একাগ্রতা ও মনযোগ ধরে রাখার কিছু উপায়, পর্ব-০২

ইতোপূর্বে গত ১৯ শে সেপ্টেম্বর, ২০২১ দুপুর ১২:৩৪ এ প্রকাশিত হয়েছিল নামাজে একাগ্রতা ও মনযোগ ধরে রাখার কিছু উপায়, পর্ব-০১। আলহামদুলিল্লাহ, এরই ধারাবাহিকতায় আজ প্রকাশ হচ্ছে নিবন্ধটির ২য় এবং শেষ পর্ব।

বারো. সুতরা বা বিভাজক বা আড়াল ব্যবহার করাঃ

সুতরা বলা হয় নামাজের মধ্যে যাতে কেউ সামনে দিয়ে চলাফেরা করার কারণে মনযোগ বিনষ্ট না হয় সে জন্য লাঠি ইত্যাদি দিয়ে কোনো বিভাজক বা আড়াল গ্রহণ করাকে। সালাতের শুরুতে সুতরা গ্রহণ করা ও সুতরার নৈকট্যে দাঁড়ানো। কেননা, সুতরা দৃষ্টিকে সংকোচিত করে, শয়তান থেকে সুরক্ষা দেয় ও সামনে দিয়ে মানুষের আসা-যাওয়ার সম্ভাবনা বন্ধ করে, আর এগুলো মুসল্লির সালাতে ব্যাঘাত ঘটায় ও তার সাওয়াব নষ্ট করে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,

«إذا صلى أحدكم فليصل إلى سترة وليدن منها».

“যখন তোমাদের কেউ সালাত আদায় করে, তখন সে সুতরার দিকে ফিরে সালাত আদায় করবে এবং তার নিকটে দাঁড়াবে।” -আবু দাউদ: ৫৯৮; ‘সহীহ আল-জামি’, হাদীস নং ৬৫১

তিনি অপর হাদিসে বলেছেন,

«إذا صلى أحدكم إلى سترة فليدن منها لا يقطع الشيطان عليه صلاته».

“তোমাদের কেউ যখন সুতরার দিকে ফিরে সালাত আদায় করবে, সে তার নিকটে দাঁড়াবে, তাহলে শয়তান তার সালাত নষ্ট করবে না।” -আবু দাউদ: ১/৪৪৬, হাদীস নং ৬৯৫; ‘সহীহ আল-জামি’, হাদীস নং ৬৫০

ইবন হাজার বলেন, “সুতরার ক্ষেত্রে সুন্নত হচ্ছে মুসল্লির পা ও সুতরার মাঝে তিন হাত ব্যবধান রাখা, আর সাজদার জায়গা ও সুতরার মাঝে একটি বকরি চলাচলের মতো ফাঁকা রাখা, যেমন একাধিক সহীহ হাদিসে এসেছে।” -সহীহ বুখারির ব্যাখ্যা গ্রন্থ ‘ফাতহুল বারি’: ১/৫৭৪, ৫৭৯

মুসল্লিকে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নির্দেশ দিয়েছেন, সুতরার ভেতর দিয়ে কাউকে যেতে দিবে না, যেমন তিনি বলেছেন,

«إذا كان أحدكم يصلي فلا يدع أحدًا يمر بين يديه، و ليدرأه ما استطاع فإن أبى فليقاتله فإن معه القرين».

“যখন তোমাদের কেউ সালাত আদায় করে তখন কাউকে তার সামনে দিয়ে যেতে দিবে না, তাকে যথাসম্ভব বাঁধা দিবে। যদি সে বিরত না হয় তার সঙ্গে লড়াই করবে, কারণ তার সাথে শয়তান রয়েছে।” -সহীহ মুসলিম: ১/২৬০; সহীহ আল-জামি, হাদীস নং ৭৫৫

ইমাম নববী রহ. বলেন, “সুতরার হিকমত হচ্ছে তার বাহির থেকে দৃষ্টিকে ফিরিয়ে রাখা, তার ভেতর দিয়ে কাউকে যেতে না দেওয়া, শয়তানের চলাচলকে বাধাগ্রস্ত করা এবং মুসল্লির সালাত নষ্ট করতে তার উপস্থিত হওয়ার সুযোগ বন্ধ করা।” -ইমাম নববি কর্তৃক সহীহ মুসলিমের ব্যাখ্যা গ্রন্থ: ৪/২১৬

তের. সাজদার জায়গায় চোখ রাখাঃ

নামাজে দন্ডায়মান অবস্থায় সাজদার জায়গায় চোখ রাখা উচিত। আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা বলেন,

«كان رسول الله صلى الله عليه وسلم إذا صلى طأطأ رأسه ورمى ببصره نحو الأرض».

“রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন সালাতে দাঁড়াতেন মাথা নিচু রাখতেন ও মাটির দিকে দৃষ্টি দিতেন।” -ইমাম হাকিম সংকলিত ‘আল-মুসতাদরাক’: ১/৪৭৯; তিনি বলেন, “হাদীসটি বুখারি ও মুসলিমের শর্তানুযায়ী সহি।” আলবানি তার সাথে ঐকমত্য পোষণ করেছেন। ‘সিফাতুস সালাত’: পৃ.৮৯।

নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সম্পর্কে আরো বর্ণিত আছে,

«ولما دخل الكعبة ما خلف بصره موضع سجوده حتى خرج عنها».

“যখন তিনি কা‘বাতে প্রবেশ করেছেন তখন সাজদার জায়গা থেকে দৃষ্টি হটান নি, যতক্ষণ না সেখান থেকে বের হয়েছেন।” -ইমাম হাকিম সংকলিত ‘আল-মুসতাদরাক’: ১/৪৭৯; তিনি বলেছেন, হাদীসটি বুখারি ও মুসলিমের শর্তানুযায়ী সহি। আর ইমাম যাহাবি তাকে সমর্থন করেছেন। আলবানি বলেছেন, “হাকেম ও যাহাবি হাদীসটি সম্পর্কে ঠিক বলেছেন।” আলবানির গবেষণা ‘ইরওয়াউল গালিল’: ২/৭৩

তাশাহহুদের বৈঠকে ইশারার আঙ্গুলে নজর রাখা ও তা নাড়তে থাকা, যেমন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সম্পর্কে বর্ণিত,

«يشير بأصبعه التي تلي الإبهام إلى القبلة ويرمي ببصره إليها».

“তিনি বৃদ্ধাঙ্গুলির পাশের আঙ্গুল দিয়ে কিবলার দিকে ইশারা করতেন এবং তার দিকেই দৃষ্টি নিবদ্ধ রাখতেন।” -সহীহ ইবন খুযাইমাহ: ১/৩৫৫, হাদীস নং ৭১৯। ইবন খুযাইমার গবেষক বলেন, খুযাইমার সনদটি সহি, দেখুন: ‘সিফাতুস সালাত’: পৃ.১৩৯

অপর বর্ণনায় এসেছে,

«وأشار بالسبابة ولم يجاوز بصره إشارته».

“তিনি শাহাদাত আঙ্গুল দ্বারা ইশারা করেছেন, তবে তার চোখ তার ইশারাকে অতিক্রম করে নি।” -ইমাম আহমদ সংকলিত ‘মুসনাদ’: ৪/৩; আবু দাউদ, হাদীস নং ৯৯০

চৌদ্দ. পূর্ববর্তী মনীষী ও সালফে সালেহীনদের সালাত কেমন ছিল তা চিন্তা করাঃ

পূর্ববর্তী মনীষী ও সালফে সালেহীনদের সালাত কেমন ছিল তা নিয়ে চিন্তা করা। এতেও খুশু ও একাগ্রতা সৃষ্টি হয় এবং তাদের অনুসরণ করার প্রেরণা তৈরি হয়। ইবন রজব হাম্বলি রহ. বলেন, “আপনি যদি সালাফদের কাউকে সালাতে দাঁড়াচ্ছে দেখেন, লক্ষ্য করবেন যখন সে মুসল্লায় দাঁড়ায় এবং তার রবের কালাম শুরু করে, তখন তার অন্তরে অনুভূত হয় ঠিক যেন এটাই সেই ময়দান, যেখানে কিয়ামতের দিন মানুষেরা সারা জাহানের রবের সামনে দাঁড়াবে, ফলে ভয়ে তার অন্তর উড়ে যায় আর বিবেক হয় স্তম্ভিত-গম্ভীর।” -ইবন রজব প্রণীত ‘আল-খুশু ফিস সালাত’: পৃ.২২

মুজাহিদ রহ. বলেন, “যখন সালাফদের কেউ সালাতে দাঁড়াতেন তখন তারা কোনো বস্তু দেখতে, এদিক সেদিক চেহারা ঘুরাতে, পাথর নাড়তে, কোনো বস্তু নিয়ে খেলতে, কিংবা দুনিয়াবি জিনিস নিয়ে চিন্তা করতে আল্লাহকে খুব ভয় করতেন, তবে ভুলে ঘটলে ভিন্ন কথা।” -মুহাম্মাদ ইবন নাসর আল-মারওয়াযি সংকলিত ‘তাযিমু কাদরিস সালাত’: ১/১৮৮

আব্দুল আযিয সালমান উদ্ধৃত করেন, “ইবন যুবায়ের যখন সালাতে দাঁড়াতেন তখন একাগ্রতা হেতু লাকড়ি বনে যেতেন। একদা তিনি সাজদায় ছিলেন আর কামানের গোলা লেগে তার কাপড়ের অংশ বিশেষ ছিঁড়ে গেল, তবু তিনি মাথা তুলেন নি।

মাসলামা ইবন বাশশার মসজিদে সালাত পড়ছিলেন, ইত্যবসরে মসজিদের অংশ বিশেষ ভেঙ্গে নিচে পড়লে মানুষেরা ছুটোছুটি করে উঠে গেল, কিন্তু তিনি সালাতে ছিলেন তাই টেরও পান নি।

আমাদের কাছে আরো সংবাদ পৌঁছেছে যে, কতক সালাফ হেঙ্গারে ঝুলানো কাপড়ের ন্যায় সালাতে দাঁড়িয়ে থাকতেন। কেউ আল্লাহর সামনে দাঁড়ানোর কারণে ফ্যাকাসে চেহারা নিয়ে সালাত শেষ করতেন। কেউ সালাতে দাঁড়ালে ডান-বামের কাউকে চিনতেন না। কারো ওযুর শুরু থেকেই চেহারা হলুদ বর্ণ হয়ে যেত, তাকে জিজ্ঞেস করা হলো, আপনি যখন ওযু করেন তখন থেকে আপনার চেহারা পাল্টে যায় কেন? তিনি উত্তর দিলেন, আমি জানি, একটু পরে কার সামনে দাঁড়াতে যাচ্ছি!

আলি ইবন আবি তালিব রাদিয়াল্লাহু আনহু সম্পর্কে আছে, সালাতের সময় হলে তিনি কেঁপে উঠতেন, আর তার চেহারা বিবর্ণ হয়ে যেত। কেউ জিজ্ঞেস করল, আপনার কী হয়েছে? তিনি উত্তর দিলেন, আমানতের সময় হয়েছে, যে আমানত আল্লাহ আসমান ও জমিনকে পেশ করেছিলেন, তারা অপারগতা প্রকাশ করেছে ও ভয় পেয়েছে, আর আমি সেটা গ্রহণ করেছি!

সাইদ তানুখি রহ. সম্পর্কে আছে, তিনি সালাতে দাঁড়ালে চোখের পানি গণ্ডদেশ গড়িয়ে দাড়িতে পড়া শুরু হত।

আমাদের কাছে জনৈক তাবেঈ সম্পর্কে পৌঁছেছে যে, তিনি সালাতে দাঁড়ালে তার রং পাল্টে যেত এবং তিনি বলতেন, তোমরা জান, আমি কার সামনে দাঁড়াব, কার সাথে কথা বলব? প্রিয়-পাঠক, আমাদের ভেতর কে আছে, যার অন্তরে এমন ভীতির সৃষ্টি হয়?” -আব্দুল আযিয মুহাম্মাদ প্রণীত ‘সিলাহুল ইয়াকযান লি তারদিশ শায়তান’: পৃ.২০৯ (আব্দুল আযিয সালমান থেকে সংগৃহীত অংশ শেষ হলো।)

ইবন তাইমিয়াহ উদ্ধৃত করেন, “কিছু লোক আমের ইবন আব্দুল কায়েসকে জিজ্ঞেস করল, আপনার নফস কি সালাতে কল্পনা করে? তিনি উত্তর দিলেন, সালাতের চেয়ে প্রিয় আমার কাছে কী আছে—যা নিয়ে আমি কল্পনা করব! তারা বলল, আমরা তো কল্পনা করি। তিনি বললেন কীসের কল্পনা কর: জান্নাতের কল্পনা, জান্নাতের হুরের কল্পনা বা এ জাতীয় কোনো কল্পনা কর? তারা বলল, না, আমরা আমাদের সম্পদ ও পরিবার নিয়ে কল্পনা করি। তিনি বললেন, আমার শরীর বর্শার আঘাতে ক্ষতবিক্ষত হওয়ার চেয়ে বেশি কষ্টকর বিষয় হলো সালাতে দুনিয়াবি বিষয় নিয়ে কল্পনা করা।

সা‘দ ইবন মুয়ায রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, ‘আমার ভেতর তিনটি স্বভাব আছে, যদি আমি তাতে সব সময় থাকতাম তবে আমিই আমি হতাম। যখন আমি সালাতে দাঁড়াই তখন আমার অন্তর সালাত ছাড়া কোনো কল্পনা করে না। আবার রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হতে যখন কোনো হাদীস শুনি তখন তার ব্যাপারে আমার অন্তর কোনো সন্দেহ করে না। আর যখন আমি জানাযার সালাতে থাকি তখন আমার অন্তর মৃত ব্যক্তি কি বলছে ও তাকে কি বলা হচ্ছে ছাড়া কিছুই কল্পনা করে না।” -ইবন তাইমিয়ার ফাতওয়া সংকলন ‘মাজমুউল ফাতাওয়া’: ২২/৬০৫

ইবন রজব উদ্ধৃত করেন, “হাতিম রহ. বলেন, মুয়াজ্জিনের আহ্বান শুনে সালাতের জন্যে রওয়ানা করি, ভয়ে ভয়ে পথ চলি, নিয়ত করে সালাতে প্রবেশ করি, আল্লাহর বড়ত্ব নিয়ে তাকবির বলি, তারতিল ও মনোযোগসহ তিলাওয়াত করি, একাগ্রতাসহ রুকু করি, বিনয়সহ সাজদাহ করি, তাশাহহুদের জন্যে পূর্ণরূপে বসি, পুনরায় নিয়ত করে সালাম ফিরাই, ইখলাসের সাথে সমাপ্ত করি, ভয় নিয়ে নিজেকে যাচাই করি এবং শঙ্কায় থাকি যদি আল্লাহ কবুল না করেন। আল্লাহর ইচ্ছায় আমরণ মনের ভাবটি সংরক্ষণ করতে চেষ্টা করব।” -ইবন রজব প্রণীত ‘আল-খুশু ফিস সালাত’: ২৭-২৮

আবু বকর সাবগি রহ. বলেন, “আমি দু’জন বড় ইমাম পেয়েছি, তবে তাদের কারো থেকেই হাদীস শ্রবণ করতে পারি নি। আবু হাতিম রাযী ও মুহাম্মাদ ইবন নসর মারওয়াযি। আমার অভিজ্ঞতায় আমি ইবন নাসর থেকে উত্তম সালাত আদায়কারী কাউকে দেখি নি। আমি শুনেছি, তার কপালে ভীমরুল বসেছিল, ভিমরুলের দংশনে তার চেহারায় রক্ত গড়িয়ে পড়েছে তবু তিনি নড়াচড়া করেন নি। মুহাম্মাদ ইবন ইয়াকুব আখরাম বলেন, আমি মুহাম্মাদ ইবন নাসিরের সালাতের চেয়ে সুন্দর সালাত কারো দেখি নি। তিনি সালাতে থাকলে কানের মশাও তাড়াতেন না। আমরা তার সালাতের সৌন্দর্য, একাগ্রতা ও ভয় দেখে আশ্চর্য হতাম। তিনি সালাতে দাঁড়িয়ে শুকনো লাকড়ির মত নিজের চিবুক বুকের উপর রেখে দিতেন।” -মুহাম্মাদ ইবন নাসর আল-মারওয়াযি সংকলিত ‘তাযিমু কাদরিস সালাত’: ১/৫৮

মার‘ঈ আল-কারমি বলেন, “ইবন তাইমিয়া রহ. সালাতে দাঁড়ালে তার অঙ্গগুলো কেঁপে উঠত, তিনি ডানে-বামে ঝুঁকে যেতেন।” -মার‘ঈ আল-কারমি প্রণীত ‘আল-কাওয়াকিবুদ দুররিয়্যাহ ফি মানাকিবিল মুজতাহিদ ইবন তাইমিয়াহ’: পৃ.৮৩। দারুল গারব আল-ইসলামি

প্রিয় পাঠক, এবার আপনি সালাফদের সালাতের সাথে বর্তমান যুগে আমাদের কিছু লোকের সালাতকে তুলনা করুন। দেখবেন, সালাতে দাঁড়িয়ে কেউ ঘড়ি দেখছে, কেউ কাপড় ঠিক করছে, কেউ নাক দিয়ে অহেতুক শব্দ করছে, কেউ বেচাকেনা শুরু করছে, কেউ টাকা-পয়সার হিসেব কষছে, কেউ মুসল্লা বা মসজিদের শৈল্পিক কারুকার্য নিয়ে গবেষণা করছে, আবার কেউ পাশের লোকের পরিচয় জানতে চেষ্টা করছে। এভাবেই সালাতে দাঁড়িয়ে একেকজন একেক ব্যস্ততায় থাকে। আপনি কি মনে করেন, তারা কেউ দুনিয়ার কোনো বাদশাহর সামনে দাঁড়ালে এর একটি কাজ করতে সাহস পেত?

পনেরো. সালাতে খুশু ও একাগ্রতা হাসিল করার মর্ম, তাৎপর্য, ফযীলত ও উপকারিতা জানাঃ

সালাতে খুশু ও একাগ্রতা হাসিল করার মর্ম, তাৎপর্য, ফযীলত ও উপকারিতা জানা, যেমন-

(ক). একাগ্রতার ফযীলত সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,

«ما من امرىء مسلم تحضره صلاة مكتوبة فيحسن وضوءها وخشوعها وركوعها، إلا كانت كفارة لما قبلها من الذنوب ما لم تؤت كبيرة، وذلك الدهر كله».

“এমন কোনো মুসলিম নেই যার ফরয সালাত উপস্থিত হয়, তারপর সে সুন্দরভাবে ওযু করে, সুন্দরভাবে সালাতের খুশু ও রুকু সম্পাদন করে, তবে অবশ্যই তার সালাত পূর্বের গুনাহের কাফফারা হবে, যদি কবিরা গুনাহে লিপ্ত না হয়। আর এটা জীবনভর।” -সহীহ মুসলিম: ১/২০৬, হাদীস নং ২/৪/৭

(খ). আরো জানা যে, সালাতে একাগ্রতায় ঘাটতি হলে সাওয়াবেও ঘাটতি হয়। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,

«إن العبد ليصلي الصلاة ما يُكتب له منها إلا عشرها، تسعها، ثمنها، سبعها، سدسها، خمسها، ربعها، ثلثها، نصفها».

“বান্দা সালাত আদায় করে বটে, কিন্তু তার জন্যে সালাতের দশমাংশ, নবমাংশ, অষ্টমাংশ, সপ্তমাংশ, ষষ্ঠাংশ, পঞ্চমাংশ, চতুর্থাংশ, তৃতীয়াংশ ও অর্ধেক সাওয়াব ছাড়া বেশি লেখা হয় না।” -ইমাম আহমদ সংকলিত ‘মুসনাদ’: ৪/৩২১; ‘সহীহ আল-জামি’, হাদীস নং ১৬২৬

(গ). আরো জানা যে, বুঝে ও সজ্ঞানে পড়লেই সালাতের ফযীলত হাসিল হয়, যেমন ইবন আব্বাস—রাদিয়াল্লাহু আনহুমা—থেকে বর্ণিত,

«ليس لك من صلاتك إلا ما عقلت منها».

“যতটুকু সালাত তুমি বুঝে পড়বে তার বেশীর তুমি হকদার নও।” -আলবানি সংকলিত ‘সিলসিলাহ দাঈফাহ’, হাদীস নং ৬৯৪১

(ঘ). আরো জানা যে, পরিপূর্ণ খুশু ও একাগ্রচিত্তে আদায়কৃত সালাত দ্বারাই পাপ মোচন হয়। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

«إن العبد إذا قام يصلي أُتي بذنوبه كلها فوضعت على رأسه وعاتقيه فكلما ركع أو سجد تساقطت عنه».

“বান্দা যখন সালাত পড়তে দাঁড়ায় তখন তার সকল পাপ এনে তার মাথা ও কাঁধের উপর রাখা হয়। তারপর যখন রুকু বা সাজদাহ করে তার পাপগুলো একেক করে ঝরে পড়ে।” -ইমাম বায়হাকি সংকলিত ‘আস-সুনানুল কুবরা’: ৩/১০, দেখুন সহীহ আল-জামি

মুনাওয়ি রহ. বলেন, “হাদীসটির উদ্দেশ্য হচ্ছে, যখন মুসল্লি একটি রুকন ভালোভাবে সম্পন্ন করে তখন তার গুনাহের একটি অংশ ঝরে পড়ে। যখন সালাত শেষ হয় তখন তার গুনাহও শেষ হয়। এ ফযীলত কেবল সে সালাতের জন্যেই, যা সকল শর্ত ও রুকনসহ একাগ্রচিত্তে সম্পন্ন করা হয়। কারণ, হাদিসে উল্লিখিত দু’টি শব্দ ‘আবদ’ ও ‘কিয়াম’ আল্লাহর সামনে বিনয় ও একাগ্রচিত্তে দাঁড়ানোকে দাবি করে।” -ইমাম বায়হাকি সংকলিত ‘আস-সুনানুল কুবরা’: ৩/১০; ইমাম মুনাভি প্রণীত ‘জামি সাগিরে’র ব্যাখ্যা গ্রন্থ ‘ফয়যুল কাদির’: ২/৩৬৮

(ঙ). ইবনুল কাইয়্যেম রহ.-এর কথাগুলো স্মরণ করা যে, “সালাত আদায়কারী যখন একাগ্রচিত্তে সালাত শেষ করে তখন সে নিজেকে ভারমুক্ত অনুভব করে, যেন তার ওপর থেকে বোঝা নামানো হয়েছে, ফলে সে কাজে-কর্মে তৃপ্তি, প্রশান্তি ও ফুরফুরে মেজাজ উপলব্ধি করে। আর আক্ষেপ করে, যদি সালাতেই থাকতাম! কারণ, সালাত তার চোখের শীতলতা, রূহের সজীবতা, অন্তরের জান্নাত ও পার্থিব জগতে শান্তির নিরাপদ স্থান। যতক্ষণ না পুনরায় সালাতে প্রবেশ করে নিজেকে জেলখানা ও সংকীর্ণ স্থানে বন্দী ভাবে। বস্তুত, এরূপ মুসল্লিই সালাতের দ্বারা প্রশান্তি অর্জন করে, ফলে সে সালাত থেকে বিচ্ছিন্ন হতে চায় না। আল্লাহকে মহব্বতকারীরা বলেন: আমরা সালাতে স্বস্তি পাই, তাই সালাত আদায় করি, যেমন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, «يا بلال أرحنا بالصلاة» ‘হে বেলাল, সালাতের দ্বারা আমাদের স্বস্তি দাও।’ তিনি বলেন নি, সালাত থেকে স্বস্তি দাও। তিনি আরো বলেছেন, «جعلت قرة عيني بالصلاة» ‘আমার চোখের শীতলতা করা হয়েছে সালাতে।’ অতএব, যার চোখের শীতলতা সালাতে, সে কীভাবে সালাত ছাড়া শান্তি পায় এবং কীভাবে সালাত ছাড়া থাকতে পারে?” -ইবনুল কাইয়্যেম প্রণীত ‘আল-ওয়াবিলুস সায়্যিব’: ৩৭

ষোল. সালামের পর মাসনুন দো‘আসমূহ মনোযোগ দিয়ে পড়াঃ

সালামের পর মাসনুন দো‘আসমূহ মনোযোগ দিয়ে পড়া। কারণ, মাসনুন দো‘আর ফলে অন্তরের একাগ্রতা, সালাতের বরকত ও তার ফায়দা দীর্ঘ সময় স্থায়ী হয়। জ্ঞাতব্য যে, পূর্বের ইবাদতের সুরক্ষা ও তার হিফাজতের স্বার্থে পরবর্তী ইবাদত আঞ্জাম দেওয়া জরুরি। এ সূত্রে সালাতের পরবর্তী ইবাদত মাসনুন দো‘আ ও যিকর। লক্ষ্য করুন, যিকিরসমূহের প্রথমে আছে তিনবার ইস্তেগফার। তার অর্থ হচ্ছে, মুসল্লি তার রবের নিকট সালাতের ত্রুটি ও তাতে খুশুর ঘাটতি পুষিয়ে নিতে রবের নিকট ক্ষমা চাইছে। অনুরূপভাবে বেশিবার নফল সালাত আদায় করার বিষয়টিও তেমন। কারণ, নফল সালাত দ্বারা ফরয সালাতের রুকনের ত্রুটি ও তার খুশুর ঘাটতির প্রতিকার করা হবে।

সতেরো. সালাতে এদিক সেদিক না তাকানোঃ

সালাতে এদিক সেদিক না তাকানো। আবু যর রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,

«لا يزال الله عز وجل مقبلاً على العبد وهو في صلاته ما لم يلتفت، فإذا التفت انصرف عنه».

“বান্দা যতক্ষণ তার সালাতে থাকে আল্লাহ তার দিকে মনোনিবেশ করেই থাকেন, যতক্ষণ না সে এদিক সেদিক তাকায়, যখন সে এদিক সেদিক তাকায় তিনি তার থেকে ঘুরে যান।” -আবু দাউদ, হাদীস নং ৯০৯, সহীহ আবু দাউদেও হাদীসটি আছে

সালাতে ইলতিফাত বা এদিক সেদিক তাকানো দুই প্রকার:

(ক). অন্তরের ইলতিফাত অর্থাৎ অন্তরের আল্লাহ ছাড়া অন্য বস্তুর দিকে মনোনিবেশ করা।

(খ). চোখের ইলতিফাত অর্থাৎ চোখের সাজদার জায়গার বাইরে দেখা। উভয় ইলতিফাত নিষেধ, কারণ এতে মুসল্লির সাওয়াব নষ্ট হয়। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে ইলতিফাত সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল। তিনি উত্তরে বললেন,

«اختلاس يختلسه الشيطان من صلاة العبد».

“এটা এক ধরণের ছিনতাই, যা বান্দার সালাত থেকে শয়তান ছিনিয়ে নেয়।” -সহীহ বুখারি, আযান অধ্যায়, পরিচ্ছেদ: আল-এলতেফাত ফিস সালাত

ইবনুল কাইয়্যেম বলেন, “আমরা সালাত পড়াবস্থায় চোখ বা অন্তর দিয়ে যে এদিক সেদিক দেখি, তার উদাহরণ ঐ ব্যক্তির মতো, যাকে কোনো বাদশাহ ডেকে এনে সামনে দাঁড় করিয়ে কথা বলেন ও সম্বোধন করেন, আর সে বাদশাহকে ত্যাগ করে ডানে-বামে দেখে, অন্তরও ফিরিয়ে নেয় তার থেকে, ফলে বাদশাহ তাকে যা বলেন তার কিছুই সে বুঝে না, কারণ তার অন্তর সাথে নেই। এ ব্যক্তি বাদশাহ থেকে কী আচরণ আশা করতে পারে? তার ক্ষেত্রে অন্তত এতটুকুন কী হবে না যে, বাদশাহর দরবারে সে অভিশপ্ত হবে এবং সেখান থেকে তাকে তাড়িয়ে দেওয়া হবে এবং বাদশাহের চোখে তার কোনো মূল্য থাকবে না? এ মুসল্লি কখনো ঐ মুসল্লির বরাবর নয়, যে পুরো সালাতে অন্তরসহ আল্লাহ-মুখী থাকে এবং তাঁর সমীপে দাঁড়িয়ে তাঁর বড়ত্ব অনুভব করে, ফলে তার অন্তর ভয়ে পরিপূর্ণ হয় ও শ্রদ্ধায় গর্দান সাজদায় ঝুঁকে যায়। লজ্জায় এদিক সেদিক তাকায় না এবং তার থেকে মনোযোগও হটায় না। এ দু’জনের পার্থক্য নির্ণয় করেছেন হাস্‌সান ইবন আতিয়্যাহ। তিনি বলেন, দু’জন মুসল্লি একই সালাতে দণ্ডায়মান, অথচ উভয়ের মাঝে আসমান ও জমিনের মতো ব্যবধান। কারণ, একজন আল্লাহর প্রতি মনোযোগী আর অপরজন আল্লাহ হতে অন্যমনস্ক।” -ইবনুল কাইয়্যেম প্রণীত ‘আল-ওয়াবিলুস সায়্যিব’: পৃ.৩৬, প্রকাশক, দারুল বায়ান

ইবন তাইমিয়াহ বলেন, “প্রয়োজন সাপেক্ষে এদিক সেদিক তাকানো নিষেধ নয়। আবু দাউদ রহ. বর্ণনা করেন, সাহাল ইবন হানযালিয়া রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেছেন, ‘হুনাইনের যুদ্ধে ফজরের আযান হলো, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের ইমামত করছিলেন আর পাহাড়ের পথে তাকাচ্ছিলেন।’ আবু দাউদ বলেন, ‘তার কারণ ছিল, রাতে পাহাড়ের পথে নজরদারির জন্যে জনৈক অশ্বারোহীকে তিনি প্রেরণ করেছিলেন, তাকে সালাতে দেখছিলেন।’ এ ঘটনাটি সালাত পড়াবস্থায় উমামা তনয়া আবুল আসকে কোলে তুলে নেওয়া, আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহাকে দরজা খুলে দেওয়া, শেখানোর জন্যে সালাতেই মিম্বার থেকে নেমে আসা, সূর্য গ্রহণের সালাতে পেছনের দিকে প্রস্থান করা, শয়তান যখন তার সালাত নষ্ট করার চেষ্টা করছিল তখন তাকে আটকে গলা চেপে ধরা, মুসল্লিকে সালাতেই সাপ ও বিচ্ছু মারার অনুমতি দেওয়া, সালাতের সামনে দিয়ে অতিক্রমকারীকে বাধা দিতে বলা—প্রয়োজনে তার সাথে সংঘর্ষে লিপ্ত হওয়ার আদেশ করা, ইমামকে ভুল ধরিয়ে দিতে নারীদের হাতে হাত মেরে শব্দ করা, প্রয়োজন সাপেক্ষে ইশারা করা প্রভৃতি ঘটনার মতো। সালাতের বাইরে এসব অহেতুক কর্ম হিসেবে বিবেচিত হয়, সালাতে ভেতর অবশ্যই বড় অপরাধ।” -ইবন তাইমিয়ার ফাতওয়ার সংকলন ‘মাজমুউল ফাতাওয়া’: ২২/৫৫৯

আঠারো. সালাতরত অবস্থায় মাথা উঁচিয়ে আসমানের দিকে না দেখাঃ

সালাতরত অবস্থায় মাথা উঁচিয়ে আসমানের দিকে না দেখা। এরূপ করতে নিষেধ করা হয়েছে এবং যে করবে তার প্রতি কঠোর হুশিয়ারি রয়েছে, যেমন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,

«إذا كان أحدكم في الصلاة فلا يرفع بصره إلى السماء، أن يلتمع بصره».

“যখন তোমাদের কেউ সালাতে থাকে তখন আসমানের দিকে তাকাবে না, কারণ তার দৃষ্টি চলে যেতে পারে।” -ইমাম আহমদ সংকলিত ‘মুসনাদ’: ৫/২৯৪; ‘সহীহ আল-জামি’, হাদীস নং ৭৬২

অপর বর্ণনায় আছে, তিনি বলেছেন,

«ما بال أقوام يرفعون أبصارهم إلى السماء في صلاتهم».

“মানুষের কী হলো, তারা সালাতে আসমানের দিকে দেখে? (অপর বর্ণনায় আছে, «عن رفعهم أبصارهم عند الدعاء في الصلاة». ‘তিনি সালাতে দো‘আর সময় উপরে চোখ তুলতে নিষেধ করেছেন।’) -সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৪২৯

আরো কঠোর হুশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেছেন, «لينتهنّ عن ذلك أو لتخطفن أبصارهم». “অবশ্যই তার থেকে বিরত থাকবে অথবা তাদের দৃষ্টি ছিনিয়ে নেওয়া হবে।” -ইমাম আহমদ সংকলিত ‘মুসনাদ’: ৫/২৫৮; সহীহ আল-জামি, হাদীস নং ৫৫৭৪

উনিশ. সালাতে থাকাবস্থায় সম্মুখের দিকে থুতু না ফেলাঃ

সালাতে থাকাবস্থায় সম্মুখের দিকে থুতু না ফেলা। কারণ, সম্মুখে থুতু নিক্ষেপ করা একাগ্রতা ও আল্লাহর সাথে আদবের পরিপন্থী। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,

«إذا كان أحدكم يصلي فلا يبصق قِبَل وجهه فإن الله قِبَل وجهه إذا صلى».

“যখন তোমাদের কেউ সালাত আদায় করে, তখন সে নিজের চেহারার দিকে থুতু ফেলবে না। কারণ, যখন সে সালাত পড়ে তখন আল্লাহ তার চেহারার দিকে থাকেন।” -সহীহ বুখারি, হাদীস নং ৩৯৭

তিনি আরো বলেছেন,

«إذا قام أحدكم إلى الصلاة فلا يبصق أمامه، فإنما يناجي الله -تبارك و تعالى- ما دام في مصلاه، ولا عن يمينه فإن عن يمينه ملكًا، و ليبصق عن يساره، أو تحت قدمه فيدفنها».

“যখন তোমাদের কেউ সালাতে দাঁড়ায়, তখন সে নিজের সম্মুখে থুতু ফেলবে না। কারণ যতক্ষণ সে মুসল্লায় থাকে আল্লাহর সাথে কথা বলে এবং ডানেও থুতু ফেলবে না, কারণ ডানে মালাক (ফেরেশতা) আছেন, তবে তার বাঁয়ে ফেলবে বা পায়ের নিচে ফেলে মাটিতে চাপা দিবে।” -সহীহ বুখারি বর্ণিত, দেখুন ‘ফাতহুল বারি’, হাদীস নং ৪১৬, ১/৫১২

তিনি আরো বলেছেন,

«إن أحدكم إذا قام في صلاته فإنما يناجي ربه، وإن ربه بينه وبين قبلته، فلا يبزقن أحدكم في قبلته، ولكن عن يساره أو تحت قدمه».

“যখন তোমাদের কেউ সালাতে দাঁড়ায়, তখন সে নিজের রবের সাথে কথা বলে। আর তার রব থাকেন কেবলা ও তার মাঝখানে, সুতরাং তোমরা কেউ কেবলার দিকে থুতু ফেলবে না, তবে বাঁয়ে বা পায়ের নিচে ফেলবে।” -সহীহ বুখারি বর্ণিত, দেখুন ‘ফাতহুল বারি’, হাদীস নং ৪১৭, ১/৫১৩

বর্তমান যেহেতু অধিকাংশ মসজিদ মোজাইক, টাইলস কিংবা কার্পেডিং করা, তাই প্রয়োজন সাপেক্ষে পকেট থেকে রুমাল বা রুমাল জাতীয় কাপড়-টিস্যু বের করে তাতে থুতু ফেলে পুনরায় তা পকেটে রেখে দেওয়া।

বিশ. যথাসম্ভব সালাতে হাই তোলা দমন করাঃ

যথাসম্ভব সালাতে হাই তোলা দমন করা। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,

«إذا تثاءَب أحدُكم في الصلاة فليكظِم ما استطاع فإن الشيطان يدخل».

“তোমাদের কেউ যখন সালাতে হাই তোলে, সে যেন তা যথাসাধ্য দমন করে। কারণ, শয়তান ভেতরে প্রবেশ করে।” -সহীহ মুসলিম: ৪/২২৯৩

জ্ঞাতব্য যে, শয়তান মুসল্লির ভেতর প্রবেশ করতে পারলে তার খুশু নষ্ট করতে বেশি সমর্থ হয়, আর বনু আদমের হাই তোলা দেখে তার খুশীতে আটখান হওয়া তো আছেই।

একুশ. কোমরে হাত রেখে না দাঁড়ানোঃ

কোমরে হাত রেখে না দাঁড়ানো। আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,

«نهى رسول الله صلى الله عليه وسلم عن الاختصار في الصلاة».

“সালাতে কোমরে হাত রেখে দাঁড়াতে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিষেধ করেছেন।” -আবু দাউদ, হাদীস নং ৯৪৭। হাদীসটি সহীহ বুখারিতেও আছে

কোমরে হাত দাঁড়ানোকে আরবিতে ইখতিসার বলা হয়।

ইমাম আহমদ বর্ণনা করেন, “যিয়াদ ইবন সাবিহ হানাফি বলেন, আমি ইবন ওমরের পাশে কোমরে হাত রেখে দাঁড়িয়ে সালাত পড়ছিলাম, আমার হাতে তিনি আঘাত করলেন এবং সালাত শেষ করে বললেন, সালাতে একেই শূলিবিদ্ধ হয়ে দাঁড়ানো বলে, এভাবে দাঁড়াতে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিষেধ করতেন।” -ইমাম আহমদ সংকলিত ‘মুসনাদ’: ২/১০৬, হাফিয ইরাকি ‘ইহইয়াউল উলুম’ গ্রন্থের তাখরিজে হাদীসটি সহীহ বলেছেন। দেখুন, আলবানির গবেষণা ‘আল-ইরওয়া’: ২/৯৪

একটি মারফু হাদিসে এসেছে, “জাহান্নামীরা কোমরে হাত রেখে দাঁড়িয়ে স্বস্তির নিঃশ্বাস নিবে। আল্লাহর কাছে তার থেকে পানাহ চাই।” -ইমাম বায়হাকি আবু হুরায়রা থেকে হাদীসটি মারফু হিসেবে বর্ণনা করেছেন। হাফিয ইরাকি বলেছেন, তার সনদ বাহ্যত সহি

বাইশ. টাখনুর নিচে কাপড় পরিধান না করাঃ

টাখনুর নিচে কাপড় পরিধান না করা। আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত,

«أن رسول الله صلى الله عليه وسلم نهى عن السدل في الصلاة وأن يغطي الرجل فاه».

“রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সালাতে ‘সাদল’ থেকে ও পুরুষের মুখ ঢেকে রাখতে নিষেধ করেছেন।” -আবু দাউদ, হাদীস নং ৬৪৩; আলবানি সংকলিত ‘সহীহ আল-জামি’, হাদীস নং ৬৮৮৩, তিনি হাদীসটি হাসান বলেছেন

খাত্তাবি রহ. বলেন, “গায়ের কাপড় মাটি স্পর্শ করা পর্যন্ত ছেড়ে দেওয়াকে ‘সাদল’ বলা হয়।” -মুহাম্মাদ শামসুল হক আল-আযিম আবাদি প্রণীত ‘আউনুল মাবুদ’: ২/৩৪৭

মোল্লা আলি কারি ‘মিরকাত’ গ্রন্থে বলেন, “সাদল’ অর্থাৎ গায়ের কাপড় টাখনুর নিচ পর্যন্ত ঝুলিয়ে পরিধান করা সর্বাবস্থায় নিষেধ। কারণ, ‘সাদল’ অহংকারের আলামত, সালাতে তা আরো খারাপ ও নিকৃষ্ট।’

‘আন-নেহায়া’ গ্রন্থকার বলেন, ‘সাদল’ হচ্ছে চাদর বা চাদর জাতীয় কাপড়ের দুই মাথা দিয়ে নিজেকে পেঁচিয়ে তার ভেতর থেকে দু’হাত বের করে রুকু ও সাজদাহ করা।’ কেউ বলেছেন: ‘ইয়াহূদীরা এরূপ করত।’ কেউ বলেছেন: ‘সাদল’ হচ্ছে মুসল্লির মাথা বা কাঁধের উপর কাপড় রেখে তার পার্শ্বগুলো তার সম্মুখে কিংবা তার দুই বাহুর উপর ঝুলিয়ে রাখা। এভাবে কাপড় গায়ে দিলে পুরো সালাত জুড়েই তা ঠিক করতে হয়, ফলে তার খুশু নষ্ট হয়। যদি কাপড় বাঁধা বা বোতাম লাগানো থাকে এ সমস্যা হয় না, আর তার খুশুতেও প্রভাব পড়ে না।’

বর্তমান যুগে কিছু কাপড় দেখা যায়, যেমন মরক্কোর আবাকাবা, এশিয়ার শাল বা চাদর, সৌদি আরবের রুমাল প্রভৃতি কাপড় পরিধান করে মুসল্লি যখন সালাতে দাঁড়ায় তখন সালাত জুড়েই পড়ে যাওয়া অংশ (আঁচল) উঠাতে ও গায়ে জড়াতে ব্যস্ত থাকে। অতএব সতর্ক হওয়া জরুরি।

আর মুসল্লির মুখ ঢাকার নিষেধাজ্ঞা সম্পর্কে আলেমগণ বলেন, ‘মুখ ঢাকা থাকলে সুন্দর তিলাওয়াত ও পূর্ণভাবে সাজদাহ করতে সমস্যা হয়।” -মোল্লা আলি আল-কারি প্রণীত ‘মিরকাতুল মাফাতিহ’: ২/২৩৬ (মোল্লা আলী কারী থেকে আহৃত অংশ শেষ হলো)

তেইশ. সালাতে জীব-জন্তুর আকৃতি গ্রহণ না করাঃ

সালাতে জীব-জন্তুর আকৃতি গ্রহণ না করা। আল্লাহ তা‘আলা বনু আদমকে সুন্দর আকৃতি দিয়ে সৃষ্টি করেছেন, কাজেই তাদের পক্ষে চতুষ্পদী জন্তুর সাদৃশ্য গ্রহণ করা শোভনীয় নয়। অধিকন্তু সালাতে কিছু জীব-জন্তুর হরকত ও আকৃতি গ্রহণ করতে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিষেধ করেছেন, কেননা তার দ্বারা খুশু নষ্ট হয় কিংবা সেটা মুসল্লির অবস্থার সাথে বেমানান। যেমন বর্ণিত আছে,

«نهى رسول الله صلى الله عليه وسلم في الصلاة عن ثلاث: عن نقر الغراب وافتراش السبع وأن يوطن الرجل المقام الواحد كإيطان البعير».

“রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সালাতে তিনটি জিনিস নিষেধ করেছেন: কাকের ঠোকর, চতুষ্পদী জন্তুর বসা ও উটের ন্যায় একই জায়গা নির্ধারণ করা।” -ইমাম আহমদ সংকলিত ‘মুসনাদ’: ৩/৪২৮

আহমদ সা‘আতি বলেন, “হাদীসটি ব্যাখ্যা কেউ বলেছেন, একই স্থান নির্ধারণ করার অর্থ মসজিদের একটি জায়গা সালাতের জন্যে নির্ধারণ করা এবং সেটা পরিবর্তন না করা, যেমন উট তার বসার স্থান পরিবর্তন করে না।” -আহমদ সাআতি প্রণীত ‘আল-ফাতহুর রাব্বানি’: ৪/৯১

অপর বর্ণনায় আছে, আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেছেন,

«نهاني عن نقرة كنقرة الديك، وإقعاء كإقعاء الكلب، والتفات كالتفات الثعلب».

“তিনি আমাকে মোরগের ঠোকরের ন্যায় ঠোকর, কুকুরের বসার ন্যায় বসতে ও শিয়ালের এদিক সেদিক তাকানোর ন্যায় তাকাতে নিষেধ করেছেন।” -ইমাম আহমদ সংকলিত ‘মুসনাদ’: ২/৩১১; ‘সহীহ আত-তারগিব’, হাদীস নং ৫৫৬

পরিশেষেঃ

নামাজে খুশুর বিষয়টা খুব স্পর্শকাতর। আল্লাহ তাআ'লা প্রদত্ত তাওফিক ছাড়া কারো পক্ষেই পুঙ্খানুপুঙ্খ খুশু অর্জন করা সম্ভবপর নয়। আবার খুশু থেকে বঞ্চিত হওয়াও বড় দুর্ভাগ্য। এ জন্যে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলতেন,

«اللهم إني أعوذ بك من قلب لا يخشع».

“হে আল্লাহ, আমি আপনার কাছে এমন অন্তর থেকে পানাহ চাই, যে ভীত হয় না (খুশু অর্জন করে না)।” -তিরমিযী, ৫/৪৮৫, হাদীস নং ৩৪৮২, সহীহ তিরমিযী, ২৭৬৯

সবশেষে মহান আল্লাহ তা‘আলার নিকট প্রার্থনা করি, তিনি আমাদের খুশুওয়ালা বান্দাদের অন্তর্ভুক্ত করুন। আমাদের উপর রহমতের দৃষ্টি দান করুন। অতঃপর যারা গুরুত্বপূর্ণ এই বিষয়টি পাঠপূর্বক সহিহ এবং সর্বাঙ্গীন সুন্দর খুশুওয়ালা পরিপূর্ণ নামাজে নিজে মনযোগী হবেন এবং অন্যদের মনযোগী করার জন্য এর প্রচারে অংশ নিবেন তাদের সবাইকে তিনি উপকৃত করুন ও উত্তম বিনিময় দান করুন। আমীন। আল-হামদুলিল্লাহি রাব্বিল আলামীন।

নিবন্ধটি প্রণয়নে সহায়তা নেয়া হয়েছে যেসব সূত্র থেকেঃ

০১. সউদি আরবের প্রখ্যাত আলেম এবং দায়ী মুহাম্মাদ সালেহ আল-মুনাজ্জিদ দা. বা. এর অনবদ্য গ্রন্থ 'সালাতে একাগ্রতা অর্জনের ৩৩টি উপায়'
০২. ইবনুল কাইয়্যেম প্রণীত ‘মাদারিজুস সালিকিন’: ১/৫২১
০৩. মুহাম্মাদ ইবন নাসর আল-মারওয়াযি সংকলিত ‘তাজিমু কাদরিস সালাত’: ১/১৮৮
০৪. ইবন কাসীর প্রণীত ‘তাফসির ইবনে কাসীর
০৫. ইবনুল কাইয়্যেম প্রণীত ‘আর-রুহ’
০৬. ‘সহীহ আল-জামি’
০৭. মুহাদ্দিস হায়সামি সংকলিত ‘আল-মাজমা’
০৮. ‘আল-কাবির’ লিইমাম তাবরানি
০৯. ‘সহীহ আত-তারগিব ও আত-তারহিব’
১০. ‘এহইয়াউ উলুমিদ্দিন’ ইমাম আবু হামিদ আল-গাজ্জালি (রহ.)
১১. সহিহ বুখারি
১২. সহিহ মুসলিম
১৩. সহীহ আবূ দাউদ
১৪. সুনানে নাসাঈ
১৫. সুনানে তিরমিজি
১৬. আলবানি প্রণীত ‘আল-ইরওয়া’
১৭. ইমাম আহমদ সংকলিত ‘মুসনাদ’
১৮. ইমাম হাকিম সংকলিত ‘আল-মুসতাদরাক
১৯. ইবন মাজাহ
২০. মিশকাতুল মাসাবীহ
২১. সিলসিলাতুস সহীহাহ্
২২. মুসান্নাফ ইবনু আবী শায়বাহ্
২৩. আল মু'জামুল কাবীর লিত্ব তবারানী
২৪. মুসতাদরাক হাকেম
২৫. তাফসিরে তবারি
২৬. সহীহ ইবন হিব্বান
২৭. ‘ফাতহুল বারি’ শরহে সহীহ বুখারি
২৮. ইমাম নববি কর্তৃক সহীহ মুসলিমের ব্যাখ্যা গ্রন্থ
২৯. সহীহ ইবন খুযাইমাহ
৩০. ইবন রজব প্রণীত ‘আল-খুশু ফিস সালাত’
৩১. মুহাম্মাদ ইবন নাসর আল-মারওয়াযি সংকলিত ‘তাযিমু কাদরিস সালাত’
৩২. আব্দুল আযিয মুহাম্মাদ প্রণীত ‘সিলাহুল ইয়াকযান লি তারদিশ শায়তান’
৩৩. ইবন তাইমিয়ার ফাতওয়া সংকলন ‘মাজমুউল ফাতাওয়া’
৩৪. মার‘ঈ আল-কারমি প্রণীত ‘আল-কাওয়াকিবুদ দুররিয়্যাহ ফি মানাকিবিল মুজতাহিদ ইবন তাইমিয়াহ’
৩৫. আলবানি সংকলিত ‘সিলসিলাহ দাঈফাহ’
৩৬. ইমাম বায়হাকি সংকলিত ‘আস-সুনানুল কুবরা’
৩৭. ইমাম মুনাভি প্রণীত ‘জামি সাগিরে’র ব্যাখ্যা গ্রন্থ ‘ফয়যুল কাদির’
৩৮. ইমাম বায়হাকি সংকলিত ‘আস-সুনানুল কুবরা’
৩৯. ইবনুল কাইয়্যেম প্রণীত ‘আল-ওয়াবিলুস সায়্যিব’
৪০. হাফিয ইরাকি প্রণীত তাখরিজ ইহইয়াউল উলুম
৪১. মুহাম্মাদ শামসুল হক আল-আযিম আবাদি প্রণীত ‘আউনুল মাবুদ’
৪২. মোল্লা আলি আল-কারি প্রণীত ‘মিরকাতুল মাফাতিহ’

সমাপ্ত।

মন্তব্য ৮ টি রেটিং +৬/-০

মন্তব্য (৮) মন্তব্য লিখুন

১| ২২ শে সেপ্টেম্বর, ২০২১ সকাল ১১:০২

মহাজাগতিক চিন্তা বলেছেন: নামাজীদের জন্য দরকারী পোষ্ট।

২২ শে সেপ্টেম্বর, ২০২১ সকাল ১১:১৯

নতুন নকিব বলেছেন:



শুকরিয়া প্রিয় ভাই। প্রথম পর্বেও প্রথম মন্তব্যটা ছিল আপনার। লাইকসহ দ্বিতীয় পর্বেও অনুপ্রেরণাসহ সাথে থাকার জন্য আন্তরিক কৃতজ্ঞতা।

শুভকামনা জানবেন।

২| ২২ শে সেপ্টেম্বর, ২০২১ দুপুর ২:১৬

মোহামমদ কামরুজজামান বলেছেন: আমাদের সাবর (মুসলমানদের) জন্য খুবই প্রয়োজনীয় পোস্ট আর তাই পোস্টে +++।

মহান আল্লাহপাক আমাদের সকলকে সহি-শুদ্ধ ভাবে এবং যথাসময়ে সালাত আদায় করার তোফিক দান করুন।

২২ শে সেপ্টেম্বর, ২০২১ দুপুর ২:৪৭

নতুন নকিব বলেছেন:



আপনার উপস্থিতি এবং এতগুলো লাইকসহ প্রেরণাদায়ক মন্তব্য রেখে যাওয়ায় কৃতজ্ঞতা। একই প্রার্থনা আমাদেরও - মহান আল্লাহপাক আমাদের সকলকে সহি-শুদ্ধ ভাবে এবং যথাসময়ে সালাত আদায় করার তোফিক দান করুন।

জাজাকুমুল্লাহ খাইরান।

৩| ২২ শে সেপ্টেম্বর, ২০২১ রাত ৯:৫১

কামাল১৮ বলেছেন: নামাজে দাঁড়ালেই কেবল গরুতে ধান ক্ষেত খেয়ে গেলো কিনা এই কথা মনে আসে।এর থেকে রক্ষা পাওয়ার উপায় কি?

২৩ শে সেপ্টেম্বর, ২০২১ সকাল ৮:২৬

নতুন নকিব বলেছেন:



এই সমস্যাটা কোন ব্যক্তির নামাজে হয়ে থাকে, সেটা জানতে পারলে সমাধান দিতে সুবিধা হতো। কারণ, ব্যক্তিভেদে সমস্যা যেমন ভিন্ন ভিন্ন, তেমনি সমাধানও একেকজনের ক্ষেত্রে একেকরকম।

বিয়ে না করে সন্তান না পাওয়ার দুঃখে কেউ কেউ কেঁদে কেটে হয়রান পেরেশান হয়ে থাকেন, এরকম অবস্থায় সমাধানটা কিছুটা ভিন্নরকম হওয়াটাই স্বাভাবিক।

শুভকামনা জানবেন।

৪| ২৩ শে সেপ্টেম্বর, ২০২১ রাত ১২:৩৪

রাজীব নুর বলেছেন: নামাজ পড়ি না। পড়তে ইচ্ছা করে না।

২৩ শে সেপ্টেম্বর, ২০২১ সকাল ৮:৫৪

নতুন নকিব বলেছেন:



পড়েন। নামাজ পড়তে পড়তেই নামাজ পড়ার ইচ্ছেটা আপনার ভেতরে তৈরি হয়ে যাবে ইনশাআল্লাহ। একসময় দেখবেন, নামাজের প্রতি অন্যরকম একটা ভালোবাসা অনুভব করবেন।

প্রিয় ভাই, একজন মুসলিম হয়ে 'নামাজ পড়ি না' বলে প্রকাশ্য স্বীকারোক্তি করাটা কি ঠিক? কেউ যদি তার নিজের বিশেষ কোনো কারণে নিতান্ত অপারগ হয়ে নামাজ না-ও পড়েন, সেটা কি এভাবে বলা উচিত? এটা তো অন্যদেরও নামাজ না পড়ার প্রতি প্রকারান্তরে এক ধরণের উৎসাহিতকরণই। কেউ যদি নামাজ পড়তে ব্যর্থ হন এটাকে তার ব্যক্তিগত অপারগতা বা ব্যর্থতার একটা বিষয় হিসেবে ধরে নেয়া যায়, যতক্ষন তিনি এটিকে নিজের মধ্যেই সীমিত রাখেন, কিন্তু এটা সকলকে প্রকাশ্যে ঘোষনা দিয়ে বলে বেড়ানোটা আরও বেশি আপত্তিকর নয় কি? বরং, প্রকারান্তরে এটি এক ধরণের ঔদ্ধত্য প্রদর্শনেরই শামিল। তাই আপনার প্রতি বিনীত অনুরোধ, আপনার একান্তই ব্যক্তিগত সমস্যার এই বিষয়গুলো সকলের সাথে এইভাবে শেয়ার না করার প্রতি আপনি যদি যত্নবান হন, আমরা কৃতজ্ঞ হব।

আমাদের মনে রাখা উচিত, নামাজ ফরজ বা আবশ্যিকভাবে পালনীয় একটি ইবাদত হওয়ার কারণে এই ব্যাপারে কোন মুসলিম ব্যক্তির নামাজ পড়ি না বলার সুযোগ নেই। ইসলাম ধর্মের শ্রেষ্ঠতম ইবাদত নামাজ।

রাসূলে কারিম সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন যে, নামাজ তাঁর চক্ষু শীতলকারী। আশা করি, চেষ্টা করলে আপনি নিয়মিত নামাজে মনযোগী হতে সক্ষম হবেন। নামাজ আপনারও চক্ষু জুড়ানোর কারণ হবে এবং আপনার যাবতীয় অপ্রাপ্তির বেদনা ও হতাশা আল্লাহর রহমতে অচিরেই কেটে যাবে।

শুভকামনা জানবেন।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.