![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
০৬/০৭/২০১৭
তৃণা চলে গেছে আজ ৩ মাস হলো।শেষ যেদিন তৃণা যাবার আগে আমাদের দেখা হলো,আমরা দু'জনেই জানতাম এটা আমাদের শেষ দেখা।দেখা হবার আগে আমি একটা শর্ত দিয়েছিলাম।কোনো কান্নাকাটি করা যাবে না।কিন্তু তৃণা সেদিন কেদেঁছিল।রেস্টুরেস্ট কাস্টমার থেকে স্টাফ,বৈকি থালা বাসনও হয়ত কেঁপে উঠেছিল তৃণার কান্নার শব্দে।তৃণা আমার হাত ধরে বলেছিল "আমাকে ভুলে যাও নয়ন, জানি কষ্ট হবে কিন্তু আমি জানি তুমি পারবা... ভুলে যা...ও।
তৃণা আর কিছু বলতে পারেনি।ব্যাগ থেকে একটা প্যাকেট বের করে টেবিলে রেখে মুখে টিস্যু চেপে বেরিয়ে গিয়েছিল তৃণা।ভেবেছিলাম কিছুদূর গিয়ে ও ফিরে আসবে।এসে আমাকে জড়িয়ে ধরে বলবে,না না না।আমি তোমাকে ছাড়া আমি জীবনটাই তো ভাবতে পারি না।বসে ছিলাম আমি তৃণা আসবে ভেবে যেমনটা বসে আছি আজও।ঠিক তৃণা যেপাশে বসেছিল তার বিপরীত পাশে।চোখে চোখ রেখে হাসবো বলে।
০২/০৮/২০১৭
তৃণা আমাকে যে প্যাকেটটা দিয়েছিল তা খুলে দেখা হয়নি।ঠিক করেছিলাম এই দিনটায় খুলবো।এই দিনটা আমাদের কাছে অনেক স্পেশাল ছিল।আমি সাহস করে এদিন তৃণার হাত ধরেছিলাম।সেই কি ভয়! পুরো ২ সপ্তাহ ধরে প্ল্যান করেছিলাম।কোন দিকটায় বসবো,কীভাবে হাতটা ধরবো, আঙ্গুল ধরবো নাকি ডিরেক্ট হাত।সেদিন হাতটা ধরেছিলাম।খুব শক্ত করে,কানে কানে বলেছিলাম এ হাতটা জীবনে ছাড়বো না। আসলেই অনেক জোরে ধরে ফেলেছিলাম, তৃণা সত্যিসত্যি ব্যথা পেয়েছিল খুব।আজ শেষবার তৃণার স্পর্শ পাবার আশায় প্যাকেটটা নিয়ে বসলাম। আচ্ছা কি আছে প্যাকেট টায়?এমন কোন সংকেত দিয়ে যায়নি তো তৃণা যে আমি আবার ওকে ফিরে পাবো? কোন ক্ষুদ্র চিরকুট। হয়ত লিখে গেছে, জীবনটা একটু গুছিয়ে ফিরে আসবো।চিন্তা করো না।নিজের যত্ন নিও।
মনে খুব আশা নিয়ে খুলে ফেললাম।একটা নীল পাঞ্জাবি আর ১৮ টা চিরকুট। হয়তো প্যাকেট টা না খুললেই ভালো হতো বাকি জীবনে তৃণাকে আস্তে আস্তে ভুলে যেতাম।ভুলে না গেলেও স্মৃতি তো ঝাঁপসা হয়ে যেত।
০৪/০৮/২০১৭
হাসপাতাল থেকে আজ বাড়ি ফিরলাম।সেদিন তৃণার চিঠি পড়ে নিজেকে কন্ট্রোল করতে পারি নি।সৃষ্টিকর্তা আর জাহান্নামের ভয় উপেক্ষা করে ডান হাতের রগটা কেটে ফেলেছিলাম।প্রচন্ড বেগে রক্ত বের হচ্ছিল আর আমার মনে হচ্ছিল যেন একটা চাপ কমে যাচ্ছে, চারিদিক আঁধার হবার সাথে সাথে তৃণার জন্য ভালোবাসায়ও আঁধার হয়ে আসছে,ছিন্ন হয়ে যাচ্ছি পৃথিবী থেকে।ছোটভাই পোকেমন কার্ড নিতে এসে আমাকে দেখে চিৎকার করে উঠেছিল।আম্মু ভাইয়া আ..মমম ভাইয়া..।
সৃষ্টিকর্তা মনে হয় তাই চেয়েছিলেন।আমাকে তাই এ যাত্রায় জাহান্নামে যেতে হলো না।
১২/০৮/২০১৭
তৃণার শেষ চিঠিতে লেখা ছিল ভুলে যাও আমাকে নয়ন।কাউকে ভুলে যাওয়া কি এতই সোজা?
প্রিয় মানুষটাকে কি ভুলে যাওয়া যায়? চাইলেই কি মুছে ফেলা যায় সব স্মৃতি?
আচ্ছা আমাদের প্রিয় মানুষগুলো যদি আমাদের মত ভাবতো।আমাদের মত ভালোবাসত।
০৮/০৯/২০১৭
৭নাম্বার সিগারেটটা প্রায় জ্বলে শেষ হয়ে গেল।তৃণা একদিন আমার হাতে হাত রেখে বলেছিল,
"একটা জিনিস চাবো?" আরেহ বাবা! আমার যখন কিছু লাগে বা কোন অধিকার ফলাতে চাইতাম ওর ওপর
ডিরেক্ট মুখের উপর বলতাম।ও কখনো না করতো না সে যত কষ্ট হোক না কেন।আমি বললাম" জোর হুকুম,মহারাণী! বলেন কি চাই?
তুমি কখনো সিগারেট খাবা না, কথা দাও। আমার গা ছুঁয়ে।
আমি নিতান্ত কোনদিন সিগারেট ছুঁইনি।কিন্তু আজ যখন একটা শব্দ কানে বাজে "ভুলে যাও"
উফ! কত ভুলে যাওয়া,কত ভালোবাসা,কত কষ্ট।আমি ছুঁটে গেছি কত সিগারেট,গাঁজা,ইয়াবা হেরোইনের কাছে। কিছুই আমাকে এতটুকু ভোলাতে পারে নি।ভুলে যাও ভুলে যাও তৃণা আমি ভুলে যাও।উফ।হাতের আধঁ টানা সিগারেট টা ঠেসে ধরলাম, পোঁড়া মাংসের গন্ধ।উফ! কে? তৃণা তৃণা ভুলে যাও।আর পারছিনা আমি।
২৭/০৯/২০১৭
সেমিস্টার ফাইনালের রেজাল্ট দিলো আজ।মিসিং আউট ফ্রম দি লিস্ট।রিয়াদ স্যার আমাকে তার রুমে ডেকে নিয়ে গেলেন।"সাত সেমিস্টারে টপ করে এখন ফেল করছো।তাও ইজিয়েস্ট সেমিস্টার এট অল।এনিথিং রং নয়ন?"
-ইভরিথিং ইজ অলরাইট স্যার।
স্যার আমার চোখের দিকে তাকিয়ে রইলেন।আমি চোখ ফিরিয়ে নেবার চেষ্টা করছি
রুমের টেবিলে, সিনারি,ফ্লোর।উফ!সবখানে যেন রিয়াদ স্যার।সবখানে। আমি চোখ ফেরাতে পারছি না।অন্য কোথাও কি তাকানো যাবে না? আমি চোখে চোখ রাখতে চাই না,এ চোখ শুধু তৃণার চোখ থাকবে, আমি রাখবো না চোখ,প্লিজ প্লিজ স্রষ্টা দয়া করো।আমি কেঁদে দিলাম।রিয়াদ স্যার হতচকিত
.
তিনি তখনো চেয়ে আছেন তখনো চোখের দিকে, তার চোখেও পানি। হয়তো বুঝে ফেলেছেন চোখের ভাষা।
না না।আমি কাউকে বুঝতে দিতে চাই না।
০৭/১০/২০১৭
হুড়মুড় করে তৃণা এসে ঢুকল।খবরটা পেয়ে কাল রাতের ট্রেনেই চলে ও এসেছে।আমি ডাকিনি, কোন চিঠিও দেইনি।ও এসেছে আমাদের ভালোবাসার টানে।দু'হাত দূরে দাঁড়িয়ে আছে ও।ও কাঁদছে কেনো?
আমার তৃণা কাঁদছে কেন? হে স্রষ্টা।সব কান্না আমায় দাও।আমার তৃণাকে কেনো?
তৃণা ধীরে ধীরে আমার কাছে আসছে।ওর হাতে আমার দেয়া গোলাপের সেই তিনটা পাপড়ি
।কাছে এসে তৃণা কান্নায় ভেঙ্গে পড়লো '২ ফুট লম্বা একটা প্ল্যাকার্ড ধরে।
তাতে লিখা 'নয়ন হাসান' মৃত্যু :৪ অক্টোবর, ২০১৭।শেষবার ভুলে যাবার বদলে তৃণা বলে উঠল "ভালোবাসি নয়ন
।"
©somewhere in net ltd.