নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

Poriborton chai

Shurjodoy

Shurjodoy › বিস্তারিত পোস্টঃ

গুঁড়ো দুধে অস্বাভাবিক মুনাফা করছে ৫ কোম্পানি

২৭ শে ডিসেম্বর, ২০১৪ সন্ধ্যা ৬:৫৩

দেশে গুঁড়ো দুধ বিপণনে অস্বাভাবিক মুনাফা করছে পাঁচ কোম্পানি। ৩৫০-৫০০ গ্রাম প্যাকেটে সর্বনিম্ন ২৭ থেকে সর্বোচ্চ ৭২ টাকা মুনাফা করছে তারা।



গুঁড়ো দুধ আমদানি, আমদানি মূল্য, বাজারজাতকরণ ও বিক্রয় মূল্য বিশ্লেষণ করে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অধীন বাংলাদেশ ট্যারিফ কমিশন এ তথ্য জানিয়েছে।



গুঁড়ো দুধে অস্বাভাবিক মুনাফা করা এসব প্রতিষ্ঠানের মধ্যে দেশিয় কোম্পানির পাশাপাশি রয়েছে বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানও।





কোম্পানি পাঁচটি হলো- প্রাণ ডেইরি লিমিটেড, আবুল খায়ের গ্রুপ, নিউজিল্যান্ড ডেইরি প্রডাক্টস বাংলাদেশ লিমিটেড, মেঘনা ও নেসলে বাংলাদেশ লিমিটেড।



প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি মুনাফা করছে প্রাণ ডেইরি লিমিটেড। ননিযুক্ত গুঁড়ো দুধের ৪০০ গ্রামের প্যাকেট কোম্পানিটি বিক্রি করছে ৩২০ টাকায়।



যদিও ট্যারিফ কমিশনের হিসাবে, আমদানি ব্যয় ও অন্যান্য খরচ যোগ করে এর সর্বোচ্চ দাম হওয়ার কথা ছিল ২৪৮.১২ টাকা। অর্থাৎ ৪০০ গ্রামের ননিযুক্ত গুঁড়ো দুধে প্রাণ ডেইরি লিমিটেড অতিরিক্ত মুনাফা করছে ৭১.৮৮ টাকা।



এছাড়া নেসলে বাংলাদেশ লিমিটেড নিডো ব্র্যান্ডের ৩৫০ গ্রামের পূর্ণ ননিযুক্ত প্রতি প্যাকেট গুঁড়ো দুধ বিক্রি করছে ২৯৯ টাকায়। যদিও তা বিক্রি হওয়ার কথা ছিল ২৩০.৩৯ টাকায়। সে হিসাবে নেসলে বাংলাদেশ লিমিটেড অতিরিক্ত মুনাফা করছে ৬৮.৬১ পয়সা।



এ প্রসঙ্গে প্রাণ ডেইরি লিমিটেডের সহকারী মহাব্যবস্থাপক (এজিএম, অপারেশন) হারুন-উর-রশিদ বলেন, ‘আমরা স্থানীয় বাজার থেকে দুধ সংগ্রহ করে গুঁড়ো দুধ তৈরি করছি। এ কারণে আন্তর্জাতিক বাজারে দাম কমলেও আমরা কমাতে পারছি না। ৪০০ গ্রামের প্যাকেট প্রিমিয়াম প্রডাক্টস। তাই দাম আর কমানো সম্ভব নয়।’



আমদানি, পরিবহন, কর-ভ্যাটসহ অন্যান্য খরচের সঙ্গে মুনাফা যোগ করে গুঁড়ো দুধের একটি যৌক্তিক মূল্য হিসাব করেছে ট্যারিফ কমিশনের মনিটরিং সেল।



এক্ষেত্রে স্বল্প ননিযুক্ত ৪০০ গ্রাম গুঁড়ো দুধের আমদানি ব্যয় ধরা হয়েছে ৯৯.২০ টাকা, শুল্ক ৫ টাকা, ভ্যাট ১৫.৬০ টাকা, অগ্রিম আয়কর ৫ টাকা, ব্যাংকের সুদ ৩.১০ টাকা এবং পরিবহন ও প্যাকেজিং ব্যয় ১২ টাকা।



এর বাইরে প্রশাসন, বিতরণ ও অন্যান্য খরচ ধরা হয়েছে ৫ টাকা। এর সঙ্গে আমদানিকারকের ৬ শতাংশ, পরিবেশকের ৪ ও খুচরা ব্যবসায়ীদের ১০ শতাংশসহ সব পর্যায়ের মোট ২৯ টাকা মুনাফা যোগ করে স্বল্প ননিযুক্ত ৪০০ গ্রাম গুঁড়ো দুধের মূল্য দাঁড়ায় ১৭৩.৮০ টাকা।



পূর্ণ ননিযুক্ত গুঁড়ো দুধেরও একটি যৌক্তিক মূল্য হিসাব করেছে ট্যারিফ কমিশন।



৪০০ গ্রামের আমদানি ব্যয় ধরা হয়েছে ১৩৮ টাকা, শুল্ক ৬.৯০ টাকা, ভ্যাট ২১.৭০ টাকা, অগ্রিম আয়কর ৬.৯০ টাকা, ব্যাংকের সুদ ৪.৩০ টাকা এবং পরিবহন ও প্যাকেজিং খরচ ১২ টাকা।



এর বাইরে প্রশাসন, বিতরণ ও অন্যান্য খরচ ধরা হয়েছে ৫ টাকা। এর সঙ্গে আমদানিকারকের ৬ শতাংশ, পরিবেশকের ৪ শতাংশ ও খুচরা ব্যবসায়ীদের ১০ শতাংশ মুনাফা ধরে মোট মূল্য দাঁড়ায় ২৩৩.৮০ টাকা। যদিও গুঁড়ো দুধ বিপণনকারী কোম্পানিগুলো অস্বাভাবিক বেশি দামে পণ্যটি বিক্রি করছে।



এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ট্যারিফ কমিশনের চেয়ারম্যান মো. আজিজুর রহমান জানান, ‘গুঁড়ো দুধের বিষয়ে একটি প্রতিবেদন আমরা বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছি। সেখান থেকে কোনো নির্দেশনা এলে সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে। বিষয়টি সংবেদনশীল হওয়ায় এর বেশি বলা সম্ভব নয়।’



ট্যারিফ কমিশনের হিসাব অনুযায়ী, আবুল খায়ের গ্রুপ তাদের স্টারশিপ ব্র্যান্ডে ৩০ টাকা ও মার্কসে ২৭ টাকা অতিরিক্ত মুনাফা করছে।



৫০০ গ্রামের স্টারশিপ ব্র্যান্ডের দুধ সর্বোচ্চ ২৩৪.৯১ পয়সায় বিক্রি হওয়ার কথা থাকলেও ভোক্তাদের গুনতে হচ্ছে ২৬৫ টাকা। একইভাবে এ প্রতিষ্ঠানের মার্কস ব্র্যান্ডের ৪০০ গ্রামের ১৯২ টাকার গুঁড়ো দুধ বিক্রি হচ্ছে ২১৯ টাকায়।



আবুল খায়ের গ্রুপের পরিবেশক মৌলভীবাজারের শরীফ ব্রাদার্সের স্বত্বাধিকারী ওমর শরীফ বলেন, আন্তর্জাতিক বাজারে দাম কমে যাওয়ায় কোম্পানির পক্ষ থেকে পরিবেশক, পাইকারি ও খুচরা বিক্রেতাদের কমিশন বাড়িয়ে দেয়া হয়েছে। তবে খুচরা বিক্রেতারা আগের মূল্যে বিক্রি করায় এর সুফল ভোক্তারা পাচ্ছে না।



প্রতিবেদন অনুযায়ী, নিউজিল্যান্ড ডেইরি প্রডাক্টস বাংলাদেশ লিমিটেড ডিপ্লোমা ব্র্যান্ডের ৫৮ টাকা, অ্যাংকরে ৫৯ ও রেড কাউয়ে ৫৮ টাকা অতিরিক্ত মুনাফা করছে।



মেঘনা গ্রুপের প্রতিষ্ঠান তানভীর ফুড লিমিটেড ফ্রেশ ব্র্যান্ডের দুধে ২০.৮১ টাকা অতিরিক্ত মুনাফা করছে। পূর্ণ ননিযুক্ত ৪০০ গ্রামের প্রতি প্যাকেট গুঁড়ো দুধ প্রতিষ্ঠানটি বিক্রি করছে ২১৯ টাকায়। যদিও এর কাঙ্ক্ষিত মূল্য হওয়ার কথা সর্বোচ্চ ১৯৮.১৯ টাকা।



এ ব্যাপারে তানভীর ফুড লিমিটেডের নির্বাহী পরিচালক আসিফ ইকবাল বলেন, আন্তর্জাতিক বাজারে গুঁড়ো দুধের দাম কমায় গত আগস্টে তারা প্রতি কেজিতে ৮০ টাকা দাম কমিয়েছেন। সীমিত লাভে গুণগত পণ্য তারা ভোক্তাদের কাছে পৌঁছে দিচ্ছেন।



কাঙ্ক্ষিত মূল্যের চেয়ে অস্বাভাবিক বেশি দামে গুঁড়ো দুধ বিক্রি করায় সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়াসহ বেশকিছু সুপারিশ করেছে ট্যারিফ কমিশন।



এতে বলা হয়েছে, গুঁড়ো দুধ বাজারজাতকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলোচনাক্রমে বর্তমান বাজারমূল্যকে যৌক্তিক পর্যায়ে নির্ধারণ ও পুশ সেল বন্ধকরণে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে।



সরবরাহ ব্যবস্থার প্রতি স্তরে (পরিবেশক, খুচরা ব্যবসায়ী) যৌক্তিক পর্যায়ে মুনাফা প্রদানে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে। গুঁড়ো দুধের আন্তর্জাতিক মূল্যের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে স্থানীয় আমদানিকারকদের ঋণপত্র খোলার জন্য কার্যকর উদ্যোগ নেয়া প্রয়োজন।



যেসব আমদানিকারক ব্র্যান্ডহীন গুঁড়ো দুধ আমদানি ও পরবর্তীতে প্যাকেটজাত করে, তারা কী নামে ও কী দরে বাজারজাত করে, সে বিষয়ে নজরদারি বাড়াতে হবে।



পাশাপাশি যেসব আমদানিকারক অধিক মূল্যে আমদানি করছেন, তাদের আমদানিকৃত গুঁড়ো দুধ অধিকতর মান যাচাই করার সুপারিশ করেছে সংস্থাটি।



প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আন্তর্জাতিক বাজারে গত জানুয়ারির পর থেকে অব্যাহতভাবে গুঁড়ো দুধের দাম কমছে। আগে প্রতি কেজি গুঁড়ো দুধ ৫.১৭ ডলারে বিক্রি হলেও অক্টোবরে তা ২.৬১ ডলারে নেমে আসে।



এ হিসাবে আন্তর্জাতিক বাজারে গুঁড়ো দুধের দাম অর্ধেকেরও বেশি কমেছে। দর হ্রাসের এ ধারা অব্যাহত থাকলেও অভ্যন্তরীণ বাজারে এর প্রভাব সেভাবে পড়েনি।



এ ব্যাপারে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংগঠন কনজিউমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি গোলাম রহমান জানান, আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বেড়ে গেলে দেশের কোম্পানিগুলো দ্রুত দাম বাড়িয়ে দেয়। কিন্তু দাম কমলে তারা আর সমন্বয় করতে চায় না।



তিনি আরো বলেন, বাজারে প্রতিযোগিতা আরো বাড়াতে হবে। আর সরকারি বিপণন সংস্থা আমদানি করে কম দামে বিক্রি করতে পারলে অন্যরা দাম কমাতে বাধ্য হবে।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.