নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সন্ধ্যার নীলারোণ্য

সন্ধ্যার নীলারোণ্য › বিস্তারিত পোস্টঃ

জীবনের প্রথম লেখা গল্প।জানি না কেমন হয়েছে।তবে সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছি এতটুকু বলতে পারি।

০৬ ই আগস্ট, ২০১৫ দুপুর ১:৪২

এক বান্দর আর বান্দরনীর গল্প।

ছাদে দাঁড়িয়ে ভয়ে ভয়ে আচার খাচ্ছি।বান্দর রানাটা আসলে গজব হয়ে যাবে।এসেই হাত থেকে আচারের বাটিটা কেড়ে নিয়ে তো খাবেই প্লাস আম্মুর কাছ থেকে আচারের বয়াম টাও নিয়ে যাবে আর ফেরত দেওয়ার নাম গন্ধ করবে না।কেন যে এই বান্দরটা আমার জীবনে এল বুঝলাম না।আমাদের বাসার নিচতলায় থাকে রানারা।আব্বুর বন্ধুর ছেলে।তার আমাদের পরিবারের সাথে ওদের পরিবারের অনেক ভাব।কিন্তু ছেলেটা আমার জীবনের শনি গ্রহ।আমার সুন্দর জীবন টা ভাজা ভাজা করতে সে মুখ্য ভূমিকা পালন করছে।
মনের সুখে আচার খাচ্ছি।খাওয়ার মাঝামাঝি পর্যায়ে এসে মনে হল মাথায় বিশাল এক চাঁটি খেলাম।
---কীরে আমাকে রেখেই আন্টির বানানো আমের আচার খাচ্ছিস তোর সাহস তো কম না।
---আমার মায়ের আচার আমি একাই খাবো।তোর অনুমতি বা তোকে দিয়ে খাব কেন?
---আচ্ছা ঠিক আছে এখন আচার দে।
---দিব না কি করবি?
---তেমন কিছু না।আন্টিকে যায়ে বলব তুই প্রায় কলেজ এ না গিয়ে বান্ধবীদের সাথে ঘুরতে যাস।
---প্রুভ আছে তোর কাছে?
---অবশ্যই আছে এই দেখ,
রানার মোবাইলে আমার আর আমার বান্ধবীদের ছবি ভিডিও দেখা যাচ্ছে।আমরা সবাই মিলে হইচই করে আইস ক্রিম খাচ্ছি এই দৃশ্যটা রানা ভিডিও করে নিয়েছে।এইটা আম্মু দেখতে পেলে কি করবে তা ভেবে আমার কালোঘাম ছুটে গেল।মলিন মুখে বান্দর টাকে আচারের বাটি দিয়ে উঠে পড়লাম।ছাদের মাঝামাঝি গেছি হঠাৎ আবিষ্কার করলাম আমি ছাদের উপর দাঁড়িয়ে নয় বসে আছি।পায়ে খুব ব্যাথা।তারমানে আমি পিছলা খেয়ে পড়ে গেছি।ভ্যা করে একবার কেঁদে উঠতে চাইলাম কিন্তু পিছনের বান্দর টা যেইভাবে হাসছে আমি কেঁদে দিলে আরো দ্বিগুন জোরে হাসবে।ধুর আর ভাল লাগে না।মাঝে মাঝে ইচ্ছে করে এন্টার্কটিকা চলে যাই।কিন্তু সেইখানে গেলে দেখা যাবে এই বান্দর প্লেনে করে সেইখানেও উপস্থিত হয়েছে।আল্লাহ এই বান্দরের হাত থেকে কবে নিস্তার দিবে আমায়?
আল্লাহ আমার কোন কথা তেমন শুনতে চায় না কিন্তু এই কথাটা কিভাবে যেন ফলে গেল।আমার বান্দর এক্সিডেন্ট করে হাত পা ভেঙ্গে হাসপাতাল পড়ে রইল।কিন্তু খুশি হবার বদলে আমার লাগল প্রচন্ড কস্ট।এইভাবে তো নিস্তার চাইনি আমি ওর থেকে।রাতদিন চব্বিশ ঘন্টা হাসপাতাল পড়ে থাকতাম আমি বান্দরটার কাছে।সারাদিন বান্দরটার সেবা শ্রুশুষা করতাম।রাতেরবেলা যখন ঘুমাত তখন আমি ওর মাথার কাছে বসে ঘুমিয়ে যেতাম।এই সময় বান্দরটা আমার দিকে কেমন জানি আড়চোখে তাকানো শুরু করল।আমি অবশ্য তেমন পাত্তা দিলাম না।১ মাস পর হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেল রানা বান্দর।ছাড়া পেলাম আমিও।কিন্তু কিছুদিন ধরে লক্ষ্য করলাম বাসার মানুষ ও আমার দিকে কেমন করে যেন তাকাচ্ছে।আড়ালে আমাকে আর রানাকে নিয়ে কি কি যেন বলছে।শেষ পর্যন্ত ব্যাপারটা জানতে পারলাম আমার ছোট বোন বিন্তির কাছে।আমাদের পরিবার নাকি আমার আর রানার বিয়ে দেওয়ার পরিকল্পনা করছে।আমি হাসপাতালে যেইভাবে রানার সেবা করেছি তাই দেখে সবাই ভেবে নিছে আমি নাকি রানাকে ভালবাসি।কি সর্বনাশা কথা।এই বান্দর টা আমার বন্ধু হয়ে আমার জীবন টা যেমন ভাজা ভাজা করে দিচ্ছে বর হয়ে এলে একবারে যে ত্যানা ত্যানা করে ফেলবে এই ব্যাপারে আমার কোন সন্দেহ নেই।নাহ এই ব্যাপারটা মিটাতেই হবে।আর এই ব্যাপারে আমাকে সবচেয়ে বেশী রানাই সাহায্য করতে পারবে।বান্দরটার মাথায় এমনিতে বুদ্ধি শুদ্ধি কম হলেও অনেকসময় নানারকম ফিচলে বুদ্ধি কাজ করে।ছাদে যায়ে দেখি রানা বান্দর চুপচাপ বসে আকাশ দেখছে।আমি পুরা হা হয়ে গেলাম।রানাকে কখনো আমি এইভাবে চুপ করে বসে থাকতে দেখি নি।সারাদিন বান্দরের মত লাফঝাঁপ না করলে তো ওর হজমের গোলমাল হয়।আমি কাছে গিয়ে বললাম,
---ওই বান্দর তুই এখানে কবি স্টাইলে বসে আছিস আর আমাদের বাসায় আমাদের দুইজনকে নিয়ে কি হচ্ছে জানিস?
---না তো কি হচ্ছে?
---আমাদের দুইজনকে দুইজনের সাথে বিয়ে দেওয়ার পরিকল্পনা করছে।
---ও।
---ও মানে? তুই কিছু করবি না?
---কি করব? আর তাছাড়া আমার এই বিয়েতে মত আছে।
---মত আছে মানে? তুই আমাকে বিয়ে করতে চাস? কিন্তু কেন?
আমার এই কথা শুনে বান্দরটা আমার দিকে যে দৃষ্টিতে তাকাল যে আমি পরিষ্কার বুঝতে পারলাম বান্দরটা আমার প্রেম এ পড়েছে।সারাজীবন প্রেমের ঘোর বিরোধী আমি।রানাকে দেখতে দেখতে ছেলেদের প্রতি আমার মনে যে বিরূপ ভাব সৃষ্টি হয়েছে তা দূর করার সাধ্য কারো নাই।
রানার বাঁদরামী আমি সারাজীবন সহ্য করতে পারব কিন্তু ও বিয়ের সাজ সেজে আমাকে ন্যাকা ন্যাকা কন্ঠে ভালবাসি বলবে এইটা সহ্য করা আমার পক্ষে অসম্ভব।
বাসায় এসে বাবা মাকে ডেকে আমি সব বুঝিয়ে দিলাম যে আমি রানাকে বিয়ে করতে চাই না আর আল্টিমেটাম দিলাম যে এই ব্যাপারে তারা যদি আমাকে জোর করে তাহলে আমি খাওয়া দাওয়া বন্ধ করে অনশন শুরু করব।আমার এই হুমকিতে কাজ হলো।আব্বু আম্মু আর এই ব্যাপারে কথা তুললেন না।তবে লাভের মধ্যে ক্ষতি হ লো এই যে বান্দরটা আমার সাথে কথা বলা বন্ধ করে দিল।ছাদে আমি উঠলে সাথে সাথে নেমে যেত।প্রথম প্রথম ব্যাপারটা ভাল লাগলেও আস্তে আস্তে আর ভাল লাগছিল না।সব সময় মনে পড়ত বান্দরটার কথা।খুব অবাক হয়ে লক্ষ্য করলাম ওর বাঁদরামী গুলো খুব মিস করছি আমি।ও যখন আমার সাথে কথা না বলেই চলে যেত তখন এত কস্ট হত তা ভাষায় প্রকাশ করার মতন না।এর মধ্যে গোদের উপর বিষফোড়ার মত বিন্তি আমাকে খবর দিল রানা বান্দরটা নাকি আমাদের পাড়ার এক মেয়ের সাথে প্রেম করা শুরু করেছে।মেজাজটাই খারাপ হয়ে গেল।মেয়েটাকে চিনতাম আমি।আমার পাশের বাসায় থাকে।সুন্দর বলে খুব অহংকারী।আমি নিজেও একদিন রানার সাথে মেয়েটাকে দেখলাম।দুইজন হাসা হাসি করে কথা বলছে।মাথায় মনে হলো বিষ্ফোরন হলো।ওদের কাছে গিয়ে আচমকা সপাটে মেয়েটার গালে একটা চড় কষিয়ে চলে এলাম।কেন যে এই কাজ করলাম নিজেও জানি না।বাসায় ছাদে এসে চুপচাপ বসে আছি।এই সময় বান্দরটা এল।আমি দেখেও না দেখার ভান করলাম।বান্দরটা কিছুক্ষন চুপ করে থেকে বলল,
---ওই বান্দরনী তুই রিয়াকে এমন চড় মারলি কেন?
---আমার ইচ্ছে হয়েছে আমি মেরেছি।
---দেখ মেজাজ খারাপ করবি না।কেন মারলি সেইটা বল।
---কেন মেজাজ খারাপ করে দিলে ছাদ থেকে ধাক্কা মারবি? মার তাহলে।
---না মারব না।তোর জালায় নিজেই লাফ দিয়ে আত্মহত্যা করব।
---আমি তোকে এত জালাই? যা তাহলে তোর রিয়ার কাছে।আর তোদের ডিস্টার্ব করব না।
---আমার রিয়ার কাছে যাওয়ার কোন ইচ্ছে নেই।আর ও আমার বন্ধু শুধু।
---ওর কাছে যাওয়ার ইচ্ছে নেই তাহলে তোর কি করতে ইচ্ছে করে বল।
---আমার কি করতে ইচ্ছে করে জানতে চাস? আমার তোর হাত ধরে ছাদের এই রেলিং এর উপর দিয়ে হাঁটতে ইচ্ছে করে।রাতে যখন ফুটফুটে জোস্নার আলো হয় তখন তোর মাথা কাঁধে নিয়ে গান গাইতে ইচ্ছে করে।যখন আকাশ কালো হয়ে বৃষ্টি নামে তখন তোকে নিয়ে সেই ঝুম বৃষ্টিতে ভিজতে ভাল লাগে।আর..
---আর কি?
---আর তুই যখন আমার উপর খুব রাগ করিস,গাল ফুলিয়ে বসে থাকিস তখন তোর চোখে চোখ রেখে ভালবাসি বলতে ইচ্ছে করে।
বান্দরটার মুখে ভালবাসি শুনে কেন জানি একটু ও খারাপ লাগল না বরং খুব ভাল লাগল।নিজের অজান্তে কখন যে বান্দরটার বুকে মাথা দিয়ে নিজেও ভালবাসি বলে ফেলেছি খেয়াল নেই।শুধু এইটুকু মনে আছে ভালবাসি বলার পর বান্দরটা খুশিতে যেইভাবে লাফ ঝাঁপ দিচ্ছিল তা কেউ দেখলে নির্ঘাত বান্দরটার জন্য পাবনার পাগলা গারদে একটা সিট বুকিং করে ফেলত।

তারপর আর কি বান্দরটা এখন আমার জীবনের অবিচ্ছ্যেদ্য অংশ হয়ে গেছে।২৪ ঘন্টার মধ্যে ২০ ঘন্টা ঝগড়া না করলে আমাদের কারো রাতের ঘুম ঠিকমত হয় না।কিন্তু রাগারাগি করে কিছুক্ষন পর বান্দরটা ফোন করে যখন এত সুন্দর করে স্যরি বলে তখন ইচ্ছে করে বান্দরটার চুল গুলো এলোমেলো করে দিয়ে বলি এই বান্দর তোর উপর কি আমি রাগ করতে পারি।তোকে যে অনেক অনেক ভালবাসি।

(সন্ধ্যাতারা কুমকুম)

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.