![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
জানালার গ্রিলের মধ্যদিয়ে একহাত বাড়াইয়া কার্নিশ হতে ঝরে পড়া বৃষ্টির পানি ছুঁইলাম। বর্ষা আসিয়া গিয়াছে, এই ইট-কংক্রিটের শহরে কিছু মানুষ বোধকরি এইভাবেই বর্ষার স্বাদ লয়। ডানপিটে কিছু তরুণ-তরুণীরা তুমুল বৃষ্টি মাথায় করিয়া ছাদে গিয়া হিন্দি গানের তালে কোমর দোলায়। ইন্টারনেটের কল্যাণে এমন দৃশ্য আজকাল অপরিচিত নয় মোটেও। পরিপাটী করিয়া অফিস যাত্রাকালে অনাহূত বৃষ্টির আগমনে নিরাপদ আশ্রয়ের আশায় দিকভ্রান্ত মানুষেরা হয়ত মনে মনে বৃষ্টিকে গালমন্দ করিতে করিতে ভুলিয়া যান যে তাঁহারাই কিছুকাল পূর্বে একটুখানি বৃষ্টির আশায় এমন ব্যাকুল ছিলেন। একই মেঘের বৃষ্টি সৃষ্টির সকল প্রানিকূলের কাছে কতরূপেই না ধরা দেয় ইহা ভাবিতে ভাবিতেই জানালার কাঁচ ঘোলা হইয়া আসে।
মনে পরিয়া যায় ছাত্রজীবনে এক বর্ষাকালের পূর্বেই একখানা রঙিন ছাতা উপহার পাইয়াছিলাম। সেই ছাতার কল্যাণেই ঘোর বর্ষাকালে আমার বিদ্যালয় গমনে ব্যাপক আগ্রহ বাড়িয়া গিয়াছিল। কেবলই যথাসময়ে বৃষ্টির জন্য প্রতীক্ষা কিন্তু সেই বর্ষায় বৃষ্টির আগমন অস্বাভাবিক বিলম্বিত হইল। আষাঢ় মাস গড়াইয়া যায় তবুও নীল আকাশ যেন ঝকঝক করে। যদিও কোন কোন রাত্রে বৃষ্টি আসে তখন মনে মনে কেবল একটিই প্রার্থনা এই বৃষ্টি যেন আগামীকাল সকাল অবধি বজায় থাকে নতুবা আমার রঙিন ছাতা মাথায় করিয়া বিদ্যালয় গমন সার্থক হইবে না। কোন এক বর্ষাকালের কথা বিশেষভাবে মনে পড়িয়া যায় সেইবার বৃষ্টিও হইয়াছিল খল খলাইয়া। মাঠ-ঘাট, রাস্তা-নর্দমা, পুকুর-দিঘী সবই পানিতে থৈ থৈ সেই বর্ষায় আমার কোন রঙিন ছাতা ছিল না তাই বৃষ্টি আসিলেই বিদ্যালয় যাওয়া বন্ধ করিয়া বই-পুস্তক সব ছাড়িয়া মাছ ধরিবার জন্য বাড়ির বাহিরে হৈ হৈ করিয়া ছুটিয়া চলা। মাছ শিকারে কোন কালেই তেমন পটু ছিলাম না, নিতান্তই ছিপ-বড়শি দিয়া কিছু কৈ-পুঁটি ধরিলেই আমাকে আর পায় কে। কিন্তু তৎকালীন সময়ে আমার ঘনিষ্ঠবন্ধু ছিল সবধরণের মাছ শিকারে সিদ্ধহস্ত। যেমন তাঁর জাল ছোড়ায় দক্ষতা ঠিক তেমনি ট্যাঁটায় নিখুঁত হাতের লক্ষ্যভেদ করার ক্ষমতা সেই সময়ে আমাকে অবাক করিয়া দিত। তাঁর সহকারী হিসেবে একসাথে মাছ শিকার করাও খুবই আনন্দের কাজ বলে আমার কাছে মনে হইত। এ পুকুর ও পুকুর করিয়া আমরা সমস্ত দিন পাড়ার সব পুকুর চষিয়া বেড়াইলাম, এইখানে সেইখানে জাল ফেলিলাম, কতক জায়গায় জাল বিছাইয়া রাখিলাম পরে মাছ পাওয়া যাইবে এই আশায়। দিন যে কিভাবে ফুরাইয়া আসিল তা বিন্দুমাত্র টের পাই নাই, সূর্যের কোন দেখাই নাই আকাশ কাল মেঘে ঢাকা, মাঝে কখনো মুষলধারে বৃষ্টি আসে তো কখনো ঝিরিঝিরি বৃষ্টি। নাওয়া-খাওয়ার কথা ভুলিয়া আমরা এমনই মগ্ন ছিলাম যে সন্ধ্যা নামিলে সম্বিৎ ফিরিলো কিন্তু মাছের নেশা আমাদের ছাড়িল না, অন্ধকার ঘনাইয়া আসিলে আমরা টর্চ আর ট্যাঁটা হাতে নব উদ্যমে আবার শুরু করিলাম। বৃষ্টি তখন প্রায় থামিয়া গিয়াছে ব্যাঙেরা অবিরত ডেকেই চলেছে, সারাদিন বৃষ্টির ফলে পানি সর্বত্র প্রায় ঘোলা হইয়া গিয়াছে। বড় মাছেরা পানিতে ভাসিয়া উঠিবে আর অমনি ট্যাঁটা ছুঁড়িয়া উহাদের বধ করা হইবে এই আশায় আমরা দুই বন্ধু এইখানে ঐখানে টর্চের আলো ফেলিয়া অনুসন্ধান চালাইয়া গেলাম। বেশ কয়েকটি ব্যর্থ প্রচেষ্টার পর যখন আমরা খানিকটা হতাশাগ্রস্থ ঠিক তখনই টর্চের আলোয় ঘোলা পানিতে একটা আলোড়ন আমাদের দৃষ্টি গোচর হইল, ক্ষণিকেই আমরা পরস্পরের মুখ চাওয়া চাওয়ি করিয়া চোখের ইশারায় একে অপরের মনের কথা বুঝিতে পাইয়া খুবই সন্তর্পণে পানির আলোড়নের দিকে অগ্রসর হইলাম। এসকল স্থান যে আমাদের হাতের তালুর ন্যায় চেনা, পুকুরের একটু পাশেই কেউ নিজ প্রয়োজনে কোদাল দিয়া কোপাইয়া বেশ কিছু মাটি লইয়া গিয়াছিল। সেই গর্তই আজ অতিবৃষ্টির কারণে পুকুরের সহিত প্রায় মিশিয়া গিয়াছে। পানিতে যেরূপ আলোড়ন উঠিয়াছিল তাহাতে আমরা প্রায় নিশ্চিত যে পুকুরের কোন বড় মাছ পথ হারাইয়া ঐ গর্তে এখন আটকা পড়িয়াছে। আমরা দুই বন্ধু গর্তের দুইধারে গোলরক্ষকের মতো অবস্থান লইলাম, পানি তেমন বেশি নাই গর্তে হাঁটুজলও হইবে না, এই অবস্থায় আমরা সরাসরি পানিতে হাত ডোবাইয়া সেই বড় মাছটিকে খুঁজিতে লাগিলাম কিন্তু কোথায় সেই মাছ? পালাইয়া গেল নাকি পুকুরে? দুইজন মানুষের চারটি হাত সেই ছোটমতো গর্তে মাছের নাগাল না পেয়ে যখন বিভ্রান্ত ঠিক তখনই পানির নিচে আমার পায়ের পাতায় স্পর্শ টের পাইলাম, ক্ষিপ্রতার সহিত পানিতে হাত চালাইলাম কিন্তু ব্যর্থ হল, মুখ দিয়া আক্ষেপসূচক শব্দ বাহির হইয়া গেল 'ইশ একটুর জন্য' খানিকক্ষণ পরেই আমার বন্ধুটিও প্রায় একই রকমের ভঙ্গিমা ও শব্দ করিল। মনে আশার সঞ্চার হইল যে মাছটি এখনও পালাইতে পারে নাই এবং ইহা হস্তগত হওয়া সময়ের ব্যাপার মাত্র। নতুন উদ্যমে আমরা পানির নিচে হাত দিয়া অনুসন্ধান শুরু করিলাম এবং হঠাৎই আমার দুই হাতেই উহার স্পর্শ পাইয়া প্রাণপণে দুইহাতের আঙ্গুলি দিয়া চাপিয়া ধরিলাম। উহাও ছাড়া পাইবার জন্য প্রবলবেগে আমার হাতের মধ্যে ছটফট করিতে লাগিলো কিন্তু এতক্ষণের ভোগান্তি ও অবশেষে প্রাপ্তিতে আমার মনে ভিতরে একটা চাপা উল্লাস দেখা দিলো আমিও সর্বশক্তি প্রয়োগ করিয়া আঙ্গুলি দিয়া উহাকে সর্বাঙ্গে চাপিয়া ধরিলাম। এরপর উহাকে যখন ধীরে ধীরে পানির উপর তুলিয়া আনিলাম তখন আমার হাতে আমি যাহা দেখিলাম তা দেখিয়া বুকের মধ্যে ছ্যাঁত করিয়া উঠিল চক্ষু ছানাবড়া হইয়া গেল মুখদিয়া অস্ফুট চিৎকার করিয়া উঠিলাম সাআআআপ সাপ!
এরপরের ঘটনাগুলি ঘটে গেল চোখের পলকে হলিউডের স্লো মোশন ক্যামেরায় তা ধারণ করলে সে হতো এক দেখার মতই দৃশ্য। হাতের এক ঝটকায় সাপটিকে ছুঁড়ে দিলাম আকাশপানে বাতাসে দুপাক দিয়া তা ছপাৎ করিয়া পাশের পুকুরে গিয়া পড়িলো প্রায় একই সাথে আমিও কেন জানি না অভিকর্ষ বল উপেক্ষা করিয়া কিছুক্ষণ শূন্যে ভাসিয়া আছড়ে পড়লাম কাদাপানিতে। সমস্ত শরীর কাদায় মাখিয়া গেলো কিন্তু সেদিকে বিন্দুমাত্র ভ্রূক্ষেপ না করিয়া কোনোমতে হাঁচড়ে পাঁচড়ে উঠিয়াই উল্টোদিকে প্রাণপণে দৌড় আরম্ভ করিলাম। কেন দৌড়াইতেছি তাহা আমি নিজেও বলিতে পারিব না তখন কেবলই মনে হইতেছিল আমি কসরত করে মাছ ভাবিয়া যে সাপটিকে ধরেছিলাম তা বুঝি এখনও আমার হাতের সাথে লাগিয়া আছে। আতঙ্ক কাটিয়া গেলে একটু জিরাইবার উদ্দেশ্যে দাঁড়াইলাম আমার বন্ধুটি তখন দাঁত কেলাইয়া আমার পানে আসিতেছে পানিতে শব্দ তুলিয়া। পুরো ঘটনাটি একটি নিরেট বিনোদনের খোরাক হইয়াছিল তাহার কাছে, কিছুদিন মুখরোচক গল্প হিসেবে সে সুযোগ পাইলেই তাহা সকলের নিকট বলিয়া বেড়াইত। এরপর কত বর্ষাই তো কাটিয়া গেলো, সেইসব দিনগুলিই বা কই আর সেই মানুষগুলোই বা কই।
১১ ই জুলাই, ২০১৭ রাত ১১:০৮
ইউসুফ ইয়ামিন অমি বলেছেন: ধন্যবাদ।
২| ১১ ই জুলাই, ২০১৭ রাত ১০:৫০
সাহিদা সুলতানা শাহী বলেছেন: নিদারুণ অভিজ্ঞতা।
১১ ই জুলাই, ২০১৭ রাত ১১:০৯
ইউসুফ ইয়ামিন অমি বলেছেন: তা আর বলতে!
©somewhere in net ltd.
১|
১১ ই জুলাই, ২০১৭ রাত ১০:২২
ফরিদ আহমদ চৌধুরী বলেছেন: ভাল লিখেছেন