নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
যবে উৎপীড়িতের ক্রন্দল-রোল আকাশে বাতাসে ধ্বনিবে না, অত্যাচারীর খড়্গ কৃপাণ ভীম রণ-ভূমে রণিবে না- বিদ্রোহী রন-ক্লান্ত। আমি সেই দিন হব শান্ত।
ছবি: অন্তর্জাল।
প্রিয় নবীজির আদর্শ অনুসরণেই আজকের বিশ্ববাসীর মুক্তি
বিশ্ব জাহানের স্রষ্টা এবং প্রতিপালক মহান আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা বিশ্ববাসী সকল সৃষ্টির ইহকালীন শান্তি ও পারলৌকিক মুক্তির জন্য মহানবী হযরত মুহাম্মদ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে পাঠিয়েছিলেন এই ধরাধামে। প্রথম নবী হযরত আদম আলাইহিস সালাম থেকে শুরু করে নবুয়তের ধারাবাহিকতায় তিনি এ পৃথিবীতে আগত সর্বশেষ নবী এবং রাসূল। তাঁর আগমনে গোটা বিশ্বজাহান আনন্দে উদ্ভাসিত হয়ে উঠেছিল। আকাশে বাতাসে ধ্বনিত প্রতিধ্বনিত হয়ে উঠেছিল মুক্তির বারতা। তাঁর আগমনে স্রষ্টাকে ভুলে যাওয়া মানব জাতি নতুন করে সন্ধান পেয়েছিল মুক্তিপথের। তাওহিদের অমিয় বাণী কালিমা 'লা- ইলাহা ইল্লাল্লাহ' তথা 'এক আল্লাহ ব্যতিত আর কোন উপাস্য নেই' - এই মহাসত্যের বুলন্দ আওয়াজ ছড়িয়ে পড়েছিল জগতময়। সত্যের পথে, শান্তির পথে, মুক্তির পথে ফিরে আসার সুযোগ লাভ করেছিল জগতবাসী। লাত, মানাত, উযযা, হুবলদের মত মিথ্যে এবং অসার উপাস্যদের বিদায়ের বারতা ঘোষিত হয় বিশ্বময়। মানব সৃজিত মূর্তি আর তাবৎ বুৎপরস্তির আঁধার এবং পঙ্কিলতার পথ ছেড়ে বনি আদম পুনরায় মাথা নত করার শিক্ষা লাভ করে এক আল্লাহর সামনে। আজকের বিশ্ববাসীর কল্যান ও মুক্তিও তাঁর রেখে যাওয়া সুমহান আদর্শ ধারণ করার মধ্যেই। সেই মহান আদর্শের ছায়াতলেই হোক আমাদের পথচলা-
তিনি ছিলেন পরিপূর্ণ মানব:
প্রিয়তম রাসূল হযরত মুহাম্মদ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ছিলেন ইনসানে কামিল বা পরিপূর্ণ মানব। মানবীয় অবয়বে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআ'লার গুণাবলি যতটুকু ধারণ করা সম্ভব, তার সর্বোচ্চ সমাহার ঘটেছিল মহানবী সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর মধ্যে। আয়শা রাদিআল্লাহু তাআ'লা আনহার বাচনিকে, 'প্রিয় নবীজীর জীবন ছিল জীবন্ত কুরআন'। তাঁর শুভাগমনে ইসলামের পরিপূর্ণতা ঘটেছে। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআ'লা ইরশাদ করেন,
صِبْغَةَ اللَّهِ ۖ وَمَنْ أَحْسَنُ مِنَ اللَّهِ صِبْغَةً ۖ وَنَحْنُ لَهُ عَابِدُونَ
‘আল্লাহর রং! আর আল্লাহর রং অপেক্ষা অধিকতর সুন্দর রং কী হতে পারে? আমরা তাঁরই ইবাদতকারী অনুগত বান্দা।’ -সুরা বাকারা, আয়াত: ১৩৮
তাঁর সুমহান আদর্শ ও চরিত্র অনুসরণ করাই বিশ্ববাসীর কর্তব্য:
প্রিয়তম রাসূল হযরত মুহাম্মদ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সুমহান আদর্শ ও সর্বোত্তম চরিত্র অনুসরণ করার মধ্যেই সফলতা, স্বার্থকতা, মুক্তি এবং চূড়ান্ত কামিয়াবি। ইহকাল পরকালে সফলতা ও নাজাতের জন্য বিশ্ববাসী প্রত্যেকের জন্য তাঁর অনুসরণই একমাত্র কর্তব্য। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআ'লা ইরশাদ করেন,
وَإِنَّكَ لَعَلَىٰ خُلُقٍ عَظِيمٍ
‘অবশ্যই আপনি মহান চরিত্রে সর্বোচ্চ পর্যায়ে অধিষ্ঠিত।’ -সুরা কলম, আয়াত: ৪
আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআ'লা কুরআনুল কারিমে অন্যত্র ইরশাদ করেন,
لَقَدْ جَاءَكُمْ رَسُولٌ مِّنْ أَنفُسِكُمْ عَزِيزٌ عَلَيْهِ مَا عَنِتُّمْ حَرِيصٌ عَلَيْكُم بِالْمُؤْمِنِينَ رَءُوفٌ رَّحِيمٌ فَإِن تَوَلَّوْا فَقُلْ حَسْبِيَ اللَّهُ لَا إِلَـٰهَ إِلَّا هُوَ ۖ عَلَيْهِ تَوَكَّلْتُ ۖ وَهُوَ رَبُّ الْعَرْشِ الْعَظِيمِ
‘অবশ্য তোমাদের মধ্য থেকে তোমাদের নিকট এক রাসুল এসেছেন, তোমাদিগকে যা বিপন্ন করে, তা তাঁর জন্য কষ্টদায়ক। তিনি তোমাদের মঙ্গলকামী। তিনি মুমিনদের প্রতি স্নেহশীল ও দয়ালু। অতঃপর তারা যদি মুখ ফিরিয়ে নেয়, তবে আপনি বলুন, আমার জন্য আল্লাহই যথেষ্ট। তিনি ব্যতীত অন্য কোনো ইলাহ বা উপাস্য তথা ইবাদতের উপযুক্ত মাবুদ নেই। আমি তাঁরই ওপর নির্ভর করি এবং তিনি মহান আরশের অধিপতি।’ -সুরা তাওবাহ, আয়াত: ১২৮-১২৯
আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআ'লা কুরআনুল কারিমে অন্যত্র ইরশাদ করেন,
পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তা’আলা রাসূলের অনুকরণ ও অনুসরণ করার নির্দেশ দেন। কারণ, আল্লাহর রাসূল হল আল্লাহর পক্ষ থেকে মানুষের প্রতি দূত। তিনি আল্লাহর পক্ষ থেকে আল্লাহর বাণী মানুষের নিকট পৌঁছে দেন। রাসূলের মাধ্যমেই আল্লাহর আদেশ নিষেধ বাস্তবায়িত হয় এবং আল্লাহর নৈকট্য লাভে ধন্য হয়। তাই আল্লাহ মানুষকে তার প্রেরিত রাসূলের অনুকরণ করার নির্দেশ দেন। আল্লাহ তা’আলা বলেন,
﴿وَأَنَّ هَٰذَا صِرَٰطِي مُسۡتَقِيمٗا فَٱتَّبِعُوهُۖ وَلَا تَتَّبِعُواْ ٱلسُّبُلَ فَتَفَرَّقَ بِكُمۡ عَن سَبِيلِهِۦۚ ذَٰلِكُمۡ وَصَّىٰكُم بِهِۦ لَعَلَّكُمۡ تَتَّقُونَ ١٥٣ ﴾ [الانعام: ١٥٣]
“আর এটি তো আমার সোজা পথ। সুতরাং তোমরা তার অনুসরণ কর এবং অন্যান্য পথ অনুসরণ করো না, তাহলে তা তোমাদেরকে তাঁর পথ থেকে বিচ্ছিন্ন করে দেবে। এ গুলো তিনি তোমাদেরকে নির্দেশ দিয়েছেন, যাতে তোমরা তাকওয়া অবলম্বন কর”। -সুরা আল আনআম, আয়াত: ১৫৩
কুরআন ও সূন্নাহই হল সব সমস্যার সমাধানের মূল।
﴿ يَٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُوٓاْ أَطِيعُواْ ٱللَّهَ وَأَطِيعُواْ ٱلرَّسُولَ وَأُوْلِي ٱلۡأَمۡرِ مِنكُمۡۖ فَإِن تَنَٰزَعۡتُمۡ فِي شَيۡءٖ فَرُدُّوهُ إِلَى ٱللَّهِ وَٱلرَّسُولِ إِن كُنتُمۡ تُؤۡمِنُونَ بِٱللَّهِ وَٱلۡيَوۡمِ ٱلۡأٓخِرِۚ ذَٰلِكَ خَيۡرٞ وَأَحۡسَنُ تَأۡوِيلًا ٥٩ ﴾ [النساء : ٥٩]
“হে ঈমানদারগণ! তোমরা আল্লাহর অনুগত হও এবং রাসূলের অনুগত হও এবং তোমাদের মধ্যকার কর্তৃস্থানীয় ব্যক্তিবর্গেরও ; তবে যদি কোন বিষয়ে তোমাদের মধ্যে মতভেদ ঘটে, তাহলে সেই বিষয়কে আল্লাহ এবং রাসূলের দিকে ফিরিয়ে দাও যদি তোমরা আল্লাহ এবং আখিরাতে ঈমান আন ; এটাই উত্তম এবং সুন্দরতম মর্মকথা”। -সুরা আননিসা, আয়াত: ৫৯
﴿ وَلَا يَأۡتُونَكَ بِمَثَلٍ إِلَّا جِئۡنَٰكَ بِٱلۡحَقِّ وَأَحۡسَنَ تَفۡسِيرًا ٣٣ ﴾ [الفرقان: ٣٣]
“তোমার কাছে তারা এমন কোন সমস্যাই নিয়ে আসে না যার সঠিক সমাধান ও সুন্দর ব্যাখ্যা আমি তোমাকে দান করিনি”। -সুরা আল ফুরকান, আয়াত: ৩৩
﴿ وَأَطِيعُواْ ٱللَّهَ وَرَسُولَهُۥ وَلَا تَنَٰزَعُواْ فَتَفۡشَلُواْ وَتَذۡهَبَ رِيحُكُمۡۖ وَٱصۡبِرُوٓاْۚ إِنَّ ٱللَّهَ مَعَ ٱلصَّٰبِرِينَ ٤٦ ﴾ [الانفال: ٤٦]
“আল্লাহ ও তার রাসূলের আনুগত্য কর, পরস্পরে ঝগড়া বিবাদ কর না, তা করলে তোমরা সাহস হারিয়ে ফেলবে, তোমাদের শক্তি-ক্ষমতা বিলুপ্ত হবে। আর ধৈর্য ধারণ করবে, আল্লাহ ধৈর্যশীলদের সঙ্গে আছেন”। -সুরা আল আনফাল, আয়াত: ৪৬
দোজাহানে শান্তি ও মুক্তির একমাত্র পথ এটাই:
আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআ'লার বিধান প্রতিপালন ও প্রিয় নবীজি সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সুন্নাতের অনুসরণই দুনিয়ার শান্তি ও পরকালে মুক্তির একমাত্র পথ। পবিত্র কুরআনের বর্ণনায়- প্রিয় নবীজি সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের ভালোবাসা মুমিনের ইমান; আর তাঁর রেখে যাওয়া আদর্শ তথা, সুন্নাতের অনুসরণই হচ্ছে তাকে ভালোবাসার প্রমাণ। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআ'লা কুরআনুল কারিমে ইরশাদ করেন,
قُلْ إِن كُنتُمْ تُحِبُّونَ اللَّهَ فَاتَّبِعُونِي يُحْبِبْكُمُ اللَّهُ وَيَغْفِرْ لَكُمْ ذُنُوبَكُمْ ۗ وَاللَّهُ غَفُورٌ رَّحِيمٌ قُلْ أَطِيعُوا اللَّهَ وَالرَّسُولَ ۖ فَإِن تَوَلَّوْا فَإِنَّ اللَّهَ لَا يُحِبُّ الْكَافِرِينَ
‘(হে রাসুল!) আপনি বলুন, যদি তোমরা আল্লাহকে ভালোবাসতে চাও, তবে আমার অনুসরণ করো। ফলে আল্লাহ তোমাদের ভালোবাসবেন, তোমাদের পাপরাশি ক্ষমা করে দেবেন। আল্লাহ ক্ষমাশীল ও দয়ালু। (হে রাসুল!) আপনি বলুন, তোমরা আল্লাহর আনুগত্য করো, আর রাসুলের আনুগত্য করো। যদি তারা বিমুখ হয়, তবে নিশ্চয় আল্লাহ অকৃতজ্ঞ কাফিরদের পছন্দ করেন না।’ -সুরা আলে ইমরান, আয়াত: ৩১-৩২
প্রতিবাদের শ্রেষ্ঠ পন্থা উত্তম আচরণই তাঁর শিক্ষা:
ইসলাম প্রতিশোধে বিশ্বাস করে না। পৃথিবীর তাবত আদর্শ এবং মতবাদ খুঁজেও এর দ্বিতীয় একটি নজির পাওয়া যাবে না। ইসলামের শিক্ষা, ‘প্রতিবাদের শ্রেষ্ঠ পন্থা উত্তম আচরণ’। প্রিয় নবীজি সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সারা জীবনের আদর্শ ছিল এটাই। মন্দের প্রতিবাদ তিনি কোনদিন মন্দ কাজ দিয়ে করেননি। প্রতিশোধ নেয়ার ক্ষেত্রে তাঁর সারা জীবনের চরিত্র ছিল উত্তম এবং শ্রেষ্ঠতম আচরণ প্রদর্শন করতেন। ঘোরতর শত্রুদের সাথেও সর্বাবস্থায় তিনি ছিলেন কোমল এবং সর্বোত্তম আচরণের মূর্ত প্রতীক। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআ'লা কুরআনুল হাকিমে ইরশাদ করেন,
ادْفَعْ بِالَّتِي هِيَ أَحْسَنُ السَّيِّئَةَ ۚ نَحْنُ أَعْلَمُ بِمَا يَصِفُونَ
‘মন্দের প্রতিবাদ করো উত্তম দ্বারা, তারা যা বলে আমি সে সম্বন্ধে সবিশেষ অবহিত।’ -সুরা মুমিনুন, আয়াত: ৯৬
আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআ'লা কুরআনুল কারিমে অন্যত্র ইরশাদ করেন,
وَلَا تَسْتَوِي الْحَسَنَةُ وَلَا السَّيِّئَةُ ۚ ادْفَعْ بِالَّتِي هِيَ أَحْسَنُ فَإِذَا الَّذِي بَيْنَكَ وَبَيْنَهُ عَدَاوَةٌ كَأَنَّهُ وَلِيٌّ حَمِيمٌ وَمَا يُلَقَّاهَا إِلَّا الَّذِينَ صَبَرُوا وَمَا يُلَقَّاهَا إِلَّا ذُو حَظٍّ عَظِيمٍ
‘ভালো ও মন্দ সমান হতে পারে না। মন্দকে প্রতিহত করো উৎকৃষ্ট দ্বারা, ফলে তোমার সহিত যার শত্রুতা রয়েছে, সে-ও তোমার অন্তরঙ্গ বন্ধুর মতো হয়ে যাবে। এই গুণের অধিকারী করা হয় কেবল তাদেরই, যারা ধৈর্যশীল এবং এই গুণের অধিকারী করা হয় কেবল তাদেরই, যারা মহাসৌভাগ্যশালী।’ -সুরা হামিম আস সাজদা, আয়াত: ৩৪-৩৫
তিনি ছিলেন হিংসা-বিদ্বেষ ও কলুষমুক্ত অন্তরের অধিকারী:
প্রিয় নবীজি সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ছিলেন সর্বাধিক পরিচ্ছন্ন অন্তরের অধিকারী। এই কারণে হিংসা-বিদ্বেষ ও কলুষমুক্ত অন্তরের অধিকারী হওয়া নবীজি সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম –এর সুমহান সুন্নাত এবং সর্বোত্তম আদর্শ অনুসরণেরই পরিচায়ক। হযরত আনাস ইবনে মালিক রাদিআল্লাহু তাআ'লা আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘রাসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাকে (স্নেহপূর্ণ ভাষায়) নির্দেশ প্রদান করেছেন,
“হে আমার প্রিয় সন্তান! যদি তোমার পক্ষে যদি সকাল-সন্ধ্যা রাত-দিন এভাবে অতিবাহিত করা সম্ভব হয় যে, তোমার অন্তরে কারও জন্য কোনো (গিশ্শ) হিংসা-বিদ্বেষ না থাকে, তবে তা-ই করো।”
তিনি আরও বলেন, ‘এটা আমার অন্যতম সুন্নাত আদর্শ। আর যারা আমার সুন্নাত আদর্শকে (আমলের মাধ্যমে) ভালোবাসবে, তারা প্রকৃত আমাকেই ভালোবাসে; আর যারা আমাকে ভালোবাসে, তারা আমার সঙ্গেই জান্নাতে থাকবে।’ -তিরমিজি: ২৭২৬
তাকে ভালোবাসলেই পাওয়া যাবে স্রষ্টার ভালোবাসা:
মানব জাতিকে সৃষ্টি করে তাদেরকে পৃথিবীতে পাঠানোর উদ্দেশ্য হলো বিশ্ব জাহানের মহান স্রষ্টা আল্লাহ তাআ'লার মহিমা ও পরিচয়ের প্রকাশ ঘটানো। আর নবী-রাসুল প্রেরণের লক্ষ্য হলো মানুষকে একমাত্র মহান স্রষ্টা আল্লাহ তাআ'লার সাথে পরিচয় করিয়ে দেয়া। তাঁর পথ বাতলে দেয়া। তাঁর পথে চলতে শেখানো। তাকে পাওয়ার সঠিক দিশা দেয়া। তাই আল্লাহ তাআ'লার ভালোবাসা পেতে হলে রাসুল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের পথ অনুসরণ করতে হবে। অর্থাৎ, রাসুল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যা যা করেছেন বা করতে বলেছেন, তা করতে হবে। আর যা করেননি বা করতে বারণ করেছেন, তা বর্জন করতে হবে। এ প্রসঙ্গে পবিত্র কুরআন মাজিদে ইরশাদ হয়েছে,
مَّا أَفَاءَ اللَّهُ عَلَىٰ رَسُولِهِ مِنْ أَهْلِ الْقُرَىٰ فَلِلَّهِ وَلِلرَّسُولِ وَلِذِي الْقُرْبَىٰ وَالْيَتَامَىٰ وَالْمَسَاكِينِ وَابْنِ السَّبِيلِ كَيْ لَا يَكُونَ دُولَةً بَيْنَ الْأَغْنِيَاءِ مِنكُمْ ۚ وَمَا آتَاكُمُ الرَّسُولُ فَخُذُوهُ وَمَا نَهَاكُمْ عَنْهُ فَانتَهُوا ۚ وَاتَّقُوا اللَّهَ ۖ إِنَّ اللَّهَ شَدِيدُ الْعِقَابِ
‘যা দিয়েছেন তোমাদের রাসুল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, সুতরাং তা ধারণ করো; আর যা থেকে বারণ করেছেন, তা থেকে বিরত থাকো।’ -সুরা হাশর, আয়াত: ৭
জীবনের সফলতা কালিমা তাইয়েবার মূল শিক্ষার বাস্তবায়নেই:
নবী কারিম সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের জীবনের মূল শিক্ষা হলো কালিমা তাইয়েবা, ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ।’ অর্থাৎ, আল্লাহ ভিন্ন উপাস্য নেই, মুহাম্মদ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁর প্রেরিত রাসুল। এ কালিমার গূঢ় অর্থ হাজারো প্রকারে বিশ্লেষণ করা হয়েছে, এর মধ্যে সবচেয়ে পূর্ণাঙ্গ অথচ অতি সংক্ষিপ্ত ও অতি নিখুঁত বিশ্লেষণ হলো ইমানে মুজমাল, ‘বিশ্বপ্রভু আল্লাহর প্রতি আমি ইমান আনলাম, তাঁর সব আদেশাবলি মেনে নিলাম।’
একটি হাদিস, একটি মু'জিজা এবং...
নবী কারিম সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআ'লা অসংখ্য অগণিত মু'জিজা দান করেছেন। তাঁর সকল মু'জিজা বর্ণনা করা রীতিমত দূরূহ। এর জন্য আলাদা আলাদা কিতাব রচনা করেছেন বিজ্ঞ ইসলামিক চিন্তাবিদগণ। একটি হাদিস পাঠ করে আশ্চর্য্য না হয়ে পারা যায় না। এই হাদিসে তিনি তাঁর সর্বাধিক প্রিয় তিন সহচর আবু বকর, উমর ও উসমান রাদিআল্লাহু তাআ'লা আনহুম এর মৃত্যুর অবস্থা অবিকল বলে দিয়েছিলেন। হাদিসে একজনকে তিনি সিদ্দীক বলেছেন এবং বাকি দু'জনকে শহীদ বলেছেন। পরবর্তী সময়ে এই হাদিসের হুবহু বাস্তবায়ন বিশ্ববাসী প্রত্যক্ষ করেছেন। অর্থাৎ, সিদ্দীকে আকবার আবু বকর রাদিআল্লাহু তাআ'লা আনহু স্বাভাবিকভাবে ইনতিকাল করেছেন এবং উমর এবং উসমান রাদিআল্লাহু তাআ'লা আনহুমা শাহাদাত বরণ করেছেন। চলুন, সহিহ বুখারির সেই হাদিসখানা দেখে নিই একবার-
صَعِدَ النبيُّ صَلَّى اللهُ عليه وسلَّمَ أُحُدًا ومعهُ أبو بَكْرٍ، وعُمَرُ، وعُثْمانُ، فَرَجَفَ، وقالَ: اسْكُنْ أُحُدُ - أظُنُّهُ ضَرَبَهُ برِجْلِهِ -، فليسَ عَلَيْكَ إلَّا نَبِيٌّ، وصِدِّيقٌ،
وشَهِيدانِ.
الراوي : أنس بن مالك | المحدث : البخاري | المصدر : صحيح البخاري | الصفحة أو الرقم : 3699 | خلاصة حكم المحدث : [صحيح]
অর্থ: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উহুদে আরোহণ করলেন এবং তাঁর সাথে আবু বকর, উমর ও উসমান ছিলেন। উহুদ কাঁপছিল। তিনি বললেনঃ উহুদ, স্থিতিশীল হও। আমার মনে হচ্ছিল, তিনি তাঁর পা দিয়ে তাকে (উহুদের মাটিকে) আঘাত করছেন এবং বলছেন যে, তোমার উপর একজন নবী, একজন সিদ্দীক (অধিক সত্যবাদী বা বিশ্বস্ত) এবং দুইজন শহীদ (আল্লাহর পথে জীবন উৎসর্গকারী) ব্যতিত আর কেউ নেই। -অত্র হাদিসের বর্ণনাকারী: আনাস বিন মালিক রাদিআল্লাহু তাআ'লা আনহু।সূত্রঃ সহীহ আল-বুখারী, পৃষ্ঠা বা সংখ্যা: ৩৬৯৯ হাদিসের মান: সহীহ
পরিশেষে...
আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআ'লা সারা পৃথিবীর সকল মানুষসহ আমাদেরকে প্রিয় নবীজীর রেখে যাওয়া আদর্শ অনুসরণ করে চলার তাওফিক দান করুন। আমাদের পার্থিব জীবন সুন্নতের আলোয় আলোকিত করার সৌভাগ্য দান করুন এবং পারলৌকিক জীবনে প্রিয়তম রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সঙ্গী সাথী হওয়ার বুলন্দ নসিব প্রদান করুন।
২৭ শে নভেম্বর, ২০২১ সকাল ৮:৪৬
নতুন নকিব বলেছেন:
শুকরিয়া। জাজাকুমুল্লাহ।
২| ২৬ শে নভেম্বর, ২০২১ সন্ধ্যা ৬:৫৫
সাড়ে চুয়াত্তর বলেছেন: স্বয়ং আল্লাহতায়ালা রসুলের( সা) উপর দরুদ পড়েন।
‘ইন্নাল্লাহা ওয়া মালাইকাতাহু ইউসাল্লুনা আলান্নাবিয়্যি। ইয়া আইয়্যুহাল্লাজিনা আমানু সাল্লু আলাইহি ওয়া সাল্লিমু তাসলিমা।’
অর্থাৎঃ- "নিশ্চয়ই আল্লাহ এবং তাঁর ফেরেস্তাগণ নবীর উপর দুরূদ পড়েন। হে ঈমানদারগণ তোমরাও তাঁর উপর দুরূদ পড় এবং যথাযথ সম্মানের সাথে তাঁকে সালাম জানাও।"
[সূরা আহযাব, আয়াত : ৫৬]‘
দুঃখজনক কথা হোল যে অনেক তথাকথিত আধুনিক মুসলমান এখন হাদিসকে গুরুত্বহীন মনে করে এবং শুধু কোরআন ছাড়া আর কিছু মানে না। এই বিভ্রান্ত দলকে 'কুরানিয়ুন' বলা হয়।
আল্লাহ আমাদেরকে কোরআন এবং সুন্নাহ মোতাবেক চলার তৌফিক দান করুন। আমিন।
২৭ শে নভেম্বর, ২০২১ সকাল ৯:০৪
নতুন নকিব বলেছেন:
'কুরআনিউন' আর 'হাদিসিউন' যা-ই বলেন এসব নামের অন্তরালে যারা হাদিস ছেড়ে দিয়ে শুধু কুরআন অনুসরণ করার দাবিদার কিংবা কুরআন পরিত্যাগ করে যারা শুধু হাদিসে আমল করার কথাবার্তা বলে বেড়ান, তারা স্পষ্টত: গোমরাহিতে লিপ্ত এবং চরম বিভ্রান্তিতে নিপতিত। তাদের এসব কার্যকলাপকে নিশ্চিতভাবেই গোঁড়ামি বলা ছাড়া উপায় নেই। বলার অপেক্ষা রাখে না যে, কুরআন, হাদিস, ইজমা এবং কিয়াসের সমন্বয়ে ইসলামী শরিয়ত পরিপূর্ণভাবে পালন করা সম্ভব। যারা এই চারটির কোন একিটিকে অস্বীকার করে, তারা ইসলাম ধর্মের মূল বিষয়াবলী থেকে বিচ্যুত হয়ে যায়। মোদ্দা কথা, কুরআন এবং হাদিস মেনে চলতে গেলে শেষোক্ত ইজমা এবং কিয়াস অটোমেটিকভাবেই চলে আসে। কিন্তু কুরআন অথবা হাদিস- এই দু'টির কোন একটিকে বাদ দিয়ে ইসলামী শরিয়াহ ফলো করা কোনক্রমেই সম্ভব নয়।
আল্লাহ আমাদেরকে কোরআন এবং সুন্নাহ মোতাবেক চলার তৌফিক দান করুন। আমিন।
-আমিন।
৩| ২৭ শে নভেম্বর, ২০২১ রাত ১২:২৫
রাজীব নুর বলেছেন: ধর্মের প্রতি মানুষের আস্থা কমে গেছে।
২৭ শে নভেম্বর, ২০২১ সকাল ৯:০৬
নতুন নকিব বলেছেন:
মানুষের কথা বাদ দেন। ধর্মের প্রতি আপনার আস্থা কেমন আছে, সেটা বলেন।
নিজে ভালো তো জগত ভালো। অন্ধের পৃথিবীটা সারা জীবন আঁধারই থেকে যায়। আসলে কি পৃথিবী অন্ধকারময়?
ধন্যবাদ।
©somewhere in net ltd.
১| ২৬ শে নভেম্বর, ২০২১ দুপুর ১:৪৫
মোঃ মাইদুল সরকার বলেছেন: শিরোনামের সহমত ধন্যবাদ। সুন্দর পোস্ট±+±+++++