নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

Noyontara Natasha

Noyontara Natasha › বিস্তারিত পোস্টঃ

এটা গল্প হলেও পারতো (শেষ পরিচ্ছেদ)

২৮ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ দুপুর ১২:০৮

এটা গল্প হলেও পারতো
নয়নতারা
শেষ পরিচ্ছেদ

আজ প্রীতু আঠারোতম জন্মদিন! জীবনে কি পার্থক্য, সময়ের সাথে সাথে কতকিছুই না বদলে যায়! কখনো জন্মদিনে কেক কেটে উৎসব হয় আবার কখনো কান্নার উৎসব।
আজ হোস্টেলের তার রুমে কেউ নেই।
অনেকদিন পর আবার ডায়েরীটা হাতে নিয়ে লিখতে বসেছে প্রীতু,
"এই দিনটি কোনোকালে না এলেই বোধ করি ভালো হত......
কিন্তু, এই ভালোর মূল্য না দিয়ে, দিনটি এসেছিল প্রথমবার,
আর তারপর বারবার...
বারবার আসে.................
আচ্ছা!
যতবার আসবে এইদিন... ততবারই কি প্রচন্ড দ্বিধাভরে নিজেকে অনুভব করতে হবে...?
দিনটি আমার জীবন থেকে সরিয়ে নিয়ে যেতে পারতাম কিংবা জীবনটাকে যদি এই দিনটি থেকে সরিয়ে নিয়ে যেতে পারতাম...!
কিন্তু এতটা কণ্টকাকীর্ণ পথ বেছে নিতে প্রবৃত্তি হয়
না.......
দাউদ হায়দার এর একটা কথা আমার প্রায় মনে পড়ে
"জন্মই আমার আজন্ম পাপ"
জানিনা কথাটা কোন প্রসঙ্গে বলা, কিন্তু আমার পাপ হয়তো এটাই যে আমি জন্মেছি!
কোনো কালেই কি আমার এই ধারনা বদলে যাওয়ার মতো কারন ঘটবে না??!!!
হয়তো না..... কারণ,
পৃথিবীতে কিছু কিছু অপ্রয়োজনীয় মানুষ আছে, আর আমিও সেই দলে..."
এটুকু লিখেই কাঁদতে শুরু করল প্রীতু। প্রীতু অনুভব করে এখন আর কাঁদতে খুব একটা কষ্ট হয় না ওর। মনে হয় অভ্যাস হয়ে গিয়েছে! কাঁদতে কাঁদতে ঘুমিয়ে গেল প্রীতু।
গতরাতে একটুও ঘুমাতে পারেনি ও। ওর ঘুমন্ত স্নিগ্ধ সুন্দর মুখটাকে একটা অবসন্নতা ঢেকে আছে।
"এইটা প্রীতুর রুম"
আফরিদা ভদ্রমহিলাকে ধন্যবাদ দিয়ে বাইরে থেকে ডাকলেন,
"রাইয়্যানা?" দুইতিন বার ডেকেও সাড়া না পেয়ে ধীরে ধীরে ঘরে ঢুকলেন।
বালিশের উপর উপুড় হয়ে কাঁদছিল প্রীতু, সেভাবেই ঘুমিয়ে গেছে। একগুচ্ছ লম্বা ঘন কালো চুল বিছানা ছেড়ে মেঝেতে লুটোপুটি খাচ্ছে। চুলের ফাঁকে ফাঁকে একটু একটু মুখ দেখা যাচ্ছে!
যেন অনাদরে বিকশিত হওয়া একটা ফুল, যত্ন নেওয়ার ছেড়ে দেওয়া হয়েছে অনেক আগেই কিন্তু সৌন্দর্য বেড়েই চলেছে সেই ফুলের।
অস্ফুট স্বরে বললেন,
"মাশআল্লাহ"
আফরিদা একটু দ্বিধাবোধ করছেন প্রীতুকে ডাকবেন কিনা। হোস্টেলের ওয়েটিং রুমে তার জন্য অপেক্ষা করছেন ফায়াজ আর মাহমুদ।
একটু ইতস্ততভাবে প্রীতুর পাশে যেতেই ডায়েরিটা চোখে পড়ল।
পড়তে গিয়ে চোখে পানি এসে গেল তার।
সোজা বের হয়ে গেলেন। তাকে একা ফিরতে দেখে একটু বিচলিত হয়ে গেলেন ফায়াজ,
"কোনো সমস্যা ভাবি?"
"না প্রীতু ঘুমাচ্ছে কথা হয়নি। আজ ওর জন্মদিন তাই ফিরে এলাম"
তারপর স্বামীর দিকে তাকিয়ে বললেন,
"মেয়েটা মনে হয় কাঁদতে কাঁদতে ঘুমিয়েছে। তুমি কিছু গিফট আনতে পারবে এক্ষুনি? ছোট বড় যেমন ইচ্ছে?
একটু তো আনন্দের স্পর্শ পাক মেয়েটা" ছলছল করে উঠল আফরিদার চোখ।
"আচ্ছা যাচ্ছি" উত্তর দিলেন মাহমুদ,
ফায়াজ সাথে সাথে বললেন "চলুন আমিও যাই"
চলে গেলেন মাহমুদ আর ফায়াজ।
আর আফরিদা বিভিন্ন রুম ঘুরে ঘুরে প্রীতুর সম্পর্কে জেনে নিতে লাগলেন। মাহমুদ ফিরলে আফরিদা হোস্টেলের মেয়েদের বললেন সন্ধ্যায় প্রীতুকে উইশ করতে আর সবার হাতে কিছু কিছু গিফট ধরিয়ে দিলেন প্রীতুকে দেওয়ার জন্য।
তারপর আবার গেলেন প্রীতুর রুমে। তখনো ঘুমাচ্ছে প্রীতু। নিঃশব্দে গিফটটা টেবিলের উপর রেখে দিলেন তিনি।
তারপর আস্তে আস্তে গিয়ে প্রীতুর মাথায় হাত রাখলেন আফরিদা,
"প্রীতু?" দুইবার ডাকলেন আফরিদা, তৃতীয়বারে চোখ মেলল প্রীতু।
ধড়মড় করে উঠে বসে বলল,
"আপনাকে তো ঠিক চিনতে পারলাম না" বিনয়ী কন্ঠস্বরে চমৎকৃত হলেন আফরিদা।
"চিনবে না মা, তোমার ফায়াজ আঙ্কেল চিনেন, তোমার জন্য অপেক্ষা করছেন তিনি চলো!"
বহুদিন পর এত স্নেহার্দ্র নারীকন্ঠ শুনলো প্রীতু। অবাক হয়ে তাকিয়ে রইল আফরিদার দিকে। আফরিদার মুখে প্রীতু মাতৃছায়া দেখতে পেয়েছিল হয়তো তাই বিনা বাক্য ব্যয়ে আফরিদার সাথে চলল।
"শুভ জন্মদিন মা" প্রীতুকে দেখেই বলে উঠলেন ফায়াজ। প্রীতু হয়তো তার আপন কেউ নয় কিন্তু একটা অদৃশ্য মায়ার বন্ধনে জড়িয়ে ফেলেছেন প্রীতুকে।
অবাক চোখে তাকিয়ে রইল প্রীতু!
মাহমুদের দিকে তাকাল সে, মাথায় কিচ্ছু ঢুকছে না ওর। প্রীতুর বিব্রত অবস্থা দেখে ফায়াজ বললেন,
"আমার পরিচিত, বন্ধু বলতে পারো" প্রীতু মাহমুদ রহমানের দিকে তাকিয়ে সালাম দিল।
কিন্তু প্রীতু যে তিমিরে সেই তিমিরে কিছুই বুঝতে পারছেনা।
আফরিদাই কথা বললেন এবার,
"প্রীতু তুমি মনে হয় কিছুটা বিব্রত, আমি বুঝিয়ে বলব"
তারপর স্বামীর দিকে তাকিয়ে বললেন,
"তুমি বাসায় যাও আজ আমি এখানেই থাকব"
তারপর প্রীতুর দিকে তাকিয়ে বললেন,
"আমি থাকলে সমস্যা হবে না তো মা?"
"না কিন্তু..." ফায়াজের দিকে তাকাল প্রীতু, ফায়াজ হ্যাঁবোধক মাথা নাড়লেন।
সেটা দেখে প্রীতু বলল,
"ঠিক আছে থাকুন"
ফায়াজ বললেন, "মাহমুদ সাহেব আজ বাড়িতে যাবেন না, রাতটা আমার ওখানেই থাকবেন"
বাধা দিতে চাইলেন মাহমুদ, কিন্তু শুনলেন না ফায়াজ।
ফায়াজ আর মাহমুদ চলে যাওয়ার পর আফরিদা প্রীতুকে নিয়ে রুমে এলেন।
"ভাবছ আমি কে তাইতো?" মিষ্টি করে বললেন আফরিদা।
মাথা নাড়ল প্রীতু।
আফরিদা বললেন।
"সব বলব তার আগে গোসল করে এসো" এমন মায়ের শাসন কতদিন পায়নি প্রীতু!
সারাদিন কাটালেন প্রীতুর সাথে কেবল কৌশলে একটাই প্রশ্ন এড়িয়ে গেলেন তা হলো তিনি কে।
প্রীতু অনেকদিন পর প্রাণখোলা হাসি হাসছে, কোনো কৃত্রিমতার ছোঁয়া নেই তাতে। প্রীতুর সাথে একদম মায়ের মতো আচরণ করছেন আফরিদা। খাইয়ে দিলেন প্রীতুকে।
আফরিদার ও মনে হচ্ছে মেয়েকে ফিরে পেয়েছেন।
সন্ধ্যায় অনেক মজা করলেন প্রীতুর সাথে। প্রীতুর কাছে আজকের জন্মদিনটা একটা সেরা জন্মদিন হয়ে রইল।
"রাইয়্যানা?"
"জ্বি"
"আমার মেয়ে হবি মা?"
"আপনার তো একটা মেয়ে কেবল ছেলে থাকলে না হয় বিয়ে করা যেত" মজা করে উত্তর দিল প্রীতু
প্রীতু এখনো জানেনা সামিরের কথা আফরিদা অনেক গল্প করেছেন সারিয়ার কিন্তু সামিরের নাম উচ্চারণ ও করেননি।
এবার বললেন,
"আছে বলেই তো বলছি!"
এক লাফে উঠে বসল প্রীতু।
"আচ্ছা কে আপনি বলুন তো?"
ততক্ষণে সামিরের একটা ছবি বের করে ফেলেছেন মোবাইল থেকে।
"এটা আমার ছেলে!" মুখ কাঁচুমাচু করে বললেন আফরিদা।
রাগ করতে গিয়ে হেসে ফেলল প্রীতু, আমি জানতে চাইলাম,
"আপনি কে!"
"ওই তো আমি এই ছেলের মা! ছেলেটা একদম কথা শুনেনা, ডানে বললে বামে যায় আর বামে বললে ডানে! আর পারছি না। তুই একটু দায়িত্ব নিবি?"
হা করে তাকিয়ে রইল প্রীতু, সে এখনো বুঝে উঠতে পারেনি।
আফরিদা প্রীতুর কানের কাছে মুখ নিয়ে বললেন,
"বেশি সিনেম্যাটিক হয়ে গেল নাকি?"
প্রীতু তখনো ঘোরের মাঝে আছে, আন্দাজে মাথা নেড়ে বলল,
"না, ঠিকঠাক আছে"
প্রীতুর অবস্থা দেখে ভীষণ কষ্টে হাসি চেপে রাখলেন আফরিদা। মুখে কপট গম্ভীরতা টেনে এনে আবার বললেন,
"তাহলে তুই রাজি?"
"অ্যাঁ?" অদ্ভুত শব্দ করল প্রীতু।
এবার আর হাসি সামলাতে পারলেন না আফরিদা, হাসতে হাসতে বললেন,
"সারিয়া অসুস্থ না থাকলে ওই আসত, কি আর করা ছেলের মা হয়েও আমাকেই আসতে হলো! "
প্রীতু বেশ কিছুক্ষণ পর ধাতস্থ হয়ে বলল,
"আপনি কি বলছেন এসব?"
আফরিদা সামিরের কলেজে দেখা থেকে শুরু করে সব বললেন।
অবাক হয়ে শুনল প্রীতু।
তারপর আফরিদা বললেন,
"দেখ মা হয়তো ভাবছ আমরা তোমাকে করুণা করছি না, তা নয় মা। এটা সারাজীবনের ব্যাপার, করুণা এখানে স্থান পায় না। তোমার পাশে থাকতে চাইছি, আমার ছেলে তোমার সম্পর্কে না জেনেই পছন্দ করেছিল আর সব জানার পরও আমরা এত দূর এসেছি তখন বুঝতেই পারছ কোনো করুণা নয়। তোমার ভবিষ্যৎ উজ্জ্বল তোমাকে করুণা করার প্রশ্নই আসে না। সে মালিক তো একমাত্র আল্লাহ!"
প্রীতু মন্ত্রমুগ্ধের মতো শুনছে কথাগুলো। এইভাবে কথা রাহেলা বলতেন, আজ কোথায় তিনি!
আফরিদা আবার বললেন,
"আমার ছেলেকে দেখ, চাইলে পরিচিত হও, ভাবতে সময় নাও!"
"ফায়াজ আঙ্কেল?" এতক্ষণ পর কথা বলল প্রীতু।
"তিনি রাজি বলেই তো তোমার কাছে পর্যন্ত পৌঁছাতে পেরেছি মা! আচ্ছা চলো ঘুমাই"
প্রীতুকে ভাবার অবকাশ দিয়ে শুয়ে পড়লেন।
.
সঠিক সিদ্ধান্তে পিছনে ফিরে আর তাকাতে হয়নি প্রীতুকে। সেদিন সামিরের সাথে বিয়েতে হ্যাঁ বলেছিল প্রীতু। ভাল ফলাফল করে ইন্টারমিডিয়েটও পাশ করেছিল সে।তার পিছনে সামিরের অনেক বেশি সহযোগিতা ছিল৷ সুন্দর একটা পরিবার পেয়েছিল প্রীতু। পেয়েছে মনের মত একজন ভাল মানুষ৷ কে বলেছে বিয়ের আগে পরিচয় না হলে সম্পর্ক ভাল হয় না! কথাটা যে ঠিক নয় প্রীতু আর সামিরকে দেখলেই বোঝা যায়।
খুব ভাল আছে প্রীতু! প্রীতু হলো হঠাৎ বাতাস পেয়ে নিভে যেতে গিয়ে জ্বলে থাকার আকুল চেষ্টায় ব্যস্ত হওয়া মোমবাতির আকাঙ্ক্ষা। বাতাসে নিভে যাওয়ার আগে মোমবাতি যেমন আশা করে,
"এই দমকা বাতাস বয়ে যাওয়ার সময়টুকুতে দুটো হাত তার আলোটাকে রক্ষা করুক, বাকি সময়টা সে হাতদুটোকেই আলোকিত করবে..."
ঠিক তেমনি...............!!!
প্রীতুকে হেরে যেতে দেয়নি সামির, সামিরের পরিবার, আর এখন
প্রীতু আলোকিত করে আছে সামির কে, সামিরের পরিবারকে।
ঝগড়া তাদের হয়না তা নয়। কিন্তু স্থায়িত্ব বেশিক্ষণ নয়।
বউ শাশুড়ির মন কষাকষিও হয় প্রীতু আর আফরিদার মাঝে। কিন্তু তা আবার ঠিক হয়েও যায়, তাদের বউ-শাশুড়ির ঝগড়ার মাঝে মাহমুদ বা সামিরের প্রবেশাধিকার একেবারেই নিষিদ্ধ। কিছু বললেই বউ-শাশুড়ি কিভাবে যেন একজোট হয়ে যায়।
ভয়ে ভয়ে কেউ কিছু বলে না তাদের......
এইপর্যন্ত বলেই হেসে উঠল প্রীতু।
"তার কি হলো সোনা মা?"
"তারপর আর কি, এভাবেই চলছে প্রীতু আর সামিরের মিষ্টি সংসার, আর এখন একটা পরীও আছে তাদের, শাকিরা আরজু। আর আছে অনেক স্বপ্ন, এই তোমরা"
চোখ বড় বড় করে মেয়েগুলো তাকিয়ে রইল প্রীতুর দিকে। বয়স সবারই নয় থেকে পনেরোর মাঝে। সংখ্যায় আটজন।
"আর রাহেলা?" এক মূহুর্তে বদলে গেল প্রীতুর মুখ।
"সব মানুষ চিরদিন থাকে না। আমার ওই মা আর নেই রে সোনা, অনেক আগেই যে না ফেরার দেশে চলে গেছে, আমি জানতেও পারিনি"
" সত্যিই সোনা মা, এটা তোমার জীবনের গল্প?" সবচেয়ে বড় মেয়েটি প্রশ্ন করল।
"হ্যাঁ সোনা!"
প্রদীপ্ত হয়ে উঠল সবার চোখ। ওই চোখগুলো বলে দেয় তারাও পারবে!
এমন সময় গাড়ি এসে দাঁড়ালো প্রীতুর "স্বপ্ন" নামক শিশু আশ্রমের সামনে।
সামির দ্রুত নেমে এসে বলল,
"মা কারোর কথা শুনছে না, তুমি না গেলে বোধহয় শুনবে না"
সবার দিকে আরেকবার মিষ্টি হেসে গাড়িতে গিয়ে বসল।
হ্যাঁ, আজ প্রীতু প্রতিষ্ঠিত।
সেদিনের অসহায় প্রীতু আজ আটটা মেয়ের "সোনা মা"
অন্ধভরসা ঠিক কেমন তা জানিনা, কিন্তু এই আটটা বাচ্চা "সোনা মা" নামক এই কল্পতরুকে ভরসা করে আছে, যার কাছে কান্না করা যায়, হাসা যায়, প্রয়োজনীয় কিছু চাইলেই পাওয়া যায়।
চাকরী পছন্দ করে না প্রীতু কিন্তু আজ সে একজন সাইকোলজিস্ট, শুধু তার মায়ের জন্য!
বাসায় নামতেই ছুটে এলেন মজিদা! অনুযোগের সুরে বললেন,
"এতদিন মাইয়া আমার কাছে থাকলো আর এখন আমারেই চিনবার পারে না!"
হেসে ফেলল প্রীতু,
"চলো তো নানী, দেখি কেমন কথা শুনে না আমার মা! আর আমার মেয়েটা কি ঘুমিয়েছে?"
"হয় ঘুমাইছে... চলো আপা" বলেই আগে আগে ঘরে গেলেন মজিদা,
"এই যে পলি, তোমার মাইয়া আইছে!"
"মাইয়া কইয়ো না, মেয়ে কও!
পলির সামনে শুদ্ধ কইরা কথা কও পলির মা, নইলে প্রীতু রাইগা যাইবার পারে!" ফিসফিস করে বললেন জলিল।
"না মানে তোমার মেয়ে, আমি বাপু অত শুদ্ধ বলবার পারিনা!"
ঘরের সবাই হেসে উঠল।
প্রীতু ঘরে ঢুকতে ঢুকতে বলল,
"বাব্বাহ মা দেখি সবাইকে এক জায়গায় করে ফেলেছে!"
তারপর ধীরে ধীরে পলির সামনে গিয়ে বলল,
"বলো তো আমি তোমার কি হই? যদি না বলো আবার চলে যাব!"
পলি মুখ তুলে আস্তে আস্তে প্রথমবারের মতো ভাঙা ভাঙা কন্ঠে নিজে থেকে বলল,
"আমার মেয়ে" খুশিতে প্রীতুর চোখে পানি চলে এলো!
"এই তো আমার মা, এবার খেয়ে নাও দেখি, নিজে নিজে সুন্দরভাবে খেতে শিখতে হবে তোমায়! নইলে আবার কোথায় হারিয়ে যাব" কান্না লুকিয়ে খাবারের দিকে ইঙ্গিত করল প্রীতু।
পলি কি বুঝলো কে জানে, খাবারের দিকে ইঙ্গিত করায় খেতে শুরু করল।
প্রীতু ধীরে ধীরে রুমের জানালার সামনে গিয়ে দাঁড়ালো। চোখে অশ্রু টলমল করছে। এ আনন্দাশ্রু!
প্রীতুর পাশে গিয়ে দাঁড়ালো সামির। প্রীতুর কাঁধে হাত রেখে বলল,
"আমার কি মনে হচ্ছে জানো?"
"কি?" সামিরের দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন করল প্রীতু।
প্রীতুর গালে মুক্তোর মতো গড়িয়ে পড়া অশ্রু মুছে দিতে দিতে সামির বলল,
"এটা গল্প হলেও পারতো প্রীতু!"
হেসে ফেলল প্রীতু!
"হাসি আর কান্না একসাথে! দারুণ মানাচ্ছে তোমাকে!"
সামিরের কথা শুনে আবার হাসল প্রীতু। সামির বলল,
"ফ্রেশ হয়ে নেবে চলো"
সামিরের হাত শক্ত করে ধরে প্রীতু বলল,
"চলো"
প্রীতু আর সামির দরজা দিয়ে বের হবে এমন সময় পলি ডেকে উঠল,
"আমার মেয়ে.....!"
উচ্ছ্বাস সংবরণ করতে পারল না প্রীতু। কেঁদে ফেলল সেখানে দাঁড়িয়েই। সামির প্রীতুর হাতে মৃদু ঝাঁকুনি দিয়ে বলল,
"যাও মায়ের কাছে!"
সামিরের কথা শুনে দৌড়ে গিয়ে জড়িয়ে ধরল মাকে! আমার মা!
কাঁদতে লাগল প্রীতু।
কেউ খেয়াল করেনি কান্নার মাঝেও প্রীতুর ঠোঁটের কোনায় দেখা দিয়েছে এক চিলতে মুচকি হাসি, ধীরে ধীরে বড় হতে লাগল সেই হাসির রেখা!

(সমাপ্ত)

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.