নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আলহামদুলিল্লাহ। যা চাইনি তার চেয়ে বেশি দিয়েছেন প্রিয়তম রব। যা পাইনি তার জন্য আফসোস নেই। সিজদাবনত শুকরিয়া। প্রত্যাশার একটি ঘর এখনও ফাঁকা কি না জানা নেই, তাঁর কাছে নি:শর্ত ক্ষমা আশা করেছিলাম। তিনি দয়া করে যদি দিতেন, শুন্য সেই ঘরটিও পূর্নতা পেত!

নতুন নকিব

যবে উৎপীড়িতের ক্রন্দল-রোল আকাশে বাতাসে ধ্বনিবে না, অত্যাচারীর খড়্গ কৃপাণ ভীম রণ-ভূমে রণিবে না- বিদ্রোহী রন-ক্লান্ত। আমি সেই দিন হব শান্ত।

নতুন নকিব › বিস্তারিত পোস্টঃ

মাতৃভাষা: মহান আল্লাহর অপার দান

২২ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ সকাল ৯:৫৯

মাতৃভাষা: মহান আল্লাহর অপার দান

ছবি অন্তর্জাল থেকে সংগৃহিত।

মহান আল্লাহ তাআলা তাঁর অসীম রহমতে আমাদেরকে ভাষার মতো অনন্য একটি নেয়ামত দান করেছেন। মনের ভাব প্রকাশের জন্য তিনি অঞ্চল ও জাতিভেদে মানুষকে তাদের নিজস্ব মাতৃভাষা দিয়েছেন। এই ভাষাগত বৈচিত্র্য পৃথিবীকে সৌন্দর্য ও সমৃদ্ধিতে ভরিয়ে দিয়েছে। আল্লাহর এই সৃজনশীলতা ও কুদরতের নিদর্শন আমাদের হৃদয়কে প্রশান্তি দেয়, আর তাঁর সামনে সিজদায় অবনত হতে প্রেরণা জোগায়। সুবহানাল্লাহ! ভাষা শুধু মনের ভাব প্রকাশের মাধ্যমই নয়, এটি একটি জাতির সংস্কৃতি, সভ্যতা ও ঐতিহ্যের মৌলিক ভিত্তি। আজ আমরা কুরআন ও হাদিসের আলোকে মাতৃভাষার গুরুত্ব ও তাৎপর্য নিয়ে আলোচনা করব।

কুরআনের আলোকে ভাষার বৈচিত্র্য

মহান আল্লাহ তাআলা কুরআনে ইরশাদ করেন:

وَمِنْ ءَايَٰتِهِۦ خَلْقُ ٱلسَّمَٰوَٰتِ وَٱلْأَرْضِ وَٱخْتِلَٰفُ أَلْسِنَتِكُمْ وَأَلْوَٰنِكُمْ إِنَّ فِى ذَٰلِكَ لَءَايَٰتٍۢ لِّلْعَٰلِمِينَ

"আর তাঁর নিদর্শনসমূহের মধ্যে রয়েছে আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবীর সৃষ্টি এবং তোমাদের ভাষা ও বর্ণের বৈচিত্র্য। নিশ্চয়ই এতে জ্ঞানীদের জন্য নিদর্শন রয়েছে।" -সূরা রূম: ২২

এই আয়াতে আল্লাহ তাআলা ভাষার বৈচিত্র্যকে তাঁর কুদরতের নিদর্শন হিসেবে উল্লেখ করেছেন। মানুষের ভাষা, বর্ণ ও সংস্কৃতির এই বৈচিত্র্য কোনো বিভেদের কারণ নয়; বরং এটি আল্লাহর সৃষ্টির সৌন্দর্য ও মহিমা প্রকাশ করে। এই বৈচিত্র্য আমাদেরকে একে অপরের সাথে পরিচিত হতে, শিখতে এবং সহযোগিতার মাধ্যমে এগিয়ে যেতে সাহায্য করে।

হাদিসের আলোকে ভাষার গুরুত্ব

রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ভাষার শক্তি ও সৌন্দর্যের গুরুত্ব তুলে ধরেছেন। তিনি বলেছেন:

إِنَّ مِنْ بَيَانِ الرَّجُلِ لَسِحْرًا

"নিশ্চয়ই মানুষের বাগ্মিতা (ভাষার সৌন্দর্য) একপ্রকার জাদু।" -সহিহ বুখারি: ৫৭৬৭

এই হাদিস থেকে বোঝা যায়, ভাষা শুধু মনের ভাব প্রকাশের মাধ্যমই নয়, এটি মানুষের হৃদয়কে আকর্ষণ করার এবং সত্যের দিকে আহ্বান করার একটি শক্তিশালী হাতিয়ার। সুন্দর ও মার্জিত ভাষা মানুষের মনে গভীর প্রভাব ফেলে এবং সমাজে ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে পারে।

ইসলামে ভাষার ব্যবহারের নির্দেশনা

ইসলাম ভাষার ব্যবহারে শালীনতা ও সতর্কতা অবলম্বনের নির্দেশ দিয়েছে। কুরআনে আল্লাহ তাআলা বলেন:

وَقُولُوا لِلنَّاسِ حُسْنًا

"তোমরা মানুষের সাথে সুন্দরভাবে কথা বলো।" -সূরা বাকারা: ৮৩

রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন:

مَنْ كَانَ يُؤْمِنُ بِاللَّهِ وَالْيَوْمِ الْآخِرِ فَلْيَقُلْ خَيْرًا أَوْ لِيَصْمُتْ

"যে ব্যক্তি আল্লাহ ও পরকালের প্রতি ঈমান রাখে, সে যেন কল্যাণকর কথা বলে অথবা নীরব থাকে।" -সহিহ বুখারি: ৬০১৮, সহিহ মুসলিম: ৪৭

এই নির্দেশনা থেকে আমরা শিখতে পারি, ভাষার ব্যবহারে আমাদেরকে সর্বদা সতর্ক থাকতে হবে। অপ্রয়োজনীয়, কটু বা আঘাতমূলক কথা বলা থেকে বিরত থাকতে হবে। বরং সুন্দর ও হৃদয়গ্রাহী ভাষায় মানুষের সাথে কথা বলাই ইসলামের শিক্ষা।

মাতৃভাষায় আল্লাহর বাণী প্রচার

আল্লাহ তাআলা প্রত্যেক নবী-রাসূলকে তাদের সম্প্রদায়ের মাতৃভাষায় প্রেরণ করেছেন, যাতে তারা আল্লাহর বাণী সহজে বুঝিয়ে দিতে পারেন। কুরআনে ইরশাদ হয়েছে:

وَمَاۤ اَرْسَلْـنَا مِنْ رَّسُوْلٍ اِلَّا بِلِسَـانِ قَوْمِــهٖ لِـیُـبَیِّنَ لَهُمْ

"আমি যত রাসূল প্রেরণ করেছি, তাদের প্রত্যেককেই প্রেরণ করেছি তাদের নিজ সম্প্রদায়ের ভাষায়, যাতে তারা আমার বাণী তাদের ভালো করে বুঝিয়ে বলতে পারে।" -সূরা ইবরাহীম, ১৪:৪

এই আয়াত থেকে স্পষ্ট যে, মাতৃভাষায় জ্ঞান ও বাণী প্রচার করা আল্লাহর একটি সুন্নত। পবিত্র কুরআন আরবি ভাষায় নাযিল হলেও এর শিক্ষা ও বার্তা সর্বজনীন। আল্লাহ তাআলা বলেন:

اِنَّاۤ اَنْــزَ لْنٰهُ قُــرْءٰنًا عَــرَ بِـیًّا لَّـعَـلَّـكُمْ تَعْــقِلُوْنَ

"(আরব্য পরিবেশে) আরবী ভাষায়ই আমি কোরআন নাযিল করেছি, যেন তোমরা তা বুঝতে পার।" -সূরা ইউসূফ, ১২:২

মানুষ: আল্লাহর সেরা সৃষ্টি

মানুষ আল্লাহর সেরা সৃষ্টি। আল্লাহ তাআলা বলেন:

وَلَقَدْ کَرَّمْنَا بَنِیْۤ اٰدَمَ

"আমি আদমসন্তানকে বিশেষ সম্মান দিয়েছি।" -সূরা বনী ইসরাঈল, ১৭:৭০

মানুষকে আল্লাহ জ্ঞান, বুদ্ধি ও ভাষার মতো অনন্য নেয়ামত দান করেছেন। তিনি বলেন:

اَلرَّحْمٰنُ ۙ﴿۱﴾ عَلَّمَ الْقُرْاٰنَ ؕ ﴿۲﴾ خَلَقَ الْاِنْسَانَ ۙ﴿۳﴾ عَلَّمَهُ الْبَیَانَ ﴿۴﴾

"পরম করুণাময়। শিক্ষা দিয়েছেন কোরআন। মানুষকে সৃষ্টি করেছেন। আর তাকে শিখিয়েছেন মনের ভাব বর্ণনা করতে।" -সূরা রহমান, ৫৫:১-৪

শেষ কথা

ভাষার সৌন্দর্য ও বৈচিত্র্য আল্লাহর কুদরতের অন্যতম নিদর্শন। ইসলাম আমাদেরকে ভাষার সঠিক ব্যবহারের মাধ্যমে সমাজে শান্তি, সম্প্রীতি ও কল্যাণ প্রতিষ্ঠার নির্দেশ দিয়েছে। আমাদের উচিত মাতৃভাষাকে সম্মান করা, এর সৌন্দর্যকে কাজে লাগিয়ে মানুষকে সত্যের দিকে আহ্বান করা এবং আল্লাহর সৃষ্টির এই নিদর্শনকে যথাযথভাবে মূল্যায়ন করা। আল্লাহ আমাদেরকে ভাষার সদ্ব্যবহারের তৌফিক দান করুন। আমিন।

মন্তব্য ৪ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ২২ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ সকাল ১১:০৭

সাড়ে চুয়াত্তর বলেছেন: জুমার খুদবা শুধু বাংলায় দিলে চলবে কি না জানাবেন? যদি না চলে দয়া করে কারণটা বিশ্লেষণ করবেন দলিল সহ। আমি যেটা পেয়েছি যে আরবিতে অবশ্যই খুদবা দিতে হবে, সাথে বাংলায়ও দেয়া যাবে। কিন্তু আমার কাছে মনে হয়েছে যে এটা মুলত আরবের লোকেরা বলছেন কারণ আরবি ভাষার প্রতি তাদের একটা বিশেষ টান আছে। এই অঞ্চলের অনেক আলেমও হয়তো আরবিকে প্রাধান্য দেয়ার জন্য বলছেন। আমার ব্যক্তিগত ভাবনা হল জুমার খুদবা শুধু মাতৃভাষাতেই দেয়া উচিত যেন সবাই বুঝতে পারে। খুদবা মানুষে না বুঝলে কী লাভ। আর খুদবা তো কোরআনের আয়াত না যে আরবিতেই দিতে হবে। হয়তো এই ব্যাপারে মতভেদ আছে। আপনার জানা থাকলে দয়া করে জানাবেন।

মাতৃভাষা নিয়ে সুন্দর পোস্টের জন্য ধন্যবাদ আপনাকে।

২২ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ সকাল ১১:৫৫

নতুন নকিব বলেছেন:



খুতবাহ আরবী ভাষায় হবে, না কি মাতৃভাষায় হবে - এটি বর্তমানে বহুল আলোচিত একটি বিষয়। মূলতঃ আরবী ভাষায় খুতবাহ দেয়া যে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এবং সাহাবায়ে কেরামের সুন্নত, এই বিষয়ে কারো দ্বিমত নেই। অর্থাৎ, আরবিতে খুতবাহ দেওয়া যে সহিহ এবং এতে যে বিদাআতের কিছু নেই, এ বিষয়ে সকলেই একমত।

তবে মাতৃভাষায় খুতবাহ দেয়া যাবে কি না, মতানৈক্য রয়েছে এই বিষয়টিতে।

যারা মাতৃভাষায় খুতবা দেয়ার বৈধতার দাবি করেন এবং জোরপূর্বক এই বিষয়টি সকলের উপরে চাপিয়ে দিতে চান, তাদের উদ্দেশ্যে একটি সমস্যার উল্লেখ করছি। তাহল, মনে করুন, একটি মসজিদে জুমআ’র দিন খুতবার সময় কিছু ইংরেজি ভাষাভাষী, কিছু উর্দূ ভাষাভাষী, কিছু ফারসী ভাষাভাষী, কিছু আরবী ভাষাভাষী এবং কয়েকজন বাংলা ভাষাভাষী মুসল্লি উপস্থিত রয়েছেন। এমতাবস্থায় খতীব সাহেব শ্রোতাদের উদ্দেশ্যে কাদের মাতৃভাষায় খুতবা পেশ করবেন? আল্লাহ তাআলা সবাইকে সহীহ বুঝ দান করুন ।

মূলত আরবী ছাড়া অন্য কোনো ভাষায় খুতবা প্রদান করা বিদআত ও মাকরূহে তাহরীমি। কারণ তা রাসূলুল্লাহ (সা.), সাহাবায়ে কেরাম, তাবেঈন, তাবে তাবেঈন এবং গোটা মুসলিম উম্মাহর সর্বযুগে সর্বসম্মত আমলের (সাবীলুলমুমিনীন - মুমিনদের পথ) পরিপন্থী। উপমহাদেশের বিখ্যাত ফকীহ ও মুহাদ্দিস শাহ ওয়ালিউল্লাহ মুহাদ্দিসে দেহলবী (রহ.) তাঁর রচিত মুয়াত্তায়ে মালেকের ব্যাখ্যাগ্রন্থ মুসাফফায় উল্লেখ করেনঃ

لما لا حظنا خطبة النبى صلى الله عليه وسلم وخلفائه رضى الله عنهم وهلم جرا فنجد فيها وجوذ اشياء، منها الحمد والشهادتان والصلاة على النبى صلى الله عليه وسلم والامر بالتقوى وتلاوة آية والدعاء للسملمين والمسلمات وكون الخطبة عربية

অর্থ: রাসূলুল্লাহ (সা.), খুলাফায়ে রাশেদীন, তাবেঈন, তাবেতাবেঈন এবং পরবর্তী যুগের ফুকাহায়ে কেরাম ও উলামায়ে দ্বীনের খুতবাসমূহ লক্ষ করলে দেখা যায় যে তাঁদের খুতবায় নিম্মের বিষয়গুলো ছিল। যথা: আল্লাহ তাআলার হামদ, শাহাদাতাইন (অর্থাৎ, তাওহীদ ও রিসালাতের সাক্ষ্য প্রদান করা) রাসূল (সা.)-এর প্রতি দরূদ, তাকওয়ার আদেশ, পবিত্র কোরআনের আয়াত তেলাওয়াত, মুসলমানদের জন্য দুআ। তাঁরা সকলেই আরবী ভাষায় খুতবা দিতেন। গোটা মুসলিম বিশ্বের বহু অঞ্চলের ভাষা আরবী নয়, তবুও সর্বত্র আরবী ভাষায়ই খুতবা দেওয়া হতো। -মুসাফফা, ১/১৫৪

বলা হয়ে থাকে যে, ইমাম আবু হানীফা (রহ.) আরবী ছাড়া অন্য ভাষায় খুতবা দেওয়া বৈধ বলেছেন। অথচ ইমাম আবু হানীফা (রহ.)-এর মতে খুতবা অনারবী ভাষায় দেওয়া জায়েয দ্বারা উদ্দেশ্য হল, মাকরূহে তাহরীমির সাথে জায়েয। কারণ, ফিকহে হানাফীর অধিকাংশ কিতাবেই স্পষ্টভাবে উল্লেখ আছে যে, আবু হানীফা (রহ.)-এর মতে অনারবী ভাষায় খুতবা জায়েয দ্বারা উদ্দেশ্য হলো মাকরূহে তাহরীমির সাথে জায়েয। -শামী, ২/১৮৩, বাহরুর রায়েক , ১/ ৫৩৫ , তাতারখানিয়া, ২/৭৪, সিআয়া, ২/১৫৫

অতএব, অনারবী ভাষায় খুতবা প্রদান করার ব্যাপারে ইমাম আবু হানীফা (রহ.)-এর মতটিকে দলিল হিসেবে পেশ করা একেবারেই অযৌক্তিক এবং খেয়ানতও নয় কি!

উল্লেখ্য, খুতবাকে ওয়াজ বা বক্তৃতা মনে করাটাও আরেকটি ভুল। কারণ, ওয়াজ বা বক্তৃতাকে আরবীতে ‘তাযকীর’ বলা হয়। অথচ কোরআন-সুন্নাহ্ য় খুতবাকে ‘যিকর’ বলা হয়েছে। (দেখুন, সূরা জুমআহ, আয়াত – ৯ , বুখারী ,হাদীস-৩০১, মুসলিম, হাদীস-৮৫০, নাসায়ী, হাদীস-১৩৮৬, ইবনে মাযাহ, হাদীস-১০৯২, (فَإِذَا خَرَجَ الإِمَامُ حَضَرَتِ المَلاَئِكَةُ يَسْتَمِعُونَ الذِّكْرَ) তাফসীরে রুহুল মাআনী, ১৩/৭০২, আত-তাফসীরুল কাবীর ৯/৩০আহকামুল কোরআন ৩/৫৯৬তাফসীরে ইবনে কাসীরে ৯/ ৪৫৬)

খুতবা মানে শুধু বক্তৃতা এটি অজ্ঞতাসূচক বক্তব্য। কুরআন ও হাদীসে জুমআর খুতবাকে শুধু বক্তৃতা সাব্যস্ত করা হয়নি। আর আরবীতে বক্তৃতাকে বলা ‘তাযকীর’ খুতবা বলা হয় না।

কুরআনে খুতবাকে জিকির বলা হয়েছে-

يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا إِذَا نُودِيَ لِلصَّلَاةِ مِن يَوْمِ الْجُمُعَةِ فَاسْعَوْا إِلَىٰ ذِكْرِ اللَّهِ وَذَرُوا الْبَيْعَ ۚ ذَٰلِكُمْ خَيْرٌ لَّكُمْ إِن كُنتُمْ تَعْلَمُونَ [٦٢:٩

মুমিনগণ, জুমআর দিনে যখন নামাযের আযান দেয়া হয়, তখন তোমরা আল্লাহর স্মরণের পানে ত্বরা কর এবং বেচাকেনা বন্ধ কর। এটা তোমাদের জন্যে উত্তম যদি তোমরা বুঝ। -সুরা জুমআ-৯

আই আয়াতের মধ্যকার যিকরুল্লাহ দ্বারা প্রায় সকল মুফাসসিরদের মতে খুতবা উদ্দেশ্য। -তাফসিরে রাযি ১/৪৪৬, তাফসিরে রুহুল মাআনি ২৮/১০২, তাফসিরে ইবনে আব্বাস রাঃ

হাদিসেও খুতবাকে যিকির হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে ।

فإذا خرج الإمام حضرت الملائكة يستمعون الذكر

যখন ইমাম খুতবা দিতে বের হন তখন ফেরেশতারা এসে যিকির শুনে অর্থাৎ খুতবা শোনে। -সহীহ বুখারী-১/৩০১, হাদীস নং-৮৮১, সহীহ মুসলিম হাদিস নং-৮৫০, সুনানে আবু দাউদ, হাদীস নং-৩৫১

সুতরাং কুরআন তিলাওয়াত ও জিকির যেমন অন্য ভাষায় দেয়া হয় না। তেমনি খুতবাও অন্য ভাষায় দেয়ার বিধান নেই।

ফুকাহায়ে কেরামও খুতবাকে ওয়াজ বা বক্তৃতা বলেননি বরং খুতবাকে দুই রাকআত নামাযের স্থলাভিষিক্ত বলেছেন। -বাহরুর রায়েক, ২/১০৮

হযরত উমর (রা.)সহ বিভিন্ন সাহাবা থেকেও এরূপ বর্ণিত আছে। যেমন-

عن عمر بن الخطاب قال: كانت الجمعة اربعا فجعلت ركعتين من أجل الخطبة

অর্থ: হযরত উমর (রা.) বলেন, জুমু’আর নামায চার রাক’আত ছিল। এরপর খুতবার কারণে দুই রাক’আত করা হয়েছে। -মুসান্নাফে ইবনে আবি শায়বাহ, হাদীস-৫৩৩১

সুতরাং খুতবাকে ওয়াজ বা বক্তৃতা মনে করা মূর্খতা বৈ কিছু নয়।

অজ্ঞতাসুলভ আরেকটি বক্তব্য হল, একথা বলা যে, রাসূলুল্লাহ (সা.) আরবী ভাষায় খুতবা দেননি, বরং মাতৃভাষায় খুতবা দিয়েছেন। রাসূলুল্লাহ (সা.) ও সাহাবায়ে কেরামের মাতৃভাষা আরবী ছিল, এ জন্য তাঁরা আরবী ভাষায় খুতবা দিতেন।

মূলত যুক্তিটি নামায, তেলাওয়াত, আযান ও ইকামতের ব্যাপারেও পেশ করা যেতে পারে। তাহলে কি ওই সব ইবাদতগুলোও রাসূলুল্লাহ (সা.) মাতৃভাষায় আদায় করেছেন বলে যুক্তি দেখিয়ে অন্যরা নিজেদের মাতৃভাষায় আদায় করলে সহীহ হবে? আল্লাহর কাছে পানাহ চাই; আসলে মূর্খসুলভ এসব যুক্তি ইবাদত নিয়ে খেল-তামাশারই নামান্তর।

আমাদের মনে রাখতে হবে, খুতবা ইসলামের একটি প্রতীক অর্থাৎ, আযান, ইকামাত, নামাজ, তাকবির - এগুলো যেমন ইসলামের প্রতীক, তেমনি খুতবাও ইসলামের একটি প্রতীক। আযান ইকামাত যেমন অন্য ভাষায় দেওয়া যায় না, তেমনি খুতবাও অন্য ভাষায় দেওয়া যাবে না। এজাতীয় যুক্তি চলতে থাকলে আজ খুতবা বাংলায় দেওয়ার দাবী উঠছে কাল নামাজ বাংলায় করার দাবী তোলাও অসম্ভব কিছু নয়। অবশ্য, কোনো কোনো লোক এইসব অবান্তর দাবি ইতোমধ্যে তুলেছেনও।

মূলতঃ যারা এ বিদআতি কাজটি করে যাচ্ছেন, তাদের কাছে এই বিষয়ে রাসুল (সাঃ) থেকে এবং সাহাবায়ে কেরাম থেকে সহীহ হাদীসের দলীল অন্বেষন করুন। তাহলেই দেখবেন, দলীল বলতে তাদের কাছে কিছুই নেই বরং তাদের মনের খাহেশাতই হচ্ছে তাদের দলীল।

আল্লাহ তাআ'লা আমাদেরকে দ্বীনের সহিহ বুঝ দান করুন।

২| ২২ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ সকাল ১১:২৩

রাজীব নুর বলেছেন: শুধু ভাষা কেন? সব কিছুই আল্লাহর দান। কিডনী, চোখ, হাত পা ইত্যাদি।

২২ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ সকাল ১১:৫৯

নতুন নকিব বলেছেন:



অবশ্যই কিডনী, চোখ, হাত পা সবকিছু আল্লাহর দান। ভাষার সাথে এসবের কথা কেন আসছে? আরও তো কত কি আছে। পাহাড়, নদী, সাগর, চন্দ্র, সূর্যসহ এমন হাজারও কিছু আল্লাহ তাআ'লা আমাদের কল্যানের জন্য সৃষ্টি করেছেন - সেগুলোর কথা বলছেন না কেন?

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.