![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
এটা গল্প হলেও পারতো
নয়নতারা
৮ম পরিচ্ছেদ
.
মোটামুটি দৃষ্টিনন্দন একটা বাসার সামনে দাঁড়িয়ে আছে প্রীতু। সামনে সুন্দর একটা বাগান! দিনের নিভে যাওয়া আলোতে বেশ সুন্দর লাগছে জায়গাটা। নাহ লোকটার রুচিবোধ আছে! মাগরিবের আযান দিয়েছে। প্রীতু খুব নম্রভাবে ফায়াজকে বলল,
"স্যার আমি নামায পড়তে পারিনি সারাদিন, কিছু যদি মনে না করেন একটু যদি দয়া করে ব্যবস্থা করে দিতেন!"
প্রীতুর সৌজন্যেতায় মুগ্ধ হয়ে গেলেন ফায়াজ,
"চলো ভিতরে চলো"
যেতে যেতে বললেন, "আমারো এক মেয়ে আছে, অবশ্য তোমার থেকে বয়সে ছোটই হবে, সেভেনে পড়ে "
প্রীতুকে ওয়াশরুম দেখিয়ে দিয়ে জায়নামাজ দিয়ে ফায়াজ সাহেব স্ত্রী তানিয়াকে ডাকতে ভিতরে গেলেন।
তানিয়া স্বামীর উদারতা দেখে খুব যে খুশি হলেন তা বললে সত্যের কিছুটা অপলাপ করা হবে, তবে মেয়েটার দুরবস্থা শুনে বললেন,
"থাকতে যদি হয় আমাদের কোনার গেস্টরুমটা নিয়ে থাকুক, এটাচড বাথ আছে, বারান্দা আছে। আর যাতায়াতেও তো আমাদের এদিকে আসা লাগছে না।"
বলে নেওয়া প্রয়োজন ফায়াজ আহমেদের ফ্লোরেই, তাদের পাশে আরেকটি রুম আছে যেটার দরজা বাইরে থেকে, ফায়াজের বাসার সাথে কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই। কিছু এক ফ্লোরে পাশাপাশি দুটো ফ্ল্যাটের মতোই। তবে সেটা ফায়াজের গেস্টরুম হিসেবে ব্যবহার হতো।
ফায়াজের কাছে যুক্তিটা অপছন্দ হলোনা। তিনি যাওয়ার জন্য চলে যেতে গেলে তানিয়া আবার বললেন, "ভাড়াটা?"
অবাক হয়ে প্রশ্ন করেন,
''ভাড়া মানে! ওই রুম কি আমরা ভাড়া দেই? অসহায় মেয়ে!"
"আচ্ছা একহাজার টাকা দিলেই হবে"
সমর্থন করলেন না ফায়াজ সাহেব।
অবশেষে পাঁচশ টাকায় রাজি হলেন তিনি। ফায়াজ জানেন অন্যকাউকে ভাড়া দিলে আরো দুই তিন হাজার টাকা পেতে পারতেন। কিন্তু সবকিছুর বিচার টাকা দিয়ে হয় না।
"রান্না কিন্তু সে নিজেই করবে!"
স্ত্রীর মুখের দিকে তাকিয়ে ফায়াজ বললেন,
"ঠিক আছে, তুমি একটু দেখাশোনা করো"
খুশি হলেন তানিয়া। "অবশ্যই" বলে সমর্থন জানালেন তিনি।
"চলো মেয়েটাকে দেখে আসি"
"জাহিন, ও জাহিন..."
বাবার ডাকে ছুটে এলো ফায়াজের মেয়ে জাহিন।
"জারিফ কোথায়?"
"ফেরেনি" স্বামীর প্রশ্নে ছোট্ট করে উত্তর দিলেন।
জারিফ ফায়াজ আর তানিয়ার ছেলে। অনার্স সেকেন্ড ইয়ারে পড়ছে ইংরেজি নিয়ে।
প্রীতুর ততক্ষণে নামাজ শেষ। বসে আছে সে। ফায়াজ আর তানিয়া ঘরে ঢুকতেই উঠে দাঁড়াল প্রীতু।
তানিয়া অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলেন প্রীতুর দিকে, এত সুন্দর মুখশ্রী তিনি খুব কম দেখেছেন। এক অনিন্দ্য সুন্দর মুখশ্রী!
প্রীতুর সালামে সম্বিত ফিরল তানিয়ার। ফায়াজের ফোনে কল আসায় তিনি উঠে গেলেন। কথা শুরু করলেন তানিয়া,
"তুমি আসছো কোথা থেকে?"
"যশোর" উত্তর দিল প্রীতু।
"আচ্ছা, শুনো তুমি যেহেতু একা থাকবে আমাদের পাশেই একটা রুম আছে, পুরোপুরি সেপারেট, তুমি সেখানে থাকো সমস্যা হবে?"
একটু আশ্বস্ত হলো প্রীতু।
"আন্টি ভাড়া?"
"তোমার আঙ্কেলের কাছে শুনলাম তুমি খুব বিপদে, পালিয়ে এসেছ, তোমার কাছে ভাড়া চাওয়া যায় না আবার একেবারে না দিলে আমরা পারি কি করে!" ইনিয়েবিনিয়ে বলতে লাগলেন তানিয়া।
এবার ভয় পেল প্রীতু, ভয়ে ভয়ে প্রশ্ন করল,
"জ্বি আন্টি.... কত?"
"দেখো হাজারের কমে দেওয়ায় যায় না, তুমি বিপদে বলে এক হাজার টাকার কথা বলেছিলাম, তোমার আঙ্কেল রাজি হলেন না, পাঁচশো টাকা দিয়ো, পরে না হয় দেখা যাবে"
মনে মনে আরেকবার ধন্যবাদ দিল স্যারকে। অসংখ্য শুকরিয়া জানালো আল্লাহর কাছে।
"জ্বি আন্টি"
তানিয়া আবার বললেন,
"বোঝোই তো তোমার আঙ্কেল ইনকাম করে দিয়েই শেষ, কত খরচ!"
ধৈর্য্য ধরে প্রীতু শুনতে লাগল ফায়াজের স্ত্রী তানিয়ার কথা।
নীরব শ্রোতা পেয়ে তানিয়াও ডালি উজাড় করে বসলেন।
"আজ রাতে তুমি আমার এখানেই খেও আর কাল রান্নার জিনিসপত্র আমি দুইএকটা দিবো, আর তুমি খুব দরকারী গুলো কিনে নিও, টাকা আছে তো?"
"আছে আন্টি" ভারী নিঃশ্বাস ফেলে বলল প্রীতু।
প্রীতু নিজের রুমে গিয়ে দেখল একটা খাট, একটা ড্রেসিং টেবিল আর একটি টি-টেবিল আছে। কিছুটা স্বস্তি পেল ফার্নিচার গুলো আছে। তানিয়া একটা বিছানার চাদর বিছিয়ে দিয়ে গেলেন, মোটামুটি সব ঠিকঠাক।
রুমে ঢুকে আরেকবার ফ্রেশ হলো ও। ঘুম যেন আর বাঁধা মানল না!
দরজা ধাক্কা দেওয়ার শব্দে চোখ মেলল প্রীতু। মোবাইল হাতে নিয়ে দেখে রাত এগারোটা বাজে।
দ্রুত দরজা খুলতেই দেখে আন্টি আঙ্কেল দাঁড়িয়ে,
"তুমি মনে হয় খুব ক্লান্ত ছিলে, তোমার আন্টি খাওয়ার সময় ডেকে উঠাতে পারেনি" ফায়াজ স্নেহার্দ্র কন্ঠে বললেন।
"আমি খুব লজ্জিত, আমি আসলে...."
"আরে না না ঠিক আছে, খাবার গুলো নাও" বলে খাবারের প্লেট এগিয়ে দিলেন।
প্রীতু কিছুটা সংকুচিত হয়ে সেগুলো নিয়ে রুমে আসল। ফায়াজ আর তানিয়া চলে গেলেন। প্রীতু নামাজ পড়তে গেল। অসংখ্য শুকরিয়া জানালো আল্লাহর কাছে, অনেক সাহায্য পাচ্ছে সে।
কোনোরকমে খেয়ে আবার ঘুমালো প্রীতু।
.
"তোমার কথা শুনে প্রীতু পালিয়েছে!" বলেই আসাদ শেখ চড় বসিয়ে দিলেন রাহেলার গালে। রাহেলা হতভম্বের মত তাকিয়ে রইলেন কিছু বলার মতো শক্তি পেলেন না। চুপচাপ বসে রইলেন।
আজ আর সেই ভালবাসা নেই আসাদ শেখের। কোথায় সেই ভালবাসার ছোঁয়া! আজ এক অপ্রয়োজনীয় বস্তু তিনি! রাহেলার শাশুড়ি বললেন,
"এই হতভাগীর জন্যই সব হলো"
লজ্জায় অপমানে মাটির সাথে মিশে যেতে ইচ্ছে করল রাহেলার। কিন্তু কিইবা করার আছে তার। কি করতে পারেন তিনি!
জানেন চিরদিন তাকে সহ্য করে যেতেই হবে। ছেলেটাও হয়েছে এদের মত, তাকে দিয়ে বিশেষ কিছু আশা করেন না তিনি।
চোখ মুছে ঘরে চলে গেলেন তিনি। জীবন মানুষকে নিয়ে কত খেলা করে! কখনো দুঃখের ভেলায় ভাসিয়ে নিয়ে চলে, কখনো হাসির জোয়ার।
.
বেশ কিছুদিন কেটে গেছে। প্রীতু মোটামুটি একটা হিসেবের মাঝে চলে এসেছে, কাছে থাকা টাকা খরচ করলে নিশ্চিত শেষ হবে। তাই আঙ্কেলকে বলে দুটো টিউশনি জোগাড় করে নিয়েছে। তিন হাজার টাকা পাবে সেখান থেকে। আর বাড়ি ভাড়া দিয়ে বাকিটাকে টেনেটুনে চলবে, আর না হলে টাকা তো আছেই।
টাকাটা তার দরকার হতে পারে অন্য কাজে। সব মিলিয়ে উনত্রিশ হাজারের বেশি কিছু টাকা আছে। এভাবে চলতে পারবে। দরকার হলে ফার্স্ট ইয়ারে আরেকটা টিউশনি করবে। এভাবে তাল মিলিয়ে চলতে পারবে বলে মনে হয় প্রীতুর।
এখন একপ্রকার পুরোদস্তুর গৃহিণী মনে নিজেকে। রান্না টিউশনি এসবেই দিন কাটে। ঈদের আগে কলেজ নেই। ভর্তির পেপারস তার কাছেই আছে। আঙ্কেলের কলেজে আঙ্কেল ঠিক করে নেবেন বলে কিছুটা স্বস্তি পেল সে।
প্রীতুর কষ্টকর জীবনে একটু ভাল আছে সে। কিন্তু দিনশেষে যখন রাত আসে! পাগলের মতো কাঁদতে থাকে ও। কখনো সারারাত জেগে কাটিয়ে দেয়, ঘুম আসে না।
একাকিত্ব বোধ করে অনেক বেশি। এখানে আসার পর মায়ের সাথে কথা হয়নি, ঈদ ও বেশি বাকি নেই, তার জীবনের ছন্নছাড়া ঈদ!
সন্ধ্যায় বসে এসবই ভাবছিল প্রীতু। জাহিন এলো ঘরে। ইদানীং জাহিনের সাথে ভাল ভাব জমে গেছে।
"আপু আম্মু ডাকে"
"কেন আপু?" প্রশ্ন করে প্রীতু
"জানিনা"
প্রীতু জাহিনদের ঘরে অপ্রয়োজনে যায় না। কি জানি আন্টি বিরক্ত হন কিনা!
তানিয়া ইনিয়েবিনিয়ে যা বললেন তার অর্থ এই যে, "জাহিনকে পড়াতে হবে"
মানুষটা সোজাসাপ্টা কথা বলতে পারে বলে প্রীতুর ধারণা হলো। যাই হোক জাহিনকে পড়ানোর ব্যাপারে না বলার উপায় নেই। রাজি হল প্রীতু। এদের উপকারের মূল্য সে কিছুতেই দিতে পারবে না।
দুইদিন পরে চুল ছেড়ে দিয়ে বারান্দায় বসে আছে প্রীতু, কালো ঘন চুল কোমর ছাড়িয়েছে। সাধারণত বাইরে মাথার কাপড় কখনোই ফেলেনা প্রীতু। হঠাৎ বিস্মিত কন্ঠের "ওয়াও!" শুনে প্রীতু চমকে পিছনে জাহিনদের বারান্দার দিকে তাকাল, আর পরমূহুর্তেই উঠে ঘরে চলে গেল!প্রথমে অবাক কাটাতে না পারলেও ধীরে ধীরে প্রীতুর চোখ মুখে স্পষ্ট ভয়ার্ত লাজুক অবয়ব ফুটে উঠতে লাগল। তখন হয়তো প্রীতু দেখতে একটু বেশিই সুন্দর লাগছিল, যে সুন্দরে চোখ আটকে গেল আরেক জোড়া চোখের!
(চলবে)
©somewhere in net ltd.
১|
১৫ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ রাত ৮:০৭
রাজীব নুর বলেছেন: প্রীতু, ফায়াজ, তানিয়া, জাহিন, আন্টি-আঙ্কেল, জারিফ, স্যার
অনেক গুলো চরিত্র।