নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমার মাঝে আমি অমানুষ। কোন সভ্য রুপের মাঝেও অসভ্যতা বিরাজিত

নিলয় নীল

মানুষের ভীড়ে অমানুষ একটা। বাস্তবতার সাথে তাল মেলে না। গতিশীল ফুটবল এর মত ভবঘুরে আমি

নিলয় নীল › বিস্তারিত পোস্টঃ

আনারস এবং দুধ একসাথে খেলে কি মৃত্যু হয় ? নিছক কুসংস্কার নাকি বাস্তবতা ??

১৪ ই জুলাই, ২০১৭ বিকাল ৪:০৯



আমরা ছোটবেলায় মা-বাবার অনেক বারণ শুনেছি দুধ এবং আনারস একসাথে না খেতে। আনারস খেলে দুধ দুই ঘণ্টা পরে খেতে হয়; আনারস হজম না হওয়া পর্যন্ত দুধ বা দুধের তৈরি কিছু খাওয়া যাবে না ইত্যাদি এমন সাবধান বাণী। কখনও এমনও হয়েছে বাসায় আনারস খাওয়া হয়েছে তো দুধ আড়াল করে রেখে দেয়া হত যাতে করে ভুলেও যেন কেউ না খায়। আমাদের অভিভাবকদের এমন সাবধানতা এবং যারা এখনও দুধ-আনারস একসাথে খেতে ভয় পায়, তাদের ধারণাগুলো আসলে কতটুকুই বা সত্য এর কতটুকুই মিথ্যা, কিভাবে তৈরি হল তাদের এই ধারণা সেই সাথে এই ফলের কিছু চমকপ্রদ উপকারিতা সম্পর্কে চলুন জেনে নেয়া যাক।

আনারস

আনারস গ্রীষ্মমণ্ডলীয় ফলগুলোর মধ্যে অন্যতম । আনারসের আদি নিবাস ব্রাজিল এবং প্যারাগুয়ে। বিখ্যাত ভ্রমণকারী ক্রিস্টোফার কলাম্বাস ১৪৯৩ খ্রিস্টাব্দে সর্বপ্রথম এই ফল আমেরিকা থেকে ফ্রান্সের গুয়াদেলোপ (Guadaloupe) এ নিয়ে আসেন এবং সেখান থেকেই নাবিক এবং সামুদ্রিক বণিকদের মাধ্যমে সারা বিশ্বে এটি ধীরে ধীরে ছড়িয়ে যায়। সে সময়ে নাবিকদের এবং সমুদ্রে ভ্রমণকারীদের কাছে এক ভয়ঙ্কর প্রাণঘাতী রোগ ছিল স্কার্ভি। তারা জানত না যে স্কার্ভি রোগ কেন হয় কিন্তু তারা ঠিকই বের করে নিয়ে নিয়েছিল কমলা, লেবু এবং অন্য টক ফলগুলো খেলে এই রোগে প্রাণ দিতে হত না। আর এভাবেই তাদের সমুদ্র যাত্রার একটি অনুষঙ্গ হয়ে উঠে এই ফল। ধারণা করা হয়, ১৫৫০ খ্রিস্টাব্দে পর্তুগীজ বণিকরা সর্বপ্রথম এই ফলের বীজ এই ভারতীয় উপমহাদেশে নিয়ে আসে। আর এভাবেই এই রসালো ফল যুগের পর যুগ চাষ হয়ে আসছে। বাংলাদেশে এখন প্রায় সারা বছরই এই ফল প্রচুর পরিমাণে রাস্তা-ঘাঁটে বিভিন্ন আকার ও দামের বিক্রি হতে দেখা যায়।

১০০ গ্রাম আনারস এর মধ্যে সাধারণত ৫০ কিলোক্যালরি এনার্জি (শক্তি), শর্করা ১৩.১২ গ্রাম, ফ্যাট ০.১২ গ্রাম, প্রোটিন ০.৫৪ গ্রাম, ৪৭.৮ মি.গ্রা. ভিটামিন সি (প্রায় ৫৮ শতাংশ) এবং বাকি অংশ অন্যান্য ভিটামিন (বি১, বি২, বি৩, বি৫, ফলেট) এবং ক্যালসিয়াম, ম্যাংগানিজ, ম্যাগনেসিয়াম, ফসফরাস, পটাসিয়াম, সোডিয়াম, জিঙ্ক এবং সাইট্রিক এসিড (Citric Acid) পাওয়া যায়। এই পুষ্টি উপাদান গুলো দৈনন্দিন জীবনে অপরিহার্য আর সাইট্রিক এসিড হচ্ছে একধরণের প্রাকৃতিক ফরমালিন (Natural Preservative) বলা চলে যা ফলের সজীবতা ধরে রাখতে সাহায্য করে। লেবু জাতীয় সব ধরনের ফলের মধ্যেই এই এসিড পাওয়া যায় এবং ফলের টক স্বাদ এই এসিডের কারণেই অনুভূত হয়। পুষ্টিগুণ বিচার করলে এমন কিছুই পাওয়া যায় না জার কারণে আনারস খেলে মানুষের প্রাণ সংশয় দেখা দিতে পারে। তবে কি দুধের মধ্যে কোন এমন কিছু আছে যা আমাদের আশংকা প্রমাণিত করতে পারে ? আসুন সামনে এগোনো যাক, দুধ অত্যন্ত পুষ্টিকর একটি পানীয় বা খাদ্যদ্রব্য। দুধের মধ্যে দুই ধরণের শর্করা, তিন ধরণের ফ্যাট, প্রায় আঠারো ধরণের প্রোটিন উপাদান, ছয় ধরণের ভিটামিন এবং চার ধরণের খনিজ (ক্যালসিয়াম, ম্যাংগানিজ, পটাসিয়াম, সোডিয়াম) পাওয়া যায় । এই আঠারো ধরণের প্রোটিনের মধ্যে একটি প্রোটিন উপাদান হচ্ছে ক্যাসিন (Casein)। এই ক্যাসিন হচ্ছে ফসফেট গোত্রীয় প্রোটিন উপাদান। এখন কেউ যদি দুধ আর আনারস কিংবা সাইট্রিক এসিড জাতীয় অর্থাৎ টক জাতীয় যে কোন ফল খায়, যখন পাকস্থলীতে এই সাইট্রিক এসিড এবং ক্যাসিন একত্রিত হয়; একধরণের বিক্রিয়া হয় যার দরুন আনারসের সাইট্রিক এসিড দুধের ক্যাসিন (Casein) প্রোটিনকে ভেঙ্গে দেয় এবং যার ফলে ছানা (Lactobacillus) তৈরি হয়। সেই একই প্রক্রিয়া যেভাবে আমরা দুধের মধ্যে লেবুর রস বা ভিনেগার দিয়ে মিষ্টির দোকানে ছানা তৈরি করতে দেখি । সেই ছানা আমাদের পেটে হজম হয়ে যায়। পেটের মধ্যে সৃষ্ট এই বিক্রিয়া থেকে এমন কোনও বিষক্রিয়া তৈরি হওয়ার প্রমাণ আজ পর্যন্ত কোনও বিজ্ঞানী পায়নি। কোনও সায়েন্টিফিক জার্নাল, গবেষণা বা রিপোর্ট থেকে কোনও প্রমাণ বা অনুমান পাওয়া যায় না। যদি এই প্রক্রিয়াতে আসলেই কোন বিষক্রিয়া তৈরি হত তাহলে আমরা কখনো সুস্বাদু ছানার স্বাদ নিতে পারতাম না। তবে উল্লেখ্য যে আনারস এবং দুধ উচ্চ পুষ্টিমান সম্পন্ন হওয়াতে যাদের পাকস্থলী দুর্বল তাদের হজমে কিছুটা সমস্যা হতে পারে; পেটফাঁপা, বদহজম, গ্যাস তৈরি হওয়া ইত্যাদি। তাছাড়া যাদের আনারসে অ্যালার্জি আছে শুধু মাত্র তাদেরই কিছুটা অ্যালার্জিক রিয়েকশন পরিলক্ষিত হতে পারে যেমনঃ ঠোঁট ফুলে যাওয়া বা গলায় সুরসুরি বোধ হওয়া। যাদের আনারসে অ্যালার্জি আছে, তারা খাবার পূর্বে আনারস কেটে লবণ পানি দিয়ে ধুয়ে নিলে আর কোন সমস্যা হবে না। কিন্তু আনারস আর দুধ খেয়ে বিষক্রিয়ায় অমুক জায়গায় এত জনের মৃত্যু এমন খবর শুধু মাত্র আষাঢ়ে গল্পই হতে পারে। পৃথিবীর আর কোথাও এমন কুসংস্কার এর খবর পাওয়া যায় না। এমনকি পৃথিবীর বিভিন্ন জায়গায় আনারসের মিল্ক শেক, পাইন-অ্যাপেল ব্যনানা স্মুথি, আনারস আর দুধ দিয়ে তৈরি খাবারের কথা জানা যায়। Youtube ঘাঁটলে আপনি আনারস এবং দুধের অনেক রেসিপি পাবেন। তো কি ভাবছেন টেস্ট করে দেখবেন নাকি আনারসের মিল্ক শেক বা স্মুথি ?

আনারসের পাঁচ উপকারিতা

আনারসের রয়েছে নানাবিধ উপকারিতা। তার মধ্যে কিছু উল্লেখযোগ্য উপকারিতা জেনে রাখা যাক। যা আমাদের দৈনন্দিন জীবনে বিভিন্ন সময়ে কাজে লাগতে পারে।

ক) যারা স্থুল স্বাস্থ্য নিয়ে চিন্তিত তারা ওজন নিয়ন্ত্রণে আনারস খেতে পারেন। কারণ এর মধ্যে মাত্র (০.১২ গ্রাম) ফ্যাট, (১৩.১২ গ্রাম) শর্করা এবং বাকি পুরোটাই এনার্জি, ফাইবার এবং ভিটামিন। এতে আপানার পেট ভরবে, কাজের শক্তি পাবেন এবং ওজন নিয়ন্ত্রণ হবে।

খ) আনারস ক্যালসিয়ামের ভালো উৎস। যাদের দাঁত দুর্বল, মাড়িতে সমস্যা তারা আনারস খেলে ভালো ফল পাবেন। ক্যালসিয়াম দাঁত শক্ত করে আর ভিটামিন সি মাড়ি মজবুত করে।

গ) আনারসের বিটা ক্যারোটিন আমাদের চোখের ম্যাক্যুলার ডিজেনারেসন (Macular Degeneration) নামক রোগ হওয়ার সম্ভাবনা ৩০ শতাংশ পর্যন্ত হ্রাস করে। এই রোগে চোখের রেটিনা দুর্বল হয়ে যায় এবং আমাদের চোখ কোন কিছুর উপর ঠিকভাবে ফোকাস করতে পারে না। শুধু মাত্র আমেরিকাতেই এই রোগে ১০ মিলিয়ন লোক আক্রান্ত।

ঘ) ভিক্টোরিয়ান ইন্সটিটিউট অফ অ্যানিমেল সায়েন্স, অস্ট্রেলিয়া এর এক গবেষণা থেকে জানা যায় যে আনারসের ব্রমালিন (Bromelain) হজম শক্তি বৃদ্ধি করে এবং ডাইরিয়ার সময় খেলে ভালো ফল পাওয়া যায়।

ঙ) ইউনিভার্সিটি অফ ম্যারিল্যান্ড মেডিক্যাল সেন্টার এর এক গবেষণা থেকে জানা যায় যে, সাধারণ ঠাণ্ডা, সর্দি জ্বর-এ আনারস খেলে দ্রুত উপসম হয়। এর ভিটামিন সি এবং ব্রমালিন এনজাইম শ্বাসযন্ত্রের জমাট কফ, শ্লেষ্মা নিঃসরণে কার্যকর ভূমিকা রাখে। ব্রাজিল, পর্তুগাল এইসব দেশে মানুষ জ্বর বা ঠাণ্ডা হলেই পথ্য বাদ দিয়ে আনারস গিলতে থাকে।

মন্তব্য ২ টি রেটিং +৩/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ১৪ ই জুলাই, ২০১৭ বিকাল ৪:১৬

ফরিদ আহমদ চৌধুরী বলেছেন: ভাল পোষ্ট।

১৪ ই জুলাই, ২০১৭ বিকাল ৪:২১

নিলয় নীল বলেছেন: ধন্যবাদ পড়ার জন্য

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.