নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সন্ধ্যার নীলারোণ্য

সন্ধ্যার নীলারোণ্য › বিস্তারিত পোস্টঃ

একটি ভুল।

২৩ শে আগস্ট, ২০১৫ দুপুর ১:২৬

আকাশের দিকে তাকিয়ে একমনে বৃষ্টি দেখছে বীথি।মোবাইলের রিংটনের শব্দে ধ্যান ভাঙ্গলো তার। স্ক্রীনের উপর জ্বলজ্বল করছে তার বীথির প্রেমিক আবীরের নাম।জানালার পাশ থেকে এসে শোবার ঘরের দরজাটা বন্ধ করে দিল বীথি।বাসায় তার ৮ আর ১৫ বছর বয়সী ছেলে মাসুম আর মেয়ে তিয়ানা রয়েছে।যদিও তিয়ানা সবই জানে আর তার সাথে খুব ফ্রেন্ডলী তারপর ও কোন ঝুঁকি নিতে চায় না সে।


দরজা লাগানোর দড়াম শব্দে তিয়ানার ঘুম ভেঙে গেল।সে বুঝতে পারল এখন তার মা মোবাইলে আবীর আঙেকেলের সাথে কথা বলবেন তাই দরজা লাগিয়ে দিয়েছেন।এক বছর আগের অতীতে ফিরে গেল সে,,,,,

তিয়ানার আব্বু একজন র্গামেন্টস ব্যবসায়ী।ভালই টাকা পয়সা ছিল তাদের।কিন্তু হঠাৎ তার ব্যবসায়ে ধস নামল।কোটি কোটি টাকার ক্ষতি হল।পাওনাদার রা টাকার জন্য চাপ দিতে লাগল।ব্যংক তাদের বাড়ি গাড়ি নিয়ে নিল।এমতবস্থায় শোকে দুঃখে বীথির প্রায় পাগলের মত অবস্থা।তিয়ানা মায়ের এমন কষ্ট দেখে ভাবল মায়ের এখন কিছু বন্ধু বান্ধব দরকার যাদের সাথে কথা বললে মায়ের কষ্ট টা একটু হালকা হবে।তাই তিয়ানা কথাচ্ছলে একদিন বলল, তার বান্ধবীদের যখন মন খারাপ থাকে তখন তারা রং নাম্বারে অপরিচিত মানুষের সাথে কথা বলে। তাদের দুঃখ কষ্ট গুলো শেয়ার করে।বীথির এই কথাটা খুব মনে ধরল।সে সেদিন রাতেই একটা উল্টাপাল্টা নাম্বার ডায়েল করে কল দিল।এক ভারি কন্ঠের পুরুষ মানুষ বলল,"হ্যলো"।সেই থেকেই শুরু।প্রথম প্রথম ইনজয় করলেও বীথির বাড়াবাড়ি ফোনে কথা বলাটা আর ভাল লাগে না তিয়ানার।নেশাটা যেন পেয়ে বসেছে তার মাকে।ইদানিং আবীর নামে এক ছেলের সাথে বীথি খুব ঘনঘন কথা বলে।তিয়ানা যানে তার মা খারাপ না কিন্তু মার বয়সই বা কত ৩৫ বা ৩৮।এই বয়সের মহিলারা অহরহ প্রেমে পড়ছে।পেপার খুললেই দেখা যায় পরকীয়া প্রেমের খবর আর এর সাথে সংঘটিত অপরাধ।তিয়ানার মনে একটা শংকা জেগে উঠে তার মা ও কোন ভুল করবে না তো।একদিন সকালে তিয়ানার সব শংকাকে সত্যি প্রমানিত করে একটা বিশাল চিঠি লিখে বীথি চলে যায় তিয়ানাদের ত্যাগ করে।তিয়ানার বাবা চিঠি পরেই র্হাট এট্যাক করে মারা যান।তিয়ানারা হয়ে যায় এতিম।তিয়ানা তার ছোট ভাইটিকে এক আত্মীয় এর বাসায় রেখে নেমে পড়ে জীবন যুদ্ধে।


১০ বছর পরের কথা।তিয়ানা এখন অনেক বড় হয়েছে।সে একটা ব্যংকে ভাল চাকুরী করে।ভাইটিকে ও একটা ভাল কলেজে ভর্তি করিয়েছে।কিন্তু অতীত ভুলে নি।এখনো ১০ বছর আগের দিনটা সে চোখের সামনে দেখতে পায়।এখনও মায়ের প্রতি তীব্র ঘৃনা সে জমিয়ে রেখেছে।এই ঘৃনাই তাকে এতদুর পথ পাড়ি দিতে সাহায্য করেছে।তাই হঠাৎ একদিন সে যখন তার মাকে তার সামনে দেখল তখন বলার মত আর ভাষা খুঁজে পেল না।বিথী নিজেই চলে এসেছে তার কাছে ক্ষমা চাইতে।

তিয়ানা পাথরের মত মুখ করে তার মার সামনে বসে আছে।বীথি তিয়ানার দিকে চেয়ে বলছে, " মা তিয়ানা আমি জানি আমি তোদের অনেক কষ্ট দিয়ে ফেলেছি।আমার জন্যে তোরা তোদের বাবা কে হারিয়েছিস।আমি এক অন্ধ আবেগের বশে ছিলাম।আমি বুঝিনি আমার একটা ভুলে সব কিছু এভাবে শেষ হয়ে যাবে।প্লিজ মা আমাকে মাফ করে দে।তোর এই খারাপ মাকে মাফ করে দে।"


বীথি তিয়ানার হাত ধরে আকুল হয়ে কাদঁতে লাগল।তিয়ানা তখন বলল থাক মা আর কেদোঁ না আমরা তোমাকে মাফ করে দিয়েছি।সন্তানের কত ভুল বাবা মা রা মাফ করে আর সন্তান হয়ে মার একটা ভুল মাফ করতে পারব না?" তিয়ানার মুখে এই কথা শুনে বীথি অবাক চোখে তার মেয়ের দিকে তাকিয়ে রইল।আর তিয়ানা ভাবল আজ সে একজন পরিপূর্ন মানুষ হতে পেরেছে।

(সন্ধ্যারা নীলারোণ্য)

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.