![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
মূল্যসংকোচনের ঝুঁকি থেকে উত্তরণে অবশেষে বহুল প্রতীক্ষিত কোয়ান্টিটেটিভ ইজিং (কিউই) বা বন্ড ক্রয় কর্মসূচি চালু করেছে ইউরোপীয় সেন্ট্রাল ব্যাংক (ইসিবি)। আর ইসিবির এ পদক্ষেপে নতুন চাপে পড়েছে ইউরোপের কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলো। খবর ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল ও এএফপি।
জার্মানির বুন্দেসব্যাংকের প্রবল আপত্তি সত্ত্বেও ইসিবি তার এ কর্মসূচি চালু করার সিদ্ধান্ত বহাল রাখল। ইসিবি জানায়, মার্চ থেকে ২০১৬ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত তারা প্রতি মাসে সার্বভৌম বন্ড ক্রয় অব্যাহত রাখবে। ইসিবি প্রধান মারিও দ্রাঘি বলেন, নতুন কিউই কর্মসূচির মাধ্যমে প্রতি মাসে ৬০ বিলিয়ন ইউরো (৬৮ বিলিয়ন ডলার) অর্থনীতিতে সরবরাহ করা হবে। ফলে আগামী বছরের সেপ্টেম্বর নাগাদ এ পদক্ষেপের মাধ্যমে অর্থনীতিতে প্রবেশ করবে ১ ট্রিলিয়ন ইউরোরও বেশি। এ বিপুল অর্থের বন্যা এরই মধ্যে বাজারে প্রভাব ফেলতে শুরু করেছে। এ ঘোষণার পর পরই মান কমে প্রতি ইউরো এখন দাঁড়িয়েছে ১ দশমিক ১৪১০৮ ডলারে। অন্যদিকে সাত বছরের সর্বোচ্চে উঠেছে ইউরোপের শেয়ারমূল্য।
ইসিবি ও ইউরোজোনের কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলো মূলত তাদের ‘ক্যাপিটাল কি’র অনুপাতে বন্ড ক্রয় করবে। অর্থাত্ আয়ারল্যান্ডের মতো ক্ষুদ্র অর্থনীতির তুলনায় জার্মানির মতো বড় অর্থনীতির বন্ডগুলো কেনা হবে বেশি। ইসিবির একটি সূত্র জানিয়েছে, পাঁচজন গুরুত্বপূর্ণ নীতিপ্রণেতা এ সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করেছেন: জার্মানি, নেদারল্যান্ডস, অস্ট্রিয় ও এস্টোনিয়ার কেন্দ্রীয় ব্যাংক প্রধানরা এবং ইসিবির নির্বাহী বোর্ডের সদস্য জার্মান নাগরিক সাবিন লউটেনশ্লায়েজার।
ইসিবির ঘোষণায় একই সঙ্গে সুযোগ ও চ্যালেঞ্জ সৃষ্টি হয়েছে ইউরোজোনের প্রতিবেশী অর্থনীতিগুলোর সামনে। এ পরিকল্পনায় এ মুদ্রা ব্লকটিতে ইউরোপের অন্যান্য দেশের পণ্যের প্রতি চাহিদা সৃষ্টি করতে পারে। আবার ব্যাপক ইউরো বাজারে ছাড়ার কারণে দুর্বল হয়ে পড়তে পারে ইউরোর মান, যাতে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে বাণিজ্যিক অংশীদারদের সঙ্গে লেনদেন।
বন্ড ক্রয় কর্মসূচির ঘোষণার পর পরই ডেনমার্কের কেন্দ্রীয় ব্যাংক চলতি সপ্তাহে দ্বিতীয়বারের মতো তাদের প্রধান সুদের হার কমিয়ে দিয়েছে। মূলত বিনিয়োগকারীরা যাতে ডেনিস ক্রোন থেকে মুখ ফিরিয়ে না নেয়; সেজন্যই এ ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। এছাড়া দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য অব্যাহত রাখতে ইউরো ও ক্রোনের বিনিময় মূল্যে ভারসাম্য আনাও এ সিদ্ধান্তের অন্যতম একটি কারণ।
প্রায় শূন্য মূল্যস্ফীতিতে রয়েছে সুইডেন। তাই ইসিবির পদক্ষেপে দেশটির কেন্দ্রীয় ব্যাংকটিও এখন ইউরোর বিপরীতে তাদের মুদ্রাকে দুর্বল করে রাখার চাপে পড়েছে। এরই মধ্যে প্রয়োজন পড়লে ঋণাত্মক সুদের হার, বন্ড ক্রয় ও ব্যাংকিং খাতে তারল্য বৃদ্ধির মতো পদক্ষেপ বিবেচনায় রাখছে রিকসব্যাংক।
ইউরোপের অন্যান্য রাষ্ট্রের সামনেও এ সিদ্ধান্তের কারণে বেশকিছু চ্যালেঞ্জ সৃষ্টি হয়েছে। ইউরোজোনের বাইরে অনেক দেশেও মূল্যস্ফীতি বেশ নিম্ন পর্যায়ে বিরাজ করছে। যদি এসব দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলো ইউরোর বিপরীতে তাদের মুদ্রাগুলোকে শক্তিশালী করার সুযোগ দেয়, তাহলে ইউরোজোন থেকে তাদের আমদানি করা পণ্য ও সেবার মূল্য অনেক কমে যাবে। ফলে আরো ঘনীভূত হবে মূল্যস্ফীতি পরিস্থিতি। এছাড়া এসব দেশ থেকে ইউরোজোনে রফতানিও ব্যয়বহুল হয়ে পড়বে।
তুরস্কের অর্থমন্ত্রী মেহমেট সিমসেক বলেন, ‘ইসিবির বন্ড ক্রয়ে তুরস্কের অর্থনীতিতে ইতিবাচক প্রভাবই পড়বে। এর ফলে তুরস্কে পুঁজির প্রবাহ অনেকটাই বেড়ে যাবে, যা ফেডের সুদের হার বৃদ্ধির সম্ভাব্য প্রভাবকে অনেকটাই মোকাবেলা করতে পারবে।’ বিশ্লেষক ও অর্থনীতিবিদরা আশঙ্কা করছেন, ফেডারেল রিজার্ভ তাদের সুদের হার বাড়িয়ে দিলে তাতে উন্নয়নশীল বিশ্ব থেকে পুঁজির বহিঃপ্রবাহ বেড়ে যাবে।
যুক্তরাজ্য ও আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) ইসিবি এ পদক্ষেপকে স্বাগত জানিয়েছে। তবে এ নিয়ে প্রয়োজনীয় অর্থনৈতিক সংস্কার বাস্তবায়নের তাগিদ দিয়েছেন আইএমএফ প্রধান ক্রিস্টিন লাগার্দে। এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, ‘ইসিবির এ পরিকল্পিত পদক্ষেপে ইউরোজোনে ঋণ গ্রহণের খরচ অনেকটাই কমে যাবে। ফলে দীর্ঘমেয়াদি নিম্ন মূল্যস্ফীতির ঝুঁকির মাত্রা প্রভূত কমে যাবে। মূল্যস্তরে স্থিতিশীলতা আনতে এ সিদ্ধান্ত ইসিবিকে বেশ সহায়তা করবে।’ ‘এ মুদ্রানীতির বাস্তবায়নের জন্য অন্যান্য ক্ষেত্রে নীতিগত পদক্ষেপও প্রয়োজন। শুধু অবকাঠামো খাতে সংস্কারই নয়, চাহিদা ব্যবস্থাপনা নীতিতে প্রয়োজনীয় রাজনৈতিক সহায়তাও এক্ষেত্রে বেশ প্রয়োজন।’
©somewhere in net ltd.