![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
এটা গল্প হলেও পারতো
নয়নতারা
৯ম পরিচ্ছেদ
.
প্রীতুর সাথে জারিফের পরিচয় হয়নি। জারিফ এসব দিকে পাত্তা দেয়না। সুন্দর সুদর্শন বলে একটা চাপা অহংকারের সাথে একটা কেয়ারলেস ভাব জারিফের! তবে জারিফ চোখে পড়ার মতো ছেলে তা মানতেই হবে!
প্রীতুর মনে জারিফকে দেখে কি চলছে তা বোঝা না গেলেও প্রীতুকে দেখে "ইহাকে পাইলাম" না মনে হলেও "ইহাকে দেখিলাম" কথাটি গেঁথে গেল জারিফের মনে।
"জাহিন পাশের রুমে ওই মেয়েটা এসেছে?"
"ওই মানে?" চোখ বড় বড় করে প্রশ্ন করে জাহিন।
"আরে না মানে সকালে একটা মেয়েটাকে বের হতে দেখলাম তাই আর কি" তড়িঘড়ি করে কৈফিয়ত দিতে চাইল জারিফ।
"হুম"
"কবে এসেছে রে?" আবার প্রশ্ন করে জারিফ।
জাহিন আবার চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে রইল। তারপর বিজ্ঞের মতো প্রশ্ন করলো,
"কেন বলো দেখি?"
"আরে এমনিই"
"ভাইয়া চকলেট খেতে খুব ভাল লাগে" জাহিনের কথা শুনে জারিফ কান টেনে ধরল, "এই বয়সে ব্ল্যাকমেইল করা শিখেছিস! যা বলা লাগবে না"
"প্লিজ প্লিজ দাওনা ভাইয়া, আমি তোমার একটাই বোন মাত্র!" কাচুমাচু করে বলল জাহিন।
পকেট থেকে একশ টাকা বের করে দিয়ে জারিফ বলল, "নে, চলবে?"
"দৌড়াবে!" হেসে বলল জাহিন। তারপর বলল,
"আপুটা খুব ভাল, নাম প্রীতু, রাইয়্যানা প্রীতু। লেখাপড়াতে বেস্ট, এসএসসিতে গোল্ডেন এ প্লাস কিন্তু আপুর মামারা পড়াবে না। তাই বাড়ি থেকে পালিয়েছিল, পথে বিপদে পড়েছিল তাই বাবা তাকে নিয়ে এসেছিল বাড়িতে, এখন আমার পড়া আছে, আমাকে ছাড়ো আমি যাব, পড়াতে আসবে প্রীতু আপু"
গড়গড় করে একটানা বলে গেল জাহিন। জানে না বললে একটার পর একটা প্রশ্ন করতে থাকবে।
জাহিনের কথা গুলো বোঝার জন্য বেশ সময় লাগল জারিফের।
"ভাইয়া.... হাত ছাড়ো!" হাত টানতে লাগল জাহিন।
তড়িঘড়ি করে হাত ছেড়ে দিয়ে বলল,
"কে আসবে পড়াতে?" পড়ানোর কথা জারিফের জানার কথা নয় কারণ সেই সময়টা সে বাইরে থাকে।
"প্রীইইইইইইতুউউউ আপুউউউ" উত্তর দিল জাহিন।
"এক আলিফ করে টেনে কথা বলছিস কেন!"
"কানের ডাক্তার দেখাও" বলেই দৌড় দেয় জাহিন।
জারিফ মুচকি হাসলো বোনের কথা শুনে। সেদিন আর জারিফকে বাইরে যেতে দেখা গেল না। প্রীতু হয়ে রইল নজরবন্দী।
এরই মাঝে পেরিয়ে গেছে বেশ কিছুটা সময়। ঈদটা এখানেই কাটিয়েছে সে। ঈদের দিনের বেশিরভাগ সময়ই ঘুমিয়ে কাটিয়েছে, আর তাই প্রীতুর ঈদ কেমন কাটলো তা এখানে বলা বাহুল্য।
আজ প্রীতুর কলেজের প্রথম দিন ছিল। কিন্তু আজ অঝোরে কাঁদছে প্রীতু! প্রচন্ড কাঁদছে। সিদ্ধান্ত নিতে পারছে না সে বেঁচে থাকবে কিনা! এমন সময় দরজার ধাক্কা শুনে চোখ মুছে দরজা খুললো প্রীতু।
ফায়াজ ভিতরে এলেন না, বাইরে দাঁড়িয়ে বললেন,
"জানতাম কাঁদছ, কাঁদে না প্রীতু, কান্না তোমাকে মানায় না, যাও ঘুমাও, তোমার মাকে তো কিছু দিতেই হবে"
উত্তরের অপেক্ষা না করে আবার চলে গেলেন। প্রীতু চুপচাপ এসে মেঝেতে বসে পড়ল। বেশ কিছুক্ষণ পর শান্ত হলেও বারবার সারাদিনের কথা গুলো মনে পড়তে লাগল......
"একটু শুনো" সিঁড়ি দিয়ে নামতে গিয়ে পিছনে ফিরে তাকালো প্রীতু।
"জ্বি বলুন" জারিফের কথার উত্তরে বলল প্রীতু।
"তুমি প্রীতু, রাইট?" খুব স্মার্টলি প্রশ্ন করল জারিফ। কিন্তু তারপর কি বলবে খুঁজে পেল না।
প্রীতুর হার্টবিট বেড়ে গেছে। ভয়ে ভয়েই উত্তর দিলো, "জ্বি আমি প্রীতু!"
প্রীতু খেয়াল করেছে যে জারিফের চাহনি অন্যকিছু বলে। যদিও প্রীতু অপরিচিত ছেলেদের সাথে আই কন্টাক্ট করে কথা বলতে পারেনা। তবে জারিফকে দূর থেকে যতবার দেখেছে ওর মনে সন্দেহ হয়েছে। মেয়েদের ষষ্ঠ ইন্দ্রিয় খুব তীক্ষ্ণ হয় এই বিষয় গুলোতে। তবুও জোর করে মন থেকে সন্দেহ ঝেড়ে ফেলতে চাইল প্রীতু।
"তোমার সাথে তো আমার পরিচয়-ই হলো না!"
"আসলে কিছু মনে করবেন না আমার কলেজের দেরি হয়ে যাচ্ছে! আজ কলেজের প্রথম দিন" হাতঘড়ির দিকে তাকিয়ে বলল প্রীতু। জারিফ একটু দমে গেল ভিতরে ভিতরে। সে একটু কথা বলতে চেয়েছিল। প্রীতুকে যতই দেখে ততই ভাল লাগে ওর। দ্রুত নিজেকে সামলে নিয়ে জারিফ বলে,
"ওহো! কোনো সমস্যা নেই, তুমি যাও"
প্রীতু আর দাঁড়ালো না, মুচকি হাসি দিয়ে চলে আসে সেখান থেকে।
কিন্তু এই হাসিটাই মিস করে দেয় জারিফের হার্টের অনেকগুলো পালস!
কলেজে এসে প্রীতু কোনোদিকেই মনোযোগ ছিল না। তাই কখন কি হয়ে গেল কিছু জানে না সে।
সুযোগ খুঁজছিল কখন পাওয়া যায় আঙ্কেলকে। একফাঁকে ফায়াজকে বারান্দায় পেয়ে ডাকল প্রীতু।
"আঙ্কেল কিছু কথা ছিল"
প্রীতুর শুকনো মুখ দেখে ফায়াজ সাহেব পাল্টা প্রশ্ন করলেন,
"সকালে খাওনি?"
"খেয়েছি"
"মুখটা বড্ড শুকনো দেখাচ্ছে যে মা! আচ্ছা যাই হোক, বলো কি বলবে!" অত্যন্ত স্নেহার্দ্র কন্ঠে বললেন ফায়াজ।
অনেকটাই মানসিক প্রস্তুতি নিয়ে এসেছে প্রীতু, কিন্তু এই কন্ঠস্বর সব ওলটপালট করে দিতে চাইল, একহাতে বারান্দার গ্রিলটাকে শক্ত করে চেপে ধরল। প্রাণপণে নিজেকে সামলে নিয়ে বলল,
"আঙ্কেল এই রুমটাতে বসি" প্রীতুর প্রাণহীন কণ্ঠ শুনে চমকে গেলেন ফায়াজ।
ভিতরে বসতেই প্রীতু বলল,
"আঙ্কেল আমি আমার সার্টিফিকেটে বাবা মায়ের নাম পরিবর্তন করতে চাই"
ফায়াজ একরাশ বিস্ময় নিয়ে তাকালেন প্রীতুর দিকে।
"মানে কি!"
"আমি আমার মায়ের নাম লিখতে চাই!"
ফায়াজ ভাবলেন বাবা মায়ের উপর রাগ অভিমান থেকেই এই সব কথা বলছে সে, অবশ্য প্রীতুর বাবা মায়ের খবর কেউই জানে না! সেই হিসেবেই ফায়াজ বললেন,
"বাবামায়ের উপর রাগ? আচ্ছা কোথায় তোমার বাবা মা?"
আর ভূমিকা করতে ইচ্ছে হলো না প্রীতুর,
"আঙ্কেল আমার মা পাগলী, আর আমার বাবা নাহ আমার জন্মদাতা এক ধর্ষক!" প্রীতু একেবারে কুঁকড়ে রইল। মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে রইল। মেঝে টপটপ করে পড়া অশ্রুগুলো তার সব কষ্টগুলো জানান দিতে লাগল।
ফায়াজ আহমেদ বজ্রাহত পথিকের মতো দাঁড়িয়ে রইলেন। বেশ কিছুসময় সেভাবেই কাটল তারপর ধীরে ধীরে প্রীতুকে বসতে বললেন।
তারপর বললেন, "তুমি এতদূর এলে কি করে!"
প্রীতু ধীরে ধীরে খুব সহজ কন্ঠে বলল তার জীবনের কথা গুলো। তার কণ্ঠ শুনে মনে হচ্ছিল কথাগুলো যেন দূর থেকে ভেসে আসছে। সব শুনে কিছুক্ষণ নিস্তব্ধ হয়ে বসে রইলেন ফায়াজ। তারপর বললেন,
"যে বাবা মা তোমাকে লালনপালন করলেন তাদের নাম রাখতে চাইছ না, এটা কি অন্যায় হচ্ছে না?"
"আঙ্কেল আমি অনেক ভেবেছি, আমার মা খুব ভাল, কিন্তু আমার পাগলী মা টা? পরশ তো আমার এই মাকে মায়ের জায়গায় বসাতে পারবে, কিন্তু পাগলী পলি তার মেয়ের থেকেও স্বীকৃতি পাবে না?.." শেষ করতে পারল না, কন্ঠরোধ হয়ে এলো প্রীতুর। একটু থেমে আবার বলতে শুরু করলো,
"আমার ধর্ষক বাবার নাম জানিনা জানতেও চাই না, আর আমি যে বাবার কাছে পালিত হয়েছি সে আমাকে যে জীবনের দিকে ঠেলে দিচ্ছিলেন তাতে আমার মায়ের অবস্থা হতো!"
শিউরে উঠলেন ফায়াজ। প্রীতু আর কিছু বলল না। ফায়াজ আবার প্রশ্ন করলেন,
"বাবার নাম কি দেবে তবে? বাবার নাম তো লাগবেই প্রীতু!"
বেদনায় প্রীতুর মুখ একেবারে নীলবর্ণ হয়ে গেল। এতক্ষণের ধৈর্য একেবারে ভেঙে গেল, দুহাতে মুখ ঢেকে অঝোরে কাঁদতে লাগলো। ফায়াজ কি বলে স্বান্তনা দেবেন বুঝতে পারছেন না। কেউ যদি তার নিজের পরিচয়ে বড় হতে চায় তাতে তো দোষের কিছু নেই, কিন্তু এই পরিস্থিতি তো অন্যরকম! অনেক কিছুই বলার ছিল প্রীতুর কিন্তু অনেক চেষ্টাতেও কোনো শব্দ বের করতে পারল, শব্দগুলো কন্ঠস্বরের সাথে যুদ্ধ করে পরাজিত সৈনিকের মতো পিছু হটছে, আর যুদ্ধবন্দীর শাস্তি হিসেবে বইয়ে দিচ্ছে প্রীতুর অশ্রুধারা!
ফায়াজ ধীরে ধীরে প্রীতুর মাথায় হাত রাখলেন,
"চুপ করো মা"
জীবনে কত ধরনের মানুষ আছে তার হিসেব রাখা যায় না। সঠিক বলতে না পারলেও কারোর ভুল ধরতে সবাই সদাপ্রস্তুত। যে যেমন তার চিন্তাধারাও তেমন!
অনেক দৃষ্টান্তই আমাদের চোখের সামনে ঘোরাফেরা করে প্রতিনিয়ত। তেমনি এক দৃষ্টান্ত হিসেবে বলা যায় কলেজের বায়োলজির শিক্ষক আবু তাহেরের কথা, যিনি ওই মুহূর্তে রুমের পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় দূর থেকে ফায়াজ আর প্রীতুকে দেখে নিজের মনে "অবৈধ প্রণয়লীলা" নামক বিষাক্ত সম্পর্কের সূচনা করে খুব পুলকিত হলেন। নিজের মানসপটে আরো অনেক অপ্রিয় নতুন বিষয়ের অবতারণা করতে লাগলেন...
.
(চলবে)
২| ২৮ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ দুপুর ১২:০৯
Noyontara Natasha বলেছেন: ধন্যবাদ আপনাকে মন্তব্যের জন্য
৩| ২৮ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ রাত ৯:৪৯
মাহমুদুর রহমান বলেছেন: যে অন্যের ভুল ধরে কিন্তু সেই ভুলের সমাধানের উপায় বলে দিতে পারেনা,তবে জেনে রেখো সে ভুল হবে অপবাদ,ওহে মানুষ।
©somewhere in net ltd.
১|
২৮ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ দুপুর ১২:০৫
রাজীব নুর বলেছেন: ভয়াবহ।
পাঠক বেশ ধাক্কা খাবে পড়ে।