নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

Noyontara Natasha

Noyontara Natasha › বিস্তারিত পোস্টঃ

এটা গল্প হলেও পারতো(৬ষ্ঠ পরিচ্ছেদ)

১০ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ সকাল ৭:১২

এটা গল্প হলেও পারতো
নয়নতারা
৬ষ্ঠ পরিচ্ছেদ


কোনোরকমে টলতে টলতে পড়ে গেল প্রীতু, সেই মূহুর্তে প্রীতুর মনে হচ্ছিল আর বুঝি হলো না! জীবন প্রদীপ নিভেই এলো মনে হয়! কোনো ভাবে কার্নিশটা এক হাত দিয়ে ধরে ফেলল! পড়ে যাওয়ার সময় বাম পায়ের হাঁটুতে লেগেছিল কার্নিশে। পায়ে যন্ত্রণা হচ্ছে।
এদিকে একহাতে শরীরের ভর রেখে দেওয়া মুশকিল! প্রানপণে অন্য হাতে হাতড়াতে হাতড়াতে ধরে ফেলল শাড়িটা!
ওভাবে থেকেই একটা স্বস্তির নিশ্বাস ফেলল সে। তারপর ধীরে ধীরে শাড়ি বেয়ে নামতে লাগল। নিচে নেমে খুব আস্তে আস্তে ব্যাগের বাঁধন খুলে শাড়িটাকে দলা পাকিয়ে ছুঁড়ে দিল ছাদের অন্য দিকে।
প্রীতুর ইচ্ছে করছে একটু বিশ্রাম নিতে, কিন্তু সময় নেই একদমই। ভারী লাগেজটা উঁচু করতে গিয়ে খুব কষ্ট হচ্ছে। বাম হাঁটুটা ছড়ে গিয়েছে মনে হচ্ছে!
তবুও যেতে হবে প্রীতুকে, যেতেই হবে। ধীরে ধীরে রাস্তায় উঠল, আর আস্তে আস্তে অন্ধকারে হারিয়ে গেল।
প্রীতু চোখের আড়াল হওয়া পর্যন্ত জানালা দিয়ে চেয়ে রইলেন প্রীতুর ছোট মামি মারিয়া! প্রীতুকে ছাদ থেকে নামতে তিনিই দেখেছিলেন।বাঁধা দেননি।
প্রীতু অদৃশ্য হয়ে গেলে জানালা বন্ধ করতে করতে বললেন,
"যা দূরে কোথাও, যেখানে থাকিস, আল্লাহ যেন তোকে ভালো রাখেন"
তারপর নির্লিপ্ত ভঙ্গীতে আবার গিয়ে স্বামীর পাশে শুয়ে পড়লেন।
ব্যাগটা নিয়ে একটা রিকশায় উঠে পড়ল প্রীতু। নিজের জীবনটাকে অনেক বেশি ছন্নছাড়া মনে হচ্ছে আজ!
রিকশায় যেতে যেতে ভোরের হালকা বাতাস লাগছে প্রীতু গায়ে, গরমের দিনে ভালই লাগছে৷ গত দুইমাস একটা আবদ্ধ দুঃস্বপ্নের মতো দিন কাটিয়েছে সে!
প্রীতুর মনে হচ্ছে সে যেন হঠাৎ করেই কেমন বড় হয়ে গেছে, প্রীতু মনে মনে ঠিক করল কোথায় যাবে।
ভয়ে জড়সড় হয়ে আছে সে। রিকশার ভাড়া মিটিয়ে আরেকটা অটো নিয়ে এগিয়ে চলল যশোর ট্রেন স্টেশনের দিকে।
স্টেশন মাস্টারের কাছে থেকে রাজশাহীর টিকিট কাটল। এবার সেদিকেই যাবে। ট্রেন আসতে চল্লিশ মিনিট বাকি। কি করবে ভেবে পেল না প্রীতু। হঠাৎ ক্ষুধাটা মাথাচাড়া দিয়ে উঠল।
একটু ভেবে পাশের দোকানের দিকে এগোল প্রীতু। এতক্ষণ অটোতে ছিল বুঝেনি কিন্তু এখন পায়ের ব্যথাটা টের পাচ্ছে ভালভাবে।
দোকান থেকে অনেক খাবার কিনে নিল, শুকনো খাবারের পাশাপাশি কিছু ফল আর পানি কিনে নিল।গতকাল দুপুর থেকে না খাওয়া।
পায়ের ব্যথাটা যেন বাড়ছে, স্টেশনে ফিরে আসার সময় ফার্মেসির দোকান চোখে পড়ায় দোকানদারকে বলে ঔষধ নিয়ে নিল, আর কি ভেবে কিছু এন্টাসিড আর প্যারাসিটামল ও নিয়ে নিল।
ট্রেন আসতে এখনো ২০ মিনিট বাকি। স্টেশনে বসে আছে প্রীতু। দৃষ্টি মেলে দিয়েছে দূরে একদল পথশিশুদের উপর। মূহুর্তের মাঝে নিজেকে অনেক ভাগ্যবতী মনে হয় প্রীতুর৷ আজ তারও ওখানে থাকার কথা! কিন্তু সে তো ভাল আছে!
অনেক ভাল। ট্রেন এসে ভাবনায় ছেদ পড়ল প্রীতুর। এই প্রথম ট্রেনে ওঠা, ব্যাগ নিয়ে পারছিল না।
কোথা থেকে এক কুলি দৌড়ে এসে তার ব্যাগ টা তুলে দিয়ে বলল,
"আফা দশটা ট্যাকা দ্যান"
সাহায্য পেয়ে খুশি হয়ে প্রীতু লোকটাকে বিশ টাকার একটা নোট এগিয়ে দিয়ে বলল,
"এটা রাখুন"
লোকটা কৃতজ্ঞতার দৃষ্টিতে তাকাল প্রীতুর দিকে এবং স্বাভাবিকভাবেই অনেক বেশি খুশি হলো। সে ট্রেনে উঠে ব্যাগটা টেনে নিয়ে একটা খালি জায়গা দেখিয়ে ইশারায় বসতে বলল প্রীতুকে।
"অনেক ধন্যবাদ আপনাকে"
লোকটা অবাক হয়ে প্রীতুর দিকে তাকাল। গত দশ বছরে এত ভাল করে কথা কেউ বলেছে বলে তার মনে পড়ে না, প্রীতুর হাসিমাখা মুখটা নিজের মানসপটে এঁকে নিয়ে মনে মনে দোয়া করতে করতে নেমে গেল লোকটা।
নিজের ব্যাগগুলো গুছিয়ে বসে পড়ল প্রীতু। ট্রেন ছেড়ে দিল। নিজেকে অনেক বড় বড় লাগছে, ভাবতেই পারছে না সে কিভাবে এত কিছু করল!
নিজের অতীত নিয়ে জানার পর তার মনে হয়েছিল সৃষ্টিকর্তা তার সাথে সুবিচার করেননি।
প্রচন্ড রাগ হতো, আজ স্টেশনে দরিদ্র অস্থিচর্মসার শিশু কিশোর দের দেখে সমস্ত অভিযোগ শেষ হয়ে গেছে তার। অনেক ভাল আছে সে।
রাজশাহী যাওয়ার একমাত্র কারণ সেখানে আসাদ শেখ বা প্রীতুর মামাদের কারোর যাতায়াত নেই।
আঁকাবাঁকা পথে চলছে ট্রেন। প্রীতু ব্যাগ থেকে খাবার বের করল, বেশ কিছুটা খাওয়ার পর পানি খেয়ে নিল।
নিজেকে অনেকটাই শান্ত লাগছে। মনের ভিতরে তোলপাড় করাটাও বন্ধ হয়েছে। একটা কথাই মনে হচ্ছে এতটা পথ যখন এসেছে বাকি পথটাও যেতে পারবে।
.
"আল্লারে...প্রীতু কোথায়!" জোরে বলে উঠলেন মারিয়া। ততক্ষণে প্রীতু রাজশাহীর ট্রেনে।
চিৎকার শুনে ছুটে এলেন বড় মামি।
আস্তে আস্তে পুরো বাড়ি খুঁজে পাওয়া গেলনা প্রীতুকে। ছাদে গিয়ে জানা গেল প্রীতু পালিয়েছে।
একেক জন একেক রকম মন্তব্য করছে। তাদের মন্তব্য গুলো একটু শুনে আসা যাক,
প্রীতুর বড় মামি নিজের অতীত ইতিহাস ভুলে বলা শুরু করলেন, "আগেই বুঝেছিলাম, কোনো ছেলের সাথে ইটিসপিটিস তো আছেই, নইলে কোন সাহসে পালাবে!"
এক গাল হেসে মেজ মামি বললেন, "তা যা বলেছ ভাবি"
তাদের বিগত সংসারজীবন তন্নতন্ন করে খুঁজেও এই একটি বিষয় ছাড়া কোনো বিষয়ে মতামতের মিল পাওয়া যাবে না।
"তাই বুঝি?" বলে মনে মনে মৃদু হাসতে লাগলেন প্রীতুর ছোট মামি।
প্রীতু চলে যাওয়াতে কেউই বিশেষ অখুশি বলে মনে হলো না, "আপদ গেছে"
খোঁজাখুঁজি করতে গিয়ে প্রীতুর বড় মামা শাহিন তখনও প্রীতুর ঘরে ছিলেন। বের হওয়ার সময় একটা ছোট কাগজ চোখে পড়ল তার।
চিঠি ভেবে তুলে নিলেন তিনি।
বোন রাহেলার হাতের লেখা চিনতে একটুও দেরি হলো না তার। ঠিকানাটা পড়তেই চমকে উঠলেন তিনি। তারপর কাগজটা উল্টিয়ে দেখেন,
রাহেলার লেখা, "এই তো হতভাগ্য পাগলী মায়ের ঠিকানা"
প্রচন্ড ঘামতে লাগলেন তিনি।
কাঁপতে লাগলেন কাগজটা হাতে নিয়ে।
স্মৃতিপটে ভেসে উঠলো অন্যান্য ক্ষমার অযোগ্য কিছু অপরাধের মধ্যে একটি! সতের বছর আগে, তিনি ছিলেন মেধাবী কিন্তু বাউন্ডুলে প্রকৃতির। যার জন্য লেখাপড়া করতে বাইরে পাঠিয়ে দিয়েছিলেন বাবা মা।
কিন্তু বাজে আর ছন্নছাড়া স্বভাবের জন্য কোথাও স্থির থাকতে পারতেন না।
পলিকে তিনিই সেদিন!
পালিয়েছিলেন তিনি!
"প্রীতু আমার মেয়ে! আমারই ঔরসজাত সন্তান! আমিই ওর জন্মদাতা" নিজের মনে বিড়বিড় করলেন তিনি। নিজেকে সামলাতে পারলেন না।
তারপর অজ্ঞান হয়ে গেলেন। মহান আল্লাহ কারোর উপর অবিচার করেন না। মানুষ তার ভুলের জন্য ক্ষমা পেলেও অপরাধের জন্য ক্ষমা পাবে না। মজলুমের উপর জুলুম করার অপরাধ!
হাসপাতালে নেওয়া হলো শাহিনকে। ছোটখাট হার্ট এটাক, সে যাত্রায় বেঁচে গেলেন তিনি। ডক্টর নিষেধ করলেন স্ট্রেস না নিতে।
কিন্তু যে বিষের যন্ত্রণা শাহিন সহ্য করছে তা বাইরের লোক জানবে কি করে!
হয়তো পলি ছাড়া কেউই তাকে চিনবে না, হয়তো পলিও চিনবে না। অগোচরেই থেকে যাবে প্রীতুর বাবা!
নাহ বাবা বলা যায় না!
সে এক জঘন্য পশু! যার গায়ের মাংস কেটে রাস্তার কুকুরকে খাওয়ালেও এতগুলো নারীর ইজ্জতের সিকিভাগের সহস্রভাগের এক ভাগ দামও আসবে না।
একটা ধর্ষককে বাবার আসনে বসালে পৃথিবীর ভালো বাবাগুলো অপমানিত হবে।
বাবা তো সেই যার আঙুল ধরে বড় হতে হয়। বাবাকে বাবা বলে ডাকতে হয়, বাবা তো ভরসাস্থল! যে বাবা থেকেও নেই, সে আর যাই হোক বাবা না। যে বাবার পরিচয় কখনো প্রীতু জানবে না, সে তো প্রীতুর বাবা নয়। জন্ম দিয়ে জন্মদাতা হওয়া যায় কিন্তু শুধুমাত্র জন্ম দিয়েই যদি বাবা হওয়া যেত তাহলে মানুষ আর কুকুরের মাঝে কোনো পার্থক্য থাকতো না!

(চলবে)

মন্তব্য ২ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ১০ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ সকাল ৭:৩০

রাজীব নুর বলেছেন: গল্পে রহস্য আচে। সাসপেন্স আচে।

২| ১৩ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ সকাল ৮:৪২

Noyontara Natasha বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ আপনাকে

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.