![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
যবে উৎপীড়িতের ক্রন্দল-রোল আকাশে বাতাসে ধ্বনিবে না, অত্যাচারীর খড়্গ কৃপাণ ভীম রণ-ভূমে রণিবে না- বিদ্রোহী রন-ক্লান্ত। আমি সেই দিন হব শান্ত।
ইসলামের দৃষ্টিতে শুদ্ধ ভাষা ব্যবহারের গুরুত্ব ছবি অন্তর্জাল থেকে সংগৃহিত।
ভূমিকা
ভাষা মানুষের আত্মিক ও সামাজিক পরিচয়ের অন্যতম মাধ্যম। ইসলামে ভাষার শুদ্ধতা ও মার্জিত ব্যবহারকে ঈমানের অপরিহার্য অংশ হিসেবে বিবেচনা করা হয়েছে। পবিত্র কুরআন ও হাদিসে বারংবার সত্যবাদিতা, নম্রতা, ও কল্যাণকর কথনের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, পক্ষান্তরে মিথ্যা, গীবত, অশ্লীলতা ও কঠোর ভাষাকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। নবী মুহাম্মদ (সা.) নিজে কখনও অশুদ্ধ বা অমার্জিত ভাষায় কথা বলেননি, বরং তাঁর সমগ্র জীবন ও বাণী মানবজাতির জন্য ভাষাগত পবিত্রতার সর্বোচ্চ আদর্শ স্থাপন করেছে।
বর্তমান পৃথিবীতে কয়েক হাজার ভাষার অস্তিত্ব রয়েছে। অঞ্চলভেদে মানুষের চেহারায় যেমন ভিন্নতা আছে, আছে ভাষারও ভিন্নতা। এসবই আল্লাহর সৃষ্টিবৈচিত্র্যের অংশ। এ মর্মে আল্লাহ ইরশাদ করেছেন:
وَمِنْ آيَاتِهِ خَلْقُ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ وَاخْتِلَافُ أَلْسِنَتِكُمْ وَأَلْوَانِكُمْ ۚ إِنَّ فِي ذَٰلِكَ لَآيَاتٍ لِّلْعَالِمِينَ
তাঁর আর ও এক নিদর্শন হচ্ছে নভোমন্ডল ও ভূমন্ডলের সৃজন এবং তোমাদের ভাষা ও বর্ণের বৈচিত্র। নিশ্চয় এতে জ্ঞানীদের জন্যে নিদর্শনাবলী রয়েছে। -সুরা রূম:২২
ভাষা আল্লাহর নিয়ামত
ভাষা আমাদের জন্য শুধু গুরুত্বপূর্ণই নয়, এটা আল্লাহর পক্ষ থেকে পাওয়া বিরাট নিয়ামতও বটে। এটা এতবড় এক নিয়ামত যে, আল্লাহ তাআলা নিজে ভাষার শিক্ষক। তিনি নিজ অনুগ্রহে আমাদেরকে ভাষা দান করেছেন। সূরা বালাদে আল্লাহ তাআলা বান্দার প্রতি তার দানের কথা বলতে গিয়ে বলেছেন:
وَلِسَانًا وَشَفَتَيْنِ
(আর আমি কি তাকে দেইনি) জিহবা ও ওষ্ঠদ্বয়? -সুরা বালাদ: ০৯
অর্থাৎ, তিনি তোমাদেরকে দিয়েছেন জিহ্বা এবং ঠোঁট, যার মাধ্যমে তোমরা কথা বলতে পারো, মনের ভাবকে প্রকাশ করতে পারো, এটা আল্লাহ তাআলার অনুগ্রহসমূহের মধ্য থেকে একটা অনুগ্রহ।
মহানবী (সা.) বিশুদ্ধ ভাষায় কথা বলতেন:
প্রিয় নবিজির জন্মের পর তাঁকে দুধপান করাতে হালিমা সাদিয়ার কাছে তায়েফে পাঠানো হয়। এটা সে যুগে আরবের সাধারণ প্রথা ছিল, কোনো বাচ্চা জন্মগ্রহণ করার পর তার শারীরিক গঠন ও ভাষার শুদ্ধতার জন্য তাকে গ্রামে পাঠিয়ে দেয়া হতো। এতে বাচ্চার বেড়ে ওঠা এবং বিশুদ্ধ বাচনভঙ্গির পথ মসৃণ হতো।
হযরত আবু বকর (রাযি.) একদিন রাসূল (সা.)-কে বলেন, আপনি খুবই বিশুদ্ধভাষী। প্রতিউত্তরে নবিজি বলেন, আমি কুরাইশ বংশের আর আমি দুধপান করেছি সাআদ গোত্রে। -সীরাতে মুস্তাফা ৬৯-৭০; বেদায়া নেহায়া ২/২৩৩; আসাহহুস সিয়ার: ০৬
পরবর্তীতে রাসূল (সা.)-এর দাওয়াতী জীবনে ভাষার শুদ্ধতা ও বাচনভঙ্গির যথেষ্ট প্রভাব ছিল। এক হাদিসে প্রিয়নবি ইরশাদ করেন, ‘আমাকে দান করা হয়েছে সর্বমর্মী বচন।’ -সহীহ মুসলিম : ৫২৩
সুতরাং একথা নির্দ্বিধায় বলা যায়, বিশুদ্ধ ও সুস্পষ্ট ভাষায় কথা বলা প্রিয় নবিজির সুন্নাত। রাসূল (সা.) সাহাবায়ে কেরামকে শুদ্ধ ও মার্জিত ভাষায় কথা বলার প্রতি গুরুত্বারোপ করেছেন।
রাসুলুলাহ (সা.) ভাষার বিশুদ্ধতা ও উপযুক্ত শব্দচয়ন ইত্যাদির প্রতি তাগিদ প্রদান করেছেন। একবার কোনো এক সাহাবি রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর কাছে এসে সালাম দিয়ে বললেন, ‘আ-আলিজু?’ আরবি ভাষায় এ শব্দের ব্যবহার ‘প্রবেশ’ অর্থে প্রচলিত থাকলেও অনুমতি প্রার্থনার ক্ষেত্রে তা প্রমিত শব্দ নয়। প্রমিত শব্দ হচ্ছে, ‘আ-আদখুলু?’ রাসুলুল্লাহ (সা.) বললেন, তুমি ‘আ-আদখুলু?’ বোলো। -সুনানে আবুদাউদ : ৫১৩৪; সুনানে নাসাঈ : ৫০১৪; মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা : ২৬১৮৫
এ হাদিসে দেখা যাচ্ছে, রাসূল (সা.) সাহাবীর ভাষা সংশোধন করে দিয়েছেন। কারণ ঘরে প্রবেশ করতে যে মার্জিত ও বিশুদ্ধ ভাষায় অনুমতি চাওয়ার দরকার ছিল তিনি তা করেননি। হাদিসটির মাধ্যমে ইসলামে বিশুদ্ধ ভাষায় কথা বলার গুরুত্ব ফুটে ওঠে। রাসূল (সা.) নিজে বিশুদ্ধ ও সুস্পষ্ট ভাষায় কথা বলেছেন। সাহাবায়ে কেরামকে বিশুদ্ধ ভাষায় কথা বলতে উদ্বুদ্ধ করেছেন। তাঁরাও নবিজির এ আদর্শ গ্রহণ করেছেন। ইমাম বুখারি (রহ.) বর্ণনা করেন, আবদুল্লাহ বিন ওমর (রাযি.) তাঁর সন্তানকে অশুদ্ধ ভাষায় কথা বলার কারণে প্রহার করতেন। -আল-আদাবুল মুফরাদ : ৮৮০
মূসা বিন তলহা বর্ণনা করেন, আমি আয়েশা (রাযি.) থেকে বিশুদ্ধভাষী আর কাউকে দেখিনি। -জামে তিরমিযী ২/২২৭
আল্লামা ইবনে তাইমিয়া (রহ.) বলেন, পূর্বসূরীরা ভাষায় ভুল করলে তাদের সন্তানদের শাসন করতেন। -মাজমূউল ফাতাওয়া ৩২/২৫২
ইমাম যুহরী (রহ.) বলেন, আমর মতে বিশুদ্ধ ভাষার চেয়ে বড় আভিজাত্যের বস্তু আর কিছু নেই। -হিলয়াতুল আউলিয়া ৩/৩৬৪
একইরকমভাবে রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন,
لَا تَقُولُوا لِلْعِشَاءِ الْعَتَمَةَ، وَقُولُوا الْعِشَاءَ، وَلَا تَقُولُوا لِلْعِنَبِ الْكَرْمَ، وَقُولُوا الْعِنَبَ
তোমরা এশার নামাজকে আতামা বলবে না, এশা বলবে। আঙুরকে কারাম বলবে না, ইনাব বলবে। এভাবে তিনি মুসলিম সমাজের ভাষাগত সংশোধনে সঠিক শব্দ প্রয়োগের নির্দেশনা দিয়েছেন। -সুনানে আবি দাউদ, হাদিস : ৫১৭৭
এই নিবন্ধে কুরআন-সুন্নাহর দলিলের আলোকে আমরা শুদ্ধ ভাষার গুরুত্ব বিশদভাবে উপস্থাপন করতে চেষ্টা করবো ইনশাআল্লাহ।
১. কুরআনের নির্দেশনা: সত্য ও সুন্দরের প্রতিশ্রুতি
ইসলামে ভাষার শুদ্ধতার প্রথম ও প্রধান উৎস হলো পবিত্র কুরআন। আল্লাহ তাআলা মানবজাতিকে ভাষার মাধ্যমে শ্রেষ্ঠত্ব দান করেছেন। পবিত্র কুরআনে ইরশাদ হয়েছে:
عَلَّمَهُ الْبَيَانَ
তিনিই তাকে বায়ান তথা ভাবপ্রকাশ শিক্ষা দিয়েছেন। -সূরা আর-রহমান, ৫৫:৪
এর যথাযথ ব্যবহারের জন্য তিনি নির্দেশ দিয়েছেন:
وَقُولُوا لِلنَّاسِ حُسْنًا
“মানুষের সাথে উত্তম কথা বলো।” -সূরা আল-বাকারা, ২:৮৩
এ আয়াতের ব্যাখ্যায় তাফসিরবিদ ইবনে কাসির (রহ.) বলেন, “উত্তম কথা” বলতে সত্য, নম্রতা ও সম্মানজনক ভাষাকে বোঝানো হয়েছে। এমনকি অমুসলিমদের সাথেও ইসলাম শিষ্টাচার বজায় রাখতে বলে:
وَلَا تُجَادِلُوا أَهْلَ الْكِتَابِ إِلَّا بِالَّتِي هِيَ أَحْسَنُ
“আহলে কিতাবদের সাথে বিতর্ক করো না, তবে উত্তম পন্থায়।” -সূরা আল-আনকাবুত, ২৯:৪৬
পিতামাতার প্রতি শ্রদ্ধা প্রকাশের ক্ষেত্রে কুরআন অত্যন্ত সূক্ষ্ম নির্দেশনা দিয়েছে:
فَلَا تَقُلْ لَّهُمَآ أُفٍّ وَلَا تَنْهَرْهُمَا
“তাদের (মাতা-পিতা) সামনে ‘উফ’ শব্দটি পর্যন্ত বলো না এবং তাদেরকে ধমক দিও না।” -সূরা আল-ইসরা, ১৭:২৩
এখানে একটি ক্ষুদ্র অসন্তোষ প্রকাশক শব্দও নিষিদ্ধ করা হয়েছে, যা ভাষার পবিত্রতা রক্ষায় ইসলামের গভীর দৃষ্টিভঙ্গি তুলে ধরে।
২. নবীজির ভাষাগত শ্রেষ্ঠত্ব: আদর্শ ও অলৌকিকতা
নবী মুহাম্মদ (সা.) ছিলেন ভাষার সর্বোচ্চ দক্ষতার অধিকারী। তিনি ঘোষণা করেছেন:
أُعْطِيتُ جَوَامِعَ الْكَلِمِ
“আমাকে সংক্ষিপ্ত অথচ ব্যাপক অর্থবোধক বাক্য দেওয়া হয়েছে।” -সহিহ বুখারি, হাদিস ৭২৮২
তাঁর ভাষায় কোনো অশুদ্ধি, অমার্জিত শব্দ বা ব্যাকরণগত ত্রুটি ছিল না। অলৌকিকভাবে তিনি এমন ভাষায় কুরআন প্রচার করেছেন যা আরবের শ্রেষ্ঠ কবি ও ভাষাবিদদের মাথা নত করেছিল। সাহাবি আবু হুরায়রা (রা.) বর্ণনা করেন:
كَانَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَفْصَحَ النَّاسِ لِسَانًا
“রাসুলুল্লাহ (সা.) ছিলেন মানুষের মধ্যে সর্বাধিক স্পষ্ট ও প্রাঞ্জলভাষী।” -সুনানে তিরমিজি, হাদিস ৩৬৪৩
নবীজি (সা.) কখনও কাউকে গালি দেননি, এমনকি শত্রুর প্রতিও তিনি কঠোর শব্দ ব্যবহার করতেন না। মক্কা বিজয়ের দিন তিনি কুরাইশ নেতাদের বলেছিলেন:
اذْهَبُوا فَأَنْتُمُ الطُّلَقَاءُ
“যাও, তোমরা সবাই মুক্ত।” -সীরাতু ইবনে হিশাম
৩. হাদিসের শিক্ষা: জবানের জবাবদিহিতা
রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন:
مَنْ كَانَ يُؤْمِنُ بِاللَّهِ وَالْيَوْمِ الْآخِرِ فَلْيَقُلْ خَيْرًا أَوْ لِيَصْمُتْ
“যে আল্লাহ ও পরকালে বিশ্বাস করে, সে উত্তম কথা বলুক অথবা চুপ থাকুক।” -সহিহ বুখারি, হাদিস ৬৪৭৫
এই হাদিসে উত্তম কথনকে ঈমানের শর্ত হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। অন্যদিকে, তিনি সতর্ক করেছেন:
إِنَّ الْعَبْدَ لَيَتَكَلَّمُ بِالْكَلِمَةِ مِنْ سَخَطِ اللَّهِ مَا يَلْقِي لَهَا بَالًا، يَهْوِي بِهَا فِي جَهَنَّمَ
“বান্দা আল্লাহর অসন্তুষ্টিজনক একটি কথা বলে ফেলে, অথচ সে তা গুরুত্ব দেয় না; ফলে সে জাহান্নামে নিক্ষিপ্ত হয়।” -সহিহ বুখারি, হাদিস ৬৪৭৭
এমনকি হাসি-ঠাট্টার ছলেও মিথ্যা বলা নিষিদ্ধ। নবীজি (সা.) বলেছেন:
وَيْلٌ لِلَّذِي يُحَدِّثُ فَيَكْذِبُ لِيُضْحِكَ بِهِ الْقَوْمَ، وَيْلٌ لَهُ!
“ধ্বংস সেই ব্যক্তির জন্য যে মানুষকে হাসানোর জন্য মিথ্যা কথা বলে! ধ্বংস তার জন্য!” -সুনানে আবু দাউদ, হাদিস ৪৯৯০
৪. গীবত ও মিথ্যা: সমাজের জন্য বিষ
ইসলামে গীবত (পরনিন্দা)কে মৃত ভাইয়ের গোশত খাওয়ার সাথে তুলনা করা হয়েছে:
وَلَا يَغْتَبْ بَعْضُكُمْ بَعْضًا، أَيُحِبُّ أَحَدُكُمْ أَنْ يَأْكُلَ لَحْمَ أَخِيهِ مَيْتًا فَكَرِهْتُمُوهُ
“তোমরা একে অপরের গীবত করো না। তোমাদের কেউ কি তার মৃত ভাইয়ের গোশত খেতে পছন্দ করবে? বরং তোমরা তা ঘৃণাই করো।” -সূরা আল-হুজুরাত, ৪৯:১২
মিথ্যাকে ইসলাম কবিরা গুনাহ হিসেবে চিহ্নিত করেছে। রাসুল (সা.) বলেছেন:
إِنَّ الْكَذِبَ يَهْدِي إِلَى الْفُجُورِ، وَإِنَّ الْفُجُورَ يَهْدِي إِلَى النَّارِ
“মিথ্যা পাপের দিকে পরিচালিত করে, আর পাপ জাহান্নামের দিকে নিয়ে যায়।” -সহিহ মুসলিম, হাদিস ২৬০৭
৫. উত্তম ভাষার সুফল: আত্মিক ও সামাজিক কল্যাণ
শুদ্ধ ভাষা ব্যবহারের মাধ্যমে ব্যক্তি আত্মিক পরিশুদ্ধি অর্জন করে। নবীজি (সা.) বলেছেন:
الكَلِمَةُ الطَّيِّبَةُ صَدَقَةٌ
“মিষ্টি কথা বলা একটি সাদাকাহ (দান)।” -সহিহ মুসলিম, হাদিস ১০০৯
এছাড়া, নম্র ভাষা সামাজিক সম্প্রীতি ও শান্তি প্রতিষ্ঠা করে। রাসুল (সা.) শিশুদের সাথে কোমল ভাষায় কথা বলতেন, অসুস্থদের সান্ত্বনা দিতেন এবং দাসদেরও সম্মান করতেন। তিনি বলতেন:
إِنَّ الرِّفْقَ لَا يَكُونُ فِي شَيْءٍ إِلَّا زَانَهُ
“নম্রতা কোনো বিষয়ে যুক্ত হলে তা তার সৌন্দর্য বাড়িয়ে দেয়।” -সহিহ মুসলিম, হাদিস ২৫৯৪
৬. আধুনিক যুগে ভাষার অপব্যবহার: চ্যালেঞ্জ ও সমাধান
বর্তমানে সামাজিক মাধ্যম, মিম, ও চ্যাটিং প্ল্যাটফর্মে ভাষার অপব্যবহার উদ্বেগজনক। ইসলামের দৃষ্টিতে ডিজিটাল কথোপকথনেও গীবত, মিথ্যা ও অশালীনতা হারাম। আল্লাহ তাআলা সতর্ক করেছেন:
مَا يَلْفِظُ مِنْ قَوْلٍ إِلَّا لَدَيْهِ رَقِيبٌ عَتِيدٌ
“মানুষ যে কথাই উচ্চারণ করে, তা রেকর্ড করার জন্য তার কাছে সদা প্রস্তুত প্রহরী রয়েছে।” -সূরা ক্বাফ, ৫০:১৮
অনলাইনে শব্দের দায়বদ্ধতা সম্পর্কে সচেতন হওয়া জরুরি। কুরআনুল হাকিমে ইরশাদ হয়েছে:
وَالَّذِينَ هُمْ عَنِ اللَّغْوِ مُعْرِضُونَ
আর যারা অনর্থক কথা ও কাজ থেকে বিরত থাকে। -সূরা আল-মুমিনুন, ২৩:৩
ادْعُ إِلَىٰ سَبِيلِ رَبِّكَ بِالْحِكْمَةِ وَالْمَوْعِظَةِ الْحَسَنَةِ ۖ وَجَادِلْهُم بِالَّتِي هِيَ أَحْسَنُ ۚ إِنَّ رَبَّكَ هُوَ أَعْلَمُ بِمَن ضَلَّ عَن سَبِيلِهِ ۖ وَهُوَ أَعْلَمُ بِالْمُهْتَدِينَ
আপন পালনকর্তার পথের প্রতি আহবান করুন জ্ঞানের কথা বুঝিয়ে ও উপদেশ শুনিয়ে উত্তমরূপে এবং তাদের সাথে বিতর্ক করুন পছন্দ যুক্ত পন্থায়। নিশ্চয় আপনার পালনকর্তাই ঐ ব্যক্তি সম্পর্কে বিশেষ ভাবে জ্ঞাত রয়েছেন, যে তাঁর পথ থেকে বিচ্যুত হয়ে পড়েছে এবং তিনিই ভাল জানেন তাদেরকে, যারা সঠিক পথে আছে। -সূরা আন-নাহল, ১৬:১২৫
অত্র আয়াতে বিতর্কেও শালীনতা বজায় রাখার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
৭. ভাষাজ্ঞান ও ইসলামি সভ্যতার অবদান
ইসলামি সভ্যতা ভাষা ও সাহিত্যের বিকাশে যুগান্তকারী ভূমিকা রেখেছে। কুরআনের অলৌকিক ভাষাগত সৌন্দর্য আরবি ব্যাকরণ, অলংকারশাস্ত্র ও কাব্যকে নতুন মাত্রা দিয়েছে। ইমাম আশ-শাফিঈ (রহ.) বলেছেন:
“আরবি ভাষার জ্ঞান ছাড়া কুরআন-হাদিসের গভীর উপলব্ধি অসম্ভব।”
এমনকি ইসলামে বিদেশি ভাষা শেখাকে ইবাদত হিসেবে উৎসাহিত করা হয়েছে। রাসুল (সা.) বলেছেন:
مَنْ تَعَلَّمَ لِسَانَ قَوْمٍ أَمِنَ مِنْ مَكْرِهِمْ
“যে কোনো সম্প্রদায়ের ভাষা শিখল, সে তাদের ধোঁকা থেকে নিরাপদ হলো।” -মুসনাদে আহমাদ
ভাষায় দক্ষতা অর্জনের চারটি উপায়
মানুষের চিন্তা, ভাবনা ও জ্ঞানের প্রকাশের অন্যতম মাধ্যম হলো ভাষা। মহান আল্লাহ পবিত্র কুরআনে মাতৃভাষায় দক্ষতা অর্জনের চারটি মূল উপায়ের প্রতি ইঙ্গিত প্রদান করেছেন— শোনা, বলা, পড়া ও লেখা। এসব মাধ্যম ব্যবহার করেই মানুষ জ্ঞানার্জন করে এবং অন্যদের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন করে। নিচে কুরআন ও হাদিসের আলোকে প্রতিটি মাধ্যমের ব্যাখ্যা দেওয়া হলো:
১. পড়া (القراءة)
পড়া জ্ঞান অর্জনের অন্যতম প্রধান মাধ্যম। আল্লাহ সর্বপ্রথম রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে পড়ার নির্দেশ দিয়েছেন:
ٱقْرَأْ بِٱسْمِ رَبِّكَ ٱلَّذِى خَلَقَ
"পড়ো তোমার রবের নামে, যিনি সৃষ্টি করেছেন।" -সূরা আলাক, আয়াত: ১
এই আয়াত থেকে বোঝা যায় যে, জ্ঞান অর্জনের জন্য পড়ার গুরুত্ব অপরিসীম। মহানবী (সা.)-কে তাঁর মাতৃভাষায় পড়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল, যা প্রমাণ করে যে, নিজের ভাষায় পড়া শেখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
২. শোনা (الاستماع)
শোনার মাধ্যমে মানুষ জ্ঞান অর্জন করে এবং শুদ্ধ ভাষার ব্যবহার রপ্ত করতে পারে। আল্লাহ বলেন:
وَإِذَا قُرِئَ ٱلْقُرْءَانُ فَٱسْتَمِعُوا۟ لَهُ وَأَنصِتُوا۟ لَعَلَّكُمْ تُرْحَمُونَ
"যখন কুরআন তিলাওয়াত করা হয়, তখন তোমরা তা মনোযোগসহ শুনবে এবং নিশ্চুপ থাকবে, যাতে তোমাদের প্রতি অনুগ্রহ করা হয়।"
-সূরা আল-আ’রাফ, আয়াত: ২০৪
শিশুরা প্রথমে শুনেই ভাষা শেখে। রাসুলুল্লাহ (সা.)-ও প্রথমে ওহি শোনার মাধ্যমে জ্ঞান অর্জন করেন এবং পরে তা প্রচার করেন।
৩. বলা (الكلام)
বক্তব্য প্রকাশ বা কথা বলার মাধ্যমে মানুষ তার জ্ঞান ও চিন্তা অন্যদের কাছে পৌঁছায়। আল্লাহ বলেন:
خَلَقَ ٱلْإِنسَٰنَ، عَلَّمَهُ ٱلْبَيَانَ
"তিনি মানুষ সৃষ্টি করেছেন, তিনিই তাকে বায়ান (ভাবপ্রকাশ) শিক্ষা দিয়েছেন।" -সূরা আর-রহমান, আয়াত: ৩-৪
এখানে ‘বায়ান’ শব্দের অর্থ হলো স্পষ্ট ভাষায় ভাব প্রকাশ করা। শিশু প্রথমে তার মাতৃভাষায় কথা বলা শেখে, এরপর ধীরে ধীরে অন্যান্য ভাষা আয়ত্ত করে।
৪. লেখা (الكتابة)
লেখা হলো মানুষের মনের ভাব প্রকাশের আরেকটি শক্তিশালী মাধ্যম। আল্লাহ বলেন:
ٱلَّذِى عَلَّمَ بِٱلْقَلَمِ
"যিনি কলমের মাধ্যমে শিক্ষা দিয়েছেন।" -সূরা আলাক, আয়াত: ৪
রাসুলুল্লাহ (সা.) লেখার গুরুত্ব বোঝাতে বলেছেন:
قَالَ رَسُولُ اللَّهِ ﷺ: قَيِّدُوا الْعِلْمَ، قُلْنَا: وَمَا تَقْيِيدُهُ؟ قَالَ: كِتَابَتُهُ
"রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন: জ্ঞানকে সংরক্ষণ করো। আমরা বললাম: কীভাবে সংরক্ষণ করব? তিনি বললেন: তা লিখে রাখার মাধ্যমে।" -সুনানে তিরমিজি, হাদিস: ২৬৬৬
উপসংহার
ইসলামে ভাষা হলো ঈমানের আয়না। এটি ব্যক্তির অন্তরের পবিত্রতা ও সমাজের নৈতিক অবস্থার প্রতিফলন। নবী মুহাম্মদ (সা.)-এর জীবনী ও হাদিসের বিশাল ভাণ্ডার প্রমাণ করে যে, শুদ্ধ ভাষা ছাড়া পরিপূর্ণ মুসলিম চরিত্র গঠন সম্ভব নয়। আধুনিক যুগে ডিজিটাল যোগাযোগের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় কুরআন-সুন্নাহর নির্দেশনা অনুসরণই একমাত্র পথ। প্রতিটি মুসলিমের উচিত জবানের হিফাজত করা এবং কথার মাধ্যমে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনে সচেষ্ট হওয়া।
তথ্যসূত্র:
১. পবিত্র কুরআনুল কারিম
২. সহিহ বুখারি ও মুসলিম
৩. সুনানে আবু দাউদ ও তিরমিজি
৪. সুনানে নাসাঈ
৫. মুসনাদে আহমাদ
৬. সীরাতু ইবনে হিশাম
৭. তাফসিরে ইবনে কাসির
৮. আল-আদাবুল মুফরাদ
৯. হিলয়াতুল আউলিয়া
১০. মাজমূউল ফাতাওয়া
১১. মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা
১২. সীরাতে মুস্তাফা
১৩. আল বেদায়া ওয়ান নেহায়া
১৪. আসাহহুস সিয়ার
১৫. ইসলামি ব্যাকরণ ও অলংকারশাস্ত্রের গ্রন্থসমূহ
১৯ শে মার্চ, ২০২৫ দুপুর ১২:৪৯
নতুন নকিব বলেছেন:
ধন্যবাদ আপনাকে আপনার পর্যবেক্ষণ ও মূল্যবান মতামতের জন্য। সত্যিই, ইসলাম আমাদের মিষ্টি ভাষায় কথা বলার শিক্ষা দিয়েছে এবং রূঢ় বা অশ্লীল ভাষা ব্যবহারে কঠোরভাবে নিষেধ করেছে। কুরআনে আল্লাহ বলেন:
وَقُولُوا لِلنَّاسِ حُسْنًا
"তোমরা মানুষের সঙ্গে উত্তম ভাষায় কথা বলো।" -সূরা আল-বাকারাহ: ৮৩
রাসুলুল্লাহ (সা.)-ও বলেছেন:
لَيْسَ المُؤْمِنُ بِالطَّعَّانِ وَلا اللَّعَّانِ وَلا الفَاحِشِ وَلا البَذِيءِ
"আল্লাহ ও পরকালে বিশ্বাসী ব্যক্তি গালমন্দকারী, অভিশাপদাতা, অশ্লীলভাষী ও রূঢ়ভাষী হতে পারে না।" -সুনানে তিরমিজি, হাদিস: ১৯৭৭
আমরা চাই, যারা ওয়াজ-নসিহত করেন, তারা যেন নবীজির (সা.) সুন্নাহ অনুসরণ করে কোমল ভাষায় মানুষকে সত্যের পথে আহ্বান করেন। কারণ, আপনার পর্যবেক্ষণ একেবারে অমূলক নয়।
আবারও ধন্যবাদ আপনার সুচিন্তিত মতামতের জন্য। আল্লাহ আমাদের সবাইকে উত্তম আচরণ ও সুন্দর ভাষায় কথা বলার তাওফিক দান করুন।
২| ১৯ শে মার্চ, ২০২৫ দুপুর ১:০০
রানার ব্লগ বলেছেন: ‘আর তোমরা লোকের সাথে উত্তমভাবে কথা বলবে।’ (সুরা বাকারা : আয়াত ৮৩)
‘তুমি মানুষকে তোমার রবের পথে আহবান কর হিকমাত ও সদুপদেশ দ্বারা এবং তাদের সাথে আলোচনা কর সুন্দরভাবে।’ (সুরা নাহল : আয়াত ১২৫)
‘আর তোমার চলার ক্ষেত্রে মধ্যপন্থা অবলম্বন কর, তোমার আওয়াজ নীচু কর; নিশ্চয় সবচাইতে নিকৃষ্ট আওয়াজ হল গাধার আওয়াজ।’ (সুরা লোকমান : আয়াত ১৯)
ভাল ও মন্দ সমান হতে পারে না। উৎকৃষ্ট (ভালো কথার) দ্বারা মন্দ প্রতিহত কর; তাহলে যাদের সঙ্গে তোমার শত্রুতা আছে, সে হয়ে যাবে অন্তরঙ্গ বন্ধুর মত।’ (সুরা হামীম আস-সাজদাহ : আয়াত ৩৪)
‘তুমি বিনয় ও ক্ষমা পরায়ণতার নীতি গ্রহণ কর, এবং লোকদেরকে সৎ কাজের নির্দেশ দাও, আর মূর্খদেরকে এড়িয়ে চল।’ (সুরা আরাফ : আয়াত ১৯৯)
১৯ শে মার্চ, ২০২৫ বিকাল ৩:২০
নতুন নকিব বলেছেন:
ধন্যবাদ আপনাকে।
৩| ১৯ শে মার্চ, ২০২৫ দুপুর ২:৩৭
অপু তানভীর বলেছেন: আরবী ভাষায় টানের তারতম্যের কারণে অর্থ বদলে যায় বাংলা ভাষায় কি সেটা হয়?
মানুষের সাথে উত্তম কথা বলা মানে কি মানুষের সাথে শুদ্ধ ভাষায় কথা বলা? মিষ্টি কথা বলা মানে শুদ্ধ ভাষায় কথা বলা?
আমার দাদী শুদ্ধ ভাষায় কথা বলতে পারতেন না। শুদ্ধ বাংলা ভাষার জ্ঞান তার ছিল না। কিন্তু সে অশুদ্ধ বাংলা ভাষায় আমাদের সাথে মিষ্টি স্বরে কথা বলতেন।
১৯ শে মার্চ, ২০২৫ বিকাল ৩:২৬
নতুন নকিব বলেছেন:
আরবী ভাষায় টানের তারতম্যের কারণে অর্থ বদলে যায় বাংলা ভাষায় কি সেটা হয়?
-পুরোপুরি অর্থ বদলে যায় না তবে ই-কার এবং ঈ-কার কিংবা উ-কার এবং ঊ-কার এর পার্থক্য তো নিশ্চয়ই আছে।
মানুষের সাথে উত্তম কথা বলা মানে কি মানুষের সাথে শুদ্ধ ভাষায় কথা বলা? মিষ্টি কথা বলা মানে শুদ্ধ ভাষায় কথা বলা?
-জ্বি, ঠিক বলেছেন। উত্তম কথা বা মিষ্টি কথা বলা মানে সরাসরি শুদ্ধ ভাষায় কথা বলা নয়। তবে এখানেও উত্তম কথা তো সেই কথাকেই বলা যেতে পারে যে কথার ভেতরে সৌন্দর্য্য, মাধুর্য্য বিদ্যমান; সর্বোপরি যে কথায় বিশুদ্ধতা থাকে।
ধন্যবাদ।
৪| ১৯ শে মার্চ, ২০২৫ বিকাল ৩:২৬
হাসান মাহবুব বলেছেন: শুদ্ধ ভাষা বলতে কী বোঝাচ্ছেন? বাংলার ক্ষেত্রে এটা কি লেখার ভাষাটা? নোয়াখালি, কুমিল্লা বা রংপুরের একজন গ্রামের মানুষকেও কি এই ভাষায় কথা বলতে হবে?
১৯ শে মার্চ, ২০২৫ বিকাল ৩:৩০
নতুন নকিব বলেছেন:
শুদ্ধ ভাষা বলতে আমি বাংলা ভাষার সাধারণ কথ্যরূপকে বুঝাতে চেয়েছি, যেখানে নোয়াখালি, কুমিল্লা, বরিশাল, সিলেট বা রংপুরের কোনো আঞ্চলিকতা থাকবে না। এটি লেখার ভাষা নয়, বরং এমন একটি ভাষা, যা দেশের যে কোনো অঞ্চলের মানুষ সহজেই বুঝতে পারে। শুদ্ধ ভাষা বলতে এমন এক ধরনের বাংলা বোঝায়, যা আঞ্চলিক উচ্চারণ বা শব্দভাণ্ডারের প্রভাবমুক্ত এবং সকলের জন্য গ্রহণযোগ্য ও প্রাঞ্জল।
তবে, এর মানে এই নয় যে, গ্রামের মানুষকে তার স্বাভাবিক আঞ্চলিক ভাষা ভুলে গিয়ে এই ভাষায় কথা বলতে হবে। প্রত্যেক অঞ্চলের নিজস্ব ভাষাগত বৈচিত্র্য আছে, যা তাদের সাংস্কৃতিক পরিচয়ের অংশ। কিন্তু যখন যোগাযোগের ক্ষেত্রে সমগ্র জাতির জন্য বোধগম্য ও গ্রহণযোগ্য হওয়া প্রয়োজন, তখন আঞ্চলিকতার বাইরে এসে একটি সহজ, পরিচ্ছন্ন ও প্রমিত ভাষায় কথা বলা বা লেখা গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে।
ধন্যবাদ।
৫| ১৯ শে মার্চ, ২০২৫ বিকাল ৩:৪৫
কু-ক-রা বলেছেন: উহা (অপু তানভীর) ভাল বলিয়াছে।
১৯ শে মার্চ, ২০২৫ বিকাল ৩:৫৬
নতুন নকিব বলেছেন:
জ্বি, আপনাকে ধন্যবাদ। আপনার মন্তব্য খুবই চমৎকার।
৬| ১৯ শে মার্চ, ২০২৫ বিকাল ৪:০৫
জুল ভার্ন বলেছেন: আপনি যা বলতে চেয়েছেন তা খুবই স্বচ্ছ, এসব বিষয়ে অনেকেই প্যাচানোর চেষ্টা করছে তা ইসলাম বিদ্বেষ ছাড়া আর কিছুই নয়।
২০ শে মার্চ, ২০২৫ সকাল ৯:১৯
নতুন নকিব বলেছেন:
সেটাই। শুদ্ধ ভাষায় কথা বলার পোস্টেও তীর্যক প্রশ্ন - কিছুটা বিরক্তি উদ্রেককারী বৈকি। যা হোক, পক্ষ বিপক্ষ থাকাটাই স্বাভাবিক। এটাই হয়তো ব্লগের বৈচিত্র্যময়তাকে তুলে ধরে।
আন্তরিক মন্তব্যে কৃতজ্ঞতা। শুভকামনা জানবেন।
৭| ১৯ শে মার্চ, ২০২৫ রাত ৮:৫৪
কামাল১৮ বলেছেন: কোরান কত ভাষায় নাজিল হয়েছে।বর্তমানে কত প্রকার চালু আছে।আমাদের কোরান আর মরক্কোর কোরান কি হুবুহু এক।
২০ শে মার্চ, ২০২৫ সকাল ৯:২৬
নতুন নকিব বলেছেন:
কুরআন একটিই এবং এটি শুধুমাত্র আরবি ভাষায় নাজিল হয়েছে। আল্লাহ তাআলা বলেন:
إِنَّا أَنْزَلْنَاهُ قُرْآنًا عَرَبِيًّا لَعَلَّكُمْ تَعْقِلُونَ
"আমি এটিকে আরবি কুরআন হিসেবে অবতীর্ণ করেছি, যাতে তোমরা বুঝতে পারো।" -সূরা ইউসুফ: ২
তবে রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর সময় কুরআন বিভিন্ন ক্বিরাআতে (তিলাওয়াতের ধরনে) পাঠ করার অনুমতি দেওয়া হয়েছিল, যা সাত হারফ বা সাত ধরনের উচ্চারণ পদ্ধতির মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল। বর্তমানে কুরআনের বিভিন্ন ক্বিরাআত চালু রয়েছে, যেমন:
হাফস আন আসিম (যেটি বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান, সৌদি আরবসহ বেশিরভাগ দেশে প্রচলিত)
ওয়ারশ আন নাফি (মরক্কো, আলজেরিয়া, তিউনিসিয়া, লিবিয়ায় প্রচলিত)
কালুন আন নাফি (লিবিয়া, তিউনিসিয়া)
আদ-দুরি আন আবি আমর (সুদান, ইয়েমেন)
আমাদের কুরআন (হাফস আন আসিম) এবং মরক্কোর কুরআন (ওয়ারশ আন নাফি) হুবহু এক, কারণ উভয়েরই উৎস একই—রাসুলুল্লাহ (সা.) থেকে পাওয়া শিক্ষা। শুধুমাত্র উচ্চারণ এবং কিছু স্থানে উচ্চারণগত পার্থক্য আছে, যা ভাষার স্বাভাবিকতা ও বহুবিধ তিলাওয়াতের অনুমতির অংশ। অর্থ বা মূল বার্তায় কোনো পার্থক্য নেই।
এটি সন্দেহ করার বিষয় নয়, বরং আরবি ভাষার ধ্বনিগত ভিন্নতা ও বিভিন্ন ক্বিরাআতের ফলাফল, যা রাসুলুল্লাহ (সা.) নিজেই অনুমোদন করেছিলেন।
ধন্যবাদ।
৮| ২০ শে মার্চ, ২০২৫ সকাল ১০:৫৬
হাসান মাহবুব বলেছেন: কোনোরকম অশ্রদ্ধা জ্ঞাপন না করে শুধুমাত্র জানার জন্যে একটা প্রশ্ন করেছি। সেটাকেও ইসলামবিদ্বেষ বানিয়ে দিলেন জুলভার্ন ভাই! এসব ট্যাগিং দেয়া বন্ধ করুন।
২১ শে মার্চ, ২০২৫ সকাল ১০:৩৩
নতুন নকিব বলেছেন:
আমি আন্তরিকভাবে ক্ষমা প্রার্থনা করছি যদি আপনার প্রশ্নে কোনো অশ্রদ্ধা বা ভুল ব্যাখ্যা আমার পক্ষ থেকে দেওয়া হয়ে থাকে। যা হোক, আমার উদ্দেশ্য কখনও আপনাকে অপমান করা ছিল না।
আপনার প্রশ্নের উদ্দেশ্য বোঝার চেষ্টা করেছি এবং আশা করি আমার ব্যাখ্যা সহানুভূতির সাথে গ্রহণ করেছেন। আপনি যদি আরও কিছু জানতে চান, আমি খুশি হয়ে সাহায্য করতে প্রস্তুত আছি।
আমার ধারণা, জুলভার্ন ভাইয়ের চোখে পড়লে তিনি অবশ্যই আপনার এই মন্তব্যটির উত্তর দিবেন।
৯| ২০ শে মার্চ, ২০২৫ সন্ধ্যা ৬:০০
রাজীব নুর বলেছেন: পড়লাম।
তবে অন্য প্রসঙ্গে আমি বলি। রাগ করবেন না প্লীজ।
কোথাও আগুন লাগলে অথবা ভূমিকম্প হলে- ধার্মিকেরা আযান দেয়/ সেই আযান আজ পর্যন্ত আগুন থামাতে পারে নাই। ভূমিকম্প থামাতে পারে নাই। আগুন লাগলে ফায়ার সার্ভিস প্রয়োজন। ভূমিকম্প হলে নিরাপদ স্থানে চলে যাওয়া দরকার। আযান কোনো কাজে না। তাই নয় কি?
২১ শে মার্চ, ২০২৫ সকাল ১০:২৭
নতুন নকিব বলেছেন:
এই মন্তব্যটি ধর্মীয় বিশ্বাস ও বাস্তবিক ব্যবস্থাপনার মধ্যে একটি ভুল তুলনা করছে। আগুন লাগলে ফায়ার সার্ভিস প্রয়োজন, ভূমিকম্প হলে নিরাপদ স্থানে যাওয়া দরকার—এটি বাস্তব দিক। কিন্তু আযান কেবল আগুন নেভানো বা ভূমিকম্প থামানোর জন্য দেওয়া হয় না। এটি আল্লাহর স্মরণ, মানুষের ঈমান দৃঢ় করা এবং সান্ত্বনা পাওয়ার একটি উপায়।
ধর্মীয় বিশ্বাস কোনো যান্ত্রিক সমাধান নয়, বরং মানুষের মনোবল বাড়ায়, আল্লাহর ওপর ভরসা রাখতে শেখায়, এবং বিপদে ধৈর্য ধারণ করতে সাহায্য করে। আযান বিপদ ঠেকানোর যান্ত্রিক প্রক্রিয়া নয়, বরং এটি আল্লাহর রহমত কামনার একটি মাধ্যম, যা অনেকের জন্য মানসিক শক্তি ও স্থিরতা আনে।
ধর্ম ও বাস্তবিক পদক্ষেপ একে অপরের প্রতিপক্ষ নয়; বরং দুটিই তাদের নিজ নিজ জায়গায় গুরুত্বপূর্ণ।
১০| ৩১ শে মার্চ, ২০২৫ রাত ৯:১৯
Sulaiman hossain বলেছেন: কোথাও আগুন লাগলে অথবা ভূমিকম্প হলে- ধার্মিকেরা আযান দেয়/
এইসমস্ত ধার্মিকরা আগুন লাগলে আজান দিতে হয়,এটা কোন কিতাবে পেয়েছে।আজান কি আগুন নেভানোর জন্য প্রবর্তন হয়েছে।
০১ লা এপ্রিল, ২০২৫ সকাল ১০:০১
নতুন নকিব বলেছেন:
আগুন লাগলে বা ভূমিকম্প হলে আজান দিতে হবে—এমন কোনো হাদিস বা নির্দেশনা কিতাবে নেই। এটি কেবল একটি প্রচলিত কুসংস্কার, যার সঙ্গে ইসলামের কোনো সম্পর্ক নেই।
©somewhere in net ltd.
১|
১৯ শে মার্চ, ২০২৫ সকাল ১১:৫৭
রানার ব্লগ বলেছেন: ধর্ম আমাকে আপনাকে মিস্টি ভাষা ব্যবহার করতে বলেছে । রুঢ় এবং আশ্লিল শব্দ ব্যবহারে নিষেধ করেছে । কিন্তু বর্তমান ওয়াজ নসিহতকারি যারা আছেন তাদের মধ্যে ৯৯ শতাংশের ভাষা বড্ড কঠর, বিস্বাদ, তিতা ও গালাগালি দিয়ে পুর্ন ।