নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
যবে উৎপীড়িতের ক্রন্দল-রোল আকাশে বাতাসে ধ্বনিবে না, অত্যাচারীর খড়্গ কৃপাণ ভীম রণ-ভূমে রণিবে না- বিদ্রোহী রন-ক্লান্ত। আমি সেই দিন হব শান্ত।
সালাতুল হাজতের দুআ সম্বলিত হাদিসের ইবারতসহ সুদৃশ্য জেপিইজি ফরমেটের এই ইমেজটি অন্তর্জাল হতে সংগৃহীত।
সালাতুল হাজত অর্থাৎ, প্রয়োজন পূরণ বা বিপদমুক্তির নামাজ
আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ। প্রিয় বন্ধুরা, সালাতুল হাজত অর্থাৎ, প্রয়োজন পূরণ বা বিপদমুক্তির নামাজ মুসলিম উম্মাহর জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি নামাজ। মানব জীবন বহমান নদীর মত। এই জীবনের বাঁকে বাঁকে সামনে এসে দাঁড়ায় ছোট বড় নানাবিধ সমস্যা। বস্তুতঃ জীবনের এসব সমস্যা ছিল, আছে এবং থাকবে। আর পার্থিব কিংবা অন্যবিদ সকল সমস্যা সমাধানের জন্য সালাতুল হাজত অর্থাৎ, প্রয়োজন পূরণ বা বিপদমুক্তির দুই রাকাত নফল নামাজ হতে পারে সর্বোত্তম সমাধান।
সালাতুল হাজত কখন পড়তে হয় এবং সালাতুল হাজত কী?
সালাতুল হাজত বলতেই প্রয়োজনে বা বিশেষ উদ্দেশ্যে নামাজ আদায় করা বুঝায়। আরবি 'হাজত' কথাটির অর্থই হচ্ছে প্রয়োজন। তাই বৈধ যে কোনো প্রয়োজন পূরণের জন্য আল্লাহ তাআলার সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে দুই রাকাআত নফল নামাজ আদায় করাকে সালাতুল হাজত বলে। -ইবনে মাজাহ
হ্যাঁ, যখন কেউ সাহায্য করতে পারে না, তখন মানুষের একমাত্র সাহায্যকারী হলেন মহান আল্লাহ। তিনিই পারেন মানুষকে বিপদ থেকে উদ্ধার করতে। মানুষের বিপদ যত সহজ আর কঠিনই হোক না কেন, তিনিই পারেন মানুষকে তা থেকে রক্ষা করতে। এ ক্ষেত্রে অন্যতম মাধ্যম হলো বিপদ থেকে মুক্তি পেতে নামাজ আদায় করা। এ নামাজ ‘সালাতুল হাজত’ হিসেবে পরিচিত। আল্লাহ তাআলা কুরআনে হাকিমে বলেন-
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا اسْتَعِينُوا بِالصَّبْرِ وَالصَّلَاةِ ۚ إِنَّ اللَّهَ مَعَ الصَّابِرِينَ
‘হে ইমানদারগণ! তোমরা ধৈর্য ও নামাজের মাধ্যমে আল্লাহর কাছে সাহায্য চাও। নিশ্চয়ই আল্লাহ তাআল ধৈর্যশীলদের সাথে আছেন।’ -সুরা বাকারা : আয়াত ১৫৩
এ আয়াতে বিপদে ধৈর্যধারণ করে নামাজের মাধ্যমে আল্লাহ তাআলার কাছে সাহায্য চাওয়ার নির্দেশ প্রদান করেছেন মহান রব্বুল আলামীন।
সালাতুল হাজতের নিয়ম ও সূরা:
সালাতুল হাজত বা বিপদমুক্তির নামাজ আদায়ের জন্য বিশেষ কোনো নিয়ম কিংবা সূরা নির্ধারিত নেই। স্বাভাবিকভাবে অন্যান্য নামাজের মতই ২ রাকাত নফল নামাজ আদায় করতে হবে। সূরা ফাতিহার পরে আপনার সুবিধামত যে কোনো সূরা মিলিয়ে আদায় করতে পারেন এই নামাজ। তবে নামাজ শেষে কিছু আমল রয়েছে যেগুলো পালন করা উচিত। আমরা এখানে সহজভাবে সেগুলো আলোচনা করার চেষ্টা করবো ইনশাআল্লাহ।
সালাতুল হাজত বা প্রয়োজন পূরণের নামাজের রয়েছে বিশেষ গুরুত্ব:
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যে কোনো প্রয়োজন পূরণে নিজেই এ নামাজ পড়তেন এবং সাহাবায়ে কেরামকে এ নামাজ পড়ার নির্দেশ দিয়েছেন। হাদিসে পাকে এ নামাজ পড়ার গুরুত্ব উঠে এসেছে। হযরত হুজাইফা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন,
كَانَ النَّبِىُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِذَا حَزَبَهُ أَمْرٌ صَلَّى
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সামনে যখন গুরুত্বপূর্ণ কোনো প্রয়োজন বা বিষয় (বিপদ-আপদ) চলে আসতো; তখন তিনি সঙ্গে সঙ্গে নামাজে দাঁড়িয়ে যেতেন।’ -আবু দাউদ
নবীজী রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যেভাবে সালাতুল হাজত পড়তেন:
আগেই বলা হয়েছে যে, সালাতুল হাজত আদায়ের জন্য বিশেষ কোনো নিয়ম কিংবা সূরা নির্ধারিত নেই। একইরকমভাবে এই নামাজের জন্য বিশেষ কোনো দিনক্ষণ বা সময়ও নির্ধারণ করে দেয়া হয়নি। অন্যান্য নামাজের মতোই এটি পড়তে হয়। তবে নিষিদ্ধ সময় অর্থাৎ, সূর্যোদয়, সূর্যাস্ত এবং দ্বিপ্রহর ও নামাজ আদায়ের মাকরুহ সময়গুলো এড়িয়ে চললেই হবে। এক হাদিসে এসেছে-
‘রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তির আল্লাহর কাছে বা মানুষের কাছে কোনো প্রয়োজন দেখা দেয়, সে যেন উত্তমরূপে অজু করে দুই রাকাআত নফল নামাজ আদায় করে আল্লাহ তাআলার প্রশংসা করে এবং ও রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের ওপর দরুদ পাঠ করে।’ -তিরমিজি
সালাতুল হাজত আদায়ের নিয়ম:
সালাতুল হাজত আদায়ের ক্ষেত্রে কিছু বিষয় সতর্কতার সাথে লক্ষ্য রাখতে হবে। কারণ, নামাজ ও দরূদ পাঠের বরকত ও ফজিলতে মহান আল্লাহ মানুষের যে কোনো বিপদ দূর করে দিয়ে থাকেন। সে কারণেই বিপদের সময় উত্তমভাবে অজু করে হাজত বা প্রয়োজন পূরণের নিয়তে দুই রাকাআত নফল নামাজ আদায় করা। নামাজ শেষে আল্লাহ তাআলার প্রশংসা এবং রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের ওপর দরুদ পাঠ করে আল্লাহর কাছে নিজ ভাষায় নিতান্ত বিনীতভাবে বৈধ প্রয়োজনের জন্য এ দোয়া করা-
ﻻَ ﺇِﻟَﻪَ ﺇِﻻَّ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﺍﻟْﺤَﻠِﻴﻢُ ﺍﻟْﻜَﺮِﻳﻢُ ﺳُﺒْﺤَﺎﻥَ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﺭَﺏِّ ﺍﻟْﻌَﺮْﺵِ ﺍﻟْﻌَﻈِﻴﻢِ ﺍﻟْﺤَﻤْﺪُ ﻟِﻠَّﻪِ ﺭَﺏِّ ﺍﻟْﻌَﺎﻟَﻤِﻴﻦَ ﺃَﺳْﺄَﻟُﻚَ ﻣُﻮﺟِﺒَﺎﺕِ ﺭَﺣْﻤَﺘِﻚَ ﻭَﻋَﺰَﺍﺋِﻢَ ﻣَﻐْﻔِﺮَﺗِﻚَ ﻭَﺍﻟْﻐَﻨِﻴﻤَﺔَ ﻣِﻦْ ﻛُﻞِّ ﺑِﺮٍّ ﻭَﺍﻟﺴَّﻼَﻣَﺔَ ﻣِﻦْ ﻛُﻞِّ ﺇِﺛْﻢٍ ﻻَ ﺗَﺪَﻉْ ﻟِﻲ ﺫَﻧْﺒًﺎ ﺇِﻻَّ ﻏَﻔَﺮْﺗَﻪُ ﻭَﻻَ ﻫَﻤًّﺎ ﺇِﻻَّ ﻓَﺮَّﺟْﺘَﻪُ ﻭَﻻَ ﺣَﺎﺟَﺔً ﻫِﻲَ ﻟَﻚَ ﺭِﺿًﺎ ﺇِﻻَّ ﻗَﻀَﻴْﺘَﻬَﺎ ﻳَﺎ ﺃَﺭْﺣَﻢَ ﺍﻟﺮَّﺍﺣِﻤِﻴﻦَ
উচ্চারণ : ‘লা- ইলা-হা ইল্লাল্লা-হুল হালি-মুল কারি-ম। সুবহানাল্লা-হি রাব্বিল আরশিল আজি-ম। আলহামদুলিল্লা-হি রাব্বিল আ-লামিন। আসআলুকা মু-ঝিবা-তি রাহমাতিকা ও আযা-য়িমা মাগফিরাতিকা ওয়াল গানি-মাতা মিন কুল্লি বিররি ওয়াস-সালা-মাতা মিন কুল্লি ইছমিন, লা- তাদা’ লি- জাম্বান ইল্লা- গাফারাতাহু ওয়া লা- হাম্মান ইল্লা- ফাররাঝতাহু ওয়া লা- হা-ঝাতান হিয়া লাকা রিদান ইল্লা- ক্বাদাইতাহা ইয়া- আরহামার রা-হিমিন।’
সুতরাং, মুমিন মুসলমানের উচিত, শারীরিক-মানসিক, পারিবারিক-সামাজিকসহ যে কোনো বিপদ-আপদ ও দুঃশ্চিন্তায় মহান আল্লাহর কাছে সালাতুল হাজত আদায় করার পরে আন্তরিক মুহাব্বত এবং ভক্তি বিগলিত হৃদয়ে দরূদ সালাম পাঠ করে এ দোয়ার মাধ্যমে সাহায্য চাওয়া।
সালাতুল হাজত বা বিপদমুক্তির এই নামাজের আগে পরে দরূদ পড়ার বিকল্প নেই। বৈধ পন্থায় বিপদ থেকে রক্ষা পেতে সালাতুল হাজতের ভূমিকা অনন্য।
এ নামাজের শেষ বৈঠকে তাশাহহুদ পাঠ করার পরে সালাম ফিরানোর পূর্বে আশু প্রয়োজনীয় বিষয়টির কথা নিয়তের মধ্যে এনে নিম্নোক্ত সারগর্ভ দো‘আটি পাঠ করা যায়:
اَللَّهُمَّ رَبَّنَا آتِنَا فِي الدُّنْيَا حَسَنَةً وَفِي الْآخِرَةِ حَسَنَةً وَقِنَا عَذَابَ النَّارِ-
উচ্চারণ: আল্লা-হুম্মা রববানা আ-তিনা ফিদ্দুন্ইয়া হাসানাতাঁও ওয়া ফিল আ-খেরাতে হাসানাতাঁও ওয়া ক্বিনা আযা-বান্না-র।
‘হে আল্লাহ! হে আমাদের পালনকর্তা! আপনি আমাদেরকে দুনিয়াতে কল্যান দান করুন ও আখেরাতে কল্যান দান করুন এবং আমাদেরকে জাহান্নামের আযাব হ’তে রক্ষা করুন’।
হযরত আনাস (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম অধিকাংশ সময় এ দো‘আটিই পড়তেন’।
দো‘আটি সিজদায় পড়লে শুধু এটুকু বলা বিধেয়,
اَللَّهُمَّ آتِنَا...
আল্লা-হুম্মা আ-তিনা...।
কেননা, রুকূ-সিজদায় কুরআনী দো‘আ পড়া উচিত নয়।
সালাতুল হাজতের মাধ্যমে বিপদমুক্তির ঘটনা:
সালাতুল হাজত আদায়ের মাধ্যমে বিপদমুক্তির বহু ঘটনা রয়েছে। বলা বাহুল্য, বিপদমুক্তির এটি বহুল পরিক্ষিত অনন্য একটি আমল। এই বিষয়ে হযরত ইবরাহীম আলাইহিস সালাম -এর স্ত্রী হযরত সারা আলাইহাস সালাম -এর ঘটনা স্মরণীয় হয়ে আছে। তিনি অপহৃত হয়ে মিসরের লম্পট সম্রাটের নিকটে নীত হলে অত্যাচারী সম্রাট তার দিকে এগিয়ে যায়, তখন তিনি ওযূ করে সালাতে রত হয়ে আল্লাহর নিকটে আশ্রয় প্রার্থনা করে বলেছিলেন,
اَللَّهُمَّ لاَ تُسَلِّطْ عَلَىَّ هَذَا الْكَافِرَ
‘হে আল্লাহ! এই কাফেরকে আপনি আমার উপরে বিজয়ী করবেন না’।
সঙ্গে সঙ্গে আল্লাহ তাআ'লা তাঁর ডাকে সাড়া দিয়েছিলেন এবং উক্ত অত্যাচারী লম্পট সম্রাটের হাত-পা অবশ হয়ে পড়েছিল। তিন তিনবার ব্যর্থ হয়ে অবশেষে সে হযরত সারা-কে সসম্মানে মুক্তি দেয় এবং বহুমূল্যবান উপঢৌকনাদিসহ তার খিদমতের জন্য হাজেরাকে তার সাথে ইবরাহীমআলাইহিস সালাম -এর নিকট পাঠিয়ে দেয়।
হাজত নামাজের নিয়ত:
নিয়ত আসলে মুখে উচ্চারণ করে বলতে হয় না। মনে মনে নিয়ত করে নিলেই হয়। মনের হাজত পূর্ণ হওয়ার জন্য দুই রাকাত নফল নামাজ আল্লাহর নামে আদায় করতে নিয়ত করলাম...আল্লাহু আকবার...
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে ছোট বড় সকল বিপদাপদে সালাতুল হাজত আদায় করে, দরূদ ও সালাম পাঠ করে বর্ণিত দোয়ার মাধ্যমে সাহায্য প্রার্থনা করার তাওফিক দান করুন। আমিন।
০৫ ই জানুয়ারি, ২০২২ বিকাল ৪:০৬
নতুন নকিব বলেছেন:
আলহামদুলিল্লাহ। জ্বি, সকল বিষয়েই আল্লাহ তাআ'লা সর্বাধিক জ্ঞাত।
আপনার সাথে ইতোপূর্বে কখনো কথা হয়েছে কি না মনে নেই। যাই হোক, এই ব্লগে আপনাকে স্বাগত।
পোস্টে মন্তব্য রেখে যাওয়ায় কৃতজ্ঞতাসহ শুভকামনা জানবেন।
২| ০৫ ই জানুয়ারি, ২০২২ রাত ৮:১১
সোবুজ বলেছেন: বিপদ যদি তকদিরে লিখা থাকে সেখান থেকে আবার মুক্তি পাওয়া ।বিষয়টা তকদিরের সাথে সাংঘর্ষিক হয়ে যায় না? বিপদ পৃথিবীর সকল মানুষের হয় এবং সবাই বিপদ থেকে মুক্ত হয়।কেউ দোয়া পড়ে কেউ দোয়া না পড়ে।
©somewhere in net ltd.
১| ০৫ ই জানুয়ারি, ২০২২ দুপুর ১:৪৬
প্রতিদিন বাংলা বলেছেন: আলহাম্দুলিল্লাহ। আল্লাহ ভালো জানেন