![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
মাথার ভিতর অসংখ্য পোকাদের বসবাস। সুখ পোকা, দুখ পোকা, স্বপ্ন পোকা...। আমিও তো আসলে একটা পোকা। পোকার জীবন-যাপন আমার...
:চাকরীর ইন্টারভিউ দিতে এসেছেন?
মেয়েটি আমার দিকে ভ্রু কুচকে তাকালো। যেন আমি চরম অন্যায় প্রশ্ন করেছি। সুন্দরী মেয়েরা একটু অহংকারী হয়। এই মেয়েটা পরমা সুন্দরী। অহংকার একটু বেশিই মনে হয়। শুধু ছোট্ট করে বলল, ‘হু’।
আমার মাথায় তখন কথা বলার ভুত চেপে বসেছে। গত একঘন্টা এই ওয়েটিং রুমে অলস বসে আছি। একে একে সবারই ইন্টারভিউ বোর্ডে ডাক আসছে। আমার সিরিয়াল আর আসে না। কাহাতক আর চুপচাপ বোবা সেজে বসে থাকা যায়। আমি পাশে বসা পরমা সুন্দরীর সাথে আলাপ জমাবার চেষ্টা করি। বলি, ‘আমিও’। মেয়েটি দ্বিতীয়বার আমার দিকে ভ্রু কুচকে তাকালো। এতক্ষণ খেয়াল করি নাই। ভ্রু কুচকে তাকালে মেয়েটাকে আরও সুন্দর লাগে।
:এইটা কী আপনার ফার্স্ট ইন্টারভিউ?
ভেবেছিলাম মেয়েটি আবারও ভ্রু কুচকে তাকাবে। কিন্তু না। এবার পূর্ণ দৃষ্টিতে আমার মুখের দিকে তাকালো। আমার চেহারায় কিছু একটা পড়তে চেষ্টা করলো। মুখ দিয়ে শুধু এক অক্ষরের শব্দ বের হলো, ‘না’।
:আমারও। এর আগেও বেশ কয়েকটা ইন্টারভিউ ফেস করেছি। কিন্তু কপাল। কপাল নাই বুঝেছেন? মামা খালুও নাই। কিন্তু আপনার? আপনার কী সমস্যা? চেহারা দিয়েই তো বাজিমাত করে দেওয়ার কথা।
:আমারও।
:আপনারও কী?
:মামা খালু নাই।
:রিয়েলি।
:হুম।
:ভেরি স্যাড। আপনার আর আমার অবস্থা একই। আমি ঢাবি, আপনি?
:আমিও।
কথার খেলা ভালোই জমে উঠেছে। প্রথম দিকে যতটা অহংকারী ভেবেছিলাম, এখন মনে হচ্ছে ততটা না। মেয়েটিরও মন আছে! আমি আরও অন্তরঙ্গ আলাপ শুরু করে দেই। ‘আপনার আমার ভালোই মিল আছে। আপনারও মামা-খালু নাই, আমারও না। দু’জনেই ঢাবি। মাস্টার্স পাশ। বেকার। আশ্চর্য দেখেছেন? আজকে দু’জনের জামার রঙও এক, ‘নীল’।
‘নীল আমার প্রিয় রঙ’। মেয়েটি ছোট্ট করে উত্তর দেয়।
আমি তো মেয়েটির কথা শুনে অবাক। এতকিছু কিভাবে মিলে যায়? ‘নীল’ আমারও প্রিয় রঙ। সবকিছুই মিলে যাচ্ছে। আমি শেষমেষ বলেই ফেলি, ‘আচ্ছা বিয়ে করেছেন?’ আরও একবার মেয়েটি ভ্রু কুচকে আমার দিকে তাকালো। আমি মুগ্ধ। এই মেয়েটা এতো সুন্দর কেন?
‘কেন বলুন তো?’ ভ্রু কুচকেই মেয়েটি জানতে চায়।
আমি আমতা আমতা করতে থাকি। এতদিন জেনে এসেছি মেয়েদের বয়স জিজ্ঞেস করতে নেই। এখন আরও একটি বিষয় মাথায় রাখতে হবে, মেয়েদের বিবাহ বিষয়ক প্রশ্ন করতে নেই। আমি উত্তরে বলি ‘না মানে সবকিছুই দারুন মিলে যাচ্ছে। বিবাহ বিষয়ক ব্যাপারটাও মিলে যায় কিনা জানতে ইচ্ছা হলো’।
:আপনি করেছেন?
:বিয়ে? উননন নাহ।
:আমিও না।
:দারুন। সবকিছুই মিলে যাচ্ছে, মামা-খালু, লেখাপড়া, চাকরী, পছন্দ, বিয়ে…
:মিলাইতে চান?
আমি মেয়েটির প্রশ্নটা ঠিক বুঝে উঠতে পারি না। আর কি মিলাইতে চাচ্ছে?
মেয়েটিই বলে, ‘সম্পর্ক’।
আমার মাথায় ঠিক ঢুকছে না। কিসের সম্পর্ক সে মিলাইতে চায়?
:আমাকে বিয়ে করবেন?
বিদ্যুতের শক খেলে মানুষ যেমন ঝাকি দেয়, আমার ভিতরেও তেমন ঝাকি দিল। মেয়েটা ভালো খেলোয়াড়। মোক্ষম সময়ে, দারুন বাউন্সার দিয়েছে। আমি কী করবো? পুল করবো না ছেড়ে দিবো? এমন সময়ে মেয়েটির ইন্টারভিউ বোর্ডে ডাক এলো। আমার উত্তরের অপেক্ষা না করেই মেয়েটি হনহন করে ইন্টারভিউ বোর্ডে ঢুকে গেল। তার পরপরই আরেকটা ইন্টারভিউ বোর্ডে আমারও ডাক এলো। রোবটের মতো আমি ইন্টারভিউ বোর্ডে ঢুকলাম। কি প্রশ্ন করলো আর আমি কি উত্তর দিলাম, আল্লাহ মাবুদ জানে। ইন্টারভিউ বোর্ড থেকে বের হয়ে দেখি, ফাকা। মেয়েটি নেই। আমি ইন্টারভিউ কোঅর্ডিনেটর ছেলেটার কাছে ছুটে গেলাম। ‘ভাই, কিছুক্ষন আগে নীল রঙের জামা পড়া যে মেয়ে ইন্টারভিউ দিতে এসেছিল, সেই মেয়েটা কোথায়?’ কোঅর্ডিনেটর আমার দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে রইল। ‘কোথায়? আজকের ইন্টারভিউ লিস্টে কোন ফিমেল ক্যান্ডিডেটই নাই। আপনার কাকে খুজছেন?’ বলে কী লোকটা? এতক্ষণ ধরে আমি কথা বললাম। আর, এ বলে নাই। আমি বেশ কয়েকবার তাকে বোঝাবার চেষ্টা করলাম। কিন্তু তার একই উত্তর, ‘এখানে কোন মেয়েপ্রার্থীই ছিল না’। তার শেষ কথাটা আমাকে হতবুদ্ধ করে দিল। আমি নাকি প্রথম থেকেই একা একা বসে বিড়বিড় করছিলাম। মেয়েটি আমার কল্পনা! যার সাথে আমার এতো মিল সে কিভাবে আমার কল্পনা হয়? এতক্ষণে খুব বেশি দূর হয়তো যায় নাই। অফিসের নিচেই হয়তো সে অপেক্ষা করছে। তার শেষ প্রশ্নের উত্তরটা আমার দেওয়া হয়নি। উত্তরটা জানানো বিশেষ প্রয়োজন। আমি আর এক মুহুর্ত দেরি না করেই লিফটের দিকে হাটা শুরু করলাম। হারিয়ে যাবার আগেই তাকে খুজে পেতে হবে।
১৫ ই জুন, ২০১৫ দুপুর ২:৫৬
আলোকিত পৃথিবী বলেছেন: আমিও
২| ১৫ ই জুন, ২০১৫ সকাল ৯:৫৭
কাল হিরা বলেছেন: কষ্ট পেলাম
©somewhere in net ltd.
১|
১৫ ই জুন, ২০১৫ ভোর ৬:২৯
ফাহাদ ইবনে মুরতাযা বলেছেন: শেষটা হজম করতে পারলাম না।