নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

নীল আকাশ

নিয়ন খান

নিজের সম্পর্কে কি লিখবো সেটা বুঝতে পারছি না। আমি এখানে একদমই নতুন। লেখায় ভুল ত্রুটি হলে অবশ্যই জানাবেন। আমার লেখা গল্প ভালো লাগলে অবশ্যই জানাবেন। এছাড়াও আমাকে ফেসবুকে পেতে পারেন এই লিঙ্কে গিয়েঃ https://www.facebook.com/maskneon

নিয়ন খান › বিস্তারিত পোস্টঃ

আমার মা ও তার বড় ছেলে

২৫ শে এপ্রিল, ২০১৭ রাত ১২:৩৪

আমি তার বড় ছেলে। যদিও তিনি বলেন যে তিনি তার দুই ছেলেকেই সমান ভালোবাসেন তারপরও আমার প্রতি যেন তার একটা আলাদা আবেগ কাজ করে। আবেগ বলাটা কি ভুল হল? নাকি একে বলবো মমতা?

ছোটবেলা থেকেই আমার মায়ের সাথে আমার সম্পর্কটা বন্ধুত্বপূর্ণ। যদিও কিন্ডারগার্টেনে থাকতে তার ভয়ে ভীষণ ভীত ছিলাম। একবার হল কি, কিন্ডারগার্টেনে বার্ষিক পরীক্ষার (তখন কোন ক্লাসে পড়ি মনে পড়ছে না) বাংলা পরীক্ষায় একটা শব্দার্থ পারতাম না। পাশেরজনেরটা দেখে ঠিক উত্তরটাই লিখেছিলাম। কিন্তু বাসায় এসে মায়ের কাছে মিথ্যা বলেছিলাম পাছে আরেকজনেরটা দেখে লেখার অপরাধে মা আমার পিঠে বেত চালান করেন।

আরেকবার হল কি যে আমি তখন কেজি ২তে পড়ি। তখন বিটিভিতে বাংলা ছবি দেখে নায়কের বেশ কিছু ডায়লগ শিখেছিলাম। সেগুলোই একটা কাগজে লিখে স্কুলের ব্যাগে রেখে দিয়েছিলাম। মা বই-খাতা বের করতে গিয়ে ওই নোটটা পায়। তারপর আমার উপর পড়ল উরাধুরা মাইর। মা ভেবেছিলেন কাউকে প্রেমপত্র লিখেছি।

ছোটবেলা থেকেই মাকে খুব ভালোবাসি। তাই কখনো মার মন খারাপ থাকলে কিছুই ভালো লাগতো না আমার। ভালোবাসা থেকেই মনে হয় অধিকার আদায়ের একটা ব্যাপার এসে পরে। আমাকে ছাড়া মা কোথাও গেলে খুব মন খারাপ হত। একবারতো এতোই রাগ হয়েছিলো যে পুতির গুলিওয়ালা খেলনা পিস্তল দিয়ে মাকে গুলি করেছিলাম। ব্যাপারটা আব্বুর কাছে একদমই ভালো লাগলো না। ধরে দিলো মাইর। আব্বুর সেই মাইর থেকে বাঁচালো কিন্তু মা-ই। আরেকবার আমার জ্যাঠাতো বড়ভাইয়ের সাথে একটা হাফপ্যান্ট আর একটা সেন্ডো গেঞ্জি পড়ে মিরপুর বেড়ীবাঁধ দিয়ে হাটতে হাটতে চলে গিয়েছিলাম চিড়িয়াখানায়। তখন আমি খুবই ছোট। সকালে বের হয়েছি দুপুর হয়ে যাচ্ছিলো কিন্তু বাসায় ফিরছিলাম না। বাসায় রাষ্ট্র হয়ে গেলো আমরা হারিয়ে গেছি কিংবা ছেলেধড়ায় ধরে নিয়ে গেছে। তখন অবশ্য এই ছেলেধরার খুব উৎপাত ছিল। বাসায় কান্নাকাটি। আরেকটু পর মাইকিং করা হবে। এমন সময় আমরা বাসায় এলাম। আব্বুর কাছে সকল প্রশ্নের জবাবদিহিতার পর বেদম মাইর খেলাম। না না। আমার আব্বু আমাকে শাসন করার জন্যই মেরেছেন। কখনোই বিনাকারনে মারেন নাই। সকলে হয়তো ভাবতে পারেন আমার বাপ মনে হয় আমাকে আদর করেন না বরং সবসময় মারের উপর রাখেন। এমনটা আসলে নয়। আব্বুও আমাকে খুবই ভালোবাসেন এবং আদর করেন। যদিও জানি মা বেশি আদর করেন তারপরও মাঝে মাঝে কনফিউজ হয়ে যাই আসলে আমাকে কে বেশি আদর করে? মা? নাকি আব্বু? যাইহোক ঘটনায় ফিরে আসি। তো সেবারও আব্বুর মাইর থেকে মা-ই রক্ষা করেন।

মায়ের কাছ থেকে আমার প্রতিদিন হাতখরচের বাজেট ছিল ২ টাকা। মা রোজ ২ টাকা করে আমাকে দিতেন। যেদিন দিতেন না সেদিন মার সাথে রাগারাগি করতাম। মা বকা দিতেন। পরে অবশ্য ঠিকই পাওনা আদরটা করতেন। আমার ১৯৯৮ সালে যেদিন আমার ছোটভাই নিপুন জন্ম নিলো সে আমি খবর পাই আব্বুর কাছ থেকে। দৌড়ে মায়ের ঘরে গিয়ে দেখি মা পাটির উপরে ফ্লোরে শুয়ে আছেন। পাশে দাই মা। আর আমার নানীর কোলে আমার ছোট ভাই। মার অসুস্থ মুখ দেখে মনে হচ্ছিলো মার হয়তো ক্ষুধা পেয়েছে। পকেটে ৬ টাকা ছিল। দৌড়ে গেলাম মামুর দোকানে (দোকানটা মামুর দোকান নামেই পরিচিত)। ৬ টাকা দিয়ে একটা হরলিক্স পাউরুটি কিনে মার কাছে নিয়ে আসলাম। হরলিক্স পাউরুটি তখন খুব জনপ্রিয়। হরলিক্স ছিল ওই পাউরুটির ব্র্যান্ড। যাইহোক পাউরুটি নিয়ে মায়ের হাতে দিয়ে বলেছিলাম,"আম্মু তুমি এইটা খাও। তাইলে তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে যাবা।" যেন মাকে সান্তনা দিচ্ছিলাম। মনে পড়ে মা তখন আমার কপালে একটা চুমু দিয়েছিলেন।

যখন ক্লাস ৬ এ পড়ি সেই সময় প্রথম বুঝতে পেরেছিলাম মা আসলে কি! ক্যাডেটে পরবো এই আশায় আমাকে ভর্তি করা হল টাঙ্গাইলের সাবালিয়ায় শহীদ ক্যাডেট কোচিং এ। ১ম দিন খুব উৎফুল্ল। বড় হয়ে গেছি। একা একা হোস্টেলে থাকবো। ২দিন পার করার পর আমারতো আর ভালো লাগেনা। আমাদের হোস্টেল চার্জ আতিক স্যার এর মোবাইল ফোনে যখনই বাসা থেকে ফোন দিতো, মার সাথে কথা বলতাম আর কান্না করতাম। মাকে বলতাম," মা তুমি আমাকে নিয়ে যাও। তুমি যা বলবা আমি তাই করবো তাও আমাকে নিয়ে যাও।"। ওপাশ থেকে ধরে আসা গলায় মায়ের কথা শুনতাম।" একটু কষ্ট করে থাকো আব্বু। আচ্ছা পরশুদিন তোমার আব্বুকে নিয়ে তোমাকে দেখতে আসবো যাও।" মা যখন আসতো আমার আনন্দের সীমা থাকতো না। সকালে এসে যখন বিকালবেলা চলে যেতো তখন এতো কষ্ট লাগতো বলে বুঝানো সম্ভব নয়। এমন হয়েছে ১ সপ্তাহে ৩ বার আমাকে দেখতে আসতে হয়েছে। একবার যখন হোস্টেল ছুটি দিলো, আব্বুর সাথে বাসায় এসে মার সাথে গেলাম নানুবাড়ি। সেবার মায়ের সাথে অনেকদিন সময় কাটাতে পেরেছিলাম। ছুটি শেষ। চলে জেতে হবে ঢাকায়। মেঝো মামার সাথে ঢাকায় চলে আসার উদ্দেশে ফেরার সময় নানুবাড়ির সীমানা পার হবার পর বুঝতে পারলাম মাকে ছাড়া থাকতে পারবো না আমি। মা ভেজা চোখে আমার পিছে পিছে আসছিলেন। আমি কাঁদতে কাঁদতে দৌড়ে গিয়ে মাকে জড়িয়ে ধরে বলছিলাম আমি মাকে ছাড়া কোথাও যাবো না। মা খুব কাঁদছিল সেদিন। মারও খুব কষ্ট হচ্ছিলো বুঝতে পারছিলাম। পরে মেঝোমামার রাগের কারনে ফিরতে বাধ্য হয়েছিলাম। সেবারই প্রথম মাকে ছাড়া দূরে ৩ মাস ছিলাম। ক্লাস ৬ এর ওই ৩ মাস আমার জীবনের ভয়ঙ্কের কষ্টের একটা সময় ছিল।

এর মাঝে মায়ের সাথে কত যে বেয়াদবি করেছি তার হিসেব নাই। অবশ্য মার মনে কষ্ট দিয়ে আমারও শান্তি লাগে না। যতক্ষণ না পর্যন্ত মা মাফ করে দিতেন ততক্ষণ পর্যন্ত মায়ের পা ধরে বসে থাকতাম। এখনও তাই করি।

যেদিন এসএসসি পরীক্ষার রেজাল্ট দিবে সেদিন মাকে নিয়ে আগে আগে স্কুলে চলে যাই। ক্লাসে ক্লাসে সেকশন ক্লাস টিচাররা রেজাল্ট দিবেন। আমি মাকে নিয়ে আগেই আমার ক্লাস টিচারের রুমে গিয়ে রেজাল্ট জানলাম। মা যখন জানলো জিপিএ ৫ পেয়েছি আনন্দে আমাকে বুকে জড়িয়ে ধরলেন। খুশিতে মায়ের চোখে পানি এসেছিল সেদিন। আর আমি পেয়েছিলাম শান্তি। কত বছর পর যে মায়ের বুকে স্থান পেয়েছিলাম সেটা মনে নেই। সেই মুহূর্তে খুব আনন্দ হচ্ছিলো আমার।

কলেজে পড়া অবস্থায় একবার খুব অসুস্থ হলাম। কিছুই খেতে পারতাম না। যা খেতাম সব বমি করে ফেলে দিতাম। মাত্রাতিরিক্ত জ্বর ও পেট ব্যথা ছিল আমার। এতোটা অসুস্থ কখনো হই নাই আমি। মায়ের কপালে দেখেছিলাম আশঙ্কার ছাপ। চোখে দেখেছিলাম ভয়। সুস্থ হবার পর তো মা সেই খুশি।

এইচএসসি পরীক্ষায় আশা করেছিলাম গোল্ডেন জিপিএ ৫ পাবো। জিপিএ ৫ ও পাই নাই। পেয়েছিলাম ৪.৮০। খুবই আশাহত হয়েছিলাম আমি। আমার চেয়ে বেশি মন খারাপ হয়েছিলো আমার মায়ের। সন্ধ্যাবেলা ভাবলাম যে এই রেজাল্টে বাসার কেউ খুশি না। যাবো না আর বাসায়। দূরে কোথাও চলে যাবো। গাবতলি বালুঘাটে একটা বালুর ট্রলারে বসে ছিলাম এই ভেবে যে এই ট্রলারে করেই কোথাও চলে যাবো। সাথে ছিল আমার খুবই কাছের বন্ধু মেশকাত। আমাকে বিভিন্নভাবে বুঝাচ্ছিল। ওর রেজাল্ট আমার চেয়ে খারাপ হয়েছিলো। কিন্তু বেচারা আমার দুঃখে কান্না করছিলো আমার সাথে। আর এদিকে রাত হয়ে যাচ্ছিলো। বাসা থেকে মা ফোন দিলো। মা কে বললাম আর বাসায় ফিরবো না। তখন মা রাগ করে ধমক দিয়ে বাসায় ফিরতে বলছিলেন। আমি ফোন কেটে দিয়েছিলাম। আরও খানিকবাদে আবারো মায়ের ফোন। এবার মা কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলছিলেন,"বাসায় আয় বাপ। পাগলামি করিস না। রেজাল্ট কোন ব্যাপার না। তুই বাসায় আয়। তোরে ছাড়া আমি কিভাবে থাকবো বাপ। আয় বাপ আয়।" সেদিন বাসায় ফিরে মাকে জড়িয়ে ধরে খুব কান্না করেছিলাম। আর মা আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছিলেন।

এখন বড় হয়েছি। মায়ের কাছে প্রায় সব কথাই বলি আমি। আমার কোন কারনে মন খারাপ হলে মায়েরও মন খারাপ হয়ে যায়। কান্না করে ফেলেন মা। এখনো মায়ের হাতে ভাত খাওয়ার জন্য বাহানা করি। মা ও "ডেইলি ডেইলি ভাত খাওয়ায় দিতে ভালো লাগে না।" এই ডায়লগ দিতে দিতে ভাত খাওয়ায় দেন। এখনো মায়ের পছন্দ ছাড়া ঈদে পরনের কাপড় কিনতে পারিনা। মা ও সেজেগুজে বাহিরে কোথাও যাওয়ার সময় আমাকে জিগাস করবেন,"আমাকে কেমন লাগছেরে বাপ?"। আমি চাই মায়ের সাথে আমার এই মধুর সম্পর্ক আজীবন মধুর থাকুক বিনা শর্তে। আমি মাকে খুব ভালোবাসি। আমি এটাও জানি আমার মা আমাকে আমার চাইতেও অনেক বেশি ভালোবাসেন। মায়ের কাছ থেকে কখনো আলাদা হতে চাই না আমি।

ভালো থাকুক আমার মা। ভালো থাকুক সকল মা। ভালো থাকুক মা-ছেলের মধুর সম্পর্ক।

মন্তব্য ২ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ২৫ শে এপ্রিল, ২০১৭ সকাল ৯:০৭

মানবী বলেছেন: লেখাটা পড়ার শুরুতে ঠোঁটের কোনে হাসি ফুটলেও শেষে এসে চোখ আর্দ্র হয়ে উঠেছে!
সেই আর্দ্রতা কোন কষ্টে নয়, সন্তানের প্রতি মায়ের ভালোবাসার প্রকাশ মন ছুঁয়ে গেছে তাই!

আপনার মা অসাধারন আর সেই সাথে খুব ভাগ্যবতী। মায়ের প্রতি ভালোবাসার এতো সুন্দর প্রকাশ সকলসন্তানের পক্ষে সম্ভব নয়।

লেখাটা আপনার মাকে দেখালো তিনি প্রচন্ড খুশি হবেন হয়তো

সুন্দর পোস্টের জন্য ধন্যবাদ নিয়ন খান।

২| ২৫ শে এপ্রিল, ২০১৭ রাত ১১:৫৫

নিয়ন খান বলেছেন: আপনাকে ও ধন্যবাদ মানবী

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.