নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

Noyontara Natasha

Noyontara Natasha › বিস্তারিত পোস্টঃ

এটা গল্প হলেও পারতো(৭ম পরিচ্ছেদ)

১৫ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ সন্ধ্যা ৬:৫৯

এটা গল্প হলেও পারতো
নয়নতারা
৭ম পরিচ্ছেদ
.
রাজশাহী পৌঁছে প্রীতুর খুব অসহায় মনে হচ্ছে যেটা ট্রেনে থাকতে বুঝতে পারেনি।
বিকেল গড়িয়ে গেছে। কোথায় যাবে কিছুই জানেনা। শহরের দিকে থাকার একটুও ইচ্ছে নেই প্রীতুর। আসাদ শেখ আর মামাবাড়ি থেকে যদি খোঁজ করে তবে ভিতরের দিকে যাবে না বলে প্রীতুর ধারণা। সে নিরাপত্তার চায়! এভাবে ভেসে বেড়াতে শরীর মন কোনোটাই পারছেনা।
প্রীতু মফস্বলের দিকে যাওয়ার চেষ্টা করছে। ট্রেনে থাকতেই নেটে কয়েকটি নাম পড়ে নিয়েছে নইলে কেউ সন্দেহ করতে পারে।
লাগেজ, আলাদা করে খাবারের ব্যাগ বয়ে নিতে বেশ কষ্ট হচ্ছে প্রীতুর।
এক অটোতে উঠে পড়ল সে। প্রীতুর গুগল ম্যাপ ধারণা অনুযায়ী জায়গাটা একটু দূরে, তবে খুব বেশি নয়।
অবাক হয়ে প্রীতু খেয়াল করল অটো ড্রাইভার আর কোনো লোক নিল না।তাকে নিয়েই চলতে শুরু করল।
প্রায় দশ মিনিট পর, ড্রাইভারটা এক বাড়ির সামনে গাড়ি থামাল।
জায়গাটা খুব একটা নির্জন নয়৷ মোটামুটি লোকালয়।
ঢোক গিলল প্রীতু,
"আ..আপনি থামালেন কেন? এখনো তো প্রায় দশ মিনিটের পথ!"
"আরে আপু ভয় পাবেন না, আমার বন্ধুর বাড়ি, আপনি যে গাড়িতে আছেন সেটা ওর গাড়ি, আমার গাড়ি ওর বাড়িতে। আপনি ভিতরে চলুন, আমি গাড়ি পালটিয়ে নিয়ে আসি"
মুচকি ব্যাখ্যা করল অটোর ড্রাইভার।
রাগ হয়ে গেল প্রীতুর,
"আমি কেন ভিতরে যাব! আজব!"
"আরে আপু রাস্তায় কেন দাঁড়াবেন বলুন!" প্রচন্ড কোমল সুরে বলল লোকটা।
প্রীতুর ভাল মনে হলো লোকটাকে, ধীরে ধীরে লোকটার সাথে ভিতরে গেল সে।
প্রীতুকে বেশ কিছুক্ষণ বসিয়ে রাখল লোকটা।
দশ মিনিট পর একেবারে অধৈর্য হয়ে গেল ও। কি যাবেন নাকি?
"আসছি আসছি আপু" বাড়ির ভিতর থেকে উত্তর দিলো লোকটা।
দু'মিনিট পর উঠে দাঁড়ালো প্রীতু,
"আপনি থাকুন আমি যাচ্ছি"
বলে বের হয়ে এলো। প্রায় রাস্তার ধারে আসতেই লোকটা এসে প্রীতুর হাত চেপে ধরল!
"আরে আপু কই যান!"
"আপনি আমার হাত কেন ধরলেন? হাত ছাড়ুন" চেঁচিয়ে উঠলো প্রীতু!
কিন্তু তাতে হাত ছেড়ে দেওয়ার কোনো লক্ষণ দেখালো না লোকটি৷
বরং আরো জোরে চেপে ধরলো। লোকটির হাতে থাকা ভোঁতা মতো আংটিতে কেটে গেল প্রীতুর হাত। ব্যথায় কঁকিয়ে উঠলো সে। আর কিছু না ভেবে জোরে চিৎকার দিল।
সাথে সাথে লোকজন ছুটে আসল। থতমত খেয়ে গেল ড্রাইভারটা, প্রীতু চিৎকার দেবে এটা মনে হয় সে বুঝতে পারেনি।
সবাই জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।
"দেখুন না আমি আমার খালা বাড়িতে যাচ্ছিলাম এই লোকটার গাড়িতে কিন্তু আমাকে এখন যেতে দিচ্ছে না!"
লোকজন সরু চোখে তাকাল ড্রাইভারটার দিকে।
কিন্তু এগিয়ে কথা বলছে না কেউ। যেন মজা দেখছে সবাই। তাদের মাঝ থেকে একজন সৌম্যদর্শন লোক এগিয়ে এলেন। চেহারা দেখে বয়সটা ঠিক আন্দাজ করা যায় না, প্রীতুর মনে হলো পঁয়ত্রিশ থেকে চল্লিশ এর মাঝে।
"তুমি কোথায় যাবে?"
প্রীতু গন্তব্য শুনে বললেন,
"আমার বাড়ি ও তো ওখানে, আমার সাথে চলো, আমি তোমাকে পৌঁছে দিবো"
অন্য সবাই ও বলে উঠল, "হ্যাঁ স্যার নিয়ে যান"
প্রীতু বুঝল মানুষটা কোনো প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক। ভিতরে ভিতরে একটু স্বস্তি বোধ করল সে। বিশেষত কার বাড়িতে যাবে সে প্রশ্ন করেনি। তাহলে কোনো উত্তর দিতে পারত না। আরো বিপদ বাড়তো।
স্যার আর একটা অটো ঠিক করে প্রীতুকে নিয়ে উঠলেন।
প্রীতু যা ধারণা করেছিল তাই হলো স্যার প্রশ্ন করলেন, "কার বাড়িতে যাবে তুমি?"
প্রচন্ড ভয় পেলো প্রীতু। তড়িঘড়ি করে উত্তর দিলো,
"আমাকে অটো স্ট্যান্ডে নামিয়ে দিলেই হবে, আমি একাই যেতে পারব"
লোকটাকে এখনো বিশ্বাস করে উঠতে পারেনি সে। তবে অবচেতন মন বলছে "খারাপ না"
ফায়াজ আহমেদ একটু অবাকই হয়ে গেলেন মেয়েটার উত্তরে। হঠাৎ তার মনে হলো মেয়েটা হয়তো ভয় পাচ্ছে। তিনি আশ্বাসের সুরে বললেন,
"ভয় পেয়ো না, তোমার কোনো ক্ষতি হবে না, কি নাম তোমার?"
এই কন্ঠে কি ছিল জানেনা প্রীতু। কিন্তু তার চোখ দুটো আর্দ্র হয়ে উঠল। চোখের পানি আড়াল করতে মুখ আরো নিচু করল। সেভাবেই বললো,
"রাইয়্যানা প্রীতু"
ফায়াজ ভাবলেন মেয়েটা ভয় পাচ্ছে আরো। একটু সহজ হওয়ার জন্য বললেন,
"বাহ! বেশ সুন্দর নাম, প্রীইইইতুউউউ"
প্রীতু মাথা নাড়ল। হঠাৎ করে ফায়াজ প্রশ্ন করলেন,
"আচ্ছা প্রীতু বলো তো ডিম আগে নাকি মুরগী আগে?"
অদ্ভুত প্রশ্ন শুনে প্রীতু ফায়াজের মুখের দিকে তাকিয়ে হেসে ফেলল। অনিন্দ্য সুন্দর মুখশ্রী দেখে অবাক হয়ে গেলেন ফায়াজ। সুন্দর করে বললেন,
"তোমাকে হাসি ছাড়া একেবারেই মানায় না প্রীতু মামনি! এখন বলো কোথায় যাবে?"
এত সুন্দর সম্বোধন অনেকদিন শুনেনি প্রীতু। এবারে বলল,
"আমি জানিনা"
এক মূহুর্তে ফায়াজের মুখের হাসি মিলিয়ে গেল, "মানে? তুমি বাড়ি থেকে পালিয়েছ নাকি!"
মাথা নিচু করল প্রীতু। কিন্তু প্রীতুর নিচু করা মাথা দেখে ভুল অর্থ তৈরি করলেন ফায়াজ,
"কি জন্য পালিয়েছ?"
"আসলে..." সবটা বলবে কিনা এখনো ঠিক করতে পারছেনা প্রীতু।
ফায়াজ ভাবলেন তিনি আচ্ছা ঝামেলায় পড়ে গেলেন। রাগত স্বরে বললেন,
"নিশ্চয় প্রেমিকের জন্য পালিয়েছ! তোমাদের উঠতি বয়সী ছেলেমেয়েরা জীবন টাকে স্বর্গ ভাবে, দুইচোখে রঙিন চশমা পরে ঘোরে, পুরো জগতটাকেই রঙিন মনে হয়।"
চমকে উঠল প্রীতু! কৈফিয়তের ভঙ্গিতে হাত নেড়ে বলল,
"না না না তেমন কিছুনা, আমি ভালভাবে বেঁচে থাকার জন্য পালিয়েছি, পড়ালেখা করব বলে পালিয়েছি"
এবার ফায়াজের বিস্ময়ের পালা,
"মানে?"
আর লুকাতে পারছে না দেখে প্রীতু বলল,
"মামার বাড়ি থেকে, আমি এসএসসিতে বিজ্ঞান বিভাগ থেকে গোল্ডেন এ+ পেয়েছি কিন্তু তারা আমাকে পড়াশোনা করতে দিবে না। আমি পড়তে চাই...." কন্ঠরোধ হয়ে এলো প্রীতুর।
ফায়াজ এখনো অবাক হয়ে চেয়ে আছেন, তিনি স্থানীয় কলেজের গনিতের অধ্যাপক, অনেকরকম মানুষ দেখেছেন, কিন্তু প্রীতুর মতো মেয়ে! প্রীতুর জন্য তার মায়া হলো। উৎসুক হয়ে প্রশ্ন করলেন,
"কিন্তু তোমার বাবা মা?"
বাবা মায়ের কথা উঠাতে বিস্ফোরিত চোখে তাকায় প্রীতু। বোঝা গেলনা সেই দৃষ্টিতে দুঃখ ছিল নাকি ঘৃণা।
তারপর শান্ত কন্ঠে বলল,
"স্যার আমি এখন অসহায় হয়ে পড়েছি আমাকে একটা বাসা খুঁজে দেবেন আমি ভাড়া নিয়ে থাকবো! নইলে আজ রাতে আমাকে রাস্তায় কাটাতে হবে!"
ততক্ষণে অটো বাজারে এসে থেমেছে। ভাড়া মিটিয়ে প্রীতুর দিকে তাকালেন। তারপর একটু ভেবে বললেন,
"আমার বাসায় রুম খালি আছে কিন্তু কিছু সমস্যাও আছে, চলো দেখি তোমার আন্টি কি বলে!"
প্রীতুর ষষ্ঠ ইন্দ্রিয় বাঁধা দিল না। প্রীতু অনুসরণ করল সদ্যপরিচিত মানুষটাকে...
.
(চলবে)

মন্তব্য ১ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (১) মন্তব্য লিখুন

১| ১৫ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ রাত ৮:০৮

রাজীব নুর বলেছেন: আচ্ছা, আমি কি আগের পর্ব গুলো পরেছি?

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.