![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
এটা গল্প হলেও পারতো
নয়নতারা
.
মাথার উপর প্রচন্ড রোদ।
রোদের সাথে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে গরম, যেন প্রতিযোগিতায় নেমেছে কে বিজয়ী হবে!
বাস থেকে নেমে মরুভূমির পথহারা পথিকের মতো কখনো জোরকদমে কখনো বা আস্তে আস্তে হেঁটে চলেছে প্রীতু।
আবার জনাকীর্ণ জায়গা পেরিয়ে কখনো ভয়ার্ত শাবক ছানার মতো দৌড়াচ্ছে।
পরমূহুর্তেই মানুষজন দেখলে দৌড় থামিয়ে দিচ্ছে যাতে তাকে দেখে কারোর মনে কোনো বিরূপ ধারণা না জাগে।
এত উদ্বেগের ভিতরেও মুখটাকে অসম্ভব শান্ত করে রেখেছে সে। কিন্তু মানসপটে বারবার ভেসে উঠছে আতঙ্কের কালো ছায়া।
এই সময়টা তাকে জীবনের কোন মোড়ে নিয়ে থামাবে তা প্রীতুর জানা নেই।
কিভাবে কি হয়ে গেল কিছুই বুঝতে পারছে না সে। এসব নিয়ে ঠিক এই মূহুর্তে কিছু ভাবতে চাইছে না ও।
এখন আপাতত মাথায় একটা বিষয় ঘুরছে সেটা হলো 'পালাতে হবে, পালাতে হবে মানে পালাতেই হবে!' কথাটা বিড়বিড় করে আউড়ে নিল সে, যেন নিজের মনকেই আরেকবার তাগিদ দিলো, 'থামলে চলবে না'
তখনি মা রাহেলার সুন্দর শান্ত মুখশ্রী হৃদয়ে কে যেন এঁকে দিয়ে গেল। কি সুন্দর সেই হাসি।
সে যে মা!
সাথে সাথে চোখের কোণে চিকচিক করে উঠে লোনা পানি।
কিছুক্ষণ ধীরে ধীরে হেঁটে নিজেকে শান্ত করে নেয়।
সকালে কোনোরকমে খেয়েছে।
গলা দিয়ে কোনো খাবার নামছিল না তার খেয়েছে শুধু মায়ের মুখের দিকে তাকিয়ে।
তারপর এই পথচলা, অজানা গন্তব্যে! অজানা ঠিক বলা চলে না। গন্তব্য যশোর। মামাবাড়িতে...
সেখানে যদি আশ্রয় মেলে সেই আশায় রাহেলা মেয়েকে পাঠিয়ে দিলেন।
প্রীতুর হঠাৎ খেয়াল হয় অনেক বেলা হয়েছে পৌঁছাতে না পারলে বিপদে পড়তে পারে। ব্যাগে হাজার বিশেক টাকা সাথে কিছু খুচরো টাকা আছে, আর খুব দরকারী কিছু জিনিস।
আজ বড় অসহায় প্রীতু! বাকি জীবনটা কোথায় কাটবে আর কিভাবে কাটবে সেটা সৃষ্টিকর্তা ছাড়া কেউই জানেনা।
ভাবতে ভাবতে প্রীতু ব্যাগে থাকা মায়ের লেখা বিস্তারিত ঠিকানাটা আরেকবার পড়ে ফেলে। তারপর বাসস্ট্যান্ডের উদ্দেশ্য রিকশা নেয়।
এভাবে একাএকা বাসে যাতায়াত প্রীতুর প্রথম অভিজ্ঞতা।
মনে ভয় আর আতঙ্কের অশুভ ছায়া।
কিন্তু ঠিকানা পড়তে গিয়ে মায়ের লেখা শেষ বাক্যটাও পড়েছে প্রীতু,
"প্রচন্ড কষ্ট হবে খুব তবুও থেমে যাস না প্রীতু মা! মূহুর্তের জন্যও না!"
বাসে বসে জানালা দিয়ে বাইরে তাকায় প্রীতু।
সবুজ গালিচার মতো বিস্তীর্ণ মাঠ। চোখের সাথে প্রকৃতির সবুজ রঙের মনে হয় কোনো সংযোগ আছে তাই প্রাকৃতিক সবুজ রঙটা চোখে পড়লে চোখও যেন প্রশান্তি পায়।
কিন্তু সেই প্রশান্তির কোনো অংশই প্রীতুকে স্পর্শ করতে পারছে না।
বাড়ি থেকে বের হওয়ার সময় তার মা। তাকে একটা ডায়েরি, একটা চিঠি, ঠিকানা আর সাড়ে এগারো হাজার টাকা দিয়েছিল প্রীতুকে। আর একরাতের মাঝেই মা কিভাবে যেন একটা স্মার্টফোন ও জোগাড় করে ফেলেছে মা, হয়তো যোগাযোগ করার জন্য।
মায়ের দিকে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকাতে মা উত্তর দিয়েছিল, "নরমাল একটা ফোন দিতে পারতাম, কিন্তু এটা তোর এর পরে লাগবে, তখন বুঝবি! আর তো কিছুই দিতে পারব না"
আঁচলে মুখ লুকিয়ে কেঁদেছিলেন তিনি। তারপর চোখ মুছে বলেছিলেন,
"চিঠিটা ডায়েরি পড়ার পরে পড়বি, তোর সব প্রশ্নের উত্তর পেয়ে যাবি।" আর কিছুই বলতে পারেননি। বাড়িটার দিকে একবার তাকিয়ে ধীরে ধীরে বের হয়ে এসেছিল প্রীতু...
ভাবতে ভাবতে আনমনা হয়ে যায় সে।
"ও আফা! নামবেন কোথায়?"
ধড়মড়িয়ে ওঠে প্রীতু!
বাসের জানালা দিয়ে মুখ বাড়িয়ে একটা দোকানের দিকে তাকিয়ে জায়গার নাম দেখে নেমে পড়ে।
বিকালের সূর্যটা তখন স্মিত হাসছে।
রক্তিম আভা ছড়িয়ে পড়ছে।
অন্য কোনো সময় এভাবে একা চলাফেরার আনন্দ উপভোগ করত প্রীতু, রোমাঞ্চিত হতো।
কিন্তু আজ সেসব নিছক আবেগ মনে হচ্ছে।
বাবা নামের সেই মানুষটার কথাই কানে ভাসছে। প্রীতু এসএসসি পরীক্ষা দুইদিন আগে শেষ হয়েছে। সে জানে রেজাল্ট ও খুব ভাল হবে৷ কত স্বপ্ন দেখেছিল! কিন্তু কোথা থেকে যেন একটা দমকা ঝড়ো হাওয়া সব তছনছ করে দিতে চাইছে! কি করবে সে! দীর্ঘশ্বাস ফেলে সে!
আবার রিকশা নিল প্রীতু। এই জায়গাটা মোটামুটি চিনে। মায়ের সাথে এসেছে। তখন অবশ্য নিজেদের গাড়ির ভিতর ছিল।
রিকশা একেবারে মামার বাড়ির সামনে গিয়ে থামলো।
ভাড়া মিটিয়ে ত্রস্ত পায়ে বাড়ির ভিতরে গেল। মা কিছু জানিয়েছে কিনা কে জানে!
"আরেএএএ এ যে প্রীতি"
ছুটে আসলো প্রীতুর বড় মামি।
এত দুঃখের মাঝেও হেসে ফেলল প্রীতু,
"মামি তুমি এখনো আমার নাম বলতে শিখলে না! আমি প্রীতি না প্রীতু"
"আরে ওই হলো প্রীতি-প্রীতু, চল চল ঘরে চল..."
এখানে প্রীতুর মামা বাড়ি সম্পর্কে কিছুটা বলে নেওয়া দরকার। প্রীতুর তিন মামা, বড় আর মেজ মামা প্রাইমারী স্কুলে চাকরী করে। আর ছোট মামা কোনো এক এনজিও তে।
তবে আয়ের তুলনায় চাহিদা আকাশছোঁয়া। তাই এরা খুব অবস্থাসম্পন্ন তো নয়ই, বরং বেশ টানাটানির মাঝে দিন চলে।
দারিদ্রতার জন্য হোক বা পরিবেশের গুণেই হোক এরা একটু বেশিই স্বার্থপর। প্রীতুর তিন মামির মাঝে মাসে ছ'মাসে দশ বারোদিন মুখ দেখাদেখি থাকে না। তবুও প্রীতুর সাথে এদের ব্যবহার খারাপ তো না, উল্টো যত ভাল করে রাখা যায়। তাই এদের খারাপ রূপটার সাথে প্রীতুর পরিচয় হয়নি।
রাহেলা খুব সুন্দরী, তাকে দেখেই পছন্দ করেছিলেন আসাদ শেখ, আর কিছু দেখেননি। কিছুটা টাকার জন্য হোক বা প্রীতুর গুণেই প্রীতুকে সবাই ভালবাসে।
"কি রে আয়?"
সম্বিত ফিরল প্রীতু।
'মা কি তাহলে কিছুই বলেনি? কি জানিহ!' ভাবতে ভাবতে মামির পিছু পিছু ঘরে ঢুকল প্রীতু। তাকে দেখে ছুটে এলো মামাতো বোন আর ভাইয়েরা। প্রীতুর খুব খারাপ লাগলো যে তার কাছে কিছুই নেই বাচ্চাগুলোকে দেওয়ার মতো। এত চিন্তার মাঝে কিছুই মনে হয়নি তার। প্রীতুর বড় মামির মেয়েটা ছোট সবথেকে। প্রীতুর বড় মামা বিয়ে করেছেন একেবারে শেষে। শোনা যায় বিগত জীবনে তার চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য খুব একটা ভালো ছিল না, তবে এখন অনেক লোকদেখানো মহৎ কাজের আড়ালে আগের খারাপ চরিত্রের কথাগুলো বাজে জনশ্রুতি হিসেবে পরিগণিত হয়। বাকি দুই মামির একজনের দুই মেয়ে এক ছেলে আর ছোট মামির মেয়ে এক ছেলে। মেজ মামির দুই মেয়ে ছাড়া সব প্রীতুর ছোট। তাদের অবশ্য বিয়ে হয়ে গিয়েছে। সবার সাথে সময় কাটিয়ে একটু দ্রুতই ঘুমানোর প্রস্তুতি নিলো সে।
এসে কিছুই খায়নি, মন খারাপ থাকলে কিছুই খেতে পারেনা প্রীতু, কোনো খাবারই গলা দিয়ে নামেনা হাজার চেষ্টাতেও। সারাদিনের ক্লান্তি গুলো যেন আড়ষ্ট করে দিতে চাইল তাকে। সহজেই ঘুমিয়ে গেল সে।
অনেক রাতে ঘুম ভেঙে গেল প্রীতুর। আস্তে আস্তে উঠে বসে বেশ কিছুক্ষণ বসে ভাবতে লাগল পুরো দিনের কথাগুলো।
ক্লান্তিহীন শরীরকে আবার অবসাদ ঘিরে ফেলল। ধীরে ধীরে কাঁপা হাতে হাত বাড়াল মায়ের দেওয়া ডায়েরিটার দিকে।
প্রশ্ন গুলো উত্তর খুঁজে বেড়াচ্ছে।
কেন তার বাবা তাকে অন্যকে দিয়ে দিতে চাইলো!
মা কেন তাকে আটকাতে পারলো না? কেন তাকে পালিয়ে যেতে বলল মা? এসব অদ্ভুত ঘটনা কেন ঘটছে তার সাথে?
প্রীতুর মা খুব সুন্দর ডায়েরি লিখে, ঘটনা গুলোকে খুব জীবন্ত মনে হয়।
প্রীতুর প্রশ্নগুলোর উত্তর পেতে ফিরে যেতে হবে ১৭ বছর আগে...
ডায়েরি পড়ার শেষে প্রীতু নির্বাক হয়ে বসে আছে। চিঠিটা পড়তে হবে। কিন্তু কোনো শক্তি পাচ্ছে না সে।
প্রীতু কাঁদতে পারছে না। এক অসহনীয় কষ্ট তাকে চেপে ধরেছে।
কি হয়েছিল সেই সতেরো বছর আগে?
গল্পের শুরু সেখান থেকেই...
(চলবে)
০৩ রা ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ ভোর ৬:০৫
Noyontara Natasha বলেছেন: আপনাকেও ধন্যবাদ
©somewhere in net ltd.
১|
০২ রা ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ বিকাল ৪:০৬
Tauheduzzaman বলেছেন: দারুন লিখেছেন,সাসপেন্স অপেক্ষা করছে।অপেক্ষায় রইলাম পরেরটুকু পড়ার জন্য।ধন্যবাদ।