নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

এক পশলা বৃষ্টি আর এক মুঠো রোদ্দুর......

পারভীন শীলা

পারভীন শীলা › বিস্তারিত পোস্টঃ

কোথায় যেন দেখেছি

১৪ ই মে, ২০২০ বিকাল ৩:০১



সুমনা অস্ত যাওয়া সূর্যটার দিকে চেয়ে আছে তন্ময় হয়ে। পাশে কে একজন এসে দাঁড়ালো খেয়াল নেই। সূর্যটা ক্রমেই তলিয়ে যাচ্ছে। পাশের লোকটি বারবার তাকাচ্ছে সুমনার দিকে। সূর্যটা পুরোপুরি তলিয়ে যেতেই সুমনা পাশ ফিরে থমকে দাঁড়ালো।
সম্পূর্ণ অজানা অচেনা একটি যুবক দাঁড়িয়ে। সুমনা ভ্রু কুঞ্চিত করলে লোকটি দ্বিধাগ্রস্থ হয়ে বলল, কিছু মনে করবেন না। আমি দুর্জয়। আপনি যে হোটেলটিতে উঠেছেন ওখানকার ম্যানেজার। সন্ধ্যায় আপনাকে একা দেখে আসতে হলো।
সুমনা নিরুত্তর। দুর্জয় এর দিকে একবার চেয়ে হাসলো মাত্র।

দুর্জয় বলল, একটা কথা জিজ্ঞেস করতে পারি?
-করুন।
-আপনার নাম?

এবারও সুমনা মিষ্টি করে হাসলো। তারপর খুব ধীরে বলল, সুমনা চৌধুরী। বলেই ঘুরে পিছনের দিকে পা বাড়ায়।

দুর্জয় ধীরে ধীরে ফিরে আসে রুমে। বিছানায় চিন্তিত ভঙ্গিতে গা এলিয়ে দেয়। রঞ্জন একটি বই পড়ছিল। বইটা বন্ধ করে তাকালো দুর্জয়ের দিকে।
-দুর্জয়, হঠাৎ কি হলো? জিজ্ঞেস করলো রঞ্জন।..কিছু একটা তো অবশ্যই হয়েছে। কি? বলা যায় না?
-আজ সমুদ্র পাড়ে হাঁটতে গিয়েছিলাম। হঠাৎ দেখলাম একটি মেয়ে সমুদ্রের পাড়ে দাঁড়িয়ে অস্ত যাওয়া সূর্যটা দেখছে। মেয়েটি খুব সুন্দর রে!

রঞ্জন আর কোনো প্রশ্ন করল না। চোখ দুটো বইয়ের উপর টেনে আনল।

দুর্জয় বিছানায় এপাশ ওপাশ করে বলল, রঞ্জন, চল না আগামীকাল আবার ওখানে যাই।

-শালা প্রেমে পড়েছিস। তুই যাবি যা। আমাকে নিয়ে টানা হেচড়া করবি না।


০০০

পড়ন্ত বিকেলে দুর্জয় সমুদ্রপাড়ে গিয়ে দাঁড়ালো। আশেপাশে কাউকে দেখতে না পেয়ে পূর্ব দিকে এক পা দু পা করে এগিয়ে গেল। হঠাৎ মনে হলো মেয়েটিতো পশ্চিম দিকে থাকবে। ঠিক সূর্য অস্ত যাওয়া দেখবে।

পিছনে ফিরতেই সুমনাকে দেখতে পেল দুর্জয়। সুমনা অস্ত যাওয়া সূর্যটার দিকে চেয়ে আছে। দূর্জয় চেয়ে আছে সুমনার মায়াবী মুখটিতে। সূর্যটা ক্রমেই তলিয়ে যাচ্ছে। সূর্যটা যতই স্তমিত হচ্ছে সুমনার মুখচ্ছবিতে ততই মলিনতা স্পষ্ট হয়ে ফুটে উঠছে।
সূর্য তলিয়ে যেতেই ঘোর কাটলো সুমনার। পাশ ফিরতেই দেখল দুর্জয় দাঁড়িয়ে।

সুমনা মিষ্টি করে হেসে বলল, পাহারা দিতে এসেছেন?
-ধরুন তাই। অস্ত যাওয়া সূর্য দেখতে পছন্দ করেন?
- কোনদিন সূর্য ওঠা দেখিনি তো, তাই এটাই পছন্দ।
-তাই?... যাহোক, আছেন কদিন?
-এক সপ্তাহ।
-আমার এক বন্ধু এসেছে ঢাকা থেকে। সারাক্ষণ বই নিয়ে ব্যস্ত থাকে। আমি ওকে তেমন সময় দিতে পারি না। এক সময় আসুন না, পরিচয় করিয়ে দিব।

সুমনা প্রতিত্তুরে মিষ্টি করে হাসলো। দুর্জয় চেয়ে রইল সুমনার হাসির দিকে। কি সুন্দর বাঁকা ঠোঁটের হাসি!

০০০

জোছনা প্লাবিত রাত। বারান্দার রেলিং ধরে আকাশের দিকে চেয়ে আছে সুমনা। মনের অজান্তেই গুনগুনিয়ে গেয়ে উঠল--

আমার লতার প্রথম মুকুল চেয়ে আছে মোর পানে,
শুধায় আমারে এসেছি এ কোনখানে
এসেছো আমার জীবন লীলার রঙ্গে,
এসেছো আমার তরল ভবের ভঙ্গে,
এসেছো আমার স্বর তরঙ্গ গানে
আমার লতার প্রথম মুকুল প্রভাত আলোক মাঝে
শুধায় আমারে, ‘এসেছি এ কোন কাজে’...

রঞ্জন বইটা বন্ধ করে দাঁড়িয়ে পড়ে। ‘ বড় চেনা সুর। কে গায়! কার সুর! এ গান যে আমার হারিয়ে যাওয়া অতীতকে জাগিয়ে তুলল।’ এদিক ওদিক তাকায় বারবার। বিড়বিড় করে বলতে থাকে, ‘সেই গান সেই সুর। কে- কে ওখানে?’

রঞ্জনের মনে হলো, অন্ধকারে একটি ছায়ামূর্তি যেন ভালোলাগার পরশ লাগিয়ে মিলিয়ে গেল।
রঞ্জন ঘরে এসে জানালার কাছে দাঁড়িয়ে থাকে কিছুক্ষণ। তারপর পকেট থেকে সিগারেট বের করে ধরাতে যাবে হঠাৎ হাতের উপর একটি মেয়েলি হাত এসে বাধা দিল।
চট করে মুখের দিকে তাকাতেই মেয়েটি নেই।
হাওয়ায় মিলিয়ে একটি নারীকন্ঠ ভেসে এল, সিগারেট খেওনা! ক্যান্সার হবে!

চিৎকার করে ওঠে রঞ্জন। কে- কে একথা বলে! সামনে এসো।

দুর্জয় বিছানা ছেড়ে লাফিয়ে ওঠে। রঞ্জনকে ধরে বলে, কি হয়েছে রঞ্জন?

প্রচন্ড একটা ঘোরের মধ্যে ছিল রঞ্জন। দুর্জয়ের দিকে কিছুক্ষণ নিষ্পলকভাবে চেয়ে থেকে বলল, দূর্জয় সেই কন্ঠ সেই শাসন। সেই পাঁচটি বছর আগের কথা। একটি মেয়ে আমাকে গান শুনাতো, ভালোবাসত, শাসন করতো। আজ বারবার তার কথাই মনে হচ্ছে। অবেহেলার সেই অতীত আমাকে খুব কষ্ট দিচ্ছে।

দূর্জয় গলা ছেড়ে হাসল। তারপর বলল, তোর আবার অতীত আছে নাকি?
-প্রতিটা মানুষের জীবনেই অতীত আছে। কেউ ধরে রাখে কেউ রাখে না।
-তুই আবার ধরে রাখা শিখলি কবে থেকে?
-যেদিন বুঝলাম আমি ভুল করেছি।
-সেই মেয়েটির কথা তোর মনে পড়ে রঞ্জন?
-কার কথা বলছিস?
-ওই যে সুমা না কি যেন! আমি একবার মাত্র তোর ওখানে দেখেছিলাম।

রঞ্জন একটি চাপা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল, ওর কথাই তো তোকে বলছি। জানিস দুর্জয়, এমন এক সময় ছিল যখন ও আমাকে পাগলের মতো ভালোবাসত আর আমি উপহাস করতাম ওর ভালোবাসাকে। সুমনা- সত্যি খুব ভালো মেয়ে ছিল!
কি নাম বললি? দুর্জয় ভূত দেখার মতো লাফিয়ে উঠল।
সুমনা চৌধুরী। বর্তমানে একজন নামী-দামী লেখিকা।

দুর্জয় একটু চিন্তিত ভঙিতে বলল, আমার ধারণা ঠিক ‘কোথায় যেন দেখেছি’। শোন, তোকে কাল সুমনার কাছে নিয়ে যাব।
হাসল রঞ্জন। বলল, কোথায়? কিভাবে?
এখন ঘুমো। সকালেই দেখতে পাবি।

০০০

ঘুম থেকে উঠে সুমনা গোসল সেরে আয়নার সামনে দাঁড়াতেই দরজায় কড়া নড়ার শব্দ হলো। ফিরে দরজা খুলতেই বুকের মধ্যে কেপে উঠল। রঞ্জনও অপ্রস্তুতের মতোই সুমনার মুখের দিকে চেয়ে রইল কিছুক্ষণ। সুমনা কিছু একটা বলতে গিয়েও বলতে পারল না। মনে প্রশ্ন জেগে উঠল, রঞ্জন এখানে কেন!
নিজেকে সামলে নিয়ে সুমনা বলল, ভেতরে কি আসবেন?

রঞ্জন দরজায় দাঁড়িয়ে সুমনাকে দেখছে। এই সেই সুমনা, পাঁচ বছর আগে যাকে সব সময় কাছে পেয়েও অবহেলায় দূরে সরিয়ে দিয়েছি! নিজেকে অহঙ্কারী মনে করে ওর সাথে শুধু ছলনাই করেছি! পেয়েছি ওর নির্মল ভালোবাসা, আর বিনিময়ে দিয়েছি এক বুক জ্বালা আর কষ্ট।

কিছু ভাবছেন? সুমনা বলল।

দুর্জয় পাশ কেটে চলে যায়। রঞ্জন ঘরে ঢুকে এদিক ওদিক একবার তাকিয়ে বলে, আমাকে চিনতে পারছো?
-না চেনার মতো দূর্লভ কিছু নন তো!
-আমি এখানে কেন জানতে ইচ্ছে করছে না?
-হয়তো ভুল করে।
-আমার সম্পর্কে বিস্তারিত কিছু জানতে ইচ্ছে করছে না?
-প্রয়োজন মনে করছি না।
রঞ্জন একটু ইতস্তত করে বলল, প্রয়োজন ঘুরে ফিরে ঋতু বদলের মতো আসে, তাই না?
- আমি ঠিক বুঝতে পারছি না।
-না বোঝার মতো কিছু তো বলিনি। আজ তোমার সময় এসেছে। ইচ্ছে করলে অনেক কিছুই বলতে পারো, নিতে পারো।

সুমনার ক্লান্ত চোখ দুটো রঞ্জনকে আকর্ষণ করে। রঞ্জনের দিকে আনমনা হয়ে কিছুক্ষণ চেয়ে থেকে বলে, যখন তোমার কাছে কিছু চেয়েছি তখন নাই বলে ফিরিয়ে দিয়েছো। এখন নিতে পার বললেই তো নিতে পারি না। প্রশ্ন জাগে- দেবার মতো কিছু জন্মালো কবে?
-উপহাস করছ?
-সে সাধ্য কই!
-শেষ যেদিন তুমি আমার কাছ থেকে অশ্রু চোখে বিদায় নিলে তখনও তোমাকে বুঝতে পারিনি। ভেবেছিলাম এমন করে তো কতবারই গেল!
-তারপর?
-তারপর আর কি! দিন যায়-মাস যায়-বছর যায়। তোমার আর কোনো খোঁজ পেলাম না। হঠাৎ তোমার লেখা ‘সেই তুমি’ বইটি চোখে পড়ল। কিনে নিলাম। খুটে খুটে পড়লাম। তারপর কেবলই মনে হতে লাগল, ভুল করেছি! প্রচন্ড ভুল! অনেকবার তোমার সাথে দেখা করতে চেয়েছি কিন্তু পারি নি।
-কেন?
-মনে হয়েছে আমার অপরাধবোধের কথা। স্বার্থপরতার কথা।
-আজ কেন এসেছো?
-আমরা কি আগের মতো হতে পারি না্?
-যে ভালোলাগা আগে ছিল বাস্তব আজ তা কল্পনায় রূপ নিয়েছে। ভাবা যায় কিন্তু বাস্তবে রূপ নিতে চায় না। যেদিন তোমাকে প্রথম ভালোবেসেছিলাম সেদিনের সেই আমি আপনা আপনি ওভাবে তৈরি হয়েছিলাম আর যেদিন তোমার কাছ থেকে ফিরে এসেছি সেদিন থেকে আজ পর্যন্ত আমি আমাকে অনেক কাঠ-খড় পুড়িয়ে তৈরি করে নিয়েছি। একদিন যা কষ্টে হয়নি আজ তা এত সহজে হবে কেন?

রঞ্জন সুমনার একটি হাত ধরে বলল, এর জন্য আমাকে কতটা কষ্ট করতে হবে? কতটা কাঠ-খড় পুড়াতে হবে বলবে?
- রঞ্জন, তোমার উপর আমার কোন অভিযোগ নেই।

আস্তে করে রঞ্জনের হাত থেকে নিজের হাত ছাড়িয়ে নিয়ে বলল, ভুল করে তোমাকে ভালোবেসেছিলাম। তার খেসারতও দিতে হয়েছে অনেক। আজ তো সব খুইয়ে তোমাকে পেতে পারি না! তুমি আমার কাছে শুধু একজন চেনা মানুষ। শুধু বারবার মনে হয় “কোথায় যেন দেখেছি!” সুমনা অস্ত যাওয়া সূর্যটার দিকে চেয়ে আছে তন্ময় হয়ে। পাশে কে একজন এসে দাঁড়ালো খেয়াল নেই। সূর্যটা ক্রমেই তলিয়ে যাচ্ছে। পাশের লোকটি বারবার তাকাচ্ছে সুমনার দিকে। সূর্যটা পুরোপুরি তলিয়ে যেতেই সুমনা পাশ ফিরে থমকে দাঁড়ালো।
সম্পূর্ণ অজানা অচেনা একটি যুবক দাঁড়িয়ে। সুমনা ভ্রু কুঞ্চিত করলে লোকটি দ্বিধাগ্রস্থ হয়ে বলল, কিছু মনে করবেন না। আমি দুর্জয়। আপনি যে হোটেলটিতে উঠেছেন ওখানকার ম্যানেজার। সন্ধ্যায় আপনাকে একা দেখে আসতে হলো।
সুমনা নিরুত্তর। দুর্জয় এর দিকে একবার চেয়ে হাসলো মাত্র।

দুর্জয় বলল, একটা কথা জিজ্ঞেস করতে পারি?
-করুন।
-আপনার নাম?

এবারও সুমনা মিষ্টি করে হাসলো। তারপর খুব ধীরে বলল, সুমনা চৌধুরী। বলেই ঘুরে পিছনের দিকে পা বাড়ায়।

দুর্জয় ধীরে ধীরে ফিরে আসে রুমে। বিছানায় চিন্তিত ভঙ্গিতে গা এলিয়ে দেয়। রঞ্জন একটি বই পড়ছিল। বইটা বন্ধ করে তাকালো দুর্জয়ের দিকে।
-দুর্জয়, হঠাৎ কি হলো? জিজ্ঞেস করলো রঞ্জন।..কিছু একটা তো অবশ্যই হয়েছে। কি? বলা যায় না?
-আজ সমুদ্র পাড়ে হাঁটতে গিয়েছিলাম। হঠাৎ দেখলাম একটি মেয়ে সমুদ্রের পাড়ে দাঁড়িয়ে অস্ত যাওয়া সূর্যটা দেখছে। মেয়েটি খুব সুন্দর রে!

রঞ্জন আর কোনো প্রশ্ন করল না। চোখ দুটো বইয়ের উপর টেনে আনল।

দুর্জয় বিছানায় এপাশ ওপাশ করে বলল, রঞ্জন, চল না আগামীকাল আবার ওখানে যাই।

-শালা প্রেমে পড়েছিস। তুই যাবি যা। আমাকে নিয়ে টানা হেচড়া করবি না।


০০০

পড়ন্ত বিকেলে দুর্জয় সমুদ্রপাড়ে গিয়ে দাঁড়ালো। আশেপাশে কাউকে দেখতে না পেয়ে পূর্ব দিকে এক পা দু পা করে এগিয়ে গেল। হঠাৎ মনে হলো মেয়েটিতো পশ্চিম দিকে থাকবে। ঠিক সূর্য অস্ত যাওয়া দেখবে।

পিছনে ফিরতেই সুমনাকে দেখতে পেল দুর্জয়। সুমনা অস্ত যাওয়া সূর্যটার দিকে চেয়ে আছে। দূর্জয় চেয়ে আছে সুমনার মায়াবী মুখটিতে। সূর্যটা ক্রমেই তলিয়ে যাচ্ছে। সূর্যটা যতই স্তমিত হচ্ছে সুমনার মুখচ্ছবিতে ততই মলিনতা স্পষ্ট হয়ে ফুটে উঠছে।
সূর্য তলিয়ে যেতেই ঘোর কাটলো সুমনার। পাশ ফিরতেই দেখল দুর্জয় দাঁড়িয়ে।

সুমনা মিষ্টি করে হেসে বলল, পাহারা দিতে এসেছেন?
-ধরুন তাই। অস্ত যাওয়া সূর্য দেখতে পছন্দ করেন?
- কোনদিন সূর্য ওঠা দেখিনি তো, তাই এটাই পছন্দ।
-তাই?... যাহোক, আছেন কদিন?
-এক সপ্তাহ।
-আমার এক বন্ধু এসেছে ঢাকা থেকে। সারাক্ষণ বই নিয়ে ব্যস্ত থাকে। আমি ওকে তেমন সময় দিতে পারি না। এক সময় আসুন না, পরিচয় করিয়ে দিব।

সুমনা প্রতিত্তুরে মিষ্টি করে হাসলো। দুর্জয় চেয়ে রইল সুমনার হাসির দিকে। কি সুন্দর বাঁকা ঠোঁটের হাসি!

০০০

জোছনা প্লাবিত রাত। বারান্দার রেলিং ধরে আকাশের দিকে চেয়ে আছে সুমনা। মনের অজান্তেই গুনগুনিয়ে গেয়ে উঠল--

আমার লতার প্রথম মুকুল চেয়ে আছে মোর পানে,
শুধায় আমারে এসেছি এ কোনখানে
এসেছো আমার জীবন লীলার রঙ্গে,
এসেছো আমার তরল ভবের ভঙ্গে,
এসেছো আমার স্বর তরঙ্গ গানে
আমার লতার প্রথম মুকুল প্রভাত আলোক মাঝে
শুধায় আমারে, ‘এসেছি এ কোন কাজে’...

রঞ্জন বইটা বন্ধ করে দাঁড়িয়ে পড়ে। ‘ বড় চেনা সুর। কে গায়! কার সুর! এ গান যে আমার হারিয়ে যাওয়া অতীতকে জাগিয়ে তুলল।’ এদিক ওদিক তাকায় বারবার। বিড়বিড় করে বলতে থাকে, ‘সেই গান সেই সুর। কে- কে ওখানে?’

রঞ্জনের মনে হলো, অন্ধকারে একটি ছায়ামূর্তি যেন ভালোলাগার পরশ লাগিয়ে মিলিয়ে গেল।
রঞ্জন ঘরে এসে জানালার কাছে দাঁড়িয়ে থাকে কিছুক্ষণ। তারপর পকেট থেকে সিগারেট বের করে ধরাতে যাবে হঠাৎ হাতের উপর একটি মেয়েলি হাত এসে বাধা দিল।
চট করে মুখের দিকে তাকাতেই মেয়েটি নেই।
হাওয়ায় মিলিয়ে একটি নারীকন্ঠ ভেসে এল, সিগারেট খেওনা! ক্যান্সার হবে!

চিৎকার করে ওঠে রঞ্জন। কে- কে একথা বলে! সামনে এসো।

দুর্জয় বিছানা ছেড়ে লাফিয়ে ওঠে। রঞ্জনকে ধরে বলে, কি হয়েছে রঞ্জন?

প্রচন্ড একটা ঘোরের মধ্যে ছিল রঞ্জন। দুর্জয়ের দিকে কিছুক্ষণ নিষ্পলকভাবে চেয়ে থেকে বলল, দূর্জয় সেই কন্ঠ সেই শাসন। সেই পাঁচটি বছর আগের কথা। একটি মেয়ে আমাকে গান শুনাতো, ভালোবাসত, শাসন করতো। আজ বারবার তার কথাই মনে হচ্ছে। অবেহেলার সেই অতীত আমাকে খুব কষ্ট দিচ্ছে।

দূর্জয় গলা ছেড়ে হাসল। তারপর বলল, তোর আবার অতীত আছে নাকি?
-প্রতিটা মানুষের জীবনেই অতীত আছে। কেউ ধরে রাখে কেউ রাখে না।
-তুই আবার ধরে রাখা শিখলি কবে থেকে?
-যেদিন বুঝলাম আমি ভুল করেছি।
-সেই মেয়েটির কথা তোর মনে পড়ে রঞ্জন?
-কার কথা বলছিস?
-ওই যে সুমা না কি যেন! আমি একবার মাত্র তোর ওখানে দেখেছিলাম।

রঞ্জন একটি চাপা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল, ওর কথাই তো তোকে বলছি। জানিস দুর্জয়, এমন এক সময় ছিল যখন ও আমাকে পাগলের মতো ভালোবাসত আর আমি উপহাস করতাম ওর ভালোবাসাকে। সুমনা- সত্যি খুব ভালো মেয়ে ছিল!
কি নাম বললি? দুর্জয় ভূত দেখার মতো লাফিয়ে উঠল।
সুমনা চৌধুরী। বর্তমানে একজন নামী-দামী লেখিকা।

দুর্জয় একটু চিন্তিত ভঙিতে বলল, আমার ধারণা ঠিক ‘কোথায় যেন দেখেছি’। শোন, তোকে কাল সুমনার কাছে নিয়ে যাব।
হাসল রঞ্জন। বলল, কোথায়? কিভাবে?
এখন ঘুমো। সকালেই দেখতে পাবি।

০০০

ঘুম থেকে উঠে সুমনা গোসল সেরে আয়নার সামনে দাঁড়াতেই দরজায় কড়া নড়ার শব্দ হলো। ফিরে দরজা খুলতেই বুকের মধ্যে কেপে উঠল। রঞ্জনও অপ্রস্তুতের মতোই সুমনার মুখের দিকে চেয়ে রইল কিছুক্ষণ। সুমনা কিছু একটা বলতে গিয়েও বলতে পারল না। মনে প্রশ্ন জেগে উঠল, রঞ্জন এখানে কেন!
নিজেকে সামলে নিয়ে সুমনা বলল, ভেতরে কি আসবেন?

রঞ্জন দরজায় দাঁড়িয়ে সুমনাকে দেখছে। এই সেই সুমনা, পাঁচ বছর আগে যাকে সব সময় কাছে পেয়েও অবহেলায় দূরে সরিয়ে দিয়েছি! নিজেকে অহঙ্কারী মনে করে ওর সাথে শুধু ছলনাই করেছি! পেয়েছি ওর নির্মল ভালোবাসা, আর বিনিময়ে দিয়েছি এক বুক জ্বালা আর কষ্ট।

কিছু ভাবছেন? সুমনা বলল।

দুর্জয় পাশ কেটে চলে যায়। রঞ্জন ঘরে ঢুকে এদিক ওদিক একবার তাকিয়ে বলে, আমাকে চিনতে পারছো?
-না চেনার মতো দূর্লভ কিছু নন তো!
-আমি এখানে কেন জানতে ইচ্ছে করছে না?
-হয়তো ভুল করে।
-আমার সম্পর্কে বিস্তারিত কিছু জানতে ইচ্ছে করছে না?
-প্রয়োজন মনে করছি না।
রঞ্জন একটু ইতস্তত করে বলল, প্রয়োজন ঘুরে ফিরে ঋতু বদলের মতো আসে, তাই না?
- আমি ঠিক বুঝতে পারছি না।
-না বোঝার মতো কিছু তো বলিনি। আজ তোমার সময় এসেছে। ইচ্ছে করলে অনেক কিছুই বলতে পারো, নিতে পারো।

সুমনার ক্লান্ত চোখ দুটো রঞ্জনকে আকর্ষণ করে। রঞ্জনের দিকে আনমনা হয়ে কিছুক্ষণ চেয়ে থেকে বলে, যখন তোমার কাছে কিছু চেয়েছি তখন নাই বলে ফিরিয়ে দিয়েছো। এখন নিতে পার বললেই তো নিতে পারি না। প্রশ্ন জাগে- দেবার মতো কিছু জন্মালো কবে?
-উপহাস করছ?
-সে সাধ্য কই!
-শেষ যেদিন তুমি আমার কাছ থেকে অশ্রু চোখে বিদায় নিলে তখনও তোমাকে বুঝতে পারিনি। ভেবেছিলাম এমন করে তো কতবারই গেল!
-তারপর?
-তারপর আর কি! দিন যায়-মাস যায়-বছর যায়। তোমার আর কোনো খোঁজ পেলাম না। হঠাৎ তোমার লেখা ‘সেই তুমি’ বইটি চোখে পড়ল। কিনে নিলাম। খুটে খুটে পড়লাম। তারপর কেবলই মনে হতে লাগল, ভুল করেছি! প্রচন্ড ভুল! অনেকবার তোমার সাথে দেখা করতে চেয়েছি কিন্তু পারি নি।
-কেন?
-মনে হয়েছে আমার অপরাধবোধের কথা। স্বার্থপরতার কথা।
-আজ কেন এসেছো?
-আমরা কি আগের মতো হতে পারি না্?
-যে ভালোলাগা আগে ছিল বাস্তব আজ তা কল্পনায় রূপ নিয়েছে। ভাবা যায় কিন্তু বাস্তবে রূপ নিতে চায় না। যেদিন তোমাকে প্রথম ভালোবেসেছিলাম সেদিনের সেই আমি আপনা আপনি ওভাবে তৈরি হয়েছিলাম আর যেদিন তোমার কাছ থেকে ফিরে এসেছি সেদিন থেকে আজ পর্যন্ত আমি আমাকে অনেক কাঠ-খড় পুড়িয়ে তৈরি করে নিয়েছি। একদিন যা কষ্টে হয়নি আজ তা এত সহজে হবে কেন?

রঞ্জন সুমনার একটি হাত ধরে বলল, এর জন্য আমাকে কতটা কষ্ট করতে হবে? কতটা কাঠ-খড় পুড়াতে হবে বলবে?
- রঞ্জন, তোমার উপর আমার কোন অভিযোগ নেই।

আস্তে করে রঞ্জনের হাত থেকে নিজের হাত ছাড়িয়ে নিয়ে বলল, ভুল করে তোমাকে ভালোবেসেছিলাম। তার খেসারতও দিতে হয়েছে অনেক। আজ তো সব খুইয়ে তোমাকে পেতে পারি না! তুমি আমার কাছে শুধু একজন চেনা মানুষ। শুধু বারবার মনে হয় “কোথায় যেন দেখেছি!”

মন্তব্য ৮ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৮) মন্তব্য লিখুন

১| ১৪ ই মে, ২০২০ বিকাল ৪:৩৫

রাজীব নুর বলেছেন: গল্পটা ঠিক জমতে গিয়েও জমলো না।

১৪ ই মে, ২০২০ সন্ধ্যা ৬:৪২

পারভীন শীলা বলেছেন: কি আর করা যাবে

২| ১৪ ই মে, ২০২০ বিকাল ৫:০৭

মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন বলেছেন: ঠিক আছে।

১৪ ই মে, ২০২০ সন্ধ্যা ৬:৪৩

পারভীন শীলা বলেছেন: ধন্যবাদ ।

৩| ১৪ ই মে, ২০২০ রাত ৮:২৫

নেওয়াজ আলি বলেছেন: অনন্য

৪| ১৪ ই মে, ২০২০ রাত ১০:৫৭

পারভীন শীলা বলেছেন: ধন্যবাদ ।

৫| ২৪ শে জুন, ২০২০ রাত ৯:৩১

সাড়ে চুয়াত্তর বলেছেন: দুই বার কপি হয়েছে। মিল করে দিলে পারতেন। লেখকের হাতে সব।

২৫ শে জুন, ২০২০ সকাল ১০:৩২

পারভীন শীলা বলেছেন: নায়িকা মিল হতে না চাইলে আমি আর কি করতে পারি বলুন ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.