![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
যবে উৎপীড়িতের ক্রন্দল-রোল আকাশে বাতাসে ধ্বনিবে না, অত্যাচারীর খড়্গ কৃপাণ ভীম রণ-ভূমে রণিবে না- বিদ্রোহী রন-ক্লান্ত। আমি সেই দিন হব শান্ত।
রমজানের স্মৃতিময় আবেশ: এক পরম অনুভূতি ছবিঃ অন্তর্জাল থেকে সংগৃহিত।
রমজান যতই নিকটবর্তী হচ্ছে, ততই হৃদয়ের গহীনে এক অনির্বচনীয় আবেগের সঞ্চার ঘটছে। রহমতের ছোঁয়া যেন ধীরে ধীরে আমাদের মাঝে ছড়িয়ে পড়ছে, দেহ-মন এক প্রশান্ত স্রোতে ভাসিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। বছর ঘুরে আবারও সেই পবিত্র মাসের পদধ্বনি শোনা যাচ্ছে, যে মাসে আত্মশুদ্ধির আলোয় উদ্ভাসিত হয় প্রতিটি হৃদয়। সেই মধুর স্মৃতিগুলো একে একে মন-প্রাণ জুড়ে ভেসে উঠছে—সেই ভোরের শেষ প্রহরে মায়ের স্নেহভরা ডাক, সুস্বাদু সাহরির আয়োজন, ছোটবেলার রোজার প্রথম অনুভূতি, ইফতারের সেই প্রতীক্ষার প্রহর—সবকিছু যেন স্মৃতির আয়নায় স্পষ্ট হয়ে উঠছে।
সাহরির স্নিগ্ধ মুহূর্তঃ
সাহরি জাগরণের সেই মুহূর্তগুলো কত যে স্নিগ্ধ ছিল! অন্ধকার রাতে ঘুমভাঙা চোখে পরিবারের সবাই একসঙ্গে বসে খাওয়ার দৃশ্য, বাবা-মায়ের স্নেহমাখা আহ্বান, এক অদ্ভুত প্রশান্তির সুর এনে দিত। রোজার প্রথম কয়েকদিন হয়তো একটু কষ্ট হতো, কিন্তু সময়ের পরিক্রমায় তা এক অভ্যাসে পরিণত হতো। সাহরির সময়ের সেই নিস্তব্ধতা, শেষ রাতের দোয়া ও আল্লাহর রহমতের আশায় হৃদয় ভরে উঠত। এই মুহূর্তগুলো শুধু ক্ষুধা নিবারণের নয়, বরং আল্লাহর নৈকট্য লাভের এক অপার সুযোগ।
ইফতারের অপেক্ষা: এক অপার্থিব আনন্দঃ
আর সেই ইফতারির মুহূর্ত! ক্ষুধার্ত, তৃষ্ণার্ত দেহ-মনে যখন মাগরিবের আজান ধ্বনিত হতো, তখন যেন আকাশ-বাতাসে এক প্রশান্তির বাতাস বয়ে যেত। খেজুরের মিষ্টতা, ঠান্ডা শরবতের প্রশান্তি, মা-বাবার হাসিমুখ, ভাই-বোনদের চঞ্চলতা—সব মিলিয়ে যেন এক অপার সৌন্দর্যের মিলনমেলা। ইফতারের এই মুহূর্তগুলো শুধু খাবারের নয়, বরং পরিবার ও প্রিয়জনের সাথে একত্রিত হওয়ার, আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করার এবং ক্ষুধার্তদের সাহায্য করার এক অনন্য সুযোগ।
রমজানের রাত: আত্মশুদ্ধির সময়ঃ
রমজানের রাতগুলোও এক অন্যরকম অনুভূতি নিয়ে আসে। তারাবির নামাজ, কুরআন তিলাওয়াত, শেষ দশকের লাইলাতুল কদরের সন্ধান—সবকিছুই অন্তরের আত্মশুদ্ধির এক অনন্য সুযোগ। ত্যাগ, ধৈর্য, সংযম ও ইবাদতের মাধ্যমে এই মাস আমাদের আত্মাকে পরিশুদ্ধ করে। রমজানের রাতগুলো যেন আল্লাহর রহমতের বারিধারায় সিক্ত হয়, আর আমরা তাঁর নৈকট্য লাভের চেষ্টায় মগ্ন হই।
রমজানের শিক্ষা: আত্মশুদ্ধি ও মানবতাঃ
রমজান শুধু উপবাসের মাস নয়, এটি আত্মশুদ্ধি ও মানবতার মাস। এই মাসে আমরা শিখি ধৈর্য, সহানুভূতি ও ত্যাগের মর্ম। ক্ষুধা ও তৃষ্ণার মাধ্যমে আমরা গরিব-দুঃখীদের কষ্ট অনুভব করি এবং তাদের সাহায্য করার প্রেরণা পাই। রমজান আমাদেরকে শেখায় কীভাবে নিজের নফসকে নিয়ন্ত্রণ করতে হয়, কীভাবে অহংকার ও লোভ থেকে মুক্ত হতে হয় এবং কীভাবে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করতে হয়।
রমজানের ফজিলত: আল্লাহর নৈকট্য লাভের সুযোগ
রমজান মাসে কুরআন নাযিল হয়েছে, যা মানবজাতির জন্য হিদায়াত ও রহমত। আল্লাহ তাআলা বলেন:
شَهْرُ رَمَضَانَ الَّذِي أُنْزِلَ فِيهِ الْقُرْآنُ هُدًى لِلنَّاسِ وَبَيِّنَاتٍ مِنَ الْهُدَىٰ وَالْفُرْقَانِ
"রমজান মাস, যাতে কুরআন নাযিল করা হয়েছে, যা মানুষের জন্য হিদায়াত এবং সত্য পথের সুস্পষ্ট নিদর্শন ও সত্য-মিথ্যার পার্থক্যকারী।" -সূরা আল-বাকারা: ১৮৫
এই মাসে কুরআন তিলাওয়াত, তাফসির অধ্যায়ন ও আল্লাহর জিকিরের মাধ্যমে আমরা আল্লাহর নৈকট্য লাভের চেষ্টা করি। রমজানের শেষ দশকের লাইলাতুল কদর হলো হাজার মাসের চেয়েও উত্তম রাত, যা আল্লাহ আমাদের জন্য বিশেষভাবে দান করেছেন।
রমজানের আগমন: রহমতের বার্তাঃ
রমজান মাসের আগমন বার্তা নিয়ে আসে আল্লাহর অসীম রহমতের। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন:
إِذَا دَخَلَ رَمَضَانُ فُتِّحَتْ أَبْوَابُ الْجَنَّةِ وَغُلِّقَتْ أَبْوَابُ النَّارِ وَصُفِّدَتِ الشَّيَاطِينُ
"যখন রমজান মাস আসে, তখন জান্নাতের দরজাগুলো খুলে দেওয়া হয়, জাহান্নামের দরজাগুলো বন্ধ করে দেওয়া হয় এবং শয়তানদের শৃঙ্খলিত করা হয়।" -সহিহ বুখারি: ১৮৯৯
এই হাদিস থেকে বোঝা যায়, রমজান মাসে আল্লাহ তাঁর বান্দাদের জন্য রহমতের দরজা উন্মুক্ত করে দেন। এই মাসে ইবাদতের প্রতিদান বহুগুণে বৃদ্ধি করা হয়, গুনাহ মাফ করা হয় এবং বান্দাদেরকে আল্লাহর নৈকট্য লাভের সুযোগ দেওয়া হয়।
শেষ কথা: রমজানের অপেক্ষায় হৃদয়ঃ
রমজান আসে বারবার, তবুও তার আগমন প্রতিবারই নতুন আবেগ ও উচ্ছ্বাস নিয়ে আসে। এই মাস আমাদেরকে আল্লাহর রহমত, মাগফিরাত ও নাজাতের দিকে এগিয়ে নিয়ে যায়। সাহরি ও ইফতারের স্মৃতিগুলো আমাদের হৃদয়ে গভীর ছাপ রেখে যায়, আর আমরা অপেক্ষায় থাকি আবারও সেই পবিত্র মুহূর্তগুলোর জন্য। আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে এই রমজানের পূর্ণ ফজিলত অর্জনের তৌফিক দান করুন এবং আমাদের হৃদয়কে তাঁর রহমত ও মাগফিরাত দ্বারা পরিপূর্ণ করুন। আমিন।
رَبَّنَا تَقَبَّلْ مِنَّا إِنَّكَ أَنْتَ السَّمِيعُ الْعَلِيمُ
"হে আমাদের রব! আমাদের থেকে কবুল করুন, নিশ্চয়ই আপনি সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞানী।" -সূরা আল-বাকারা: ১২৭
আসন্ন রমজানের প্রস্তুতিতে আমরা যেন আরও বেশি একাগ্র হই, ইবাদতে মনোনিবেশ করি, এবং এই মাসের প্রতিটি মুহূর্তকে কাজে লাগাই। আল্লাহ আমাদের সবাইকে রমজানের রহমত, মাগফিরাত ও নাজাতের সৌভাগ্য দান করুন। আমিন।
২| ২৩ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ বিকাল ৪:৩১
কাজী আবু ইউসুফ (রিফাত) বলেছেন: মহান রাব্বুল আলামীন আমাদেরকে রমজানের ইবাদত করার এবং নিজেকে পরিশুদ্ধ করার তৌফিক দান করুন, আমীন।
৩| ২৩ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ সন্ধ্যা ৭:৪৮
সাড়ে চুয়াত্তর বলেছেন: আপনার স্মৃতিরোমন্থন ভালো লাগলো। রমজান মাস হল নিজেকে সংশোধনের একটা সুযোগ। আল্লাহতায়ালার দেয়া এই সুযোগের সদ্ব্যবহার আমাদের করা উচিত।
রমজান মাসে সবচেয়ে ভালো লাগে আগে আগে অফিস ছুটি হলে বাসায় গিয়ে আরাম করা। ইফতারের জন্য অপেক্ষা করার মধ্যেও একটা শান্তি আছে।
©somewhere in net ltd.
১|
২৩ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ বিকাল ৪:১৩
সৈয়দ মশিউর রহমান বলেছেন: যারা রোজা করে নিয়ম মেনে চলে তাদের কাছে রমজানের স্মৃতিময় আবেশ সে এক অন্যরকম পরম অনুভূতি।