![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
জাতীয় আয়ে শস্য খাতের অবদান ক্রমান্বয়ে কমলেও মত্স্য এবং প্রাণী ও পোলট্রি খাতের অবদান ধারাবাহিকভাবে বাড়ছে। কিন্তু ঋণ প্রাপ্তির ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার পাচ্ছে না মত্স্য ও প্রাণিসম্পদ খাত। এখন পর্যন্ত কৃষিঋণের প্রায় ৭৫ শতাংশই ব্যবহার হচ্ছে শস্য খাতে। বাংলাদেশ ব্যাংকের ‘বাংলাদেশের কৃষিঋণের ব্যবহার এবং প্রভাব নির্ধারণ’ শীর্ষক গবেষণায় এ তথ্য উঠে এসেছে।
বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে জানা যায়, বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর বিতরণ করা মোট ঋণের একটি নির্দিষ্ট অংশ কৃষি খাতে বিতরণের বিধান রয়েছে। কৃষিঋণ বিতরণে খাতভিত্তিক লক্ষ্যমাত্রাও বেঁধে দেয়া হয়। এ খাতগুলোর মধ্যে রয়েছে— শস্য, মত্স্য, প্রাণী ও পোলট্রি, সেচ যন্ত্রপাতি, ফসল মজুদ ও বিপণন এবং দারিদ্র্য বিমোচন। ২০১৩-১৪ অর্থবছরে এসব খাতে ঋণ বিতরণ হয়েছে ১৬ হাজার ৩৬ কোটি টাকা। প্রতি বছরই ১০-১৫ শতাংশ হারে বাড়ছে এ ঋণ। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সাম্প্রতিক গবেষণায় দেখা গেছে, সরাসরি শস্য খাতে বিতরণ হয়েছে কৃষিঋণের ৬৬ দশমিক ১৪ শতাংশ। পাশাপাশি মসলা আবাদে ৩ দশমিক ৩৮, শস্য সংরক্ষণ ও বাজারজাতকরণে ২ দশমিক ৮৮ শতাংশ এবং সেচ যন্ত্রপাতি ক্রয়ে ৩ দশমিক ৫২ শতাংশ যোগ করলে তা দাঁড়ায় ৭৫ দশমিক ৯২ শতাংশ। এক্ষেত্রে উপেক্ষিত থেকে যাচ্ছে মত্স্য ও প্রাণিসম্পদ খাত।
মত্স্য চাষে ৭ দশমিক ১২ এবং গবাদি পশুপালনে ২ দশমিক ৭৩ শতাংশ কৃষিঋণ ব্যবহার হচ্ছে। অন্যান্য খাতে যাচ্ছে ১ দশমিক ৩৭ শতাংশ। তবে ১০ দশমিক ৪২ শতাংশ গ্রাহক খাতভিত্তিক বিতরণের তথ্য গোপন রাখেন। দেশের সাতটি বিভাগের ৩৩টি জেলায় ১০টি বাণিজ্যিক ব্যাংকের ৬০টি শাখার ২ হাজার ঋণগ্রহীতা এ গবেষণায় প্রাথমিক তথ্য সরবরাহ করেন।
গবেষণায় জানা যায়, শস্য খাতে ঋণ বিতরণ হচ্ছে লক্ষ্যমাত্রা থেকে বেশি। অন্যদিকে মত্স্য ও প্রাণিসম্পদ খাতে ঋণ বিতরণ লক্ষ্যমাত্রা অনেক সময়ই অর্জিত হচ্ছে না।
বাংলাদেশ পোলট্রি শিল্প জাতীয় রক্ষা কমিটির সাধারণ সম্পাদক খোন্দকার মো. মোহসিন বলেন, বার্ড ফ্লুসহ নানা কারণে বন্ধ হয়ে যাওয়া অনেক খামারে এখন শুধু অবকাঠামো পড়ে আছে। পুরোপুরি কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যাওয়া এসব খামার পুনরায় চালু করতে চলতি মূলধন প্রয়োজন। সহজ শর্তের ঋণ ছাড়া সেটি সম্ভব নয়।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, শস্য খাতে উত্পাদন এখন সর্বোচ্চ পর্যায়ে। এ অবস্থা ধরে রাখতে ঋণ বিতরণ অব্যাহত রাখার বিকল্প নেই। আর পোলট্রি খাতে নানা ঝুঁকির কারণে ব্যাংকগুলো ঋণ বিতরণে কিছুটা নিরুত্সাহিত হতে পারে। এ অবস্থায় আমিষের চাহিদা পূরণে মত্স্য ও প্রাণিসম্পদ খাতে ঋণ বিতরণে ব্যাংকগুলোকে সঠিক নির্দেশনা প্রদান ও তদারকি করতে হবে।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) তথ্যমতে, দেশজ উত্পাদনে কৃষি খাতের অন্যতম উপখাত শস্য খাতের অবদান ২০১২-১৩ অর্থবছরে ছিল মাত্র শূন্য দশমিক ৫৯ শতাংশ; যা তার আগের বছরে ছিল ১ দশমিক ৭৫ শতাংশ। অন্যদিকে প্রাণিসম্পদের অবদান ২ দশমিক ৭৪ শতাংশ, যা তার আগের বছরে ছিল ২ দশমিক ৬৮ শতাংশ। এছাড়া ২০১২-১৩ অর্থবছরে জাতীয় আয়ে মত্স্য খাতের অবদান ছিল ৬ দশমিক ১৮ শতাংশ, যা তার আগের বছর ছিল ৫ দশমিক ৩২ শতাংশ। এ অবস্থায় শস্য খাতের পাশাপাশি মত্স্য ও প্রাণী খাতে ঋণ বিতরণের সুপারিশ করেছেন খাত সংশ্লিষ্টরা।
বাংলাদেশ কৃষি অর্থনীতিবিদ সমিতির সভাপতি ড. শামসুল আলম বলেন, মত্স্য ও প্রাণিসম্পদ খাতে অধিক গুরুত্ব দেয়ার সময় এসেছে। জনসংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে আমিষের চাহিদা বাড়ছে। এ চাহিদা পূরণে মাছ ও মাংসের সরবরাহ ঠিক রাখতে কৃষিঋণ বিতরণে খাতটিকে গুরুত্ব দিতে হবে। একই সঙ্গে প্রযুক্তিগত সহায়তা ও প্রশিক্ষণ দিতে হবে। সেটি করতে না পারলে কৃষিঋণ কোনো কাজে আসবে না।
বাংলাদেশ ব্যাংকের কৃষিঋণ ও আর্থিক সেবাভুক্তি বিভাগের মহাব্যবস্থাপক প্রভাষ চন্দ্র মল্লিক বলেন, মত্স্য চাষ ও প্রাণী খাতের ক্রমবর্ধমান গুরুত্ব অনুধাবন করে কৃষিঋণ বিতরণের নতুন নীতিমালা করা হয়েছে। এ নীতিমালায় খাতভিত্তিক ঋণ বিতরণের সর্বোচ্চ সীমা নির্ধারণ করা হয়েছে। যেখানে সর্বোচ্চ ৬০ শতাংশ শস্য খাত ও ৪০ শতাংশ মত্স্য, প্রাণী ও অন্যান্য খাতে বিতরণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এর সুফল শিগগিরই পাওয়া যাবে।
এদিকে সম্প্রতি কৃষি ও পল্লী ঋণের সর্বোচ্চ সুদহারের সীমা ২ শতাংশ কমিয়ে ১১ শতাংশ বেঁধে দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। নতুন এ সুদহার আগামী বছরের শুরু থেকে কার্যকর করতে ব্যাংকগুলোকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের এক প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, আমানত ও ঋণের সুদহারের নিম্নমুখী প্রবণতা বিবেচনায় অগ্রাধিকার খাত হিসেবে কৃষি ও পল্লী ঋণের সুদহারের ঊর্ধ্বসীমা ১৩ শতাংশের পরিবর্তে ১১ শতাংশ নির্ধারণ করা হলো। আগামী ১ জানুয়ারি থেকে এ নির্দেশনা কার্যকর হবে।
আর্থিক খাত সংস্কার কর্মসূচির আওতায় ১৯৮৯ সালের পর থেকে ব্যাংকগুলো নিজেরাই সুদহার নির্ধারণ করতে পারে। তবে বৈশ্বিক মন্দার পরে উত্পাদনশীল খাতে ঋণ বাড়ানোর লক্ষ্যে কৃষি, মেয়াদি শিল্প, নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য আমদানি ও রফতানিমুখী শিল্পসহ বেশ কয়েকটি খাতে সুদহারের সর্বোচ্চ সীমা নির্ধারণ করে বাংলাদেশ ব্যাংক।
©somewhere in net ltd.
১|
২৭ শে ডিসেম্বর, ২০১৪ রাত ৮:০৩
নিলু বলেছেন: কৃষি কাজে ঋণ আরও সহজিকরন করা দরকার