নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আলহামদুলিল্লাহ। যা চাইনি তার চেয়ে বেশি দিয়েছেন প্রিয়তম রব। যা পাইনি তার জন্য আফসোস নেই। সিজদাবনত শুকরিয়া। প্রত্যাশার একটি ঘর এখনও ফাঁকা কি না জানা নেই, তাঁর কাছে নি:শর্ত ক্ষমা আশা করেছিলাম। তিনি দয়া করে যদি দিতেন, শুন্য সেই ঘরটিও পূর্নতা পেত!

নতুন নকিব

যবে উৎপীড়িতের ক্রন্দল-রোল আকাশে বাতাসে ধ্বনিবে না, অত্যাচারীর খড়্গ কৃপাণ ভীম রণ-ভূমে রণিবে না- বিদ্রোহী রন-ক্লান্ত। আমি সেই দিন হব শান্ত।

নতুন নকিব › বিস্তারিত পোস্টঃ

সন্তানের অবাধ্যতায় চিন্তিত! চলুন, দেখে নিই সমাধান ও সংশোধনের কিছু উপায়...

০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২১ বিকাল ৩:০৩

ছবিঃ অন্তর্জাল।

সন্তানের অবাধ্যতায় চিন্তিত! চলুন, দেখে নিই সমাধান ও সংশোধনের কিছু উপায়...

সন্তান কথা শোনে না - এই অভিযোগ অনেক বাবা মা এবং অভিভাবকের নিকট থেকে প্রায়শই শোনা যায়। বরং, সন্তান অবাধ্য— এই অভিযোগ নেই এমন বাবা-মা খুঁজে পাওয়াই বলা চলে এক প্রকার কঠিন। সন্তান কেন কথা শোনে না, সেটা আমাদের বুঝার চেষ্টা করতে হবে। অনুধাবন করা জরুরি যে, আমাদের সন্তানরা কেন সেচ্ছাচারিতার প্রতি ঝুঁকছে? সমস্যাটা কোথায় সেটা অনুসন্ধানে মনযোগ দিতে হবে, তবেই এর সহজ সমাধান প্রত্যাশা করা সম্ভব। কেন কথা শোনে না আমাদের সন্তানেরা? এই যে তারা কথা শোনে না, মুরব্বিদের মানতে চায় না, খামখেয়ালিপনা প্রদর্শন করে- এসবের পেছনে কি দোষ কেবল তাদেরই, না কি সেখানে কোনও ফাঁক থেকে যাচ্ছে আমাদের কাজকর্ম ও দায়দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রেও?

এই কারণে প্রত্যেক অভিভাবককেই সূক্ষ্মভাবে লক্ষ্য করতে হবে যে, তার সন্তান শারীরিক ও মানসিক বিকাশের পথে কোন বাধার সম্মুখীন হচ্ছে কি না। যদি হয়ে থাকে তাহলে অবশ্যই তা দূরীকরণার্থে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে, যার দ্বারা সন্তানের সঠিকভাবে উপযুক্ত পরিবেশে বেড়ে ওঠার পথ সুগম হয়।

এই ক্ষেত্রে অনেক অভিভাবকই মনের অগোচরে যেসব ভুলে অভ্যস্ত...

সন্তানকে উপযুক্ত করে লালন পালন করার ক্ষেত্রে অধিকাংশ বাবা-মা এবং অভিভাবকের মনেই সাধারণ একটি ধারণা কাজ করে যে, বাচ্চারাও তো আমাদের মতোই। অতএব, আমরা যা বুঝি তারাও তা বোঝে অথবা, আমরা যা পছন্দ করি তারাও তাই পছন্দ করবে। কিন্তু এইক্ষেত্রে অনেক অভিভাবকই এই বিষয়টি বুঝতে মনযোগী হন না বা মনে রাখার চেষ্টা করেন না যে, বাচ্চা যদি আমার মতোই বুঝতে সক্ষম হতো তাহলে তো সে আর বাচ্চা থাকতো না। এই বিষয়টি বাচ্চাদের লালন পালনের ক্ষেত্রে সবসময় প্রত্যেক অভিভাবককে অবশ্যই স্মরণে রাখা জরুরি। প্রতিটি কাজের ক্ষে্ত্রে বাচ্চা যেভাবে বুঝতে সক্ষম হবে, আমাদের চেষ্টা করে যেতে হবে তাকে সেভাবেই বুঝাতে।

পারিবারিক পারস্পারিক সম্পর্ককে শ্রদ্ধা, ভালোবাসা এবং মমতাপূর্ণ করে তোলা এবং সন্তানকে সবসময় আদেশ-নির্দেশের ঘেরাটোপে ফেলে না দিয়ে উদ্বুদ্ধ করলে, উৎসাহ উদ্দীপনা প্রদান করে পরিশ্রমী এবং কষ্টসহিষ্ণু করে তুললে, তাদেরকে সাহস এবং আশ্বাস দিয়ে, অভিনন্দন জানিয়ে আত্মপ্রত্যয়ী ও আত্মবিশ্বাসী করে তুললে সন্তান আপনার কথায় আনন্দ পাবে। ভরসা ও আস্থা পাবে। যে কোন কথা তখন পছন্দও করবে। আপনার কথা শুনতে তখন তার ভেতরে আগ্রহ তৈরি হবে। সন্তান হয়ে উঠবে আপনার অনুগত ও বাধ্যগত।

সন্তানের আনুগত্য প্রত্যাশায় যে কাজগুলো করা যেতে পারেঃ

আমি কিছু অভিভাবককে দেখেছি, সন্তানকে যারা বকাঝকা, তিরস্কার এবং কাজ কর্মের আদেশ-নির্দেশ প্রদান করে সারাক্ষণ ত্যক্ত বিরক্ত করে তুলতেই পছন্দ করেন। বস্তুতঃ এই অভ্যাস আদর্শ সন্তান প্রত্যাশার ক্ষেত্রে মোটেই সুখকর নয়। এসব করতে থাকলে সন্তান ভাবতে পারে যে, আপনি বোধ হয় তার প্রতিপক্ষ। তাই সন্তানকে তিরস্কার থেকে বিরত থাকুন। কারণ আপনি সন্তানের বন্ধু-এই অনুভূতিটি তার বিকাশের জন্যেই জরুরি। আর বড়দের মতো ছোটদের জন্যেও এই ব্যাখ্যাটা জরুরি যে সে কেন কাজটি করবে।

আপনার সন্তানকে সঙ্গ দিনঃ

গার্মেন্টস কর্মী এমন এক দম্পতি সম্মন্ধে আমার জানাশোনা রয়েছে, যারা শহরে বসবাস করেন এবং নিজেদের চাকরির কর্মময় ব্যস্ত জীবনে শিশু সন্তানকে দেখাশোনা করতে পারেন না। এই কারণে অতি অল্প বয়সে দুধ ছাড়তে না ছাড়তেই তারা গ্রামে থাকা তাদের পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের কাছে পাঠিয়েছেন শিশু সন্তানকে। লালন পালন তারাই করে। বাবা মা যখন ছুটিছাটা পান তখন শিশু সন্তানকে নিজেদের কাছে নিয়ে কিছু দিন রেখে আবার গ্রামের স্বজনদের কাছে পাঠিয়ে দেন। এভাবেই চলছিল দিনগুলো। তেমন কোন সমস্যা ছিল না। কিন্তু সমস্যা দেখা দিল আরও পরে এসে। শিশুটি কথা বলা শেখার পরে যখন বাবা মায়ের কাছে আসতো তখন তাদেরকে আব্বু কিংবা আম্মু কিছুই ডাকতো না। এ নিয়ে বাবা মায়ের সে কত প্রচেষ্টা আর আফসোস। এটা যে বাবা মায়ের সঙ্গ এবং সাহচর্যহীন সন্তানের পক্ষ থেকে বাবা মায়ের জন্য কতবড় কষ্টদায়ক একটি ব্যাপার, একমাত্র ভুক্তভোগী ব্যতিত অন্য কাউকে হয়তো তা বুঝানো কঠিন। এই জন্য বলি, সন্তানকে সময় দিন। তার সাথে থাকুন। তাকে বুকে আগলে রাখুন। স্নেহ দিয়ে, মমতা দিয়ে, আদর দিয়ে, সোহাগ দিয়ে তাকে জড়িয়ে রাখুন। সে গড়ে উঠবে আপনার ইচ্ছেমতই।

সন্তানকে বুঝতে দিন যে আপনি তাকে বোঝেনঃ

একটি কথা মাথায় রাখতে হবে, আপনার সন্তান যত বেশি করে বুঝতে সক্ষম হবে যে, আপনি তাকে বোঝেন তত সে আপনার অনুগত হবে। আপনার কথা শুনবে। অতএব, তাকে শোনানোর জন্যে আগে তাকে শুনুন। তার কথায় মনোযোগ দিন। তাকে বুঝতে দিন যে, আপনি তাকে বোঝেন।

সন্তানের ইচ্ছের সাথে সহমত পোষন করুনঃ

সন্তানের চাওয়া পাওয়ার ব্যাপারে বাবা-মার ঐকমত্য গুরুত্বপূর্ণ। একই ব্যাপারে বাবা-মায়ের ভিন্নমত পোষন করা অনাকাঙ্খিত। এতে সন্তানের বিভ্রান্তিতে নিপতিত হওয়ার আশঙ্কা থাকে। সঙ্গত কারণে, সিদ্ধান্তগুলো আগেভাগেই নিয়ে নেয়া ভালো। বিশেষ কোনো ব্যাপারে দ্বিমত পোষনের প্রয়োজনীয়তা দেখা দিলে তা-ও নিজেদের মধ্যে বোঝাপড়া ও আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করে নেয়া উচিত। এ নিয়ে কখনো সন্তানের সামনে বিতর্কে জড়ানো একেবারেই উচিত নয়।

সন্তানের প্রশ্নের জবাব দিনঃ

শিশু মনে কৌতুহলের শেষ নেই। কত কিছু নিয়েই যে প্রশ্ন জাগে তার কঁচি অন্তরে, তার ইয়ত্তা নেই। সে তার চারপাশে যা দেখে তার সম্মন্ধেই প্রশ্ন করে। আপনি যদি আপনার সন্তানের প্রশ্নের জবাব না দেন, জবাবের জন্যে সে হয়তো খুঁজে নেবে এমন কাউকে বা এমন কিছুকে যার পরিণতি আপনার জন্যে অতটা সুখকর না-ও হতে পারে। আপনি হয়তো এমনটা পছন্দ না-ও করতে পারেন।

সময়ের সাথে খাপ খাইয়ে সন্তানের প্রতি দায়িত্ব পালনে মনযোগী হোনঃ

সময় স্থির নয়। থাকে না। আজকের দিনের সাথে ১০০ কিংবা ৫০ বছর আগের শিশুবেলার তুলনা করা বোকামি। অনেক বাবা-মায়েরা চান তারা তাদের ছোটবেলায় যেমন ছিলেন, সন্তানও ঠিক তেমন হবে। ফলে এই অবাস্তব প্রত্যাশার জন্যে সৃষ্টি হয় ভুল বোঝাবুঝি। কাজেই কিছু কিছু ব্যাপারে আপনাকে সহনশীল হতে হবে। সন্তানের চাহিদা, দৃষ্টিভঙ্গি এবং পছন্দের সাথে আপনার চাহিদা, দৃষ্টিভঙ্গি এবং পছন্দের একটা ভারসাম্য আনতে হবে। আর এটা করতে হবে সচেতনভাবে সময়ের পরিবর্তিত অবস্থাকে মাথায় রেখেই। তা না হলে, সন্তানকে নিয়ে বিপদ ক্রমে বাড়তেই থাকবে হয়তো।

নিজের অপূর্ণ স্বপ্নের বাস্তবায়ন সন্তানের মধ্যে দেখতে যাওয়া উচিত নয়ঃ

নিজে যেটা হতে পারিনি, সন্তানকে তা বানাবো, কিংবা নিজে যে কাজটা করতে সক্ষম হইনি, সন্তানকে দিয়ে সেই কাজটি করাবো- এই ধরণের মানসিকতা পোষন করা ক্ষতিকর। বাবা-মায়েরা অনেক সময় তাদের অপূর্ণ স্বপ্নের বাস্তবায়ন দেখতে চান তাদের সন্তানের মধ্যে। ফলে সন্তানের জীবনের লক্ষ্য কী হবে তা তারাই ঠিক করে দেন সন্তানের ইচ্ছে, চাওয়া কিংবা সামর্থ্যের বিষয়টিকে কোনো গুরুত্ব না দিয়েই। আর পরবর্তীতে তার মাশুল দিতে হয় সন্তানকেই। সে না পারে বাবা-মায়ের চাওয়া পূরণ করতে, না পারে নিজের মেধাকে বিকশিত করতে। কাজেই বেড়ে ওঠার একটি পর্যায়ের পরে তার সব ব্যাপারে হস্তক্ষেপ না করে তাকে চিন্তা করার ও সিদ্ধান্তগ্রহণের স্বাধীনতা দেয়া বুদ্ধিমানের কাজ।

সন্তানের আত্মমর্যাদাবোধকে সম্মান করুনঃ

শিশুদেরও যে আত্মমর্যাদাবোধ আছে এটা আমরা অনেক সময় ভুলে যাই। আমরা হয়তো অন্যের সামনে তাকে বকাবকি করি, তার ভুল ধরিয়ে দেই বা তাকে অপ্রস্তুত করে তুলি। শিশুর যে কোন ভুল সংশোধনের যৌক্তিক কারণ বা প্রয়োজন দেখা দিলেও এটা এমন কারও সামনে করা উচিত নয়, যাতে শিশুর আত্মমর্যাদাবোধে আঘাত লাগতে পারে। মনে রাখা উচিত, শিশু ছোট হলেও তারও আত্মমর্যাদাবোধ এবং আত্মসম্মানবোধ থাকবে, এটাই স্বাভাবিক। তাই এ ধরনের আচরণের ক্ষেত্রে অভিভাবকদের সতর্ক থাকা একান্তভাবেই প্রয়োজন।

কথা কাজে মিল থাকা উত্তম মানুষ হওয়ার জন্য অপরিহার্য্য, সন্তানকে এটা বুঝতে দিনঃ

বলাবাহুল্য, শিশুরা অনুকরণপ্রিয়। বাবা মা এবং পরিবার ও সমাজের বড়দের যা করতে দেখে, শিশুরাও তা করতে আগ্রহী হয়। অবচেতন মনে শিশু তার চারপাশে যা দেখে তা-ই নিজের ভেতরে ধারণ করে নেয়। শিখে নেয়। শিশু যেহেতু অনুকরণপ্রিয়, কাজেই আপনার সন্তানকে এমন কিছু করতে বলুন, যা আপনি নিজেও করেন। নিজে করেন না, এমন কিছুর প্রতি শিশুকে নির্দেশ দেয়া হলে শিশু বিভ্রান্ত হতে পারে।

কথা কাজে ভুল করলে মাশুল পেতে সুযোগ দিন, প্রয়োজনে মৃদু শাস্তি দিনঃ

সন্তানকে আদর করা মাতা পিতা এবং অভিভাবকের দায়িত্ব। কিন্তু সেটারও মাত্রা পরিমাত্রা এবং সীমা থাকা বাঞ্ছনীয়। কারণ, আপনার সন্তান যদি বুঝে ফেলে যে, আপনার কথা না শুনেও বরাবরই সে পার পেয়ে যাওয়া সম্ভব, তাহলে এটি তাকে অবাধ্য হতে উৎসাহ প্রদানেরই নামান্তর। তাই সন্তানের পক্ষ থেকে বারংবার এই ধরণের কথা না শোনা বা কথামত না চলার একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি দেখলে চিৎকার চেঁচামেচি না করে শান্ত থাকুন, তাকে বোঝান এবং এরপরেও কাঙ্খিত ফললাভে ব্যর্থ হলে এর প্রতিকারে সহনীয় মাত্রার কিছু শাস্তির ব্যবস্থা তার জন্য করতে পারেন। সন্তানের ভবিষ্যৎ চিন্তার বিষয়টিকে গুরুত্ব প্রদান করুন এবং প্রয়োজনে শাস্তি প্রদানের ব্যাপারে দৃঢ় হতে ভয় পাওয়া উচিত নয়। কারণ, এক দু'বার এ ধরণের মৃদু শাসন করার ফলে সন্তান যদি বুঝতে পারে যে, অবাধ্য হবার কারণে তাকে শাস্তি পেতেই হবে, তাহলে ভবিষ্যতের জন্য সে সাবধান হওয়ার সুযোগ পাবে। একই ভুল পরবর্তীতে আর করতে সাহসী হবে না।

একই কথার পুনরাবৃত্তি হতে বিরত থাকা উচিতঃ

একই কথার পুনরাবৃত্তি কাম্য নয়। কারণ, একই কথা বার বার বললে তার গুরুত্ব কমে যায়। এর চেয়ে বরং যে কোন কথা একবারই বলার চেষ্টা করুন এবং তাকে একবার শুনেই কোন কথা আয়ত্ব করার প্রতি উৎসাহিত করুন। এতে ক্রমেই কথা শ্রবনের ক্ষেত্রে তার একাগ্রতার যেমন বিকাশ ঘটবে তেমনি অপরের কথা শোনার ক্ষেত্রে মনযোগ বৃদ্ধিতেও এটি ভূমিকা রাখবে।

ইসলামের দৃষ্টিতে এই বিষয়ক কিছু আমলঃ

আবু হোরায়রা (রা.) থেকে ইমাম বুখারি, ইমাম মুসলিম তাঁদের সংকলিত হাদিসে বর্ণনা করেন যে আল্লাহ তাআলার ৯৯টি নাম রয়েছে। যে ব্যক্তি এগুলোকে আয়ত্ত করে, সে জান্নাতে প্রবেশ করবে। -মুফতী মুহাম্মদ শফী (রহ.) প্রণিত তাফসীরে মারেফুল কোরআনের বাংলা অনুবাদ ও সংক্ষিপ্ত তাফসির, অনুবাদ : মাওলানা মুহিউদ্দীন খান, খাদেমুল হারামাইন বাদশাহ ফাহদ কোরআন মুদ্রণ প্রকল্প, মক্কা-মদিনা, ১৪১৩ হিজরি, পৃষ্ঠা ৫০৫

হাদিসটিতে উল্লিখিত 'আয়ত্ত' শব্দের আরেকটি ব্যাখ্যা পাওয়া যায় অন্য কিতাবে। সেখানে বলা হয়েছে, 'আবু হোরায়রা (রা.) বর্ণনা করেন, প্রিয়নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন, 'যে ব্যক্তি ভালোভাবে আল্লাহ তাআলার নামগুলো মুখস্থ করবে, সে জান্নাতে প্রবেশ করবে।' -মাওলানা সা'আদ : মুন্তাখাব হাদিস, দারুল কিতাব, ঢাকা-২০০২, পৃষ্ঠা ৭২

বস্তুতঃ এ গুণবাচক নামগুলোর আলাদা আলাদা আমল এবং অনেক উপকার ও ফজিলত রয়েছে। এই গুণবাচক নামগুলোরই একটি (اَلشَّهِيْدُ) ‘আশ-শাহিদু’। এই নামটির আমল আলোচ্য ক্ষেত্রে প্রযোজ্য-

(اَلشَّهِيْدُ) ‘আশ-শাহিদু’ নামের আমলঃ

আল্লাহ তাআলার গুণবাচক নাম সমূহের মধ্যে (اَلشَّهِيْدُ) ‘আশ-শাহিদু’ একটি। এর অর্থ - ‘প্রত্যক্ষকারী; প্রকাশ্য-অপ্রকাশ্য সব বিষয়ে যিনি অবহিত’। বরকতপূর্ণ এই নামের আমলকারীগণের অভিজ্ঞতা থেকে জানা যায়, এ পবিত্র নামের আমলে অবাধ্য সন্তান অনুগত হয়ে যায়।

আমলের পদ্ধতিঃ

যদি কোনো ব্যক্তির সন্তান ছেলে হোক আর মেয়ে হোক পিতামাতার অবাধ্য বা অসৎ হয়ে যায়; তবে সে (পিতামাতা) যেন নিজের হাত সন্তানের কপালে রেখে এবং সন্তানের মুখমণ্ডলকে আসমানের দিকে ফিরিয়ে আল্লাহ তাআলার পবিত্র গুণবাচক নাম (اَلشَّهِيْدُ) ‘আশ-শাহিদু’ ২১ বার পাঠ করে। আল্লাহর ইচ্ছায় ওই অবাধ্য বা অসৎ সন্তান (ছেলে হোক আর মেয়ে) সে সৎ ও আনুগত্যশীল হয়ে যাবে।

সন্তানের আনুগত্যলাভে কুরআনে বর্ণিত একটি বিশেষ দুআঃ

অবাধ্য সন্তানকে বাধ্য করতে সন্তানের পিতা-মাতা উভয়ে একাধারে ৭দিন ফজরের নামাযের পর ৩বার করে নিম্নোক্ত আয়াত পাঠ করবে।

وَاَصْلِحْ لِىْ فِىْ ذُرِّيَّتِىْ اِنِّىْ تُبْتُ اِلَيْكَ وَاِنِّىْ مِنَ الْمُسْلِمِيْنَ-

ওয়াছলিহলি ফী যুররিইয়াতি, ইন্নি তুবতু ইলাইকা, ওয়া ইন্নি মিনাল মুসলিমীন। (সূরা: আহকাফ, আয়াত: ১৫)।

অর্থ: আমার জন্য আমার সন্তানদের মধ্যে প্রীতি দান করুন, অবশ্যই আমি আপনারই দিকে প্রত্যাবর্তন করছি এবং অবশ্যই আমি মুসলমানদের অন্তর্ভূক্ত।

কুরআনে বর্ণিত আরেকটি দুআঃ

নিম্নোক্ত আয়াত পাঠ করে অবাধ্য সন্তানের কানে ফুঁক দিলেও ফায়দা পাওয়া যাবে ইনশাআল্লাহ। এর জন্য কয়েকদিন এ আমলটি করা যেতে পারে।

أَفَغَيْرَ دِينِ اللَّهِ يَبْغُونَ وَلَهُ أَسْلَمَ مَنْ فِي السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ طَوْعًا وَكَرْهًا وَإِلَيْهِ يُرْجَعُونَ

তারা কি আল্লাহর দ্বীনের পরিবর্তে অন্য দ্বীন তালাশ করছে? আসমান ও যমীনে যা কিছু রয়েছে স্বেচ্ছায় হোক বা অনিচ্ছায় হোক, তাঁরই অনুগত হবে এবং তাঁর দিকেই প্রত্যাবর্তিত হবে। -সূরা আলে ইমরান, আয়াত ৮৩

কুরআনে বর্ণিত আরও কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ দুআঃ

স্বামী-স্ত্রী-সন্তানদের জন্য দুআ করার পদ্ধতি শিখিয়ে দেয়া হয়েছে এই আয়াতে-

رَبَّنَا هَبْ لَنَا مِنْ أَزْوَاجِنَا وَذُرِّيَّاتِنَا قُرَّةَ أَعْيُنٍ وَاجْعَلْنَا لِلْمُتَّقِينَ إِمَامًا

রাব্বানা- হাবলানা- মিন আযওয়া-জিনা- ওয়া যুররিইয়াতিনা- কুররাতা আ'ইইউনিও ওয়াজআলনা- লিল মুত্তাক্বি-না ইমামা-। -সূরা: আল ফুরকান, আয়াত: ৭৪

অর্থ: হে আমাদের পালনকর্তা, আমাদিগকে আমাদের স্ত্রী ও সন্তান-সন্ততিগণের পক্ষ হতে নয়নের তৃপ্তি ও শীতলতা দান করুন এবং আমাদেরকে মুত্তাকীদের জন্যে আদর্শস্বরূপ করুন।

সন্তানদের প্রতি মাতা-পিতার ও মাতা-পিতার জন্য সন্তানদের দুআঃ

সন্তানদের প্রতি মাতা-পিতার ও মাতা-পিতার জন্য সন্তানদের দুআ বর্ণিত হয়েছে নিম্নোক্ত আয়াতে-

رَبِّ اجْعَلْنِي مُقِيمَ الصَّلَاةِ وَمِن ذُرِّيَّتِي ۚ رَبَّنَا وَتَقَبَّلْ دُعَاءِ رَبَّنَا اغْفِرْ لِي وَلِوَالِدَيَّ وَلِلْمُؤْمِنِينَ يَوْمَ يَقُومُ الْحِسَابُ

রাব্বিজ আলনী- মুকি-মাছছলাতি ওয়ামিন জুররিয়্যাতি, রাব্বানা- ওয়া তাকাব্বাল দুআ-, রাব্বানাগ ফিরলি- ওয়ালি ওয়ালিদাইয়া ওয়ালিল মু’মিনি-না ইয়াওমা ইয়াকু-মুল হিসা-ব। -সূরা: ইবরাহিম, আয়াত: ৪০-৪১

অর্থ: হে আমার পালনকর্তা, আমাকে নামাজ কায়েমকারী বানিয়ে দিন আর আমার সন্তানদের মধ্য থেকেও। হে আল্লাহ, আমার দোয়া কবুল করে নিন। হে আল্লাহ, আমাকে ও আমার মাতা-পিতাকে আর সকল ঈমানদার লোকদের সেদিন ক্ষমা করে দিন, যেদিন হিসাব কার্যকর হবে।

নেক সন্তানলাভের দুআঃ

رَبِّ هَبْ لِي مِنَ الصَّالِحِينَ

রাব্বি হাবলি মিনাস সালেহীন। -সূরা আস সফফাত, আয়াত ১০০

অর্থ: হে আমার পালনকর্তা, আমাকে নেককার সৎ-কর্মশীল সন্তান দান করুন।

পরিশেষে..

আশা করছি, যারা ছেলে বা মেয়ের অবাধ্যতা, মেজাজের রুক্ষ্মতা, বড়দের সম্মান শ্রদ্ধা না করা, তাদের কথা না শোনা ইত্যাদি নিয়ে দুশ্চিন্তা বা পেরেশানিতে রয়েছেন, তারা অত্র আলোচনা হতে উপকৃত হতে সক্ষম হবেন। আল্লাহ তাআলা আমাদের সকলকে আমাদের সন্তানদের প্রতি সদাচারপূর্ণ আচার আচরণের মাধ্যমে তাদের সঠিকভাবে বিকশিত করে আদর্শ মানুষ হিসেবে গড়ে তোলার তাওফিক প্রদান করুন। তাদেরকে আমাদের জন্য চক্ষু শীতলকারী এবং পার্থিব ও পারলৌকিক জীবনে উপকারী হিসেবে কবুল করুন। উল্লেখিত আমলগুলোর অনুশীলনের মাধ্যমে তাদেরকে সৎ ও অনুগত সন্তান হিসেবে গড়ে তোলার তাওফিক দান করুন। আমিন।

মন্তব্য ৫ টি রেটিং +৩/-০

মন্তব্য (৫) মন্তব্য লিখুন

১| ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২১ বিকাল ৫:২৩

মোহামমদ কামরুজজামান বলেছেন: কাঁদা মাটি থেকে হাড়ি-পাতিল বানাতে কুমোরের যেমন ধৈর্য্য ধারন ও পরিশ্রম করতে হয় ঠিক তেমনি সন্তান লালন-পালন তথা গড়ে তুলতে কুমোরের মত কচচপ কামড়ের মত ধৈর্য্য-সহযোগীতা দরকার ,যা আমাদের বেশীরভাগ মানুষেরই নেই। আবার সন্তানকে মানুষ হিসাবে গড়ে তোলা যেহেতু দীর্ঘ মেয়াদের ব্যাপার কাজেই তাড়াহুড়ায়ও তেমন কোন ভাল ফল বয়ে আনবেনা।

কাজেই ধৈর্য্যর সাথে ,আল্লাহর উপর ভরসা রেখে এবং সন্তানদের মানষিকতা বুঝে ও তাদের সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক তৈরী করে এগিয়ে যাওয়া উচিত।

০৫ ই নভেম্বর, ২০২১ সকাল ৯:৫৮

নতুন নকিব বলেছেন:



লাইকসহ চমৎকার এবং মূল্যবান মন্তব্য রেখে যাওয়ায় আন্তরিক অভিনন্দন।

কৃতজ্ঞতা জানবেন।

২| ০৫ ই নভেম্বর, ২০২১ রাত ১২:৫০

রাজীব নুর বলেছেন: ইসলামের দৃষ্টিকোণ থেকে যে আলোচনা করেছেন সেটুকু ছাড়া বাকিটুকু ভালো কথা।

০৫ ই নভেম্বর, ২০২১ সকাল ১০:০৮

নতুন নকিব বলেছেন:



মন্তব্যে আসার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে। আর ইসলামী দৃষ্টিকোণ থেকে যেসব কথা এই পোস্টে লেখা হয়েছে তাতে কারও কারও আপত্তি থাকা অস্বাভাবিক নয়, এটা তো জানা কথাই। আমাদের কিছু বন্ধু তো এমন রয়েছেন, যারা ইসলামী বিষয়াদিকে বিচার বিবেচনা ব্যতিরেকেই সমালোচনা এবং ঘৃণার বস্তু মনে করেন। তাদের কাছে কুরআনে বর্ণিত দুআ এবং প্রার্থনার চমকপ্রদ বাণীগুলোও ভালো না লেগে বরং পীড়াদায়কই মনে হয়। এমনটা হওয়া সত্যিই দুঃখজনক। এই মানসিকতার বন্ধুদের জন্য আমাদের পক্ষ হতে নিরন্তর শুভকামনা।

আপনার জন্যও অনেক অনেক শুভকামনা।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.