নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

প্রকৃতির সৌন্দর্যের প্রতি একটু দুর্বলতা আছে। কবিতা পড়তে ও লেখতে ভালোবাসি

নিঃস মুসাফির

বিশাল এই পৃথিবীতে অতি ক্ষুদ্র একজন

নিঃস মুসাফির › বিস্তারিত পোস্টঃ

একটি ছেলে, একটি মেয়ে; উভয়েই নিরব

১৪ ই আগস্ট, ২০১৭ বিকাল ৫:৪৩


বাংলাদেশের একটি প্রত্যন্ত অঞ্চলে অবস্থিত পাশাপাশি দুটি গ্রাম। যেন একটি দেহের দুটি অংশ। দুটি গ্রামই সবজে ঘেরা, চারিদিকে চিরহরিৎ গাছগাছালি, আর তারই ডালে বসে গান গেয়ে যায় পাখপাখালী। রূপে মাধুর্যে গ্রামদ্বয়ের একটি ছিল অত্যন্ত সুন্দর আর অপরটি সুন্দরী।
বিংশ শতাব্দীর মৃত্যুলগ্নে দুটি গ্রামের মধ্যবিত্ত পরিবারে দুটি শিশু জন্ম গ্রহন করল। উভয়েই পিতা -মাতার ছোট সন্তান। অত্যন্ত স্নেহের সাথেই বড় হতে লাগল দুজন।উভয়ের প্রাইমারীর জীবনটা কেটে গেল গ্রামের স্কুলে। ছেলেটি ও মেয়েটি কেউ কাউকে চেনে না। সবকিছু উপেক্ষা করে দুরন্ত সময় ছুটে চলছে নিরবধি, কেটে গেল পাচটি বছর। প্রাইমারী চিরবিদায় জানিয়ে উভয়েরই হাই স্কুলে পদার্পণ। এখনো তারা কেউ কারো নয়,জীবনের অভিজ্ঞতা তাদের হয়নি। উভয়েই মনোযোগ দিয়ে লেখাপড়া করছে। ছেলেটি অত্যন্ত মেধাবী ছিল। মেয়েটিও সেরকমই একজন। পড়ালেখার ব্যস্ততায় তারা ক্লাস সিক্স,সেভেন, এইট এই তিনটি বছর অতিবাহিত করেছে। প্রেম কাকে বলে এটা তারা জানে না। জানতে চেষ্ট্রাও করেনি।
বড় হওয়ার সাথে সাথে তাদের ব্যক্তি গত বৈশষ্ট্য সমূহ প্রকাশ হতে লাগল। আচার -আচরনে ছেলেটি ও মেয়েটি যেন এক। ছেলেটি ও মেয়েটি উভয়েই ছিল নিরব। মেয়েটি ছিল কোমল মতি ললনা,শান্ত, নম্র ও ভদ্র। মেয়েটির আত্মসম্মানবোধ ছিল প্রখর। অপমান সে একদম সহ্য করতে পারত না।কেউ সম্মানের উপর আঘাত দিয়ে কথা বললেই চোখ থেকে ঝরে দুফোটা দুর্বোধ্য রহস্য। যে রহস্য বুঝার সাধ্য হয়তো কারো ছিল না। ছেলেটিও ছিল গম্ভীর, মাটির মতো নিরব, আকাশের মতো উদার। সে আত্মসম্মানীও ছিল বটে। কষ্টের সময় চোখ থেকে ঝরে দুফোটা হিরে টুকরা। অবশ্য ছেলেটি এখনআর কাদতে পারে না, হয়তো ভুলে গেছে কিভাবে কাদতে হয়। কারন কষ্টের একমাত্র মৌন ভাষা হচ্ছে অশ্রু আর অতি কষ্টের মৌন ভাষা হচ্ছে স্তব্ধতা। এখন সে আর কাদে না স্তব্ধ হয়ে থাকে।
জে.এস.সি পরীক্ষায় উভয়েই ভালো রেজাল্ট করে।
এবার ক্লাস নাইনে পদার্পণ। জীবনটা যেন নতুন ভাবে শুরু হতে যাচ্ছে।
ক্লাস নাইন।কেউ কেউ প্রমোশনের আনন্দে ব্যস্ত, কেউ বা রেজাল্ট নিয়ে অনুশোচনা। কেউ আবার নবাগত ও দর্শিতদের পরিচয় নিয়ে। প্রত্যেকেই অপরের কাছে নতুন যেন কেউ কারো চেহারা দেখেনি।চির অপরিচিত সবাই। কিন্তু তার মাঝেও কিছু চেহারা দেখে মনে হনে হচ্ছে সে যেন চিরচেনা একজন। যেন হাজার বছরের শুভ্র সম্পর্কে তার সাথে আবদ্ধ।আর সে অনুভূতি যেন আজও স্নিগ্ধ হয়ে আছে। এমনই একটি অনুভুতি ছেলেটির ভেতরে সৃষ্টি হয়েছিল। মায়াবী তার চাহনি, অচঞ্চল তার নয়নের ভাষা। সবার মাঝে সে অনন্য সাধারন। ছেলেটি নিয়মিত স্কুলে আসত, ক্লাস করত। যতই দিন যেতে লাগল, মেয়েটির আচরনে সে মুগ্ধ হতে লাগল। তার প্রতি একটি এক্সট্রা -অরডিনারী ফিলিংস্ তৈরি হতে লাগল। হৃদয়ের মাঝে তার প্রতি কোমলতা অনুভুত হচ্ছিল। যেন বসন্তের দিনে হৃদয়ে হাওয়া বইছে,সোঁ সোঁ তার শব্দ। কিন্তু সেই শব্দগুলো আসল সোঁ সোঁ ছিল না। সেগুলো ছিল I like U.
তবে এটা কোনো সিরিয়াস বিষয় না। কেউ কাউকে লাইক করতেই পারে। তা হয়তো liked person -এর কাছে বলার প্রয়োজন নাই।যদি কেউ কাউকে love করে তাহলে বলার প্রয়োজন হয়। আর তা না হলে হৃদয়ের ভালবাসা চিরকাল হৃদয়েই থেকে যায়। প্রিয়তমার কাছে সে ভালবাসা পৌছতে পারে না। আর কেউ যদি কাউকে dote করে, সেটার ক্ষেত্রে দুইটা দিক। যদি ভালবাসাটা প্রকাশ করলে প্রিয়তম ব্যক্তি সেটা মেনে নিতে পারে তাহলে নির্বিঘ্নে বলা আর কষ্ট পাওয়ার সম্ভাবনা থাকলে বুকের ভিতর চেপে রেখে দেওয়া। কারন dote করা মানে অত্যন্ত বেশি ভালবাসা। আর dote affected পারসনরা ভালবাসার মানষটিকে নিজের চাইতেও বেশি ভালবেসে থাকে। তাই তারা বিরহের অনলে জ্বলে ছাই হয়ে যায় অথচ ভালবাসার মানুষটির কথা ভেবে তাকে বুঝতেই দেই না যে সে তাকে ভালবাসে।
ছেলেটি ক্লাস করে। ক্লাসে দুজনে একসাথে পড়ে। ছেলেটি দেখল যে, মেয়েটি অন্য মেয়েদের মত নয়,কিছুটা অনন্য রকম। বাঙ্গালী নারীর খ্যাতমান বৈশিষ্ট্য লজ্জাশীলতা তার মাঝে যথেষ্ট পরিমানেই রয়েছে। সে যেন লজ্জাবতী ললিতা। কোনো ছেলের সাথেে ইচ্ছাকৃত ভাবে কোনো দিন কথা বলেনি।নিরবতা ছিল তার ভুষন, যেরকমভাবে নিরব থাকতে ভালবাসত ছেলেটি। মেয়েটির প্রত্যেকেটি কথা ছেলেটির কাছে মধুর চেয়ে মধুময় লাগে। সারাদিন নিজের অজান্তেই মেয়েটিকে নিয়ে ভাবতে থাকে। স্কুলে না আসলে মেয়েটির সাথে দেখা হয় না, আর ছেলেটি তাকে না দেখে থাকতে পারে না। যেদিন একবারও প্রিয়সীর চাদ মুখখানা দেখতে ব্যর্থ হয়, সেদিনটা যেন আমাজন মহাবনের অন্ধকার গহ্বরে কাটিয়ে দেওয়া একটি কালো দিবস। তাই মেয়েটিকে একটি মুহূর্তেরর জন্য মিস করা তার জন্য দুঃসাধ্য কাজ। ছেলেটি ক্লাসে মেয়েটির দিকে তাকিয়ে থাকত। অপলক দৃষ্টি।দৃষ্টিতো নয় যেন শ্রাবণের বৃষ্টি।ছেলেটির মন ভরে না, চোখও সরে না। সবকছুই গতিশীল ছিল। কিন্তু স্থির ছিল ছেলেটির তৃষ্ণার্থ চোখ। এবাবেই দিন যেতে লাগল। হিরে হিরে ধীরে ধীরে মেয়েটির প্রেমে পড়া। হৃদয়ে সারা দিন প্রেমের সঙ্গীত চলে। আর সে সঙ্গীতের প্রধান লাইন ছিল 'I luv thee' ছেলেটি সেই ভালবাসার কথা প্রিয়সীর কাছে প্রকাশের জন্য উদগ্রিব হয়ে আছে। কিন্তু সেটা সম্ভব হয়ে উঠেনি। এভাবেই দিন কাটতে লাগল।নিরবে বয়ে চলছে আর ছেলেটির নিরব ভালবাসা।
সময়টা বর্ষাকাল। ফসলের মাঠগুলোর বুকে আজ ভালোবাসার সিক্ত জল।যেন ভালোবাসার দিগন্তহীন সাগর। আর জলের তরঙ্গগুলো যেন প্রেমের চিরায়িত গান গাইছে, ছলাৎ ছলাৎ তার সুর।
"T" আকৃতির রাস্তা। ছেলেটি ও মেয়েটি একই রাস্তা দিয়ে স্কুলে যায়। স্কুল থেকে ফেরার সময় একই রাস্তা দিয়ে এসে দুজনে বিপরীত দিকে চলে যায়। কয়েকদিন ধরে তারা একসাথে বাড়ি ফেরে। আসলে প্রিয়মানুষের সাথে মোমেন্ট কাটানোর সুখটাই আলাদা। একটা অন্যরকম অনুভুতি তৈরি হয়। তারা একসাথে চলে, পাশাপাশি হাটে। কিন্তু তাদের মাঝে কথা হয় না। কারনও একটাই ছেলেটি ও মেয়েটি উভয়েই নিরব। অথচ ছেলেটির মন আনচান করে মেয়েটির সাথে কথা বলার জন্য, ভালো মন্দ, দুঃখ কষ্টের বিষয়গুলো শেয়ার করার জন্য।
একদিন ছেলেটি হাটছে। মেয়েটি তার কিছুটা সামনে।
ছেলেটি মেয়েটিকে বলছিল
এইযে মেম, দেখে হাটেন, সামনে গর্ত, পড়ে যাবেন কিন্তু।
-আমি তোমার মতো এতো অন্ধ না।
-আমি কি অন্ধ?
-হ্যা, অন্ধ।
-কয়, আমি অন্ধ না তো। আমিতো সবকিছুই দেখি। এই আমার সামনে বিশাল সুন্দর একটা পৃথিবী। আর সুন্দর এই পৃৃথিবীতে বাস করে একজন অতি রূপসী, সুন্দরী, মায়াবিনী মেয়ে যে কিনা আমার সামনে দিয়ে হেটে যাচ্ছে.........।

কিন্তু এ সবগুলোই ছিল ছেলেটির মনের ভাবনা যা বাস্তবের মতো
নিষ্ঠুর জীবনে সম্ভব হয়ে ওঠেনি।
ছেলেটি মেয়েটির সাথে একই রুমে ক্লাস করে। সে অপলক দৃষ্টিতে চেয়ে থাকে মেয়েটির দিকে।দৃষ্টিতো নয় যেন শ্রাবনের বৃষ্টি। চোখ সরে না। মেয়েটিকে ছেলেটির কাছে সুন্দর লাগে, অসম্ভব সুন্দর।ক্লাসে টিচাররা কোনো সিদ্ধান্ত নিলে স্টুডেন্টদের মতামত নেই। বিশেষ করে প্রথম শ্রেণির স্টুডেন্টদের। অনেক সময় ছেলেটি কোনো মত দেওয়ার পর মেয়েটি ভিন্ন মত দিলে স্যার দ্বিতীয় বার সমঝোতার জন্য জিজ্ঞেস করলে ছেলেটি মেয়েটির মতামতকেই প্রাধান্য দিয়ে দিত। উদ্দেশ্যও একটাই প্রিয় মানুষটিকে কেয়ার করা। বিশেষ করে প্রেমিকরা এরকমই হয়ে থাকে। ভালোবাসার মানুষটি কি পছন্দ করে, কি পছন্দ করে না, কোন ধরনের কাপড় তাদের প্রিয়, কোন কালারটি সে সবচেয়ে বেশি ভালোবাসে, কোন হেয়ার স্টাইলটা তার কাছে প্রিয় বলে মনে হয় এসব নিয়ে তাদের সচেতনতার কমতি থাকে না। ছেলেটি তো আর ভিনগ্রহী কেউ নন, এরকমই একজন। মেয়েটির প্রতি তার আগ্রহ ছিল, প্রবল আগ্রহ।যাকে ভদ্র সমাজে মোটামুটি ইনটারেস্ট বলা যায়। মেয়েটির কাছে আসলে তার হার্ট-বিট বেড়ে যায়। আর দুরে চলে গেলে তাকে একটি নজর দেখার জন্য মনটা আনচান করে। একটি মুহুর্তের জন্য তাকে না দেখলে যেন গগন জুড়ে আসে কালো মেঘে,শুরু হয় মরনাত্মক কালবৈশাখী। এভাবে চলতে থাকে। ধীরে ধীরে
ছেলেটির প্রেমের পরিধি বাড়তে থাকে। অথচ মেয়েটি তাকে ভালবাসে কি না সে জানে না। এ যেন একমুখী ভালবাসা। ছেলেটি ভালবাসার পরিবর্তে ভালবাসাও আশা করে না। শুধুই মেয়েটিকে ভালবাসতে চাই।সারাজীবন অথবা মৃত্যুর পরেও।তবে এতকিছুর পর মেয়েটি তাকে ভালবাসত না তা নিশ্চিত ভাবে বলা যায় না।হয়তো মেয়েটির হৃদয়ে ভালবাসা ছিল বিন্দু পরিমাণ, অথবা এক ফোটা ভালবাসা,তা না হলে এক মোঠো তো হবেই, আর এর চেয়ে বেশি হলে হয়তো তার হৃদয়ে ভালবাসার নদী ছিল অথবা ভালবাসার সাগর।
একদিনের ক্লাসটা ছেলেটার সবচেয়ে কষ্টদায়ক, যে কষ্টের কথা কাউকে বলা যায় না। হয়তো নিজেকেও না। কিন্তু ব্রেইন বড়ই চালাক। সে হৃদয়ের সবকথা কান পেতে শুনে ফেলে। তাই সেই কষ্টের কথাটি ছেলেটির হৃদয় ও তার ব্রেইনই জানতো। ছেলেটির কষ্ট হয়েছিল মেয়েটির জন্য।কারন ঐ দিন হঠাৎ করে ছেলেটি দেখল মেয়েটি কাদছে।তার চোখ দিয়ে ঝরে পড়ছে অশ্রু জল।সে জানে না কিসের জন্য মেয়েটি কাদছে। তবু তার ভীষন খারাপ লাগছিল। ছেলেটির ইচ্ছে করছিল তার হাতের সুকুমল স্পর্শে মেয়েটির অশ্রুজলকে মুছে দিতে। কিন্তু জীবনের আলট্রা ফরমালিটির কারনে তা সম্ভব হয় নি। সে শুধু নিরবে চেয়ে চেয়ে দেখছিল আর চোখ থেকে বের করে দিচ্ছিল লবনাক্ত অ্যাকুয়াস হিউমার। হয়তো এর চেয়ে বেশি কিছু করাটা তার পক্ষে সম্ভব হয়ে উঠেনি।
প্রকৃতিতে বসন্ত। তবে তার নূন্যতম প্রভাব হলেও মানব মনে বিরাজ করছে। যেসব উদ্ভিদে সৌন্দর্য আছে বলে মানুষ জানে না সেগুলোকেও আজ সুন্দর লাগছে, অপরূপ সুন্দর। আকাশটা নীল। পল্লীর গাছগুলো সবুজ দেখাচ্ছে, নিতান্তই সবুজ।ছেলেটির মাঠের মধ্যদিয়ে হেটে আসছে। সবুজ মাঠ,স্নিগ্ধ দৃষ্টি। সে সবুজ ভালবাসে, ইচ্ছে করে সবুজঘেরা তেপান্তরে হারিয়ে যেতে। মেয়েটিও সবুজের ধার ঘেষে হেটে আসছিল। মাঠের মধ্যদিয়ে কতক্ষণ হেটে মুল রাস্তায় চলে আসা যায়।ছেলেটি একা একা হাটছে। হঠাৎ তার সাথে মেয়েটি। ছেলেটি হয়তো আশা করে নি যে এত সকালে প্রিয়তমার মুখ দেখবে। তারপরেও কেন যেন দেখা হয়ে গেল সে কারনটা কারো জানা নেই। ছেলেটি ও মেয়েটি হেটে চলছে। সমান্তরাল পথচলা। ঠিক পাশাপাশি অবস্থিত দুটি রেল লাইন যেভাবে বয়ে চলে অজানায়। কিন্তু তাদের মাঝে কথা হয়না। কারন ছেলেটি ও মেয়েটি উভয়েই নিরব। ছেলেটি হয়তো তখন বলতে চেয়েছিল I dote U.আর মেয়েটি হয়তো বলত I don't hate U.কিন্তু কেউ আর কথা গুলো বলে নি। ছুটে চলছে গন্তব্যের দিকে। আর এভাবেই কেটে যায় বসন্তের সেই দিনটি।
দেখতে দেখতে কেটে গেল জীবনের এক-চতুর্থাংশ। এবার হাই স্কুলকে বিদায় জানিয়ে কলেজে যাবার পালা। সামনে বিদায় অনুষ্ঠান। বিদায়ের এই দিনটিতে সবার চেহারাই মলিন হয়ে আছে। হাসির বিন্দুমাত্র স্ফুলিঙ্গ নেই কারো চেহারাই। সত্যিই বিদায় কষ্টকর। তবে এ কষ্টের পরিমান হয়তো আরো বেড়ে যায় যদি অতি আপন জনের কাছ থেকেও বিদায় নিতে হয়। ছেলেটির অশ্রু ঝরছিল। প্রিয়তমাকে হারানোর একটা যন্ত্রণাদায়ক সম্ভাবনা বার বার হৃদয়ে চাড়া দিয়ে উঠছিল। কষ্টঘেরা সেই দিনটিকে অশ্রুভেজা চোখ দিয়েই বিদায় জানিয়েছিল ছেলেটি। উভয়েই এস এস সি পরিক্ষায় ভালো রেজাল্ট করে কলেজে উত্তীর্ণ হলো। কয়েক বছরে লেখাপড়াটা শেষ করে দুজনে ভালো ধরনের চাকরি নিল।মেয়েটি একটি কোম্পানির কানেক্টিং ম্যানেজার।সে অন্য কোম্পানির সাথে বিভিন্ন চুক্তির মাধ্যমে তার কোম্পানির সাথে সম্পর্ক গড়ে তুলে। আর ছেলেটি অপর একটি কোম্পানির সেলস এক্সিটিউট। ভালো মানের বেতন পাই। কিন্তু এখনো তার ভিতরে সেই পুরনো ভালবাসাই স্থান করে আছে। আর এভাবেই জীবনের পরিপ্রেক্ষিতে দুজনের আবার দেখা হয়ে গেল। পরিচয় হল সেই ছোট বেলার ক্লাসমেট হিসেবে। কয়েকদিন দুজনে একসাথে চলাফেরা করে তাদের মাঝে একটা বন্ধুত্বের সম্পর্ক গড়ে উঠেছে। ছেলেটি ভাবল এবার না হয় ভালবাসার কথাটা তাকে বলেই দিবে। একটি শুভ দিনে শুভ মুহুর্তে সে মেয়েটিকে বলল যে তাকে সে ভীষন ভালবাসে। কিন্তু মেয়েটি তাকে বয়ফ্রেন্ড হিসেবে পছন্দ করল না। কারন মেয়েটির একটি বয়ফ্রেন্ড ছিল এবং কয়েকদিন পর তারা বিয়ে করতে যাচ্ছে। ছেলেটি তাকে এত করে বুঝাল যে আমি তোমাকে নিজের চাইতেও বেশি ভালবাসি, তোমাকে ছাড়া ভীষন কষ্ট হয়। তোমার সাথে কাটানো প্রত্যেকটি মুহুর্ত আমার কাছে অন্য রকম মনে হয়।দীর্ঘ কয়েকটি বছর ধরে আমি শুধু তোমার প্রতিক্ষার প্রহর গুনেছি। আমি তোমাকে স্কুল জীবনে হতে ভালবাসি। তুমি কষ্ট পাবে ভেবে তোমাকে ভালবাসার কথাটা বলে নি। কিন্তু এ সবই যেন অরন্যে রোদন। সে ঐ ছেলেটিকেই বিয়ে করবে এবং ডিসিশন ইজ ফাইনাল। যাই হোক কিছু করার ছিল না, বুক ভরা ব্থা নিয়ে সে বাসায় চলে গেল।
কয়েকদিন পর মেয়েটি শপিং এ যাচ্ছে। ছেলেটি তার প্রাইভেট কার নিয়ে তাকে ফলো করতে লাগল।হঠাৎ বিপরীত দিক থেকে আসা একটি ট্রাকের সাথে মেয়েটির গাড়ির সংঘর্ষ হয়।প্রচন্ড আঘাত পাই মেয়েটি। সারা দেহ রক্তাক্ত। ছেলেটি এটা কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে দাড়িয়ে রইল।কিন্তু দাড়িয়ে থাকার সময় যে এখন নই।কিছু একটা করতে হবে। অশ্রুঝরা কান্নায় ভেঙ্গে পড়া অবস্থায় সে মেয়েটিকে কুলে তুলে তার গাড়তে রাখল।প্রচন্ড গতিতে উন্মাদের মত গাড়ি চালিয়ে সে তাকে হাসপাতালে নিয়ে গেল। ডাক্তারকে বলল যা ব্যবস্থা লাগে সব গ্রহন করার জন্য, যে করেই হোক তাকে বাচানো দরকার। কিছুক্ষন পর ডাক্তার বলল রোগির দেহ হতে প্রচন্ড রক্তক্ষরণ হয়েছে, এক ঘন্টার ভেতরে রক্ত সংগ্রহ করতে না পারলে তাকে বাচানো সম্ভব নয়। আর ইতোমধ্য সকল ব্লাড ব্যাংকে যোগাযোগ করা হয়েছে কিন্তু তার রেসার্স ফেক্টর মিলতেছে না। ছেলেটি ডাক্তারকে বলল তার রক্তের রেসার্স ফেক্টর পরীক্ষা করার জন্য। নার্সরা এসে তাকে কেবিনে নিয়ে গেল। হ্যা, রক্তের প্রকৃতি মিলেছে। ছেলেটি নিজ শরীর হতে প্রিয়তমাকে বাচানোর জন্য রক্ত দিচ্ছে আর ভাবছে এত দিনে হয় তো ভালবাসার জন্য কিছু একটা করতে পেরেছে। রক্ত গ্রহনের কতক্ষন পর মেয়েটির জ্ঞান ফিরেছে। ছেলেটি ফোন করে মেয়েটির বাড়িতে জানিয়ে দিল আর ডাক্তারের কাছে তার নাম্বারটা দিয়ে বাসায় ফিরে গেল। মেয়েটির বাবা মা সবাই হাসপাতালে আসল,তারা মেয়েটিকে কিভাবে এক্সিডেন্ট হয়েছে সেটা জিজ্ঞাসা করল,জিজ্ঞাস করল কে তাকে হাসপাতালে এনেছে ? সে কিছুই বলতে পারল না। পরবর্তীতে তারা ডাক্তারের সাথে আলাপ করে সমগ্র বিষয় জানতে পারল। ডাক্তার বলল যে একটি ছেলে আপনার মেয়ের জন্য রক্ত দিয়েছে। সে যদি রক্ত না দিত তাহলে আপনার মেয়েকে হয়তো আজ বাচানো সম্ভব হতো না। কিন্তু কে সেই ছেলে যে আমার মেয়ের জন্য এত কিছু করল। কি তার পরিচয়? তারপর ডাক্তার বলল,তার নাম জানা নেই। তবে সে তার সেলফোন নাম্বার দিয়ে বলেছে কোনো সমস্যা হলে কল করতে। মেয়েটির পিতা ডাক্তারের কাছ থেকে নাম্বার নিয়ে ছেলেটিকে কল করল, তাকে হাসপাতালে আসতে বলল।ছেলেটি হাসপাতালে আসল।তাদের সাথে কথা বার্তা বলল। তারপর তার প্রিয়তমাকে দেখার জন্য কেবিনে ছুটে গেল। মেয়েটির বাবা তার মেয়েকে উদ্দেশ্য করে বলছিল, এই সেই ছেলে যে তোকে হাসপাতালে এনেছে, নিজের শরীরের রক্ত দিয়ে তোর জীবন বাচিয়েছে।ছেলেটি মেয়েটির পাশে বসে তার দিকে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল।মেয়েটি তাকে চিনতে পারল আর নিজেকে অনেকটা অপরাধী মনে করছিল। কারন এই সেই ছেলে যাকে সে প্রত্যাখান করেছিল।কিন্তু সে যে তাকে এত ভালবাসে এটা সে কখনো কল্পনাও করে নি, আর করতে চেষ্টাও করেনি।আজ মেয়েটি নিজেকে অনেকটা নিষ্ঠুর ও পাষান মনে করছে।সবকিছুর পর মেয়েটি ছেলেটিকে ভালবাসতে শুরু করল। সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে মেয়েটি বাড়ি চলে আসল। তাদের একমুখী ভালবাসা এখন দ্বিমুখী ভালবাসায় পরিণত হয়েছে। কিন্তু নিরবতা কি নিমিষে চলে যায়।আজও তারা নিরব হয়ে আছে। তবে সে নিরবতাটা আগের চেয়ে অন্য রকম।নদীর পাড়ে পরস্পরের হাত ধরে তারা দাড়িয়ে তারা প্রকৃতি দেখছে অথবা কোনো এক পূর্নিমার রাতে চাদের জোৎস্নার স্নিগ্ধ ছোয়ায় দুজনে পাশাপাশি বসে একজন আরেকজনকে দেখছে, আর আকাশের চাদটি তাদেরকে দেখছে। সবকিছুই এখন অন্যরকম। তাদের ভালবাসা দেখে রাতের আধারের ঝি ঝি পোকাগুলি গুনগুন করে গান ধরেছে, বর্ষার বৃষ্টির ফোটাগুলি রিমঝিম শব্দে তাল তুলেছে,বসন্তের কুকিল বুক উজাড় করে ডাকছে। আর ছেলেটি ও মেয়েটি নিরব ভালবাসায় নিরব হয়ে আছে।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.