নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সন্ধ্যার নীলারোণ্য

সন্ধ্যার নীলারোণ্য › বিস্তারিত পোস্টঃ

ভালোবাসার নিষ্ঠুর বাস্তবতা অনেক সময় মেনে নেওয়া যায় না।মন মাঝে মাঝে রূপকথার ভালোবাসার আড়ালে হারিয়ে যেতে চায়।

০৬ ই আগস্ট, ২০১৫ দুপুর ২:১৬

বান্দর আর বান্দরনীর বিবাহ।


১ বছর ১০ দিন প্রেম করার পর আমাদের পরিবার সিদ্ধান্ত নিলেন যে তারা আমাদের দুই বান্দর বান্দরনীর লেজ একসাথে বেঁধে দিবেন।মানে বিবাহ করিয়ে দিবেন।এই সিদ্ধান্তে আমার বান্দর খুব খুশি।আমার জীবন টাকে কিলিয়ে ভর্তা করার জন্য সে খুব উদগ্রীব হয়ে আছে।আমি মনে মনে বললাম, এত ব্যাস্ত কেন তুমি বাছাধন? এতদিন তোমার অত্যাচার আমি সহ্য করেছি এইবার তোমার পালা।এইবার তুমি বুঝবে কত আটায় কত রুটি।খালি বিয়েটা হতে দাও।"
আমাদের বিয়েতে কোন সমস্যা আসতে পারে তা আমার কল্পনায় আসে নাই।কারন আমাদের বিয়েটা দুই পরিবারের সম্মতিতেই হচ্ছে।কিন্তু যেইখানে রানার মত ঘিরিংগিবাজ পাবলিক থাকবে সেইখানে সমস্যা না হয়ে পারে না।তাই হল।এনঙেজমেন্ট এর আগের দিন আসলেন আমার নানা জান।আর এসেই ভাল মানুষের মত আমার বিয়েটা ভেঙে দিলেন।আমার নানাজান খুব কড়া এক কথার মানুষ।তাকে আমার আব্বু আম্মু দুইজনেই যমের মত ভয় করেন।তিনি বাংলাদেশে বেশী থাকেন না।নানী মরার পর দেশ বিদেশ ঘুরে বেরাতেই তিনি পছন্দ করেন।তিনি পুরাই প্রেমের বিরোধী।হিন্দুদের পূর্বজন্ম হয় বলে একটা কথা আছে।আমার নানা হিন্দু হলে বলা যেত তিনি আগের জন্মে হিটলার হয়ে জন্ম নিছিলেন।যাই হোক আমার হিটলার নানা এসেই আম্মুর উদ্দ্যেশ্যে এক হুঙ্কার ছাড়লেন।
---রাবেয়া, তোমার সাহস তো কম নয় আমাকে না জানিয়েই আমার নাতনীর বিয়ে দিয়ে দিচ্ছ।
---ইয়ে বাবা তুমি একটু শান্ত হও।
---তুই চুপ থাক।আমার নাতনীর সাথে যে ছেলের বিয়ে হচ্ছে তাকে আমার সাথে দেখা করানোর ব্যবস্থা কর।আমার ছেলেকে ভাল লাগলেই শুধু বিয়ে হবে।আর এখন আমার নাতনীকে ডেকে দে।
বলা বাহুল্য আমি তখন বাসায় ছিলাম না।বান্দরটাকে নিয়ে বিয়ের শপিং এ গিয়েছিলাম।বান্দরটাকে নিয়ে শপিং করতে যাওয়া আর জ্বলন্ত আগুনে ঝাঁপ দেওয়া এক কথা।মেয়েদের মত খুঁতখুঁতে তার স্বভাব।পাঞ্জাবীর রং পছন্দ হয় তো ডিজাইন পছন্দ হয় না নানান ফ্যাকড়া।যাই হোক সব কিছু মিটিয়ে যখন বাড়ি ফিরে এলাম তখন দেখলাম ড্রইংরুমের সোফায় নানাজান বসে রয়েছেন।আমি নানাজান কে সালাম দিতে যাব এই সময় দেখলাম আমার পাশে দাঁড়িয়ে থাকা বান্দরটা নানার সাথে কড়া ভাষায় কথা বলতে শুরু করেছে,
---এই যে মুরব্বী কে আপনি?
আগে তো দেখিনি?আমার বউয়ের বাসায় এসে পা তুলে বসে আছেন।
---ইয়ে রানা উনি আসলে।
---এই তুমি চুপ থাক।বিয়ের সময় বাসার লোক ব্যস্ত থাকলে অনেক চোর ছ্যাচড় ঢুকে পড়ে।তারপর সুযোগ বুঝে গয়না গাটি নিয়ে পালায়।এই যে মুরব্বী আপনি বের হন।আমরা আপনাকে চিনি না।
---ছিঃ রানা কি বলছ এইসব? উনি আমার নানা হন।
আমার এই কথা শুনে বান্দরটা মাছের মত কয়েকবার খাবি খেল।তারপর মিনমিন করে বলল, "উনি তোমার সেই হিটলার নানা।আগে বলবেনা এই কথা?"
আমি উওরে কিছু বলার আগেই বাঁজখাই গলায় নানাজান ডেকে উঠলেন আম্মুকে।"রাবেয়া এই রাবেয়া আমার নাতনীর সাথে যে ছেলেটা দাঁড়িয়ে আছে তার সাথে আমার নাতনীর বিয়ে হবে না।বিয়ের আগেই এমন কতৃত্বফলাচ্ছে বিয়ের পরে তোদের বাসা ছাড়া করবে।"নানার কথা শুনে আব্বু বিড়বিড় করে বলল, "বাবা কালকেই তো এনগেঞ্জমেন্ট।এখন বিয়ে ভাঙা কি ঠিক হবে?" নানা সঙ্গে সঙ্গে বলে উঠলেন, কাল এনগেঞ্জমেন্ট হবে।এখনো তো হয়নি।অতএব বিয়ে ক্যান্সেল।অবস্থা বেগতিক দেখে আমি বান্দরটাকে কেটে পড়তে বললাম।এও বললাম যে, নানার মাথা ঠান্ডা না হওয়া পর্যন্ত বিয়েটা পিছিয়ে দিতে।রানা রাজী হলো।এরপর আমরা সবাই নানাকে রাজী করানোর মিশনে নামলাম।কিন্তু এত করে বুঝানোর পরো নানা রাজী হচ্ছিলেন না।দিনের পর দিন চলে যেতে লাগল আমার রানার সাথে দেখা হচ্ছিল না কারন নানাজান আমাকে বাসা থেকে বের হতে দিচ্ছিলেন না।তিনি আমার জন্য পাত্র দেখা শুরু করলেন।পণ করলেন আমাকে তার পছন্দের ছেলের সাথে বিয়ে না দিয়ে তিনি এই বাসা ছেড়ে কোথাও যাবেন না।খুব মেজাজ খারাপ হলো আমার।এইদিকে আবার বিন্তি একদিন খবর দিল, আমার বান্দরটার নাকি খুব খারাপ অবস্থা।সারাদিন বাসায় বসে থাকে।কারো সাথে মিশে না কথা বলে না।ইদানিং নাকি সিগারেট খাওয়াও শুরু করেছে।খুব মায়া লাগল আমার।কান্না পেতে লাগল তার সাথে নানাজানের উপর রাগ।তবে কথায় আছে না ইচ্ছা থাকলেই উপায় হয়।এইবারো তাই হলো।আমরা সবাই জানি নানাজান পাগল মানুষদের খুব ভয় করেন।আমি সেই সুযোগটাই নিলাম।পাগল সাজা শুরু করলাম।খেতাম না, ঘুমাতাম না, গোসল দিতাম না।একবার নানার ঘরে গিয়ে তার জামা কাপড়ে আগুন ধরে দিলাম।খুব কস্টে আগুন নিভিয়ে আমার জন্য একজন ডাক্তার ডেকে আনলেন বাবা।ডাক্তার আমাকে দেখে বললেন, আমার নাকি নার্ভাস ব্রেকডাওন হয়েছে।যত শিঘ্রী সম্ভব আমার যে কারনে এমন হয়েছে তা বের করে ইচ্ছে পূরন না করলে আমি নাকি অচিরেই পাগল হয়ে যাব।পরে শুনেছি এই ডাক্তারটি নাকি বাবার বন্ধু।বাবাই তাকে নানার সামনে এই কথা বলতে শিখিয়ে দিয়েছিলেন।যাই হোক আমার প্ল্যান কাজে লাগল।নানা পরেরদিনি গাট্টি বোঁচকা নিয়ে বাসা থেকে বিদায় নিলেন।যাওয়ার আগে আম্মুকে বলে গেলেন, আমি যাকে পছন্দ করি তার সাথেই যাতে আমার বিয়েটা দিয়ে দেওয়া হয়।তিনি কিছুই মনে করবেন না।
যাক শেষ পর্যন্ত হাফ ছেড়ে বাঁচলাম।খবর টা দেওয়ার জন্য বান্দরটার বাসায় গিয়ে জানলাম যে সে কিছুক্ষন আগে ছাদে গিয়েছে।বাইরে প্রচন্ড বৃষ্টি হচ্ছে।দেখলাম ছাদের মাঝখানে দাঁড়িয়ে আমার বান্দরটা ভিজছে।এত অসহায় লাগছে তাকে।আস্তে আস্তে কাছে গেলাম বান্দরটার।কাছে গিয়েই বুকে ঝাঁপিয়ে পড়লাম।আহা কতদিন আমার বান্দরটার বুকে মাথা দেইনি।

এই ঘটনার দুই দিন পরের কথা।আমি কনের সাজে স্টেজে বসে আছি।কাজী সাহেব কবুল বলতে বলছেন।বাংলা সিনেমায় দেখেছি কবুল বলতে নায়িকারা অনেক কান্নাকাটি করে।কিন্তু আমার কেন জানি কান্না আসছে না।নির্লজ্জের মত কবুল বলে ফেললাম।সবাই কেমন জানি হাসি হাসি মুখ করে আমার দিকে তাকাচ্ছে আর বান্দরটা তাকাচ্ছে রাগ রাগ চোখে।বেহায়ার মত কান্না না করে কবুল বলাতে ওর বন্ধুগুলো পরে যে ওকে ক্ষেপাবে তাতে কোন সন্দেহ নেই।কিন্তু কান্না না আসলে আমি কি করতে পারি বলুন তো... ;)

(সন্ধ্যাতারা কুমকুম)

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.