![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
এটা গল্প হলেও পারতো
নয়নতারা
১০ পরিচ্ছেদ
মাসদুয়েক পরের কথা,
কেবল ভোরের আলো উঁকি দিচ্ছে। দিনের এই সময়টা প্রীতু ছাদে কাটায়। প্রকৃতির কোমল স্পর্শ খুব ভাল লাগে প্রীতুর! বুক ভরে নিঃশ্বাস নিতে পারে এইসময়।
"প্রীতুউউউ"
চমকে উঠল প্রীতু! সাধারণত এই সময়টাতে কেউ আসে না ছাদে।
পিছন ফিরে জারিফকে দেখে আরো বেশি চমকে গেল। অবাক ভাব গোপন করে উত্তর দিলো,
"জ্বি বলুন"
"প্রীতু আমি ভণিতা করতে জানিনা, আই লাভ ইউ, আই লাভ ইউ প্রীতু, আই লাভ ইউ সো মাচ...." এক টানা পাঁচবার একই বাক্য উচ্চারণ করল জারিফ!
এমন একটা কিছু হবে ভেবেছিল প্রীতু৷ কিন্তু তা এভাবে বুঝেনি ও।
"কি যা তা বলছেন! দেখুন, কেউ এসে যাবে, বাজে কিছু ভাববে!" পালিয়ে যেতে চাওয়া শশকের মতো করতে লাগল প্রীতু।
"বাইরে থেকে ছাদের দরজা লাগানো"
"কিহ" এবার প্রীতুর দুচোখে দেখা দিল ভয়।
সেটা বুঝতে পেরে জারিফ বলল,
"ভয় পেয়ো না প্রীতু, আমি কোনো ক্ষতি করব না, শুধুই ভালবাসি"
"দেখুন কিছুই জানেন না আমার সম্পর্কে, তাই এসব বলছেন, প্লিজ পথ ছাড়ুন!"
মুখ নিচু করে দাঁড়িয়ে রইল প্রীতু।
জারিফ প্রীতুর ভয় পাওয়া অবস্থা দেখে বলল,
"বেশ যাও, যাওয়ার আগে শুনে রাখো, আমি সব জানি আর জেনেই বলছি ভালবাসি"
অবাক চোখে মুখ তুলে জারিফের দিকে তাকাল প্রীতু। তারপর দ্রুত নেমে এলো নিচে।
প্রীতুর মনে একটায় কথা ঘুরছে, সব জেনেও জারিফ তাকে ভালবাসে! তবে সত্যিই জারিফ তাকে... একটু দুর্বলতা ছিল প্রীতুর মনে সেটাই আরো বেশি পরিধি বাড়াতে চাইল!
ফায়াজ যে প্রীতুর সম্পর্কে বাড়িতে কিছুই বলেননি এটা প্রীতু ঘুণাক্ষরেও বুঝতে পারেনি। আর খুব স্বাভাবিকভাবেই প্রীতু জড়িয়ে পড়ল এক নতুন সম্পর্কে! এটা ঠিক একেবারে হয়নি, জারিফ তার সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছে প্রীতুর মনে জায়গা নেওয়ার জন্য! দুর্বল মানুষের সাথে যেই ভাল ব্যবহার করে তাকেই সবচেয়ে বেশি আপন মনে হয়!
তাই এক্ষেত্রে প্রীতুর দোষ দেওয়া যায় না। ভালবাসা নিয়ে বাঁচতে সবার ইচ্ছে করে, প্রীতুরও! কিছু মানুষ আছে মন উজাড় করে পবিত্র ভাবে ভালবাসতে পারে, প্রীতু তাদেরই একজন।
জারিফ এখন প্রীতুর রুটিন হয়ে দাঁড়িয়েছে, এখন আর জীবনটাকে ফেলনা মনে হয়না ওর। মনে হয় কেউ তো আছে যে দিনশেষে খোঁজ নিচ্ছে, কেউ তো আছে যে কাছাকাছি থেকে ভালবাসছে।
এত কিছুর মাঝেও প্রীতুর অতীত নিয়ে কথা হয়নি৷ প্রীতু জানতো জারিফ সব জানে, আর জারিফ এইসব নিয়ে কথা বলত না।
জারিফময় জীবনে জড়াতে গিয়ে প্রীতু পড়ালেখার জীবন থেকে একটু পিছিয়ে আসল নিজের অজান্তেই!
"জারিফ আন্টি আঙ্কেল কি মেনে নেবে আমায়!"
ভয়ে ভয়ে প্রশ্ন করতো প্রীতু
"আরে ভাবছ কেন!" স্বান্তনা দিত জারিফ।
এভাবেই চলতে থাকে এক সুন্দর সম্পর্ক।
.
আজ বেশ তাড়াতাড়ি কলেজে এসে পড়েছে প্রীতু, কলেজে আসার পর বুঝলো বেশ দ্রুত এসে পড়েছে। এখনো কেউ আসেনি, নিজের উপর কিছুটা বিরক্ত হলো সে।
রুমগুলো বন্ধ, একটা রুম খোলা পেয়ে বসে পড়ল। বেশ কিছুক্ষণ পর তাহের স্যারের ডাকে পিছনে ফিরল প্রীতু,
"আরে প্রীতু যে, এত তাড়াতাড়ি!"
"আসলে স্যার একটু তাড়াতাড়ি এসে পড়েছি, বুঝতে পারিনি" দাঁড়িয়ে বলল প্রীতু।
"সমস্যা নয়, কি আমার ক্লাস বুঝতে পারো তো?" প্রীতুর দিকে এগিয়ে আসতে আসতে বললেন তাহের।
"জ্বি স্যার সমস্যা নেই" খুব ভদ্রভাবে উত্তর দিল প্রীতু। স্যার বসতে বলাতে তখনো দাঁড়িয়ে সে।
"আরে দাঁড়িয়ে কেন, বসো বসো" প্রীতুর পিঠে হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বললেন তাহের। আচমকা এমন আচরণে অবাক হয়ে গেল প্রীতু। মূহুর্তের মাঝে ছিটকে দূরে সরে বসল। তাহের হেসে ফেললেন মনে মনে।
পাশে বসে বললেন,
"আমি তো বন্ধুর মতো তাই না?" বলতে বলতে প্রীতু হাত চেপে ধরলেন!
"স্যার আপনি এমন কেন করছেন, হাত ছাড়ুন বলছি!" নিজেকে মুক্ত করার জন্য চেষ্টা করতে লাগল প্রীতু। রেগে গেলেন তাহের।
"কেন মেয়ে আমি হাত ধরলেই খারাপ লাগে, ফায়াজ সাহেব যখন হাতে মাথায় হাত দেয়, তখন খুব ভাল লাগে বুঝি? কি ভেবেছ আমি বুঝিনা?"
আচমকা বাজে রকমের অপবাদে স্তব্ধ হয়ে গেল প্রীতু।
"আজ তোমার শেষ দেখে ছাড়ব, অনেক দিন ধরেই সু্যোগ খুঁজছিলাম, শুনেছি পালিয়ে এসেছ নাকি! তবে এত তেজ কিসের!"
হয়তো অনেক কিছুই হতে পারত! কিন্তু আল্লাহ প্রীতুর সহায় ছিলেন। ঠিক তখনি বাইরে থেকে ফায়াজকে যেতে দেখে চিৎকার দিল প্রীতু,
"আঙ্কেল!"
ফায়াজ রুমে ঢুকলেন, তাহের তখন প্রীতুর হাত ছেড়ে দিয়ে তড়িঘড়ি করে উঠে যেতে গেল কিন্তু তাড়াহুড়ো করার জন্য পায়ে বেঞ্চের ধাক্কা খেয়ে যন্ত্রণায় আবার বসে গেল। প্রীতুর হাত সেভাবেই রাখা যেভাবে তাহের ধরে ছিল। ছলছল করছে প্রীতুর চোখ, মুখ একেবারে রক্তশূন্য আর ফ্যাকাশে হয়ে গিয়েছে। ফায়াজের বুঝতে খুব বেশি সময় লাগল না।
"প্রীতু বাইরে গিয়ে দাঁড়াও" ফায়াজের কথা শুনে কাঁপতে কাঁপতে বাইরে গিয়ে দাঁড়াল প্রীতু।
"ছিঃ তাহের সাহেব, স্বভাব বদলাতে পারলেন না! আপনার মেয়ের বয়সী ও! আর কখনো আমার সামনে প্রীতুর দিকে, শুধু প্রীতু কেন কোনো মেয়ের দিকে বাজে ইঙ্গিত করেন তবে আপনার এই হাত আমি ভেঙে দিতে একটুও কুণ্ঠিত হব না যে হাতে প্রীতুর হাত ধরেছেন!"
অপমানে মুখ লাল হয়ে গেল তাহেরের। বেরিয়ে গেলেন ফায়াজ।
প্রীতু তখনো দাঁড়িয়ে নিশব্দে কাঁদছে।
"হাত ধরা ছাড়া আর কোনো আচরণ করেনি তো মা?"
না সূচক মাথা নাড়ল প্রীতু। তার আর ফায়াজের সম্পর্কে যে বাজে ইঙ্গিত করেছে তাহের, তা বলার শক্তি পেল না প্রীতু!
"আজ থেকে আমার সাথে আসবে কলেজে, আমার সাথে বাড়িতে যাবে"
হ্যাঁবোধক মাথা নাড়ল প্রীতু।
সেদিন আর কলেজ করলো না প্রীতু। বাসায় ফিরে ঝিম মেরে বসে রইল তারপর একঘন্টা ধরে গোসল করে ঘুমিয়ে পড়ল।
প্রীতু এসব জারিফকে বলতে পারেনি৷ কিছুটা লজ্জায় কিছুটা ভয়ে।
এরই মাঝে বেশ কিছুটা সময় পার হয়ে গেছে। প্রীতু ভেবেছিল তাহের স্যার অনুতপ্ত, কিন্তু প্রীতুকে ভুল প্রমাণিত করে তাহের তার আসল মুখোশ উন্মোচন করলেন,
"হ্যালো তানিয়া ভাবি?"
"জ্বি আপনি কে?"
"আমি ফায়াজ ভাইয়ের কলিগ তাহের, আপনাকে কিছু কথা বলতাম" তাহের উত্তর দিলেন। তাহেরের সাথে পরিচয় ছিল না তানিয়ার।
"কিন্তু আপনার ভাইয়া তো বাসায় নেই!"
"আরে ভাবি সেটা জেনেই তো কল দিলাম সাবধান করতে!" টেনে টেনে বললের তাহের।
"জ্বি বলুন!" ভীত কন্ঠে উত্তর দিল তানিয়া।
"ভাবি রাস্তার মেয়ের সাথে ওর এত খাতির কিসের!"
"মানে" অবাক হয়ে প্রশ্ন করলেন তানিয়া।
"আরে ভাবি অল্পতেই বুঝেন না? আপনার মতো একটা সহজ সরল মানুষকে ফায়াজ সাহেব কি করে একটা রাস্তার মেয়ের জন্য ঠকাচ্ছে বুঝতে পারি না! আমি হলে পারতামই না!"
"মানে!"
"আরে প্রীতুর কথা বলছি!"
তানিয়া কি বলবেন ভেবে পেলেন না৷ তানিয়ার স্বভাবের একটা মারাত্মক দোষ তিনি বিশ্বাস বেশিক্ষণ টিকিয়ে রাখতে পারতেন না, তাই মেরুদণ্ডহীন বিশ্বাস নিয়ে যাকেই বিশ্বাস করতেন তাকেই আবার অবিশ্বাস!
তানিয়ার মনে প্রীতুর জন্য খুব বেশি স্নেহ ছিল কিনা সেটা পাঠকগণের অগোচরে নেই। তাই আজ প্রীতুর প্রতি অখুশিটা সন্দেহে রূপ নেওয়ার জন্য আকুলিবিকুলি করতে লাগল।
ধরা গলায় তানিয়া উত্তর দেয়,
"ভাই আমি কি করব!"
তাহের প্রচন্ড খুশি হয়, এত সহজে স্বার্থসিদ্ধি হবে সেটা তার কল্পনাতীত ছিল।
আর্দ্র কণ্ঠে বলে,
"আপনার স্বামীর দোষ কী বলেন! ওমন ছলনাময়ী যদি ঘোরাফেরা করে তবে যে কারোরই ঘোরের মাঝে পড়া স্বাভাবিক! আমি তো বাবা বেঁচে গেছি" অকপটে একটার পর একটা মিথ্যা রচনা করে যেতে লাগলেন তিনি, জানিনা তার কন্ঠ কেঁপেছিল কিনা! হয়তো না, তাই আবারো নব উদ্যমে বললেন,
"তাড়ান তাড়ান রাস্তা জিনিস রাস্তায় দিয়ে আসুন"
সৃষ্টিকর্তা মনে হয় অন্তত সেই সময়ের জন্য হলেও তানিয়ার মাথায় একটু সঠিক প্রশ্নের অবতারণা করে দিলেন,
"ভাই আপনি কি করে জানলেন?"
অবস্থা বেগতিক দেখে তাহের তাড়াতাড়ি বললেন,
"আরে ভাবি আমি যা বলছি তা মিথ্যে নয়, মিথ্যে বলে লাভ কি আমার! শুধু আপনার মত সহজ সোজা মানুষ তাই বললাম আর কি!"
তাহেরের কথায় আবার বিগলিত হয়ে গেলেন তানিয়া। একটু থেমে তাহের আবার বললেন, "আপনি না হয় ফায়াজ সাহেবকে ওকে বের করে দিতে বলুন দেখেন বের করতে চাইবে না, ব্যস দুই দুই চার মিলে যাবে! তবে আমার কথা যেন কোনো ভাবেই ফায়াজ সাহেব না জানতে পারেন"
"বিশ্বাস রাখতে পারেন" নিস্পৃহ কন্ঠে বললেন তানিয়া।
"আচ্ছা ভাবি আমি রাখছি ক্লাস আছে"
ফোন রাখার পর সোজা জারিফের ঘরে গেলেন তানিয়া,
"তোর বাপ কি ভেবেছে! যা খুশি করবে আমি মেনে নেব! আমার বাপমা কি কুক্ষণেই যে এই মানুষটার সাথে বিয়ে দিয়েছিল"
জারিফ অবাক হয়ে তাকিয়ে রইল। তার মা অপাত্রে পড়েছেন সেটা এতবছর পর প্রথমবার বুঝতে পেরেছেন সেটা ভেবে হাসি পেল তার।
স্বাভাবিক বিষয় ভেবে চেয়ার নিয়ে হাসিহাসি মুখ করে মায়ের দিকে ঘুরে বসতে বসতে বলল,
"কি হয়েছে মা?"
তানিয়া কাছে এসে ধীরে ধীরে শোনা কথাগুলো সব সুন্দরভাবে বলে গেলেন। কিছু কিছু স্থানে মনে না করতে পেরে নিজের মতো সাজিয়ে বললেন।
মায়ের কথা শুনে জারিফের হাসিমুখ কালিবর্ণ হয়ে গেল৷ প্রীতু কিংবা বাবা কাউকেই অবিশ্বাস করতে পারছে না সে। মাকে শান্ত করে সোজা প্রীতুর রুমের দিকে চলল জারিফ।
প্রীতুর রুমের দরজা খোলা ছিল, জারিফ ভিতরে ঢুকেই দরজা বন্ধ করলো। পড়ায় মনোযোগী হয়ে ছিল প্রীতু৷ চমকে তাকাল,
"তুমি আমার ঘরে! আর দরজা বন্ধ করলে কেন! দরজা খুলে দাও বলছি!"
"আরে রাখো দরজা! মা শুনতে পাবে তাই আমি প্রেম করতে আসিনি, এসব কি শুনছি!"
"মানে?"
জারিফ যা শুনেছিল সবটাই বলল। অপমানে লজ্জায় কোনো কথা বলতে পারল না প্রীতু৷ ফ্যালফ্যাল করে চেয়ে রইল!
জারিফ ভুল ব্যাখ্যা করলো সেই চাহনীর।
"বলো এসবে কি স্বার্থ ওই স্যারের?"
"এসব মিথ্যে জারিফ!" প্রাণপণে নিজেকে সামলে নিয়ে বলল প্রীতু।
তারপর ধীরে ধীরে কলেজে ঘটে যাওয়া ঘটনা গুলো বিবৃত করল।
"আগে কেন আমাকে বলনি?"
নিরুত্তর রইল প্রীতু। কিছুসময় পর বলল,
"আমার সম্পর্কে তো সব জানো, সবকিছুতেই আমার ভয় হয়!"
"আরে কি এমন ব্যাপার তোমার! বাড়ি ছেড়ে পালিয়েছ শুধু তাই তো? তা নিয়ে এত প্যাঁচানোর কিছু নেই!" বলতে বলতে উঠে চলে গেল জারিফ।
প্রীতুর অবাক হয়ে তাকিয়ে রইল, প্রথমে না বুঝলেও ধীরে ধীরে বুঝতে পারল, 'জারিফ কিচ্ছু জানেনা'
ফায়াজ ব্যর্থ হলেন তার স্ত্রীকে। প্রীতুর অবস্থা শুনে আরো তেলেবেগুনে জ্বলে উঠলেন,
"কোন কার পাপের ফল, বাড়ি এনে তুলেছ!"
ফায়াজ হাজার উপদেশ, জ্ঞান কিছু দিয়ে নিরস্ত করতে পারলেন না তানিয়াকে। সংসার, এই বয়সে মানসম্মানের ভয় সবকিছু ভেবে ফায়াজ সিদ্ধান্ত নিলেন।
বাড়িটা ছাড়তে হল প্রীতুকে।
আবার আপনহারা হলো প্রীতু।
জারিফের কাছে তো একটা স্বীকারোক্তি পাওনা থেকেই যায়, কারণ জারিফ যে প্রীতুর জন্য মরতে পারে, মানে মরতে পারতো আর কি! সব শুনে জারিফ বলে,
"প্রীতুর অতীত জেনে তার নাকি প্রীতুর কথা ভাবতেও ঘৃণা হয়!"
(চলবে)
২| ০১ লা মার্চ, ২০১৯ দুপুর ২:১৩
রাজীব নুর বলেছেন: খুব সুন্দর।
©somewhere in net ltd.
১|
২৮ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ রাত ৯:৪৭
মাহমুদুর রহমান বলেছেন: বেশ।