নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

নিসর্গের ব্লগ

Nishorgo

নবীন উদ্যোক্তা। কম্পিউটার বিজ্ঞান এবং প্রকৌশলে পড়ছি। শখে লেখালেখি করি। দেশের জন্য কিছু করতে চাই।

Nishorgo › বিস্তারিত পোস্টঃ

তোমার প্যাশন কি?

০৬ ই জুলাই, ২০১৫ বিকাল ৪:১৭

শুরুটা বেশ কঠিন ছিল। সিলেট এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজে দ্বিতীয় বর্ষে পড়তাম তখন(২০১৪)। খুব কঠিন সময় যাচ্ছিল। আমি জানতাম না আমি কি চাই। জীবন নিয়ে, সবকিছু নিয়ে বেশ হতাশ হয়ে পড়েছিলাম। কাউকে বোঝাতে পারছিলাম না আমার মানসিক অবস্থাটা।
সিলেট থেকে চট্টগ্রামে বাসায় চলে আসার পর শুধু একটাই প্রশ্ন- কেন আমি মেডিকেল ছেড়ে দিলাম? পাশে তেমন কাউকে পাইনি যে খুব গঠনমূলক কোন পরামর্শ বা সমাধান দিয়েছে। যাই হোক, আমি নিজেও জানতাম না আমার প্যাশন কি, আগ্রহ কিসে। বুঝতে আমি খুব দেরি করে ফেলেছিলাম। আমি ভেবেছিলাম, মেডিকেলে প্রথম যেদিন ক্লাস করবো, সেদিন আমি খুশিতে আত্মহারা হয়ে যাবো এই ভেবে যে আমি আমার স্বপ্নের পথে হাঁটছি। এই অনুভূতিটা তখন হয়নি। এই ভাল লাগাটা তখন টের পেলাম যখন প্রায় চার বছর পর আমি কোডএকাডেমী ডট কমে কোডিং করলাম। একটা অন্য রকম ভালবাসা, আগ্রহ, আবেগ, উত্তেজনা - সেদিন বুঝতে পেরেছিলাম আমি কি ভালবাসি।

ফ্ল্যাশব্যাক।
ক্লাস নাইনে পড়ার সময় সাইফ ভাইয়া নামে একজনকে জানতাম যার সাথে আমার প্রায়ই ইয়াহু মেসেঞ্জারে চ্যাট হতো। মহাকাশ, প্রযুক্তি, বিজ্ঞান, কম্পিউটার - কত কিছু যে শিখেছি উনার কাছে। ফ্রিল্যান্সিং বিষয়ে আমি সর্বপ্রথম জানতে পারি উনার কাছে, ২০১০ সালে। ওডেস্কে তখন কনটেন্ট রাইটিং এর কিছু কাজ করেছি। সামান্য কিছু উপার্জন করলাম।
বাস্তবতা।
অনেকদিন পর আবারো ফ্রিল্যান্সিং এর শখ জেগে উঠলো। বাস্তবতা নিষ্ঠুর! কাজ পাচ্ছি না!
ওডেস্ক ঘাঁটাঘাঁটি করে বুঝলাম আমাকে প্রচুর শিখতে হবে। এস ই ও, ওয়েব ডেভেলপমেন্ট, মার্কেটিং, প্রোজেক্ট ম্যানেজমেন্ট, কাস্টমার রিলেশনশিপ ম্যানেজমেন্ট, এমন কিছু বিষয় ভালমত জানার চেষ্টা করলাম। আস্তে আস্তে কাজ পেতে শুরু করলাম।
আরও কিছু সময় যাওয়ার পর আমার মা বাবা আমাকে নিয়ে বেশ চিন্তিত হয়ে পড়েছিলেন।( আসলে সেটাই স্বাভাবিক।) আমি খুব ভাগ্যবান যে তাঁরা আমার পাশে ছিলেন এবং সরকারি মেডিকেল কলেজ থেকে বেসরকারি প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে চলে আসার এত বড় সিদ্ধান্ত তাঁরা অবশেষে মেনে নিয়েছিলেন।
আমার পরিবারের চেয়েও বেশি চিন্তায় ছিলেন আশেপাশের কয়েকজন মানুষ, যারা সুযোগ পেলেই খোঁচা দিয়ে ছাড়তেন। বেসরকারি- তাও আবার চট্টগ্রামে। ভবিষ্যৎ অন্ধকার।
এক সময় খুবই বোকা ছিলাম, এসব কোথায় মন খারাপ করতাম! এখন তাদের কথাই আমাকে অনুপ্রেরণা যোগায়।
আচ্ছা- তাহলে এই অন্ধকারই আমার আলো!
কাজ এবং আধুনিক প্রযুক্তির(!) মাধ্যমে আমার অনেকের সাথে পরিচয় হয় যাদের সাথে কাজ করার সুযোগ পেয়েছি। মাহদী ভাই, নাভিন, নাফিসা, আরেফিন ভাই, ফাহিম ভাই এমন অনেকে আছেন যাদের সাথে বিভিন্ন কাজ করেছি। একটা টিমের মত হয়ে গেল। কাজ ভাগ হয় যেতো। চাপ কমে গেল। ক্লাসও খুব উপভোগ করছি।
মাসুদ ভাই নামে একজনের সাথে আমার পরিচয় হল একটা রিসার্চ ওয়ার্কশপের মাধ্যমে। ফিজিক্স ল্যাব বাদ দিয়ে চলে গিয়েছিলাম সেখানে।(:P) ভুল করিনি সেটা পরে বুঝেছিলাম। ফার্স্ট সেমিস্টারে পড়ি তখন। পড়াশোনার তেমন চাপ নাই। হিমু পরিবহন, সেইস, ভলান্টিয়ার ফর বাংলাদেশ, মাস্তুল এ ধরণের অলাভজনক স্বেচ্ছাসেবক সংগঠনের সাথে কাজ করেছি কিছু সময়। বেশ ভাল লাগতো। পরবর্তীতে সেমিনার, সামিট, ওয়ার্কশপেও যেতাম অনেক। নেটওয়ার্কিং এ বেশ কাজে আসে।
২০১৪ সালের জুলাই মাসের দিকে মনে হল একটা স্টার্টআপ করা যেতে পারে। উদ্যোক্তা হওয়ার শখটা তখনই চেপে বসলো। মনে হল সমাজের জন্য কিছু একটা করতে হবে। কিন্তু কিছুই তো জানি না কি করতে হবে, কিভাবে করতে হবে? মেইল করতে থাকলাম অনেককে। ভাল পরামর্শ-ও পাচ্ছিলাম। স্টার্টআপ ডায়রির কো-ফাউনডার লামিয়া আপু অনেক উৎসাহ দিয়েছিলেন।
কাজ কখনো ধীরে, কখনো আবার চলছিল দ্রুত তালে। কিন্তু ঠিক গোছানো হচ্ছিল না কোনকিছু। আর এত এত অপদার্থ ছিলাম, একটু জানলে মনে হতো কত কিছু শিখে ফেললাম। এখন ভাবতেও বেশ লজ্জা লাগে। (:P)
সি প্রোগ্রামিং, পাইথন- একটু একটু করে প্র্যাকটিস চলছিল। বেসিক জিনিসগুলো জানার চেষ্টা করছিলাম। টিউটোরিয়াল, লাইব্রেরীর বই, শিক্ষক ডট কম, স্লাইড- যখন যা পেয়েছি দেখার চেষ্টা করেছি।
তখনো স্টার্ট আপের আইডিয়া নিয়ে এগোতে পারিনি খুব একটা। কি করবো বুঝতে পারছিলাম না। তবে শেখা থামাইনি। থার্ড সেমিস্টারের দিকে এসে বেশ সিরিয়াস হয়ে পড়লাম স্টার্টআপ এর ব্যাপারটা নিয়ে। উদ্যোক্তা হওয়ার অনেক শখ! প্রতিদিন মার্কেটিং, ম্যানেজমেন্ট, এন্টারপ্রেনারশিপ, হিউম্যান রিসোর্স নিয়ে ঘাঁটাঘাঁটি করছি। কোরা ডট কমে আসা যাওয়া করছি। অভিজ্ঞ মানুষদের কাছে পরামর্শ চাচ্ছি। ব্লগ পড়ছি। লাইব্রেরীতে বসে থাকছি। নোট করছি ডায়রিতে।
এবার আসবে মাসুদ ভাই প্রসঙ্গ। উনি আমাকে খুব সুন্দর ভাবে বুঝিয়ে দিলেন কিভাবে কাজ করা যেতে পারে, খারাপ দিকগুলো কি কি, কেমন সমস্যা হতে পারে। জোর দিলেন প্রোজেক্ট ম্যানেজমেন্ট সফটওয়্যার ব্যবহারে। মাসুদ ভাই হলেন আমাদের বিজনেস অ্যানালিস্ট।
কনসেপ্ট পেপার তৈরি করলাম। শুরু করতে যেয়ে দেখি আমি জানি না কিভাবে সেটা লিখতে হয়! অতঃপর কোরা এবং গুগল করে শিখলাম।
তারপর মার্কেটিং স্ত্র্যাটেজি আর মার্কেটিং প্ল্যান ডেভেলপমেন্ট করলাম। মাসুদ ভাইকে দেখালাম। ওটা পাঠানো হল বিজনেস প্ল্যান ডেভেলপ করার জন্য। সেলস প্ল্যান তৈরি করলাম, তারপর কন্ট্রাক্ট পেপার। এবার দরকার একটা লোগো। মাসুদ ভাই পরিচিত একটা এজেন্সিকে দিয়ে করিয়ে দিলেন যেহেতু আমাদের ওয়েব ডেভেলপার থাকলেও তখন ডিজাইনার ছিল না। আমাদের স্টার্ট আপের প্রথম ইনভেস্টমেন্ট তিন হাজার টাকা দিয়ে লোগোটা হল।
ওয়েবসাইট(http://www.cheesecaketech.com) ডেভেলপ করলো আমাদের স্টার্ট আপের ফ্রন্ট এন্ড ডেভেলপার রায়হান। এখন দরকার একটা বিজনেস অ্যাড্রেস। আতুরার ডিপোতে গাউসিয়া মার্কেটের ৫ তলায় একটা ছোটখাটো জায়গা নিয়ে ফেললাম আমরা।
এবার সেলস আর মার্কেটিং-এর পালা। আবারো শিখতে হচ্ছে অনেক কিছু। পি ডি এফ নামাচ্ছি, ইউটিউবে ভিডিও দেখছি। লিড জেনারেশন সম্পর্কে জানলাম ভালমতো। মিথুন ভাইয়ের সাথে আমাদের ওয়েব সাইটের এস ই ও করছি।
আচ্ছা একটা কথা, আমি কিন্তু এর মাঝে পড়াশোনা কখনো ছেড়ে দেইনি। (:P) খুব আগ্রহের সাথেই চতুর্থ সেমিস্টারে উঠে পড়াশোনা চালিয়ে যাচ্ছি। বিষয়টা আমার আগ্রহ হওয়ার কারণে কখনো মনে হয়নি পড়াশোনা করছি, এই অনুভূতি শ্রেষ্ঠ। (Y)

আরেকটা জরুরি বিষয়- ফান্ডিং। প্রথমে ভাবতাম ফান্ডিং-ই তো পাবো না। কিভাবে কি করবো? তারপর নিজেই একদিন বুঝতে পারলাম- আগে প্রোডাক্ট, তারপর ফান্ডিং। এই ফান্ডিং এর ব্যাপার টা বেশ ইন্টারেস্টিং। এখান থেকে ক্রাউডসোরসিং এর কনসেপ্ট সম্পর্কে জানতে পারি। পরবর্তীতে বুঝলাম- আসলেই টাকার চেয়ে ম্যানপাওয়ার অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ।
তিন হাজার টাকা - এখন পর্যন্ত এই ইনভেস্টমেন্ট আমাদের। এটা দিয়েই এগিয়ে যাচ্ছে আমাদের স্টার্ট আপ চিজকেক। ২০১৫ সালের জুন মাসে অফিস আর জুলাই মাসে রেজিস্ট্রেশন এই লক্ষ্য এখন আমাদের।
কিছু লক্ষ্য নিয়ে কাজ করছি আমরা। সমাজের জন্য কিছু করতে চাই। গ্রাফিক্যাল চিজকেকের এই স্বাদ উপভোগ করুক সবাই!

অনেক অনেক কাজ। জীবন বড়ই সুন্দর।

পুনশ্চঃ এই লেখাটা যখন লিখেছি তখন জুনের শুরু, ইতোমধ্যে চিজকেকের অফিস সেটআপের কাজ শেষ এবং স্টার্টআপের রেজিস্ট্রেশনের কাজ চলছে। নবীনদের জন্য প্রোগ্রামিং কে সহজ করতে আমরা একটি ছোট কাজ করেছি। সামনে আমাদের এস ই ও-র উপর একটি কর্মশালা। তার প্রস্তুতি চলছে। ভবিষ্যতে এ বিষয়ে লেখার ইচ্ছে আছে।

মন্তব্য ২ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ০৬ ই জুলাই, ২০১৫ বিকাল ৫:৩০

ফ্লাইং সসার বলেছেন: সফল হোক আপনাদের অগ্রযাত্রা।
website টা সুন্দর !

২| ০৮ ই অক্টোবর, ২০১৫ রাত ৯:৫১

লূৎফর রহমান বলেছেন: কথা গুলো আমারই মনে হয়েছে। শুভ কামনা আপনার জন্য। :-)

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.