নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

নজরুল মিন্টো

নজরুল মিন্টো

সাংবাদিকতা, লেখালেখি

নজরুল মিন্টো › বিস্তারিত পোস্টঃ

শাহবাগ স্কোয়ার : দ্য স্পিরিট অব ৭১

১০ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ রাত ১২:১৫

শিরোনামটি সিএনএন থেকে ধার নেয়া। ১০টি বিশাল আকৃতির ছবিসহ বৃহষ্পতিবার বিশ্বের অন্যতম গণমাধ্যম সিএনএন অনলাইনের শিরোনাম ছিলো- 'দ্য স্পিরিট অব ৭১ রাইজেস অ্যাট শাহবাগ স্কোয়ার ইন ঢাকা'। কেবল সিএনএন-ই নয়; গত কয়েকদিন ধরে বিবিসিসহ সারাবিশ্বের মিডিয়ার শিরোনামে ছিল বাংলাদেশ । প্রতে্যকটি মিডিয়ায় উল্লেখ করা হয়েছে শাহবাগের এ জাগরণের কথা যার নেতৃত্ব দিচ্ছে বাংলার তরুণ সমাজ, যারা ব্লগ এবং ফেসবুকসহ বিভিন্ন অনলাইন সোশ্যাল মিডিয়ার সাথে সম্পৃক্ত (মোট সংখ্যা প্রায় ৩৩ লক্ষ)। ইরান, সিরিয়া, কিংবা আফগানিস্তান নয়, সারা বিশ্বের দৃষ্টি এখন বাংলাদেশের দিকে।



সিটিজেন জার্নালিজমের অন্যতম প্লাটফর্ম এই ব্লগ। নতুনত্বের প্রতি আমার আজন্ম টান। বিশেষ করে প্রযুক্তি বিশ্বে নতুন কিছু দেখলেই ঝাঁপিয়ে পড়ি। এভাবেই আজ থেকে বছর চারেক আগে আমি ব্লগার্স-এর পাতায় নাম লিখিয়েছিলাম। প্রথম সারির যে কয়টি ব্লগ আছে সবগুলোতেই আমার একাউন্ট আছে। লেখা আছে। শুরুতে খুবই অ্যাকটিভ ছিলাম পরবর্তীতে কিছু কিছু ব্লগারদের আচরণ, এবং তাদের রচনা দেখে আমি ব্লগিং থেকে দূরে সরে যাই। তবে এতদিনে ঢুঁ মারার যে অভ্যাস হয়ে গিয়েছিল তা বদলাতে পারিনি। বিভিন্ন তথে্যর খুঁজে প্রায়ই ব্লগে যাই। অনেকের লেখা পড়ি। এভাবেই চলছিল। ইন্টারেকটিভ ডিজিটাল মিডিয়ার ছাত্র (১০-১২টা সোশ্যাল মিডিয়াতে ঘোরাঘুরি যার নিত্যদিনের কাজ) হয়েও স্বীকার করতে দ্বিধা নেই, এই ব্লগ আর ফেসবুক যে কোন একদিন বাঙালির চেতনায় এভাবে নাড়া দেবে, ব্লগাররা কোনদিন বাংলাদেশে আন্দোলনের নেতৃত্ব দেবেন চিন্তা করিনি কখনও। আজ আমি গর্বের সঙ্গে বলতে চাই আমিও একজন ব্লগার।



৫২, ৬৯, ৭১ এবং ৯০ সাল পর্যন্ত বিভিন্ন আন্দোলনের ইতিহাসে দেখা যায় সেসব আন্দোলনে ছিলেন ছাত্র-শিক্ষক, রাজনীতিবিদ এবং বিভিন্ন পেশাজীবীর মানুষ। আরও ছিলেন বাংলার লেখক সমাজ, শিল্পী সমাজ তথা সাংস্কৃতিক কর্মীগন। আজ ২০১৩ সালের আন্দোলনের সাথে যুক্ত হলো নতুন একটি নাম- 'ব্লগার্স'। এ আন্দোলনের ডাক দিয়েছে তারা। তাদের আহবানে সাড়া দিয়েছে দেশের সকল শ্রেণী ও পেশার মানুষ। এতোদিন যেন একটি ডাকের অপেক্ষায়ই ছিল বাংলার জনগণ। তাদের প্রতি একাত্মতা ঘোষণা করে আজ জেলায় জেলায় তৈরি হয়েছে আন্দোলনের মঞ্চ। সে মঞ্চকে ঘিরে রয়েছে এখন সর্বস্তরের জনতা। ধ্বণিত হচ্ছে 'রাজাকারদের ফাঁসী চাই', 'একাত্তরের হাতিয়ার, গর্জে উঠুক আরেকবার'। রাত-দিন এক করে একটানা প্রতিবাদ। এ এক অভিনব আন্দোলন! এ এক অন্য রকম আয়োজন। এক অন্য রকম অনুভূতি। বাংলার মানুষ এ ধরনের আন্দোলন কখনও দেখেনি। এ এক নতুন অভিজ্ঞতা!



আন্দোলনের সংবাদে উদ্বেলিত প্রবাসীরা। প্রজন্ম চত্ত্বরের জয়ধ্বনী আটলান্টিকের এ পারে বসে শোনা যাচ্ছে । ইতিমধে্য প্রবাসের তরুণ প্রজন্ম এ আন্দোলনের সাথে একাত্মতা ঘোষণা করে বিভিন্ন শহরে আয়োজন করছে মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সভার। ফেসবুক, টুইটার, গুগল প্লাস, ব্লগে ব্লগে চলছে অসংখ্য বার্তার গুনগুনানি। মুহুর্তের মধে্য খবর পৌঁছে যাচ্ছে অষ্ট্রেলিয়া থেকে কানাডা। প্যারিস থেকে টোকিও। বাঙালি আবার লড়াই করতে নেমেছে। এ লড়াই আজ বাঙালির অস্তিত্বের লড়াই। এ লড়াই জিততে হবে। এ আন্দোলনে সরকারের কর্তৃত্ব নেই, বিরোধী দলের কর্তৃত্ব নেই, সেনাবাহিনীর কর্তৃত্ব নেই, কোন বিশেষ দেশের কর্তৃত্ব নেই, জাতিসংঘের কর্তৃত্ব নেই। এ আন্দোলনের কর্তৃত্ব কেবল বাংলার তরুন সমাজের হাতে। এ তরুনরা বাংলার ব্লগার্স। আজ মুক্তিযোদ্ধা ও ব্লগার্স সমার্থক শব্দ।



প্রজন্ম চত্ত্বরে উপস্থিত হয়ে এ আন্দোলনে অংশ নিতে না পারাটা জীবনের একটা ব্যর্থতা বলে মনে হচ্ছিল। বিভিন্ন চ্যনেলের মাধ্যমে দেখতে পাচ্ছি মানুষের আবেগ এবং উচ্ছাস। কত মানুষ কতভাবে নিজেকে এ আন্দোলনে সম্পৃক্ত করছে। আমরা যারা প্রবাসে রয়েছি আমার কেন পারবো না তাহলে? আমি আহবান জানাচ্ছি সকল প্রবাসী ভাইবোনদের-আসুন, আমরা যে যেখানে আছি আমাদের পরিবার-পরিজনদের বলি তারা যেন এ আন্দোলনে অংশ নেন। শাহবাগ স্কোয়ারে গিয়ে যে আন্দোলনে অংশগ্রহণ করতে হবে এমন কোন কথা নেই। আমরা যদি আন্দোলনকারীদের সাথে একাত্মতা ঘোষণা করি তাহলে তাদের আহবান অনুযায়ী আমরা এবং আমাদের পরিবারের সদস্যরা স্বাধীনতা বিরোধীদের কোন প্রতিষ্ঠানের সাথে সম্পর্ক রাখবোনা। আমরা সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে সমর্থন দিয়ে আন্দোলনকারীদের সাথে একাত্মতা ঘোষণা করবো। আমরা আমাদের সন্তানদের টেলিভিশনের মাধ্যমে, অনলাইনের মাধ্যমে নবজাগরণের এ দৃশ্য দেখিয়ে তাদের চেতনায় মুক্তিযুদ্ধের বীজ বপন করে দেবো।



এ আন্দোলনে যারা নিজেদের সম্পৃক্ত করতে পারবেন না তারা আক্ষেপ করবেন একদিন। যেমনটি মুক্তিযুদ্ধের মতো গৌরবময় অধ্যায়ে নিজেকে সম্পৃক্ত করতে পারেননি বলে অনেকে আজ আক্ষেপ করে থাকেন। এ ধরনের গৌরবময় সুযোগ কদাচিৎ আসে। আমি আহবান জানাচ্ছি দেশের সকল কবি, সাহিতি্যক, সাংবাদিক ও সাংস্কৃতিক কর্মীদের- আপনারা এ আন্দোলনের যোগ দিন। যাদের আত্মত্যাগের বিনিময়ে একটি স্বাধীন দেশে বসে আপনি শিল্পের চর্চা করছেন তাদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে এ আন্দোলনের সাথে আপনাদের একাত্মতা জানানো উচিত। আপনারা মুক্তিযুদ্ধ বিরোধী কোন মিডিয়ায় লিখবেন না, কোন সাক্ষাতকার দেবেন না। কোন পণে্যর প্রচারণায় সহযোগিতা করবেন না। জীবনে অর্থই সব নয়; বিবেক দিয়ে পরিচালিত হোন।



রাজাকারদের সাথে তাদের সন্তানেরাও টাকা পয়সা দিয়ে এ আন্দোলনকে বানচাল করার জন্য বিভিন্ন অপচেষ্টা চালাচ্ছে বলে খবরে প্রকাশ। এদের কাছ থেকে হুশিয়ার থাকতে হবে। মনে রাখবেন সুযোগ পেলেই এরা ছোবল দেবে। জানা গেছে, এরা বিভিন্ন মুখোশের অন্তরালে মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষের ব্যক্তি সেজে বিভিন্ন জায়গায় বক্তব্য দিয়ে বেড়াচ্ছে। প্রতে্যকটা রাজাকারের সন্তান একেকটা কৌশল অবলম্বন করে চলে। অনেকে বলেন পিতার দায়ভার পুত্র কেন নেবে? আমি মনে করি এ দায়ভার তাদের নিতেই হবে। এটাই স্বাভাবিক, এটাই দুনিয়ার রীতি। একবার আমার সাথে মীর জাফর আলী খানের ৪র্থ/৫ম বংশধরের একজনের দেখা হয়েছিল। সে বলেছিল তারা তাদের পূর্বপুরুষের পরিচয় দিতে সংকোচ বোধ করে। আমি মনে করি পূর্ব পুরুষের ঘৃণ্য কর্মের জন্য রাজাকারের সন্তানদেরও সংকোচ দেখানো উচিত। লজ্জায় মুখ লুকিয়ে রাখা উচিত। এটাই তাদের প্রাপ্য। এটা তাদের শাস্তি। অন্যদিকে পূর্ব পুরুষের কৃতকর্মের জন্য একজন মুক্তিযোদ্ধার সন্তান গর্বিত হয়ে বুক উঁচু করে কথা বলবে। এটা তার অর্জন। রাজাকারের সন্তানেরা বিভিন্ন সভা-সমাবেশে, গোলটেবিল বৈঠকে, টেলিভিশনের টক শোতে জাতিকে জ্ঞান দেবে, মুক্তিযুদ্ধের চেতনার কথা বলে বেড়াবে- আমি মেনে নিতে পারি না।



আজ প্রজন্ম চত্ত্বরের আন্দোলন কেবল রাজাকারদের ফাঁসির মধে্য আর সীমাবদ্ধ নেই। প্রতি নিয়ত যোগ হচ্ছে নতুন নতুন দাবী। এ দাবী বাংলার জনগণের দাবী। এতোদিন যে দাবী মানুষের মনের মধে্য পুঞ্জিভূত ছিল। এতোদিন দাবী জানানোর জায়গা ছিল না, পরিবেশ ছিল না। আজকের এ লেখার মাধ্যমে আমিও একটা দাবী জানাতে চাই আর তা হলো- পাকিস্তানের কাছ থেকে আমাদের পাওনা টাকা আদায় করতে হবে। সুদে আসলে এ টাকা পাকিস্তানকে পরিশোধ করতে হবে। আমাদের রক্তের টাকায় কেনা উড়োজাহাজ থেকে শুরু করে যেসব ধন সম্পদ তারা লুট করে নিয়ে গেছে, যুদ্ধকালীন সময়ে বাংলায় যে ধ্বংসযজ্ঞ করেছ সব ক্ষতিপুরণ দিতে হবে। যতদিন না আমাদের পাওনা টাকা ফেরত না পাওয়া যাবে ততদিন পর্যন্ত পাকিস্তানের সাথে আমাদের সকল কূটনৈতিক সম্পর্ক বিচ্ছিন্ন থাকবে। কোন দেশপ্রেমিক বাঙালি পাকিস্তানী পণ্য ব্যবহার করবেন না। কোন দেশপ্রেমিক ব্যবসায়ী পাকিস্তানী পণ্য আমদানী করবেন না। আজকের প্রজন্ম আওয়াজ তোলো -পাকিস্তানী পণ্য - বর্জন বর্জন।



সবশেষে বলতে চাই, এ আন্দোলনের মধে্য আমার মতো অনেকে স্বপ্ন দেখছেন এক নতুন জাগরণের, এক যুগান্তকারী পরিবর্তনের। এ পরিবর্তন কেবল ঘুন ধরা রাজনীতিতেই সীমাবদ্ধ থাকবে না, এ পরিবর্তন আমাদের চিন্তা চেতনা ও সমাজ ব্যবস্থাতেও ব্যাপক প্রভাব বিস্তার করবে। আমদের এ বিজয় সুনিশ্চিত।



নজরুল মিন্টো : ব্লগার, সাংবাদিক, লেখক

প্রধান সম্পাদক - দেশে বিদেশে, কানাডা

http://www.deshebideshe.com

মন্তব্য ১ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (১) মন্তব্য লিখুন

১| ১০ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ রাত ১২:২০

ইফতেখার ভূইয়া বলেছেন: আন্দোলনের সাথে পূর্ণ ঐক্যমত পোষণ করছি। ভাবছি কানাডাতে এ বিষয়ে প্রবাসী বাঙালীরা কি করছেন। আমরা অবশ্য নিউ ইয়র্কে আজ কিছু একটা করতে চাচ্ছি। দেখা যাক। সময় করে আমার এই লিখাটাও পড়ুন: আন্দোলনের শুরুটা এখান থেকেই হোক । ধন্যবাদ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.